مؤسسة النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
هذه غزة ...
حرب وجود.. لا حرب حدود-٤
بقلم: سالم الشريف
এই তো গাজা...
গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয় বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (৪)
মূল: সালেম আশ শরীফ
This is Gaza...
A War of Existence, Not a War of Borders-4
Author: Salem Al Sharif
সূচীপত্র
ভূমিকা: 5
কিছু তথ্য উপাত্ত এবং সর্বশেষ সংবাদ : 8
মৈত্রী চুক্তি সমূহ: 9
সমকালীন যুদ্ধ সমূহ: 11
অর্থনৈতিক যুদ্ধ: 12
আকাশ পথে হামলার জটিলতা নিরসন: 13
দ্বিতীয়ত, জেট বিমান ও হেলিকপ্টার: 14
প্রশিক্ষণ ও সামরিক বাধ্যতামূলক নিয়োগ: 16
লক্ষ্যগুলির সাথে মিথস্ক্রিয়া: 18
উত্পাদন: 22
স্টোরেজ (ডিপো/গুদাম/অস্ত্র ভাণ্ডার): 23
জরুরি বিষয়গুলো আমরা আরেকবার দেখে নেই: 24
মুক্তির ধারণা: 25
প্রতিরোধ: 26
পারস্পরিক বার্তা বিনিময় ও বিরতি : 28
সান্ত্বনা এবং সুসংবাদ. 30
উপসংহার: 32
গাজার বাস্তবতা সম্পর্কে ইয়েমেনের কবি ওসামা যা লিখেছেন তার চেয়ে বেশি সত্য.. 33
সঠিক আর কি হতে পারে : 33
بسم الله الرحمن الرحيم
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
এই তো গাজা... গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয়
বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (4)
ভূমিকা:
ইহুদীবাদী চক্র যখন ফিলিস্তিনে আশ্রয় নেয় তখন গোটা পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। কিন্তু এটা তাদের প্রতি ভালোবাসার কারণে নয়। কারণ তাদের পরস্পরে এমন বিরোধ রয়েছে যা লজ্জাজনক। কিন্তু তবুও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো গোটা বিশ্বে মুসলিমদের প্রভাব প্রতিপত্তি যেন অবশিষ্ট না থাকে— যেই প্রভাবের মাধ্যমে তারা আল্লাহর সাজে পৃথিবীকে সজ্জিত করবে। ইতিহাসের এই পর্যায়ে শয়তানিমূলক এই মৈত্রী গোটা বিশ্বে এই উম্মাহর সন্তানদের মাঝে এবং দুর্বল জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে সুস্থ প্রকৃতির ব্যক্তিদের মাঝে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে গোটা বিশ্ব ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাধীন হবে না এবং বিশ্বের জনগোষ্ঠী ততক্ষণ পর্যন্ত উপযুক্ত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের পতন ঘটানো না হবে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে তাদেরকে অপসারিত করা না হবে। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব মানবতার সঙ্গে যা করেছে, বিগত দুই শতাব্দী যাবৎ মানবজাতির মান সম্মান অধিকারের প্রশ্নে তারা যা কিছু করেছে সেগুলো বর্ণনাতীত জঘন্য অপরাধ। তারা যেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের দাবি করে থাকে এবং গোটা বিশ্বে মিথ্যাচারের বাজারে নৈতিকতার কথা বলে নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে উন্নত ও প্রগতিশীল প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে, তারা নিজেরাই সে নৈতিকতার ওপর আঘাত করে এসেছে প্রতিনিয়ত। তাদের ভাবখানা এমন, তারাই একমাত্র সত্যের ঠিকাদার, সত্য তাদের মালিকানাধীন; তারা যেমন বিচার করবে সেটাই ন্যায় বিচার। তারা যুবতী নারীদেরকে ব্যবহার করে অন্যদেরকে দিয়ে যা করাবে সেটাই ইনসাফ। সত্য সঠিক নির্ধারণে অন্যদের কোনোই অধিকার নেই। সবার কাজ হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী মনিবদের কথা নিঃসংকোচে মেনে নেওয়া। এইতো সেদিন তাদের সেনাবাহিনী উপনিবেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু চলে যাবার আগে কলোনিগুলোতে এমন নেতৃবৃন্দকে বসিয়ে দিয়েছে যারা মনিবদের নামেই শাসন করে, স্বজাতিকে লাঞ্ছিত করে, জুলুম নির্যাতন করে এবং মনিবদের জন্য নিজের দেশের জনগণের উপর চড়াও হয়। উম্মাহর শত্রুদের স্বার্থে তারা ঠুনকো কারণ দেখিয়ে হেসে খেলে মুসলিমদের সম্পদ জবরদখল করে শত্রুদের হাতে তুলে দেয়। অন্ধকার যতই গাঢ় হোক, জুলুম নির্যাতন যতই দীর্ঘ হোক, পরিবর্তন সাধনের জন্য সত্যের বাহিনী আসছে। ইউরোপ এখন মৃত্যুমুখে। আমেরিকা আফগানিস্তানের পরাজয়ের পর পতনের দ্বারপ্রান্তে। যদি উপসাগরীয় অঞ্চলের রশি তাদের হাতে না থাকতো তাহলে গোটা বিশ্ব তাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে যেত। আর যারা পশ্চিমাদের প্রতি ঝুঁকেছে, তাদের কাছে নিজেদের বিবেক বন্ধক দিয়েছে, আসলে তাদের মানবিক স্বভাব-বৈশিষ্ট্য বিকৃত হয়ে গেছে। আল্লাহর ক্রোধ তাদের ওপর, তিনি তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিয়েছেন। এদের মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুসলিম অঞ্চলগুলোর রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ। তাদের শীর্ষে রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের শাসকবৃন্দ এবং আরো বিশেষভাবে বললে আরব আমিরাতের শয়তান এবং তার ভ্রাতারা।
নেতানিয়াহু সেই পথেই হাঁটছে, যে পথে সাবেক ইহুদী খুনিরা হেঁটেছে। অতএব এমনটা আশা করা উচিত হবে না যে, নেতানিয়াহু সিরিয়াসভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য উদ্যোগী হবে এবং মুজাহিদদের হাত থেকে ইহুদী বন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্য আলোচনার টেবিলে আসবে। কারণ যেই অজুহাতে তারা গণহত্যা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে তা হলো, মুজাহিদিদের হাতে বন্দীরা এখনো বেঁচে আছে। এখন বন্দী বিনিময় কার্যক্রম যদি সম্পন্ন হয়ে যায় তাহলে শুধু এতটুকুর মাধ্যমেই যুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য পূরণ হয়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ আবার ইহুদী সত্তার অভ্যন্তর থেকে (আংশিক জায়গা থেকে) ক্ষোভের ঢিপি ধসে পড়বে, বিক্ষুব্ধ হয়ে যাবে একটা অংশ। এ কারণেই সঙ্গত ভাবে সে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়ে টালবাহানা করছে। এই সুযোগে এমন নতুন কোনো লক্ষ্য খুঁজে বেড়াচ্ছে, যা সামনে রেখে লড়াইয়ের সময়সীমা আরও দীর্ঘায়িত করা যাবে। এভাবেই সে নিজের পদে বহাল থাকতে চাচ্ছে এবং তার ইহুদী প্রতিপক্ষদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখছে। এখন প্রশ্ন হলো, তার পক্ষে কি এই অঞ্চলকে এমন কোনো লড়াইয়ে প্রবেশ করানো সম্ভব হবে, যে লড়াই সম্পর্কে কারো জানা নেই— তা কতদিন পর্যন্ত চলমান থাকবে এবং যুদ্ধের আগুন প্রজ্জ্বলনকারীরা কবে নিবৃত্ত হবে? তবে কি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে যাবে? খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্ন: যে শক্তিগুলো গোটা বিশ্ব পরিচালনা করছে, তারা কি মানচিত্রে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে? বিপ্লব ও পরিবর্তন সাধনের জন্য যুদ্ধই একমাত্র পদ্ধতি ও পন্থা? নাকি তারা অন্যান্য উপায়কে প্রাধান্য দেবে? এছাড়াও গোটা বিশ্বের দেশগুলো কি এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত? কোন্ রাষ্ট্রগুলোর বাস্তবেই এত আগ্রহ অনিশ্চিত এমন যুদ্ধে প্রবেশ করার ব্যাপারে, যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে শেষ হবার আশা কেউ করতে পারে না? আর কত কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে চীন ও ভারতের মতো বিভিন্ন শক্তি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে? এখন একটি বিষয় হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো আফ্রিকায় তাদের আয় উপার্জনের অনেক উৎস হারিয়ে বসেছে। আর এখন তারা মৃত্যুর দিন গুনছে। এই অবস্থা সামনে রেখে তারা আবারো আগ্রাসনের পথে যাবে? নাকি আফ্রিকার দেশগুলো ইউরোপের আগ্রাসন থেকে এখন সুরক্ষিত? পতনের মুখে আমেরিকার পূর্বের সবুজ বাগান কি এবার তার হাতছাড়া হয়ে যাবে, নাকি আমেরিকার ইচ্ছামত সবুজ কাননের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে? তেলের প্রবাহ কি চলমান থাকবে, নাকি লড়াইয়ে অপরপক্ষের কৌশলগত লক্ষ্য হবে তেলের খনি ও কূপগুলো ধ্বংস করা অথবা সেগুলোর কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেওয়া, যেন বিরোধী বড় শক্তিগুলো বঞ্চিত হয়? সর্বশেষ প্রশ্ন হলো, সীমাহীন, নিয়ন্ত্রণহীন, অনৈতিক একটি যুদ্ধের পর অস্তিত্বের রূপরেখা কিরূপ হবে?
এই অবস্থায় সমস্ত ঘটনা প্রবাহকে শুধু সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠ করাটা ভুল। প্রতিটি ঘটনাকে কৌশলগত, স্ট্র্যাটেজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা একান্ত জরুরি। এমনিভাবে শুধু রাষ্ট্র বা আঞ্চলিক সীমানা ধরে নিয়ে ঘটনাগুলো পাঠ করাটাও ভুল। যে সামরিক শিবিরগুলো গঠিত হচ্ছে, সেগুলো একসঙ্গে আমাদের দেখতে হবে। সামরিক শিবিরগুলোর কক্ষপথে যেই ছোট ও প্রভাবশালী শক্তিগুলো রয়েছে এবং আকর্ষণ বা বিকর্ষণ নীতি অনুসারে সামরিক শিবিরসমূহের কক্ষপথগুলোতে যেই শক্তিগুলোকে চলাচল করানো সহজভাবে সম্ভব, সেই ছোট ও প্রভাবশালী শক্তিগুলোকেও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
***
বিপ্লবের পথে কিছু দিক নির্দেশনা কিছু তথ্য উপাত্ত এবং সর্বশেষ সংবাদ :
সকল অভিজ্ঞতা থেকে একটা বিষয় জোরালোভাবে বোঝা যায়; সকল অঙ্গনে, সকল ময়দানে প্রস্তুতি ও বিজয়ের ক্ষেত্রে সফলতার একটি মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে তথ্য উপাত্তের প্রাচুর্য। সমস্ত তথ্য সামনে রেখে তবেই কোনো লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়। এর জন্য মৌলিক এমন কিছু তথ্যের একান্ত প্রয়োজন, যেগুলোর আলোকে লড়াইয়ের একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। সেই তথ্যগুলো সংগ্রহের জন্য লড়াইয়ের আগে, লড়াই চলাকালে এবং লড়াইয়ের পরেও কাজ করতে হবে। দিনে রাতে কখনো সেই তথ্যগুলো একত্র করার কাজ থামিয়ে রাখা যাবে না। তথ্যাবলী পূর্ণাঙ্গ, সর্বাঙ্গীন এবং সর্বব্যাপী হতে হবে। শত্রু কাঠামোর সকল অঙ্গ, শত্রুপক্ষের সকল প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংযোগসমূহ এবং নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তথ্য থাকতে হবে। কারণ যুদ্ধ শুধু আগুন আর আন্দোলনের ময়দানে সীমাবদ্ধ নয় বরং জীবনের সকল অঙ্গনেই যুদ্ধের প্রভাব থাকা উচিত। আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারা উচিত। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য আমাদের আলাদা সেল থাকতে হবে। যেই যুদ্ধ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই লড়াইয়ের পরিধি অনুপাতে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
শত্রুপক্ষ সম্পর্কে, শত্রুর ঘাঁটি সমূহ, বিশেষ করে ঘোষিত বা অঘোষিত গুপ্ত বিমান ঘাঁটি সম্পর্কে, তার গোলাবারুদ ডিপো, তার জ্বালানির ডিপো, সামরিক সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র, নেতৃত্ব, শত্রুর শক্তি ও দুর্বলতার বিভিন্ন পয়েন্ট, প্রভাব বলয়, তার নরম পেটে আঘাত করার দ্বারা কতটুকু প্রভাব সৃষ্টি হবে সে সম্পর্কে, তার মিত্র কারা তার প্রতিপক্ষ কারা আর তার ব্যাপারে কারা নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে তাদের সম্পর্কে, আমাদের অন্যান্য প্রতিপক্ষ সম্পর্কে, তাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতার ধরন ও পর্যায় সম্পর্কে, সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদের প্রতিপক্ষের প্রস্তুতি সম্পর্কে এবং আমাদের মিত্রদের সম্পর্কে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ সামরিক রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করা একান্ত জরুরি। লড়াইয়ের জন্য আমাদের জনগণ কতটা প্রস্তুত, তারা কতটা ধৈর্য ধারণ করতে পারবে, কি পরিমাণ ত্যাগ ও বিসর্জন তাদের দ্বারা সম্ভব, এগুলোও ভুলে গেলে চলবে না।
এটা একটা অস্তিত্বের লড়াই। এই লড়াইয়ে যতটা সম্ভব অধিক কৌশল ও দৃঢ় প্রত্যয় অবলম্বন করা জরুরি। প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি স্তরে যা করা উচিত, তা করতে হবে। সেই সাথে কৌশল অবলম্বনে শত্রুকে প্রতারিত করার এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর কষাকষির সুযোগ বাকি রাখতে হবে। শত্রুদের সঙ্গে যারা জোটবদ্ধ তাদের মাঝে বিভক্তি তৈরির চেষ্টা করতে হবে। মিত্র শক্তিগুলোর মাঝে পারস্পরিক বিভেদ-বিচ্ছিন্নতার বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধু তাই নয় বরং একটি দলের বিভিন্ন অংশের মাঝেও সেই বিভক্তি তৈরির চেষ্টা করতে হবে। কারণ যুদ্ধ শুধু লোহা আর আগুন দিয়ে হয় না। আরো অধিক সুস্পষ্ট ভাষায় আমরা বলতে চাই, সমাজের কোন কোন অংশের ওপর আঘাত না করলে অন্য অংশ হিংসার আগুনে পুড়তে থাকে এবং তাদের মাঝে শত্রুতা তৈরি হয়ে যায়। এভাবে তাদের বাহ্যিক একতা বিনষ্ট করে দেয়া এবং তাদের শক্তি দুর্বল করে দেয়া সম্ভব হয়।
বনি ইসরাঈলের নিজেদের মধ্যকার রাজনৈতিক লড়াই সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তের অপ্রতুলতার কারণে যুদ্ধ আশা ও ধারণার চেয়ে বেশি দীর্ঘায়িত হয়েছিল।
ইহুদীদের জনপ্রিয় আন্দোলনের প্রভাবের হ্রাস সম্পর্কে তথ্যের অভাবের কারণে বন্দীরা আর তুরুপের তাস হিসেবে বিবেচিত হয়নি। ২০০ দিনের যুদ্ধের পরে খুনি নেতানিয়াহু একটি বিনিময় চুক্তি করার আর কোনো অর্থ নেই। কারণ সে গাজার মুসলমানদের নির্মূলে যা করতে চেয়েছিল তা করেছে। এখন মুজাহিদদের উচিত তাকে এবং তার কট্টরপন্থী দলকে ভালো রকম শিক্ষা দেয়া।
***
মৈত্রী চুক্তি সমূহ:
এটা দুই ধারী অস্ত্র। এর কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাসের মাঝে যুদ্ধের সূচনাই মৈত্রীর অবসান। তাই প্রজ্ঞার দাবি হচ্ছে, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এবং তার চেয়ে বেশি সাবেক মিত্রদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেব আগেই কষে রাখা।
শত্রুর সঙ্গে ডিল করার চেয়ে মৈত্রী শিল্প বা বন্ধু বানাবার যোগ্যতা যে পক্ষের বেশি রয়েছে; সেই সাথে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যাপারে সজাগ থেকে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা সহকারে শক্তিশালী মৈত্রী নির্মাণের যোগ্যতা যে পক্ষের রয়েছে, তারাই আসলে বোধগম্য প্রতিকূলতা অনুপাতে দীর্ঘমেয়াদি একটি লড়াই চালিয়ে যেতে সক্ষম। এ বিষয়টা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সাফল্যের সম্ভাবনার প্রতি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। আসলে প্রতিকূলতা ছাড়া পথ চলা যায় না। আর সবচেয়ে বাজে ধরনের প্রতিকূল দশা হচ্ছে, দলের ভিতরেই কিছু লোক নিজেদের নার্সিসিজম বা আত্মতুষ্টি দ্বারা অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি নষ্ট করে। একতা ধরে রাখার জন্য এবং বিভেদ-বিভক্তি ও ব্যর্থতা থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে এজাতীয় ব্যক্তিদের হাত থেকে অবিলম্বে মুক্তি পাওয়া একান্ত জরুরি। তাদের স্বভাব পরিবর্তনের আশায় বসে থেকে অপেক্ষা করার পরিণতি হয়ে থাকে ভয়াবহ। যদি তাদেরকে সুযোগ দিতে থাকি, তাহলে একতা বিনষ্টের জন্য আমরাই দায়ী থাকবো। কখনো দলের অভ্যন্তরীণ এই বিচ্যুতি শত্রুপক্ষের তাবেদার হওয়া পর্যন্ত গড়িয়ে নেয়। মিত্রদের মাঝে রাজনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ ঘটা খুবই সুনিশ্চিত একটা ব্যাপার। সামাজিক বিভক্তির চেয়েও এটা বেশি জোরালো। তাই রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হবেই— আজ হোক কাল হোক, বিলম্বে হোক কিংবা অবিলম্বে। কারণ বিভিন্ন সম্পদ লেনদেন, বাজার ও নৌপথ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমনই এক অনিবার্য বিষয়, যা শত্রুদেরকে সহজেই আলাদা পথে দাঁড় করাবে। এছাড়াও আত্মমর্যাদা, অহংকার, নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো যেকোনো পক্ষকে একচেটিয়া হতে প্ররোচিত করে এবং যৌথ স্বার্থ রক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণেই লড়াই চলতে থাকে এবং চলবেই। কিয়ামত পর্যন্ত লড়াইয়ের স্থায়ী অবসান নেই। মানবজাতি এভাবেই বিলুপ্তি অভিমুখে হাঁটছে।
