“ফিলিস্তিনের স্মৃতি ”
।।শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
এর থেকে– বিংশ পর্ব
।।শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
এর থেকে– বিংশ পর্ব
ফাতাহর বিশৃঙ্খলা
ফাতাহ এই পরাজয় প্রত্যক্ষ করে। ফাতাহর সদস্যরা আরব বিশ্বের এই বিপর্যয় দেখে তারা মর্মাহত হয়। তারা ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলমানদের আহ্বান জানায়। ফাতাহর সঙ্গে যারা ছিলো, তারা অল্প সংখ্যক ভালো মানুষ। তারা ছিলো চরম দুঃসাহসী। ফাতাহর সদস্যরা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের মুসলমানদের আহ্বান জানায়, তোমারা আসো, আমরা ইসরাইলের সামনে দাঁড়াবো। ইসরাইলের চারপাশের আরব রাষ্ট্রগুলো ব্যর্থ ও পরাজিত হয়েছে। তারা ‘না’ বলতে পারে নি। ফাতাহর সদস্যরা আহ্বান জানায়, হে মুসলমান, হে আলেম-ওলামা, হে ফিলিস্তিনের সন্তানেরা, তোমরা এগিয়ে আসো। কেউ এগিয়ে আসে নি। কে এগিয়ে আসবে? তারাই কেবল এগিয়ে এসেছিলো যারা সামরিক তৃতীয় স্তরের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণে অকৃতকার্য হয়েছিলো বা জর্ডানের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিলো। তারা কোনো কাজ পায় নি বলে ফাতাহর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলো।
এই বিপুল সংখ্যক লোক সে-সময় ফাতাহ-এ প্রবেশ করেছিলো। এ-কারণে ফাতাহর অভ্যন্তরীণ জঞ্জাল বেড়ে গিয়েছিলো এবং এই জঞ্জালের নেতৃত্ব দেয়া কঠিন কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যারা ফিলিস্তিন নিয়ে ব্যবসা করেছিলো তারাও ফাতাহর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলো। এমনকি প্রায় সব মতাদর্শের লোক ফাতাহর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলো। বামপন্থীরা যোগ দিয়েছিলো, কমিউনিস্টরা যোগ দিয়েছিলো, প্রগতিশীল ও পুনর্জাগরণবাদীরা যোগ দিয়েছিলো এবং জাতীয়তাবাদীরাও যোগ দিয়েছিলো। এভাবে সব ধরনের লোক ফাতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলো। তাদের সবাই নিজ নিজ মতাদর্শ বিস্তার করার চেষ্টা করেছে; নিজেদের মতো কাজ করেছে; কেউ ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় নি। তাদের দিকে কেউ একটি বুলেটও ছোঁড়ে নি।
হ্যাঁ, আমি তখন তাদের সঙ্গে ছিলাম। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অপারেশন চলছিলো। কিন্তু সেই অপারেশন কারা চালাচ্ছিলো? ফিলিস্তিনের সেসব সন্তানেরাই অপারেশন চালাচ্ছিলো যাদের ভেতর শুদ্ধ ও পবিত্র চেতনা ছিলো। তাদের ভেতরে মাতৃভূমির জন্যে ভালোবাসা ছিলো, আত্মসম্মানবোধ ছিলো। কেউ কেউ এমন ছিলো, যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করার পর অবশিষ্ট অস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে কাজে লাগানোর জন্যে রেখে দিতো। তারা সাম্রাজ্যবাদ ও বুর্জোয়াশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হতো। এই লড়াইয়ে প্রলেতারিয়েত—শ্রমিক ও মজদুরশ্রেণির জয় হয়েছিলো। এরা ছিলো সমাজতন্ত্রের প্রতীক। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম, সাম্রাজ্যবাদ ও বুর্জোয়াশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিহত হয়েছে এমন যুবককে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, প্রলেতারিয়েত কী? সে জবাব দেয়ার আগে চিন্তা করতো, প্রলেতারিয়েত হচ্ছে রাশিয়া বা সাম্রাজ্যবাদের গ্রাস, তাদের শোষণে পীড়িত ও বিপর্যস্ত। বা প্রলেতারিয়েত হচ্ছে আমেরিকার গ্রাস, শোষিত ও নিপীড়িত। এভাবে ফাতাহর অভ্যন্তরে সমাজতন্ত্রের প্রবেশ ঘটেছিলো। এমনকি প্রত্যেকদিন যে-সঙ্গীত দিয়ে তাদের রেডিওর সম্প্রচার শুরু হতো সেটাও ছিলো সমাজতন্ত্র-সঙ্গীত। সেই সঙ্গীত—আমার যতোটুকু মনে পড়ে—ছিলো এমন :
أنا يا أخي, أنا يا أخي‘ آمنت بالشعب المضيع والمكبل, وحملت رشاشي، لتحمل بعدنا الأجيال
"হে আমার ভাই, আমিও, এবং আমিও পূর্ণ আস্থা আপন করেছি নিপীড়িত- নিগড়িত জাতির প্রতি এবং বহন করেছি মেশিনগান, যাতে তা কাঁধে তুলে নেয় প্রজন্মের পর প্রজন্ম।'
পরবর্তী প্রজন্ম কী বহন করবে? কুরআন?! না-কি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কাস্তে বহন করবে?! আমরা এই জন্যে লড়াই করছি যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হাতে কাস্তে ও হাতুড়ি তুলে নেবে? হ্যাঁ, এভাবেই সমাজতন্ত্রের নিশানা-নিদর্শন ফাতাহর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলো। সমাজতন্ত্রীরা প্রচারযন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের মতাদর্শ ও মত প্রচারে তা পুরোদস্তুর ব্যবহার করে। তারা ফিলিস্তিনি যুবকদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে চুরি করে নিয়ে যায় এবং বামপন্থায় দীক্ষিত করে।
একবার তারা আমার কাছে আসে। আমি তখন ইসলামি আইনে স্নাতকোত্তর শেষ করেছি। তারা আমাকে ধরেবেঁধে নিয়ে যেতে চায়। কীভাবে আমি তাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করি। গেলাম তাদের সঙ্গে তাদের ঘাঁটিতে। তাদের একজন বলে, আবু মুহাম্মদ, আমাদের অনেকেই শহীদ হয়েছে। আপনি এদিকে আসুন। আমি তাদের আস্তানায় প্রবেশ করলাম এবং নিঃস্ব ও দুর্বল একদল তরুণকে দেখতে পেলাম। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কী নাম তোমার? সে বললো, চে গুয়েভারা[1]। আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কী? সে বললো, আমার নাম কাস্ত্রো[2]। হায় আল্লাহ, এই কাস্ত্রোর বয়স ছিলো মাত্র পনেরো। তোমার নাম কী, আমি আরেকজন তরুণকে জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো, আমার নাম হো চি মিন[3]। শেষে যাকে নাম জিজ্ঞেস করলাম, সে বললো, আমার নাম মাও[4]। আমি খুব দুঃখ পেলাম। আমি কোনো আরবি নামও শুনি নি, ইসলামি নামও শুনি নি। আমরা তাদেরকে বললাম, তোমরা নিজেদের নাম রেখেছো চে গুয়েভারা, ক্যাস্ট্রো, হো চে মিন এই সব নাম। কেনো, আবু উবায়দা, উমর, হামযা, মুসআব, কা'কা ইত্যাদি নাম কি তোমাদের জানা ছিলো না?
