Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || চতুর্দশ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || চতুর্দশ পর্ব

    ফিলিস্তিনের স্মৃতি
    ।।শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
    এর থেকে – চতুর্দশ পর্ব



    মুসলিম সমাজ-প্রতিষ্ঠার কৌশল: দাওয়াত ও তরবিয়ত

    আমি একটি মিশন নিয়ে বের হয়েছি : মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠা। — ইসলামি দাওয়াত ব্যতীত মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। মুসলিম যুবকদের প্রথমে আল্লাহর দীনের ওপর গড়ে তুলতে হবে; তাদেরকে আল্লাহর ভয় ও পরহেযগারি শেখাতে হবে; নামায, রোযা, দৃষ্টি অবনত রাখা, জিহ্বা হেফাযত করা, পাপ থেকে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাজত করা ইত্যাদি শেখাতে হবে। তাদেরকে আত্মসম্মানবোধ, ভয় থেকে মুক্তি, বিশেষ করে জীবিকার ভয় থেকে মুক্তি, একনিষ্ঠ ইমানী চেতনার ওপর গড়ে তুলতে হবে। কেননা যা ঘাড় ও মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয় তা হচ্ছে জীবিকা রোজগারের ভয়। সংবাদবিনিময় ও গোয়েন্দাকার্যক্রম এমন এক জটিলতায় এসে দাঁড়িয়েছে যে তার সমাধান সম্ভব নয়। জটিল অপচ্ছায়া মুসলিম যুবকদেরকে সবসময় সর্বত্র তাড়িয়ে বেড়ায়। সুতরাং ভয় থেকে মুক্তির বিকল্প নেই; জীবিকার ভয়, জীবনের ভয় ও রোজগারের ভয় থেকে অবশ্যই মুক্ত থাকতে হবে। এভাবে তরবিয়ত দেয়ার পরই মুসলিম যুবকেরা ইসলামি স্রোতধারা, ইসলামি আন্দোলন ও ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে সমান ধারাবাহিকতায় জিহাদ অব্যাহত থাকবে। সমাজে ইসলামি স্রোতধারা গতিময় হওয়ার ফলে ইসলামি উম্মাহর শক্তির বিকাশ ঘটবে। ইসলামি আন্দোলনের সততা, একনিষ্ঠতা, ত্যাগ ও জিহাদের ফলে তা এক সময় এর চারপাশে বিরাজমান সকলের নেতৃত্বের উপযোগী হিসেবে বিকশিত হবে। তখনই দীনের কল্যাণে যেকোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে কোনো জটিলতা থাকবে না। আগুনের ওপর দিয়ে চলতে কোনো সমস্যা হবে না এবং জ্বলন্ত চুল্লিতে ঝাঁপ দিতেও কোনো বাধা থাকবে না। ইসলামি আন্দোলনের অধিকাংশ সন্তানই আল্লাহর পথে নিজেদের উৎসর্গ করবে। যুদ্ধক্ষেত্রে তারাই লড়াইয়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং শাহাদাত বরণ করবে। আফগানিস্তানে এখন ইসলামি আন্দোলনের শতকরা নব্বই ভাগ কর্মী যুদ্ধে শহীদ হচ্ছেন। শতকরা নব্বই ভাগ।

