بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পূর্ব অাফ্রিকা এবং যে জন্য দুশমন আমাদের উপর বিজয়ী?
শায়েখ আইমান জাওয়াহেরী
=> হামিদান ওয়া মুসাল্লিয়ানঃ আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি সুসংবাদ দিচ্ছি যে, শীঘ্রই " খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ্" কায়েম হতে যাচ্ছে এবং নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সকল জুলুম ও ফাসাদ। তো এই হালকায় আমি পূর্ব আফ্রিকা এবং মুসলিমদের পতনের মূল কারন উল্লেখ করতে যাচ্ছি।
শুরুতেই ইতিহাস থেকে আমরা কিছু শিক্ষা নিই। আমরা জানি নবীজী ﷺ এর আবির্ভাব থেকেই হাবসায় ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছে। এমনকি হাবসার বাদশা নাজ্জাশীও ইসলাম কবুল করেন। এভাবে হাবশা এবং পূর্ব আফ্রিকায় ইসলামের প্রসার হতে থাকে। পরবর্তীতে আরব বনিকেরা এ অঞ্চলে এসে আরো ব্যাপকভাবে দ্বীনের দাওয়াত দেন। ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামে দাখেল হয়। কিন্তু দ্বীনের এই প্রসার খ্রিষ্টান ক্রুসেডারদের সহ্য হলো না। তারা বুঝতে পারলো এভাবে চললে পুরো আফ্রিকায় ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তারা শত্রুতা শুরু করল। মুসলিমদের মুসিবতে লিপ্ত করার জন্য এবং তাদের উপর তাগুতকে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ক্রুসেডাররা ও গীর্জাওয়ালারা চক্রান্তে মেতে উঠলো। এই চক্রান্ত আজ্তক চলছে।
তাদের চক্রান্তের কিছু নমুনা হলো, এরা হাবশার মসূ শহরে হত্যাযজ্ঞ চালায়, এমনকি জেদ্দার নৌবহরে গিয়েও হামলা করে। কিন্তু খলিফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান খ্রিষ্টানদের আক্রমনের যথোচিত যবাব দেন, তাদেরকে বিতাড়িত করেন। ফলে পূর্ব আফ্রিকায় পুনরায় শান্তি ফিরে আসে। অবশেষে ইসলাম পুনরায় বিস্তৃত হতে থাকে। পরবর্তিতে খেলাফত দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারনে ইউরোপিওরা আফ্রিকার মুসলিম ভূমি দখল করতে প্রয়াস চালায়। ফলে মুসলিমরা উসমানি খেলাফতের অধিনে থেকে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে এবং তাদেরকে পরাজিত করে। এর ফলে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ইত্যাদি বেশ কটি দেশ ইসলামি খেলাফতের অধিনে চলে আসে এবং দিন দিন মানুষেরা ইসলামে দাখেল হয়, এমনকি মুসলমানরাই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিতে পরিনত হয়।
এটা ৯২৩ হিজরীর ঘটনা। অতপর হাবসার গীর্জাওয়ালারা বিশেষভাবে পর্তুগালের সাহায্য প্রার্থনা করে ফলে পর্তুগীজরা ৯৪৯ হিজরীতে মসূ শহরে অবতরন করে। সেখানে উসমানী খলীফা সুলতান আদলের নেতৃত্বে মুসলিমগন এদেরকে চরমভাবে পরাজিত করে। এর ঠিক দশ বছর পরে পুনরায় পর্তুগীজ বাহিনী এসে হাবশা 'তানা হৃদের' নিকটে সুলতান আদলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে সুলতান শহীদ হন এবং তার বাহিনী পরাজিত হয়। পরবর্তীতে যখন ব্রিটিশরা ১৩০০ হিঃ/১৮৮২ খ্রিঃ তে মিশর দখল করল এবং পশ্চিম আফ্রিকা কব্জা করল তখন পূর্ব আফ্রিকাও দখল করার উদ্দেশ্যে সেখানে কোনো এক জায়গায় বৃহৎ সামরিক ঘাটি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশরা সেই জায়গা হিসেবে পূর্ব আফ্রিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল 'হারার' ভূমিকে নির্বাচিত