জঙ্গির পক্ষ থেকে জাতির প্রতি প্রশ্নঃ হে লোক সকল তোমরা কোথায় যাচ্ছ! কিসে তোমাদের বিভ্রান্ত করল?
‘হৃদয়ের পার্লামেন্টে আজ স্পিকার নেই। মনের জনসভায় নেই কোনো বক্তা। অন্তরে হরতাল ডেকেছে বিরোধীদল। ভালবাসার ভোটকেন্দ্রে একটিমাত্র ভোট পেয়েছিলাম; তাও আবার জাল। হায়রে কপাল।’
.
সিলেট উইমেন্স কলেজের ছাত্রী খাদিজা। পরীক্ষা দিয়ে ঘরে ফেরা পথে আক্রান্ত হয় এক ছাত্রলীগের সোনার ছেলের দ্বারা। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ছেলেটি খাদিজাকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। সোনার ছেলের নাম বদরুল। সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসভাপতি। উপরের কয়েকটি লাইন এই মহান প্রেমসাধক কবির লেখা।
.
মিডিয়ার কল্যাণে সবাই ইতিমধ্যে এ ব্যাপারটা সম্পর্কে জেনেছেন। বিষয়টি নিয়ে বলার মতো অনেক কিছুই আছে। অনেকেই অনেক কথাই বলেছেন। তবে আমি পাঠকদের সাথে আলোচনা করতে চাই এমন একটি বিষয় নিয়ে যা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না।
.
আমার আলোচনার সারবস্তু একটি প্রশ্নের আকারে প্রকাশ করা যায়। প্রশ্নটি হল – আমরা কোথায় যাচ্ছি? একটি সমাজ, একটি জাতি, একটি দেশ হিসেবে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি?
.
খাদিজার এ ঘটনাটি নতুন কিছু না। কিছুদিন আগেই একজন স্কুল ছাত্রীকে একই কারনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিষ্ঠুরতার ব্যাপারটাও নতুন কিছু না। আমরা এর আগে সিলেটের রাজনের ভিডিও দেখেছি। সোনার ছেলেদের হাতে বিশ্বজিৎ হত্যার ভিডিও দেখেছি। নিজাম হাজারির সাঙ্গপাঙ্গদের ভিডিও দেখেছি। একাধিকবার পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে বিভিন্ন শিশুদের হত্যার প্রচেষ্টার সংবাদ পড়েছি। এরকম ঘটনাগুলো নিয়মিত আমরা দেখছি। শুনছি। সয়ে যাচ্ছি। ক্রমে সমাজের মানবতার জায়গাটাতে যে পৈশাচিকতা ঢুকে পড়ছে এটা আমরা নিরবে মেনে নিয়েছি। অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
.
যখন আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফরয জিহাদের কথা বলি। যখন আমরা তাগুতের শাসন প্রত্যাখ্যা করে আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আহবান জানাই। যখন আমরা আরাকানের নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে বলি, যখন রাসূলুল্লাহর ﷺ অবমাননাকারীদের হত্যা করা হয়, তখন সাধারণ শহুরে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে আলিম সমাজের অনেকে পর্যন্ত আমাদের বলেন আমরা যা বলছি এর মাধ্যমে ফিতনা হবে। ফাসাদ হবে।
.
এ ধরনের বক্তব্যের শরয়ী বিশ্লেষণ বা খন্ডনে আজ যাবো না। এমন অনেক লেখাই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। যারা নিদেনপক্ষে চিন্তার জগতে ইনসাফ করতে পারেন তারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন জঙ্গিরা আর যাই হোক ব্রেইনওয়াশড না, তারা না বুঝে না জেনে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যাও করে না। আলহামদুলিল্লাহ ইসলামও তারা বোঝে, মানবিক যুক্তি তর্কও তারা বোঝে। তাই আজ যুক্তি তর্কে না গিয়ে আমি আপনাদের আন্তরিক ভাবে প্রশ্ন করতে চাই – এই যে আপনারা ফিতনার ভয়ে, কষ্টের ভয়ে ফরয ইবাদাত থেকে দূরে সরে আছেন, এটা আপনাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমরা কি ফিতনা থেকে বাঁচতে পারছি? আমরা কি ফাসাদ থেকে বাঁচতে পারছি? আমরা কি লাঞ্ছনা ও অপমান থেকে বাচতে পারছি?