আমাদের সশস্ত্র মুসলিম জনসাধারণের মৈত্রী এমন এক প্রকল্প যা নির্মাণ করা এবং সফল করে তোলার জন্য চেষ্টা করা অনিবার্য। যে বিষয়ের ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হব তা শত্রুপক্ষের একতার ভিত্তি অপেক্ষা অনেক বেশি সুদৃঢ় ও সুসংহত। কারণ আমরা এমন এক উম্মাহ, যাদের রব একজন, যাদের দীন অভিন্ন, যাদের রাসূল এক, যাদের কিবলা এক, যাদের ধর্মগ্রন্থ অভিন্ন। এই উম্মাহর রাজনৈতিক পথ চলাটা মানবজাতির কল্যাণ অভিমুখী। এই উম্মাহর প্রতিটি দল-উপদল যেই পথে চলবে, যে পন্থা অবলম্বন করবে এবং বিশ্ববাসীর ব্যাপারে যে অঙ্গীকার পোষণ করবে, তা মানব-সভ্যতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এবং পৌত্তলিকদের কর্মকাণ্ড অপেক্ষা বহু গুণ উত্তম ও উৎকৃষ্ট। ইনশাআল্লাহ অচিরেই এমন একটা সময় আসবে, যখন আমরা নিজেদের প্রবৃত্তিকে পরাজিত করবো এবং আমাদের অনুচিত আশা-আকাঙ্ক্ষা চাপা দিয়ে এগিয়ে চলবো। স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শত্রুদেরকে পরাজিত করা তখন হবে শুধু সময়ের ব্যাপার।
***
সমকালীন যুদ্ধ সমূহ:
অমুখোমুখি যুদ্ধের দর্শনে (মিসাইল ও ড্রোন হামলা) সবচেয়ে নিকৃষ্ট দিক হলো এই যুদ্ধের মাধ্যমে জনসাধারণের স্থিতিশীলতা ধ্বংস এবং নাগরিকদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি বিনষ্ট করে দেয়া হয়। এই অবস্থায় জনসাধারণের উচিত তাৎক্ষণিকভাবে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা, যা শত্রুপক্ষের এমন পন্থা অবলম্বনে বাধার সৃষ্টি করবে। শত্রুপক্ষকে নিবৃত্ত রাখার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে জনসাধারণ শুধু হুমকি দিয়েই থেমে থাকবে না বরং শত্রুপক্ষের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক স্বার্থসমূহের ওপর জোরালো আঘাত হানবে। শত্রুর সামরিক ঘাঁটিসমূহ বয়কট করা, তাবেদারদেরকে নিশ্চিহ্ন করা এবং গুপ্তচরদেরকে চিহ্নিত করে অপসারণ করাও নাগরিক কর্তব্যের শামিল। এই কাজগুলো আমাদের ভূখণ্ডেও হতে পারে আবার যেই ভূখণ্ডগুলো থেকে তাদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ হয় সেখানেও হতে পারে। এই পদক্ষেপের কারণে ধারাবাহিক রক্তক্ষরণে খুব দ্রুত শত্রুর পতন ঘটতে বাধ্য, চাই শত্রুপক্ষ এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের সময় যত রকম প্রতিক্রিয়া দেখাক না কেন। যেকোনো মুসলিমের পক্ষে এবং বিশ্বের যেকোনো স্থানে সাহসিকতা, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষী যেকোনো দুর্বল ব্যক্তির পক্ষে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। এই সমস্ত পদক্ষেপের পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সে প্রতিষ্ঠানের ছায়াতলে জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হবে, নিজেদের প্রয়াসকে সমন্বিত করবে এবং জনজীবনের সকল সেক্টরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করবে। এর পরের পদক্ষেপ হলো, উক্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও প্লাটফর্মটি চেষ্টা করে যাবে জনসাধারণের সবচেয়ে প্রতিভাবান সচেতন সন্তানদেরকে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের এবং বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র প্রযুক্তির ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য। তাদেরকে আরো নির্দেশনা দিতে হবে এমন মিসাইল ও ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে আসার, যেগুলোর ধ্বংস-ক্ষমতা শত্রুর মিসাইল ও ড্রোন সক্ষমতার কম না হয়। প্রকৃত উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে জনজীবন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে। জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং উন্নয়নকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে—তবে শর্ত হচ্ছে জাতির নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরাই যেন সেই উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হন। এই উম্মাহর জাগরণ তার এমন সন্তানদের হাতেই সফলতা বয়ে আনবে, যারা নিজেদের আকীদা-বিশ্বাস, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আচার-ব্যবহার ঘনিষ্ঠভাবে আঁকড়ে ধরে আছে। তারা জাতির নিষ্ঠাবান সন্তান। তারা এই জাতির জন্য এমন ভূমিকা পালন করবে, যা এই জাতিকে শক্তিশালী করবে; ধ্বংস নয়।
মৌলিক যে বিষয়টা পরিবর্তন করা খুবই কঠিন তেমনি একটি বিষয় হচ্ছে, স্থলযুদ্ধগুলো হলো সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডবাসীর জন্য সবার আগে পূর্ব মীমাংসিত, তাই তাদের যত ক্ষয়ক্ষতি হোক না কেন অথবা আগ্রাসনকাল যত দীর্ঘ হোক না কেন, স্থলযুদ্ধের সমাপ্তি সুনিশ্চিত। ... আর পারমাণবিক বোমার একমাত্র প্রতিকার হচ্ছে পাল্টা পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করা অথবা প্রতিরোধমূলক এমন অস্ত্র আবিষ্কার করা, যার ভার বহন করা শত্রুর পক্ষে দুষ্কর। প্রতিরোধমূলক সেই অস্ত্র আমাদের হাতে এলে গুরুত্বপূর্ণ হলো তা ব্যবহার করার সাহস রাখা। অর্থনৈতিক যুদ্ধ:
মুসলিম উম্মাহর ও জনসাধারণের অবশ্য কর্তব্য হলো পশ্চিমা বিশ্বের সকল পণ্য বয়কট করা। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এমন যে কোনো পণ্য ক্রয় করা হারাম, মুসলিম দেশগুলোতে যেগুলোর বিকল্প রয়েছে— যদিও সেগুলো কিছুটা নিম্নমানের হোক না কেন। অতএব যারা পশ্চিমা দেশ থেকে কোনো গাড়ি ক্রয় করবে তারা গাজার মুসলিম গণহত্যার অর্থায়নে অংশগ্রহণকারী। আমাদের মুসলিম দেশগুলোতে যে সকল পণ্যের বিকল্প রয়েছে; চাই সেগুলোর মূল্য কম হোক কিংবা বেশি, সেই সমস্ত পণ্য ইউরোপ, পশ্চিমা বিশ্ব আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও চীনের কাছ থেকে ক্রয় করা হারাম। একই কথা প্রযোজ্য এমন যেকোনো দেশের ব্যাপারে যারা ইহুদীদেরকে রাজনৈতিকভাবে, সামরিকভাবে অথবা অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে। আকাশ পথে হামলার জটিলতা নিরসন:
বিমান তথা উড়োজাহাজ এক বিরাট বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যুদ্ধের ময়দান থেকে এই বিমানকে বের করে দেয়া সম্ভব হবে তার দুর্বলতার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আঘাত করার মাধ্যমে। তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে বিমানবন্দর সমূহ, সামরিক বিমান ঘাঁটি, গোলাবারুদ ও জ্বালানি ডিপো, পাইলট, অস্ত্র প্রযুক্তির এক্সপার্ট, স্থলে অবস্থানকারী পাইলট এবং বিমান সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও সেক্টর।
প্রথম হলো ড্রোন বিমান: ড্রোন বিমানের দুর্বল পয়েন্ট অনেকগুলো। এগুলো ধীরগামী। উচ্চতায় কম, রাডারে চিহ্নিত করা সহজ। একইভাবে আগুনের মাধ্যমে এগুলোর মোকাবিলা করা, এগুলোকে বিভ্রান্ত করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। পাশাপাশি এগুলোর আরো কিছু দুর্বল পয়েন্ট হলো: যে স্থান থেকে এগুলোকে চালানো হয় সে সমস্ত ঘাঁটি, এগুলো চালনাকারী এক্সপার্ট দল, যে সমস্ত টেকনোলজি সেন্টারে এগুলো তৈরি হয়, যে সমস্ত গুপ্তচর এগুলোর কাছে তথ্য সরবরাহ করে অথবা চিপ বসানোর মাধ্যমে এগুলোর কাছে দিকনির্দেশনা প্রেরণ করে ইত্যাদি। এগুলোর সাথে আনুষঙ্গিক বিষয় যত বেশি হবে সেই সব কিছুই দুর্বল পয়েন্ট হিসেবে আমাদের সামনে থাকবে এবং আমাদের শক্তি অনুযায়ী প্রতিটি পয়েন্টে আমরা আঘাত করতে পারব। এক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে গুপ্তচর চিহ্নিত করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে শত্রুদেরকে অন্ধ করে দেয়া, সামরিক ঘাঁটি বা ড্রোন বিমানের ঘাঁটি অথবা এগুলোর প্রযুক্তি কক্ষ টার্গেট করে অভূতপূর্ব অপারেশন পরিচালনা করা। স্থলে অবস্থানকারী যে সমস্ত বিমান এক্সপার্ট অথবা পাইলট বিমান চালায়, নেতৃত্ব দেয়, তাদেরকে হত্যা অথবা অপহরণমূলক অপারেশন চালানো। এমনিভাবে বিমানের জ্বালানি ও গোলাবারুদ ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটানো, এগুলোর কাজে যে সমস্ত এক্সপার্ট ব্যক্তি নিয়োজিত তাদেরকে অপহরণ অথবা হত্যা করা। এভাবেই এই ভয়াবহ অস্ত্রের মোকাবেলা করা সম্ভব। এমনকি শুরু থেকেই বৈদ্যুতিকভাবে নির্দেশিত আত্ম-উৎসর্গী বিমানগুলোর মোকাবেলা করাও সম্ভব। কারণ এগুলো অল্প রেঞ্জের মধ্যেই চলে আর তা থেকে বোঝা যায়, এগুলো যেখান থেকে আসছে, যেখান থেকে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যারা এগুলো চালাচ্ছে, তারা আমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তাই আমাদের ভূখণ্ডে তথ্য সরবরাহের কাজে আমাদের যে সমস্ত গোয়েন্দা রয়েছেন তাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে উপর্যুক্ত আত্মঘাতী বিমান প্রেরণকারীদের ক্ষতি সাধন করা সম্ভব। শত্রুপক্ষের মাঝে ফাটল ধরানোর জন্য এবং শত্রু সারিতে খুব গভীরে ক্ষতিসাধনের জন্য আমাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অংশটিরও এক্ষেত্রে ভূমিকা থাকতে পারে। এমনিভাবে শত্রুপক্ষের মাঝে আমাদের কিছু লোক থাকবে যারা আমাদেরকে তথ্য সরবরাহ করবে, বিমান হামলার বিভিন্ন পরিকল্পনা বিভ্রান্ত করবে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি পয়েন্ট হচ্ছে প্রতিটি ফ্রন্টে এবং রণাঙ্গনের সর্বত্র মুজাহিদদের মাঝে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা, জনসাধারণের সঙ্গে উত্তমরূপে যোগাযোগ রক্ষা করা, তাদেরকে দীক্ষিত করা, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং সেগুলো নিক্ষেপের উপযোগী করে তৈরির প্রশিক্ষণ। কারণ আমাদের লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার। তাই উম্মাহর প্রতিটি সন্তানকেই এখানে প্রয়োজন। পূর্ব থেকে পশ্চিম গোটা বিশ্বের সমর বিশেষজ্ঞ এই উম্মাহর সন্তানেরা নিজেদের মাঝে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত, আবিষ্কার ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন, যেন শত্রুপক্ষের ভয়ানক অস্ত্রের মোকাবেলায় ব্যাপক স্ট্র্যাটেজি ও কৌশল অবলম্বন করা যায়।
দ্বিতীয়ত, জেট বিমান ও হেলিকপ্টার:
কাঁধের ওপর বহনযোগ্য বিধ্বংসী রকেট লাঞ্চার দিয়েই এই সমস্ত বিমান ভূপাতিত করা যায়। আবার স্থলঘাঁটি থেকে নিক্ষেপ করা যায়। তবে এই সমস্ত রকেটের জন্য যেরকম রাডার প্রয়োজন এবং যেই প্রযুক্তি দরকার, তা ক্রয় করা, ব্যবস্থা করা, সেগুলো পরিবহন এবং সেগুলো নিয়ে উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছা একটু কঠিন হতে পারে। তবে হেলিকপ্টার ও জেট বিমানগুলো যে জায়গা থেকে উড়ে আসে সেখানে অনুপ্রবেশ করা অথবা বিস্ফোরক ও বিধ্বংসী ড্রোনের মাধ্যমে সে জায়গাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি করা, পাইলট ও টেকনিশিয়ানদের হত্যা করা, তাদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া, গোলাবারুদ ডিপো ও জ্বালানি ভাণ্ডার উড়িয়ে দেওয়া, এমনকি বিমানবাহী রণতরীও বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবিলা করা যেতে পারে। দেড় টন বিস্ফোরক বোঝাই একটি ছোট নৌকা আড়াই দশক আগে এডেনে একটি আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারকে সরিয়ে দিয়েছিল। পরিবর্তনের জন্য, শত্রু এবং তার মিত্রদের আঘাত করার জন্য একটি উন্মুক্ত দিগন্তের প্রয়োজন। আরো প্রয়োজন এমন আত্মোৎসর্গী একদল কর্মী যারা উম্মাহ ও দীনের সাহায্যের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত।
তৃতীয়ত, উম্মাহর সন্তানদের ভেতর থেকে একদল হ্যাকার থাকতে হবে, যারা শত্রুর নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থায় নাশকতা ঘটাতে পারে। এটা এমন একটা শক্তি যা এখন পর্যন্ত শত্রুপক্ষকে বাধা দেয়ার জন্য সেভাবে ব্যবহৃত হয়নি। ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র বা এমনকি জেট প্লেন নেভিগেশন সিস্টেম অক্ষম করা, জ্যাম করা বা টার্গেট প্রোগ্রামিং হ্যাক করা ইত্যাদি কাজ এমন এক একটি অস্ত্র, যা জাদুকরের বিরুদ্ধেই তার জাদু কাজে লাগাতে পারে। এই কাজগুলো যারা করবে, তাদের অবশ্যই নিরাপত্তা ও তথ্যের ক্ষেত্রে প্রকৃত নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, শত্রুর প্রতিষ্ঠানগুলি— বিশেষ করে বিদ্যুৎ, জল, স্থল, সমুদ্র এবং বিমান পরিবহন সম্পর্কিত বেসামরিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করতে হবে। সেই সাথে শত্রুর পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকে ধ্বংস করতে হবে, যা দিয়ে তারা রাতদিন আমাদেরকে হুমকি দেয়। পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো ধ্বংস এবং ব্যবহারের অনুপযুক্ত করে দিতে হবে। শত্রুর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর আঘাত করে তাদের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করতে হবে... এই কয়েকটা কথায় আসলে আমাদের সামনের টার্গেট এবং আমাদের চিন্তাধারার সবটুকু উঠে আসবে না কিন্তু মুক্তির পথে এগুলো রোপিত চারা ও বপনকৃত বীজ।
চতুর্থত, উম্মাহকে তার হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। এই অস্ত্র দিয়ে শত্রুর মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন ও প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব। তাই এই অস্ত্রগুলোর চর্চা উন্নয়নে আমরা কাজ করব তার ধরন অনুসারে। সেটা স্ট্র্যাটেজিক অপারেশনে হতে পারে অথবা ট্যাকটিক। আমরা বলতে পারি উম্মাহর কাছে এমন তিনটি অস্ত্র রয়েছে যা মোকাবেলা করার সাধ্য শত্রুর নেই। তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে: শহীদি অপারেশন তথা আত্মোৎসর্গী হামলা। শুধু স্ট্র্যাটেজিক অপারেশনে এই কাজ করা যেতে পারে; কারণ শুধু শুধু রাজনৈতিক অথবা সামরিক এমন কোনো লক্ষ্যে আঘাত হানার জন্য কোনো প্রাণ বিনষ্ট করা উচিত নয়, যেখানে বোমা বর্ষণ অথবা সামরিক অপারেশনের মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যায়। আমাদের হাতে থাকা আরেকটি অস্ত্র ট্যাকটিক্যালি অত্যন্ত কার্যকর: বিস্ফোরকের শক্তি, কারণ আমরা বোবি-ট্র্যাপিং (ফাঁদ) অপারেশন, গুপ্তহত্যা, অভিযান এবং অতর্কিত হামলা চালাতে পারি যা শত্রুদের পঙ্গু করে দেবে— বিশেষ করে যদি অপারেশনগুলো শত্রু অঞ্চলে অথবা বৈধ টার্গেটে হয়। এই অপারেশনগুলো শত্রুদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করবে এবং আরো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে, যা ফিলিস্তিনে জায়নবাদী ও ইহুদীবাদীদের সমর্থনকারী শক্তিগুলোকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য করবে। নতুন পুরাতন একটি অস্ত্র পিস্তল, যা একাকী অপারেশনের ক্ষেত্রে খুবই সুবিধা জনক, সব মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে; যদি আমরা সাহসী হৃদয়ে তার সাথে একটি সাইলেন্সার যোগ করি, তাহলে শত্রুর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মিডিয়া এবং অন্যান্য সেক্টরের শীর্ষ ব্যক্তিরা আমাদের হাতের নাগালে সহজ টার্গেটে পরিণত হবে। শত্রুর সবচেয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র হলো: মনোবল। সেটাই আমাদের ভেঙে দিতে হবে। আর এই কাজগুলো উৎসারিত হবে আমাদের হৃদয়ের ভালোবাসা থেকে— আত্ম-উৎসর্গ, আল্লাহর জন্য, তাঁর দীনের জন্য, সম্মান ও গৌরবের জন্য নিজেকে বিলীন করে দেয়ার ভালোবাসা। কথা ও কাজের মাধ্যমে এই সুপ্ত ভালোবাসা স্থায়ী করে রাখতে হবে। কারণ ইজ্জত সম্মান এবং গৌরব বহনকারী অপারেশনগুলো উম্মাহর নীরব শক্তি ভাণ্ডারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। সাজানো গোছানো কথামালা, চেতনা উদ্দীপক কাব্য, নাশিদ ইত্যাদি মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় না বটে কিন্তু সেগুলোর কারণে সকল মানুষ অস্ত্রের দিকে ছুটতে থাকে।
