সেকুলারিস্ট বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কি কাফির?
জবাব দিয়েছেন- শায়খ ড. হামিদ বিন আব্দুল্লাহ আল-‘আলি।
প্রশ্ন: আমরা একই অনলাই্ন মেসেজ বোর্ডে (ফোরামে) আরাফাতের (ইয়াসির আরাফাত) কুফরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন একজন প্রশ্ন তুললেন এবং এ প্রশ্নটি বারবার উত্থাপিত হয়। তাই আমরা আশা করি যে আপনি আমাদের জন্য এ প্রশ্নের উত্তর দিবেন। বারাকাল্লাহ্।
(প্রশ্নটি হল) ইয়াসির আরাফাত কি কাফির? সব ধরনের কুফরের ক্ষেত্রেই কি উক্ত ব্যক্তির অবস্থার দিকে তাকাতে হবে? এবং তার উপর তাকফিরের কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কি না তা দেখতে হবে? তার উপর কেউ হুজ্জাহ প্রতিষ্ঠা করেছে কি না আমাদের কি সেটার জন্য অপেক্ষা করতে দেখতে হবে? আর সকল কুফরের বেলায়ই কি এটি করা শর্ত?
উত্তর:
সব প্রশংসা আল্লাহ্*র জন্য এবং মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের উপর সালাম ও বরকত বর্ষিত হোক।
‘আম্মা বা’আদ
ইয়াসির আরাফাত ও তার মত অন্যান্য যারা মুখে শাহাদাত (কালেমা) উচ্চারণ করে, আপাতভাবে নিজেদের মুসলিম দাবি করে কিন্তু সেক্যুলারিজমের উপর বিশ্বাস রাখে এবং এর প্রচার করে, মতাদর্শ পদ্ধতি হিসেবে একে গ্রহণ করে – তারা কাফির এবং তাদের ওপর কাফিরের হুকুম প্রয়োগ করা হবে।
আলিমরা এব্যাপারে একমত যে, যে কেউ সেক্যুলারিজমকে আঁকড়ে ধরে রাখে সে কাফির।
কারন এই মতবাদ কুফর ও নাস্তিক্যবাদের অনুমোদন দেয়, এবং এতে নাস্তিকদের জন্য মুওয়ালাতকে বৈধ করা হয়, এবং ‘ইচ্ছা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে তাদের কুফরির প্রসার ঘটাতে দেয় এবং তাদের কাছে এসবকিছুই প্রশংসনীয়। কারন ধর্মনিরপেক্ষতবাদীরা দাবি করে যতো বেশি যতো ধরনের মত, আকিদা ও কুফরের প্রসার হবে ততোই তা মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরিচায়ক হবে। আল্লাহ্* তাদের পাকড়াও করুন।
একইভাবে তারা আরো বিশ্বাস করে যে আল্লাহ্* তা’আলার আইনকে প্রতিহত করে, একে সরিয়ে দিয়ে সেখানে গণতন্ত্রকে আনা এক মহান কাজ। সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হল এমন একটি মতবাদ যা মানুষকে রব ও আইনপ্রণেতা (হাকিম) এর আসনে বসায়, তাকে আল্লাহ্* তা’আলার শরীয়াহ্ বাতিলের এবং এর স্থলে অন্য আইন প্রনয়ন ও প্রতিস্থাপনের অধিকার দেওয়া হয়। সেকুলারিজমের মাধ্যমে মানুষ তার প্রবৃত্তি ও খাহেশাতকে রব ও নিজের চিন্তাকে মালিক বানিয়ে নেয়। সেকুলারিজম অনুযায়ী আল্লাহ্* তা’আলার আনুগত্যের বদলে আনুগত্য করতে হবে মানবীয় প্রবৃত্তি, খাহেশাত ও চিন্তার। এ আনুগত্য হতে হবে সম্পূর্ণ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেয়েও এই আনুগত্য প্রাধান্য পাবে।
যে কেউ এসকল কুফরি মতাদর্শের ওপর ইমান আনবে, যা কিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসলাম বিনস্টকারী বিশ্বাস, তারা কাফির – এমনকি যদিও তারা শাহাদাতের বাণীসমূহ উচ্চারণ করে। এই মৌখিক উচ্চারণ তাদের সামান্যতম উপকারেও আসবে না। তবে ঐ ব্যক্তির উপর তাকফির করা উচিত হবে না, যার কুফরিসমূহ এখনো কিছুটা লুকায়িত আছে, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট হুজ্জাহ্ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাকে কাফির ঘোষণা দেবার প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর হয়ে যায়।
