এরা উম্মাহর অভিভাবক!!?
...আব্দুল্লাহ ইবরাহীম
যারা মুসলিম দেশগুলোর ক্ষমতাসীন শাসকবর্গকে নিজেদের অভিভাবক মনে করে থাকেন, নিশ্চিন্তে এসব শাসকের আনুগত্য করে যাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং এসব শাসকদের বিরোধিতাকারীদেরকে উগ্র জঙ্গি, সন্ত্রাসী, খারেজী আখ্যায়িত করে মুসলিম উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন; তারা হ্যাঁ, তারা একটু দেখে নিক, জেনে নিক- তাদের সে সব শাসকবর্গ কার আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছে? কাকে উষ্ণ অভ্যর্থনার সাথে বরণ করে নিচ্ছে? কার প্রশংসায় বিবৃতি দিচ্ছে, টুইট করছে? এসব প্রশ্নের এক কথায় লেটেষ্ট জবাব হচ্ছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।...আব্দুল্লাহ ইবরাহীম
এ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না; তবে তার কিছু বিষয় স্মরণ করিয়ে দিলে আলোচ্য আলোচনা বুঝে নিতে সহজ হবে! এ হচ্ছে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প; যার যৌন হয়রানিতে সাধারণ নারী থেকে শুরু করে নর্তকীরা পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছিল।
এ হচ্ছে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প; ইসলাম এবং মুসলিম বিরোধী বক্তব্য দিয়েই যে ভক্ত-সমর্থকদের কাছে আলোচিত হয়েছিল, ইসলাম বিদ্বেষী অধিকাংশ আমেরিকান জনগণের কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সমর্থন লাভ করেছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই সে ইসলাম এবং মুসলিম ব্যাপারে তার কেমন ধারণা?- তা ক্লিয়ার করে দিয়েছিল। সে তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় উল্লেখ করেছিল, সে প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রে (আমেরিকায়) কোনো মুসলিমকে প্রবেশ করতে দেবে না।
এ হচ্ছে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প; যে তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছিল, সে প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস রত মুসলিমদের ডাটাবেস তৈরী করবে; যাতে মুসলিমরা সন্ত্রাসবাদে (তথা জিহাদ-কিতালে) সম্পৃক্ত না হতে পারে।
এ হচ্ছে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প; যে তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছিল, ইসরাঈল আমেরিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র আর আমরা তাদের শতভাগ নিরাপত্তা দিয়ে যাবো। ১০০% তারা হলো আমাদের সবচেয়ে আস্থাভাজন বন্ধু এবং মধ্যপাচ্যে আমাদের প্রকৃত মিত্র। আমরা তাদের শতভাগ নিরাপত্তা দিয়ে যাবো।
এ হচ্ছে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প; যে তার নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত আমেরিকানদের জিজ্ঞেস করেছিল- আমরা কি সবাই ইসরাঈলের পক্ষে না? আমেরিকানরা জবাবে বলেছিল, অবশ্যই!
এ হচ্ছে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প; যে তার নির্বাচনী প্রচারণায় আরো উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলেছিল, আমরা ইসরাঈলকে ১০০০% সর্মথন দেবো।
এ হচ্ছে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প; যে ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সত্য বিষয়টিই প্রকাশ করে দিয়েছিল, ইসলাম আমাদের ঘৃণা করে।
এ ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী বক্তব্য এবং ইসরাঈলের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা জেনে-শুনেই আমেরিকান কাফেরেরা তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল। আর এ ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অব্যাহত রাখে মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে আমেরিকার চলমান যুদ্ধ।
এ হচ্ছে সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প; যারা ইসরাঈলকে সামরিক সাহায্য হিসেবে বাৎসরিক ৩.১ বিলিয়ন ডলার দিয়ে থাকে। আর তাদের নতুন চুক্তি অনুযায়ী এ সাহায্যের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে বছরে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। অর্থাৎ আমেরিকা ইসরাঈলের সামরিক বাহিনীকে আগামী ১০ বছরে ৩৬০ কোটি টাকা দেবে। আর সে অর্থ খরচ করেই ইসরাঈলের হিংস্র ইয়াহুদী পশুগুলো ফিলিস্তীনের মুসলিমদের হত্যা করছে, রক্ত ঝরাচ্ছে।
এ জন্যেই এ হুবালদের ব্যাপারে শাইখুল মুজাহিদীন উসামা রহ. বলেছেন, আমেরিকা ও ইসরাঈল হলো একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।
সুতরাং এ হচ্ছে ইসলামের শত্রু খ্রিস্টানদের ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ হচ্ছে ইসলামের শত্রু ইয়াহুদীদের সাহায্যকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ হচ্ছে ইসলামের শত্রু মুশরিক গরুপূজারি ভারত সরকারের বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন এ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট অবস্থায় তার প্রথম সফর মুসলিম ভূখন্ড সৌদি আরবে করল? উত্তর সহজ। কারণ সে ঐ মুসলিমদের আমন্ত্রণে আসেনি; যাদের ইসলামের ব্যাপারে সে সত্যিই বলেছিল, ইসলাম আমাদের ঘৃণা করে। সে এসেছে তাদেরই একান্ত বন্ধুদের কাছে। আর এ জন্যেই তাকে এবং তার সফর সঙ্গীদের স্বাগত জানাতে, উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে সেখানে একত্রিত হয়েছিল তাদের বন্ধুরা অর্থাৎ আরও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর শাসকবর্গ। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় অস্ত্রচুক্তি। প্রায় ৪০ টি মুসলিম দেশের শাসকবর্গের সম্মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্য দিলেন। ট্রাম্প তাদেরকে ‘শান্তি, প্রগতি, সমৃদ্ধির এক অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা’ বোঝালেন! সকল বন্ধুরা মিলে নিজেদের লক্ষ্যের ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।
সৌদি বাদশা সালমান ট্রাম্পের গলায় পরিয়ে দিলেন বন্ধুত্ব-ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ বাদশা আব্দুল আজিজ মুখমণ্ডল খচিত একটি সম্মাননা স্মারক!!!
অবশ্য এর আগেও এ সম্মাননা আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে কেও দেওয়া হয়েছিল!!!
আফসোস! এ উম্মাহর সে সমস্ত ব্যক্তিদের জন্যে; যারা ট্রাম্প, ওবামা, পুতিনদের অবস্থান জানলেও, জানতে চায় না ট্রাম্প, ওবামা, পুতিনদের বন্ধুদের সম্পর্কে!!!
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবেই মুমিনদের জানিয়ে দিয়েছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘‘হে মুমিনগণ! ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরাই একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু বানাবে, সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে হেদায়েত দান করেন না।” -সূরা মায়েদা: ৫১
যে আরব থেকে ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বের করে দেওয়ার কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
اخرجوا اليهود و النصاري من جزيرة العرب
‘‘জাযিরাতুল আরব থেকে ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বের করে দাও!”
...al-balagh 1438 |2017| issue 5...
Comment