ِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
আপনারা জানেন আইএস এবং তাঁদের সমর্থকরা শামের সব দলকে মুরতাদ মনে করে। বিভিন্ন সময় আইএস তাদের ম্যাগাজিন দাবীক্বের মাধ্যমে বিভিন্ন দলের উপর তাকফির করেছে। এই তাকফির শুরু হয়েছিল এফএসএ-কে দিয়ে [জাইশ আল হুর/ফ্রি সিরিয়ান আর্মি]। তারপর তারা জাইশ আল ইসলাম, আহরার আস শাম এবং ইসলামিক ফ্রন্টকে (ফ্রন্টের সদস্য সব দলকে) তাকফির করে। তারপর তারা জাইশ আল ফাতেহকে তাকফির করে, এবং জাবহাতুন নুসরাকে তাকফির করে। আমি নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে তাদের তাকফিরের পক্ষে দেয়া যুক্তি তুলে ধরছি। এগুলোর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই তথ্যগত ভুল আছে, বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে ঢালাওভাবে মোটাদাগে বিচারের প্রবণতা আছে, এবং তীব্র গুলুহ আছে। এটা পরিস্কার হওয়া দরকার যে নিচের যুক্তিগুলো আইসিস এবং তাদের পক্ষালম্বনকারী, উভয়েরই দেয়া।
FSA – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা সেক্যুলারিসমের জন্য যুদ্ধ করে। শারীয়াহর জন্য না। এছাড়া তুর্কি-কাতারের মতো দেশের কাছ থেকে সহায়তা নেয়। এসব দেশের সরকার কাফির-মুরতাদ। তাই কাফির-মুরতাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে এরা মুরতাদ। FSA এর সাথে একই সময়ে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য আইএস বিভিন্ন সময়ে জাবহাতুন নুসরাকে মুনাফিক, মুরতাদ বিভিন্ন কিছু বলেছে।
জাইশ আল ইসলাম – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা আল সাউদ, কাতার ইত্যাদি তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। এরা শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চায় না।এই দল বলেছে শামের জনগন যা চাইবে সেটা দিয়ে শাসন করা হবে, তাই এরা মুরতাদ-সাহওয়াত।
ইসলামি ফ্রন্ট – জাইশ আল ইসলামের মতো একই যুক্তি।
আহরার আস শাম – ইসলামিক ফ্রন্টের সদস্য হবার কারণে মুরতাদ। কাতার এবং তুর্কির তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে মুরতাদ-সাহওয়ায়ত।
জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য অন্যান্য দল (যেমন জুন্দ আল আকসা): কারণ এরা মুরতাদ আহরার আস শামের সাথে মিলে যুদ্ধ করছে। এবং মুরতাদকে সাহায্য করছে, এবং তাকে কাফির বলছে না। তাই এরাও সবাই কাফির।
জাবহাতুন নুসরাঃ জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য হবার কারণে। আহরারকে তাকফির না করার কারণে। সব FSA দলকে ঢালাওভাবে তাকফির না করার কারণে; মুরতাদ-সাহওয়াত।
উল্লেখ্য সত্যিকারভাবে কি কারণে আইসিস জাবহাতুন নুসরা এবং অন্যান্য দলকে তাকফির করে, এটা আদনানীর রমযান মাসে দেয়া বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট। রমযানের ৫ তারিখ দেয়া বার্তায় আদনানী বলে-
“…তাই সাবধান, দাওলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধর করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।”
