যুগে যুগে ‘উলামায়ে সূ’ এর অবস্থান
জামাল ইবরাহীম
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজীদে দু’ধরনের গুণের কথা উল্লেখ করেছেন।জামাল ইবরাহীম
০১. সিফাতে হাসানাহ (উত্তম গুণাবলী)।
০২. সিফাতে রাযেলাহ (নিকৃষ্ট গুণাবলী)।
সিফাতে হাসানাহ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ
“সে সকল লোকেরও কোনো গুনাহ নেই; যারা এসেছে তোমার নিকট যেন তুমি তাদের বাহন দান করো এবং তুমি বলেছো, আমার কাছে এমন কোনো বাহন নেই যে, তার ওপর তোমাদের সওয়ার করাবো। তখন তারা ফিরে গেছে; অথচ তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল- এ দুঃখে যে, তারা এমন কোনো বস্তু পাচ্ছে না; যা ব্যয় করবে।” -সূরা তাওবা: ৯২
আমাদেরকে সর্বদা একটা কথা স্মরণ রাখতে হবে, পবিত্র কুরআনে কোনো সিফাতে হাসানাহ উল্লেখ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলিমের ওপর প্রতিকূলতার ঝড় যতই বয়ে যাক; অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হলেও সিফাতটি অর্জন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।
উপরোক্ত আয়াতটি কিছু আনসারী সাহাবীর ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল। যারা তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যে নিখাদ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সাওয়ারীর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি বললেন- আমার কাছে তো সাওয়ারী নেই। তখন তারা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেলেন।
এখানে আল্লাহ তাআলা সাহাবাদের সিফাতে হাসানাটি উল্লেখ করেছেন- শত প্রতিকূলতার মাঝে সর্বদা নিজকে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত রাখা। কোনো কারণবশতঃ জিহাদে শরিক হতে না পারলে পরিতাপ ও আফসোসের সহিত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে কেঁদে কেঁদে দুআ করা।
কিয়ামত পর্যন্ত যত মুসলিম আসবে সকলে যেন এই সিফাতে হাসানাগুলো অর্জন করে, এ জন্যেই পবিত্র কুরআনে এই ধরনের সিফাতের আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআনে বর্ণিত সকল সিফাতে হাসানাহ অর্জন করার তাওফীক দান করুন।
কুরআনে বর্ণিত দ্বিতীয় প্রকার সিফাত হলো সিফাতে রাযেলাহ, এর বর্ণনা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- কিয়ামত পর্যন্ত যত উম্মাহ আসবে শত প্রতিকূলতার মাঝেও উহা থেকে বিরত থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। পবিত্র কুরআনে সিফাতে রাযেলাগুলো সাধারণত তিনটি প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে।
০১. বংশ প্রসঙ্গে।
০২. গোত্র প্রসঙ্গে।
০৩. কোনো সম্প্রদায়ের বিশেষ কিছু ব্যক্তি সম্পর্কে।
আমরা আজকে সিফাতে রাযেলাগুলো বর্ণনা করবো। এগুলো ইয়াহুদী ‘উলামায়ে সূ’ এর ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা ইয়াহুদী ‘উলামায়ে সূ’ এর ব্যাপারে অনেক সিফাতে রাযেলাহ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তিনটি-
০১. كتمان العلم- জ্ঞান গোপন করা।
০২. ترك بعض الكتاب و اخذ بعض الكتاب- আসমানী কিতাবের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়া ও কিছু অংশের ওপর আমল করা ।
০৩. تحريف الكتاب- আসমানী কিতাব বিকৃতিকরণ।
০১. কিতমানুল ইলমের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের ইরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ
‘‘নিশ্চয় যে সকল লোক আমার নাযিলকৃত স্পষ্ট নির্দেশনাবলী ও হেদায়েতকে গোপন করে, আমি তা মানুষের জন্যে কিতাবের মাঝে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করার পরেও। তাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেন এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণও অভিসম্পাত করেন।” -সূরা বাকারা: ১৫৯
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘‘নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সে জন্যে অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ভরে না। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথাও বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না; বস্তুত তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। -সূরা বাকারা: ১৭৪
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ ۚ فَمَا أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ
‘‘এরা সেই সব লোক, যারা হেদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহী এবং মাগফিরাতের পরিবর্তে আযাব ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং (ভেবে দেখো) তারা জাহান্নামের আযাব ভোগ করার জন্যে কতটুকু প্রস্তুত!”-সূরা বাকারা: ১৭৫يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘‘হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছো? এবং জেনে শুনে কেন সত্য গোপন করছো?” -সূরা আলে ইমরান: ৭১উপরোক্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছিল ইয়াহুদী ঐ সমস্ত ‘উলামায়ে সূ’ এর ব্যাপারে যারা তাদের কর্তৃত্ব চলে যাওয়া ও জনসাধারণ থেকে হাদিয়া-তোহফা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে হক্বকে গোপন করেছিল তথা তাওরাতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণাবলী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথনির্দেশনা অনুসরণ আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে জাতির সামনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা থেকে বিরত ছিল।
বোঝা গেল, যে বা যারা জেনে বুঝে এ সকল কাজ করে তারাই হলো ‘উলামায়ে সূ’। তাদের অবস্থান যেমন অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে, আর ভবিষ্যতেও থাকবে। কুরআনে তাদের আলামত উল্লেখ করার একমাত্র কারণ হলো- উম্মাহ এদেরকে চিহ্নিত করে নিজেদেরকে বাঁচাবে; তাদের খপ্পর থেকে নিজেকে হেফাজত করবে।
আপনারা জানেন, বর্তমান যুগে সব চাইতে কঠিন আমল হলো জিহাদের আমল। কারণ এ আমল করতে গেলে নামী-দামী মাদরাসা আর মাসজিদের কর্তৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেমনিভাবে ইয়াহুদী ‘উলামায়ে সূ’রা তাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করতো- হাদিয়া-তোহফা বন্ধের আশঙ্কা, তাগুতের জিন্দানখানায় বন্দী হওয়ার ভয়।
পাঠক! যারা আজকে মাদরাসা-মাসজিদের কর্তৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কায়, হাদিয়া-তোহফা না আসার ভয়ে, তাগুতের জিন্দানখানায় বন্দী হয়ে যাওয়ার ভয়ে উম্মাহর ওপর ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কথা- জিহাদ প্রসঙ্গে, জিহাদের ফযীলত, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছে না; তারাই এ যুগের ‘উলামায়ে সূ’।
আল্লাহর কিছু মুখলিস বান্দা জিহাদের ফরিযা আদায় করার কারণে যে সকল আলেম তাদেরকে জঙ্গিবাদী আখ্যা দিচ্ছে, তারা হলো এ যুগের ‘উলামায়ে সূ’।
যে সমস্ত আলেম কিছু দ্বীনের খাঁটি আলেমদেরকে জিহাদে নিয়োজিত থাকার কারণে দ্বীন ধ্বংসকারী আখ্যা দিচ্ছে, তারা হলো এ যুগের ‘উলামায়ে সূ’।
যে সমস্ত আলেম কিছু যুবকদেরকে, যারা নিজেদেরকে জিহাদের কাজে নিবেদিত করার কারণে তাদের জিহাদী বই পড়তে বাধা দিচ্ছে, এমনকি মাদরাসা থেকে বের করে দিচ্ছে; তারা হলো এ যুগের ‘উলামায়ে সূ’। আর এ সমস্ত ‘উলামায়ে সূ’র ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত আয়াতগুলোতে যে সমস্ত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তা হলো-
- يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ
আতা রহ. বর্ণনা করেন- اللَّاعِنُونَ শব্দের ভাবার্থে সমস্ত জীব-জন্তু ও দানব-মানবকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সকল জীবই ‘উলামায়ে সূ’দের ওপর লানত বর্ষণ করতে থাকে।
- أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ
এই সমস্ত ‘উলামায়ে সূ’ সত্যকে গোপন করে যা ভক্ষণ করে, তা আগুন ব্যতীত আর কিছুই নয়।
- وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
এই সমস্ত ‘উলামায়ে সূ’দের সাথে আল্লাহ কোনো কথা বলবেন না। অর্থাৎ নম্রতা ও দয়া-মায়ার সাথে কোনো কথা বলবেন না।
- وَلَا يُزَكِّيهِمْ
এই সমস্ত ‘উলামায়ে সূ’কে আল্লাহ কিয়ামতের দিন পবিত্র করবেন না। যারা সাধারণ পাপ করবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা শাস্তি ভোগের পর পবিত্র করে দিবেন; কিন্তু তিনি এ সকল কপাল পড়া ‘উলামায়ে সূ’কে পবিত্র করবেন না।
- وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
এদের জন্যে রয়েছে মহা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
- اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ
সত্যকে গোপন করার কারণে তারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহীকে ক্রয় করেছে।
- وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ
এ সমস্ত ‘উলামায়ে সূ’রা সত্যকে গোপন করে ক্ষমার বিনিময়ে শাস্তিকে ক্রয় করে নিয়েছে। কোনো আলেম যদি ইসলামের কোনো একটি বিধানকে গোপন করে, তাহলে সে উল্লিখিত ধমকির আওতাভুক্ত হবে। কেননা উল্লিখিত আযাবে যে ما ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি লফযে আম; যা ব্যাপকতা অর্থে আসে, এর থেকে কাউকে আলাদা করা বা নির্দিষ্ট করার সুযোগ নেই।
০২. সিফাতে রাযেলার দ্বিতীয় প্রকার হলো- শরীয়তের কিছু অংশ মানা ও কিছু অংশ না মানা। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ
‘‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস করো আর কিছু অংশ অবিশ্বাস করো? যারা এরকম করে তাদের জন্যে দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা। আর কিয়ামত দিবসে তারা ফিরে যাবে কঠিন আযাবের দিকে।” -সূরা বাকারা: ৮৫
আয়াতটি বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। যাদেরকে আল্লাহ তিনটি কাজের আদেশ দিয়েছিলেন-
০১. খুনাখুনি করবে না।
০২. কাউকে দেশান্তর করবে না।
০৩. স্বগোত্রীয় কেউ কারো কাছে বন্দী হলে, তাদেরকে মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করবে।
বনী ইসরাঈল তিনটি আদেশের মধ্যে শুধু তৃতীয় হুকুমটি মানতো। আল্লাহ তাআলা তাদের কিছু মানা কিছু না মানাকে সম্পূর্ণরূপে না মানার ন্যায় কুফুরী বলে সাব্যস্ত করেছেন। যারা শরীয়তের কিছু বিধান মানবে আর কিছু বিধান মানবে না; তাদের জন্যে দুনিয়াতে আছে শুধুই লাঞ্ছনা। আর কিয়ামতের দিন তারা নিক্ষিপ্ত হবে কঠিন শাস্তির দিকে।
অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
‘‘হে রাসূল! আপনার ওপর যা কিছু নাযিল হয়েছে, তা আপনি পৌঁছে দিন। যদি আপনি তা না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। আর আল্লাহ তাআলা কাফেরদের পথ প্রদর্শন করেন না।” -সূরা মায়েদা: ৬৭
ইসলাম কোনো তাজাজিয়্যত কে কবুল করে না। যেমন কোনো ব্যক্তি নামাযের কোনো একটি রুকন ব্যতীত নামাজ আদায় করলে, সে নামাজ তরককারী বলে গণ্য হবে। সে জন্যে উক্ত আয়াতে দেখলাম, আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন- রাসূলও যদি কিতাবের কোনো একটি বিধানও না পৌঁছে দেন, তবে যেন তিনি সম্পূর্ণ রিসালাতের দায়িত্বকেই আদায় করলেন না।
অতএব, কেউ যদি তার কষ্ট হওয়ার ভয়ে বা অন্য কোনো কারণে শরীয়তের কোনো একটি বিধানকে প্রচার না করে; তাহলে সে সম্পূর্ণ শরীয়তকে তরককারী বলে গণ্য হবে। যে সমস্ত মাদরাসায় শরীয়তের কিছু বিধান আদায় করা হয়, কিছু তরক করা হয়। কিছু বিধান আলোচনা করা হয়, কিছু আলোচনা করা হয় না। কিছু বিধান আদায় করতে উৎসাহ দেয়া হয়, কিছুর ক্ষেত্রে চুপ থাকা হয়। কখনো কখনো নিরুৎসাহিত করা হয়। আবার কখনো তো এ সকল বিষয়ের মুকাদ্দামাকেও নিষেধ করা হয়। এ সকল মাদরাসা শরয়ী মাদরাসা নয়; বরং এগুলো খাহেশাত পূর্ণ করার খানকা। আর এ সব মাদরাসা-মাসজিদ পরিচালনাকারীরা হলো- পরিপূর্ণ ইসলাম তরককারী ও এ যুগের ‘উলামায়ে সূ’।
তৃতীয় সিফাতে রাযেলাহ হলো- তাহরীফুল কিতাব তথা কিতাবের বিধানকে বিকৃত করা। এ মর্মে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
أَفَتَطْمَعُونَ أَن يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِن بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
‘‘হে মুসলমানগণ! তোমরা কি আশা করো যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করতো; অতঃপর বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন করে দিতো এবং তারা তা অবগত ছিল।” -সূরা বাকারা: ৭৫
এ যুগে যে সমস্ত আলেমরা ইসলামের কিছু বিধানকে বিকৃত করে নতুন অর্থ দাঁড় করাতে চায়। অর্থাৎ যারা জিহাদের মূল অর্থকে পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক রাজনীতি, প্রচলিত তাবলীগকে জিহাদ বলে চালিয়ে দিতে চায়, শুধু নফসের জিহাদকেই জিহাদ বলে চালিয়ে দিতে চায়, তারাই হলো এ যুগের ‘উলামায়ে সূ’।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ সকল ‘উলামায়ে সূ’ থেকে বেঁচে থাকার এবং তাদেরকে প্রতিহত করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
...al-balagh 1438 ।2017। issue 4
Comment