***
প্রশিক্ষণ ও সামরিক বাধ্যতামূলক নিয়োগ:
বিভিন্ন ত্রুটি সত্ত্বেও এ কথা সত্য যে, বাধ্যতামূলক সৈন্য নিয়োগের নীতি উম্মাহর সন্তানদের বিরাট উপকারে আসে। কারণ এই প্রশিক্ষণে তারা বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একনিষ্ঠ পরিবর্তনকামী ব্যক্তিরা সামরিক প্রশিক্ষণ ও বাধ্যতামূলক সার্ভিসের জন্য সময় বের করবেন, খুব সিরিয়াসভাবে এ বিষয়টাকে গ্রহণ করবেন এবং সেনাবাহিনীর হাতে যে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে অথবা সামরিক উচ্চতর কলাকৌশল রয়েছে, সেগুলোতে নিজেরা দক্ষ হয়ে উঠবেন। কারণ যারা বিষয়টার গুরুত্ব বোঝে তাদের জন্য এটা বিরাট সুযোগ। কিন্তু যারা বিষয়টাকে অন্য চোখে দেখে, রাজনীতিতে যারা পরিপক্ক নয় তাদের কাছে এটা সময় নষ্ট বলে মনে হবে। কিন্তু যখন যুদ্ধের এক একটি দুয়ার খুলে যাবে, তখন এই মানুষগুলো খুবই অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে। এমনও হতে পারে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশ তাদের ব্যাপারে সীমালংঘন করবে, তাদের অর্থ-সম্পদ ও ভূখণ্ড ছিনতাইকারীরা তাদের উপর জুলুম করবে, অহংকারী স্বৈরাচারী জালিমের পক্ষ থেকে তাদের গোপনীয়তা বিনষ্ট করা হবে কিন্তু তারা কিছুই করতে পারবে না। তাই হে উম্মাহর যুবকেরা! বাধ্যতামূলক নিয়োগের বিষয়টি দুর্দান্ত সুযোগ। এটি কাজে লাগানো উচিত।
আরেকটি কথা বলা দরকার যে, বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগে সেনাবাহিনী, তাদের সক্ষমতা, পরিকল্পনা এবং নেতাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আমাদের অনেক দেশের সেনা কর্মকর্তারা আমাদের প্রতিপক্ষ। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এবং আদর্শিক বা দুর্নীতিবাজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের ভবিষ্যৎ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাদের তথ্য ভিতর থেকে সংগ্রহ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য সেনাবাহিনীকে শোষণ করে। আর এটা তারা করতে পারে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং পরিষেবার সময়কাল বিষয়ক নিয়ম-নীতিতে বিভিন্ন ত্রুটি থাকার কারণে। এই ত্রুটিগুলো অপসারণ করা যেতে পারে, যদি আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও নেতাদের নির্মূল করতে পারি— বিশেষ করে অফিসারদের ছেলেদের নিয়োগের বিষয়টি, যারা মনে করে যে, সেনাবাহিনী তাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বের উপর ভিত্তি করে তাদের জন্য একটি বিশেষ উত্তরাধিকার হয়ে উঠেছে। আর এভাবেই কিছু লোক যারা নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা ছাড়া কোনো একটি যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়ে অস্ত্র ব্যবহার করেনি, তারাই সেনাবাহিনীতে স্থান করে নেয়। তারা যা করে তা অন্যায় ভাবে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দখল ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন পরিবর্তনের গিয়ার ঘুরবে, তখন এই লোকেরা আর থাকবে না।
হে সচেতন মুসলিম যুবক, সামরিক সেবা এড়িয়ে যাবেন না; বরং এতে যুক্ত হয়ে যোগ্যতা তৈরি করুন। যখন গুরুতর অবস্থা তৈরি হবে তখন এর জন্য আপনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন।
***
লক্ষ্যগুলির সাথে মিথস্ক্রিয়া:
একটি বিপ্লবী কার্যক্রম অথবা পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সামনে যথাযথ লক্ষ্য ও টার্গেট রয়েছে, যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয় এবং এর বাস্তবায়ন হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও গোষ্ঠীর মাধ্যমে। তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করে বিপ্লব ও পরিবর্তনের পর্যায়গুলির প্রতি সজাগ সচেতন দৃষ্টি রেখে। তবে বড় লক্ষ্যগুলি অর্জন করা যায় না, যদি না ছোট ও মাঝারি লক্ষ্যগুলি অর্জিত হয়। শত্রুকে অবশ্যই আমাদের ভূখণ্ডের ইতিবাচক বিষয় সমূহ থেকে বঞ্চিত করতে হবে। এই শত্রু পক্ষের কাছে এমন কোনো কিছু আমরা বিক্রি করব না, যা তাদেরকে শক্তিশালী করবে, তাদের সামরিক ব্যবস্থাকে সংহত করবে। একইভাবে তাদের কাছ থেকে এমন কোনো কিছু আমরা ক্রয় করব না, যা তাদের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। এই বিষয়গুলো এমন লক্ষ্য উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি বা ইসলামিক সংস্থার পক্ষে আমলে নেয়া সম্ভব নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী— চাই সে ব্যবসায়ী শ্রমিক অথবা যুবসমাজ কিংবা কোনো মুজাহিদ দল, যাই হোক না কেন।
মেধাবীদের প্রবন্ধে, কলমের কালিতে এবং কবি, বাগ্মী, গায়ক ও আবৃত্তিকারদের রচনায় যে শক্তি আছে, তা দিয়ে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে জাতির মাঝে সচেতনতা তৈরির বিষয়টি একটি দুই ধারী তলোয়ার। এগুলো শত্রুর মনোবলে গভীর ছুরিকাঘাত। এই আঘাত শত্রুর বাহুকে ধ্বংস করে দেয়। অন্যদিকে এসবের দ্বারা আমাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়, আমাদের সংহতি বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই ‘শহীদদের নেতা’ বলা হয়েছে হামজা বিন আব্দুল মুত্তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং এমন ব্যক্তিকে, যিনি জালিম শাসকের সামনে সত্য উচ্চারণ করেন, তাকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বারণ করেন, ফলে ওই জালিম শাসক ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করে।
আমাদের মুখের অভিব্যক্তি, আমাদের প্রতিবাদ মূলক অবস্থান, জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবহারিক ধর্মঘট এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের অবস্থানগুলি নাগরিক অবাধ্যতার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয়, কারখানা, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, কোম্পানি, গ্রামীণ এলাকা, খামার ইত্যাদিতে মানুষের জমায়েত ছাড়া এখন আর উপায় নেই। এই সমস্ত ক্ষেত্রে অ্যাকটিভিটি দুর্নীতিবাজ সংস্থাগুলোর পতনের জন্য যেকোনো ভূমিকম্পের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের জন্য ঈমানের দুর্বলতম স্তর হচ্ছে পশ্চিমা পণ্য এবং জায়নবাদী কোম্পানিগুলিকে বয়কট করা... সেগুলি হোক খাদ্যদ্রব্য, মিষ্টান্ন, পানীয়, পোশাক, প্রযুক্তি, বিমান, গৃহস্থালি জিনিসপত্র, গাড়ি, ঘড়ি... ইত্যাদি যাই হোক না কেন। বিশ্বের যেকোনো স্থানে কোনো মুসলিম অথবা দুর্বল ব্যক্তি নিজের সাধ্যের ভেতর যেকোনো প্রচেষ্টাকে যেন ছোট করে না দেখে। কারণ অনেক সময় ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগ ও কর্ম-প্রচেষ্টা রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তন এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন বাস্তবতাকে হটিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইচ্ছাশক্তি ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। এই কারণেই ইতিহাস এমন ব্যক্তিদের নামকে অমর করে রেখেছে এবং তাদের নৈতিক পথ, জিহাদী বীরত্ব, গেরিলা ক্রিয়াকলাপ এবং আত্মত্যাগের গল্পগুলি অনুসরণীয় করে রেখেছে। দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সে সমস্ত ঘটনা থেকে আমাদের মনোবল দৃঢ় হয় নিঃসন্দেহে।
ছুরি, ম্যাচ, পিস্তল, মাল্টুফ বোতল, রান্নার গ্যাস... এমনকি পাথর; এগুলো কার্যকরী এমন পুরানো অস্ত্র যা হৃদয়ের সাহসিকতা এবং বহনকারী হাতের শক্তি অনুযায়ী নিজের কার্যকারিতা উপযোগিতা ও চমৎকারিত্ব প্রমাণ করে শত্রুর অবস্থানকে একেবারে নাড়িয়ে দেয়। ১১ সেপ্টেম্বরে ১৯ জন বীর এবং তাদের পেছনে থাকা বাণিজ্যিক সরঞ্জামগুলো জীবনঘাতী অস্ত্রে পরিণত হয়েছিল। অতীতে একটি প্রবাদ চালু ছিল, (যার বাংলা হচ্ছে) “তরবারি তার ধারে নয়, বরং বহনকারী বাহুর ভারে কাটে।” যখনই তরবারি ইহুদীবাদী শত্রুর কোনো স্বার্থের উপর আঘাত করে, তখনই এটি বিপ্লবের সলতে প্রজ্বলিত করে মুক্তির পথে নিয়ে যায় এবং সারা বিশ্বের দুর্বলদেরকে পৃথিবীর উত্তরে অবস্থিত ইহুদীবাদী অত্যাচারীকে আঘাত করতে উদ্বুদ্ধ করে।
জায়নবাদী অর্থনৈতিক যেকোনো স্বার্থ নাগালের মধ্যে পাওয়া গেলেই তার ওপর আঘাত করতে হবে। চাই সেগুলো কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি কিংবা রাষ্ট্রের মালিকানাধীন হোক অথবা ইহুদী, আমেরিকান, ইংরেজ, ফরাসি, অথবা জার্মান স্বার্থ হোক। এর দ্বারা জায়নবাদী শত্রুর মিত্রদের নরম পেটে আঘাত লাগবে। এই আঘাতগুলো ইহুদীদের জন্য তাদের সমর্থনকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করবে এবং তাদের ভূমিতে যুদ্ধ-বিরোধীদের সাথে অভ্যন্তরীণ সংঘাত তৈরি করবে। তখন জনগণ বিক্ষোভ করে আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করতে চেষ্টা করবে।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো মুসলিম অথবা দুর্বল ব্যক্তি যদি এই ব্যাপারে অবহেলা করে তবে তা পাপ বলে গণ্য হবে। কারণ ইহুদীরা শিশু, নারী, বৃদ্ধদের হত্যা করেছে, হাজার হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে, পুরো জনবসতি (হাসপাতাল, বাড়ি, সরকারি বিভাগ ইত্যাদি) ধ্বংস করেছে, কিছুই বাদ রাখেনি। তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের কল্পনার মাত্রাকেও হার মানিয়েছে। ধারণা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই অপরাধীদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য আমরা যা করব, আমাদের সেই কার্যক্রমকে সীমিত করার মতো কোনো রেডলাইন এখন আর নেই। ইহুদীবাদীদের সমস্ত কিছু এখন আমাদের টার্গেট। যেকোনো জায়গায় যেকোনো কিছু হাতের নাগালে পেলেই আত্মমর্যাদাশীল মুসলিম নিজের রব, নিজের দীন ও মুসলিম ভাইদের প্রতিশোধ হিসেবে তাতে আঘাত করবে। তাদের সঙ্গে তাদের অনুরূপ আচরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُواْ بِمِثۡلِ مَا عُوقِبۡتُم بِهِۦۖ وَلَئِن صَبَرۡتُمۡ لَهُوَ خَيۡرٞ لِّلصَّٰبِرِينَ
“আর যদি তোমরা শাস্তি দাও, তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দেবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। তবে তোমরা ধৈর্য ধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্য সেটা অবশ্যই উত্তম।” [সূরা নাহল ১৬:১২৬]
এই ইহুদী গোত্র ও জাতির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাদের যেকোনো সম্মিলিত অবস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বিলুপ্ত হতে বাধ্য, নিকট ভবিষ্যতে হোক কিংবা দূর ভবিষ্যতে। আমাদের এমন সহানুভূতির কাছে যেন আমরা প্রতারিত না হই যে, তারা আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালামের বংশধর। কারণ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দুজন পুত্র সন্তান ছিল। তাদের জন্য তিনি দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
۞ وَإِذِ ٱبۡتَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِـۧمَ رَبُّهُۥ بِكَلِمَٰتٖ فَأَتَمَّهُنَّۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامٗاۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِيۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهۡدِي ٱلظَّٰلِمِينَ
“আর স্মরণ করুন, যখন ইবরাহীমকে তাঁর রব কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, অতঃপর তিনি সেগুলো পূর্ণ করেছিলেন। আল্লাহ্ বললেন, “নিশ্চয় আমি আপনাকে মানুষের ইমাম বানাবো।” তিনি বললেন, “আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও?” (আল্লাহ্) বললেন, “আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদেরকে পাবে না।” [সূরা বাকারা ০২:১২৪]
আল্লাহর নবী হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের উত্তর পুরুষরাই হলো ইহুদী। তাদের উপরেই আল্লাহর গযব এবং তাদের ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন:
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْۖ وَلَتَجِدَنَّ أَقۡرَبَهُم مَّوَدَّةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّا نَصَٰرَىٰۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّ مِنۡهُمۡ قِسِّيسِينَ وَرُهۡبَانٗا وَأَنَّهُمۡ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ
“অবশ্যই মুমিনদের মধ্যে শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিকদেরকেই আপনি সবচেয়ে উগ্র দেখবেন। আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’ মানুষের মধ্যে তাদেরকেই আপনি মুমিনদের কাছাকাছি বন্ধুত্বে দেখবেন, তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসার বিরাগী রয়েছে। আর এজন্যও যে, তারা অহংকার করে না।” [সূরা মায়েদা ০৫:৮২]
আল্লাহ তাদেরকে একটি গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শেষ যুগে আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে বৃক্ষ ও পাথরকে পর্যন্ত উদ্বুদ্ধ করেছেন তাদেরকে ধিক্কার জানানোর জন্য। আল্লাহর হুকুম থেকে তারা কিছুতেই পলায়ন করতে পারবে না, কারণ সেই দিন অতি আসন্ন। তাদের অপরাধ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দেখে পাথর ও বৃক্ষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে। আল্লাহর এবং তার বান্দাদের ব্যাপারে তাদের ধৃষ্টতা ও দুঃসাহসে, তাদের বিশৃঙ্খলা-অনাচার, অনর্থ সৃষ্টি এবং গোটা বিশ্বে ধ্বংসযজ্ঞ বিস্তারের ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউই নীরব থাকবে না।
***
উত্পাদন:
পুলিশি কর্তৃত্বাধীন দেশগুলোতে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক এবং এমনকি ড্রোন কেনা কঠিন হতে পারে, তবে অনেক জিহাদী সরঞ্জাম তৈরির তথ্য পাওয়া যেতে পারে সহজে। সৃজনশীল মস্তিষ্কের অধিকারীরা কিছু সাধারণ সরঞ্জামকে প্রাচীন অস্ত্রে উদ্ভাবন বা রূপান্তর করতে পারেন।
আলহামদুলিল্লাহ আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই দৃঢ়সংকল্পের অধিকারী, যারা অজ্ঞতা পরিহার করছেন। তারা নিষ্ক্রিয়তা কিংবা অবহেলার অজুহাত খোঁজ করছে না; বরং তারা পরিশ্রমী। গোটা বিশ্ববাসীকে মানব-সভ্যতার সঠিক রাজপথে ফিরিয়ে আনার জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই উম্মাহর নেতৃত্ব নিশ্চিতকরণে তারা কাজ করে যাচ্ছে। মানবজাতি তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিজেদের সৃজনশীল ধারণা দিয়ে অনুপ্রাণিত করে, বিশেষ করে সামরিক শিল্পায়নে। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে এই উম্মাহর সন্তানেরা অবরোধের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও আমাদের শাসকদের দ্বারা প্রচারিত ইহুদী ট্যাঙ্কের বিভ্রমকে উড়িয়ে দিয়ে আল-ইয়াসিন 105 ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। অথচ কাপুরুষ রাষ্ট্রনায়কেরা অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে ফিলিস্তিনে এবং বিশ্বের সর্বত্র আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াবার ব্যাপারে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই একথা মুসলিম উম্মাহর সামনে তুলে ধরার জন্য কত উপায় অজুহাত খোঁজ করে যাচ্ছে। এমনকি যদি তারা তাদের সম্পদকে অনৈতিক বিনোদন খাতে ব্যয় না করতো যেমনটা করেছে মুনাফিক বিন সালমান এবং তার দালাল শায়খের পুত্র (তাদের উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ!) ; তার পরিবর্তে সামরিক শিল্পায়নের খাতে ব্যয় করতো, তাহলে এই উম্মাহ্ আরো বেশি শক্তিশালী, বিশ্বের মানচিত্রে আরো অধিক প্রভাব বিস্তারকারী এবং শত্রুদের অন্তরে আরো অধিক ভীতিসঞ্চারকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকতো।
