কুফরী শক্তিগুলোর নিজেদের মাঝে হামলা- আমাদের বক্তব্য
ভূমিকা:
একদিকে মুসলিম বাচ্চাদের হত্যা করে যার হাত হয়েছে রক্তে রঙ্গিন সেই আমেরিকা আবার দেখায় মানবতা!! সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার অজুহাত দেখিয়ে মূলত সেখানে সামরিক হামলা করার বৈধতার ওজর পেশ করলো আমেরিকা । ভাবতেও অবাক লাগে, কয়েকদিন যাবৎ বিশ্বব্যাপী কুফফার মিডিয়াগুলো সিরিয়াতে আমেরিকাসহ আরো কিছু কুফফার রাষ্ট্রগুলোর হামলাকে এমনভাবে উপস্থাপন করছে যেন তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করবে! আসলে, এসকল কথাবার্তা কেবল বেকুবেরাই বলে থাকে। কেননা, কিছু কিছু রাষ্ট্রের বরং ক্ষমতাশীল ব্যাক্তিদের স্বার্থোদ্ধারের লড়াইকে যখন কেউ বিশ্বযুদ্ধ বলে চালিয়ে দিতে চায় , তখন তাকে সুবুদ্ধিসম্পন্ন বলা যেতে পারে না। আমেরিকা মূলত মানবতা দেখায় না বরং সারাবিশ্বের নেতৃত্ব যেন তার হাতে আসে সেই প্রচেষ্টায় রত ! আমেরিকার সিরিয়ায় করা বোমা হামলাকে অনেক বিশ্লেষকই তুলনা করছেন ইরাক হামলার সঙ্গে। একে অবশ্যই উড়িয়ে দেয়া চলে না। কেননা, আমেরিকা মুসলিমদের হত্যা করতে বদ্ধপরিকর। ইরাকে যেভাবে মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে হামলা করে লাখ লাখ ইরাকী মুসলমানকে হত্যা করেছে, সিরিয়াতেও একই পন্থা অবলম্বন করা এই আমেরিকার পক্ষে অসম্ভব নয়। আর বর্তমানে আমেরিকা ও রাশিয়ার মাঝে যদি যুদ্ধ হয়ও তাহলেও কি তাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলা যাবে? কখনোই না। বরং আমাদের সামনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দান সুস্পষ্ট। ইমানদার এবং কাফেরদের মাঝেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবে। আর এই সকল কুফফার রাষ্ট্রগুলো একে অপরের দিকে অস্ত্র তাক করবে কি না তাতেই রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। বহুদিন থেকেই তাদের মাঝে *যুদ্ধ লেগে যাবে যাবে মনে হচ্ছিল কিন্তু, বাস্তবে কিছুই হয়নি। অনেকটা ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের মতো; যেখানে একেঅপরের সৈন্যদেরকে হত্যাও করেছে। কিন্তু, তারপরও বেশি কিছুই ঘটেনি। যাইহোক, আমাদের উদ্দেশ্য এটা নয় যে তারা একেঅপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে কি না । আমাদের কথা হলো তারা যদি একে অপরের বিরুদ্ধে এমনকি সারা বিশ্বের কুফরী শক্তিগুলোও যদি একেঅপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা শুরু করে তাহলেও এটাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলা যেতে পারে না। এ কথা শুনে অনেকের মাথায় হয়তো বাজ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে!! আমার কথার যুক্তিসংগত বাস্তবতা তুলে ধরতে আমি বাধ্য। এ লেখার মর্মকথা হলো বর্তমানে কুফরী শক্তিগুলোর মাঝে চলমান যুদ্ধকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলা যাবে কি না।
কুফফার রাষ্ট্রগুলোর মাঝে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে?
