مؤسسة النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
هذه غزة …
طليعة الأمة اليوم للتغيير-٤
بقلم: سالم الشريف
এই তো গাজা…
উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
[যুদ্ধের পঞ্চম সপ্তাহ]
মূল: সালেম আল শরীফ
This is Gaza…
The vanguard of the Ummah is ready for revolution
[Fifth Week of War]
Author: Salem Al Sharif
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
লিংক-১ : https://justpaste.it/This_is_Gaza-4
লিংক-২ : https://mediagram.me/825371fda8af4784
লিংক-৩ : https://noteshare.id/J6dZFyq
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20240604...This_is_Gaza-4
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20240604...5371fda8af4784
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20240604...are.id/J6dZFyq
روابط بي دي اب
PDF (450 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৫০ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/6s8PLjNCBwPMk2f
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/RntxkiF9NWFRwFA
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...20gaza%204.pdf
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...b90ada2cac135f
লিংক-৫ : https://share.eu.internxt.com/sh/file/524caa5f-e197-4e56-be73-b182e9390ade/4c8c45f7449a07fdc1ba55cb8193ea53aaf4afc5d74464c9b8 ea4815c6cc3a93
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...-to-gaza-4.pdf
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/ko45b...aza+4.pdf/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/E3lCmYAA#SDroTGR2p0qfxMbTM4WeJP0oOnjmRKsmzvyKg8gEm TE
روابط ورد
WORD (493 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৪৯৩ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/b5HsDbg3eRxCzMy
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/5nn7x8tpgGd9qSz
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...0gaza%204.docx
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...42db9f0a9386b1
লিংক-৫ : https://secure.ue.internxt.com/sh/file/712aaf59-05f6-4c9c-829f-b930ef91da4f/b2392111e57054a2bdf5e65646ddcaf215cbeaeabf10cecfb3 4cce288f15c897
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...to-gaza-4.docx
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/1mvna...za+4.docx/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/R7snlCQQ#WEjAyWpipG9A2kZeTKeGk7VxN1FCRAYqZ5eF13QXm 5s
روابط الغلاف- ١
book cover [967 KB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [৯৬৭ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/RqyBmZJppSNQdrB
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/RJnQ8GKkkHG6wK8
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...04%20Cover.jpg
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...41a67b0d63d7bb
লিংক-৫ : https://share.eu.internxt.com/sh/file/9553aa8e-5c28-40e5-9e93-c7bf3a4ed609/cc7bf255bdb697250552a3995ae5514b14e6a4b74313e1372c 5271e627db6078
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...za-4-cover.jpg
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/lvt4y...Cover.jpg/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/9201QAAZ#xvDQgX...MzVVrImjTeBpnQ
روابط الغلاف-٢
banner [2.1 MB]
ব্যানার [২.১ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/QQcg7Ed3AZMHFY7
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/wcJ5rBqYJdk2rGR
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...4%20Banner.jpg
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...43f79b89e5df91
লিংক-৫ : https://secure.ue.internxt.com/sh/file/ad9a47f5-a3ea-41b2-a96f-1e352f83cc70/208d63f570078d3c755e622797b2b40b12a47228bf048caf00 53276bd0bb6cb5
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...a-4-banner.jpg
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/coqsz...anner.jpg/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/E3tiFCCQ#jYWBxVqqp__27XMabx4DU_myT_tPTesppNxzEIGa9 ms
****************
بسم الله الرحمن الرحيم
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
এই তো গাজা… উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
ইহুদী গোষ্ঠী, আমেরিকা এবং ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্ব ০৭ই অক্টোবরের হামলা নিয়ে অনেক মায়া কান্না দেখিয়েছে। তারা এই হামলা সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলেছে। অনেক গালমন্দ করেছে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ০৭ তারিখেই যেন ইহুদীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই শুরু হল (!); সবেমাত্র এই তারিখেই যেন মানব সভ্যতার ইতিহাস এক অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করলো।
না.. কখনোই নয়..
আমরা অতীত কিছুতেই ভুলতে পারি না। যদি তোমরা নির্লজ্জের মতো অতীত ভুলে থাকার ভান করো, ১৯৪৮ সালে যে অন্যায় তোমরা করেছো, সেই ইতিহাস থেকে যদি তোমরা চোখ ফিরিয়ে রাখো, তবে সেটা তোমাদের বিষয়। কিন্তু তোমাদের ওই অপরাধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু তোমরা করে এসেছো, কোনো কিছুই আমরা ভুলতে পারি না। এমনকি প্রথম যখন মুসলিম দেশের উপর ক্রুসেডারদের হামলা আরম্ভ হয়, সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অভিশপ্ত পশ্চিমা আগ্রাসনের কোনো কিছুই আমরা ভুলিনি।
এই পুরো সময়ে বহুবার তোমরা বিতাড়িত হয়েছ। অচিরেই আবারো তোমরা এমনভাবে বিতাড়িত হবে যে, আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না, ইনশাআল্লাহ। কারণ আমাদের এই বিষয়টা রক্তমাখা। উম্মাহর সন্তানেরা বিপ্লবের উত্তরাধিকার বহন করছে। উম্মাহর লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবার আগ পর্যন্ত বিপ্লবের এই নেশা কাটবে না। তোমরা তা কামনা করো, কিংবা প্রত্যাখ্যান করো, তাতে কিছু যায় আসে না।
প্রত্যক্ষকারীদের জন্য আগামী দিন খুবই নিকটে। কলমের ভেতর দোয়াত ভর্তি, কলম লিখতে প্রস্তুত। লেখকেরা লিখে যাচ্ছেন, ইতিহাসের পাতাগুলো প্রতিনিয়ত কালো অক্ষরে ভরে যাচ্ছে। ঐতিহাসিকদের সততা যেন আমরা না হারাই— এটাই কামনা।
১০৯৬ খ্রিস্টাব্দ। অর্থাৎ ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রায় ১০০০ বছর আগের কথা। সেই সময় ক্রুসেডারদের শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল; আর তা হচ্ছে- ফিলিস্তিনে আগ্রাসন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ক্রুসেডারদের যুদ্ধের ফলাফল ছিল জেগে ওঠা এক ইহুদী বিষফোঁড়া। ক্রুসেডাররা চেয়েছে ইসলাম ও মুসলিম মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে এই ইহুদী সত্তা যেন প্রধান সেতু হিসেবে খ্রিস্টানদের পক্ষে কাজ করে। আর বাইডেন (বর্তমান সময়ে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান) তার যুবক বয়সে ১৯৮৬ সালে নির্লজ্জের মতো স্পষ্ট ভাষায় বলেছে,
“ইসরাইল তথা ফিলিস্তিনে ইহুদীবাদী রাষ্ট্র আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সর্বোত্তম বিনিয়োগ। যদি ইসরাঈল না থাকতো তাহলে আমেরিকার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একটা ইসরাইল তৈরি করা জরুরি ছিল।”
সেই ক্রুসেড এখনো শেষ হয়নি। বরং আগের চেয়ে ক্রুসেডের তীব্রতা বেড়েছে। হ্যাঁ, বরাবরের মতোই এই ক্রুসেড একটা অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় যুদ্ধ; ইতিহাস জুড়ে ক্রুসেডের পরিচয় এমনই ছিল।
বাইডেন-নেতানিয়াহুর স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে- ভীতি তৈরি করা। তাদের এই কৌশল তাদের বিরুদ্ধেই চলে যাবে। কারণ এই ভীতি আমাদের ভিতরে থাকা নিষ্পৃহ ভাবকে হত্যা করবে। আমাদের এই নিষ্পৃহভাব এক দফাতেই দূর হবে না। এটা দূর করার জন্য বেশ কয়েকবারের প্রয়োজন হবে। প্রতিদিন প্রতিবার আঘাত করে তাগুত গোষ্ঠী মনে করবে, তারা সফল হয়েছে। কিন্তু এদিকে আমাদের ভেতর তাদের প্রতি সুপ্ত ঘৃণা এবং প্রতিশোধ স্পৃহা ক্রমশ বাড়তে থাকবে। দিন গড়াতে থাকবে, এরপর হঠাৎ একদিন নিষ্পৃহভাব কেটে গিয়ে আমরা বিপ্লবে ফেটে পড়বো। ওই দিনের পর আর কখনো আমাদেরকে নিষ্পৃহ থাকতে দেখা যাবে না।
তাই আমাদের এই অবস্থায় তোমাদের আঘাতগুলো আমাদের জন্য বিপ্লবের বীজ। তোমরাই সযত্নে এগুলোকে পানি সিঞ্চন করে বড় করে তুলছো। তোমাদের অনাচার আমাদের মধ্যে এই বীজকে বৃক্ষে পরিণত করছে। প্রতিশ্রুত দিন অত্যাসন্ন। তাই নিজ হাতে তোমরা যা রোপন করেছ, তার ফসল গ্রহণের জন্য তোমরা প্রস্তুত থেকো।
*গাজা উপত্যকায় মুসলিম গণহত্যার ব্যাপারে কিছু বাস্তবতা:
– অধিকৃত ফিলিস্তিন এবং ইউক্রেনে যেই দেশটা লড়াই ও সংঘাত উস্কে দিয়েছে সে হচ্ছে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’। এখন ইউক্রেনে আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে আমেরিকা থেমে গিয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনে আমেরিকা আগ্রাসীদেরকে খুব আপন করে নিয়েছে।
– যে দেশটা সর্বপ্রকার অর্থ-সম্পদ, অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা দিয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে, সে দেশটা হচ্ছে আমেরিকা। তারাই বিমানবাহী রণতরি পাঠাচ্ছে ইহুদীদের সাহায্যের জন্য। তারাই যুদ্ধের নেতৃত্ব দানের জন্য নিজের সামরিক কর্মকর্তা ও জেনারেলদেরকে প্রেরণ করছে।
– যারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের শাসক হিসেবে ইহুদীদেরকে বৈধতা দিয়েছে এবং তাদের আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকার করেছে, সে দেশটি হচ্ছে আমেরিকা। তারাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ভেটো দিয়েছে। তারাই একথা প্রচার করে বেরিয়েছে যে, ইহুদীরাই নির্যাতিত, নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত। তারা নির্যাতক তথা নিপীড়ক নয়। এ কাজগুলো সবই আমেরিকা ও ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্বের অবদান।