সেখানে সমাজতন্ত্রীদের যে বিপ্লবী শিক্ষাদাতা ও নেতা ছিলো সে আমার প্রতি অভিযোগ আরোপ করতে থাকে। এই নেতা আগে একটি ডাকাতদলের সর্দার ছিলো। এখন সে কাতারে তার কর্মে নিয়োজিত আছে। সেই ডাকাতসর্দার আমাকে সামরিক বিচারের মুখোমুখি করার জন্যে আমার পেছনে লোক লাগায়। তাদের অভিযোগ : আমি চে গুয়েভারার সমালোচনা করেছি। এসব কারণেই ফাতাহর সঙ্গে যেসব বিপ্লবী যুক্ত হয়েছিলো তাদেরকে আমি কিছুদিন পরেই বিশ্বাসহীন সমাজতন্ত্রীতে পরিণত হতে দেখেছি। তারা কোনো কৌশল ও রণনীতি অবলম্বন না করেই তাদের আন্দোলন চালিয়েছে। তারা পানিতে ছুরি চালানোর মতো অর্থহীন কাজ করেছে।
জর্ডান সরকার তাদের দেশ থেকে বিপ্লব তাড়াতে চাইলো। তাদের কী করা উচিত? লোকেরা খুব বুদ্ধিমান। তারা সরকারকে পরামর্শ দিলো, চিন্তা কি, আপনাদের হাতে দুটি অস্ত্র আছে। এক হচ্ছে তৃতীয় স্তরের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ। এটিকে আপনারা বাতিল করে দিন; অর্ধেক লোক বিপ্লব থেকে ফিরে আসবে। আরেকটি অস্ত্র হচ্ছে সেনাবাহিনীতে জোরজরবদস্তিমূলক নিযুক্তিকরণ। এটিকেও আপনারা বাতিল করে দিন; বাকি অর্ধেক বিপ্লব ত্যাগ করবে। এরপরেই একদিন জর্ডানের মন্ত্রীসভার বৈঠক বসে। সেই সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় 'তৃতীয় স্তরের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ' ও 'সেনাবাহিনীতে জোরজরবদস্তিমূলক নিযুক্তিকরণ' প্রকল্পদুটি বাতিল করা হবে। এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর একদিনের ভেতরেই বিপ্লবীদের অর্ধেক ঘাঁটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। আসলে তাদের কোনো আদর্শ ছিলো না। তারা ঝোঁকের বশে ও নানা ব্যক্তিগত কারণে ইসলামি আন্দোলনের যুবকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলো। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, এখন কোথায় আপনারা? কোথায় আপনাদের ইসলামি আন্দোলন? আমি তাকে বলেছি, ইসলামি আন্দোলন ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ছিলো, ১৯৬৭ সালেই তা সঙ্কুচিত হয়েছে এবং যে সামান্য উন্নতি লাভ করেছিলো তা ১৯৬৭ সালেই করেছিলো।
গেরিলা কার্যক্রমের বিলুপ্তি
নেতাদের গৃহীত কৌশল অনুসারেই কার্যক্রম চলছিলো। কিন্তু সবক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সমতা ও সমন্বয় রক্ষিত হচ্ছিলো না। সত্য যে আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম। এসব ব্যাপারে তাদের প্রতি আমার যে আপত্তি ছিলো, তা নিয়ে আমি কিছু ভাবি নি। তবে ইসলামি আন্দোলনের ব্যাপারে এই কৈফিয়ত অবশ্যই পেশ করতে পারি যে, এই আন্দোলনের সব নেতাকর্মীই কারাগারে বন্দি ছিলেন। প্রেসিডেন্ট যখন ঘোষণা দিলেন যে, আমরা একদিনেই সতেরো হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছি, তখন থেকেই এই সংগঠনের বিপর্যয় শুরু হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই তা দীর্ঘায়ত হয়।
প্রথমে জর্ডানে গেরিলা কার্যক্রমের বিনাশ ঘটে। তারপরে সিরিয়াতেও একইভাবে গেরিলা কার্যক্রমের বিলুপ্তি ঘটানো হয়। এরপর লেবাননে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সেখানে সংঘর্ষ বাঁধার পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর ইশারায় গোয়েন্দারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে লেগে যায়, এমনকি তাদেরকে জবাই করে হত্যা করতে থাকে। এরপর ইহুদিরা তাদের মিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ইহুদিরা বলে, আমরা জর্ডানে গেরিলাদের শেষ করে দিয়েছি। সিরিয়াতেও তারা রেহাই পাবে না। সিরিয়া থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করা হবে। সিরিয়া থেকে তাড়িয়ে লেবাননে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তাদের শেষ করা হবে। আমরা তাল আল-যাতারে প্রবেশ করেছি এবং গুঁড়িয়ে দিয়েছি। তারা বলে, আমরা চাই না, লেবাননে কোনো ফিলিস্তিনি অস্ত্র ধারণ করুক।