আমেরিকা ও রাশিয়া বা কুফরী শক্তিগুলোর নিজেদের মাঝে যুদ্ধ যদিও হয়, তাহলেও তাকে কখনো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলা যাবে না, কেননা এটা কেবলই সহিংসতা। যার সাথে সারাবিশ্বের মানুষের কোনো সম্পর্ক নাই। এটা তাদের নিজস্ব স্বার্থোদ্ধারের লড়াই ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের সংঘাত সৃষ্টির মূল লক্ষ্যই নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। অথচ, বিশ্বযুদ্ধ বলতে যা বুঝায় তা হলো- বিশ্বযুদ্ধ হতে হবে সারাবিশ্বের অধিকাংশ মানুষের সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বযুদ্ধে সারাবিশ্বের অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ থাকবে। প্রত্যেকেই যুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে অংশগ্রহণ করবে। কেউ যুদ্ধরত কোন পক্ষকে সাহায্য করে, কেউ সমর্থন করে ইত্যাদি। কিন্তু, তাদের যুদ্ধটা এই নীতির বিপরীত।
সিরিয়াসহ সারা বিশ্বের প্রতিটা জায়গায়ই হামলা করার পেছনে তাদের একটি নির্দিষ্ট মূল লক্ষ্য রয়েছে। আর তা হলো মুসলিমদেরকে হত্যা করা আর সেখানে নিজেদের ঘাঁটি গড়া! সিরিয়াযুদ্ধের দিকে তাকালে বুঝা যায়, ইসরাঈল সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে সিরিয়াসহ ইরানের কিছু অংশ এবং আরো কিছু ভূমি নিয়ে নিজের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। ইরানসহ শিয়া প্রধান রাষ্ট্রগুলোও নিজের রাজ্যপরিধি বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টারত। আর মুসলিমদেরকে ধ্বংস করার ব্যাপারে কাফেরদের সকলেই একত্রিত। সুতরাং, তাদের স্বার্থ সুস্পষ্ট।
আর এখানে একটি বিষয় আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমরা এটা বলছি না যে, আমেরিকার করা সিরিয়ায় হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে মোড় নিবে না(বাস্তবতা হলো, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভূমিকাপর্ব শুরু হয়ে গেছে বহু আগেই, যখন কুফফাররাষ্ট্রগুলো মুসলিমদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে একজোট হয়েছে), বরং বুঝাতে চাচ্ছি যে কুফরী রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের মাঝে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে না।
সিরিয়ায় আমেরিকার হামলার বাস্তবতা:
আর সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, সিরিয়ায় আমেরিকার করা হামলাটি ছিল মূলত হাস্যকর! কেননা, কেউ কি হামলা করার আগে যাকে হামলা করবে তাকে জানিয়ে দেয় যে, প্রস্তুত থাক! আমি এমন এমন জায়গায় হামলা করবো! বাস্তবে আসাদ বাহিনীর উপর হামলা করার পূর্বে এমনটাই করেছে ধোকাবাজ আমেরিকা। তা না হলে, কেন যেখানে হামলা করা হবে সেখান থেকে আসাদ বাহিনীর সমস্ত প্লেন এবং মূল্যবান জিনিসগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল!! [সূত্র: https://t.me/Remindersfromsyria/478] আসলে এটা ছিল একটা ধূর্ততা!! আমেরিকা সিরিয়ায় রাশিয়াকেও হামলা করেনি [এটি সে নিজেই দাবি করেছে], আর যাকে শাস্তি দিবে রাসায়নিক হামলা করার কারণে, ঐ অপরাধী হামলা করা স্থান থেকে হামলার পূর্বেই সবকিছু সরিয়ে নিল!! এটা কেমন যুদ্ধ তা আমার বুঝে আসে না!! আরও এক আশ্চর্য তথ্য হলো- আমেরিকা সিরিয়ায় হামলা করার পূর্বেই ইহুদীবাদী ইসরায়েলকে জানিয়েছে [সূত্র: ১৫ এপ্রিল, এবিনিউজ ]। তাও এতটুকুতেই শেষ নয়! সিরিয়ায় করা আমেরিকার হামলাকে সমর্থনও করেছে ইসলামবিদ্বেষী ইসরায়েল!(?) শেষ কথা হলো- আমেরিকার সিরিয়ায় হামলা অনেকটাই ঘোলাটে! পরিস্থিতি কোথায় শেষ হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি। তবে, এটা নিশ্চিত যে আমেরিকা বা যেকোনো কুফফার রাষ্ট্রই কোথাও মুসলিমদের স্বার্থে হামলা করে না বরং মুসলিমদের হত্যা করার বিষয়টি তাদের দ্বারা বহুবার ঘটেছে। আমেরিকাও (অবৈধ বোমার অজুহাতে) ইরাকে কম মুসলিমদের হত্যা করেনি, সারাবিশ্বের মানুষ আমেরিকার বর্বরতা এখনো লক্ষ্য করছে!