– আঞ্চলিক শাসকবর্গের (ফিলিস্তিনের আশপাশের দেশগুলোর শাসক) পৃষ্ঠপোষকতা, তাদেরকে বৈধতা দান এবং জনসাধারণের বিরুদ্ধে যেয়ে তাদেরকে সমর্থনে যে দেশটা অটল-অবিচল সে হচ্ছে আমেরিকা। আমেরিকাই আঞ্চলিক শাসকদের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়, সর্বপ্রকার অস্ত্রশস্ত্র ও গোয়েন্দা সুবিধা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করে। আমেরিকাই নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রাজনৈতিক ও সামরিক উপদেষ্টাদেরকে দিয়ে তাদেরকে দিক-নির্দেশনা দেয়। আমেরিকাই জনসাধারণের বিপ্লব ও উত্থান প্রতিরোধের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালনকারী।
– আমেরিকাই গাজা উপত্যকায় প্রতিরোধ মুজাহিদীনের সাহায্যের জন্য আঞ্চলিক বাহিনীগুলোর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দিচ্ছে। আঞ্চলিক তাবেদার সরকারগুলোকে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। সেই সাথে জর্ডানের বাদশা’র প্যারাসুট ল্যান্ডিং-এর (ভিডিও ভাইরাল করার) মাধ্যমে সকলের সামনে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছে।
– অক্টোবরের ০৭ তারিখে মুজাহিদীন দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক বিভাগকে টার্গেট করেছেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। এরপর ইহুদীরা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে টার্গেট করে হত্যা করতে আরম্ভ করে। আজকের দিন পর্যন্ত ১৫ হাজার (বর্তমানে ১৮ হাজার) এর অধিক প্রাণ তারা ঝরিয়েছে। তারা গাজার জনগণের আড়াই লাখেরও বেশি বাড়িঘর ও সম্পত্তি ধ্বংস করেছে।
– মুজাহিদ যুবকেরা দখলদার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ট্যাংক ও সামরিক যান টার্গেট করে হামলা করছে। জায়নবাদী আগ্রাসী সামরিক লোকদেরকেও আক্রমণ করছে। এদিকে শত্রু বাহিনী ক্রোধে অন্ধ হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতাল ও বেসামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলা জারি রেখেছে। কারণ গোয়েন্দা সূত্রে সামরিক টার্গেট খুঁজে পেতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। চোখের আড়ালে থাকা ইসলামের বীর বাহাদুরদের মুখোমুখি লড়াই করতে তারা অক্ষম। ইসলামের এই বীর বাহাদুরেরা তাদের কাছে ভূতের মতো, যারা তাদের সেনাবাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করার জন্য হঠাৎ উদিত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
– দখলদার শত্রুবাহিনীর প্রচারিত তথ্য ও বিবৃতিগুলো ভিত্তিহীন। এগুলোর পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। আসলে সামরিক কার্যক্রমের নামে তারা যেভাবে শহরের পর শহর ধ্বংস করছে, বেসামরিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে বর্বরোচিত বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করছে, সেগুলোই তাদের তথাকথিত সামরিক কার্যক্রমের মূল পরিচয় ও বিভৎস চেহারা।
অপরদিকে ইসলামের সিংহ পুরুষ বীর মুজাহিদ বাহিনী; তারা তাদের প্রচারিত প্রমাণ-নির্ভর বিবৃতিগুলোর মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সামরিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তারা কেবল শত্রুপক্ষের সামরিক লোক ও স্থাপনাই টার্গেট করছেন।
এমনই আরো অনেক বাস্তবতা আছে। ক্রুসেডার জায়নবাদী যৌথ শক্তি সেগুলো কিছুতেই গোপন করতে পারবে না। শত্রুপক্ষ কি মনে করছে, নিজেদের বর্বরোচিত কাজ-কর্মের মাধ্যমে তারা সফল হয়ে যাবে? নেতানিয়াহু নিজের ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যতের জন্য ফিলিস্তিনে এবং গোটা বিশ্বে ইহুদীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জুয়া খেলছে। তাইতো ইহুদীদের অভিশপ্ত ইতিহাস তাকে এভাবেই স্মরণ রাখবে যে, সে ছিল গাজার ঐতিহাসিক খুনি।
এটা এমন এক যুদ্ধ, যা শুধু তিক্ত ফল উৎপাদন করবে। গোটা বিশ্ববাসীকে তাদের লজ্জাজনক নীরবতার জন্য সমানভাবে সেই ফল ভোগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহল যদি এই যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বস্ত হয়, তাহলে কেন তারা ইহুদী গোষ্ঠী ও আমেরিকাকে অন্ততপক্ষে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করছে না? রাজনৈতিকভাবে কেন তাদেরকে কোণঠাসা করছে না? কি কারণে তাদের রাষ্ট্রদূতদেরকে বহিষ্কৃত করছে না, অথচ ব্যাপারটা তাদের জন্য খুবই সহজ?
তাই এখন জাতিসংঘের শরণাপন্ন হবার কোনোই অর্থ নেই। কারণ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্যতা দেখাতে পারেনি। ফলে আগেই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখন জাতিসংঘ থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সময় হয়েছে।
আগ্রাসন, নিপীড়ন ও গণহত্যা বন্ধ করতে এবং মুসলিমদের বিজয়ের পাল্লা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে যে কাজটা করতে হবে তা হচ্ছে, শত্রুপক্ষ এবং তার দালালরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের সামনে যে বিকল্পগুলি উপস্থাপন করে যাচ্ছে, সেগুলো দৃঢ়তার সাথে উপেক্ষা করা। (অর্থাৎ তাদের দেয়া কোনো অপশন গ্রহণ করা যাবে না। বরং আমরা নিজেরাই আমাদের লক্ষ্য ও পছন্দ-অপছন্দ নির্ধারণ করবো)
শত্রু আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনার যে মাপকাঠি দিয়েছে; যেই সীমানা তারা এঁকে দিয়েছে, তা থেকে আমাদের বের হতে হবে। আমাদের মন ও দৃষ্টি থেকে সমস্ত পর্দা সরিয়ে ফেলতে হবে। আমাদের এবং আগামী প্রজন্মের সুন্দর মনোরম ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য, অনেকগুলো কঠিন ও নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা একমত হই কিংবা না হই; বাস্তবতা এটাই যে, আমাদের সামনে শুধু দুটো অপশন রয়েছে: হয় আমরা ইসলাম ও স্বাধীনতা গ্রহণ করবো অথবা কুফরী ও দাসত্ব। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজের জন্য উপযুক্ত অপশন বেছে নেয়।
জায়নবাদী-ক্রুসেডার পশ্চিমাদের ভঙ্গুর বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে নির্মূল করতে এবং সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িতদের জুলুম দূর করার লক্ষ্যে; আমাদেরকে প্রথমে সেই শাসকগোষ্ঠীকে পরাস্ত করতে হবে, যারা তাদের দুর্বলতা ও লজ্জা দিয়ে আমাদের বেঁধে রেখেছে। সেই সাথে পশ্চিমা ইহুদীবাদী ক্রুসেডারদের দিকে অগ্রসর হতে হবে। সর্বত্রই তাদের লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিশ্চয়ই পশ্চিমা ও জায়নবাদী গোষ্ঠী মানবজাতির ইতিহাসের পাতায় এক অন্ধকার অধ্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরব ও ইসলামী অঞ্চলের সেনাবাহিনীর সর্বোত্তম অবশিষ্টাংশ অনন্তকালের লজ্জা থেকে যেন পরিত্রাণ পায়; সেজন্য তাদের শাসকবর্গ, রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাবাহিনীর নেতৃবৃন্দের কবল থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে। ফিলিস্তিন, জাযীরাতুল আরব, মিশর, শাম, ইরাক এবং তুরস্কের দখলকৃত ভূমি মুক্ত করার জন্য সংগ্রামের প্রথম পর্যায় হিসেবে উপর্যুক্ত কাজ তাদের করতেই হবে।
গাজা থেকে…
পশ্চিমা ও ইহুদীবাদীদের দাসত্ব থেকে মানবজাতির মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ এখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছে। অপরাধীর কাছে অপরাধ বন্ধের আর্জি জানাবার কোনো মানে নেই। জালিম শুধু বলপ্রয়োগের ভাষা বোঝে এবং কেবল শক্তিশালীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
বিক্ষোভ হল দুর্বলের ভাষা। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে কিছুই অর্জন করা যায় না। তাই প্রকৃত পরিবর্তন সাধনের জন্য আসল দায়িত্ব ও করণীয় পালনে মনোযোগী হতে হবে। শুধু বিক্ষোভ প্রদর্শনে মনোযোগ দেয়া যাবে না। নচেৎ কোনো পরিবর্তনই আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ …﴿١١﴾
অর্থঃ “আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।…” [সূরা রাদ ১৩: ১১]
পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না বিক্ষোভগুলো শ্লোগান দিয়ে গলা ফাটানো থেকে পরিবর্তিত হয়ে নিপীড়িতদের উপর চাপিয়ে দেওয়া শাসনব্যবস্থাকে উৎখাতের বাস্তব পদক্ষেপে পরিণত না হবে। এটা উম্মাহর জনসাধারণ এবং সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িতদের জন্য একটা কঠিন দাসত্বের জীবন। এই জীবন বিভিন্ন আকারে গর্বিত গাজায় সংঘটিত অন্যায়-অনাচারের প্রতিফলন।
আসলে মিশর, রিয়াদ, রাবাত, ইসলামাবাদ, ঢাকা এবং অন্যান্য দেশের জীবন এবং গাজার জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সকলেই দখলদারদের অধীনে; সবাই চাবুকের নিচে পিঠ পেতে আছে। অত্যাচারীরা জাতির সম্পদ লুট করছে, উম্মাহর সন্তানগণ অবরুদ্ধ, তাদের ভবিষ্যৎ শৃঙ্খলে আবদ্ধ, তাদের ভাগ্য অজানা— কয়েক প্রজন্ম ধরে এমনটাই চলে আসছে।
এটা কি ধরনের জীবন, যেখানে একজন মানুষ তার ভাগ্য এবং আগামী দিনের পথ নির্ধারণ করতে পারে না? এটা কেমন জীবন; যেখানে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয়? মানুষের কিছুই করার থাকে না? তাদের উপর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তাদেরকে ব্যবহার করা হয়? অবশেষে মানুষ নিজের নাম ও চেহারা ছাড়া আর কিছুই চেনে না। সে সময় দুর্দশার গভীরে বেঁচে থেকে ট্র্যাজেডি বহন করে বেড়ানো এবং পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
***
আজ চিত্রের সমস্ত অংশ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। উম্মাহর বিরুদ্ধে শত্রুর সারিবদ্ধতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অত্যাচারীরা তাদের সামরিক বাহিনীকে সারিবদ্ধ করছে। সমগ্র বিশ্বকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তারা গাজায় নির্যাতিতদের উপর সমস্ত নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা এবং নৃশংসতার সাথে হামলা করেছে। এদিকে আমাদের বাকি অপরাধী শাসকগোষ্ঠী তাদের সামরিক বাহিনীকে গাজায় তাদের ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে বাধা দিয়েছে। আমাদের শাসকরা শত্রুদের দাস।