এটি সুবিদিত যে, যখন কারো কাছ থেকে ইসলামকে বাতিলকারী/বিনষ্টকারী কোন সুস্পষ্ট বিষয় প্রকাশিত হয় তখন তার উপর কুফরের হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে কোন শর্ত নেই।
যেমন, আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিংবা আল্লাহ্*র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবমাননা, কিংবা আল্লাহ্*র দ্বীনের অবমাননা, কিংবা একাধিক ইলাহতে বিশ্বাস বা ওয়াহদাতুল ওজুদে বিশ্বাস, এবং এধরণের ইসলাম বাতিলকারী বিষয়সমূহ যা ইসলামের মূলের সাথে স্পষ্টভাবেই সাংঘর্ষিক হবার ব্যাপারটি গোপন না – এমন কাজ করা ব্যাক্তির উপর কুফরের হুকুম দেয়ার ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি উক্ত কাজকে কুফর হিসাবে জানে কি না বা কোন বা তাকফিরের অন্যান্য প্রতিবন্ধকের কোন শর্ত নেই। বরং এই শর্ত (কুফরকারীর এটা জানা যে সে যা করছে তা কুফর) কেবলমাত্র সূক্ষ্ম বিষয়সমূহের বেলায় প্রযোজ্য। আর এসব এমন ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হচ্ছে সে মুখে ইমানের সাক্ষ্যদ্বয় দেয়ার পর ঈমান বিনষ্টকারী কোন কাজ করে।
আর অন্যদের বেলায়, যারা শাহাদাত উচচারন করেনি, তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ্ কিংবা কুরআন পৌঁছে যাক কিংবা না পৌঁছাক, দুনিয়ার ফায়সালা অনুযায়ী তারা কাফির।
কিন্তু যদি দুনিয়াতে তারা ইসলামের বাণী শোনার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে তবে আখিরাতে তাদের ব্যাপারে হুকুম হল তারা আহলুল ফাতরাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আর মৃত্যুর পূর্বে যাদের কাছে ইসলামের সংবাদ পৌঁছেছিলো কিন্তু এতদসত্ত্বেও তারা এর ওপর ইমান না এনেই মৃত্যুবরণ করেছে, তবে আখিরাতে তাদের গন্তব্য হল সেই কাফিরদের গন্তব্য যাদের ব্যাপারে কুরআনে আল্লাহ বলেছেন – তা কতোইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল – আল্লাহ আমাদের এ থেকে হেফাজত করুন।
ওয়াল্লাহু আলাম।
জবাব দিয়েছেন- শায়খ ড. হামিদ বিন আব্দুল্লাহ আল-‘আলি।
প্রশ্ন: আমরা একই অনলাই্ন মেসেজ বোর্ডে (ফোরামে) আরাফাতের (ইয়াসির আরাফাত) কুফরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন একজন প্রশ্ন তুললেন এবং এ প্রশ্নটি বারবার উত্থাপিত হয়। তাই আমরা আশা করি যে আপনি আমাদের জন্য এ প্রশ্নের উত্তর দিবেন। বারাকাল্লাহ্।
(প্রশ্নটি হল) ইয়াসির আরাফাত কি কাফির? সব ধরনের কুফরের ক্ষেত্রেই কি উক্ত ব্যক্তির অবস্থার দিকে তাকাতে হবে? এবং তার উপর তাকফিরের কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কি না তা দেখতে হবে? তার উপর কেউ হুজ্জাহ প্রতিষ্ঠা করেছে কি না আমাদের কি সেটার জন্য অপেক্ষা করতে দেখতে হবে? আর সকল কুফরের বেলায়ই কি এটি করা শর্ত?