.
শুধু ব্যার্থ প্রেমিক আর ব্যার্থ কবি বদরুল আলমের মতো ঘটনা গুলো না, বরং পুরো সমাজ পুরো দেশের অবস্থাই একবার চিনাত করে দেখুন না। দেশ ভাসছে মাদকের উপরে। বাংলাদেশ থেকে আগে ইন্ডিয়াতে নারী পাচার করা হতো পতিতাবৃত্তির জন্য। এখন বার্মাতেও পাঠানো হচ্ছে তাদের। পত্রিকার রিপোর্ট হচ্ছে “যাচ্ছে নারী, আসছে ইয়াবা।” একদিকে তরুণীদের পতিতাবৃত্তির জন্য পাঠানো হচ্ছে, অন্যদিকে তরুণেরা মাদকের নেশায় করমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে। গবেষণা রিপোর্টে জানা যাচ্ছে স্কুলগামী প্রায় ৮০% শিশু নিয়মিত পর্ণোগ্রাফি দেখে। শুধু তাই না, তাদের পছন্দ দেশী ভিডিও দেখা।
.
জাতির ভবিষ্যতের একাংশ বার্মার সস্তা হোটেলে ভাড়া খাটছে, আরেক অংশ ইয়াবা-হেরোইন-গাজার নেশায় বুদ হয়ে আছে। আর কোমলমতি শিশুরা নির্মলানন্দে নীল ছবি দেখে দেখে আনন্দে লাল-নীল-বেগুনী হচ্ছে। আবার এরাই ফাস করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে গন্ডায় গন্ডায় জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এভাব কলেজ পার হচ্ছে, তারপর ফাস করা প্রশ্নপত্র নিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হচ্ছে। শাহবাগে যাচ্ছে, বিরিয়ানি বিপ্লব করছে, পহেলে বৈশাখ, একুশেসহ নানা দিনে চেতনাবাজী করে বেড়াচ্ছে। প্রগতি শিখছে ও শেখাচ্ছে। সমাজে বাড়ছে ডিভোর্সের মাত্রা, ধর্ষন, শিশু অপরাধ, দুর্নীতি। দেশকে একেবারে অন্ধকূপের ঘুটঘুটে অন্ধকারে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
.
উপর থেকে নিচে সব জায়গায় একই অবস্থা। অনেক বড়, অনেক ভয়ংকর একটা বাস্তবতার খুব ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ একটা চিত্র তুলে ধরলাম। এখানে শুধু শিশু-কিশোর-তরুনদের কথা বললাম। কিন্তু এই অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এটাই বাস্তবতা। অপ্রিয়, তেতো, অজনপ্রিয় বাস্তবতা। আর ক্রমান্বয়ে অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আগে বার্মা থেকে ইয়াবা আসতো এখন ঢাকার আশেপাশে উচ্চমানের ইয়াবার ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। আগে তরুনরা বিদেশী নীল ছবি খুজে খুজে দেখতো, এখন শিশুরাই দেশী ভিডিও দিয়ে মোবাইল বোঝাই করে রাখে।
.
আগে বাবা-মারা ছেলেমেয়েদের বেশি টিভি দেখতে মানা করতো – এখন সারাক্ষন বাবা-মারাই হিন্দি সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকে। আগে চক্ষুলজ্জা বলে কিছু একটা ছিল এখন মেয়েদের পোশাকের সাইজের মতো এই লজ্জাও দিন দিন কমতে কমতে, প্রায় মিলিয়ে যাচ্ছে। এখন ভরা ড্রয়িং রুমে বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে এক সাথে বসে আইপিএল আর টি টোয়েন্টির প্রায় নগ্ন চিয়ারলিডারদের শরীর নাচানো দেখে।
.