করে সাথে এ অঞ্চল সমূহের মুরতাদ সরকারও হারার অঞ্চল শূন্য করতে শুরু করে। কিন্তু মিশরীয় সৈন্যবাহিনী সরকারের এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে। তারা হারার ও পূর্ব আফ্রিকার মুসলিমগনের সাথে একজোট হয়ে অান্দোলন শুরু করেন। ইত্যকার ঘটনাসমূহ প্রমান করে, এসকল মুসলিম দেশের সরকার শুধু ক্রসেডারদের তাবেদারি করেই চলেছে, যা আজ পর্যন্ত চলছে। আরো প্রমান করে যে, মিসরী ও পূর্বআফ্রিকার মুসলিমগন ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে নিজেদের এক উম্মত বলে বলেই মন করে। কিন্তু এসকল ঘটনাবলি ও ইতিহাস স্কুল-মাদ্রাসার কোনো ইতিহাস বইতেই পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় না কোন জিহাদের ইতিহাস।
সুতরাং আমাদের দেখা উচিত, কাফেররা যে বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চল দখল করল এবং আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় পরাজিত ও লাঞ্চিত করেছে এর কারন কি?
এর কারন মূলত দুটিঃ
প্রথমত, তারা আমাদের চেয়ে অস্র ও সামরিক শক্তির দিক থেকে অনেক অনেক এগিয়ে আছে।
দ্বিতীয়ত, ভ্রান্ত রাজনীতি যা মুসলিম উম্মাহর জীবনকে দুর্বিষহ করে দিল। প্রথমেই আসি, তারা কিভাবে অাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে এতটা ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে পারল। এর মূল কারন তারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (পদার্থ বিজ্ঞানে) আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রসর। আর সমস্ত আধুনিক অস্ত্র ও শক্তি পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল। অথচ শরীয়ত আমাদেরকে মাখলূক ও পদার্থের ক্ষেত্রে চিন্তা গবেষনা করার নির্দেশ দেয়। যেমন হাদিসে আছে, "তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিতে চিন্তা গবেষনা কর"। তো আমরা যদি শরীয়তের এ নির্দেশ মেনে চলতাম তাহলে বর্তমানে পরমানু বোমা, হাইড্রোজেন বোমা ইত্যাদি সবকিছু মুসলিমদের হাতে থাকত। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘকাল যাবত তাদের মন-মস্তিষ্ক, চিন্তা-গবেষনা বিকৃত তাসাউ্ওফ ও দর্শন সাস্ত্রে নিয়োজিত রেখেছিল। তাদের এ নিমগ্নতা কেমন ছিল তা যুগশ্রেষ্ঠ ওলী আল্লামা শারানীর কিতাব 'তবাকাতে শারানী' থেকে বুঝতে পারি।
সে যমানায় প্রচুর জাহেল, ভ্রষ্ট এমনকি মুরতাদ সুফীর দৌরাত্ম্য ছিল। সেসময় একটা সাধারন আকীদা ছিল পীর সাহেব যাই করবেন - সেটা যদিও স্পষ্ট শিরক হয় - মুরিদকে তা নেক ও মহান কাজ মনে করতে হবে। এমনকি মদ পান করাকে তখন এক ইবাদাত মনে করা হত। এও বলা হত, হাশীশ মদ না পান করলে মুরীদের তওবা কবুল হয় না। (মায়াযাল্লাহ্)
আর দর্শন সাস্ত্রের তো সাক্ষাৎ পূজা করা হত। দর্শনের বিরুদ্ধে যাওয়াকে অপরাধ মনে করত। দর্শনপন্ডিতকে মহাজ্ঞানী ভাবা হত। আর যারা দর্শন শিখতো না - সে যত বড় কুরআন - সুন্নাহর আলেমই হোক না কেন - তাদেরকে মূর্খ ধারনা করা হত। অথচ এই দর্শন সাস্ত্র হলো প্রাচীন গ্রীকের কিছু উদ্ভট চিন্তা-ধারার সমষ্টি, আধুনিক বিজ্ঞান যেগুলো রদ করে দিয়েছে। তো এই দর্শন না পারে কোন বোমা, ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি করতে, না পারে কোন মেশিনগান কার্টার তৈরি করতে। আর বিকৃত তাসাউফ তো মানুষকে সন্ন্যাসী বানিয়ে ছাড়ত। তাই দেখা যেত, মুসলিম