"ইন্নাল হামদা লিল্লাহি নাহমাদুহু ওয়া নাসতায়িনুহু মাই ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লা লাহু ওয়া মাই ইয়ুদলিল ফালা হাদিয়া লাহু ওয়া আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।"
বইটির প্রথম অধ্যায়ে মোট ১০ পরিচ্ছেদ আছে। এখানে প্রথম পরিচ্ছেদের অনুবাদ প্রদান করা হলো।
(*অর্থাৎ, জাতির গঠনের নামে আমাদের আরো সৈন্য প্রেরণ করতে হবে। মাত্র এক বছরের মাথায় বুশ তার নিজের বক্তব্য বিরোধী কথা বলছেন। মনে রাখতে হবে, এরা তো এমন কাফির যারা ক্ষমতার জন্য আদর্শের সাথে মুনাফিকি করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয় না)
২০০১ সালে সেপ্টেম্বর, যখন ম্যানহ্যাটন অপারেশন পরিচালিত হয় তখন সারা বিশ্বে আল-কায়েদার সদস্য (মুজাহিদ) সংখ্যা কয়েকশো'র বেশি হবে না। হামলার ৩ মাস পর যখন সিআইএ'র প্যারামিলিটারি, মার্কিন সেনাবাহিনীর ডেল্টা ফোর্স এবং বিমানবাহিনী আফগানে কার্পেট বম্বিং করে বিধ্বস্ত করে ফেলে, যখন (শায়খ) মোল্লা ওমর (রাহি.) তার আফগানি সরকার এবং (শায়খ) উসামা বিন লাদেন (রাহি.) পিছে হটতে বাধ্য হোন তখন আল-কায়দা সদস্য সংখ্যা ছিল আঙ্গুলে গণনা করার মতো।
কিন্তু, এখন (২০১৭ সালের) একতরফা ও স্বঘোষিত বিজয়ের ১৫ বছর পর, নাইজেরিয়া থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত আল-কায়েদার হাজার হাজার সৈন্য সক্রিয় রয়েছে। এমনকি, আল-কায়দা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অংশ পশ্চিম ইরাক ও পূর্ব সিরিয়ায় তাদের কথিত ইসলামিক স্টেট দাবি করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আল-কায়েদার আঞ্চলিক শাখাগুলো ক্রমাগত আত্মপ্রকাশ করছে। যা মার্কেট স্টেট ডিপার্টমেন্টকে বছরের পর বছর ব্যস্ত করে রেখেছে, কিভাবে এবং কেন ১১ সেপ্টেম্বরের পর সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো এত বৃদ্ধি পেয়েছে তার উপর প্রতিবেদন তৈরি করতে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট এবং তাদের "লোন উলফ" অনুকরণকারীরা পশ্চিমের একাধিক বড় শহরে প্রাণঘাতী আক্রমণ চালিয়েছে, যার মধ্যে ব্রাসেলস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, সান বার্নারডিনো, অরল্যান্ডো এবং নিউ ইয়র্ক সিটি অন্তর্ভুক্ত। ২০১৪ সালে, তৎকালীন মেরিন কর্পস জেনারেল এবং বর্তমান হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন এফ. কেলি তার বক্তব্যে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির একটি বিবৃতির প্রতিধ্বনি করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি বলেছিলেন, "যুক্তরাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে 'প্রজন্মের পর প্রজন্ম' সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।"
প্রশ্ন হল, প্রায় একদশক পূর্বে ভবিষ্যৎবানী করার পরেও আমরা কেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে আছি? - তার অর্থ হলো, নিশ্চয় আমাদের কিছু না কিছু ভুল হচ্ছে।
একটি প্রধান সমস্যা হলো, আমাদের সরকার সন্ত্রাসীদের (মুজাহিদদের) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের (জিহাদের) প্রকৃত কারণগুলোকে উপেক্ষা করছে না নয়; বরং জনগণের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এরপর, তারা জনগণের অজ্ঞতা এবং ভয়ের সুযোগ নিয়ে তাদের নিজস্ব অপ্রাসঙ্গিক এবং ক্ষতিকর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এগিয়ে নিচ্ছে।