ফিতনার কথা বলে আপনারা ফরয থেকে ছুটে পালাচ্ছেন, কিন্তু সমাজ কি ফিতনামুক্ত? দেশ কি ফাসাদমুক্ত? পর্নোগ্রাফি আসক্ত, ইয়াবা-গাজায় আসক্ত, পরকীয়া আর বহুগমনে অভ্যস্ত, নৈতিকতা শূন্য, সততা শূন্য একটা সমাজ তৈরি হয়ে গেছে। আরো তৈরি হচ্ছে। তাহলে কোন ফিতনা থেকে আমরা বাচতে পারছি? কোন ফাসাদ থেকে আমরা বাঁচতে পারছি? কিসে আমাদের ধোঁকা দিল? কিসে আমাদের সত্য থেকে ভুলিয়ে দিল?
.
তাগুতি শাসনের মূল লক্ষ্যই হল মানুষের ফিতরাতকে বিকৃত করা। মানুষের শালীনতা, লজ্জা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, নৈতিকতাকে নষ্ট করে ফেলা। মানুষকে নারী-বাড়ি-গাড়ির মাদকতায় আচ্ছন্ন করে দেওয়া। মানুষের নফস আর কুপ্রবৃত্তিকে মুক্ত করে দেওয়া। ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া। আর সেটাই আমাদের দেশে হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন রূপে হচ্ছে। যতোদিন তাগুতি শাসন থাকবে, যতোদিন সমাজ ও রাষ্ট্রের কম্পাস হবে কুফর, যতোদিন মানবরচিত দর্শন ও আইন দিয়ে মানুষকে দিকনির্দেশনার চেষ্টা চলবে ততদিন এ “উন্নতির মহাজোয়ার” চলবে।
.
বিশ্বাস না হলে পশ্চিমাদের সমাজের দিকে তাকান। ইউরোপের দিকে তাকান। বিশ্বের ধর্ষনের রাজধানী ভারতের দিকে তাকান। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দেয়ার আগে একটি বিষয় চিন্তা করুন – আপনার মা, বোন কিংবা স্ত্রীকে বাজারে নামিয়ে দিলে অর্থের বিচারে সেটা আপনার জন্য লাভজনকই হবে। তবে এটা কি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যথেষ্ট?
.
একটি হাদীস উল্লেখ করি রাসূল ﷺ বলেনঃ
.
“যখন তোমরা ব্যাবসা-বাণিজ্যে ডুবে যাবে, গরুর লেজের পিছনে পড়ে থাকবে, কৃষিকার্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে আর আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগ করবে,আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর দুর্দশা আপতিত করবেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তা তুলে নেয়া হবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রকৃত দ্বীন (অর্থাৎ ইসলামে)ফিরে আসবে।” (সুনান আবু দাঊদ, অধ্যায়- ২৩, হাদীস নং ৩৪৫৫; সহীহ আল-জামী‘, হাদীস নং- ৬৮৮; আহমদ, হাদীস নং ৪৮২৫)
.
হে লোকসকল তোমরা কোথায় যাচ্ছ? কিসে আমাদের বাস্তবতাকে ভুলিয়ে দিল? কিসে আমাদের বিভ্রান্ত করলো? কিসের মধ্যে তোমরা সমাধান খুজছো? কি থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছো? কিসে আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বিম থেকে বিচ্যুত করলো? দিন ও রাতের ব্যবধান কি এতোটাই বেড়ে গেছে?
.
আল্লাহ সত্য, তাঁর নবী ﷺ সত্য, তাঁর ﷺ জান্নাত সত্য, তাঁর ﷺ জাহান্নাম সত্য, তাঁর ﷺ ফেরেশতাগণ সত্য, বিচার দিবস সত্য, তাঁর ﷺ কিতাব সত্য। উম্মি নবী ﷺ যা জানিয়েছেন নিশ্চয় তা মহাসত্য। আর হিদায়াতের পর গোমরাহি ছাড়া আর কি বাকি থাকে?
https://www.facebook.com/PleaseGiveP...712041956831:0
‘হৃদয়ের পার্লামেন্টে আজ স্পিকার নেই। মনের জনসভায় নেই কোনো বক্তা। অন্তরে হরতাল ডেকেছে বিরোধীদল। ভালবাসার ভোটকেন্দ্রে একটিমাত্র ভোট পেয়েছিলাম; তাও আবার জাল। হায়রে কপাল।’
.