দেশে মুরতাদ সরকার আসত, কিন্তু তাসাউফিরা তাদের কুফরীর কোনো প্রতিবাদ না করে সন্ন্যাসী হয়ে বসে থাকত। ঠিক তদ্রুপ, যখন কোনো শত্রুদল কোনো মুসলিমভূমি দখল করত, তখন এই ভ্রষ্ট সুফিরা শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করত না। বরং তারা জিহাদকে অপছন্দ করত। এই জন্য দেখা গিয়েছে, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম বিশ্বের মাঝে সেক্যুলার ও ভ্রষ্ট তাসাউফী দলসমূহের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ জোর দিত।
যেমন 'গনতান্ত্রীক ইসলাম' গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, সোমালিয়ায় যে সব ভ্রষ্ট সূফি মুজাহিদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, তাদেরকে বিভিন্ন সহায়তা ও নিরাপত্তা দেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।
তো যখন মুসলিম উম্মাহর ওলামা ও জনসাধারন সবাই ব্যাপকভাবে তাসাউফ ও দর্শনশাস্ত্র নিয়ে মগ্ন, ঠিক তখন পশ্চিমা বিশ্ব জেগে উঠলো। তারা পুরা দমে প্রকৃতি বিজ্ঞানের ওপর গবেষনা করে বিভিন্ন শক্তি উদ্ভাবন করল, যে শক্তি দ্বারা তারা বিভিন্ন মরনাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
তো এই উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অগ্রপথিক ছিল পর্তুগিজ বাদশা 'হেনরি মাল্লাহ'। সে ছিলো এক উগ্র খ্রিষ্টান এবং মুসলিম বিদ্বেষে তার অন্তর ছিলো ভর্তি। অবশেষে সে এক নৌ-পরাশক্তি প্রস্তুত করে ফেলে, অতপর পূর্ব অাফ্রিকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। তার লক্ষ্য ছিলো পূর্ব অাফ্রিকায় মুসলিমদের বিতাড়িত করে সেখানে পর্তুগীজ খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য করবে। শুধু তাই নয়, তার নৌবহর হিন্দুস্তান পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। আর এ সব কিছুই ঘটে চলেছিলো, কিন্তু মুসলিম উম্মাহ বিকৃত তাসাউফ ও দর্শনসাস্ত্র নিয়ে মগ্ন ছিলো আর প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও শক্তি থেকে ছিলো নির্লিপ্ত।
মুসলিম উম্মাহর পরাজয়ের দ্বিতীয় মূল কারন হলো, ভ্রান্ত রাজনীতি এবং জালেম শাসক, যারা জিহাদ ছেরে দিয়ে গৃহযুদ্ধে সমস্ত শক্তি ব্যয় করত। তারা ছিলো ভোগ-বিলাসিতায় অভ্যস্ত। জনগনের সম্পদ জুলুম করে কেড়ে নিত। এ শাসকরা ইসলামের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি করেছিলো তা হল ইসলামি শাসন থেকে সরে আসা। আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "সর্বপ্রথম ইসলামের যে ভিত্তি ভেঙ্গে যাবে তা হল হুকুমত, আর সর্বেশেষে সালাত" (জামে সগীর)
ভালোভাবে মনে রাখতে হবে যে, এই খেলাফতের মূল ভিত্তি হলো 'শূরা' এবং সমস্ত মুসলিম এক খলিফার অধিনে থাকা। এই খেলাফত শেষ হয়ে যাওয়ার পরই সমস্ত মুসলিম বিশ্ব - যারা সবাই এক দেহের মত ছিলো - টুকরা টুকরা হয়ে গেলো এবং এই খেলাফতহীন রাষ্ট্রব্যবস্থার কারনে আমাদের ঐক্যে ফাটল হল আর চারদিকে দলাদলি শুরু হয়ে গেল। অথচ এখন একশ্রেনীর ফেরক্বা বের হয়েছে যারা খেলাফতের দাবী করে।
মজার ব্যপার হলো তারা না কোন মুসলিমকে বাইয়াত করেছে, না কারো সাথে মাশওয়ারা করেছে, অর্থাৎ তাদের খেলাফত হচ্ছে বাইয়াত ও শূরাবিহীন খেলাফত। এমনকি যারা তাদের খেলাফত মানবে না, তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয়, এমনকি আমাদেরকেও!!