৯/১১ হামলার ১৫ বছর পরে, আজও আমেরিকা একটি ভয়ংকর মিথ্যার সাথে জড়িত। যুদ্ধের সাথে জড়িয় প্রশাসন ও সরকারের দাবি হলো, "আল-কায়েদা বা আইএস আমেরিকাকে ধ্বংস করতে চাই কারণ তাদের 'চরমপন্থী ইসলাম' তাদের এই শিক্ষাই দেয়। 'চরমপন্থী ইসলামে'র মূল উদ্দেশ্য হলো সকল সৎ মানুষ ও আদর্শকে ঘৃণা করা এবং তা ধ্বংস করা।" সুতরাং, এমন গোড়ার এবং অযৌক্তিক শত্রুর মুখোমুখি হলে আমাদের কাছে শুধুমাত্র বিকল্প থাকে - তা হচ্ছে 'যুদ্ধ'। আর এই যুদ্ধ হতে শত্রুদের ভূমিতে। তাইতো, সকল প্রেসিডেন্ট ও জেনারেলরা সর্বদাই বলে এসেছেন, 'তাদের (শত্রুদের) ওখানে যুদ্ধ করো। যেন আমাদের এখানে লড়তে না হয়।' আর যখনই বিদেশে পরিকল্পিত বা অনুপ্রেণিত কোন হামলা আমাদের মাটিতে হয়; তখনই, আমাদের পাল্টা জবাব হয়, 'ওদের ওখানে যুদ্ধ আরো জোরদার করতে হবে।'
পরিশেষে, যদি মার্কিন সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার ফলে 'বেসামরিক হতাহত'এর ঘটনা ঘটে, তা সন্তাসীদের (মুজাহিদদের) আমাদের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণে অনুপ্রেরণা যোগায়। তবে, এই দুষ্টবচক্রের আবর্তনের পরও মার্কিন প্রশাসনের দাবি হলো, 'এই যুদ্ধ তারা (মুজাহিদরা/মুসলিমরা) শুরু করেছে। আমরা কি নিজেদের রক্ষা করা অধিকারটুকু রাখি না!?'
কিন্তু, মার্কিন প্রশাসনের এই দাবির ভিত্তিটি ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত. যেমনটা লিনার্টারিয়ান কর্মী হ্যারি ব্রাউন বলতেন, "সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা আমাদের বিশ্বাস করাতে চাচ্ছেন যে, (যুদ্ধের) 'ইতিহাস ৯/১১ থেকে শুরু' হয়েছে।" আল-কায়েদার পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বহু আগে থেকে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন হস্তক্ষেপ চলমান। আর, এটাই আমাদের সন্ত্রাসী সমস্যার মূল কারণ। যা অনেকটা দুষ্টচক্রের মত কাজ করছেন। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার নামে সরকার যা করছে তা তা ফলে নতুন নতুন শত্রুর সৃষ্টি হচ্ছে; আবার, তাদের দমনের চেষ্টা পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
৯/১১ হামলাটি আমেরিকাযr বিরুদ্ধে 'মুসলিম বিশ্ব' বা 'চরমপন্থী ইসলাম'র প্রথম আক্রমণ ছিল না। বরং, এটি মুসলিম বিশ্বের (বিশেষ করে সৌদি আরব ও মিশরের) একেবারেই শেষ মুহূর্তের প্রতিরোধ ছিল। তাদের (আল-কায়েদার) কৌশল ছিল আমেরিকাকে উস্কানি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ অর্জনের জন্য ব্যবহার করা।আমেরিকানদের ব্যবহার করে অস্থিরতা, অচলাবস্থা, তৈরির মাধ্যমে নিজ নিজ ভূমিগুলোতে ইসলামিক বিপ্লবের (অর্থাৎ,খিলাফত প্রতিষ্ঠার) চেষ্টা করা।*
(* নোট: আল-কায়েদা আজ তাদের কৌশলে সফল। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল: ইমারাতে ইসলাম আফগানিস্তান। এই একই কৌশল ইরাক বা সিরিয়াতেও কাজ করতো যদি না সেখানে অপরিপক্ক দাওলা ঘোষণা করা হতো। অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা এভাবেই চেয়েছেন।)
বামপন্থী কর্মী আলিনস্কি'র মতে, "সকল অসম চরম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে 'মূল ক্রিয়া ঘটে বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া'য়"। আলিনস্কিন-এর এই উক্তির মর্ম (শায়খ) ওসামা বিন লাদেন (রাহি.) অত্যন্ত সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে (শায়খ) বিন লাদেন (রাহি.) কৌশল ছন্নছাড়া মনে হয়েছিল। কিন্তু, প্রায় ১৬ বছরের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ফলে আল-কায়েদা তাদের লক্ষ্য থেকে অনেক বেশি অর্জন করেছে। যা তারা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি।