    একবছর আগে হেকমতিয়ার আমাকে বলেছিলেন, 'আমি জিহাদের শুরুতে সাতানব্বই জন কমান্ডার যুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম। এখন মাত্র আট জন জীবিত আছেন; বাকি উনান্নব্বই জন শহীদ হয়েছেন। শতকরা দশ জনমাত্র কর্মী জীবিত আছেন। তাঁরা বেঁচে আছেন মানুষের ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায়। তাঁরা প্রত্যেকে এই কামনা করেন যে, তিনি যদি তাঁর আত্মাকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করতে পারতেন। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ইসলামি আন্দোলনের বাণী সম্মান ও মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারাই মুসলিম উম্মাহর শক্তিকে বিকশিত করছে। তারাই ইসলামি কাফেলাকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলছে। আল্লাহপাক যাঁদের জীবিত রেখেছেন, জিহাদের অর্জনকে রক্ষা করার জন্যেই জীবিত রেখেছেন। ইসলামি দাওয়াত ব্যতীত মুসলিম যুবকদের অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হবে না এবং তারা জীবন-জীবিকার ভয় এবং দুনিয়া ও মানুষের ভয় থেকে মুক্ত হবে না। কেউ যদি প্রশিক্ষণ ছাড়াই অস্ত্র ধারণ করে এবং যুদ্ধ করতে চায় তাহলে সে অপরাধ ঘটাবে এবং নিজে ধ্বংস হবে। ইসলামি দাওয়াতও এরকম। দীর্ঘ সময় তা চলবে, সে সময় কোনো জিহাদ থাকবে না। ইসলামি আন্দোলনের জন্যে শহীদ হওয়ার বিষয়টিও তাই। শহীদ হতে হবে চূড়ান্ত সময়ে। ইসলামি আন্দোলন ও ইসলামি দাওয়াত পরস্পর সম্পর্কিত এবং সম্পূরক। সুতরাং ইসলামি দাওয়াতের কোনো বিকল্প নেই। দীর্ঘসময়ব্যাপী তরবিয়তের (প্রশিক্ষণ ও দীক্ষা) কোনো বিকল্প নেই। এবং সবশেষে জিহাদেরও কোনো বিকল্প নেই।

    আমি এই সিদ্ধান্ত জানাতে চাই যে, পৃথিবীর যেকোনো ইসলামি আন্দোলনের পক্ষে পৃথিবীর যেকোনো ভূখণ্ডে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, যদি মানুষের সম্মতি ও সহায়তা তাদের সঙ্গে না থাকে। কেননা এই যুদ্ধ দীর্ঘ এবং প্রয়োজন অনেক। ইসলামি দাওয়াতের কর্মীসংখ্যা কম। তারা দীর্ঘসময়ব্যাপী বিশাল যুদ্ধের প্রয়োজন মেটাতে পারবে না। আমার কথা এটাই। আমার এই মিশনের কথা হচ্ছে, মুসলিম যুবকদেরকে কুরআন-সুন্নাহ, তাওহিদ, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও জিহাদের ভালোবাসার ওপর গড়ে তুলতে হবে। রিপুকে দমন করা, কুপ্রবৃত্তির ওপর জয়ী হওয়া, নিজের পছন্দের ব্যক্তিত্ব ও নিজ দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা থেকে দূরে থাকা এবং যেখানে যেটা সত্য সেখানে সেটা উচ্চারণ করা হত্যাদি বিষয়ের ওপর তরবিয়ত দিতে হবে। মুখ ও গোপনাঙ্গের কুপ্রবৃত্তি, বিশেষ করে মুখের কুপ্রবৃত্তি—যখন যা মুখে আসে তা-এই বলে ফেলা এবং যখন যা সামনে আসে তা-ই খেয়ে ফেলা—থেকে মুক্ত থাকার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন [সাহল বিন সা'দ রা. থেকে বর্ণিত]—

    «مَنْ يَضْمَنْ لِي ‌مَا ‌بَيْنَ ‌لَحْيَيْهِ ‌وَمَا ‌بَيْنَ ‌رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ

    ‘কেউ যদি আমার পক্ষ থেকে তার মুখ ও লজ্জাস্থানের যিম্মাদার হয় (হেফাযত করে), আমি তার পক্ষ থেকে জান্নাতের যিম্মাদার হবো।[1]