আমাদের সেনাবাহিনী যুদ্ধের মন-মানসিকতা এবং স্বাধীন নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে; যে নেতৃত্ব তাদেরকে মুক্তির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের সৈন্যদের সামনে এমন কোনো রোল মডেল নেই, যে তাদেরকে শাসকবর্গ ও দরবারী আলেমদের গোলকধাঁধা থেকে বের করে আনবে। সমাধানের অন্যতম ও সর্বাধিক উপযুক্ত পথ আজ বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে। গণ বিক্ষোভগুলো অবশ্যই আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত হওয়া এখন সময়ের দাবি।
আমাদের আরব ও ইসলামিক দেশগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনগণের সকল স্তরের দায়িত্ব হল:
তাবেদার সরকারগুলোর পতন না ঘটা পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি নাগরিক ধর্মঘট আরম্ভ করা। ট্রেন, বাস, বিমান সহ দেশের সব ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থা আপনারা বন্ধ করে দিন। সরকারি কাজে যাবেন না। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদির বিল দেবেন না। আপনারা অর্থনীতির চাকা অচল করে দিন। কলকারখানা, দোকান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাবেন না, যেগুলো আপনাদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া মুনাফার অতি ছোট্ট অংশের বিনিময়ে আপনাদের মূল্যবান শ্রম কিনে নিয়ে আপনাদেরকে ক্লান্ত করে তোলে।
সেনাবাহিনীর সৈনিক, সক্রিয় অফিসার এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের বলবো: আপনারা আজকের পর থেকে জাতির প্রকৃত নেতাদের পক্ষ থেকে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আপনাদের ইউনিটগুলিতে ফিরে যাবেন না।
জনসাধারণের দায়িত্ব হল:
রাষ্ট্রপ্রধানের প্রাসাদ, মন্ত্রিসভা, সংসদ, শহর ও গ্রাম পরিষদ, দলীয় সংস্থা এবং পুলিশ সদর দপ্তর এ সকল সেক্টরকে যেকোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা। জনসাধারণকে আরো বলবো: আপনারা বন্দী, নিখোঁজ, গুমের শিকার এবং দেয়ালের আড়ালে নির্যাতিত-নিপীড়িতদের মুক্তির ব্যবস্থা করুন। শহরে গ্রামে এবং জেলায় জেলায় আপনারা এমন সমান্তরাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন, যেগুলো আপনাদের আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি তুলে ধরবে এবং আপনাদের স্বার্থ রক্ষা করবে।
‘নাগরিক অবাধ্যতা’ অথবা ‘অসহযোগ আন্দোলন’ শব্দের অর্থ হল- তাবেদার সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দেয়া। এমন সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, যা জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করবে এবং গণ-আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি হবে। নিঃসন্দেহে মুসলিম গণ-আকাঙ্ক্ষার শীর্ষে রয়েছে- ফিলিস্তিন ও ইসলামী পবিত্র স্থানগুলোর স্বাধীনতা।
আপনাদের নাগরিক ‘অসহযোগ আন্দোলন’ হল এমন এক স্ফুলিঙ্গ, যা আরো একটা মহৎ কাজ সম্পাদন করবে। আপনাদের সেনাবাহিনীতে যাদের মাঝে কল্যাণের অবশিষ্টাংশ রয়ে গেছে, আপনাদের আন্দোলনের ফলে তারাও আপনাদের সঙ্গে যোগদান করবে।
গুরুত্বপূর্ণ আরো একটা বিষয় নিয়ে আমাদের বিক্ষুব্ধ জনগণের কয়েকটা স্তরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই গোপন ও প্রকাশ্য নিরাপত্তা ইউনিট সংগঠিত করতে হবে। উভয়টাই হতে হবে সশস্ত্র। প্রকাশ্য ইউনিটগুলোর কাজ হবে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সরকারি গুণ্ডা দল সহ সরকার-সহযোগী বিভিন্ন সংস্থার যেকোনো প্রকার প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া থেকে আন্দোলনকে নিরাপত্তা দেয়া। এই সেক্টরের লোকদেরকে সে সমস্ত প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার এবং সর্বময় আন্দোলনরত প্রতিবাদী ভাইদের প্রতিরক্ষায় দৃঢ়তার অধিকারী হতে হবে।
মিশরীয় জনগণ সেখানকার বিশ্বাসঘাতকদের কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছে, তার স্ফুলিঙ্গ এখনো নিভে যায়নি। তাই আপনারা প্রস্তুত থাকুন। তারা আপনাদেরকে নির্মূল করার আগে কোনো করুণা না দেখিয়ে আপনারা তাদেরকে নির্মূল করুন। তারা আপনাদেরকে যেভাবে পুড়িয়েছে আপনারাও তাদেরকে সেভাবে পুড়িয়ে দিন। সিসি এবং তার বিশ্বাসঘাতক মিলিশিয়াদের প্রজ্বলিত আগুনে তাদেরকেই নিক্ষিপ্ত করুন। সেনাবাহিনী, পুলিশ, মিডিয়া এবং প্রচারকদের মধ্য থেকে যারা এই জালিমদের সহযোগী ছিল, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার সময় এসেছে। যাই হোক, গোপন নিরাপত্তা ইউনিটের কাজই হবে- এদেরকে হত্যা করা।
আপনারা কি আপনাদের সংকল্পকে দুর্বল মনে করছেন? ভূমি থেকে ভূমিতে বাস্তুচ্যুত শিশু ও নারীদের নিষ্প্রাণ চোখের দিকে তাকিয়ে আপনাদের সংকল্প ও ক্রোধকে জাগিয়ে তুলুন। তাদের সবচেয়ে বড় আশা হল- এমন একটি জায়গা, যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে এবং যেখানে কেউ তাদেরকে দেখবে না। তারা সুপেয় পানি এবং ঠাণ্ডা থেকে আত্মরক্ষার জন্য উষ্ণ কাপড়ের আশায় বুক বেঁধে রেখেছে। জায়নবাদী বোমা হামলার আগুন তাদেরকে আর কত পোড়াবে?
হে গাজাবাসী আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٢٤﴾
অর্থঃ “তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার।” [সূরা রাদ ১৩: ২৪]
হে বিক্ষুব্ধ উম্মাহর জনসাধারণ!
আপনারা জেনে রাখুন- আল্লাহ আপনাদের সহায়তা ও সাহায্যকারী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ ﴿١٧١﴾ إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنصُورُونَ ﴿١٧٢﴾ وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ ﴿١٧٣﴾
অর্থঃ “আমার রাসূল ও বান্দাগণের ব্যাপারে আমার এই বাক্য সত্য হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। আর আমার বাহিনীই হয় বিজয়ী।” [সূরা সাফফাত ৩৭: ১৭১-১৭৩]
আজ গর্বিত গাজায় আমাদের ভাইদেরকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে বিলম্ব করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। কোনো বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে সেখানে আমাদের ভাইদেরকে ক্রুসেডার ইহুদীবাদী জোটের হাতে এই মনে ছেড়ে দেয়া বোকামি যে, শত্রুরা শুধু তাদেরকে শেষ করেই সন্তুষ্ট থাকবে। বরং প্রচলিত লোককথার মতো ব্যাপারটা এমনই হবে, বনের সিংহ তিনটে ষাঁড়কে একসঙ্গে পরাস্ত করতে না পেরে প্রথমে দুটোর সঙ্গে প্রতারণা করে একটাকে শেষ করে। এরপর দুটোর মধ্যে একটার সঙ্গে প্রতারণা করে আরেকটাকে শেষ করে। সবশেষে সাদা ষাঁড়কে হামলা করতে এলে সে বলে: “আমি তো সেদিনই মারা গিয়েছি, যেদিন লাল ষাঁড় তোমার হাতে মারা গিয়েছিল।”
এই গল্পে আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। আমরা যদি এই শিক্ষা বুকে ধারণ করি, তাহলে গাজার ভাইদের বিপদ থেকে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য এই সংঘাতে আমাদের কি ভূমিকা পালন করা উচিত, তা বিবেকবান মানুষ মাত্রই অনুধাবন করতে পারছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থঃ “মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।” [সহীহ বুখারী: ২৪৪২ সহীহ মুসলিম: ২৫৮০]
এটা একটি সহীহ ও ‘মুক্তাফাক আলাইহ’ হাদীস; ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
আপনারা জেনে রাখুন হে বীরগণ!
এই যুদ্ধের পরে শত্রুদের আরও টার্গেট রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ রণাঙ্গনে এই যুদ্ধ ছেড়ে বসে থাকি, তাহলে শত্রুপক্ষ আলাদা আলাদাভাবে আমাদের উপর হামলা করবে। সে সময় শত্রুর প্রতারণা দেখে অনুশোচনায় ঠোঁট কামড়ে ধরারও সময় আমরা পাবো না।
গাজার সাহায্যের জন্য এবং নিজ দেশে বিপ্লব সাধনের জন্য বলিষ্ঠ কণ্ঠে স্লোগান তুলুন। প্রত্যেক মুসলমানের অধিকার আছে নিজ উদ্দেশ্যকে সমর্থনের জন্য যেকোনো স্লোগান দেবার। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, কথার সাথে যেন কাজের মিল থাকে। তাই সকলেই জেগে উঠুন!! আপনাদের স্লোগানের প্রতিটি শব্দ ও কাজ নিঃসন্দেহে আসন্ন বিজয়-প্রাসাদের এক একটি ইটের মতো ইনশাআল্লাহ!
নিঃসন্দেহে উম্মাহর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য করা কাজগুলোই হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান; সাফল্য নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে কার্যকর। এই কারণে নিজেদেরকে শুধু বিক্ষোভের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা আমাদের জন্য উচিত নয়। বরং আমাদের জন্য বিপ্লব সাধন করা আবশ্যক, যে বিপ্লব পশ্চিমাদের তাবেদার সরকারগুলোকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আর এই বিপ্লব সাধনের একমাত্র পথ হচ্ছে নাগরিক অবাধ্যতা, ধর্মঘট অথবা যাকে বলে ‘অসহযোগ আন্দোলন’।
***
আমেরিকা ও ইউরোপবাসীর জন্য ‘অসহযোগ আন্দোলন’ এর প্রয়োজনীয়তা:
যারা আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির (যে দেশের সরকারগুলো ইহুদীদেরকে আকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে) গণ-বিক্ষোভগুলোতে অংশ নিয়েছে, তাদের জন্যও এই অসহযোগ আন্দোলন প্রয়োজন। যদি আপনাদের বিক্ষোভগুলো দেশের ভেতরের ও বাহিরের জালিম সরকারের অন্যায় ব্যবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন সাধন করতে না পারে, গাজাবাসী সহ অন্যান্য মজলুমের বিরুদ্ধে ইহুদীদের পরিচালিত গণহত্যা অভিযান যদি বন্ধ না হয় এবং সহজ ও মসৃণ পন্থায় ঔপনিবেশিকতার যুগের অবসান যদি না ঘটে, তবে আপনাদের প্রচারাভিযান ও জনসমাগমের কোনো মানে নেই। আপনারা প্রতিটি সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আপনারা আপনাদের সন্তান ও অর্থ-সম্পদ হারাবেন ঠিক, আবার মানুষ হিসাবে নিজেদেরকেও হারিয়ে বসবেন।
আপনাদের শাসক এবং তার পিছনে দাঁড়ানো অর্থলোভী ও সুবিধাভোগী শ্রেণি সবকিছু লুণ্ঠন করবে। আপনারা বিভিন্ন রকম নৃশংসতা সহ্য করতে বাধ্য হবেন এবং সারা বিশ্বের নিপীড়িতদের প্রতিক্রিয়া দ্বারা পীড়িত হবেন। এখনো কি আপনাদের এই প্রশ্নের জবাব প্রয়োজন?—“কেন মানুষ আপনাদেরকে অপছন্দ করে?”