৯/১১ হামলার কয়েক বছর আগে (শায়খ) বিন লাদেন (রাহি.) বিশ্বকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগগুলো কি। তিনি কি করতে যাচ্ছেন; আর, তিনি কিভাবে তার পরিকল্পনাকে সফল করবেন। তিনি (শায়খ রাহি.) শুরু থেকেই বলেই আসছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। তার পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে তাদের রাজনৈতিক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপকে বন্ধ করা। যাতে আল-কায়দা ইসলামী শরি'আ প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।
ABC নিউস'এর সাংবাদিক জন মিলার (পরবর্তীতে FBI'এর সন্ত্রাসবিরোধী এজেন্ট) ১৯৯৮ সালে (শায়খ) ওসামা (রাহি.)'র সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এই সাক্ষাৎকারে (শায়খ) বিল লাদেন (রাহি.) আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও সারাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থার উদ্দেশ্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তখন জন মিলারের প্রতিক্রিয়া ছিল (তাচ্ছিল্য সহকারে), "তুমি আর তোমার কোন বাহিনী যুদ্ধ করবে?"
এর উত্তর আজ পরিষ্কার এবং বিস্ময়করও বটে। সেই বাহিনী হলো 'মার্কিন সামরিক বাহিনী'। ৯/১১ হামলার মাধ্যমে আল-কায়েদার উনিশ জন প্রভাবশালী নেতৃত্ব মার্কিন সামরিক বাহিনীকে তাদের পরিকল্পনা ও কৌশল মোতাবেক ব্যবহার করেছেন - যা অন্য যেকোনো বাহিনী তুলনায় আমেরিকাকে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
Fool's Errand: It's time to end war in Afghanistan -
বইটির প্রথম অধ্যায়ে মোট ১০ পরিচ্ছেদ আছে। এখানে প্রথম পরিচ্ছেদের অনুবাদ প্রদান করা হলো।
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
প্রথম অধ্যায়: অনিশ্চয়তায় প্রবেশ
"আমরা যদি সারাবিশ্বে জাতি (রাষ্ট্র) গঠনের নামে সৈন্য মোতায়েন বন্ধ না করি; তবে, অতিসত্বর আমরা এক গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি।"
-টেক্সাস গভর্নর জর্জ ডব্লিউ বুশ; ৩ অক্টোবর, ২০০০।
"তারা আমাদের স্বাধীনতাকে ঘৃণা করে।"*
- রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ; ২০ সেপ্টেম্বর ২০০১।
- রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ; ২০ সেপ্টেম্বর ২০০১।
(*অর্থাৎ, জাতির গঠনের নামে আমাদের আরো সৈন্য প্রেরণ করতে হবে। মাত্র এক বছরের মাথায় বুশ তার নিজের বক্তব্য বিরোধী কথা বলছেন। মনে রাখতে হবে, এরা তো এমন কাফির যারা ক্ষমতার জন্য আদর্শের সাথে মুনাফিকি করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয় না)
পরিচ্ছেদ এক: সমস্যার অনুসন্ধানে
২০০১ সালে সেপ্টেম্বর, যখন ম্যানহ্যাটন অপারেশন পরিচালিত হয় তখন সারা বিশ্বে আল-কায়েদার সদস্য (মুজাহিদ) সংখ্যা কয়েকশো'র বেশি হবে না। হামলার ৩ মাস পর যখন সিআইএ'র প্যারামিলিটারি, মার্কিন সেনাবাহিনীর ডেল্টা ফোর্স এবং বিমানবাহিনী আফগানে কার্পেট বম্বিং করে বিধ্বস্ত করে ফেলে, যখন (শায়খ) মোল্লা ওমর (রাহি.) তার আফগানি সরকার এবং (শায়খ) উসামা বিন লাদেন (রাহি.) পিছে হটতে বাধ্য হোন তখন আল-কায়দা সদস্য সংখ্যা ছিল আঙ্গুলে গণনা করার মতো।