তাই এটা পরিষ্কার যে আইএস তাদের সমর্থন করা বা না করাকে ঈমান ও কুফরের একটি মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে। এবং অন্যান্য দলগুলোকে তাকফির করার পেছনে তাদের মূল কারণ এটাই। এটা তাদের মানহাজ ও আক্বীদার এক জঘন্য ভ্রান্তি যে, তারা তাদের নিজেদের দলকে ইমান ও কুফরের মানদন্ড হিসেবে নিয়েছে। এই একই কারণে আইসিস লিবিয়ার মুজাহেদীনে তাকফির করেছে। শাইখ মুখতার বেল মুখতারের মতো মুজাহিদের ব্যাপারে হুলিয়া ঘোষনা করেছে। খুরাসানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তালিবানকে হত্যা করেছে। কারণ তারা তাদের নিজেদের দলের প্রতি আনুগত্যকে ইমান ও কুফর, আল ওয়ালা আল বারার মান্দন্ড হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের দল, তাদের এই কল্পিত “খিলাফাহ” তাদের জন্য এক উপাস্য মূর্তিতে, এক তাগুতে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য যেসব কারণ তারা উপস্থাপন করেছে এগুলো গৌণ। মুখ্য কারণ হল এই দলগুলো তাদের বিরোধিতা করেছে, তাই আইএসের দৃষ্টিতে তারা কাফির। আমরা দু’আ করি আল্লাহ্* যেন আমাদের মুরজি’আদের ইরজা আর গুলাতের গুলুহ থেকে রক্ষা করেন, এবং আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বীমে অটল রাখেন।
যাই হোক, তা সত্ত্বেও আমরা দেখাবো যে কারণে আইসিস, জাবহাতুন নুসরা এবং জুন্দ আল আকসার মতো দলগুলোকে তাকফির করেছে সেই একই কারণে তাদেরকেও তাকফির করা যায়। আমরা দেখাবো কিভাবে আইএস সুবিধামতো তাদের তাকফিরের নীতি পরিবর্তন করে, এবং জঘন্য দ্বিমুখীনীতি অনুসরণ করে। তাদের তাকফিরের সাথে দ্বীন ইসলামের সম্পর্কের চেয়ে বেশী সম্পর্ক হল ক্ষমতার লোভ। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা নীতি পালটে ফেলে। এবং তাদের নীতি অনুযায়ী তারা নিজেরাও মুরতাদ প্রমাণিত হয়, বিভিন্ন ভাবে। আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা কিভাবে এই দল দ্বীন ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা করেছে এবং মুসলিম উম্মাহ-র সাথে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছে। হয়তো আল্লাহ্* এর মাধ্যমে কাউকে হেদায়েত করবেন।
প্রথমত, আসা যাক FSA এর কথায়। আইএস জাবহাতুন নুসরাকে FSA এর সাথে একসাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য তাকফির করেছে। FSA এর কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার জন্য তারা জাবহাতুন নুসরার কমান্ডারদের মুরতাদ ফাতাওয়া দিয়েছে এবং হত্যা করেছে। শাইখ আবু ফিরাস আস সুরী হাফিযাহুল্লাহ, এই বিষয়ে বিস্তারিত বেশ কয়েক জায়গায় আলোচনা করেছেন। দেখা যাক, আইসিসের এই তাকফিরের নীতি তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় কি যায় না।
বাশারের সৈন্যদের কাছ থেকে মেনাঘ বিমানঘাঁটি মুক্ত করায় যেসব দল অংশ নিয়েছিল, তার মধ্যে আইএসও ছিল। এই অপারেশানে লিওয়া আল ফাতেহ নামে একটি দলও অংশগ্রহণ করেছিল। আর লিওয়া আল ফাতেহ ছিল FSA-র একটি দল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি আল নুসরা FSA-র সাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার কারনে মুরতাদ হয়, তাহলে একই যুক্তিতে আইএস ও মুরতাদ।
কেউ হয়তো বলতে পারেন, “কিন্তু তখন তো যুদ্ধ ছিল বাশারের বিরুদ্ধে, এটা জায়েজ আছে।“ কিন্তু আইএস এই লিওয়া আল ফাতেহের সাথে একই সাথে ঈদের জামাত আয়োজন করেছিল। মেনাঘ বিমানঘাঁটির ভেতরে এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। FSA-র সব দল যদি মুরতাদ হয়, যদি FSA-র কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার কারণে কেউ মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে মুরতাদের সাথে পাশাপাশি সালাত আদায় করলে মুরতাদ হয় না? এই নীতি অনুযায়ী অবশ্যই আইএস মুরতাদ। এখন আমার ভাইরা, আপনারাই বলুন আপনারা কোনটা মেনে নেবেন। জাবহাতুন নুসরা মুরতাদ আর আইএসও মুরতাদ? নাকি আপনারা এখন মানবেন যে সব FSA-দল মুরতাদ না, তাই যেসব দল মুসলিম তাদের সাথে অপারেশানে অংশগ্রহণ করা [যেরকম আইসিস মেনাঘ বিমানঘাঁটির ক্ষেত্রে করেছে] রিদ্দা না, এবং জাবহাতের উপর আইএসের এই তাকফির ভুল।