সিলেট উইমেন্স কলেজের ছাত্রী খাদিজা। পরীক্ষা দিয়ে ঘরে ফেরা পথে আক্রান্ত হয় এক ছাত্রলীগের সোনার ছেলের দ্বারা। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ছেলেটি খাদিজাকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। সোনার ছেলের নাম বদরুল। সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসভাপতি। উপরের কয়েকটি লাইন এই মহান প্রেমসাধক কবির লেখা।
.
মিডিয়ার কল্যাণে সবাই ইতিমধ্যে এ ব্যাপারটা সম্পর্কে জেনেছেন। বিষয়টি নিয়ে বলার মতো অনেক কিছুই আছে। অনেকেই অনেক কথাই বলেছেন। তবে আমি পাঠকদের সাথে আলোচনা করতে চাই এমন একটি বিষয় নিয়ে যা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না।
.
আমার আলোচনার সারবস্তু একটি প্রশ্নের আকারে প্রকাশ করা যায়। প্রশ্নটি হল – আমরা কোথায় যাচ্ছি? একটি সমাজ, একটি জাতি, একটি দেশ হিসেবে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি?
.
খাদিজার এ ঘটনাটি নতুন কিছু না। কিছুদিন আগেই একজন স্কুল ছাত্রীকে একই কারনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিষ্ঠুরতার ব্যাপারটাও নতুন কিছু না। আমরা এর আগে সিলেটের রাজনের ভিডিও দেখেছি। সোনার ছেলেদের হাতে বিশ্বজিৎ হত্যার ভিডিও দেখেছি। নিজাম হাজারির সাঙ্গপাঙ্গদের ভিডিও দেখেছি। একাধিকবার পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে বিভিন্ন শিশুদের হত্যার প্রচেষ্টার সংবাদ পড়েছি। এরকম ঘটনাগুলো নিয়মিত আমরা দেখছি। শুনছি। সয়ে যাচ্ছি। ক্রমে সমাজের মানবতার জায়গাটাতে যে পৈশাচিকতা ঢুকে পড়ছে এটা আমরা নিরবে মেনে নিয়েছি। অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
.
যখন আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফরয জিহাদের কথা বলি। যখন আমরা তাগুতের শাসন প্রত্যাখ্যা করে আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আহবান জানাই। যখন আমরা আরাকানের নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে বলি, যখন রাসূলুল্লাহর ﷺ অবমাননাকারীদের হত্যা করা হয়, তখন সাধারণ শহুরে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে আলিম সমাজের অনেকে পর্যন্ত আমাদের বলেন আমরা যা বলছি এর মাধ্যমে ফিতনা হবে। ফাসাদ হবে।
.
এ ধরনের বক্তব্যের শরয়ী বিশ্লেষণ বা খন্ডনে আজ যাবো না। এমন অনেক লেখাই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। যারা নিদেনপক্ষে চিন্তার জগতে ইনসাফ করতে পারেন তারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন জঙ্গিরা আর যাই হোক ব্রেইনওয়াশড না, তারা না বুঝে না জেনে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যাও করে না। আলহামদুলিল্লাহ ইসলামও তারা বোঝে, মানবিক যুক্তি তর্কও তারা বোঝে। তাই আজ যুক্তি তর্কে না গিয়ে আমি আপনাদের আন্তরিক ভাবে প্রশ্ন করতে চাই – এই যে আপনারা ফিতনার ভয়ে, কষ্টের ভয়ে ফরয ইবাদাত থেকে দূরে সরে আছেন, এটা আপনাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমরা কি ফিতনা থেকে বাঁচতে পারছি? আমরা কি ফাসাদ থেকে বাঁচতে পারছি? আমরা কি লাঞ্ছনা ও অপমান থেকে বাচতে পারছি?