হযরত ওমর ইবনে (রাদিঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে মুসলমানদের সাথে মাশওয়ারা (শূরা) না করেই বাইয়াত করে, এদের কাছে বাইয়াত নেয়া যাবে না। কেননা, তাদের খুন হয়ে যাবার অাশঙ্কা রয়েছে"। (বুখারী)
কিন্তু আমরা সেই লোকদেরকে ফেতনা ছেড়ে দিয়ে তাওতীদের পতাকাতলে আসার আহ্বান জানিয়ে চলেছি। সুতরাং, আমাদের সবাইকে দলাদলি ও আসাবিয়ত ছেরে এক হতে হবে এবং নববী খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও অধিকৃত মুসলিম ভূমি পুনরোদ্ধারে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আর সাথে সাথে আমেরিকার হাক-ডাকে গাজড়ানো যাবে না। কেননা আমেরিকা না পারে জীবন নিতে, না পারো জীবন দিতে, পারেনা সৃষ্টি করতে ও রিযিক দিতে।
ব্যস, আজকে এখানেই আমাদের কথা শেষ করলাম। সামনের হালকায় আবার দেখা হবে ইনশা-আল্লাহ্
"ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ"
বিঃদ্রঃ ফোরামে এতদিন ঢুকতে পারছিলাম না।এজন্য পোষ্টটি দিতে লেইট হলো।এজন্য দুঃখিত।আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে নিয়ামিত পোষ্টগুলো পাবেন ইনশাআল্লাহ্।
পূর্ব অাফ্রিকা এবং যে জন্য দুশমন আমাদের উপর বিজয়ী?
শায়েখ আইমান জাওয়াহেরী
=> হামিদান ওয়া মুসাল্লিয়ানঃ আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি সুসংবাদ দিচ্ছি যে, শীঘ্রই " খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ্" কায়েম হতে যাচ্ছে এবং নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সকল জুলুম ও ফাসাদ। তো এই হালকায় আমি পূর্ব আফ্রিকা এবং মুসলিমদের পতনের মূল কারন উল্লেখ করতে যাচ্ছি।
শুরুতেই ইতিহাস থেকে আমরা কিছু শিক্ষা নিই। আমরা জানি নবীজী ﷺ এর আবির্ভাব থেকেই হাবসায় ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছে। এমনকি হাবসার বাদশা নাজ্জাশীও ইসলাম কবুল করেন। এভাবে হাবশা এবং পূর্ব আফ্রিকায় ইসলামের প্রসার হতে থাকে। পরবর্তীতে আরব বনিকেরা এ অঞ্চলে এসে আরো ব্যাপকভাবে দ্বীনের দাওয়াত দেন। ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামে দাখেল হয়। কিন্তু দ্বীনের এই প্রসার খ্রিষ্টান ক্রুসেডারদের সহ্য হলো না। তারা বুঝতে পারলো এভাবে চললে পুরো আফ্রিকায় ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তারা শত্রুতা শুরু করল। মুসলিমদের মুসিবতে লিপ্ত করার জন্য এবং তাদের উপর তাগুতকে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ক্রুসেডাররা ও গীর্জাওয়ালারা চক্রান্তে মেতে উঠলো। এই চক্রান্ত আজ্তক চলছে।