হাসাকাহতে কুর্দি YPG এর বিরুদ্ধে আইসিস কাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছিল? এই যুদ্ধে FSA, আহরার, জাবহাতুন নুসরা এবং আইএস সহ আরও অনেক গ্রুপ অংশগ্রহণ করেছিল। এই সময় প্রতিটি দল যৌথ শারীয়াহ আদালত মেনে কাজ করেছিল। যুদ্ধলব্ধ গানীমাহ যৌথ শারীয়াহ আদালতের মাধ্যমে ভাগ করা হয়েছিল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। সব FSA দল যদি সেক্যুলার মুরতাদ হয়, তাহলে আইএসেও কোন বিবেচনায় মুরতাদের সাথে গানীমাহ ভাগাভাগি করলো? কিভাবে মুরতাদের অংশগ্রহণ আছে এমন শারীয়াহ আদালত তারা মেনে নিলো? অথচ হাকীম আল উম্মাহ শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ যখন তাদের যৌথ শারীয়হ আদালতে আসতে বললেন, তখন আইএস সেটা মানলো না। মুরতাদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি, কিন্তু নিজেদের আমীরের আদেশ মেনে মুসলিমদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি না। এই হল আইএসের তাওহীদ?
আইএস এবং তাদের সমর্থকরা বলে – “জাবহাহ কিভাবে মুজাহিদিন হয়, যখন জাবহাহ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশে অবস্থিত FSA র এলাকায় হামলা চালায় না। FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে না, সত্যিকার মুজাহিদিন হলে জাবহাহ তো FSA কে আক্রমণ করতো।“
অথচ আইএসের সাথে শামের অন্যান্য দলগুলোর যুদ্ধ শুরু হবার আগে রাক্কা, আলেপ্পো, দেইর আয যুর, ইদলিব, হাসাকাহতে আইএসের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশেই FSA নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছিল। অথচ আইএস তখন তাদের আক্রমণ করে নি। তখনো কিন্তু FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শারীয়াহ দিয়ে শাসন করতো না। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি FSA কে আক্রমণ না করার কারণে জাবহাহ মুরতাদীন হয়ে থাকে, তাহলে একই কারণে আইএসও মুরতাদীন।
আইএস, জাবহাতুন নুসরাকে এই বলে সমালোচনা করে যে সেক্যুলার FSA, জাবহাহ-র প্রশংসা করে। দেখা যাক, “মুরতাদ” FSA কমান্ডার আব্দেল জাব্বার আল আকিদি, যে মেনাঘ বিমানঘাঁটির অপারেশানে আইসিসের সাথে এক সাথে অংশ নিয়েছিল সে কি বলেঃ
FSA – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা সেক্যুলারিসমের জন্য যুদ্ধ করে। শারীয়াহর জন্য না। এছাড়া তুর্কি-কাতারের মতো দেশের কাছ থেকে সহায়তা নেয়। এসব দেশের সরকার কাফির-মুরতাদ। তাই কাফির-মুরতাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে এরা মুরতাদ। FSA এর সাথে একই সময়ে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য আইএস বিভিন্ন সময়ে জাবহাতুন নুসরাকে মুনাফিক, মুরতাদ বিভিন্ন কিছু বলেছে।
জাইশ আল ইসলাম – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা আল সাউদ, কাতার ইত্যাদি তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। এরা শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চায় না।এই দল বলেছে শামের জনগন যা চাইবে সেটা দিয়ে শাসন করা হবে, তাই এরা মুরতাদ-সাহওয়াত।
ইসলামি ফ্রন্ট – জাইশ আল ইসলামের মতো একই যুক্তি।
আহরার আস শাম – ইসলামিক ফ্রন্টের সদস্য হবার কারণে মুরতাদ। কাতার এবং তুর্কির তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে মুরতাদ-সাহওয়ায়ত।
জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য অন্যান্য দল (যেমন জুন্দ আল আকসা): কারণ এরা মুরতাদ আহরার আস শামের সাথে মিলে যুদ্ধ করছে। এবং মুরতাদকে সাহায্য করছে, এবং তাকে কাফির বলছে না। তাই এরাও সবাই কাফির।