আপনারা আপনাদের দেশে এমন বাস্তবমুখী কিছু করুন, যেন আপনাদের প্রতি মানুষের এই অপছন্দ ভাব দূর হয়ে যায়।
(ম্যালকম এক্স নামে পরিচিত) মালিক আল-শাহবাজ এবং তাঁর সহযোগী মুহাম্মদ আলী ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়রের (Cassius Marcellus Clay Jr.) সিদ্ধান্তটা যেন আপনাদের সামনে থাকে। তা হল- আপনাদের বিক্ষোভ ইত্যাদি যেন জালিম সরকারের হাতের অস্ত্র না হয়ে দাঁড়ায়। এই উভয়জনের আদর্শ আপনাদের সামনের চলার পথকে আলোকিত করবে। মুহাম্মাদ আলী ক্লে সমগ্র বিশ্বের সম্মান অর্জন করেছিলেন। নিজেদের আদর্শের উপর অটল-অবিচল থেকে সকল অধিকার পুনরুদ্ধারে তারা সংগ্রাম করেছেন।
হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস এবং তাদের পিছনে থাকা ইহুদী অর্থদাতাদের নির্দেশ অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের সন্তানদেরকে আপনাদের শাসকবর্গের পক্ষে যুদ্ধে যেতে বাধা দিন। নইলে তারা যুদ্ধের জ্বালানি হবে। আপনারা কর দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যেগুলো ব্যয় করে গাজায় মজলুমদেরকে হত্যা করা হয়, সেগুলো কি আপনাদের দেয়া অর্থ-সম্পদ নয়? এই নৃশংস, অন্যায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগুলো কি এমন প্রতিশোধ স্পৃহা তৈরি করছে না, যা দিনের পর দিন চলে গেলেও মোচন করা যাবে না?
বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই প্রতিশোধ স্পৃহা বয়ে চলবে এবং অবশেষে প্রতিশ্রুত দিন এসে উপস্থিত হবে। আপনারা কি ঠিক ওই মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু নীরব দর্শকের মতো দেখেই যাবেন, যখন আপনাদের দুর্দশার পালা আসবে? সে সময় আপনারা তিক্ততা অনুভব করবেন, যেমন করে আজ গাজার মজলুম জনগণ তিক্ততা অনুভব করছে?
পশ্চিমের শক্তি শেষ হয়ে গেছে। তাদের অহংকারের সময়টা আর নেই। ঋণ পরিশোধের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাদের সামরিক সরঞ্জামাদি আফগানিস্তান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ইউরোপ সম্পর্কে কথা হলো, এটি কার্যত শক্তিহীন। আপনাদের আদরের সন্তান – জায়নবাদী সত্তা – কিছু বীর সিংহের আঘাতে ভেঙে পড়েছে। সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমেরিকান সামরিক নীতি নির্ধারকদের বিরুদ্ধে আপনাদের বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত এখন আপনাদের হাতে। আপনাদের নাগরিক অবাধ্যতা ও ‘অসহযোগ আন্দোলন’ এই শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটাবে।
আপনাদের বাহু দিয়ে এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যা আপনাদের দেশকে মানবিক ব্যবস্থার মাঝে স্থান দেবে। আপনাদের হৃদয় উন্মুক্ত করুন এবং শাশ্বত ঐশ্বরিক বার্তাটি গভীরভাবে শুনুন। নিজেদের জন্য এই দুনিয়া ও পরকালের সুখ বেছে নিন, কারণ দীন কবুলের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿٢٥٦﴾
অর্থঃ “দীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।” [সূরা বাকারা ০২: ২৫৬]
এখন আপনাদের ইচ্ছে আপনারা কি করবেন।
***
হে আমেরিকা ও ইউরোপের অধিবাসীগণ!
যদি পরিস্থিতি আগের মতোই থাকে; এমন দিন আসবে যখন আমেরিকা ও ইউরোপ গর্বিত গাজায় সংঘটিত আক্রমণের চেয়েও মারাত্মক আক্রমণের শিকার হবে। সেই সময় আপনারা আপনাদের পীড়া ও দুর্দশার জন্য দায়ী ইহুদীদেরকে অভিশাপ দেবেন। বাইডেনের সমাধিতে আপনারা পাথর নিক্ষেপ করবেন। সেই দিনটি কি খুব নিকটে নয়? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٤٢﴾
অর্থঃ “তাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা চক্রান্ত করেছে। আর সকল চক্রান্ত তো আল্লাহর হাতেই আছে। তিনি জানেন প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু করে। কাফেররা জেনে নেবে যে, পর জীবনের আবাসস্থল কাদের জন্য রয়েছে।” [সূরা রাদ ১৩: ৪২]
আপনাদের আজকের ‘অসহযোগ আন্দোলন’ আপনাদেরকে অন্ধকার ভবিষ্যৎ ও অতল গহ্বর থেকে রক্ষা করবে।
***
উপসংহার:
মুসলিম উম্মাহর করণীয়:
সকল মানুষের উচিত এই ঘটনার গুরুতর দিক সম্পর্কে সচেতন থাকা। কারণ ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের গণহত্যা, তাদের সম্পদ ধ্বংস সাধন এবং তাদেরকে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা এমন এক বিষয়, যা হৃদয়বানদের অন্তর ভেঙে দেয়। এ বিষয়গুলো কখনো কখনো তাদের হতাশ করে এবং তাদের অসহায়ত্বের অনুভূতিকে গভীর করে। কিন্তু আমরা মুসলিমরা কখনো হতাশ হই না; ভেঙে পড়ি না। যতক্ষণ আল্লাহর প্রতি আমাদের আস্থা আছে, আমরা কিছুতেই নিরাশায় ডুবে যাই না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ ۖ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَن يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِّنْ عِندِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا ۖ فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ ﴿٥٢﴾
অর্থঃ “আপনি বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্যে দুটি কল্যাণের একটি প্রত্যাশা কর; আর আমরা প্রত্যাশায় আছি তোমাদের জন্যে যে, আল্লাহ তোমাদের আযাব দান করুন নিজের পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হস্তে। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষমাণ।” [সূরা তাওবা ০৯: ৫২]
হতাশা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করবে না। বরং, অপ্রতিরোধ্য সত্য হল: আমরা এবং মুসলিম উম্মাহ এখন ক্ষুব্ধ। এই ঘটনাগুলো আপনাদের (ইউরোপ ও আমেরিকার জনগণদের) হৃদয়কেও নাড়া দিয়ে যাওয়া উচিত। ইহুদী ও ক্রুসেডার পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যতটা ক্রোধ আমাদের জাগ্রত হয়, তার চেয়ে বেশি আপনাদের মনে এ ঘটনাগুলো রেখাপাত করা উচিত। কারণ হক বাতিলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব চিরকাল চলবে যতদিন না আল্লাহ এই পৃথিবী এবং এতে থাকা সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
আমাদের অবশ্যই এই ক্রোধকে সঠিক দিকে পরিচালিত করতে হবে। এই ক্রোধ নিজেদেরকে প্রকাশ করার জন্য নয়। চলমান সমস্যায় আমাদের অধিকারের প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। এই বিশ্বাসের পর আমাদের পুরোটুকু ক্ষোভ ও ক্রোধ আমরা নিয়োজিত করতে চাই আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তি তৈরির পেছনে। সর্বত্র সমস্ত ক্ষুব্ধ মানুষকে অবশ্যই নিজেদের ক্রোধকে উপযুক্ত ক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এটি ইহুদীবাদী ও ক্রুসেডারদের প্রজ্বলিত আগুন। আপনারা এ থেকে রেহাই পাবেন না। যারা এ আগুন জ্বালিয়েছে তারা নিজেরা অচিরেই সেই আগুনে পুড়বে।
এবার আসি উম্মাহর সন্তান মুজাহিদীন — বিশেষ করে কেনান, জর্ডান, সিরিয়া, জাযীরাতুল আরব এবং সারা বিশ্বের আল-কায়েদার মুজাহিদীনের করণীয় কি হবে?
সারা বিশ্বের মুজাহিদীনের করণীয়:
আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনারা যে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা আপনাদেরকে অবশ্যই পালন করতে হবে। আপনাদেরকেও গাজার মুজাহিদীনের সঙ্গে মিলে বিপ্লবমুখী উম্মাহর অগ্রদলে শামিল হতে হবে। প্রত্যেককেই নিজের রণাঙ্গনে নিজ নিজ ফ্রন্টে কাজ করতে হবে।
একইভাবে আপনাদেরকে এমন বিস্তৃত ছাতা হতে হবে, যার ছায়ায় সকলের স্থান হয়ে যায়। জনগণের ভেতর থেকে উঠে আসা সকল আন্দোলন সেই ছায়াতলে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবে। উম্মাহকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করতে পারবে এবং উম্মাহর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
লেখক, কবি এবং কলম সৈনিকদের করণীয়:
এরকম আন্তরিক যারা রয়েছেন, তাদের জন্য কলম যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত নয়। আপনারা যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি করার জন্য, আবেগ জাগিয়ে দেবার জন্য, চেতনার বিচ্ছুরণ ঘটানোর জন্য, বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য, জনগণের ভেতর থেকে উঠে আসা সকল আন্দোলনকে সমর্থনের জন্য কলম যুদ্ধে আত্মনিয়োগ করবেন। আপনাদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও প্রকাশনাগুলো যেন এমন গর্জনকারী জলধারা ও অপ্রতিরোধ্য প্রবাহের মত হয়, যা কোন ঘটনা বা ইস্যু থেকে পিছিয়ে পড়বে না। আপনাদের রচনা ও প্রকাশনা যেন ইতিবাচক কার্যক্রমের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে।
মসজিদগুলোর ইমাম সাহেবগণ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও জামিয়াগুলোর শিক্ষকদের করণীয়:
বৈপ্লবিক কার্যক্রমে আপনাদের ভূমিকা কি হবে?