    আমরা যখন যুবকদেরকে এইসব বিষয়ের তরবিয়ত ও প্রশিক্ষণ দেবো, তারা মানুষের মান-সম্মান-সম্ভ্রম, তাদের ধন-সম্পদ এবং তাদের রক্তের ব্যাপারে নিরাপদ ও বিশ্বস্ত থাকবে। জিহাদ হচ্ছে অস্ত্র বহন করা এবং যুদ্ধ করা। আপনি যখন অস্ত্র বহন করবেন এবং আপনার ইসলামি তরবিয়ত না থাকবে, মনের ও দেহের প্রশিক্ষণ না থাকবে, আপনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারেন। কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাদ দিয়ে আপনি মানুষের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়াবেন। আফগানিস্তানে সাধারণ মানুষ এবং ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের একটি বড়ো অংশের মধ্যে আমি এই প্রবণতা দেখেছি। আর যেসব মূর্খ ও পাপী অস্ত্র ধারণ করে তারা মানুষের যন্ত্রণা, দুর্দশা ও ফেতনাই বৃদ্ধি করে। তাছাড়া ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা হবে দেশের নিরপত্তার প্রহরী। তারা নারীদের সম্মান-সম্ভ্রম রক্ষা করবে, মানুষের জান-মালের হেফাযত করবে এবং তাদের দীনের হেফাযত করবে। বিষয় এই যে, আপনি যখন অস্ত্র বহন করবেন এবং চারপাশে হাজারো সশস্ত্র লোক থাকবে, আপনার মনে হবে এই এলাকায় আর কেউ নেই আমরাই সব। কখনো কেউ যদি বলে, তোমরা অমুক মেয়েটিকে আমার জন্যে পরিবেশন করো, স্বামী থেকে এই নারীর বিচ্ছেদ ঘটাও এবং আমার সামনে নিয়ে আসো বা অমুককে ডাকো এবং তাকে টাকা পরিশোধ করতে বলো তাহলে তা হবে রুশ বাহিনীর বর্বরতার চেয়েও ভয়ঙ্কর ও নির্মম। এখানে যদি কোনো অভ্যন্তরীণ বাধা না থাকে যা আপনাকে আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্ম থেকে বিরত রাখবে, তাহলে আপনি হয়ে উঠবেন রুশ সৈনিকের চেয়েও পাষণ্ড ও নিষ্ঠুর। তাই আমি বলতে চাই, এই দাওয়াত ও তরবিয়তের মিশন নিয়েই আমি বের হয়েছি।

    ইসলামি দাওয়াত আর তরবিয়তের ফলেই আফগানিস্তানে মুজাহিদরা বিজয়ী হয়েছেন। ইসলামি আন্দোলনকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্যে দাউদের অভ্যুত্থান ঘটেছিলো। তারপর তারাকি এসেছে, হাফিজুল্লাহ আমিন এসেছে এবং তারপর রুশ বাহিনী এসেছে ইসলামি আন্দোলকে শেষ করে দেয়ার জন্যেই, কিন্তু তারা পারে নি। রুশ বাহিনী পরাজিত হয়েছে। এখন মুজাহিদরা একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে। বড়ো মহান সে রাষ্ট্র। কবি বলেন—

    والطعن عند محبيهن كالعسل أغلى الممالك ما يبنى على الأسل

    মহান সে-রাষ্ট্র যা বর্শার ফলার ওপর প্রতিষ্ঠিত, মহান রাষ্ট্রের শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট অপবাদ হলো মধুর মতো।’

    আমরা যদি কাবুল থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ইসলামি আন্দোলনকে প্রসারিত করতে চাই তাহলে এটাই পথ : ইসলামি দাওয়াত; যুবকদেরকে ইসলামের ওপর তরবিয়ত করা। তাঁরা বিশ্বাস, ধৈর্য ও শুদ্ধচিন্তা নিয়ে অস্ত্র ধারণ করবে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করবে। তখনই তারা বিজয়ী হবে। এটা ছাড়া আমাদের সব প্রচেষ্টার ফল হবে পানিতে চারা রোপণ করা আর বাতাসে বীজ বপন করার মতো। কোনো লাভ নেই। ব্যর্থতার ওপর ব্যর্থতা জমা হয়ে ব্যর্থতার পাহাড় হয়ে উঠবে। আমাদের এই আন্দোলন ঘোষণা শ্লোগান, বাক্য অপচয় আর প্রচার-প্রসারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। তা কোনো পরিণতিতে পৌঁছুতে পারবে না।


    [1] সহিহুল বুখারি : হাদিস ৬৪৭৪




    আরও পড়ুন
    ত্রয়োদশ পর্ব
Working...
X