গাজা ভূখণ্ডে আপনাদের ভাইয়েরা ম্যানুফ্যাকচারিং ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক, যেন আমরা তাদের পথে চলতে পারি।
গোটা বিশ্বে উম্মাহর সন্তানদের সামনে অবারিত সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম, উপকরণ সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণে তৈরি ও সংরক্ষণ করে রাখার। এই কার্যক্রম চলতে থাকবে যতদিন এগুলো বের করার এবং ব্যবহার করার প্রয়োজন দেখা না দেবে।
আল্লাহ তাআলা শায়খ উসামা বিন লাদেনের পিতা মুহাম্মাদ বিন লাদেনের ওপর রহম করুন, যিনি জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার জমা করে রেখেছিলেন। আফগানিস্তানে যখন জিহাদের ডাক এলো, মুজাহিদদের হাতে সর্বপ্রথম যা তিনি দিয়েছিলেন তা ছিল সেই ১০ মিলিয়ন ডলার।
***
স্টোরেজ (ডিপো/গুদাম/অস্ত্র ভাণ্ডার):
এমনকি আজও ব্যক্তি পর্যায়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগগুলো নষ্ট করা উচিত নয়। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীন প্রতিটি ব্যক্তির উচিত এমন অস্ত্র কিনে রাখা, যা দুর্নীতিবাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণশত্রু এবং জালিম শাসকদেরকে প্রতিহত করবে। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এটি সশস্ত্র জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ। সরকারগুলো যদি প্রজা ও জনসাধারণের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হতো তাহলে তাদেরকে সশস্ত্রভাবে গড়ে তোলাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতো। তাই আমি বিশ্বাস করি ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের পর আমাদের শত্রুদেরকে সবচেয়ে বেশি ভীত সন্ত্রস্ত করে যে বিষয়টা, তা হলো এই উম্মাহর সন্তানদের হাতের অস্ত্র। এ কারণেই শত্রুরা সর্বপ্রথম যে বিষয়টার সুযোগ সন্ধান করতে থাকে, তা হলো আমাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়া, আমাদের দেশগুলোতে সামরিক শিল্পায়ন কার্যক্রম ব্যাহত করা এবং সামরিক প্রযুক্তির পথে যেকোনো প্রচেষ্টা বিনষ্ট করে দেয়া। এ কারণে তারা বিভিন্নভাবে তাদের তাবেদার নামধারী মুসলিম শাসকদেরকে চাপ সৃষ্টি করে এবং হুকুম দিতে থাকে। শাসকেরা তাদের হুকুম মতোই কাজ করতে থাকে। এভাবেই শত্রুরা মুসলিমদের জাতীয়তা ও সার্বভৌমত্বের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং মুসলিমরা সম্ভাব্য দীর্ঘ সময় যাবৎ দুর্বলই থেকে যায়।
অতএব, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনা প্রয়োজন এবং উপযুক্ত সময়ে ব্যবহারের আগ পর্যন্ত এগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। নিষ্ঠাবান লোকেরা কীভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংরক্ষণ করা যায়, সে সম্পর্কে অনেক তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাবে। আমাদের দেশের লোকদের মধ্যে এমন দক্ষ কর্মী খুঁজে বের করতে হবে, যারা কৃত্রিম দেয়াল, গোপন কক্ষ এবং গুপ্ত আস্তানা তৈরিতে পারদর্শী। সরঞ্জামাদির ভাণ্ডার ভূগর্ভস্থ হলে আর্দ্রতা বা ভূগর্ভস্থ জল থেকে সরঞ্জাম সমূহ এবং গোটা এরিয়া রক্ষা করার জন্য কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারেও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
এই বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি উম্মাহর সন্তানদের জন্য বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে পরিবর্তনকামীদের জন্য। এই ক্ষেত্রে চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা এবং সর্বাত্মক শ্রম ব্যয় করাটা পরিবর্তনমুখী অনিবার্য শক্তি তৈরি ও প্রস্তুতি গ্রহণের পূর্ব শর্ত ও সূচনা স্বরূপ।
জরুরিবিষয়গুলো আমরা আরেকবার দেখে নেই:
অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম থাকা... সেগুলো যথাস্থানে সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা... সেগুলো কাজের উপযুক্ত করে তৈরি ও মানোন্নয়নের জন্য কাজ করা।
লোহা, আগুন এবং প্রযুক্তিতে ভালো দখল থাকার কারণে ইহুদীবাদ এতদিন ধরে যা ইচ্ছা করতে পেরেছে। যখন আমাদের জনগণের হাত অস্ত্র শূন্য হয়ে গিয়েছে তখন এই উম্মাহ সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।
***
মুক্তির ধারণা:
(গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি নিজের কার্যক্রমের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করবেন অথবা জান বাঁচিয়ে পালিয়ে যাবেন) এই ধারণার সাহায্যে মানুষের সঠিক নৈতিক মূল্যবোধ বিকৃত করে দেয়া হয়েছে এবং লজ্জার পোশাক জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মুক্তি লাভ কখনো মূল লক্ষ্য হতে পারে না; প্রকৃত লক্ষ্য তো হচ্ছে ইকমাতে হক বা সত্য প্রতিষ্ঠা। আর আত্মত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ হলো সত্য প্রতিষ্ঠার পথ ও পন্থা। গৌরব আর মর্যাদা হচ্ছে এই কাজের জন্য প্রাপ্ত আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিদান ও পুরস্কার। এতটুকু বিষয় যদি সততার সাথে কেউ গ্রহণ করতে পারে তাহলেই মুক্তি। এ পথেই মানবজাতি মুক্তি লাভ করবে। স্বার্থ হাসিলের জন্য সুবিধাবাদী হওয়া এবং অন্যের সমস্যার তোয়াক্কা না করা খুবই বাজে একটা রোগ। এটা যেকোনো ভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর। এটাই বখাটে লোকদের কাজের রূপরেখা। কারণ তারা যেকোনো পন্থায় মুক্তি লাভ করার জন্য চেষ্টা করে আর এ ক্ষেত্রে অন্যদের সমস্যার কথা তারা চিন্তা করে না। তাদের কাছে মাধ্যম কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বরং উদ্দেশ্যটাই আসল। তাদের কাছে সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘মুক্তি’। এ কারণেই তারা বেঁচে থাকার মায়ায় নিজেদেরকে, তাদের জিহ্বা, কলম এবং দেহকে ক্ষণস্থায়ী পণ্যের বিনিময়ে অত্যাচারী শাসকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবে তুচ্ছ জিনিসের কারণে তারা জীবনের মূল মর্ম থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে দুনিয়াতে তারা লাঞ্ছনার জীবনযাপন করে, আখিরাতের জীবনও তাদের ধ্বংস হয়। এটি এমন একটি কলঙ্ক যা কখনো মোছা যায় না। এটা থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে না। যার সঙ্গে এই কলঙ্ক লেগে যায় সে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার বংশধরেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুচ্ছ লোকেরা কি এ কথা জানে?
ইসলাহী অঙ্গনের লোকেরা বলেন, যারা ধ্বংস হয়েছে তাদের বিষয়টা আশ্চর্যজনক নয় যে, তারা কিভাবে ধ্বংস হয়েছে! বরং আশ্চর্যজনক হলো মুক্তি লাভকারীদের বিষয়টা; যে, তারা কীভাবে মুক্তি লাভ করেছে? এই কথা থেকে মুক্তি লাভের প্রকৃত মর্ম উঠে আসে এবং আমাদের সামনে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। কারণ জান্নাতীরা দুনিয়াতে নিজেদের রবের সন্তুষ্টির জন্য চেষ্টা পরিশ্রম করে কাজ করেছে আর কেবল তারাই জাহান্নামে ধ্বংস হবার হাত থেকে মুক্তি লাভ করেছে— চাই তাদের দুনিয়ার জীবন সংক্ষিপ্ত হোক কিংবা দীর্ঘায়িত। আমাদের সকলেরই তো মৃত্যু অবধারিত। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক প্রতিটি দিন আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছি। তাই প্রকৃত মুক্তি লাভকারী হলো ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর জন্য দুনিয়াকে ব্যয় করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে।
***
প্রতিরোধ:
প্রতিরোধের দিগন্ত উন্মুক্ত। এই পথ সীমাবদ্ধ করার কোনো উপায় নেই। শত্রু যেই হোক না কেন, তাকে প্রতিহত করার কোনো না কোনো উপায় অবশ্যই রয়েছে। এক সময় ছোরা ও তরবারি একটি প্রতিরোধক অস্ত্র ছিল। তখন ঘাতকেরা তাদের রাজনীতিবিদ ও রাজকুমারদের ঘাড়ে সেগুলো ব্যবহার করত। একসময় আবার পারমাণবিক বোমা হলো একটি প্রতিরোধক অস্ত্র। তখন সেই অস্ত্র দিয়ে জাপানের শহরগুলিতে আঘাত করা হয়েছিল— সেই জাপান আজও স্বাধীনতা হরণকারীদের কাছে পরাধীন রয়েছে। সব যুগেই দেখা গিয়েছে শত্রুদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত করার কোনো না কোনো অস্ত্র অবশ্যই বিদ্যমান ছিল, আর সাহসিকতার সঙ্গে সেই অস্ত্র ব্যবহার করে তার কার্যকারিতা দেখানো, ময়দানের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করা এবং শত্রুপক্ষের শক্তি ধ্বংস করা সম্ভব ছিল।
কার্যকারিতা দেখানোর জন্য ওই জিনিসগুলো লাগবে যা শত্রুকে প্রতিহত করবে। এগুলো ব্যবহার করতে হবে সাহসিকতার সাথে। আর প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে আমাদের জনগণকে দীক্ষিত প্রশিক্ষিত ও অস্ত্রসজ্জিত করার মাধ্যমে। আর শত্রুর শক্তি ধ্বংস করতে হবে শুধু অগ্র অভিযানের মাধ্যমে। আর এই বিষয়গুলো কিছুতেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব না, যতক্ষণ আমরা আমাদের দীন ইসলাম, ইতিহাস-ঐতিহ্য, আচার-আচরণ ও ইসলামী ভাবধারায় ফিরে না আসব। এ বিষয়গুলো ছাড়া আমরা অচিরেই সকল প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রাসে পরিণত হব।
আমাদের ভূখণ্ডে থাকবে সশস্ত্র উম্মাহ। শত্রুর অস্তিত্বের গভীরে আঘাত করবে একাকী নেকড়ে। শত্রু ভূমিতে বসানো হবে অপারেশনাল সেল, মুজাহিদীন গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোকে, তাদের বিচিত্র অপারেশন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডমূলক অপারেশন, যুগের প্রযুক্তিকে অপ্রত্যাশিতভাবে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রে রূপান্তর করা, স্ট্র্যাটেজিক টার্গেটে শহীদি তথা আত্ম-উৎসর্গমূলক অপারেশন, বিস্ফোরকের শক্তির সদ্ব্যবহার। এগুলি সবই প্রতিরোধক অস্ত্র, যা শত্রুর কার্যকারিতা সীমিত করে, তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলে এবং তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ছিন্ন করে দেয়। সশস্ত্র উম্মাহ্ এমন একটি জাতি, যার সংকল্প প্রতিহত বা পরাজিত করা যায় না — যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অস্ত্র বহন করে আছে; সেগুলো সোপর্দ করে না দিচ্ছে, যতক্ষণ সেগুলো তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া না হচ্ছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যতক্ষণ তারা জিহাদের পথে টিকে থাকছে। তবেই ইনশাআল্লাহ বিজয় এক সময় না একসময় অবশ্যই আমাদের পদচুম্বন করবে।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে খুনি (নেতানিয়াহু) যখন পুরোপুরি পরাস্ত হবে, তখন বাইডেন, তার পরিবার এবং তার বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাটিক বন্ধু অপমানিত হবে, তাদের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং তাদের মাঝে থাকবে ঐ সমস্ত লোকের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ, যারা ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। পরবর্তী নির্বাচনের আগে ট্রাম্পকে হত্যা করা ছাড়া বাইডেনের সামনে আর কোনো উপায় নেই। তারপরে মুক্তিকামী টেক্সাস নিজের এলাকাগুলো নিয়ে স্বাধীন হবে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথা পশ্চিমের মিথ ভেঙ্গে যাবে। এরপর থেকে পুনরায় আর কখনোই আমরা আমেরিকানদের সম্পর্কে বড় বড় কথা শুনবো না। যেমনিভাবে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কারণে কাবুলের পুতুল সরকার আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, তেমনি অচিরেই ইহুদীবাদী সত্তা ইসলামিক আগ্রাসনের গলনাধারে গলে যাবে। আমরা ফিরে পাব কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা ও শান্তি।
এটা গণহত্যামূলক লড়াই। এ লড়াইয়ে শুধু তারাই বাঁচতে পারবে, যারা শত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য, তার অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য, ময়দানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং শেষ পর্যন্ত শত্রুর বাহিনীকে নির্মূল করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত থাকবে। একই সময়ে এবং তার আগে ও পরে ইসলামের দাওয়াতের ময়দান উন্মুক্ত থাকবে; এমন এক বিশ্বে এমন একটা সময়ে দাওয়াতের ময়দান কখনোই বন্ধ করা যাবে না, যেখানে যোগাযোগ ও গণসংযোগই হলো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও প্রাধান্য প্রাপ্ত বিষয়। সর্বকালের জ্ঞানী ব্যক্তিরা সময়োপযোগী এক্সিট স্ট্রাটেজি (Exit strategy) উদ্ভাবন করেছে, তবে ফিলিস্তিন দখলকারী ইহুদীদের ব্যাপারে সর্বোত্তম এক্সিট স্ট্রাটেজি (Exit strategy) অনুমোদন দিয়েছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ইহুদীদের ব্যাপারে হযরত সাদ ইবনে মুআজ রাযিয়াল্লাহু আনহুর সিদ্ধান্ত সঠিক বলে ঘোষণা করেছিলেন। সাদ ইবনে মুআজ রাযিয়াল্লাহু আনহু বনু কুরাইযার ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন “তাদের যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদেরকে হত্যা করা হবে, তাদের ঘরের নারীদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের সম্পদ গনীমত হিসাবে নিয়ে যাওয়া হবে।” মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন: “আপনি তাদের ব্যাপারে সাত আসমানের উপর থেকে মহান মালিকের বিচার অনুযায়ী ফয়সালা করেছেন।”
জীবনের ব্যাপারে ইতিবাচকতা এবং জীবনমুখী নির্মাতাদের সঙ্গে মৃত্যুর কারিগরদের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
***
(বাকী অংশ কমেন্ট বক্স দেখুন)
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
روابط بي دي اب
PDF (1.09 MB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [১.০৯ মোগাবাইট]
https://share.eu.internxt.com/d/sh/file/19d89ca9-74cd-4999-bac3-5d5f92645512/57dff9bfedc62f2d70a6843632714c4cbb0e7ce5baad0b66c8 67a8d0908389fe
https://mega.nz/file/LddiVZKQ#5bwlQT0GIQAApOibcacsaaoTGxX5O39xqMygJyFtx Bg
روابط ورد
WORD (679 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৬৭৯ কিলোবাইট]
https://secure.ue.internxt.com/d/sh/file/2918fd7a-dc14-4159-bd73-f2e39cb18e17/a871a498fe7f75e396847a5cdc7a72c3bb30571aaed357f4b0 d16e561cc160ee
https://mega.nz/file/bQkCwY7J#_3VrR62xm3oSUTxFMKsCHFlbjyG0_D_GaXKpjYYsN yw
روابط الغلاف- ١
book cover [2.8 MB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [২.৮ মেগাবাইট]
https://share.ue.internxt.com/d/sh/file/a17f5b29-b0b3-4e47-91eb-da1cc143a44e/1417942a74f221874df36c4f360dc829e8bfd5965626ff1924 5108d5dae343a2
https://mega.nz/file/3FVXkDjL#88s9eOYFI57Jn2CdphFeoiYAZDeGaF_F4QqHyfDLU Cw
روابط الغلاف-٢
banner [4.6 MB]
ব্যানার [৪.৬ মেগাবাইট]
https://share.ue.internxt.com/d/sh/file/7ef2b36f-f291-4665-b42d-327083c5ae7a/67aa81f3b5d59f96611e941f46be4a9a49ec88b314d3ae033e 90a6a8ac5d7bb4
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
هذه غزة ...