কিন্তু, এখন (২০১৭ সালের) একতরফা ও স্বঘোষিত বিজয়ের ১৫ বছর পর, নাইজেরিয়া থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত আল-কায়েদার হাজার হাজার সৈন্য সক্রিয় রয়েছে। এমনকি, আল-কায়দা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অংশ পশ্চিম ইরাক ও পূর্ব সিরিয়ায় তাদের কথিত ইসলামিক স্টেট দাবি করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আল-কায়েদার আঞ্চলিক শাখাগুলো ক্রমাগত আত্মপ্রকাশ করছে। যা মার্কেট স্টেট ডিপার্টমেন্টকে বছরের পর বছর ব্যস্ত করে রেখেছে, কিভাবে এবং কেন ১১ সেপ্টেম্বরের পর সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো এত বৃদ্ধি পেয়েছে তার উপর প্রতিবেদন তৈরি করতে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট এবং তাদের "লোন উলফ" অনুকরণকারীরা পশ্চিমের একাধিক বড় শহরে প্রাণঘাতী আক্রমণ চালিয়েছে, যার মধ্যে ব্রাসেলস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, সান বার্নারডিনো, অরল্যান্ডো এবং নিউ ইয়র্ক সিটি অন্তর্ভুক্ত। ২০১৪ সালে, তৎকালীন মেরিন কর্পস জেনারেল এবং বর্তমান হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন এফ. কেলি তার বক্তব্যে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির একটি বিবৃতির প্রতিধ্বনি করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি বলেছিলেন, "যুক্তরাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে 'প্রজন্মের পর প্রজন্ম' সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।"
প্রশ্ন হল, প্রায় একদশক পূর্বে ভবিষ্যৎবানী করার পরেও আমরা কেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে আছি? - তার অর্থ হলো, নিশ্চয় আমাদের কিছু না কিছু ভুল হচ্ছে।
একটি প্রধান সমস্যা হলো, আমাদের সরকার সন্ত্রাসীদের (মুজাহিদদের) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের (জিহাদের) প্রকৃত কারণগুলোকে উপেক্ষা করছে না নয়; বরং জনগণের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এরপর, তারা জনগণের অজ্ঞতা এবং ভয়ের সুযোগ নিয়ে তাদের নিজস্ব অপ্রাসঙ্গিক এবং ক্ষতিকর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এগিয়ে নিচ্ছে।
৯/১১ হামলার ১৫ বছর পরে, আজও আমেরিকা একটি ভয়ংকর মিথ্যার সাথে জড়িত। যুদ্ধের সাথে জড়িয় প্রশাসন ও সরকারের দাবি হলো, "আল-কায়েদা বা আইএস আমেরিকাকে ধ্বংস করতে চাই কারণ তাদের 'চরমপন্থী ইসলাম' তাদের এই শিক্ষাই দেয়। 'চরমপন্থী ইসলামে'র মূল উদ্দেশ্য হলো সকল সৎ মানুষ ও আদর্শকে ঘৃণা করা এবং তা ধ্বংস করা।" সুতরাং, এমন গোড়ার এবং অযৌক্তিক শত্রুর মুখোমুখি হলে আমাদের কাছে শুধুমাত্র বিকল্প থাকে - তা হচ্ছে 'যুদ্ধ'। আর এই যুদ্ধ হতে শত্রুদের ভূমিতে। তাইতো, সকল প্রেসিডেন্ট ও জেনারেলরা সর্বদাই বলে এসেছেন, 'তাদের (শত্রুদের) ওখানে যুদ্ধ করো। যেন আমাদের এখানে লড়তে না হয়।' আর যখনই বিদেশে পরিকল্পিত বা অনুপ্রেণিত কোন হামলা আমাদের মাটিতে হয়; তখনই, আমাদের পাল্টা জবাব হয়, 'ওদের ওখানে যুদ্ধ আরো জোরদার করতে হবে।'
পরিশেষে, যদি মার্কিন সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার ফলে 'বেসামরিক হতাহত'এর ঘটনা ঘটে, তা সন্তাসীদের (মুজাহিদদের) আমাদের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণে অনুপ্রেরণা যোগায়। তবে, এই দুষ্টবচক্রের আবর্তনের পরও মার্কিন প্রশাসনের দাবি হলো, 'এই যুদ্ধ তারা (মুজাহিদরা/মুসলিমরা) শুরু করেছে। আমরা কি নিজেদের রক্ষা করা অধিকারটুকু রাখি না!?'
