মাগফিরাত আর মহাপ্রতিদান লাভের আশায়!
উনাইসা আহ্সান বুশরা
হে বোন! কত কিছু হওয়ার স্বপ্নই তো আমরা দেখি। মডেল-তারকা বনার সাধনায় কত কিযে করি। একবারও কি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত গুণাবলীর সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেখেছি? এমন কয়টি গুণ আমার মাঝে আছে?- যা আমাকে চির সুখের উদ্যান জান্নাতের চিরস্থায়ী একজন মডেল-তারকা বানিয়ে দেবে!উনাইসা আহ্সান বুশরা
দেখুন হে বোন! মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের কেমন সৌন্দর্যে শোভিত হতে বলছেন-
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
"নিশ্চয়ই আনুগত্য প্রকাশকারী পুরুষ ও আনুগত্য প্রকাশকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, ইবাদাতগোজার পুরুষ ও ইবাদাতগোজার নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, আন্তরিকভাবে বিনীত পুরুষ ও আন্তরিকভাবে বিনীত নারী, সদাকাকারী পুরুষ ও সদাকাকারী নারী, রোজাদার পুরুষ ও রোজাদার নারী, নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী পুরুষ ও হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও স্মরণকারী নারী- আল্লাহ এদের সকলের জন্যে মাগফিরাত ও মহাপ্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।" -সূরা আহযাব: ৩৫এ আয়াতে কারীমার মধ্যে মহান আল্লাহ ১০টি গুণে গুণান্বিত পুরুষ ও নারীর কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের সকলের জন্যে সুসংবাদ দিয়েছেন মাগফিরাত আর মহাপ্রতিদানের। মহান আল্লাহ আমাদের মা-বোনদের এ প্রত্যেকটি গুণে গুণান্বিত নারী হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমরা এখন মহাকল্যাণ লাভের মাস রমজানে উপনীত হয়েছি। এ মাসে মুমিন-মুমিনা সবার অন্তরেই নেক আমলের আগ্রহ অপর মাসগুলো অপেক্ষা বেশি থাকে; কারণ ধ্বংসের পথে প্রলুব্ধকারী শয়তানগুলো এ মাসে থাকে শিকলাবদ্ধ। তাই নিজেকে নেক আমলের মাধ্যমে, মাগফিরাত লাভের মাধ্যমে আলোকিত করার এ এক সুবর্ণ সুযোগ! বিশেষ করে, রমজানের ফরজ হুকুম রোজাগুলো রেখে মাগফিরাত ও মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ প্রাপ্ত الصَّائِمَاتِ তথা রোজাদার নারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার এক উত্তম সময় আমরা অতিবাহিত করছি!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদের জন্যে সুসংবাদ দিয়েছেন, আমরা যদি ৪টি দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করতে পারি; তাহলে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়েই তাতে প্রবেশ করতে পারবো। তিনি বলেছেন, ‘‘যে স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং আপন স্বামীর আনুগত্য করবে; তবে সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।”
রমজানের রোজা মা-বোনদের সহজে জান্নাতে পৌঁছার আমলগুলোর মাঝে একটি আমল। এ রোজা তো আমরা অনেকেই রাখি কিন্তু যথাযথভাবে আদায়ের ব্যাপারে কতটুকু যত্নবান থাকি? আমরা কি সব ধরনের গুনাহ পরিহার করে রোজার পূর্ণ হক্ব আদায় করতে পারি? অনেক রোজাদার আছে, যাদের রোজা কেবল পানাহার ত্যাগ করা ছাড়া কিছুই নয়!