আপনাদের ভূমিকা হল দিক-নির্দেশনা দেয়া, পথ দেখিয়ে দেয়া। অস্ত্র হাতে মুজাহিদীনের ভূমিকা থেকে আপনাদের কাজের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। আপনারা আপনাদের শ্রোতা, শিক্ষার্থী, কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আপনাদের অর্থ-সম্পদ কোনো কিছুই বৈপ্লবিক কার্যক্রমে নিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবেন না। বৈপ্লবিক কার্যক্রম এ পক্ষের কাজ, সে পক্ষের নয় – এমনটা ভাবলে ভুল হবে। বিপ্লবের জন্য সামগ্রিকতা প্রয়োজন। এটা গোটা উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن تَكُونُ لَهُ عَاقِبَةُ الدَّارِ ۗ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ ﴿١٣٥﴾
অর্থঃ “হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদের জায়গায় থেকে কাজ করে যাও আমিও কাজ করে যাচ্ছি। কারণ অচিরেই তোমরা জানতে পারবে পরকালীন শুভ পরিণাম কার জন্য। নিশ্চয়ই জালিমরা সফল হবে না।” [সূরা আনআম ০৬: ১৩৫]
কারখানা ও কোম্পানির পরিচালক, শ্রমিক, কর্মকর্তা, ক্ষেত-খামারের কৃষক, অর্থশালী বিত্তবান শ্রেণি এবং উম্মাহর অন্যান্য সেক্টরের ব্যক্তিদের করণীয়:
বিপ্লবের ময়দান খুবই বিস্তৃত। সকলেই সেই ময়দানে উপস্থিত হতে পারবে। তাই আসুন! আমরা গাজায় আমাদের ভাই-বোনের ডাকে সাড়া দিয়ে অগ্রসর হই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٢٢﴾
অর্থঃ “এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ।” [সূরা রাদ ১৩: ২২]
****************
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
هذه غزة …
طليعة الأمة اليوم للتغيير-٤
بقلم: سالم الشريف
এই তো গাজা…
উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
[যুদ্ধের পঞ্চম সপ্তাহ]
মূল: সালেম আল শরীফ
This is Gaza…
The vanguard of the Ummah is ready for revolution
[Fifth Week of War]
Author: Salem Al Sharif
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
লিংক-১ : https://justpaste.it/This_is_Gaza-4
লিংক-২ : https://mediagram.me/825371fda8af4784
লিংক-৩ : https://noteshare.id/J6dZFyq
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20240604...This_is_Gaza-4
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20240604...5371fda8af4784
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20240604...are.id/J6dZFyq
روابط بي دي اب
PDF (450 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৫০ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/6s8PLjNCBwPMk2f
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/RntxkiF9NWFRwFA
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...20gaza%204.pdf
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...b90ada2cac135f
লিংক-৫ : https://share.eu.internxt.com/sh/file/524caa5f-e197-4e56-be73-b182e9390ade/4c8c45f7449a07fdc1ba55cb8193ea53aaf4afc5d74464c9b8 ea4815c6cc3a93
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...-to-gaza-4.pdf
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/ko45b...aza+4.pdf/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/E3lCmYAA#SDroTGR2p0qfxMbTM4WeJP0oOnjmRKsmzvyKg8gEm TE
روابط ورد
WORD (493 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৪৯৩ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/b5HsDbg3eRxCzMy
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/5nn7x8tpgGd9qSz
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...0gaza%204.docx
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...42db9f0a9386b1
লিংক-৫ : https://secure.ue.internxt.com/sh/file/712aaf59-05f6-4c9c-829f-b930ef91da4f/b2392111e57054a2bdf5e65646ddcaf215cbeaeabf10cecfb3 4cce288f15c897
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...to-gaza-4.docx
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/1mvna...za+4.docx/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/R7snlCQQ#WEjAyWpipG9A2kZeTKeGk7VxN1FCRAYqZ5eF13QXm 5s
روابط الغلاف- ١
book cover [967 KB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [৯৬৭ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/RqyBmZJppSNQdrB
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/RJnQ8GKkkHG6wK8
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...04%20Cover.jpg
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...41a67b0d63d7bb
লিংক-৫ : https://share.eu.internxt.com/sh/file/9553aa8e-5c28-40e5-9e93-c7bf3a4ed609/cc7bf255bdb697250552a3995ae5514b14e6a4b74313e1372c 5271e627db6078
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...za-4-cover.jpg
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/lvt4y...Cover.jpg/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/9201QAAZ#xvDQgX...MzVVrImjTeBpnQ
روابط الغلاف-٢
banner [2.1 MB]
ব্যানার [২.১ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/QQcg7Ed3AZMHFY7
লিংক-২ : https://banglafiles.net/index.php/s/wcJ5rBqYJdk2rGR
লিংক-৩ : https://archive.org/download/ei-to-g...4%20Banner.jpg
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file...43f79b89e5df91
লিংক-৫ : https://secure.ue.internxt.com/sh/file/ad9a47f5-a3ea-41b2-a96f-1e352f83cc70/208d63f570078d3c755e622797b2b40b12a47228bf048caf00 53276bd0bb6cb5
লিংক-৬ : https://upload44.wordpress.com/wp-co...a-4-banner.jpg
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/coqsz...anner.jpg/file
লিংক-৮ : https://mega.nz/file/E3tiFCCQ#jYWBxVqqp__27XMabx4DU_myT_tPTesppNxzEIGa9 ms
****************
بسم الله الرحمن الرحيم
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
এই তো গাজা… উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
ইহুদী গোষ্ঠী, আমেরিকা এবং ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্ব ০৭ই অক্টোবরের হামলা নিয়ে অনেক মায়া কান্না দেখিয়েছে। তারা এই হামলা সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলেছে। অনেক গালমন্দ করেছে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ০৭ তারিখেই যেন ইহুদীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই শুরু হল (!); সবেমাত্র এই তারিখেই যেন মানব সভ্যতার ইতিহাস এক অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করলো।
না.. কখনোই নয়..
আমরা অতীত কিছুতেই ভুলতে পারি না। যদি তোমরা নির্লজ্জের মতো অতীত ভুলে থাকার ভান করো, ১৯৪৮ সালে যে অন্যায় তোমরা করেছো, সেই ইতিহাস থেকে যদি তোমরা চোখ ফিরিয়ে রাখো, তবে সেটা তোমাদের বিষয়। কিন্তু তোমাদের ওই অপরাধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু তোমরা করে এসেছো, কোনো কিছুই আমরা ভুলতে পারি না। এমনকি প্রথম যখন মুসলিম দেশের উপর ক্রুসেডারদের হামলা আরম্ভ হয়, সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অভিশপ্ত পশ্চিমা আগ্রাসনের কোনো কিছুই আমরা ভুলিনি।
এই পুরো সময়ে বহুবার তোমরা বিতাড়িত হয়েছ। অচিরেই আবারো তোমরা এমনভাবে বিতাড়িত হবে যে, আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না, ইনশাআল্লাহ। কারণ আমাদের এই বিষয়টা রক্তমাখা। উম্মাহর সন্তানেরা বিপ্লবের উত্তরাধিকার বহন করছে। উম্মাহর লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবার আগ পর্যন্ত বিপ্লবের এই নেশা কাটবে না। তোমরা তা কামনা করো, কিংবা প্রত্যাখ্যান করো, তাতে কিছু যায় আসে না।
প্রত্যক্ষকারীদের জন্য আগামী দিন খুবই নিকটে। কলমের ভেতর দোয়াত ভর্তি, কলম লিখতে প্রস্তুত। লেখকেরা লিখে যাচ্ছেন, ইতিহাসের পাতাগুলো প্রতিনিয়ত কালো অক্ষরে ভরে যাচ্ছে। ঐতিহাসিকদের সততা যেন আমরা না হারাই— এটাই কামনা।
১০৯৬ খ্রিস্টাব্দ। অর্থাৎ ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রায় ১০০০ বছর আগের কথা। সেই সময় ক্রুসেডারদের শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল; আর তা হচ্ছে- ফিলিস্তিনে আগ্রাসন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ক্রুসেডারদের যুদ্ধের ফলাফল ছিল জেগে ওঠা এক ইহুদী বিষফোঁড়া। ক্রুসেডাররা চেয়েছে ইসলাম ও মুসলিম মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে এই ইহুদী সত্তা যেন প্রধান সেতু হিসেবে খ্রিস্টানদের পক্ষে কাজ করে। আর বাইডেন (বর্তমান সময়ে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান) তার যুবক বয়সে ১৯৮৬ সালে নির্লজ্জের মতো স্পষ্ট ভাষায় বলেছে,
“ইসরাইল তথা ফিলিস্তিনে ইহুদীবাদী রাষ্ট্র আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সর্বোত্তম বিনিয়োগ। যদি ইসরাঈল না থাকতো তাহলে আমেরিকার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একটা ইসরাইল তৈরি করা জরুরি ছিল।”
সেই ক্রুসেড এখনো শেষ হয়নি। বরং আগের চেয়ে ক্রুসেডের তীব্রতা বেড়েছে। হ্যাঁ, বরাবরের মতোই এই ক্রুসেড একটা অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় যুদ্ধ; ইতিহাস জুড়ে ক্রুসেডের পরিচয় এমনই ছিল।
বাইডেন-নেতানিয়াহুর স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে- ভীতি তৈরি করা। তাদের এই কৌশল তাদের বিরুদ্ধেই চলে যাবে। কারণ এই ভীতি আমাদের ভিতরে থাকা নিষ্পৃহ ভাবকে হত্যা করবে। আমাদের এই নিষ্পৃহভাব এক দফাতেই দূর হবে না। এটা দূর করার জন্য বেশ কয়েকবারের প্রয়োজন হবে। প্রতিদিন প্রতিবার আঘাত করে তাগুত গোষ্ঠী মনে করবে, তারা সফল হয়েছে। কিন্তু এদিকে আমাদের ভেতর তাদের প্রতি সুপ্ত ঘৃণা এবং প্রতিশোধ স্পৃহা ক্রমশ বাড়তে থাকবে। দিন গড়াতে থাকবে, এরপর হঠাৎ একদিন নিষ্পৃহভাব কেটে গিয়ে আমরা বিপ্লবে ফেটে পড়বো। ওই দিনের পর আর কখনো আমাদেরকে নিষ্পৃহ থাকতে দেখা যাবে না।
তাই আমাদের এই অবস্থায় তোমাদের আঘাতগুলো আমাদের জন্য বিপ্লবের বীজ। তোমরাই সযত্নে এগুলোকে পানি সিঞ্চন করে বড় করে তুলছো। তোমাদের অনাচার আমাদের মধ্যে এই বীজকে বৃক্ষে পরিণত করছে। প্রতিশ্রুত দিন অত্যাসন্ন। তাই নিজ হাতে তোমরা যা রোপন করেছ, তার ফসল গ্রহণের জন্য তোমরা প্রস্তুত থেকো।
*গাজা উপত্যকায় মুসলিম গণহত্যার ব্যাপারে কিছু বাস্তবতা:
– অধিকৃত ফিলিস্তিন এবং ইউক্রেনে যেই দেশটা লড়াই ও সংঘাত উস্কে দিয়েছে সে হচ্ছে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’। এখন ইউক্রেনে আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে আমেরিকা থেমে গিয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনে আমেরিকা আগ্রাসীদেরকে খুব আপন করে নিয়েছে।
– যে দেশটা সর্বপ্রকার অর্থ-সম্পদ, অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা দিয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে, সে দেশটা হচ্ছে আমেরিকা। তারাই বিমানবাহী রণতরি পাঠাচ্ছে ইহুদীদের সাহায্যের জন্য। তারাই যুদ্ধের নেতৃত্ব দানের জন্য নিজের সামরিক কর্মকর্তা ও জেনারেলদেরকে প্রেরণ করছে।
– যারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের শাসক হিসেবে ইহুদীদেরকে বৈধতা দিয়েছে এবং তাদের আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকার করেছে, সে দেশটি হচ্ছে আমেরিকা। তারাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ভেটো দিয়েছে। তারাই একথা প্রচার করে বেরিয়েছে যে, ইহুদীরাই নির্যাতিত, নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত। তারা নির্যাতক তথা নিপীড়ক নয়। এ কাজগুলো সবই আমেরিকা ও ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্বের অবদান।
– আঞ্চলিক শাসকবর্গের (ফিলিস্তিনের আশপাশের দেশগুলোর শাসক) পৃষ্ঠপোষকতা, তাদেরকে বৈধতা দান এবং জনসাধারণের বিরুদ্ধে যেয়ে তাদেরকে সমর্থনে যে দেশটা অটল-অবিচল সে হচ্ছে আমেরিকা। আমেরিকাই আঞ্চলিক শাসকদের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়, সর্বপ্রকার অস্ত্রশস্ত্র ও গোয়েন্দা সুবিধা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করে। আমেরিকাই নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রাজনৈতিক ও সামরিক উপদেষ্টাদেরকে দিয়ে তাদেরকে দিক-নির্দেশনা দেয়। আমেরিকাই জনসাধারণের বিপ্লব ও উত্থান প্রতিরোধের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালনকারী।
– আমেরিকাই গাজা উপত্যকায় প্রতিরোধ মুজাহিদীনের সাহায্যের জন্য আঞ্চলিক বাহিনীগুলোর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দিচ্ছে। আঞ্চলিক তাবেদার সরকারগুলোকে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। সেই সাথে জর্ডানের বাদশা’র প্যারাসুট ল্যান্ডিং-এর (ভিডিও ভাইরাল করার) মাধ্যমে সকলের সামনে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছে।
– অক্টোবরের ০৭ তারিখে মুজাহিদীন দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক বিভাগকে টার্গেট করেছেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। এরপর ইহুদীরা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে টার্গেট করে হত্যা করতে আরম্ভ করে। আজকের দিন পর্যন্ত ১৫ হাজার (বর্তমানে ১৮ হাজার) এর অধিক প্রাণ তারা ঝরিয়েছে। তারা গাজার জনগণের আড়াই লাখেরও বেশি বাড়িঘর ও সম্পত্তি ধ্বংস করেছে।
– মুজাহিদ যুবকেরা দখলদার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ট্যাংক ও সামরিক যান টার্গেট করে হামলা করছে। জায়নবাদী আগ্রাসী সামরিক লোকদেরকেও আক্রমণ করছে। এদিকে শত্রু বাহিনী ক্রোধে অন্ধ হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতাল ও বেসামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলা জারি রেখেছে। কারণ গোয়েন্দা সূত্রে সামরিক টার্গেট খুঁজে পেতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। চোখের আড়ালে থাকা ইসলামের বীর বাহাদুরদের মুখোমুখি লড়াই করতে তারা অক্ষম। ইসলামের এই বীর বাহাদুরেরা তাদের কাছে ভূতের মতো, যারা তাদের সেনাবাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করার জন্য হঠাৎ উদিত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
– দখলদার শত্রুবাহিনীর প্রচারিত তথ্য ও বিবৃতিগুলো ভিত্তিহীন। এগুলোর পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। আসলে সামরিক কার্যক্রমের নামে তারা যেভাবে শহরের পর শহর ধ্বংস করছে, বেসামরিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে বর্বরোচিত বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করছে, সেগুলোই তাদের তথাকথিত সামরিক কার্যক্রমের মূল পরিচয় ও বিভৎস চেহারা।
অপরদিকে ইসলামের সিংহ পুরুষ বীর মুজাহিদ বাহিনী; তারা তাদের প্রচারিত প্রমাণ-নির্ভর বিবৃতিগুলোর মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সামরিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তারা কেবল শত্রুপক্ষের সামরিক লোক ও স্থাপনাই টার্গেট করছেন।
এমনই আরো অনেক বাস্তবতা আছে। ক্রুসেডার জায়নবাদী যৌথ শক্তি সেগুলো কিছুতেই গোপন করতে পারবে না। শত্রুপক্ষ কি মনে করছে, নিজেদের বর্বরোচিত কাজ-কর্মের মাধ্যমে তারা সফল হয়ে যাবে? নেতানিয়াহু নিজের ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যতের জন্য ফিলিস্তিনে এবং গোটা বিশ্বে ইহুদীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জুয়া খেলছে। তাইতো ইহুদীদের অভিশপ্ত ইতিহাস তাকে এভাবেই স্মরণ রাখবে যে, সে ছিল গাজার ঐতিহাসিক খুনি।
এটা এমন এক যুদ্ধ, যা শুধু তিক্ত ফল উৎপাদন করবে। গোটা বিশ্ববাসীকে তাদের লজ্জাজনক নীরবতার জন্য সমানভাবে সেই ফল ভোগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহল যদি এই যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বস্ত হয়, তাহলে কেন তারা ইহুদী গোষ্ঠী ও আমেরিকাকে অন্ততপক্ষে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করছে না? রাজনৈতিকভাবে কেন তাদেরকে কোণঠাসা করছে না? কি কারণে তাদের রাষ্ট্রদূতদেরকে বহিষ্কৃত করছে না, অথচ ব্যাপারটা তাদের জন্য খুবই সহজ?
তাই এখন জাতিসংঘের শরণাপন্ন হবার কোনোই অর্থ নেই। কারণ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্যতা দেখাতে পারেনি। ফলে আগেই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখন জাতিসংঘ থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সময় হয়েছে।
আগ্রাসন, নিপীড়ন ও গণহত্যা বন্ধ করতে এবং মুসলিমদের বিজয়ের পাল্লা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে যে কাজটা করতে হবে তা হচ্ছে, শত্রুপক্ষ এবং তার দালালরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের সামনে যে বিকল্পগুলি উপস্থাপন করে যাচ্ছে, সেগুলো দৃঢ়তার সাথে উপেক্ষা করা। (অর্থাৎ তাদের দেয়া কোনো অপশন গ্রহণ করা যাবে না। বরং আমরা নিজেরাই আমাদের লক্ষ্য ও পছন্দ-অপছন্দ নির্ধারণ করবো)
শত্রু আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনার যে মাপকাঠি দিয়েছে; যেই সীমানা তারা এঁকে দিয়েছে, তা থেকে আমাদের বের হতে হবে। আমাদের মন ও দৃষ্টি থেকে সমস্ত পর্দা সরিয়ে ফেলতে হবে। আমাদের এবং আগামী প্রজন্মের সুন্দর মনোরম ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য, অনেকগুলো কঠিন ও নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা একমত হই কিংবা না হই; বাস্তবতা এটাই যে, আমাদের সামনে শুধু দুটো অপশন রয়েছে: হয় আমরা ইসলাম ও স্বাধীনতা গ্রহণ করবো অথবা কুফরী ও দাসত্ব। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজের জন্য উপযুক্ত অপশন বেছে নেয়।
জায়নবাদী-ক্রুসেডার পশ্চিমাদের ভঙ্গুর বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে নির্মূল করতে এবং সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িতদের জুলুম দূর করার লক্ষ্যে; আমাদেরকে প্রথমে সেই শাসকগোষ্ঠীকে পরাস্ত করতে হবে, যারা তাদের দুর্বলতা ও লজ্জা দিয়ে আমাদের বেঁধে রেখেছে। সেই সাথে পশ্চিমা ইহুদীবাদী ক্রুসেডারদের দিকে অগ্রসর হতে হবে। সর্বত্রই তাদের লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিশ্চয়ই পশ্চিমা ও জায়নবাদী গোষ্ঠী মানবজাতির ইতিহাসের পাতায় এক অন্ধকার অধ্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরব ও ইসলামী অঞ্চলের সেনাবাহিনীর সর্বোত্তম অবশিষ্টাংশ অনন্তকালের লজ্জা থেকে যেন পরিত্রাণ পায়; সেজন্য তাদের শাসকবর্গ, রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাবাহিনীর নেতৃবৃন্দের কবল থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে। ফিলিস্তিন, জাযীরাতুল আরব, মিশর, শাম, ইরাক এবং তুরস্কের দখলকৃত ভূমি মুক্ত করার জন্য সংগ্রামের প্রথম পর্যায় হিসেবে উপর্যুক্ত কাজ তাদের করতেই হবে।
গাজা থেকে…
পশ্চিমা ও ইহুদীবাদীদের দাসত্ব থেকে মানবজাতির মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ এখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছে। অপরাধীর কাছে অপরাধ বন্ধের আর্জি জানাবার কোনো মানে নেই। জালিম শুধু বলপ্রয়োগের ভাষা বোঝে এবং কেবল শক্তিশালীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
বিক্ষোভ হল দুর্বলের ভাষা। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে কিছুই অর্জন করা যায় না। তাই প্রকৃত পরিবর্তন সাধনের জন্য আসল দায়িত্ব ও করণীয় পালনে মনোযোগী হতে হবে। শুধু বিক্ষোভ প্রদর্শনে মনোযোগ দেয়া যাবে না। নচেৎ কোনো পরিবর্তনই আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ …﴿١١﴾
অর্থঃ “আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।…” [সূরা রাদ ১৩: ১১]
পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না বিক্ষোভগুলো শ্লোগান দিয়ে গলা ফাটানো থেকে পরিবর্তিত হয়ে নিপীড়িতদের উপর চাপিয়ে দেওয়া শাসনব্যবস্থাকে উৎখাতের বাস্তব পদক্ষেপে পরিণত না হবে। এটা উম্মাহর জনসাধারণ এবং সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িতদের জন্য একটা কঠিন দাসত্বের জীবন। এই জীবন বিভিন্ন আকারে গর্বিত গাজায় সংঘটিত অন্যায়-অনাচারের প্রতিফলন।
আসলে মিশর, রিয়াদ, রাবাত, ইসলামাবাদ, ঢাকা এবং অন্যান্য দেশের জীবন এবং গাজার জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সকলেই দখলদারদের অধীনে; সবাই চাবুকের নিচে পিঠ পেতে আছে। অত্যাচারীরা জাতির সম্পদ লুট করছে, উম্মাহর সন্তানগণ অবরুদ্ধ, তাদের ভবিষ্যৎ শৃঙ্খলে আবদ্ধ, তাদের ভাগ্য অজানা— কয়েক প্রজন্ম ধরে এমনটাই চলে আসছে।
এটা কি ধরনের জীবন, যেখানে একজন মানুষ তার ভাগ্য এবং আগামী দিনের পথ নির্ধারণ করতে পারে না? এটা কেমন জীবন; যেখানে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয়? মানুষের কিছুই করার থাকে না? তাদের উপর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তাদেরকে ব্যবহার করা হয়? অবশেষে মানুষ নিজের নাম ও চেহারা ছাড়া আর কিছুই চেনে না। সে সময় দুর্দশার গভীরে বেঁচে থেকে ট্র্যাজেডি বহন করে বেড়ানো এবং পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