কিন্তু, মার্কিন প্রশাসনের এই দাবির ভিত্তিটি ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত. যেমনটা লিনার্টারিয়ান কর্মী হ্যারি ব্রাউন বলতেন, "সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা আমাদের বিশ্বাস করাতে চাচ্ছেন যে, (যুদ্ধের) 'ইতিহাস ৯/১১ থেকে শুরু' হয়েছে।" আল-কায়েদার পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বহু আগে থেকে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন হস্তক্ষেপ চলমান। আর, এটাই আমাদের সন্ত্রাসী সমস্যার মূল কারণ। যা অনেকটা দুষ্টচক্রের মত কাজ করছেন। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার নামে সরকার যা করছে তা তা ফলে নতুন নতুন শত্রুর সৃষ্টি হচ্ছে; আবার, তাদের দমনের চেষ্টা পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
৯/১১ হামলাটি আমেরিকাযr বিরুদ্ধে 'মুসলিম বিশ্ব' বা 'চরমপন্থী ইসলাম'র প্রথম আক্রমণ ছিল না। বরং, এটি মুসলিম বিশ্বের (বিশেষ করে সৌদি আরব ও মিশরের) একেবারেই শেষ মুহূর্তের প্রতিরোধ ছিল। তাদের (আল-কায়েদার) কৌশল ছিল আমেরিকাকে উস্কানি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ অর্জনের জন্য ব্যবহার করা।আমেরিকানদের ব্যবহার করে অস্থিরতা, অচলাবস্থা, তৈরির মাধ্যমে নিজ নিজ ভূমিগুলোতে ইসলামিক বিপ্লবের (অর্থাৎ,খিলাফত প্রতিষ্ঠার) চেষ্টা করা।*
(* নোট: আল-কায়েদা আজ তাদের কৌশলে সফল। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল: ইমারাতে ইসলাম আফগানিস্তান। এই একই কৌশল ইরাক বা সিরিয়াতেও কাজ করতো যদি না সেখানে অপরিপক্ক দাওলা ঘোষণা করা হতো। অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা এভাবেই চেয়েছেন।)
বামপন্থী কর্মী আলিনস্কি'র মতে, "সকল অসম চরম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে 'মূল ক্রিয়া ঘটে বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া'য়"। আলিনস্কিন-এর এই উক্তির মর্ম (শায়খ) ওসামা বিন লাদেন (রাহি.) অত্যন্ত সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে (শায়খ) বিন লাদেন (রাহি.) কৌশল ছন্নছাড়া মনে হয়েছিল। কিন্তু, প্রায় ১৬ বছরের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ফলে আল-কায়েদা তাদের লক্ষ্য থেকে অনেক বেশি অর্জন করেছে। যা তারা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি।
৯/১১ হামলার কয়েক বছর আগে (শায়খ) বিন লাদেন (রাহি.) বিশ্বকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগগুলো কি। তিনি কি করতে যাচ্ছেন; আর, তিনি কিভাবে তার পরিকল্পনাকে সফল করবেন। তিনি (শায়খ রাহি.) শুরু থেকেই বলেই আসছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। তার পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে তাদের রাজনৈতিক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপকে বন্ধ করা। যাতে আল-কায়দা ইসলামী শরি'আ প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।
ABC নিউস'এর সাংবাদিক জন মিলার (পরবর্তীতে FBI'এর সন্ত্রাসবিরোধী এজেন্ট) ১৯৯৮ সালে (শায়খ) ওসামা (রাহি.)'র সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এই সাক্ষাৎকারে (শায়খ) বিল লাদেন (রাহি.) আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও সারাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থার উদ্দেশ্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তখন জন মিলারের প্রতিক্রিয়া ছিল (তাচ্ছিল্য সহকারে), "তুমি আর তোমার কোন বাহিনী যুদ্ধ করবে?"
এর উত্তর আজ পরিষ্কার এবং বিস্ময়করও বটে। সেই বাহিনী হলো 'মার্কিন সামরিক বাহিনী'। ৯/১১ হামলার মাধ্যমে আল-কায়েদার উনিশ জন প্রভাবশালী নেতৃত্ব মার্কিন সামরিক বাহিনীকে তাদের পরিকল্পনা ও কৌশল মোতাবেক ব্যবহার করেছেন - যা অন্য যেকোনো বাহিনী তুলনায় আমেরিকাকে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
Comment