জাবহাতুন নুসরাঃ জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য হবার কারণে। আহরারকে তাকফির না করার কারণে। সব FSA দলকে ঢালাওভাবে তাকফির না করার কারণে; মুরতাদ-সাহওয়াত।
উল্লেখ্য সত্যিকারভাবে কি কারণে আইসিস জাবহাতুন নুসরা এবং অন্যান্য দলকে তাকফির করে, এটা আদনানীর রমযান মাসে দেয়া বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট। রমযানের ৫ তারিখ দেয়া বার্তায় আদনানী বলে-
“…তাই সাবধান, দাওলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধর করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।”
তাই এটা পরিষ্কার যে আইএস তাদের সমর্থন করা বা না করাকে ঈমান ও কুফরের একটি মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে। এবং অন্যান্য দলগুলোকে তাকফির করার পেছনে তাদের মূল কারণ এটাই। এটা তাদের মানহাজ ও আক্বীদার এক জঘন্য ভ্রান্তি যে, তারা তাদের নিজেদের দলকে ইমান ও কুফরের মানদন্ড হিসেবে নিয়েছে। এই একই কারণে আইসিস লিবিয়ার মুজাহেদীনে তাকফির করেছে। শাইখ মুখতার বেল মুখতারের মতো মুজাহিদের ব্যাপারে হুলিয়া ঘোষনা করেছে। খুরাসানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তালিবানকে হত্যা করেছে। কারণ তারা তাদের নিজেদের দলের প্রতি আনুগত্যকে ইমান ও কুফর, আল ওয়ালা আল বারার মান্দন্ড হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের দল, তাদের এই কল্পিত “খিলাফাহ” তাদের জন্য এক উপাস্য মূর্তিতে, এক তাগুতে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য যেসব কারণ তারা উপস্থাপন করেছে এগুলো গৌণ। মুখ্য কারণ হল এই দলগুলো তাদের বিরোধিতা করেছে, তাই আইএসের দৃষ্টিতে তারা কাফির। আমরা দু’আ করি আল্লাহ্* যেন আমাদের মুরজি’আদের ইরজা আর গুলাতের গুলুহ থেকে রক্ষা করেন, এবং আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বীমে অটল রাখেন।
যাই হোক, তা সত্ত্বেও আমরা দেখাবো যে কারণে আইসিস, জাবহাতুন নুসরা এবং জুন্দ আল আকসার মতো দলগুলোকে তাকফির করেছে সেই একই কারণে তাদেরকেও তাকফির করা যায়। আমরা দেখাবো কিভাবে আইএস সুবিধামতো তাদের তাকফিরের নীতি পরিবর্তন করে, এবং জঘন্য দ্বিমুখীনীতি অনুসরণ করে। তাদের তাকফিরের সাথে দ্বীন ইসলামের সম্পর্কের চেয়ে বেশী সম্পর্ক হল ক্ষমতার লোভ। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা নীতি পালটে ফেলে। এবং তাদের নীতি অনুযায়ী তারা নিজেরাও মুরতাদ প্রমাণিত হয়, বিভিন্ন ভাবে। আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা কিভাবে এই দল দ্বীন ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা করেছে এবং মুসলিম উম্মাহ-র সাথে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছে। হয়তো আল্লাহ্* এর মাধ্যমে কাউকে হেদায়েত করবেন।
প্রথমত, আসা যাক FSA এর কথায়। আইএস জাবহাতুন নুসরাকে FSA এর সাথে একসাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য তাকফির করেছে। FSA এর কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার জন্য তারা জাবহাতুন নুসরার কমান্ডারদের মুরতাদ ফাতাওয়া দিয়েছে এবং হত্যা করেছে। শাইখ আবু ফিরাস আস সুরী হাফিযাহুল্লাহ, এই বিষয়ে বিস্তারিত বেশ কয়েক জায়গায় আলোচনা করেছেন। দেখা যাক, আইসিসের এই তাকফিরের নীতি তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় কি যায় না।