***
আজ চিত্রের সমস্ত অংশ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। উম্মাহর বিরুদ্ধে শত্রুর সারিবদ্ধতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অত্যাচারীরা তাদের সামরিক বাহিনীকে সারিবদ্ধ করছে। সমগ্র বিশ্বকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তারা গাজায় নির্যাতিতদের উপর সমস্ত নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা এবং নৃশংসতার সাথে হামলা করেছে। এদিকে আমাদের বাকি অপরাধী শাসকগোষ্ঠী তাদের সামরিক বাহিনীকে গাজায় তাদের ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে বাধা দিয়েছে। আমাদের শাসকরা শত্রুদের দাস।
আমাদের সেনাবাহিনী যুদ্ধের মন-মানসিকতা এবং স্বাধীন নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে; যে নেতৃত্ব তাদেরকে মুক্তির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের সৈন্যদের সামনে এমন কোনো রোল মডেল নেই, যে তাদেরকে শাসকবর্গ ও দরবারী আলেমদের গোলকধাঁধা থেকে বের করে আনবে। সমাধানের অন্যতম ও সর্বাধিক উপযুক্ত পথ আজ বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে। গণ বিক্ষোভগুলো অবশ্যই আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত হওয়া এখন সময়ের দাবি।
আমাদের আরব ও ইসলামিক দেশগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনগণের সকল স্তরের দায়িত্ব হল:
তাবেদার সরকারগুলোর পতন না ঘটা পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি নাগরিক ধর্মঘট আরম্ভ করা। ট্রেন, বাস, বিমান সহ দেশের সব ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থা আপনারা বন্ধ করে দিন। সরকারি কাজে যাবেন না। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদির বিল দেবেন না। আপনারা অর্থনীতির চাকা অচল করে দিন। কলকারখানা, দোকান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাবেন না, যেগুলো আপনাদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া মুনাফার অতি ছোট্ট অংশের বিনিময়ে আপনাদের মূল্যবান শ্রম কিনে নিয়ে আপনাদেরকে ক্লান্ত করে তোলে।
সেনাবাহিনীর সৈনিক, সক্রিয় অফিসার এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের বলবো: আপনারা আজকের পর থেকে জাতির প্রকৃত নেতাদের পক্ষ থেকে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আপনাদের ইউনিটগুলিতে ফিরে যাবেন না।
জনসাধারণের দায়িত্ব হল:
রাষ্ট্রপ্রধানের প্রাসাদ, মন্ত্রিসভা, সংসদ, শহর ও গ্রাম পরিষদ, দলীয় সংস্থা এবং পুলিশ সদর দপ্তর এ সকল সেক্টরকে যেকোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা। জনসাধারণকে আরো বলবো: আপনারা বন্দী, নিখোঁজ, গুমের শিকার এবং দেয়ালের আড়ালে নির্যাতিত-নিপীড়িতদের মুক্তির ব্যবস্থা করুন। শহরে গ্রামে এবং জেলায় জেলায় আপনারা এমন সমান্তরাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন, যেগুলো আপনাদের আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি তুলে ধরবে এবং আপনাদের স্বার্থ রক্ষা করবে।
‘নাগরিক অবাধ্যতা’ অথবা ‘অসহযোগ আন্দোলন’ শব্দের অর্থ হল- তাবেদার সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দেয়া। এমন সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, যা জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করবে এবং গণ-আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি হবে। নিঃসন্দেহে মুসলিম গণ-আকাঙ্ক্ষার শীর্ষে রয়েছে- ফিলিস্তিন ও ইসলামী পবিত্র স্থানগুলোর স্বাধীনতা।
আপনাদের নাগরিক ‘অসহযোগ আন্দোলন’ হল এমন এক স্ফুলিঙ্গ, যা আরো একটা মহৎ কাজ সম্পাদন করবে। আপনাদের সেনাবাহিনীতে যাদের মাঝে কল্যাণের অবশিষ্টাংশ রয়ে গেছে, আপনাদের আন্দোলনের ফলে তারাও আপনাদের সঙ্গে যোগদান করবে।
গুরুত্বপূর্ণ আরো একটা বিষয় নিয়ে আমাদের বিক্ষুব্ধ জনগণের কয়েকটা স্তরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই গোপন ও প্রকাশ্য নিরাপত্তা ইউনিট সংগঠিত করতে হবে। উভয়টাই হতে হবে সশস্ত্র। প্রকাশ্য ইউনিটগুলোর কাজ হবে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সরকারি গুণ্ডা দল সহ সরকার-সহযোগী বিভিন্ন সংস্থার যেকোনো প্রকার প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া থেকে আন্দোলনকে নিরাপত্তা দেয়া। এই সেক্টরের লোকদেরকে সে সমস্ত প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার এবং সর্বময় আন্দোলনরত প্রতিবাদী ভাইদের প্রতিরক্ষায় দৃঢ়তার অধিকারী হতে হবে।
মিশরীয় জনগণ সেখানকার বিশ্বাসঘাতকদের কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছে, তার স্ফুলিঙ্গ এখনো নিভে যায়নি। তাই আপনারা প্রস্তুত থাকুন। তারা আপনাদেরকে নির্মূল করার আগে কোনো করুণা না দেখিয়ে আপনারা তাদেরকে নির্মূল করুন। তারা আপনাদেরকে যেভাবে পুড়িয়েছে আপনারাও তাদেরকে সেভাবে পুড়িয়ে দিন। সিসি এবং তার বিশ্বাসঘাতক মিলিশিয়াদের প্রজ্বলিত আগুনে তাদেরকেই নিক্ষিপ্ত করুন। সেনাবাহিনী, পুলিশ, মিডিয়া এবং প্রচারকদের মধ্য থেকে যারা এই জালিমদের সহযোগী ছিল, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার সময় এসেছে। যাই হোক, গোপন নিরাপত্তা ইউনিটের কাজই হবে- এদেরকে হত্যা করা।
আপনারা কি আপনাদের সংকল্পকে দুর্বল মনে করছেন? ভূমি থেকে ভূমিতে বাস্তুচ্যুত শিশু ও নারীদের নিষ্প্রাণ চোখের দিকে তাকিয়ে আপনাদের সংকল্প ও ক্রোধকে জাগিয়ে তুলুন। তাদের সবচেয়ে বড় আশা হল- এমন একটি জায়গা, যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে এবং যেখানে কেউ তাদেরকে দেখবে না। তারা সুপেয় পানি এবং ঠাণ্ডা থেকে আত্মরক্ষার জন্য উষ্ণ কাপড়ের আশায় বুক বেঁধে রেখেছে। জায়নবাদী বোমা হামলার আগুন তাদেরকে আর কত পোড়াবে?
হে গাজাবাসী আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٢٤﴾
অর্থঃ “তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার।” [সূরা রাদ ১৩: ২৪]
হে বিক্ষুব্ধ উম্মাহর জনসাধারণ!
আপনারা জেনে রাখুন- আল্লাহ আপনাদের সহায়তা ও সাহায্যকারী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ ﴿١٧١﴾ إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنصُورُونَ ﴿١٧٢﴾ وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ ﴿١٧٣﴾
অর্থঃ “আমার রাসূল ও বান্দাগণের ব্যাপারে আমার এই বাক্য সত্য হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। আর আমার বাহিনীই হয় বিজয়ী।” [সূরা সাফফাত ৩৭: ১৭১-১৭৩]
আজ গর্বিত গাজায় আমাদের ভাইদেরকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে বিলম্ব করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। কোনো বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে সেখানে আমাদের ভাইদেরকে ক্রুসেডার ইহুদীবাদী জোটের হাতে এই মনে ছেড়ে দেয়া বোকামি যে, শত্রুরা শুধু তাদেরকে শেষ করেই সন্তুষ্ট থাকবে। বরং প্রচলিত লোককথার মতো ব্যাপারটা এমনই হবে, বনের সিংহ তিনটে ষাঁড়কে একসঙ্গে পরাস্ত করতে না পেরে প্রথমে দুটোর সঙ্গে প্রতারণা করে একটাকে শেষ করে। এরপর দুটোর মধ্যে একটার সঙ্গে প্রতারণা করে আরেকটাকে শেষ করে। সবশেষে সাদা ষাঁড়কে হামলা করতে এলে সে বলে: “আমি তো সেদিনই মারা গিয়েছি, যেদিন লাল ষাঁড় তোমার হাতে মারা গিয়েছিল।”
এই গল্পে আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। আমরা যদি এই শিক্ষা বুকে ধারণ করি, তাহলে গাজার ভাইদের বিপদ থেকে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য এই সংঘাতে আমাদের কি ভূমিকা পালন করা উচিত, তা বিবেকবান মানুষ মাত্রই অনুধাবন করতে পারছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থঃ “মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।” [সহীহ বুখারী: ২৪৪২ সহীহ মুসলিম: ২৫৮০]
এটা একটি সহীহ ও ‘মুক্তাফাক আলাইহ’ হাদীস; ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
আপনারা জেনে রাখুন হে বীরগণ!
এই যুদ্ধের পরে শত্রুদের আরও টার্গেট রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ রণাঙ্গনে এই যুদ্ধ ছেড়ে বসে থাকি, তাহলে শত্রুপক্ষ আলাদা আলাদাভাবে আমাদের উপর হামলা করবে। সে সময় শত্রুর প্রতারণা দেখে অনুশোচনায় ঠোঁট কামড়ে ধরারও সময় আমরা পাবো না।
গাজার সাহায্যের জন্য এবং নিজ দেশে বিপ্লব সাধনের জন্য বলিষ্ঠ কণ্ঠে স্লোগান তুলুন। প্রত্যেক মুসলমানের অধিকার আছে নিজ উদ্দেশ্যকে সমর্থনের জন্য যেকোনো স্লোগান দেবার। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, কথার সাথে যেন কাজের মিল থাকে। তাই সকলেই জেগে উঠুন!! আপনাদের স্লোগানের প্রতিটি শব্দ ও কাজ নিঃসন্দেহে আসন্ন বিজয়-প্রাসাদের এক একটি ইটের মতো ইনশাআল্লাহ!
নিঃসন্দেহে উম্মাহর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য করা কাজগুলোই হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান; সাফল্য নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে কার্যকর। এই কারণে নিজেদেরকে শুধু বিক্ষোভের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা আমাদের জন্য উচিত নয়। বরং আমাদের জন্য বিপ্লব সাধন করা আবশ্যক, যে বিপ্লব পশ্চিমাদের তাবেদার সরকারগুলোকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আর এই বিপ্লব সাধনের একমাত্র পথ হচ্ছে নাগরিক অবাধ্যতা, ধর্মঘট অথবা যাকে বলে ‘অসহযোগ আন্দোলন’।
***
আমেরিকা ও ইউরোপবাসীর জন্য ‘অসহযোগ আন্দোলন’ এর প্রয়োজনীয়তা:
যারা আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির (যে দেশের সরকারগুলো ইহুদীদেরকে আকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে) গণ-বিক্ষোভগুলোতে অংশ নিয়েছে, তাদের জন্যও এই অসহযোগ আন্দোলন প্রয়োজন। যদি আপনাদের বিক্ষোভগুলো দেশের ভেতরের ও বাহিরের জালিম সরকারের অন্যায় ব্যবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন সাধন করতে না পারে, গাজাবাসী সহ অন্যান্য মজলুমের বিরুদ্ধে ইহুদীদের পরিচালিত গণহত্যা অভিযান যদি বন্ধ না হয় এবং সহজ ও মসৃণ পন্থায় ঔপনিবেশিকতার যুগের অবসান যদি না ঘটে, তবে আপনাদের প্রচারাভিযান ও জনসমাগমের কোনো মানে নেই। আপনারা প্রতিটি সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আপনারা আপনাদের সন্তান ও অর্থ-সম্পদ হারাবেন ঠিক, আবার মানুষ হিসাবে নিজেদেরকেও হারিয়ে বসবেন।
আপনাদের শাসক এবং তার পিছনে দাঁড়ানো অর্থলোভী ও সুবিধাভোগী শ্রেণি সবকিছু লুণ্ঠন করবে। আপনারা বিভিন্ন রকম নৃশংসতা সহ্য করতে বাধ্য হবেন এবং সারা বিশ্বের নিপীড়িতদের প্রতিক্রিয়া দ্বারা পীড়িত হবেন। এখনো কি আপনাদের এই প্রশ্নের জবাব প্রয়োজন?—“কেন মানুষ আপনাদেরকে অপছন্দ করে?”