حرب وجود.. لا حرب حدود-٤
بقلم: سالم الشريف
এই তো গাজা...
গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয় বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (৪)
মূল: সালেম আশ শরীফ
This is Gaza...
A War of Existence, Not a War of Borders-4
Author: Salem Al Sharif
সূচীপত্র
ভূমিকা: 5
কিছু তথ্য উপাত্ত এবং সর্বশেষ সংবাদ : 8
মৈত্রী চুক্তি সমূহ: 9
সমকালীন যুদ্ধ সমূহ: 11
অর্থনৈতিক যুদ্ধ: 12
আকাশ পথে হামলার জটিলতা নিরসন: 13
দ্বিতীয়ত, জেট বিমান ও হেলিকপ্টার: 14
প্রশিক্ষণ ও সামরিক বাধ্যতামূলক নিয়োগ: 16
লক্ষ্যগুলির সাথে মিথস্ক্রিয়া: 18
উত্পাদন: 22
স্টোরেজ (ডিপো/গুদাম/অস্ত্র ভাণ্ডার): 23
জরুরি বিষয়গুলো আমরা আরেকবার দেখে নেই: 24
মুক্তির ধারণা: 25
প্রতিরোধ: 26
পারস্পরিক বার্তা বিনিময় ও বিরতি : 28
সান্ত্বনা এবং সুসংবাদ. 30
উপসংহার: 32
গাজার বাস্তবতা সম্পর্কে ইয়েমেনের কবি ওসামা যা লিখেছেন তার চেয়ে বেশি সত্য.. 33
সঠিক আর কি হতে পারে : 33
بسم الله الرحمن الرحيم
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
এই তো গাজা... গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয়
বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (4)
ভূমিকা:
ইহুদীবাদী চক্র যখন ফিলিস্তিনে আশ্রয় নেয় তখন গোটা পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। কিন্তু এটা তাদের প্রতি ভালোবাসার কারণে নয়। কারণ তাদের পরস্পরে এমন বিরোধ রয়েছে যা লজ্জাজনক। কিন্তু তবুও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো গোটা বিশ্বে মুসলিমদের প্রভাব প্রতিপত্তি যেন অবশিষ্ট না থাকে— যেই প্রভাবের মাধ্যমে তারা আল্লাহর সাজে পৃথিবীকে সজ্জিত করবে। ইতিহাসের এই পর্যায়ে শয়তানিমূলক এই মৈত্রী গোটা বিশ্বে এই উম্মাহর সন্তানদের মাঝে এবং দুর্বল জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে সুস্থ প্রকৃতির ব্যক্তিদের মাঝে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে গোটা বিশ্ব ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাধীন হবে না এবং বিশ্বের জনগোষ্ঠী ততক্ষণ পর্যন্ত উপযুক্ত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের পতন ঘটানো না হবে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে তাদেরকে অপসারিত করা না হবে। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব মানবতার সঙ্গে যা করেছে, বিগত দুই শতাব্দী যাবৎ মানবজাতির মান সম্মান অধিকারের প্রশ্নে তারা যা কিছু করেছে সেগুলো বর্ণনাতীত জঘন্য অপরাধ। তারা যেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের দাবি করে থাকে এবং গোটা বিশ্বে মিথ্যাচারের বাজারে নৈতিকতার কথা বলে নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে উন্নত ও প্রগতিশীল প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে, তারা নিজেরাই সে নৈতিকতার ওপর আঘাত করে এসেছে প্রতিনিয়ত। তাদের ভাবখানা এমন, তারাই একমাত্র সত্যের ঠিকাদার, সত্য তাদের মালিকানাধীন; তারা যেমন বিচার করবে সেটাই ন্যায় বিচার। তারা যুবতী নারীদেরকে ব্যবহার করে অন্যদেরকে দিয়ে যা করাবে সেটাই ইনসাফ। সত্য সঠিক নির্ধারণে অন্যদের কোনোই অধিকার নেই। সবার কাজ হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী মনিবদের কথা নিঃসংকোচে মেনে নেওয়া। এইতো সেদিন তাদের সেনাবাহিনী উপনিবেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু চলে যাবার আগে কলোনিগুলোতে এমন নেতৃবৃন্দকে বসিয়ে দিয়েছে যারা মনিবদের নামেই শাসন করে, স্বজাতিকে লাঞ্ছিত করে, জুলুম নির্যাতন করে এবং মনিবদের জন্য নিজের দেশের জনগণের উপর চড়াও হয়। উম্মাহর শত্রুদের স্বার্থে তারা ঠুনকো কারণ দেখিয়ে হেসে খেলে মুসলিমদের সম্পদ জবরদখল করে শত্রুদের হাতে তুলে দেয়। অন্ধকার যতই গাঢ় হোক, জুলুম নির্যাতন যতই দীর্ঘ হোক, পরিবর্তন সাধনের জন্য সত্যের বাহিনী আসছে। ইউরোপ এখন মৃত্যুমুখে। আমেরিকা আফগানিস্তানের পরাজয়ের পর পতনের দ্বারপ্রান্তে। যদি উপসাগরীয় অঞ্চলের রশি তাদের হাতে না থাকতো তাহলে গোটা বিশ্ব তাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে যেত। আর যারা পশ্চিমাদের প্রতি ঝুঁকেছে, তাদের কাছে নিজেদের বিবেক বন্ধক দিয়েছে, আসলে তাদের মানবিক স্বভাব-বৈশিষ্ট্য বিকৃত হয়ে গেছে। আল্লাহর ক্রোধ তাদের ওপর, তিনি তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিয়েছেন। এদের মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুসলিম অঞ্চলগুলোর রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ। তাদের শীর্ষে রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের শাসকবৃন্দ এবং আরো বিশেষভাবে বললে আরব আমিরাতের শয়তান এবং তার ভ্রাতারা।
নেতানিয়াহু সেই পথেই হাঁটছে, যে পথে সাবেক ইহুদী খুনিরা হেঁটেছে। অতএব এমনটা আশা করা উচিত হবে না যে, নেতানিয়াহু সিরিয়াসভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য উদ্যোগী হবে এবং মুজাহিদদের হাত থেকে ইহুদী বন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্য আলোচনার টেবিলে আসবে। কারণ যেই অজুহাতে তারা গণহত্যা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে তা হলো, মুজাহিদিদের হাতে বন্দীরা এখনো বেঁচে আছে। এখন বন্দী বিনিময় কার্যক্রম যদি সম্পন্ন হয়ে যায় তাহলে শুধু এতটুকুর মাধ্যমেই যুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য পূরণ হয়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ আবার ইহুদী সত্তার অভ্যন্তর থেকে (আংশিক জায়গা থেকে) ক্ষোভের ঢিপি ধসে পড়বে, বিক্ষুব্ধ হয়ে যাবে একটা অংশ। এ কারণেই সঙ্গত ভাবে সে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়ে টালবাহানা করছে। এই সুযোগে এমন নতুন কোনো লক্ষ্য খুঁজে বেড়াচ্ছে, যা সামনে রেখে লড়াইয়ের সময়সীমা আরও দীর্ঘায়িত করা যাবে। এভাবেই সে নিজের পদে বহাল থাকতে চাচ্ছে এবং তার ইহুদী প্রতিপক্ষদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখছে। এখন প্রশ্ন হলো, তার পক্ষে কি এই অঞ্চলকে এমন কোনো লড়াইয়ে প্রবেশ করানো সম্ভব হবে, যে লড়াই সম্পর্কে কারো জানা নেই— তা কতদিন পর্যন্ত চলমান থাকবে এবং যুদ্ধের আগুন প্রজ্জ্বলনকারীরা কবে নিবৃত্ত হবে? তবে কি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে যাবে? খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্ন: যে শক্তিগুলো গোটা বিশ্ব পরিচালনা করছে, তারা কি মানচিত্রে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে? বিপ্লব ও পরিবর্তন সাধনের জন্য যুদ্ধই একমাত্র পদ্ধতি ও পন্থা? নাকি তারা অন্যান্য উপায়কে প্রাধান্য দেবে? এছাড়াও গোটা বিশ্বের দেশগুলো কি এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত? কোন্ রাষ্ট্রগুলোর বাস্তবেই এত আগ্রহ অনিশ্চিত এমন যুদ্ধে প্রবেশ করার ব্যাপারে, যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে শেষ হবার আশা কেউ করতে পারে না? আর কত কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে চীন ও ভারতের মতো বিভিন্ন শক্তি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে? এখন একটি বিষয় হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো আফ্রিকায় তাদের আয় উপার্জনের অনেক উৎস হারিয়ে বসেছে। আর এখন তারা মৃত্যুর দিন গুনছে। এই অবস্থা সামনে রেখে তারা আবারো আগ্রাসনের পথে যাবে? নাকি আফ্রিকার দেশগুলো ইউরোপের আগ্রাসন থেকে এখন সুরক্ষিত? পতনের মুখে আমেরিকার পূর্বের সবুজ বাগান কি এবার তার হাতছাড়া হয়ে যাবে, নাকি আমেরিকার ইচ্ছামত সবুজ কাননের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে? তেলের প্রবাহ কি চলমান থাকবে, নাকি লড়াইয়ে অপরপক্ষের কৌশলগত লক্ষ্য হবে তেলের খনি ও কূপগুলো ধ্বংস করা অথবা সেগুলোর কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেওয়া, যেন বিরোধী বড় শক্তিগুলো বঞ্চিত হয়? সর্বশেষ প্রশ্ন হলো, সীমাহীন, নিয়ন্ত্রণহীন, অনৈতিক একটি যুদ্ধের পর অস্তিত্বের রূপরেখা কিরূপ হবে?
এই অবস্থায় সমস্ত ঘটনা প্রবাহকে শুধু সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠ করাটা ভুল। প্রতিটি ঘটনাকে কৌশলগত, স্ট্র্যাটেজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা একান্ত জরুরি। এমনিভাবে শুধু রাষ্ট্র বা আঞ্চলিক সীমানা ধরে নিয়ে ঘটনাগুলো পাঠ করাটাও ভুল। যে সামরিক শিবিরগুলো গঠিত হচ্ছে, সেগুলো একসঙ্গে আমাদের দেখতে হবে। সামরিক শিবিরগুলোর কক্ষপথে যেই ছোট ও প্রভাবশালী শক্তিগুলো রয়েছে এবং আকর্ষণ বা বিকর্ষণ নীতি অনুসারে সামরিক শিবিরসমূহের কক্ষপথগুলোতে যেই শক্তিগুলোকে চলাচল করানো সহজভাবে সম্ভব, সেই ছোট ও প্রভাবশালী শক্তিগুলোকেও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
***
বিপ্লবের পথে কিছু দিক নির্দেশনা কিছু তথ্য উপাত্ত এবং সর্বশেষ সংবাদ :
সকল অভিজ্ঞতা থেকে একটা বিষয় জোরালোভাবে বোঝা যায়; সকল অঙ্গনে, সকল ময়দানে প্রস্তুতি ও বিজয়ের ক্ষেত্রে সফলতার একটি মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে তথ্য উপাত্তের প্রাচুর্য। সমস্ত তথ্য সামনে রেখে তবেই কোনো লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়। এর জন্য মৌলিক এমন কিছু তথ্যের একান্ত প্রয়োজন, যেগুলোর আলোকে লড়াইয়ের একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। সেই তথ্যগুলো সংগ্রহের জন্য লড়াইয়ের আগে, লড়াই চলাকালে এবং লড়াইয়ের পরেও কাজ করতে হবে। দিনে রাতে কখনো সেই তথ্যগুলো একত্র করার কাজ থামিয়ে রাখা যাবে না। তথ্যাবলী পূর্ণাঙ্গ, সর্বাঙ্গীন এবং সর্বব্যাপী হতে হবে। শত্রু কাঠামোর সকল অঙ্গ, শত্রুপক্ষের সকল প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংযোগসমূহ এবং নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তথ্য থাকতে হবে। কারণ যুদ্ধ শুধু আগুন আর আন্দোলনের ময়দানে সীমাবদ্ধ নয় বরং জীবনের সকল অঙ্গনেই যুদ্ধের প্রভাব থাকা উচিত। আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারা উচিত। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য আমাদের আলাদা সেল থাকতে হবে। যেই যুদ্ধ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই লড়াইয়ের পরিধি অনুপাতে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
শত্রুপক্ষ সম্পর্কে, শত্রুর ঘাঁটি সমূহ, বিশেষ করে ঘোষিত বা অঘোষিত গুপ্ত বিমান ঘাঁটি সম্পর্কে, তার গোলাবারুদ ডিপো, তার জ্বালানির ডিপো, সামরিক সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র, নেতৃত্ব, শত্রুর শক্তি ও দুর্বলতার বিভিন্ন পয়েন্ট, প্রভাব বলয়, তার নরম পেটে আঘাত করার দ্বারা কতটুকু প্রভাব সৃষ্টি হবে সে সম্পর্কে, তার মিত্র কারা তার প্রতিপক্ষ কারা আর তার ব্যাপারে কারা নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে তাদের সম্পর্কে, আমাদের অন্যান্য প্রতিপক্ষ সম্পর্কে, তাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতার ধরন ও পর্যায় সম্পর্কে, সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদের প্রতিপক্ষের প্রস্তুতি সম্পর্কে এবং আমাদের মিত্রদের সম্পর্কে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ সামরিক রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করা একান্ত জরুরি। লড়াইয়ের জন্য আমাদের জনগণ কতটা প্রস্তুত, তারা কতটা ধৈর্য ধারণ করতে পারবে, কি পরিমাণ ত্যাগ ও বিসর্জন তাদের দ্বারা সম্ভব, এগুলোও ভুলে গেলে চলবে না।
এটা একটা অস্তিত্বের লড়াই। এই লড়াইয়ে যতটা সম্ভব অধিক কৌশল ও দৃঢ় প্রত্যয় অবলম্বন করা জরুরি। প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি স্তরে যা করা উচিত, তা করতে হবে। সেই সাথে কৌশল অবলম্বনে শত্রুকে প্রতারিত করার এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর কষাকষির সুযোগ বাকি রাখতে হবে। শত্রুদের সঙ্গে যারা জোটবদ্ধ তাদের মাঝে বিভক্তি তৈরির চেষ্টা করতে হবে। মিত্র শক্তিগুলোর মাঝে পারস্পরিক বিভেদ-বিচ্ছিন্নতার বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধু তাই নয় বরং একটি দলের বিভিন্ন অংশের মাঝেও সেই বিভক্তি তৈরির চেষ্টা করতে হবে। কারণ যুদ্ধ শুধু লোহা আর আগুন দিয়ে হয় না। আরো অধিক সুস্পষ্ট ভাষায় আমরা বলতে চাই, সমাজের কোন কোন অংশের ওপর আঘাত না করলে অন্য অংশ হিংসার আগুনে পুড়তে থাকে এবং তাদের মাঝে শত্রুতা তৈরি হয়ে যায়। এভাবে তাদের বাহ্যিক একতা বিনষ্ট করে দেয়া এবং তাদের শক্তি দুর্বল করে দেয়া সম্ভব হয়।
বনি ইসরাঈলের নিজেদের মধ্যকার রাজনৈতিক লড়াই সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তের অপ্রতুলতার কারণে যুদ্ধ আশা ও ধারণার চেয়ে বেশি দীর্ঘায়িত হয়েছিল।
ইহুদীদের জনপ্রিয় আন্দোলনের প্রভাবের হ্রাস সম্পর্কে তথ্যের অভাবের কারণে বন্দীরা আর তুরুপের তাস হিসেবে বিবেচিত হয়নি। ২০০ দিনের যুদ্ধের পরে খুনি নেতানিয়াহু একটি বিনিময় চুক্তি করার আর কোনো অর্থ নেই। কারণ সে গাজার মুসলমানদের নির্মূলে যা করতে চেয়েছিল তা করেছে। এখন মুজাহিদদের উচিত তাকে এবং তার কট্টরপন্থী দলকে ভালো রকম শিক্ষা দেয়া।
***
মৈত্রী চুক্তি সমূহ:
এটা দুই ধারী অস্ত্র। এর কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাসের মাঝে যুদ্ধের সূচনাই মৈত্রীর অবসান। তাই প্রজ্ঞার দাবি হচ্ছে, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এবং তার চেয়ে বেশি সাবেক মিত্রদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেব আগেই কষে রাখা।
শত্রুর সঙ্গে ডিল করার চেয়ে মৈত্রী শিল্প বা বন্ধু বানাবার যোগ্যতা যে পক্ষের বেশি রয়েছে; সেই সাথে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যাপারে সজাগ থেকে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা সহকারে শক্তিশালী মৈত্রী নির্মাণের যোগ্যতা যে পক্ষের রয়েছে, তারাই আসলে বোধগম্য প্রতিকূলতা অনুপাতে দীর্ঘমেয়াদি একটি লড়াই চালিয়ে যেতে সক্ষম। এ বিষয়টা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সাফল্যের সম্ভাবনার প্রতি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। আসলে প্রতিকূলতা ছাড়া পথ চলা যায় না। আর সবচেয়ে বাজে ধরনের প্রতিকূল দশা হচ্ছে, দলের ভিতরেই কিছু লোক নিজেদের নার্সিসিজম বা আত্মতুষ্টি দ্বারা অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি নষ্ট করে। একতা ধরে রাখার জন্য এবং বিভেদ-বিভক্তি ও ব্যর্থতা থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে এজাতীয় ব্যক্তিদের হাত থেকে অবিলম্বে মুক্তি পাওয়া একান্ত জরুরি। তাদের স্বভাব পরিবর্তনের আশায় বসে থেকে অপেক্ষা করার পরিণতি হয়ে থাকে ভয়াবহ। যদি তাদেরকে সুযোগ দিতে থাকি, তাহলে একতা বিনষ্টের জন্য আমরাই দায়ী থাকবো। কখনো দলের অভ্যন্তরীণ এই বিচ্যুতি শত্রুপক্ষের তাবেদার হওয়া পর্যন্ত গড়িয়ে নেয়। মিত্রদের মাঝে রাজনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ ঘটা খুবই সুনিশ্চিত একটা ব্যাপার। সামাজিক বিভক্তির চেয়েও এটা বেশি জোরালো। তাই রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হবেই— আজ হোক কাল হোক, বিলম্বে হোক কিংবা অবিলম্বে। কারণ বিভিন্ন সম্পদ লেনদেন, বাজার ও নৌপথ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমনই এক অনিবার্য বিষয়, যা শত্রুদেরকে সহজেই আলাদা পথে দাঁড় করাবে। এছাড়াও আত্মমর্যাদা, অহংকার, নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো যেকোনো পক্ষকে একচেটিয়া হতে প্ররোচিত করে এবং যৌথ স্বার্থ রক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণেই লড়াই চলতে থাকে এবং চলবেই। কিয়ামত পর্যন্ত লড়াইয়ের স্থায়ী অবসান নেই। মানবজাতি এভাবেই বিলুপ্তি অভিমুখে হাঁটছে।