তাদের চক্রান্তের কিছু নমুনা হলো, এরা হাবশার মসূ শহরে হত্যাযজ্ঞ চালায়, এমনকি জেদ্দার নৌবহরে গিয়েও হামলা করে। কিন্তু খলিফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান খ্রিষ্টানদের আক্রমনের যথোচিত যবাব দেন, তাদেরকে বিতাড়িত করেন। ফলে পূর্ব আফ্রিকায় পুনরায় শান্তি ফিরে আসে। অবশেষে ইসলাম পুনরায় বিস্তৃত হতে থাকে। পরবর্তিতে খেলাফত দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারনে ইউরোপিওরা আফ্রিকার মুসলিম ভূমি দখল করতে প্রয়াস চালায়। ফলে মুসলিমরা উসমানি খেলাফতের অধিনে থেকে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে এবং তাদেরকে পরাজিত করে। এর ফলে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ইত্যাদি বেশ কটি দেশ ইসলামি খেলাফতের অধিনে চলে আসে এবং দিন দিন মানুষেরা ইসলামে দাখেল হয়, এমনকি মুসলমানরাই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিতে পরিনত হয়।
এটা ৯২৩ হিজরীর ঘটনা। অতপর হাবসার গীর্জাওয়ালারা বিশেষভাবে পর্তুগালের সাহায্য প্রার্থনা করে ফলে পর্তুগীজরা ৯৪৯ হিজরীতে মসূ শহরে অবতরন করে। সেখানে উসমানী খলীফা সুলতান আদলের নেতৃত্বে মুসলিমগন এদেরকে চরমভাবে পরাজিত করে। এর ঠিক দশ বছর পরে পুনরায় পর্তুগীজ বাহিনী এসে হাবশা 'তানা হৃদের' নিকটে সুলতান আদলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে সুলতান শহীদ হন এবং তার বাহিনী পরাজিত হয়। পরবর্তীতে যখন ব্রিটিশরা ১৩০০ হিঃ/১৮৮২ খ্রিঃ তে মিশর দখল করল এবং পশ্চিম আফ্রিকা কব্জা করল তখন পূর্ব আফ্রিকাও দখল করার উদ্দেশ্যে সেখানে কোনো এক জায়গায় বৃহৎ সামরিক ঘাটি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশরা সেই জায়গা হিসেবে পূর্ব আফ্রিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল 'হারার' ভূমিকে নির্বাচিত করে সাথে এ অঞ্চল সমূহের মুরতাদ সরকারও হারার অঞ্চল শূন্য করতে শুরু করে। কিন্তু মিশরীয় সৈন্যবাহিনী সরকারের এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে। তারা হারার ও পূর্ব আফ্রিকার মুসলিমগনের সাথে একজোট হয়ে অান্দোলন শুরু করেন। ইত্যকার ঘটনাসমূহ প্রমান করে, এসকল মুসলিম দেশের সরকার শুধু ক্রসেডারদের তাবেদারি করেই চলেছে, যা আজ পর্যন্ত চলছে। আরো প্রমান করে যে, মিসরী ও পূর্বআফ্রিকার মুসলিমগন ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে নিজেদের এক উম্মত বলে বলেই মন করে। কিন্তু এসকল ঘটনাবলি ও ইতিহাস স্কুল-মাদ্রাসার কোনো ইতিহাস বইতেই পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় না কোন জিহাদের ইতিহাস।
সুতরাং আমাদের দেখা উচিত, কাফেররা যে বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চল দখল করল এবং আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় পরাজিত ও লাঞ্চিত করেছে এর কারন কি?