.
শুধু ব্যার্থ প্রেমিক আর ব্যার্থ কবি বদরুল আলমের মতো ঘটনা গুলো না, বরং পুরো সমাজ পুরো দেশের অবস্থাই একবার চিনাত করে দেখুন না। দেশ ভাসছে মাদকের উপরে। বাংলাদেশ থেকে আগে ইন্ডিয়াতে নারী পাচার করা হতো পতিতাবৃত্তির জন্য। এখন বার্মাতেও পাঠানো হচ্ছে তাদের। পত্রিকার রিপোর্ট হচ্ছে “যাচ্ছে নারী, আসছে ইয়াবা।” একদিকে তরুণীদের পতিতাবৃত্তির জন্য পাঠানো হচ্ছে, অন্যদিকে তরুণেরা মাদকের নেশায় করমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে। গবেষণা রিপোর্টে জানা যাচ্ছে স্কুলগামী প্রায় ৮০% শিশু নিয়মিত পর্ণোগ্রাফি দেখে। শুধু তাই না, তাদের পছন্দ দেশী ভিডিও দেখা।
.
জাতির ভবিষ্যতের একাংশ বার্মার সস্তা হোটেলে ভাড়া খাটছে, আরেক অংশ ইয়াবা-হেরোইন-গাজার নেশায় বুদ হয়ে আছে। আর কোমলমতি শিশুরা নির্মলানন্দে নীল ছবি দেখে দেখে আনন্দে লাল-নীল-বেগুনী হচ্ছে। আবার এরাই ফাস করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে গন্ডায় গন্ডায় জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এভাব কলেজ পার হচ্ছে, তারপর ফাস করা প্রশ্নপত্র নিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হচ্ছে। শাহবাগে যাচ্ছে, বিরিয়ানি বিপ্লব করছে, পহেলে বৈশাখ, একুশেসহ নানা দিনে চেতনাবাজী করে বেড়াচ্ছে। প্রগতি শিখছে ও শেখাচ্ছে। সমাজে বাড়ছে ডিভোর্সের মাত্রা, ধর্ষন, শিশু অপরাধ, দুর্নীতি। দেশকে একেবারে অন্ধকূপের ঘুটঘুটে অন্ধকারে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
.
উপর থেকে নিচে সব জায়গায় একই অবস্থা। অনেক বড়, অনেক ভয়ংকর একটা বাস্তবতার খুব ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ একটা চিত্র তুলে ধরলাম। এখানে শুধু শিশু-কিশোর-তরুনদের কথা বললাম। কিন্তু এই অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এটাই বাস্তবতা। অপ্রিয়, তেতো, অজনপ্রিয় বাস্তবতা। আর ক্রমান্বয়ে অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আগে বার্মা থেকে ইয়াবা আসতো এখন ঢাকার আশেপাশে উচ্চমানের ইয়াবার ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। আগে তরুনরা বিদেশী নীল ছবি খুজে খুজে দেখতো, এখন শিশুরাই দেশী ভিডিও দিয়ে মোবাইল বোঝাই করে রাখে।
.
আগে বাবা-মারা ছেলেমেয়েদের বেশি টিভি দেখতে মানা করতো – এখন সারাক্ষন বাবা-মারাই হিন্দি সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকে। আগে চক্ষুলজ্জা বলে কিছু একটা ছিল এখন মেয়েদের পোশাকের সাইজের মতো এই লজ্জাও দিন দিন কমতে কমতে, প্রায় মিলিয়ে যাচ্ছে। এখন ভরা ড্রয়িং রুমে বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে এক সাথে বসে আইপিএল আর টি টোয়েন্টির প্রায় নগ্ন চিয়ারলিডারদের শরীর নাচানো দেখে।
.