মুসলিমদের করণীয়:
এদিকে মুসলিমদেরকে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই কাফেররা যাই কিছু বলুক না কেন, সারাবিশ্বের মুসলিমদের হত্যা করার ক্ষেত্রে তারা তো ঠিক একই ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে! আমেরিকা আজ সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার বিরুদ্ধে নিজের ‘ভালোমানুষি’ দেখাচ্ছে, অথচ আফগানিস্তানের কুন্দুজ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আমাদের সামনে সুস্পষ্ট। যেখানে মাদরাসার হাফেজ ছাত্রদের দস্তারবন্দী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিষ্পাপ হাফেজ ছাত্র এবং বেসামরিক মুসলমানের উপর আমেরিকা নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে প্রায় দুইশতাধিক লোককে হতাহত করেছে। তারা সোমালিয়াসহ সারাবিশ্বের প্রায় প্রতিটা অঞ্চলেই একইভাবে মুসলিমদের উপর অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, সিরিয়াসহ সারাবিশ্বের মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাশিয়া কী জঘন্য অপরাধে লিপ্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূলত সারাবিশ্বের কুফফার জাতি আজ মুসলিমদের বিরুদ্ধে একই নীতি অবলম্বন করে মুসলিমদের হত্যা করছে। আর তা হলো- ইসলামের নামকে এই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা! কিন্তু, আল্লাহর শপথ! কাফেরদের এই চক্রান্ত কোনোভাবেই সফল হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারীমে এই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তিনি তাঁর দ্বীনকে অবশ্যই হেফাজত করবেন। তবে, এই দ্বীনকে তিনি তাঁর মুমিন বান্দাদের মাধ্যমে হেফাজত করবেন। আর এজন্য তিনি পবিত্র কুরআনুল কারীমে মুমিনদের জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে ফরজ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই, যে ব্যাক্তি মুমিন থাকতে চায় সে যেন অবশ্যই তার অবস্থান সুস্পষ্ট করে। ইসলামের বিরুদ্ধে কুফরের এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার কোনো সুযোগ নেই! যেকেউ ইমানদার থাকতে চায় তাকে অবশ্যই ইসলামের পক্ষ নিতে হবে এবং কুফরের বিরোধিতা করতে হবে।
তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে কাদের মাঝে? !
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এর উত্তর জানা থাকা প্রতিটা মুসলমানের জন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্তব্য বলে মনে করছি। উপরের কথাগুলোতে আশা করি একটু হলেও স্পষ্ট হয়েছে যে কুফফার রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের মাঝে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবে না। মূলত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যার সূচনাপর্ব ইতিপূর্বেই শুরু হয়ে গেছে তা সংঘটিত হবে ইসলাম ও কুফরের অনুসারীদের মাঝে। আর বর্তমান বাস্তবতায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট। ইসলামের অনুসারীদেরকে আজ সারাবিশ্বের কুফরী শক্তিগুলো মিলে হত্যা করছে। মুসলিমদের ব্যাপারে বিশ্বের প্রতিটা রাষ্ট্রই আজ কঠোরনীতি অবলম্বন করে চলছে। এমনকি তথাকথিত মুসলিমরাষ্ট্রগুলোও মুসলিমদের ইমান-আমল, জান-মালের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে। এই যুদ্ধটি একটি বিস্তৃত যুদ্ধ। যেখানেই ইসলাম ও মুসলিম আছে সেখানেই এই যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও, যুদ্ধটি এখনো কিছুটা একমুখী। কুফফার জাতিরাই মুসলিমদেরকে হত্যা করে যাচ্ছে। তবুও, এটাই হাদিসে উদ্ধৃত বিশ্বযুদ্ধের দিকে মোড় নিবে ইনশাআল্লাহ। আফগানিস্তান, সোমালিয়াসহ সারাবিশ্বে মুজাহিদীনের কার্যক্রম এটিই প্রমাণ করে । এই যুদ্ধটিকে বিশ্বযুদ্ধ বলার কারণ হলো এটিতে কেবল অধিকাংশ নয় বরং সমগ্র বিশ্বের মানুষের স্বার্থ জড়িত। এমনকি, এই যুদ্ধে কেবলই স্বার্থ জড়িত এমনটিও নয় বরং বিশ্বের প্রতিটা লোকই এই যুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত এই যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عن عبد الله بن عمرو قال: ملاحم الناس خمس، فثنتان قد مضتا ، وثلاث في هذه الأمة 1) ملحمة الترك، (2) وملحمة الروم، (3) وملحمة الدجال، ليس بعد الدجال ملحمة. ( الفتن نعيم ابن حماد، ج: 2 ص: 548 ، السنن الواردة في الفتن) جميع رواة الحديث ثقاف، الا ان ابا المغيرة القواس فمجهول.
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- (পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত) সর্বমোট পাঁচটি বিশ্বযুদ্ধ রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি পূর্বে অতিবাহিত হয়ে গেছে, আর বাকি তিনটি এই উম্মতের যামানায় হবে। এক- তুরস্কের বিশ্বযুদ্ধ। দুই- রোমকদের সাথে বিশ্বযুদ্ধ। তিন- দাজ্জালের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ। দাজ্জালের পরে আর কোন বিশ্বযুদ্ধ নেই।
এই উম্মতের সর্বশেষ যুদ্ধ হবে দাজ্জালের বিরুদ্ধে। আর সেই যুদ্ধটিকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বযুদ্ধ বলেছেন। সেই বিশ্বযুদ্ধ নিকটবর্তী, তবে তা কুফর এবং কুফরের মাঝে না বরং ইমান এবং কুফরের মাঝে সংঘটিত হবে।
ডক ফাইল ডাউনলোড লিংক:
পিডিএফ ডাউনলোড লিংক:
Comment