ভালো কথা, আমরা লেবাননে এটাই করতে পারছিলাম। আমরা তাদেরকে আহ্বান জানালাম, তোমরা আসো। তারা আসে এবং লেবানন অবরোধ করে। এরপর মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করে। তারা বলে, আমরা তোমাদের নারী ও শিশুদের প্রতি করুণাবশত তোমাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে যাচ্ছি। তোমরা বেরিয়ে আসো এবং অস্ত্র ত্যাগ করো। আমরা তোমাদেরকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ইয়ামেন, আলজিরিয়া এবং তিউনিশিয়ায় পাঠিয়ে দেবো। প্রত্যেক দেশে তোমরা ভাগ হয়ে চলে যাবে। ইহুদিদের এই আহ্বানে ইসলামি আন্দোলনের গেরিলারা বেরিয়ে আসে এবং নারী ও শিশুদের রেখে আসে। এই সুযোগে আল্লাহর শত্রুরা, ইহুদিরা ও অন্যরা আক্রমণ করে বসে এবং সাবরা ও শাতিলায়[5] নারী ও শিশুদের জবাই করে হত্যা করে।
এতোকিছুর পরও তাদের কী হয়েছে? কিছুই হয় নি এবং হবেও না। গত বছর মহান আল্লাহ এই পবিত্র জিহাদকে দখলকৃত ভূমির অভ্যন্তরেও বিস্তৃত করে দিয়েছেন। শুরু থেকেই মুসলিম যুবকেরা এই জিহাদ চালিয়ে আসছে। অপারেশনও তারা চালিয়েছে। বিপ্লবীরা এই বিষয়ে কিছু জানে না। যদিও তারা বারাক, গাজা ও জাবালিয়ায় কিছু অপারেশন পরিচালনা করেছে। এরপর মানুষ বিপ্লবী হওয়ার চেষ্টা করে এবং মুমিন ও ফাসেক, ভালো ও মন্দ সবাই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আল-ইনতাফাদা আল-ফিলিস্তিনিয়াহ-এর পবিত্র লড়াইও শুরু হয়। পর্যবেক্ষণে এই বিষয়টি অনুধাবন করা গেছে যে, ইসলামি আন্দোলনে যখন সব শ্রেণির লোক অংশগ্রহণ করেছে তখন সেখানে সমাজতন্ত্রী বিপ্লবের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সংগঠন অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনেক অর্থও ব্যয় করেছে। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শোকর, মুসলিম যুবকেরা ফিলিস্তিনি আন্দোলনের গতিপথ ও ফিলিস্তিনের নেতাদেরকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বামপন্থা, কাস্তে ও হাতুড়ি যাদেরকে বিপথগামী করেছিলো তাদেরকেও তারা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
মাহমুদ দারবিশ, সামিহ আল-কাসিম এবং তাওফিক যিয়াদ এই তিনজন হলেন বামপন্থী কবি ও লেখক। তাওফিক যিয়াদের উপাধি হয়েছে 'ধরিত্রী দিবস'। এখন তাঁর নাম দাঁড়িয়েছে ধরিত্রী দিবস তাওফিক যিয়াদ। তিনিই ৩০শে মার্চ ধরিত্রী দিবসের ধারণা প্রকাশ করেন। তাওফিক যিয়াদ বামপন্থী কমিউনিস্ট। তিনি ইসরাইলি জ্ঞানের মাধ্যমে আমেরিকা থেকে অর্থ উপার্জন করেন। তাওফিক যিয়াদ ও সামিহ আল-কাসিম ইসরাইলি গির্জায় ছিলেন।
আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট এবং তিনিই সর্বোত্তম তত্ত্বাবধায়ক। ফিলিস্তিনি আন্দোলনের গতিপথ ও ফিলিস্তিনি নেতারা ইসলামের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। হামাস আল্লাহপাকের অনুগ্রহের ফলেই আত্মপ্রকাশ করেছে। আমরা আশা করি আল্লাহপাক এর এগিয়ে যাওয়ার পথে বরকত দান করবেন। ইসলাম ছাড়া ফিলিস্তিন-সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। মুসলিম যুবকরা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান অন্যরা করতে পারবে না। বিপ্লবীরা এতে সন্তুষ্ট হোক আর না হোক। তারা নিজেদের নিয়েও সন্তুষ্ট আছে। বিপ্লবের অভ্যন্তরেই গলদ রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার চিন্তা বা দীন থেকে সরে আসা ফিলিস্তিনকে উদ্ধার করবে না। এতে করে ফিলিস্তিন দিন দিন ধ্বংসের পথেই এগিয়ে যাবে। হন্তারক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করবেই। কোনোদিন এর কোনো শেষ দেখা যাবে না। ইহুদিরা দাবি করতেই থাকবে এবং ফিলিস্তিন সে-দাবি মেটাতেই থাকবে। অধঃপতনের পর অধঃপতন ঘটতে থাকবে। তাদেরকে স্বীকৃতির পর স্বীকৃতি দিতেই হবে। এদের সঙ্গে কখনো সমস্যার সমাধানে পৌঁছানো যাবে না। এরা নবীদেরকে হত্যা করেছে। একদিনে সত্তর জন নবীকে হত্যা করেছে। যাকায়িরা আ.-কে হত্যা করেছে। এরা আল্লাহর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এদের ধর্ম হলো এরা ঈদের দিনের রুটি খ্রিস্টান বা মুসলমানের রক্তে ভিজিয়ে খায়।