এর কারন মূলত দুটিঃ
প্রথমত, তারা আমাদের চেয়ে অস্র ও সামরিক শক্তির দিক থেকে অনেক অনেক এগিয়ে আছে।
দ্বিতীয়ত, ভ্রান্ত রাজনীতি যা মুসলিম উম্মাহর জীবনকে দুর্বিষহ করে দিল। প্রথমেই আসি, তারা কিভাবে অাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে এতটা ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে পারল। এর মূল কারন তারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (পদার্থ বিজ্ঞানে) আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রসর। আর সমস্ত আধুনিক অস্ত্র ও শক্তি পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল। অথচ শরীয়ত আমাদেরকে মাখলূক ও পদার্থের ক্ষেত্রে চিন্তা গবেষনা করার নির্দেশ দেয়। যেমন হাদিসে আছে, "তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিতে চিন্তা গবেষনা কর"। তো আমরা যদি শরীয়তের এ নির্দেশ মেনে চলতাম তাহলে বর্তমানে পরমানু বোমা, হাইড্রোজেন বোমা ইত্যাদি সবকিছু মুসলিমদের হাতে থাকত। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘকাল যাবত তাদের মন-মস্তিষ্ক, চিন্তা-গবেষনা বিকৃত তাসাউ্ওফ ও দর্শন সাস্ত্রে নিয়োজিত রেখেছিল। তাদের এ নিমগ্নতা কেমন ছিল তা যুগশ্রেষ্ঠ ওলী আল্লামা শারানীর কিতাব 'তবাকাতে শারানী' থেকে বুঝতে পারি।
সে যমানায় প্রচুর জাহেল, ভ্রষ্ট এমনকি মুরতাদ সুফীর দৌরাত্ম্য ছিল। সেসময় একটা সাধারন আকীদা ছিল পীর সাহেব যাই করবেন - সেটা যদিও স্পষ্ট শিরক হয় - মুরিদকে তা নেক ও মহান কাজ মনে করতে হবে। এমনকি মদ পান করাকে তখন এক ইবাদাত মনে করা হত। এও বলা হত, হাশীশ মদ না পান করলে মুরীদের তওবা কবুল হয় না। (মায়াযাল্লাহ্)
আর দর্শন সাস্ত্রের তো সাক্ষাৎ পূজা করা হত। দর্শনের বিরুদ্ধে যাওয়াকে অপরাধ মনে করত। দর্শনপন্ডিতকে মহাজ্ঞানী ভাবা হত। আর যারা দর্শন শিখতো না - সে যত বড় কুরআন - সুন্নাহর আলেমই হোক না কেন - তাদেরকে মূর্খ ধারনা করা হত। অথচ এই দর্শন সাস্ত্র হলো প্রাচীন গ্রীকের কিছু উদ্ভট চিন্তা-ধারার সমষ্টি, আধুনিক বিজ্ঞান যেগুলো রদ করে দিয়েছে। তো এই দর্শন না পারে কোন বোমা, ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি করতে, না পারে কোন মেশিনগান কার্টার তৈরি করতে। আর বিকৃত তাসাউফ তো মানুষকে সন্ন্যাসী বানিয়ে ছাড়ত। তাই দেখা যেত, মুসলিম দেশে মুরতাদ সরকার আসত, কিন্তু তাসাউফিরা তাদের কুফরীর কোনো প্রতিবাদ না করে সন্ন্যাসী হয়ে বসে থাকত। ঠিক তদ্রুপ, যখন কোনো শত্রুদল কোনো মুসলিমভূমি দখল করত, তখন এই ভ্রষ্ট সুফিরা শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করত না। বরং তারা জিহাদকে অপছন্দ করত। এই জন্য দেখা গিয়েছে, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম বিশ্বের মাঝে সেক্যুলার ও ভ্রষ্ট তাসাউফী দলসমূহের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ জোর দিত।
যেমন 'গনতান্ত্রীক ইসলাম' গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, সোমালিয়ায় যে সব ভ্রষ্ট সূফি মুজাহিদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, তাদেরকে বিভিন্ন সহায়তা ও নিরাপত্তা দেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।
তো যখন মুসলিম উম্মাহর ওলামা ও জনসাধারন সবাই ব্যাপকভাবে তাসাউফ ও দর্শনশাস্ত্র নিয়ে মগ্ন, ঠিক তখন পশ্চিমা বিশ্ব জেগে উঠলো। তারা পুরা দমে প্রকৃতি বিজ্ঞানের ওপর গবেষনা করে বিভিন্ন শক্তি উদ্ভাবন করল, যে শক্তি দ্বারা তারা বিভিন্ন মরনাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