আমাদের সশস্ত্র মুসলিম জনসাধারণের মৈত্রী এমন এক প্রকল্প যা নির্মাণ করা এবং সফল করে তোলার জন্য চেষ্টা করা অনিবার্য। যে বিষয়ের ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হব তা শত্রুপক্ষের একতার ভিত্তি অপেক্ষা অনেক বেশি সুদৃঢ় ও সুসংহত। কারণ আমরা এমন এক উম্মাহ, যাদের রব একজন, যাদের দীন অভিন্ন, যাদের রাসূল এক, যাদের কিবলা এক, যাদের ধর্মগ্রন্থ অভিন্ন। এই উম্মাহর রাজনৈতিক পথ চলাটা মানবজাতির কল্যাণ অভিমুখী। এই উম্মাহর প্রতিটি দল-উপদল যেই পথে চলবে, যে পন্থা অবলম্বন করবে এবং বিশ্ববাসীর ব্যাপারে যে অঙ্গীকার পোষণ করবে, তা মানব-সভ্যতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এবং পৌত্তলিকদের কর্মকাণ্ড অপেক্ষা বহু গুণ উত্তম ও উৎকৃষ্ট। ইনশাআল্লাহ অচিরেই এমন একটা সময় আসবে, যখন আমরা নিজেদের প্রবৃত্তিকে পরাজিত করবো এবং আমাদের অনুচিত আশা-আকাঙ্ক্ষা চাপা দিয়ে এগিয়ে চলবো। স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শত্রুদেরকে পরাজিত করা তখন হবে শুধু সময়ের ব্যাপার।
***
সমকালীন যুদ্ধ সমূহ:
অমুখোমুখি যুদ্ধের দর্শনে (মিসাইল ও ড্রোন হামলা) সবচেয়ে নিকৃষ্ট দিক হলো এই যুদ্ধের মাধ্যমে জনসাধারণের স্থিতিশীলতা ধ্বংস এবং নাগরিকদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি বিনষ্ট করে দেয়া হয়। এই অবস্থায় জনসাধারণের উচিত তাৎক্ষণিকভাবে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা, যা শত্রুপক্ষের এমন পন্থা অবলম্বনে বাধার সৃষ্টি করবে। শত্রুপক্ষকে নিবৃত্ত রাখার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে জনসাধারণ শুধু হুমকি দিয়েই থেমে থাকবে না বরং শত্রুপক্ষের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক স্বার্থসমূহের ওপর জোরালো আঘাত হানবে। শত্রুর সামরিক ঘাঁটিসমূহ বয়কট করা, তাবেদারদেরকে নিশ্চিহ্ন করা এবং গুপ্তচরদেরকে চিহ্নিত করে অপসারণ করাও নাগরিক কর্তব্যের শামিল। এই কাজগুলো আমাদের ভূখণ্ডেও হতে পারে আবার যেই ভূখণ্ডগুলো থেকে তাদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ হয় সেখানেও হতে পারে। এই পদক্ষেপের কারণে ধারাবাহিক রক্তক্ষরণে খুব দ্রুত শত্রুর পতন ঘটতে বাধ্য, চাই শত্রুপক্ষ এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের সময় যত রকম প্রতিক্রিয়া দেখাক না কেন। যেকোনো মুসলিমের পক্ষে এবং বিশ্বের যেকোনো স্থানে সাহসিকতা, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষী যেকোনো দুর্বল ব্যক্তির পক্ষে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। এই সমস্ত পদক্ষেপের পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সে প্রতিষ্ঠানের ছায়াতলে জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হবে, নিজেদের প্রয়াসকে সমন্বিত করবে এবং জনজীবনের সকল সেক্টরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করবে। এর পরের পদক্ষেপ হলো, উক্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও প্লাটফর্মটি চেষ্টা করে যাবে জনসাধারণের সবচেয়ে প্রতিভাবান সচেতন সন্তানদেরকে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের এবং বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র প্রযুক্তির ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য। তাদেরকে আরো নির্দেশনা দিতে হবে এমন মিসাইল ও ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে আসার, যেগুলোর ধ্বংস-ক্ষমতা শত্রুর মিসাইল ও ড্রোন সক্ষমতার কম না হয়। প্রকৃত উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে জনজীবন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে। জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং উন্নয়নকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে—তবে শর্ত হচ্ছে জাতির নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরাই যেন সেই উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হন। এই উম্মাহর জাগরণ তার এমন সন্তানদের হাতেই সফলতা বয়ে আনবে, যারা নিজেদের আকীদা-বিশ্বাস, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আচার-ব্যবহার ঘনিষ্ঠভাবে আঁকড়ে ধরে আছে। তারা জাতির নিষ্ঠাবান সন্তান। তারা এই জাতির জন্য এমন ভূমিকা পালন করবে, যা এই জাতিকে শক্তিশালী করবে; ধ্বংস নয়।
মৌলিক যে বিষয়টা পরিবর্তন করা খুবই কঠিন তেমনি একটি বিষয় হচ্ছে, স্থলযুদ্ধগুলো হলো সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডবাসীর জন্য সবার আগে পূর্ব মীমাংসিত, তাই তাদের যত ক্ষয়ক্ষতি হোক না কেন অথবা আগ্রাসনকাল যত দীর্ঘ হোক না কেন, স্থলযুদ্ধের সমাপ্তি সুনিশ্চিত। ... আর পারমাণবিক বোমার একমাত্র প্রতিকার হচ্ছে পাল্টা পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করা অথবা প্রতিরোধমূলক এমন অস্ত্র আবিষ্কার করা, যার ভার বহন করা শত্রুর পক্ষে দুষ্কর। প্রতিরোধমূলক সেই অস্ত্র আমাদের হাতে এলে গুরুত্বপূর্ণ হলো তা ব্যবহার করার সাহস রাখা। অর্থনৈতিক যুদ্ধ:
মুসলিম উম্মাহর ও জনসাধারণের অবশ্য কর্তব্য হলো পশ্চিমা বিশ্বের সকল পণ্য বয়কট করা। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এমন যে কোনো পণ্য ক্রয় করা হারাম, মুসলিম দেশগুলোতে যেগুলোর বিকল্প রয়েছে— যদিও সেগুলো কিছুটা নিম্নমানের হোক না কেন। অতএব যারা পশ্চিমা দেশ থেকে কোনো গাড়ি ক্রয় করবে তারা গাজার মুসলিম গণহত্যার অর্থায়নে অংশগ্রহণকারী। আমাদের মুসলিম দেশগুলোতে যে সকল পণ্যের বিকল্প রয়েছে; চাই সেগুলোর মূল্য কম হোক কিংবা বেশি, সেই সমস্ত পণ্য ইউরোপ, পশ্চিমা বিশ্ব আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও চীনের কাছ থেকে ক্রয় করা হারাম। একই কথা প্রযোজ্য এমন যেকোনো দেশের ব্যাপারে যারা ইহুদীদেরকে রাজনৈতিকভাবে, সামরিকভাবে অথবা অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে। আকাশ পথে হামলার জটিলতা নিরসন:
বিমান তথা উড়োজাহাজ এক বিরাট বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যুদ্ধের ময়দান থেকে এই বিমানকে বের করে দেয়া সম্ভব হবে তার দুর্বলতার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আঘাত করার মাধ্যমে। তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে বিমানবন্দর সমূহ, সামরিক বিমান ঘাঁটি, গোলাবারুদ ও জ্বালানি ডিপো, পাইলট, অস্ত্র প্রযুক্তির এক্সপার্ট, স্থলে অবস্থানকারী পাইলট এবং বিমান সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও সেক্টর।
প্রথম হলো ড্রোন বিমান: ড্রোন বিমানের দুর্বল পয়েন্ট অনেকগুলো। এগুলো ধীরগামী। উচ্চতায় কম, রাডারে চিহ্নিত করা সহজ। একইভাবে আগুনের মাধ্যমে এগুলোর মোকাবিলা করা, এগুলোকে বিভ্রান্ত করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। পাশাপাশি এগুলোর আরো কিছু দুর্বল পয়েন্ট হলো: যে স্থান থেকে এগুলোকে চালানো হয় সে সমস্ত ঘাঁটি, এগুলো চালনাকারী এক্সপার্ট দল, যে সমস্ত টেকনোলজি সেন্টারে এগুলো তৈরি হয়, যে সমস্ত গুপ্তচর এগুলোর কাছে তথ্য সরবরাহ করে অথবা চিপ বসানোর মাধ্যমে এগুলোর কাছে দিকনির্দেশনা প্রেরণ করে ইত্যাদি। এগুলোর সাথে আনুষঙ্গিক বিষয় যত বেশি হবে সেই সব কিছুই দুর্বল পয়েন্ট হিসেবে আমাদের সামনে থাকবে এবং আমাদের শক্তি অনুযায়ী প্রতিটি পয়েন্টে আমরা আঘাত করতে পারব। এক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে গুপ্তচর চিহ্নিত করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে শত্রুদেরকে অন্ধ করে দেয়া, সামরিক ঘাঁটি বা ড্রোন বিমানের ঘাঁটি অথবা এগুলোর প্রযুক্তি কক্ষ টার্গেট করে অভূতপূর্ব অপারেশন পরিচালনা করা। স্থলে অবস্থানকারী যে সমস্ত বিমান এক্সপার্ট অথবা পাইলট বিমান চালায়, নেতৃত্ব দেয়, তাদেরকে হত্যা অথবা অপহরণমূলক অপারেশন চালানো। এমনিভাবে বিমানের জ্বালানি ও গোলাবারুদ ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটানো, এগুলোর কাজে যে সমস্ত এক্সপার্ট ব্যক্তি নিয়োজিত তাদেরকে অপহরণ অথবা হত্যা করা। এভাবেই এই ভয়াবহ অস্ত্রের মোকাবেলা করা সম্ভব। এমনকি শুরু থেকেই বৈদ্যুতিকভাবে নির্দেশিত আত্ম-উৎসর্গী বিমানগুলোর মোকাবেলা করাও সম্ভব। কারণ এগুলো অল্প রেঞ্জের মধ্যেই চলে আর তা থেকে বোঝা যায়, এগুলো যেখান থেকে আসছে, যেখান থেকে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যারা এগুলো চালাচ্ছে, তারা আমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তাই আমাদের ভূখণ্ডে তথ্য সরবরাহের কাজে আমাদের যে সমস্ত গোয়েন্দা রয়েছেন তাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে উপর্যুক্ত আত্মঘাতী বিমান প্রেরণকারীদের ক্ষতি সাধন করা সম্ভব। শত্রুপক্ষের মাঝে ফাটল ধরানোর জন্য এবং শত্রু সারিতে খুব গভীরে ক্ষতিসাধনের জন্য আমাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অংশটিরও এক্ষেত্রে ভূমিকা থাকতে পারে। এমনিভাবে শত্রুপক্ষের মাঝে আমাদের কিছু লোক থাকবে যারা আমাদেরকে তথ্য সরবরাহ করবে, বিমান হামলার বিভিন্ন পরিকল্পনা বিভ্রান্ত করবে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি পয়েন্ট হচ্ছে প্রতিটি ফ্রন্টে এবং রণাঙ্গনের সর্বত্র মুজাহিদদের মাঝে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা, জনসাধারণের সঙ্গে উত্তমরূপে যোগাযোগ রক্ষা করা, তাদেরকে দীক্ষিত করা, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং সেগুলো নিক্ষেপের উপযোগী করে তৈরির প্রশিক্ষণ। কারণ আমাদের লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার। তাই উম্মাহর প্রতিটি সন্তানকেই এখানে প্রয়োজন। পূর্ব থেকে পশ্চিম গোটা বিশ্বের সমর বিশেষজ্ঞ এই উম্মাহর সন্তানেরা নিজেদের মাঝে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত, আবিষ্কার ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন, যেন শত্রুপক্ষের ভয়ানক অস্ত্রের মোকাবেলায় ব্যাপক স্ট্র্যাটেজি ও কৌশল অবলম্বন করা যায়।
দ্বিতীয়ত, জেট বিমান ও হেলিকপ্টার:
কাঁধের ওপর বহনযোগ্য বিধ্বংসী রকেট লাঞ্চার দিয়েই এই সমস্ত বিমান ভূপাতিত করা যায়। আবার স্থলঘাঁটি থেকে নিক্ষেপ করা যায়। তবে এই সমস্ত রকেটের জন্য যেরকম রাডার প্রয়োজন এবং যেই প্রযুক্তি দরকার, তা ক্রয় করা, ব্যবস্থা করা, সেগুলো পরিবহন এবং সেগুলো নিয়ে উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছা একটু কঠিন হতে পারে। তবে হেলিকপ্টার ও জেট বিমানগুলো যে জায়গা থেকে উড়ে আসে সেখানে অনুপ্রবেশ করা অথবা বিস্ফোরক ও বিধ্বংসী ড্রোনের মাধ্যমে সে জায়গাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি করা, পাইলট ও টেকনিশিয়ানদের হত্যা করা, তাদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া, গোলাবারুদ ডিপো ও জ্বালানি ভাণ্ডার উড়িয়ে দেওয়া, এমনকি বিমানবাহী রণতরীও বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবিলা করা যেতে পারে। দেড় টন বিস্ফোরক বোঝাই একটি ছোট নৌকা আড়াই দশক আগে এডেনে একটি আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারকে সরিয়ে দিয়েছিল। পরিবর্তনের জন্য, শত্রু এবং তার মিত্রদের আঘাত করার জন্য একটি উন্মুক্ত দিগন্তের প্রয়োজন। আরো প্রয়োজন এমন আত্মোৎসর্গী একদল কর্মী যারা উম্মাহ ও দীনের সাহায্যের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত।
তৃতীয়ত, উম্মাহর সন্তানদের ভেতর থেকে একদল হ্যাকার থাকতে হবে, যারা শত্রুর নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থায় নাশকতা ঘটাতে পারে। এটা এমন একটা শক্তি যা এখন পর্যন্ত শত্রুপক্ষকে বাধা দেয়ার জন্য সেভাবে ব্যবহৃত হয়নি। ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র বা এমনকি জেট প্লেন নেভিগেশন সিস্টেম অক্ষম করা, জ্যাম করা বা টার্গেট প্রোগ্রামিং হ্যাক করা ইত্যাদি কাজ এমন এক একটি অস্ত্র, যা জাদুকরের বিরুদ্ধেই তার জাদু কাজে লাগাতে পারে। এই কাজগুলো যারা করবে, তাদের অবশ্যই নিরাপত্তা ও তথ্যের ক্ষেত্রে প্রকৃত নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, শত্রুর প্রতিষ্ঠানগুলি— বিশেষ করে বিদ্যুৎ, জল, স্থল, সমুদ্র এবং বিমান পরিবহন সম্পর্কিত বেসামরিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করতে হবে। সেই সাথে শত্রুর পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকে ধ্বংস করতে হবে, যা দিয়ে তারা রাতদিন আমাদেরকে হুমকি দেয়। পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো ধ্বংস এবং ব্যবহারের অনুপযুক্ত করে দিতে হবে। শত্রুর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর আঘাত করে তাদের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করতে হবে... এই কয়েকটা কথায় আসলে আমাদের সামনের টার্গেট এবং আমাদের চিন্তাধারার সবটুকু উঠে আসবে না কিন্তু মুক্তির পথে এগুলো রোপিত চারা ও বপনকৃত বীজ।
চতুর্থত, উম্মাহকে তার হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। এই অস্ত্র দিয়ে শত্রুর মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন ও প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব। তাই এই অস্ত্রগুলোর চর্চা উন্নয়নে আমরা কাজ করব তার ধরন অনুসারে। সেটা স্ট্র্যাটেজিক অপারেশনে হতে পারে অথবা ট্যাকটিক। আমরা বলতে পারি উম্মাহর কাছে এমন তিনটি অস্ত্র রয়েছে যা মোকাবেলা করার সাধ্য শত্রুর নেই। তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে: শহীদি অপারেশন তথা আত্মোৎসর্গী হামলা। শুধু স্ট্র্যাটেজিক অপারেশনে এই কাজ করা যেতে পারে; কারণ শুধু শুধু রাজনৈতিক অথবা সামরিক এমন কোনো লক্ষ্যে আঘাত হানার জন্য কোনো প্রাণ বিনষ্ট করা উচিত নয়, যেখানে বোমা বর্ষণ অথবা সামরিক অপারেশনের মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যায়। আমাদের হাতে থাকা আরেকটি অস্ত্র ট্যাকটিক্যালি অত্যন্ত কার্যকর: বিস্ফোরকের শক্তি, কারণ আমরা বোবি-ট্র্যাপিং (ফাঁদ) অপারেশন, গুপ্তহত্যা, অভিযান এবং অতর্কিত হামলা চালাতে পারি যা শত্রুদের পঙ্গু করে দেবে— বিশেষ করে যদি অপারেশনগুলো শত্রু অঞ্চলে অথবা বৈধ টার্গেটে হয়। এই অপারেশনগুলো শত্রুদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করবে এবং আরো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে, যা ফিলিস্তিনে জায়নবাদী ও ইহুদীবাদীদের সমর্থনকারী শক্তিগুলোকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য করবে। নতুন পুরাতন একটি অস্ত্র পিস্তল, যা একাকী অপারেশনের ক্ষেত্রে খুবই সুবিধা জনক, সব মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে; যদি আমরা সাহসী হৃদয়ে তার সাথে একটি সাইলেন্সার যোগ করি, তাহলে শত্রুর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মিডিয়া এবং অন্যান্য সেক্টরের শীর্ষ ব্যক্তিরা আমাদের হাতের নাগালে সহজ টার্গেটে পরিণত হবে। শত্রুর সবচেয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র হলো: মনোবল। সেটাই আমাদের ভেঙে দিতে হবে। আর এই কাজগুলো উৎসারিত হবে আমাদের হৃদয়ের ভালোবাসা থেকে— আত্ম-উৎসর্গ, আল্লাহর জন্য, তাঁর দীনের জন্য, সম্মান ও গৌরবের জন্য নিজেকে বিলীন করে দেয়ার ভালোবাসা। কথা ও কাজের মাধ্যমে এই সুপ্ত ভালোবাসা স্থায়ী করে রাখতে হবে। কারণ ইজ্জত সম্মান এবং গৌরব বহনকারী অপারেশনগুলো উম্মাহর নীরব শক্তি ভাণ্ডারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। সাজানো গোছানো কথামালা, চেতনা উদ্দীপক কাব্য, নাশিদ ইত্যাদি মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় না বটে কিন্তু সেগুলোর কারণে সকল মানুষ অস্ত্রের দিকে ছুটতে থাকে।