ফিতনার কথা বলে আপনারা ফরয থেকে ছুটে পালাচ্ছেন, কিন্তু সমাজ কি ফিতনামুক্ত? দেশ কি ফাসাদমুক্ত? পর্নোগ্রাফি আসক্ত, ইয়াবা-গাজায় আসক্ত, পরকীয়া আর বহুগমনে অভ্যস্ত, নৈতিকতা শূন্য, সততা শূন্য একটা সমাজ তৈরি হয়ে গেছে। আরো তৈরি হচ্ছে। তাহলে কোন ফিতনা থেকে আমরা বাচতে পারছি? কোন ফাসাদ থেকে আমরা বাঁচতে পারছি? কিসে আমাদের ধোঁকা দিল? কিসে আমাদের সত্য থেকে ভুলিয়ে দিল?
.
তাগুতি শাসনের মূল লক্ষ্যই হল মানুষের ফিতরাতকে বিকৃত করা। মানুষের শালীনতা, লজ্জা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, নৈতিকতাকে নষ্ট করে ফেলা। মানুষকে নারী-বাড়ি-গাড়ির মাদকতায় আচ্ছন্ন করে দেওয়া। মানুষের নফস আর কুপ্রবৃত্তিকে মুক্ত করে দেওয়া। ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া। আর সেটাই আমাদের দেশে হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন রূপে হচ্ছে। যতোদিন তাগুতি শাসন থাকবে, যতোদিন সমাজ ও রাষ্ট্রের কম্পাস হবে কুফর, যতোদিন মানবরচিত দর্শন ও আইন দিয়ে মানুষকে দিকনির্দেশনার চেষ্টা চলবে ততদিন এ “উন্নতির মহাজোয়ার” চলবে।
.
বিশ্বাস না হলে পশ্চিমাদের সমাজের দিকে তাকান। ইউরোপের দিকে তাকান। বিশ্বের ধর্ষনের রাজধানী ভারতের দিকে তাকান। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দেয়ার আগে একটি বিষয় চিন্তা করুন – আপনার মা, বোন কিংবা স্ত্রীকে বাজারে নামিয়ে দিলে অর্থের বিচারে সেটা আপনার জন্য লাভজনকই হবে। তবে এটা কি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যথেষ্ট?
.
একটি হাদীস উল্লেখ করি রাসূল ﷺ বলেনঃ
.
“যখন তোমরা ব্যাবসা-বাণিজ্যে ডুবে যাবে, গরুর লেজের পিছনে পড়ে থাকবে, কৃষিকার্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে আর আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগ করবে,আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর দুর্দশা আপতিত করবেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তা তুলে নেয়া হবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রকৃত দ্বীন (অর্থাৎ ইসলামে)ফিরে আসবে।” (সুনান আবু দাঊদ, অধ্যায়- ২৩, হাদীস নং ৩৪৫৫; সহীহ আল-জামী‘, হাদীস নং- ৬৮৮; আহমদ, হাদীস নং ৪৮২৫)
.
হে লোকসকল তোমরা কোথায় যাচ্ছ? কিসে আমাদের বাস্তবতাকে ভুলিয়ে দিল? কিসে আমাদের বিভ্রান্ত করলো? কিসের মধ্যে তোমরা সমাধান খুজছো? কি থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছো? কিসে আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বিম থেকে বিচ্যুত করলো? দিন ও রাতের ব্যবধান কি এতোটাই বেড়ে গেছে?
.
আল্লাহ সত্য, তাঁর নবী ﷺ সত্য, তাঁর ﷺ জান্নাত সত্য, তাঁর ﷺ জাহান্নাম সত্য, তাঁর ﷺ ফেরেশতাগণ সত্য, বিচার দিবস সত্য, তাঁর ﷺ কিতাব সত্য। উম্মি নবী ﷺ যা জানিয়েছেন নিশ্চয় তা মহাসত্য। আর হিদায়াতের পর গোমরাহি ছাড়া আর কি বাকি থাকে?
https://www.facebook.com/PleaseGiveP...712041956831:0
Comment