আপনারা আপনাদের দেশে এমন বাস্তবমুখী কিছু করুন, যেন আপনাদের প্রতি মানুষের এই অপছন্দ ভাব দূর হয়ে যায়।
(ম্যালকম এক্স নামে পরিচিত) মালিক আল-শাহবাজ এবং তাঁর সহযোগী মুহাম্মদ আলী ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়রের (Cassius Marcellus Clay Jr.) সিদ্ধান্তটা যেন আপনাদের সামনে থাকে। তা হল- আপনাদের বিক্ষোভ ইত্যাদি যেন জালিম সরকারের হাতের অস্ত্র না হয়ে দাঁড়ায়। এই উভয়জনের আদর্শ আপনাদের সামনের চলার পথকে আলোকিত করবে। মুহাম্মাদ আলী ক্লে সমগ্র বিশ্বের সম্মান অর্জন করেছিলেন। নিজেদের আদর্শের উপর অটল-অবিচল থেকে সকল অধিকার পুনরুদ্ধারে তারা সংগ্রাম করেছেন।
হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস এবং তাদের পিছনে থাকা ইহুদী অর্থদাতাদের নির্দেশ অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের সন্তানদেরকে আপনাদের শাসকবর্গের পক্ষে যুদ্ধে যেতে বাধা দিন। নইলে তারা যুদ্ধের জ্বালানি হবে। আপনারা কর দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যেগুলো ব্যয় করে গাজায় মজলুমদেরকে হত্যা করা হয়, সেগুলো কি আপনাদের দেয়া অর্থ-সম্পদ নয়? এই নৃশংস, অন্যায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগুলো কি এমন প্রতিশোধ স্পৃহা তৈরি করছে না, যা দিনের পর দিন চলে গেলেও মোচন করা যাবে না?
বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই প্রতিশোধ স্পৃহা বয়ে চলবে এবং অবশেষে প্রতিশ্রুত দিন এসে উপস্থিত হবে। আপনারা কি ঠিক ওই মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু নীরব দর্শকের মতো দেখেই যাবেন, যখন আপনাদের দুর্দশার পালা আসবে? সে সময় আপনারা তিক্ততা অনুভব করবেন, যেমন করে আজ গাজার মজলুম জনগণ তিক্ততা অনুভব করছে?
পশ্চিমের শক্তি শেষ হয়ে গেছে। তাদের অহংকারের সময়টা আর নেই। ঋণ পরিশোধের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাদের সামরিক সরঞ্জামাদি আফগানিস্তান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ইউরোপ সম্পর্কে কথা হলো, এটি কার্যত শক্তিহীন। আপনাদের আদরের সন্তান – জায়নবাদী সত্তা – কিছু বীর সিংহের আঘাতে ভেঙে পড়েছে। সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমেরিকান সামরিক নীতি নির্ধারকদের বিরুদ্ধে আপনাদের বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত এখন আপনাদের হাতে। আপনাদের নাগরিক অবাধ্যতা ও ‘অসহযোগ আন্দোলন’ এই শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটাবে।
আপনাদের বাহু দিয়ে এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যা আপনাদের দেশকে মানবিক ব্যবস্থার মাঝে স্থান দেবে। আপনাদের হৃদয় উন্মুক্ত করুন এবং শাশ্বত ঐশ্বরিক বার্তাটি গভীরভাবে শুনুন। নিজেদের জন্য এই দুনিয়া ও পরকালের সুখ বেছে নিন, কারণ দীন কবুলের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿٢٥٦﴾
অর্থঃ “দীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।” [সূরা বাকারা ০২: ২৫৬]
এখন আপনাদের ইচ্ছে আপনারা কি করবেন।
***
হে আমেরিকা ও ইউরোপের অধিবাসীগণ!
যদি পরিস্থিতি আগের মতোই থাকে; এমন দিন আসবে যখন আমেরিকা ও ইউরোপ গর্বিত গাজায় সংঘটিত আক্রমণের চেয়েও মারাত্মক আক্রমণের শিকার হবে। সেই সময় আপনারা আপনাদের পীড়া ও দুর্দশার জন্য দায়ী ইহুদীদেরকে অভিশাপ দেবেন। বাইডেনের সমাধিতে আপনারা পাথর নিক্ষেপ করবেন। সেই দিনটি কি খুব নিকটে নয়? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٤٢﴾
অর্থঃ “তাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা চক্রান্ত করেছে। আর সকল চক্রান্ত তো আল্লাহর হাতেই আছে। তিনি জানেন প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু করে। কাফেররা জেনে নেবে যে, পর জীবনের আবাসস্থল কাদের জন্য রয়েছে।” [সূরা রাদ ১৩: ৪২]
আপনাদের আজকের ‘অসহযোগ আন্দোলন’ আপনাদেরকে অন্ধকার ভবিষ্যৎ ও অতল গহ্বর থেকে রক্ষা করবে।
***
উপসংহার:
মুসলিম উম্মাহর করণীয়:
সকল মানুষের উচিত এই ঘটনার গুরুতর দিক সম্পর্কে সচেতন থাকা। কারণ ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের গণহত্যা, তাদের সম্পদ ধ্বংস সাধন এবং তাদেরকে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা এমন এক বিষয়, যা হৃদয়বানদের অন্তর ভেঙে দেয়। এ বিষয়গুলো কখনো কখনো তাদের হতাশ করে এবং তাদের অসহায়ত্বের অনুভূতিকে গভীর করে। কিন্তু আমরা মুসলিমরা কখনো হতাশ হই না; ভেঙে পড়ি না। যতক্ষণ আল্লাহর প্রতি আমাদের আস্থা আছে, আমরা কিছুতেই নিরাশায় ডুবে যাই না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ ۖ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَن يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِّنْ عِندِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا ۖ فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ ﴿٥٢﴾
অর্থঃ “আপনি বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্যে দুটি কল্যাণের একটি প্রত্যাশা কর; আর আমরা প্রত্যাশায় আছি তোমাদের জন্যে যে, আল্লাহ তোমাদের আযাব দান করুন নিজের পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হস্তে। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষমাণ।” [সূরা তাওবা ০৯: ৫২]
হতাশা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করবে না। বরং, অপ্রতিরোধ্য সত্য হল: আমরা এবং মুসলিম উম্মাহ এখন ক্ষুব্ধ। এই ঘটনাগুলো আপনাদের (ইউরোপ ও আমেরিকার জনগণদের) হৃদয়কেও নাড়া দিয়ে যাওয়া উচিত। ইহুদী ও ক্রুসেডার পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যতটা ক্রোধ আমাদের জাগ্রত হয়, তার চেয়ে বেশি আপনাদের মনে এ ঘটনাগুলো রেখাপাত করা উচিত। কারণ হক বাতিলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব চিরকাল চলবে যতদিন না আল্লাহ এই পৃথিবী এবং এতে থাকা সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
আমাদের অবশ্যই এই ক্রোধকে সঠিক দিকে পরিচালিত করতে হবে। এই ক্রোধ নিজেদেরকে প্রকাশ করার জন্য নয়। চলমান সমস্যায় আমাদের অধিকারের প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। এই বিশ্বাসের পর আমাদের পুরোটুকু ক্ষোভ ও ক্রোধ আমরা নিয়োজিত করতে চাই আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তি তৈরির পেছনে। সর্বত্র সমস্ত ক্ষুব্ধ মানুষকে অবশ্যই নিজেদের ক্রোধকে উপযুক্ত ক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এটি ইহুদীবাদী ও ক্রুসেডারদের প্রজ্বলিত আগুন। আপনারা এ থেকে রেহাই পাবেন না। যারা এ আগুন জ্বালিয়েছে তারা নিজেরা অচিরেই সেই আগুনে পুড়বে।
এবার আসি উম্মাহর সন্তান মুজাহিদীন — বিশেষ করে কেনান, জর্ডান, সিরিয়া, জাযীরাতুল আরব এবং সারা বিশ্বের আল-কায়েদার মুজাহিদীনের করণীয় কি হবে?
সারা বিশ্বের মুজাহিদীনের করণীয়:
আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনারা যে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা আপনাদেরকে অবশ্যই পালন করতে হবে। আপনাদেরকেও গাজার মুজাহিদীনের সঙ্গে মিলে বিপ্লবমুখী উম্মাহর অগ্রদলে শামিল হতে হবে। প্রত্যেককেই নিজের রণাঙ্গনে নিজ নিজ ফ্রন্টে কাজ করতে হবে।
একইভাবে আপনাদেরকে এমন বিস্তৃত ছাতা হতে হবে, যার ছায়ায় সকলের স্থান হয়ে যায়। জনগণের ভেতর থেকে উঠে আসা সকল আন্দোলন সেই ছায়াতলে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবে। উম্মাহকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করতে পারবে এবং উম্মাহর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
লেখক, কবি এবং কলম সৈনিকদের করণীয়:
এরকম আন্তরিক যারা রয়েছেন, তাদের জন্য কলম যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত নয়। আপনারা যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি করার জন্য, আবেগ জাগিয়ে দেবার জন্য, চেতনার বিচ্ছুরণ ঘটানোর জন্য, বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য, জনগণের ভেতর থেকে উঠে আসা সকল আন্দোলনকে সমর্থনের জন্য কলম যুদ্ধে আত্মনিয়োগ করবেন। আপনাদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও প্রকাশনাগুলো যেন এমন গর্জনকারী জলধারা ও অপ্রতিরোধ্য প্রবাহের মত হয়, যা কোন ঘটনা বা ইস্যু থেকে পিছিয়ে পড়বে না। আপনাদের রচনা ও প্রকাশনা যেন ইতিবাচক কার্যক্রমের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে।
মসজিদগুলোর ইমাম সাহেবগণ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও জামিয়াগুলোর শিক্ষকদের করণীয়:
বৈপ্লবিক কার্যক্রমে আপনাদের ভূমিকা কি হবে?
আপনাদের ভূমিকা হল দিক-নির্দেশনা দেয়া, পথ দেখিয়ে দেয়া। অস্ত্র হাতে মুজাহিদীনের ভূমিকা থেকে আপনাদের কাজের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। আপনারা আপনাদের শ্রোতা, শিক্ষার্থী, কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আপনাদের অর্থ-সম্পদ কোনো কিছুই বৈপ্লবিক কার্যক্রমে নিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবেন না। বৈপ্লবিক কার্যক্রম এ পক্ষের কাজ, সে পক্ষের নয় – এমনটা ভাবলে ভুল হবে। বিপ্লবের জন্য সামগ্রিকতা প্রয়োজন। এটা গোটা উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن تَكُونُ لَهُ عَاقِبَةُ الدَّارِ ۗ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ ﴿١٣٥﴾
অর্থঃ “হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদের জায়গায় থেকে কাজ করে যাও আমিও কাজ করে যাচ্ছি। কারণ অচিরেই তোমরা জানতে পারবে পরকালীন শুভ পরিণাম কার জন্য। নিশ্চয়ই জালিমরা সফল হবে না।” [সূরা আনআম ০৬: ১৩৫]
কারখানা ও কোম্পানির পরিচালক, শ্রমিক, কর্মকর্তা, ক্ষেত-খামারের কৃষক, অর্থশালী বিত্তবান শ্রেণি এবং উম্মাহর অন্যান্য সেক্টরের ব্যক্তিদের করণীয়:
বিপ্লবের ময়দান খুবই বিস্তৃত। সকলেই সেই ময়দানে উপস্থিত হতে পারবে। তাই আসুন! আমরা গাজায় আমাদের ভাই-বোনের ডাকে সাড়া দিয়ে অগ্রসর হই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٢٢﴾
অর্থঃ “এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ।” [সূরা রাদ ১৩: ২২]
****************
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent
Comment