***
প্রশিক্ষণ ও সামরিক বাধ্যতামূলক নিয়োগ:
বিভিন্ন ত্রুটি সত্ত্বেও এ কথা সত্য যে, বাধ্যতামূলক সৈন্য নিয়োগের নীতি উম্মাহর সন্তানদের বিরাট উপকারে আসে। কারণ এই প্রশিক্ষণে তারা বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একনিষ্ঠ পরিবর্তনকামী ব্যক্তিরা সামরিক প্রশিক্ষণ ও বাধ্যতামূলক সার্ভিসের জন্য সময় বের করবেন, খুব সিরিয়াসভাবে এ বিষয়টাকে গ্রহণ করবেন এবং সেনাবাহিনীর হাতে যে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে অথবা সামরিক উচ্চতর কলাকৌশল রয়েছে, সেগুলোতে নিজেরা দক্ষ হয়ে উঠবেন। কারণ যারা বিষয়টার গুরুত্ব বোঝে তাদের জন্য এটা বিরাট সুযোগ। কিন্তু যারা বিষয়টাকে অন্য চোখে দেখে, রাজনীতিতে যারা পরিপক্ক নয় তাদের কাছে এটা সময় নষ্ট বলে মনে হবে। কিন্তু যখন যুদ্ধের এক একটি দুয়ার খুলে যাবে, তখন এই মানুষগুলো খুবই অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে। এমনও হতে পারে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশ তাদের ব্যাপারে সীমালংঘন করবে, তাদের অর্থ-সম্পদ ও ভূখণ্ড ছিনতাইকারীরা তাদের উপর জুলুম করবে, অহংকারী স্বৈরাচারী জালিমের পক্ষ থেকে তাদের গোপনীয়তা বিনষ্ট করা হবে কিন্তু তারা কিছুই করতে পারবে না। তাই হে উম্মাহর যুবকেরা! বাধ্যতামূলক নিয়োগের বিষয়টি দুর্দান্ত সুযোগ। এটি কাজে লাগানো উচিত।
আরেকটি কথা বলা দরকার যে, বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগে সেনাবাহিনী, তাদের সক্ষমতা, পরিকল্পনা এবং নেতাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আমাদের অনেক দেশের সেনা কর্মকর্তারা আমাদের প্রতিপক্ষ। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এবং আদর্শিক বা দুর্নীতিবাজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের ভবিষ্যৎ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাদের তথ্য ভিতর থেকে সংগ্রহ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য সেনাবাহিনীকে শোষণ করে। আর এটা তারা করতে পারে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং পরিষেবার সময়কাল বিষয়ক নিয়ম-নীতিতে বিভিন্ন ত্রুটি থাকার কারণে। এই ত্রুটিগুলো অপসারণ করা যেতে পারে, যদি আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও নেতাদের নির্মূল করতে পারি— বিশেষ করে অফিসারদের ছেলেদের নিয়োগের বিষয়টি, যারা মনে করে যে, সেনাবাহিনী তাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বের উপর ভিত্তি করে তাদের জন্য একটি বিশেষ উত্তরাধিকার হয়ে উঠেছে। আর এভাবেই কিছু লোক যারা নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা ছাড়া কোনো একটি যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়ে অস্ত্র ব্যবহার করেনি, তারাই সেনাবাহিনীতে স্থান করে নেয়। তারা যা করে তা অন্যায় ভাবে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দখল ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন পরিবর্তনের গিয়ার ঘুরবে, তখন এই লোকেরা আর থাকবে না।
হে সচেতন মুসলিম যুবক, সামরিক সেবা এড়িয়ে যাবেন না; বরং এতে যুক্ত হয়ে যোগ্যতা তৈরি করুন। যখন গুরুতর অবস্থা তৈরি হবে তখন এর জন্য আপনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন।
***
লক্ষ্যগুলির সাথে মিথস্ক্রিয়া:
একটি বিপ্লবী কার্যক্রম অথবা পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সামনে যথাযথ লক্ষ্য ও টার্গেট রয়েছে, যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয় এবং এর বাস্তবায়ন হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও গোষ্ঠীর মাধ্যমে। তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করে বিপ্লব ও পরিবর্তনের পর্যায়গুলির প্রতি সজাগ সচেতন দৃষ্টি রেখে। তবে বড় লক্ষ্যগুলি অর্জন করা যায় না, যদি না ছোট ও মাঝারি লক্ষ্যগুলি অর্জিত হয়। শত্রুকে অবশ্যই আমাদের ভূখণ্ডের ইতিবাচক বিষয় সমূহ থেকে বঞ্চিত করতে হবে। এই শত্রু পক্ষের কাছে এমন কোনো কিছু আমরা বিক্রি করব না, যা তাদেরকে শক্তিশালী করবে, তাদের সামরিক ব্যবস্থাকে সংহত করবে। একইভাবে তাদের কাছ থেকে এমন কোনো কিছু আমরা ক্রয় করব না, যা তাদের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। এই বিষয়গুলো এমন লক্ষ্য উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি বা ইসলামিক সংস্থার পক্ষে আমলে নেয়া সম্ভব নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী— চাই সে ব্যবসায়ী শ্রমিক অথবা যুবসমাজ কিংবা কোনো মুজাহিদ দল, যাই হোক না কেন।
মেধাবীদের প্রবন্ধে, কলমের কালিতে এবং কবি, বাগ্মী, গায়ক ও আবৃত্তিকারদের রচনায় যে শক্তি আছে, তা দিয়ে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে জাতির মাঝে সচেতনতা তৈরির বিষয়টি একটি দুই ধারী তলোয়ার। এগুলো শত্রুর মনোবলে গভীর ছুরিকাঘাত। এই আঘাত শত্রুর বাহুকে ধ্বংস করে দেয়। অন্যদিকে এসবের দ্বারা আমাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়, আমাদের সংহতি বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই ‘শহীদদের নেতা’ বলা হয়েছে হামজা বিন আব্দুল মুত্তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং এমন ব্যক্তিকে, যিনি জালিম শাসকের সামনে সত্য উচ্চারণ করেন, তাকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বারণ করেন, ফলে ওই জালিম শাসক ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করে।
আমাদের মুখের অভিব্যক্তি, আমাদের প্রতিবাদ মূলক অবস্থান, জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবহারিক ধর্মঘট এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের অবস্থানগুলি নাগরিক অবাধ্যতার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয়, কারখানা, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, কোম্পানি, গ্রামীণ এলাকা, খামার ইত্যাদিতে মানুষের জমায়েত ছাড়া এখন আর উপায় নেই। এই সমস্ত ক্ষেত্রে অ্যাকটিভিটি দুর্নীতিবাজ সংস্থাগুলোর পতনের জন্য যেকোনো ভূমিকম্পের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের জন্য ঈমানের দুর্বলতম স্তর হচ্ছে পশ্চিমা পণ্য এবং জায়নবাদী কোম্পানিগুলিকে বয়কট করা... সেগুলি হোক খাদ্যদ্রব্য, মিষ্টান্ন, পানীয়, পোশাক, প্রযুক্তি, বিমান, গৃহস্থালি জিনিসপত্র, গাড়ি, ঘড়ি... ইত্যাদি যাই হোক না কেন। বিশ্বের যেকোনো স্থানে কোনো মুসলিম অথবা দুর্বল ব্যক্তি নিজের সাধ্যের ভেতর যেকোনো প্রচেষ্টাকে যেন ছোট করে না দেখে। কারণ অনেক সময় ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগ ও কর্ম-প্রচেষ্টা রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তন এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন বাস্তবতাকে হটিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইচ্ছাশক্তি ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। এই কারণেই ইতিহাস এমন ব্যক্তিদের নামকে অমর করে রেখেছে এবং তাদের নৈতিক পথ, জিহাদী বীরত্ব, গেরিলা ক্রিয়াকলাপ এবং আত্মত্যাগের গল্পগুলি অনুসরণীয় করে রেখেছে। দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সে সমস্ত ঘটনা থেকে আমাদের মনোবল দৃঢ় হয় নিঃসন্দেহে।
ছুরি, ম্যাচ, পিস্তল, মাল্টুফ বোতল, রান্নার গ্যাস... এমনকি পাথর; এগুলো কার্যকরী এমন পুরানো অস্ত্র যা হৃদয়ের সাহসিকতা এবং বহনকারী হাতের শক্তি অনুযায়ী নিজের কার্যকারিতা উপযোগিতা ও চমৎকারিত্ব প্রমাণ করে শত্রুর অবস্থানকে একেবারে নাড়িয়ে দেয়। ১১ সেপ্টেম্বরে ১৯ জন বীর এবং তাদের পেছনে থাকা বাণিজ্যিক সরঞ্জামগুলো জীবনঘাতী অস্ত্রে পরিণত হয়েছিল। অতীতে একটি প্রবাদ চালু ছিল, (যার বাংলা হচ্ছে) “তরবারি তার ধারে নয়, বরং বহনকারী বাহুর ভারে কাটে।” যখনই তরবারি ইহুদীবাদী শত্রুর কোনো স্বার্থের উপর আঘাত করে, তখনই এটি বিপ্লবের সলতে প্রজ্বলিত করে মুক্তির পথে নিয়ে যায় এবং সারা বিশ্বের দুর্বলদেরকে পৃথিবীর উত্তরে অবস্থিত ইহুদীবাদী অত্যাচারীকে আঘাত করতে উদ্বুদ্ধ করে।
জায়নবাদী অর্থনৈতিক যেকোনো স্বার্থ নাগালের মধ্যে পাওয়া গেলেই তার ওপর আঘাত করতে হবে। চাই সেগুলো কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি কিংবা রাষ্ট্রের মালিকানাধীন হোক অথবা ইহুদী, আমেরিকান, ইংরেজ, ফরাসি, অথবা জার্মান স্বার্থ হোক। এর দ্বারা জায়নবাদী শত্রুর মিত্রদের নরম পেটে আঘাত লাগবে। এই আঘাতগুলো ইহুদীদের জন্য তাদের সমর্থনকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করবে এবং তাদের ভূমিতে যুদ্ধ-বিরোধীদের সাথে অভ্যন্তরীণ সংঘাত তৈরি করবে। তখন জনগণ বিক্ষোভ করে আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করতে চেষ্টা করবে।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো মুসলিম অথবা দুর্বল ব্যক্তি যদি এই ব্যাপারে অবহেলা করে তবে তা পাপ বলে গণ্য হবে। কারণ ইহুদীরা শিশু, নারী, বৃদ্ধদের হত্যা করেছে, হাজার হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে, পুরো জনবসতি (হাসপাতাল, বাড়ি, সরকারি বিভাগ ইত্যাদি) ধ্বংস করেছে, কিছুই বাদ রাখেনি। তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের কল্পনার মাত্রাকেও হার মানিয়েছে। ধারণা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই অপরাধীদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য আমরা যা করব, আমাদের সেই কার্যক্রমকে সীমিত করার মতো কোনো রেডলাইন এখন আর নেই। ইহুদীবাদীদের সমস্ত কিছু এখন আমাদের টার্গেট। যেকোনো জায়গায় যেকোনো কিছু হাতের নাগালে পেলেই আত্মমর্যাদাশীল মুসলিম নিজের রব, নিজের দীন ও মুসলিম ভাইদের প্রতিশোধ হিসেবে তাতে আঘাত করবে। তাদের সঙ্গে তাদের অনুরূপ আচরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُواْ بِمِثۡلِ مَا عُوقِبۡتُم بِهِۦۖ وَلَئِن صَبَرۡتُمۡ لَهُوَ خَيۡرٞ لِّلصَّٰبِرِينَ
“আর যদি তোমরা শাস্তি দাও, তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দেবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। তবে তোমরা ধৈর্য ধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্য সেটা অবশ্যই উত্তম।” [সূরা নাহল ১৬:১২৬]
এই ইহুদী গোত্র ও জাতির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাদের যেকোনো সম্মিলিত অবস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বিলুপ্ত হতে বাধ্য, নিকট ভবিষ্যতে হোক কিংবা দূর ভবিষ্যতে। আমাদের এমন সহানুভূতির কাছে যেন আমরা প্রতারিত না হই যে, তারা আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালামের বংশধর। কারণ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দুজন পুত্র সন্তান ছিল। তাদের জন্য তিনি দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
۞ وَإِذِ ٱبۡتَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِـۧمَ رَبُّهُۥ بِكَلِمَٰتٖ فَأَتَمَّهُنَّۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامٗاۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِيۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهۡدِي ٱلظَّٰلِمِينَ
“আর স্মরণ করুন, যখন ইবরাহীমকে তাঁর রব কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, অতঃপর তিনি সেগুলো পূর্ণ করেছিলেন। আল্লাহ্ বললেন, “নিশ্চয় আমি আপনাকে মানুষের ইমাম বানাবো।” তিনি বললেন, “আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও?” (আল্লাহ্) বললেন, “আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদেরকে পাবে না।” [সূরা বাকারা ০২:১২৪]
আল্লাহর নবী হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের উত্তর পুরুষরাই হলো ইহুদী। তাদের উপরেই আল্লাহর গযব এবং তাদের ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন:
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْۖ وَلَتَجِدَنَّ أَقۡرَبَهُم مَّوَدَّةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّا نَصَٰرَىٰۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّ مِنۡهُمۡ قِسِّيسِينَ وَرُهۡبَانٗا وَأَنَّهُمۡ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ
“অবশ্যই মুমিনদের মধ্যে শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিকদেরকেই আপনি সবচেয়ে উগ্র দেখবেন। আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’ মানুষের মধ্যে তাদেরকেই আপনি মুমিনদের কাছাকাছি বন্ধুত্বে দেখবেন, তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসার বিরাগী রয়েছে। আর এজন্যও যে, তারা অহংকার করে না।” [সূরা মায়েদা ০৫:৮২]
আল্লাহ তাদেরকে একটি গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শেষ যুগে আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে বৃক্ষ ও পাথরকে পর্যন্ত উদ্বুদ্ধ করেছেন তাদেরকে ধিক্কার জানানোর জন্য। আল্লাহর হুকুম থেকে তারা কিছুতেই পলায়ন করতে পারবে না, কারণ সেই দিন অতি আসন্ন। তাদের অপরাধ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দেখে পাথর ও বৃক্ষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে। আল্লাহর এবং তার বান্দাদের ব্যাপারে তাদের ধৃষ্টতা ও দুঃসাহসে, তাদের বিশৃঙ্খলা-অনাচার, অনর্থ সৃষ্টি এবং গোটা বিশ্বে ধ্বংসযজ্ঞ বিস্তারের ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউই নীরব থাকবে না।
***
উত্পাদন:
পুলিশি কর্তৃত্বাধীন দেশগুলোতে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক এবং এমনকি ড্রোন কেনা কঠিন হতে পারে, তবে অনেক জিহাদী সরঞ্জাম তৈরির তথ্য পাওয়া যেতে পারে সহজে। সৃজনশীল মস্তিষ্কের অধিকারীরা কিছু সাধারণ সরঞ্জামকে প্রাচীন অস্ত্রে উদ্ভাবন বা রূপান্তর করতে পারেন।
আলহামদুলিল্লাহ আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই দৃঢ়সংকল্পের অধিকারী, যারা অজ্ঞতা পরিহার করছেন। তারা নিষ্ক্রিয়তা কিংবা অবহেলার অজুহাত খোঁজ করছে না; বরং তারা পরিশ্রমী। গোটা বিশ্ববাসীকে মানব-সভ্যতার সঠিক রাজপথে ফিরিয়ে আনার জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই উম্মাহর নেতৃত্ব নিশ্চিতকরণে তারা কাজ করে যাচ্ছে। মানবজাতি তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিজেদের সৃজনশীল ধারণা দিয়ে অনুপ্রাণিত করে, বিশেষ করে সামরিক শিল্পায়নে। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে এই উম্মাহর সন্তানেরা অবরোধের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও আমাদের শাসকদের দ্বারা প্রচারিত ইহুদী ট্যাঙ্কের বিভ্রমকে উড়িয়ে দিয়ে আল-ইয়াসিন 105 ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। অথচ কাপুরুষ রাষ্ট্রনায়কেরা অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে ফিলিস্তিনে এবং বিশ্বের সর্বত্র আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াবার ব্যাপারে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই একথা মুসলিম উম্মাহর সামনে তুলে ধরার জন্য কত উপায় অজুহাত খোঁজ করে যাচ্ছে। এমনকি যদি তারা তাদের সম্পদকে অনৈতিক বিনোদন খাতে ব্যয় না করতো যেমনটা করেছে মুনাফিক বিন সালমান এবং তার দালাল শায়খের পুত্র (তাদের উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ!) ; তার পরিবর্তে সামরিক শিল্পায়নের খাতে ব্যয় করতো, তাহলে এই উম্মাহ্ আরো বেশি শক্তিশালী, বিশ্বের মানচিত্রে আরো অধিক প্রভাব বিস্তারকারী এবং শত্রুদের অন্তরে আরো অধিক ভীতিসঞ্চারকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকতো।