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মিথ্যা, মূর্খতাসূলভ আচরণ ও গুনাহ পরিত্যাগ করে না; তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” মাগফিরাত লাভের এ মাসেও তো শহর-নগর, বাজার-হাট জুড়ে শপিংমল আর দোকান-বিপণীগুলোতে নারীদের ভিড় জমে থাকে। একদিকে যেমন মহান আল্লাহর ফরজ হুকুম পর্দার লঙ্ঘন হচ্ছে; আবার নামাজের সময় নামাজও তরক হচ্ছে। কিন্তু কয়জন বোনের মাঝে এ জন্যে অনুশোচনা আসে? সত্যি যদি এ জন্যে অন্তরে অনুশোচনার উদ্রেক হতো; তবে তো আমরা আপন বাসস্থানের বাহিরে ঘুরে বেড়াতাম না। আর যদি জরুরতের কথা বলা হয়; তাহলে বলবো, এমন জরুরত তো আপন পুরুষদের দ্বারাও মেটানো যায়। তাই মা-বোনদের প্রতি আহ্বান, রমজানের এই বরকতময় সময়গুলোতে আমরা যেন উদাসীন না থাকি। সব ধরনের গুনাহের উপকরণ থেকে নিজেদের দূরে রাখি। এমন যেন না হয়, নাটক-সিরিয়াল দেখে দেখে সময় কাটিয়ে দিলাম! তাকওয়া অর্জনের এ মাসে তাকওয়া অবলম্বন করেই চলতে হবে। আর এ তাকওয়া অবলম্বন শুধু রমজান মাসেই নয়; বরং আমাদের পূর্ণ হায়াত অন্তরে আল্লাহর ভয়-তাকওয়া রেখে গুনাহ মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। রমজানই হচ্ছে এ শিক্ষা লাভের সর্বোৎকৃষ্ট সময়।
সেহরী আর ইফতারের জন্যে আমরা যে খাবার রান্না করি; তা খেয়ে যতজন নারী-পুরুষ রোজা রাখবে এবং ইফতার করবে, ততজনের সাওয়াব আল্লাহ তাআলা আমাদের দান করবেন। এ জন্যে আমরা সাওয়াবের নিয়তে এ কাজগুলো করবো। আবার এটাও খেয়াল রাখা চাই, প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না-রেসেপিতে আমরা যেন ইবাদতের সময়গুলো নষ্ট না করি। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার এবং নফল ইবাদতে বেশি বেশি সময় কাটাতে সচেষ্ট থাকবো। আফসোস হয় সেসব বোনদের জন্যে, যারা নিজের সৌন্দর্য আর ফিটনেস এর কথা ভেবে ফরজ রোজা পর্যন্ত রাখে না! যে সৌন্দর্য আর ফিটনেস মহান আল্লাহর দান, তা কি তাঁর হুকুম পালনের কারণে ভাটা পড়বে? কখনো নয়! বরং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের মাঝেই দেহের সুস্থতা, মনের প্রশান্তি আর প্রফুল্লতা।
আমরা আমাদের সন্তানদের রোজা রাখার জন্যে সেহরীর সময় জাগিয়ে দেবো। কত মা তো পরিণত বয়সের সন্তানদেরকেও রোজা রাখতে বারণ করেন। বলে থাকেন, ওরা এখনো ছোট; পড়ালেখায় কষ্ট হবে। আসলে দ্বীনের প্রতি আগ্রহের কমতির কারণেই এমন অসার চিন্তা মনে আসে। আমাদের তো এমন হওয়া উচিত, যেসব সন্তানের ওপর রোজা এখনো ফরজ হয়নি; তাদেরকেও রোজা রাখার জন্যে উৎসাহিত করা। হে বোন! সূরা আহযাব এর ৩৫ নং আয়াতে আল্লাহ যে সমস্ত গুণে গুণান্বিত নারীর জন্যে মাগফিরাত আর মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ বর্ণনা করেছেন, আসুন আমরা এ বরকতময় রমজান মাসে নিজেকে এ প্রত্যেকটি গুণে গুণান্বিত করি। শোভিত হই সে সৌন্দর্যে, যা আমাদেরকে জান্নাতের মডেল-তারকা বানিয়ে দেবে!
...al-balagh 1438 |2017| issue 5...
Comment