উত্তর:
সব প্রশংসা আল্লাহ্*র জন্য এবং মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের উপর সালাম ও বরকত বর্ষিত হোক।
‘আম্মা বা’আদ
ইয়াসির আরাফাত ও তার মত অন্যান্য যারা মুখে শাহাদাত (কালেমা) উচ্চারণ করে, আপাতভাবে নিজেদের মুসলিম দাবি করে কিন্তু সেক্যুলারিজমের উপর বিশ্বাস রাখে এবং এর প্রচার করে, মতাদর্শ পদ্ধতি হিসেবে একে গ্রহণ করে – তারা কাফির এবং তাদের ওপর কাফিরের হুকুম প্রয়োগ করা হবে।
আলিমরা এব্যাপারে একমত যে, যে কেউ সেক্যুলারিজমকে আঁকড়ে ধরে রাখে সে কাফির।
কারন এই মতবাদ কুফর ও নাস্তিক্যবাদের অনুমোদন দেয়, এবং এতে নাস্তিকদের জন্য মুওয়ালাতকে বৈধ করা হয়, এবং ‘ইচ্ছা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে তাদের কুফরির প্রসার ঘটাতে দেয় এবং তাদের কাছে এসবকিছুই প্রশংসনীয়। কারন ধর্মনিরপেক্ষতবাদীরা দাবি করে যতো বেশি যতো ধরনের মত, আকিদা ও কুফরের প্রসার হবে ততোই তা মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরিচায়ক হবে। আল্লাহ্* তাদের পাকড়াও করুন।
একইভাবে তারা আরো বিশ্বাস করে যে আল্লাহ্* তা’আলার আইনকে প্রতিহত করে, একে সরিয়ে দিয়ে সেখানে গণতন্ত্রকে আনা এক মহান কাজ। সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হল এমন একটি মতবাদ যা মানুষকে রব ও আইনপ্রণেতা (হাকিম) এর আসনে বসায়, তাকে আল্লাহ্* তা’আলার শরীয়াহ্ বাতিলের এবং এর স্থলে অন্য আইন প্রনয়ন ও প্রতিস্থাপনের অধিকার দেওয়া হয়। সেকুলারিজমের মাধ্যমে মানুষ তার প্রবৃত্তি ও খাহেশাতকে রব ও নিজের চিন্তাকে মালিক বানিয়ে নেয়। সেকুলারিজম অনুযায়ী আল্লাহ্* তা’আলার আনুগত্যের বদলে আনুগত্য করতে হবে মানবীয় প্রবৃত্তি, খাহেশাত ও চিন্তার। এ আনুগত্য হতে হবে সম্পূর্ণ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেয়েও এই আনুগত্য প্রাধান্য পাবে।
যে কেউ এসকল কুফরি মতাদর্শের ওপর ইমান আনবে, যা কিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসলাম বিনস্টকারী বিশ্বাস, তারা কাফির – এমনকি যদিও তারা শাহাদাতের বাণীসমূহ উচ্চারণ করে। এই মৌখিক উচ্চারণ তাদের সামান্যতম উপকারেও আসবে না। তবে ঐ ব্যক্তির উপর তাকফির করা উচিত হবে না, যার কুফরিসমূহ এখনো কিছুটা লুকায়িত আছে, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট হুজ্জাহ্ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাকে কাফির ঘোষণা দেবার প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর হয়ে যায়।
এটি সুবিদিত যে, যখন কারো কাছ থেকে ইসলামকে বাতিলকারী/বিনষ্টকারী কোন সুস্পষ্ট বিষয় প্রকাশিত হয় তখন তার উপর কুফরের হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে কোন শর্ত নেই।
যেমন, আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিংবা আল্লাহ্*র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবমাননা, কিংবা আল্লাহ্*র দ্বীনের অবমাননা, কিংবা একাধিক ইলাহতে বিশ্বাস বা ওয়াহদাতুল ওজুদে বিশ্বাস, এবং এধরণের ইসলাম বাতিলকারী বিষয়সমূহ যা ইসলামের মূলের সাথে স্পষ্টভাবেই সাংঘর্ষিক হবার ব্যাপারটি গোপন না – এমন কাজ করা ব্যাক্তির উপর কুফরের হুকুম দেয়ার ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি উক্ত কাজকে কুফর হিসাবে জানে কি না বা কোন বা তাকফিরের অন্যান্য প্রতিবন্ধকের কোন শর্ত নেই। বরং এই শর্ত (কুফরকারীর এটা জানা যে সে যা করছে তা কুফর) কেবলমাত্র সূক্ষ্ম বিষয়সমূহের বেলায় প্রযোজ্য। আর এসব এমন ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হচ্ছে সে মুখে ইমানের সাক্ষ্যদ্বয় দেয়ার পর ঈমান বিনষ্টকারী কোন কাজ করে।
আর অন্যদের বেলায়, যারা শাহাদাত উচচারন করেনি, তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ্ কিংবা কুরআন পৌঁছে যাক কিংবা না পৌঁছাক, দুনিয়ার ফায়সালা অনুযায়ী তারা কাফির।
কিন্তু যদি দুনিয়াতে তারা ইসলামের বাণী শোনার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে তবে আখিরাতে তাদের ব্যাপারে হুকুম হল তারা আহলুল ফাতরাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আর মৃত্যুর পূর্বে যাদের কাছে ইসলামের সংবাদ পৌঁছেছিলো কিন্তু এতদসত্ত্বেও তারা এর ওপর ইমান না এনেই মৃত্যুবরণ করেছে, তবে আখিরাতে তাদের গন্তব্য হল সেই কাফিরদের গন্তব্য যাদের ব্যাপারে কুরআনে আল্লাহ বলেছেন – তা কতোইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল – আল্লাহ আমাদের এ থেকে হেফাজত করুন।
ওয়াল্লাহু আলাম।
Comment