গাজা ভূখণ্ডে আপনাদের ভাইয়েরা ম্যানুফ্যাকচারিং ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক, যেন আমরা তাদের পথে চলতে পারি।
গোটা বিশ্বে উম্মাহর সন্তানদের সামনে অবারিত সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম, উপকরণ সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণে তৈরি ও সংরক্ষণ করে রাখার। এই কার্যক্রম চলতে থাকবে যতদিন এগুলো বের করার এবং ব্যবহার করার প্রয়োজন দেখা না দেবে।
আল্লাহ তাআলা শায়খ উসামা বিন লাদেনের পিতা মুহাম্মাদ বিন লাদেনের ওপর রহম করুন, যিনি জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার জমা করে রেখেছিলেন। আফগানিস্তানে যখন জিহাদের ডাক এলো, মুজাহিদদের হাতে সর্বপ্রথম যা তিনি দিয়েছিলেন তা ছিল সেই ১০ মিলিয়ন ডলার।
***
স্টোরেজ (ডিপো/গুদাম/অস্ত্র ভাণ্ডার):
এমনকি আজও ব্যক্তি পর্যায়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগগুলো নষ্ট করা উচিত নয়। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীন প্রতিটি ব্যক্তির উচিত এমন অস্ত্র কিনে রাখা, যা দুর্নীতিবাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণশত্রু এবং জালিম শাসকদেরকে প্রতিহত করবে। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এটি সশস্ত্র জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ। সরকারগুলো যদি প্রজা ও জনসাধারণের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হতো তাহলে তাদেরকে সশস্ত্রভাবে গড়ে তোলাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতো। তাই আমি বিশ্বাস করি ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের পর আমাদের শত্রুদেরকে সবচেয়ে বেশি ভীত সন্ত্রস্ত করে যে বিষয়টা, তা হলো এই উম্মাহর সন্তানদের হাতের অস্ত্র। এ কারণেই শত্রুরা সর্বপ্রথম যে বিষয়টার সুযোগ সন্ধান করতে থাকে, তা হলো আমাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়া, আমাদের দেশগুলোতে সামরিক শিল্পায়ন কার্যক্রম ব্যাহত করা এবং সামরিক প্রযুক্তির পথে যেকোনো প্রচেষ্টা বিনষ্ট করে দেয়া। এ কারণে তারা বিভিন্নভাবে তাদের তাবেদার নামধারী মুসলিম শাসকদেরকে চাপ সৃষ্টি করে এবং হুকুম দিতে থাকে। শাসকেরা তাদের হুকুম মতোই কাজ করতে থাকে। এভাবেই শত্রুরা মুসলিমদের জাতীয়তা ও সার্বভৌমত্বের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং মুসলিমরা সম্ভাব্য দীর্ঘ সময় যাবৎ দুর্বলই থেকে যায়।
অতএব, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনা প্রয়োজন এবং উপযুক্ত সময়ে ব্যবহারের আগ পর্যন্ত এগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। নিষ্ঠাবান লোকেরা কীভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংরক্ষণ করা যায়, সে সম্পর্কে অনেক তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাবে। আমাদের দেশের লোকদের মধ্যে এমন দক্ষ কর্মী খুঁজে বের করতে হবে, যারা কৃত্রিম দেয়াল, গোপন কক্ষ এবং গুপ্ত আস্তানা তৈরিতে পারদর্শী। সরঞ্জামাদির ভাণ্ডার ভূগর্ভস্থ হলে আর্দ্রতা বা ভূগর্ভস্থ জল থেকে সরঞ্জাম সমূহ এবং গোটা এরিয়া রক্ষা করার জন্য কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারেও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
এই বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি উম্মাহর সন্তানদের জন্য বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে পরিবর্তনকামীদের জন্য। এই ক্ষেত্রে চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা এবং সর্বাত্মক শ্রম ব্যয় করাটা পরিবর্তনমুখী অনিবার্য শক্তি তৈরি ও প্রস্তুতি গ্রহণের পূর্ব শর্ত ও সূচনা স্বরূপ।
জরুরিবিষয়গুলো আমরা আরেকবার দেখে নেই:
অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম থাকা... সেগুলো যথাস্থানে সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা... সেগুলো কাজের উপযুক্ত করে তৈরি ও মানোন্নয়নের জন্য কাজ করা।
লোহা, আগুন এবং প্রযুক্তিতে ভালো দখল থাকার কারণে ইহুদীবাদ এতদিন ধরে যা ইচ্ছা করতে পেরেছে। যখন আমাদের জনগণের হাত অস্ত্র শূন্য হয়ে গিয়েছে তখন এই উম্মাহ সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।
***
মুক্তির ধারণা:
(গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি নিজের কার্যক্রমের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করবেন অথবা জান বাঁচিয়ে পালিয়ে যাবেন) এই ধারণার সাহায্যে মানুষের সঠিক নৈতিক মূল্যবোধ বিকৃত করে দেয়া হয়েছে এবং লজ্জার পোশাক জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মুক্তি লাভ কখনো মূল লক্ষ্য হতে পারে না; প্রকৃত লক্ষ্য তো হচ্ছে ইকমাতে হক বা সত্য প্রতিষ্ঠা। আর আত্মত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ হলো সত্য প্রতিষ্ঠার পথ ও পন্থা। গৌরব আর মর্যাদা হচ্ছে এই কাজের জন্য প্রাপ্ত আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিদান ও পুরস্কার। এতটুকু বিষয় যদি সততার সাথে কেউ গ্রহণ করতে পারে তাহলেই মুক্তি। এ পথেই মানবজাতি মুক্তি লাভ করবে। স্বার্থ হাসিলের জন্য সুবিধাবাদী হওয়া এবং অন্যের সমস্যার তোয়াক্কা না করা খুবই বাজে একটা রোগ। এটা যেকোনো ভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর। এটাই বখাটে লোকদের কাজের রূপরেখা। কারণ তারা যেকোনো পন্থায় মুক্তি লাভ করার জন্য চেষ্টা করে আর এ ক্ষেত্রে অন্যদের সমস্যার কথা তারা চিন্তা করে না। তাদের কাছে মাধ্যম কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বরং উদ্দেশ্যটাই আসল। তাদের কাছে সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘মুক্তি’। এ কারণেই তারা বেঁচে থাকার মায়ায় নিজেদেরকে, তাদের জিহ্বা, কলম এবং দেহকে ক্ষণস্থায়ী পণ্যের বিনিময়ে অত্যাচারী শাসকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবে তুচ্ছ জিনিসের কারণে তারা জীবনের মূল মর্ম থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে দুনিয়াতে তারা লাঞ্ছনার জীবনযাপন করে, আখিরাতের জীবনও তাদের ধ্বংস হয়। এটি এমন একটি কলঙ্ক যা কখনো মোছা যায় না। এটা থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে না। যার সঙ্গে এই কলঙ্ক লেগে যায় সে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার বংশধরেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুচ্ছ লোকেরা কি এ কথা জানে?
ইসলাহী অঙ্গনের লোকেরা বলেন, যারা ধ্বংস হয়েছে তাদের বিষয়টা আশ্চর্যজনক নয় যে, তারা কিভাবে ধ্বংস হয়েছে! বরং আশ্চর্যজনক হলো মুক্তি লাভকারীদের বিষয়টা; যে, তারা কীভাবে মুক্তি লাভ করেছে? এই কথা থেকে মুক্তি লাভের প্রকৃত মর্ম উঠে আসে এবং আমাদের সামনে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। কারণ জান্নাতীরা দুনিয়াতে নিজেদের রবের সন্তুষ্টির জন্য চেষ্টা পরিশ্রম করে কাজ করেছে আর কেবল তারাই জাহান্নামে ধ্বংস হবার হাত থেকে মুক্তি লাভ করেছে— চাই তাদের দুনিয়ার জীবন সংক্ষিপ্ত হোক কিংবা দীর্ঘায়িত। আমাদের সকলেরই তো মৃত্যু অবধারিত। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক প্রতিটি দিন আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছি। তাই প্রকৃত মুক্তি লাভকারী হলো ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর জন্য দুনিয়াকে ব্যয় করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে।
***
প্রতিরোধ:
প্রতিরোধের দিগন্ত উন্মুক্ত। এই পথ সীমাবদ্ধ করার কোনো উপায় নেই। শত্রু যেই হোক না কেন, তাকে প্রতিহত করার কোনো না কোনো উপায় অবশ্যই রয়েছে। এক সময় ছোরা ও তরবারি একটি প্রতিরোধক অস্ত্র ছিল। তখন ঘাতকেরা তাদের রাজনীতিবিদ ও রাজকুমারদের ঘাড়ে সেগুলো ব্যবহার করত। একসময় আবার পারমাণবিক বোমা হলো একটি প্রতিরোধক অস্ত্র। তখন সেই অস্ত্র দিয়ে জাপানের শহরগুলিতে আঘাত করা হয়েছিল— সেই জাপান আজও স্বাধীনতা হরণকারীদের কাছে পরাধীন রয়েছে। সব যুগেই দেখা গিয়েছে শত্রুদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত করার কোনো না কোনো অস্ত্র অবশ্যই বিদ্যমান ছিল, আর সাহসিকতার সঙ্গে সেই অস্ত্র ব্যবহার করে তার কার্যকারিতা দেখানো, ময়দানের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করা এবং শত্রুপক্ষের শক্তি ধ্বংস করা সম্ভব ছিল।
কার্যকারিতা দেখানোর জন্য ওই জিনিসগুলো লাগবে যা শত্রুকে প্রতিহত করবে। এগুলো ব্যবহার করতে হবে সাহসিকতার সাথে। আর প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে আমাদের জনগণকে দীক্ষিত প্রশিক্ষিত ও অস্ত্রসজ্জিত করার মাধ্যমে। আর শত্রুর শক্তি ধ্বংস করতে হবে শুধু অগ্র অভিযানের মাধ্যমে। আর এই বিষয়গুলো কিছুতেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব না, যতক্ষণ আমরা আমাদের দীন ইসলাম, ইতিহাস-ঐতিহ্য, আচার-আচরণ ও ইসলামী ভাবধারায় ফিরে না আসব। এ বিষয়গুলো ছাড়া আমরা অচিরেই সকল প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রাসে পরিণত হব।
আমাদের ভূখণ্ডে থাকবে সশস্ত্র উম্মাহ। শত্রুর অস্তিত্বের গভীরে আঘাত করবে একাকী নেকড়ে। শত্রু ভূমিতে বসানো হবে অপারেশনাল সেল, মুজাহিদীন গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোকে, তাদের বিচিত্র অপারেশন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডমূলক অপারেশন, যুগের প্রযুক্তিকে অপ্রত্যাশিতভাবে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রে রূপান্তর করা, স্ট্র্যাটেজিক টার্গেটে শহীদি তথা আত্ম-উৎসর্গমূলক অপারেশন, বিস্ফোরকের শক্তির সদ্ব্যবহার। এগুলি সবই প্রতিরোধক অস্ত্র, যা শত্রুর কার্যকারিতা সীমিত করে, তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলে এবং তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ছিন্ন করে দেয়। সশস্ত্র উম্মাহ্ এমন একটি জাতি, যার সংকল্প প্রতিহত বা পরাজিত করা যায় না — যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অস্ত্র বহন করে আছে; সেগুলো সোপর্দ করে না দিচ্ছে, যতক্ষণ সেগুলো তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া না হচ্ছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যতক্ষণ তারা জিহাদের পথে টিকে থাকছে। তবেই ইনশাআল্লাহ বিজয় এক সময় না একসময় অবশ্যই আমাদের পদচুম্বন করবে।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে খুনি (নেতানিয়াহু) যখন পুরোপুরি পরাস্ত হবে, তখন বাইডেন, তার পরিবার এবং তার বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাটিক বন্ধু অপমানিত হবে, তাদের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং তাদের মাঝে থাকবে ঐ সমস্ত লোকের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ, যারা ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। পরবর্তী নির্বাচনের আগে ট্রাম্পকে হত্যা করা ছাড়া বাইডেনের সামনে আর কোনো উপায় নেই। তারপরে মুক্তিকামী টেক্সাস নিজের এলাকাগুলো নিয়ে স্বাধীন হবে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথা পশ্চিমের মিথ ভেঙ্গে যাবে। এরপর থেকে পুনরায় আর কখনোই আমরা আমেরিকানদের সম্পর্কে বড় বড় কথা শুনবো না। যেমনিভাবে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কারণে কাবুলের পুতুল সরকার আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, তেমনি অচিরেই ইহুদীবাদী সত্তা ইসলামিক আগ্রাসনের গলনাধারে গলে যাবে। আমরা ফিরে পাব কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা ও শান্তি।
এটা গণহত্যামূলক লড়াই। এ লড়াইয়ে শুধু তারাই বাঁচতে পারবে, যারা শত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য, তার অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য, ময়দানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং শেষ পর্যন্ত শত্রুর বাহিনীকে নির্মূল করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত থাকবে। একই সময়ে এবং তার আগে ও পরে ইসলামের দাওয়াতের ময়দান উন্মুক্ত থাকবে; এমন এক বিশ্বে এমন একটা সময়ে দাওয়াতের ময়দান কখনোই বন্ধ করা যাবে না, যেখানে যোগাযোগ ও গণসংযোগই হলো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও প্রাধান্য প্রাপ্ত বিষয়। সর্বকালের জ্ঞানী ব্যক্তিরা সময়োপযোগী এক্সিট স্ট্রাটেজি (Exit strategy) উদ্ভাবন করেছে, তবে ফিলিস্তিন দখলকারী ইহুদীদের ব্যাপারে সর্বোত্তম এক্সিট স্ট্রাটেজি (Exit strategy) অনুমোদন দিয়েছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ইহুদীদের ব্যাপারে হযরত সাদ ইবনে মুআজ রাযিয়াল্লাহু আনহুর সিদ্ধান্ত সঠিক বলে ঘোষণা করেছিলেন। সাদ ইবনে মুআজ রাযিয়াল্লাহু আনহু বনু কুরাইযার ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন “তাদের যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদেরকে হত্যা করা হবে, তাদের ঘরের নারীদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের সম্পদ গনীমত হিসাবে নিয়ে যাওয়া হবে।” মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন: “আপনি তাদের ব্যাপারে সাত আসমানের উপর থেকে মহান মালিকের বিচার অনুযায়ী ফয়সালা করেছেন।”
জীবনের ব্যাপারে ইতিবাচকতা এবং জীবনমুখী নির্মাতাদের সঙ্গে মৃত্যুর কারিগরদের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
***
(বাকী অংশ কমেন্ট বক্স দেখুন)
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
روابط بي دي اب
PDF (1.09 MB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [১.০৯ মোগাবাইট]
https://share.eu.internxt.com/d/sh/file/19d89ca9-74cd-4999-bac3-5d5f92645512/57dff9bfedc62f2d70a6843632714c4cbb0e7ce5baad0b66c8 67a8d0908389fe
https://mega.nz/file/LddiVZKQ#5bwlQT0GIQAApOibcacsaaoTGxX5O39xqMygJyFtx Bg
روابط ورد
WORD (679 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৬৭৯ কিলোবাইট]
https://secure.ue.internxt.com/d/sh/file/2918fd7a-dc14-4159-bd73-f2e39cb18e17/a871a498fe7f75e396847a5cdc7a72c3bb30571aaed357f4b0 d16e561cc160ee
https://mega.nz/file/bQkCwY7J#_3VrR62xm3oSUTxFMKsCHFlbjyG0_D_GaXKpjYYsN yw
روابط الغلاف- ١
book cover [2.8 MB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [২.৮ মেগাবাইট]
https://share.ue.internxt.com/d/sh/file/a17f5b29-b0b3-4e47-91eb-da1cc143a44e/1417942a74f221874df36c4f360dc829e8bfd5965626ff1924 5108d5dae343a2
https://mega.nz/file/3FVXkDjL#88s9eOYFI57Jn2CdphFeoiYAZDeGaF_F4QqHyfDLU Cw
روابط الغلاف-٢
banner [4.6 MB]
ব্যানার [৪.৬ মেগাবাইট]
https://share.ue.internxt.com/d/sh/file/7ef2b36f-f291-4665-b42d-327083c5ae7a/67aa81f3b5d59f96611e941f46be4a9a49ec88b314d3ae033e 90a6a8ac5d7bb4
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent
Comment