আবু তাওমার ঘটনাটি দামেস্কে একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। ইহুদিদের ঈদের রাত এলে তারা রক্ত খুঁজে বেড়াতে লাগলো। তাদের কাছে কোনো মুসলমান বা খ্রিস্টান ছিলো না যার রক্তে তারা রুটির খামিরা তৈরি করতে পারে। তারা আবু তাওমার কাছে তাঁর এক ইহুদি বন্ধুকে পাঠালো। আবু তাওমা ডাক্তার ছিলেন। ইহুদি ধর্মগুরুরা (আরবিতে বলে হাখাম বা রাব্বি) সভা করে পরামর্শ করলো আমরা একজনকে চাই। তাদের এক সভাসদ বললো, আমার এক ডাক্তার বন্ধু আছে, নাম আবু তাওমা। আমরা তাকে আমাদের একজন রোগী আছে বলে এখানে নিয়ে আসতে পারি। তারা আবু তাওমাকে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। তাকে জবাই করে তার রক্ত নিংড়ে নিয়ে রুটির খামিরা তৈরি করে। এখানেই শেষ নয়। এরা প্রতিদিন বলে, ফিলিস্তিনিদের প্রতিটি বাড়ি গুঁড়িয়ে দাও। প্রত্যেক পবিত্রকে কলঙ্কিত করো। একজন ইহুদিকে একটি পয়সা দিয়ে উপকার করতে চাইলে প্রতিটি জীবিতকে হত্যা করো। এরা প্রতিদিন তিনবার তিনটি ধর্মকে গালি দেয়। সেই ধর্মের নেতাদের গালি দেয়। এরা মানুষকে ধোঁকা দেয় যেনো ছেটো বাচ্চাদের ধোঁকা দিচ্ছে।
এখন কোনো সমাধান নেই। কাবুলে যে-পথ অনুসরণ করা হয়েছে জেরুজালেমেও একই পথ অনুসরণ করতে হবে। কাবুল যেভাবে বিজয় অর্জন করেছে, জেরুজালেমও সেভাবে বিজয় অর্জন করবে। মুসলিম সন্তানদের ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত করতে হবে। তারা হৃদয়ের ভালোবাসা থেকে জান্নাতের আশায় জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনের জন্যে তারা বুকের রক্ত ব্যয় করবে। তারা এই পৃথিবীতেই আয়তলোচনা হুরদের মোহর পরিশোধ করবে। তারা আল্লাহর পথে তাদের জানকে সস্তায় কুরবান করবে। আমার কথা এখানেই শেষ। আমি আমার জন্যে এবং আপনাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
[1] পুরো নাম এর্নেস্তো চে গুয়েভারা দ্য সের্নার। সমাজতান্ত্রিক ভাবানুসারী লাতিন আমেরিকার বিপ্লবী, তাত্ত্বিক ও গেরিলা নেতা। চের জন্ম ১৯২৮ সালের ১৪ই জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। ১৯৫৩ সালে গুয়াতেমালার হাকোবো আবেজ-এর বামপন্থী সরকারে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালের জুলাই মাসে এ-সরকারের পতন হলে মেক্সিকোতে চলে যান এবং ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবী দলে যোগ দেন। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত কিউবার রাজধানী হাভানা দখলের লড়াইয়ে চে গুয়েভারা কাস্ত্রোর অনুগত বাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশ নেন। ১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারি কিউবার ক্ষমতাসীন সরকারপ্রধান বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত ও বিতাড়িত করে কাস্ত্রো নতুন সরকার গঠন করলে চে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদসহ শিল্পমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায় নি। এ-বছরেই কোনো এক সময়ে গেরিলা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে বলিভিয়ায় যান। ১৯৬৭ সালে সান্তাক্রুজের কাছে তাঁর নেতৃত্বাধীন গেরিলা বাহিনী বলিভীয় সেনাবাহিনীর হাতে নির্মূল হয়। এ-বছরের ৮ই অক্টোবর আহতাবস্থায় ধরা পড়ার পর ৯ই অক্টোবর ভ্যালেগ্রান্ডার লা হিগুয়েরায় বন্দি চেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ বলিভিয়ার ডায়েরি; দ্য মটর সাইকেল ডায়েরিজ: ডেকে যাই; গেরিলা যুদ্ধ।