বাশারের সৈন্যদের কাছ থেকে মেনাঘ বিমানঘাঁটি মুক্ত করায় যেসব দল অংশ নিয়েছিল, তার মধ্যে আইএসও ছিল। এই অপারেশানে লিওয়া আল ফাতেহ নামে একটি দলও অংশগ্রহণ করেছিল। আর লিওয়া আল ফাতেহ ছিল FSA-র একটি দল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি আল নুসরা FSA-র সাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার কারনে মুরতাদ হয়, তাহলে একই যুক্তিতে আইএস ও মুরতাদ।
কেউ হয়তো বলতে পারেন, “কিন্তু তখন তো যুদ্ধ ছিল বাশারের বিরুদ্ধে, এটা জায়েজ আছে।“ কিন্তু আইএস এই লিওয়া আল ফাতেহের সাথে একই সাথে ঈদের জামাত আয়োজন করেছিল। মেনাঘ বিমানঘাঁটির ভেতরে এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। FSA-র সব দল যদি মুরতাদ হয়, যদি FSA-র কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার কারণে কেউ মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে মুরতাদের সাথে পাশাপাশি সালাত আদায় করলে মুরতাদ হয় না? এই নীতি অনুযায়ী অবশ্যই আইএস মুরতাদ। এখন আমার ভাইরা, আপনারাই বলুন আপনারা কোনটা মেনে নেবেন। জাবহাতুন নুসরা মুরতাদ আর আইএসও মুরতাদ? নাকি আপনারা এখন মানবেন যে সব FSA-দল মুরতাদ না, তাই যেসব দল মুসলিম তাদের সাথে অপারেশানে অংশগ্রহণ করা [যেরকম আইসিস মেনাঘ বিমানঘাঁটির ক্ষেত্রে করেছে] রিদ্দা না, এবং জাবহাতের উপর আইএসের এই তাকফির ভুল।
হাসাকাহতে কুর্দি YPG এর বিরুদ্ধে আইসিস কাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছিল? এই যুদ্ধে FSA, আহরার, জাবহাতুন নুসরা এবং আইএস সহ আরও অনেক গ্রুপ অংশগ্রহণ করেছিল। এই সময় প্রতিটি দল যৌথ শারীয়াহ আদালত মেনে কাজ করেছিল। যুদ্ধলব্ধ গানীমাহ যৌথ শারীয়াহ আদালতের মাধ্যমে ভাগ করা হয়েছিল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। সব FSA দল যদি সেক্যুলার মুরতাদ হয়, তাহলে আইএসেও কোন বিবেচনায় মুরতাদের সাথে গানীমাহ ভাগাভাগি করলো? কিভাবে মুরতাদের অংশগ্রহণ আছে এমন শারীয়াহ আদালত তারা মেনে নিলো? অথচ হাকীম আল উম্মাহ শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ যখন তাদের যৌথ শারীয়হ আদালতে আসতে বললেন, তখন আইএস সেটা মানলো না। মুরতাদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি, কিন্তু নিজেদের আমীরের আদেশ মেনে মুসলিমদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি না। এই হল আইএসের তাওহীদ?
আইএস এবং তাদের সমর্থকরা বলে – “জাবহাহ কিভাবে মুজাহিদিন হয়, যখন জাবহাহ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশে অবস্থিত FSA র এলাকায় হামলা চালায় না। FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে না, সত্যিকার মুজাহিদিন হলে জাবহাহ তো FSA কে আক্রমণ করতো।“
অথচ আইএসের সাথে শামের অন্যান্য দলগুলোর যুদ্ধ শুরু হবার আগে রাক্কা, আলেপ্পো, দেইর আয যুর, ইদলিব, হাসাকাহতে আইএসের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশেই FSA নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছিল। অথচ আইএস তখন তাদের আক্রমণ করে নি। তখনো কিন্তু FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শারীয়াহ দিয়ে শাসন করতো না। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি FSA কে আক্রমণ না করার কারণে জাবহাহ মুরতাদীন হয়ে থাকে, তাহলে একই কারণে আইএসও মুরতাদীন।
আইএস, জাবহাতুন নুসরাকে এই বলে সমালোচনা করে যে সেক্যুলার FSA, জাবহাহ-র প্রশংসা করে। দেখা যাক, “মুরতাদ” FSA কমান্ডার আব্দেল জাব্বার আল আকিদি, যে মেনাঘ বিমানঘাঁটির অপারেশানে আইসিসের সাথে এক সাথে অংশ নিয়েছিল সে কি বলেঃ
Comment