তো এই উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অগ্রপথিক ছিল পর্তুগিজ বাদশা 'হেনরি মাল্লাহ'। সে ছিলো এক উগ্র খ্রিষ্টান এবং মুসলিম বিদ্বেষে তার অন্তর ছিলো ভর্তি। অবশেষে সে এক নৌ-পরাশক্তি প্রস্তুত করে ফেলে, অতপর পূর্ব অাফ্রিকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। তার লক্ষ্য ছিলো পূর্ব অাফ্রিকায় মুসলিমদের বিতাড়িত করে সেখানে পর্তুগীজ খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য করবে। শুধু তাই নয়, তার নৌবহর হিন্দুস্তান পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। আর এ সব কিছুই ঘটে চলেছিলো, কিন্তু মুসলিম উম্মাহ বিকৃত তাসাউফ ও দর্শনসাস্ত্র নিয়ে মগ্ন ছিলো আর প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও শক্তি থেকে ছিলো নির্লিপ্ত।
মুসলিম উম্মাহর পরাজয়ের দ্বিতীয় মূল কারন হলো, ভ্রান্ত রাজনীতি এবং জালেম শাসক, যারা জিহাদ ছেরে দিয়ে গৃহযুদ্ধে সমস্ত শক্তি ব্যয় করত। তারা ছিলো ভোগ-বিলাসিতায় অভ্যস্ত। জনগনের সম্পদ জুলুম করে কেড়ে নিত। এ শাসকরা ইসলামের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি করেছিলো তা হল ইসলামি শাসন থেকে সরে আসা। আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "সর্বপ্রথম ইসলামের যে ভিত্তি ভেঙ্গে যাবে তা হল হুকুমত, আর সর্বেশেষে সালাত" (জামে সগীর)
ভালোভাবে মনে রাখতে হবে যে, এই খেলাফতের মূল ভিত্তি হলো 'শূরা' এবং সমস্ত মুসলিম এক খলিফার অধিনে থাকা। এই খেলাফত শেষ হয়ে যাওয়ার পরই সমস্ত মুসলিম বিশ্ব - যারা সবাই এক দেহের মত ছিলো - টুকরা টুকরা হয়ে গেলো এবং এই খেলাফতহীন রাষ্ট্রব্যবস্থার কারনে আমাদের ঐক্যে ফাটল হল আর চারদিকে দলাদলি শুরু হয়ে গেল। অথচ এখন একশ্রেনীর ফেরক্বা বের হয়েছে যারা খেলাফতের দাবী করে।
মজার ব্যপার হলো তারা না কোন মুসলিমকে বাইয়াত করেছে, না কারো সাথে মাশওয়ারা করেছে, অর্থাৎ তাদের খেলাফত হচ্ছে বাইয়াত ও শূরাবিহীন খেলাফত। এমনকি যারা তাদের খেলাফত মানবে না, তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয়, এমনকি আমাদেরকেও!!
হযরত ওমর ইবনে (রাদিঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে মুসলমানদের সাথে মাশওয়ারা (শূরা) না করেই বাইয়াত করে, এদের কাছে বাইয়াত নেয়া যাবে না। কেননা, তাদের খুন হয়ে যাবার অাশঙ্কা রয়েছে"। (বুখারী)
কিন্তু আমরা সেই লোকদেরকে ফেতনা ছেড়ে দিয়ে তাওতীদের পতাকাতলে আসার আহ্বান জানিয়ে চলেছি। সুতরাং, আমাদের সবাইকে দলাদলি ও আসাবিয়ত ছেরে এক হতে হবে এবং নববী খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও অধিকৃত মুসলিম ভূমি পুনরোদ্ধারে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আর সাথে সাথে আমেরিকার হাক-ডাকে গাজড়ানো যাবে না। কেননা আমেরিকা না পারে জীবন নিতে, না পারো জীবন দিতে, পারেনা সৃষ্টি করতে ও রিযিক দিতে।
ব্যস, আজকে এখানেই আমাদের কথা শেষ করলাম। সামনের হালকায় আবার দেখা হবে ইনশা-আল্লাহ্
"ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ"
বিঃদ্রঃ ফোরামে এতদিন ঢুকতে পারছিলাম না।এজন্য পোষ্টটি দিতে লেইট হলো।এজন্য দুঃখিত।আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে নিয়ামিত পোষ্টগুলো পাবেন ইনশাআল্লাহ্।
Comment