[2]পুরো নাম ফিডেল আলেজান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ। ১৯২৬ সালের ১৩ই অক্টোবর কিউবার ওরিয়েন্ট প্রদেশে জন্ম। দায়িত্ব পালন কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবা-এর ফার্স্ট সেক্রেটারি (জুলাই ১৯৬১-১৯ শে এপ্রিল, ২০১১); কিউবার পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি ( ২রা ডিসেম্বর, ১৯৭৬- ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮); ষোড়শ প্রধানমন্ত্রী ( ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯- ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮); জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (NAM)-এর সপ্তম ও ত্রয়োবিংশ মহাসচিব।
[3] এটি তাঁর ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম নৃগুয়েন্ থাট্ থান। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ইন্দোচীন অর্থাৎ ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং গণতান্ত্রিক ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট (১৯৪৫-১৯৬৯)। জন্ম ১৮৯০ সালের ১৯ শে সাবেক ফরাসি-আশ্রিত রাজ্য আন্নামের নৃগেয়ান প্রদেশের হোয়াট্রু গ্রামে। ১৯৬৯ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
[4] মাও জে দং ১৮৯৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর চীনের হুনান প্রদেশের শাওশাং গ্রামের এক কৃষক পরিবারে গ্রহণ করেন। তিনি একাধারে সাম্যবাদী বিপ্লবী, চীনা রাষ্ট্রনেতা, গণতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (প্রতিষ্ঠা : ১৯২১ সালের জুলাই) অন্যতম সংগঠক। দায়িত্ব পালন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভাপতি (১৯ শে জুন, ১৯৪৫-৯ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৬) এবং কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান (২০শে মার্চ, ১৯৪৩-২৪ শে এপ্রিল, ১৯৬৯)। গণতন্ত্রী চীনের প্রথম চেয়ারম্যান ( ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪- ২৭শে এপ্রিল, ১৯৫৯)। মাও মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে ১৮ বছরের কন্যা লাও ইজিকে বিয়ে করেন এবং এরপর আরো তিনটি বিয়ে করেন। চতুর্থ স্ত্রী জিয়াং চিং বয়সে তাঁর থেকে ২১ বছরের ছোটো ছিলেন। শেষ তিন স্ত্রীর ঘরে তাঁর হয়েছিলো মোট ১০ সন্তান। ১৯৭৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তিনি বেইজিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সংগ্রামী নেতার প্রতীকে পরিণত হলেও বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পাত্র হয়ে ওঠেন। তিনি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের (Cultural Revolution) নামে চীন থেকে ইসলামের ইতিহাস- ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রায় মুছে দিয়েছিলেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ On Guerrilla Warfare (1937); On Practice (1937); On Contradiction (1937); On Protracted War (1938); In Memory of Norman Bethune (1939); On New Democracy (1940); Talks at the Yan'an Forum on Literature and Art ( 1942); Serve the People (1944); The Foolish Old Man Who Removed the Mountains (1945 ) On the Correct Handling of the Contradictions Among the People (1957).
[5] ইহুদি ও খ্রিস্টান ফালাংগিস্ট মিলিশিয়া বাহিনী ৬ই সেপ্টেম্বর লেবাননের পশ্চিম বয়রুতের সাবরা ও শাতিলা শরণার্থী শিবিরে গণহত্যা চালায়। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত তারা তিন হাজার পাঁচশোরও বেশি ফিলিস্তিনি মুসলমানকে হত্যা করে।
আরও পড়ুন
উনবিংশ পর্ব
Comment