اداره النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
پیش کرتے ہیں
পরিবেশিত
Presents
بنگالی ترجمہ
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
عنوان:
শিরোনাম:
Titled
اپنی صف متعین کیجیے! عید الفطر 1446 ھ
بیان: از – استاد اسامہ محمود
আপনার কাতার নির্ধারণ করুন!
১৪৪৬ হিজরির ঈদুল ফিতরের উপলক্ষে বার্তা
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
আমির, আল-কায়েদা উপমহাদেশ
Determine Your Position!
Message on the occasion of Eid-ul-Fitr of 1446 Hijri
Ustad Usama Mahmud Hafizahullah

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، أما بعد
সমস্ত সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবীদের সর্দার হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার, সাহাবায়ে কেরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের প্রতি।
সালাত ও সালামের পর…
উপমহাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে বসবাসকারী প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা,
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পবিত্র রমজান মাসকে আমাদের জন্য গুনাহ থেকে মুক্তি, মহিমান্বিত কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় করার এবং তাকওয়া অর্জনের এক অনন্য সুযোগ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এ বরকতময় মাস ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করার জন্য আমরা আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
تقبل الله منا ومنكم!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের এই ইবাদত কবুল করুন এবং ঈদকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত, সাহায্য ও অনুগ্রহের সূচনা করে দিন। আমীন, ইয়া রব্বাল আলামিন! প্রিয় ভাইয়েরা!
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
إِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ ﴿٩٢﴾
“তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার বন্দেগী কর।” (সূরা আল-আম্বিয়া: ৯২)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ، إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ، تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
“মুমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত একটিদেহের মতো; যদি তার কোনো অঙ্গ কষ্ট পায়, তাহলে পুরো দেহ জাগ্রত থাকে এবংজ্বরে আক্রান্ত হয়।”সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ২৫৮৬
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেছেন—
مَنْ خَذَلَ مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ يُنْتَهَكُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ، وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ حُرْمَتِهِ، إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে সেই সময় পরিত্যাগ করবে যখন তারইজ্জত-সম্মান লুণ্ঠিত হচ্ছে এবং সে সাহায্যের মুখাপেক্ষী, তাহলে আল্লাহওতাকে এমন পরিস্থিতিতে পরিত্যক্ত রেখে দেবেন, যখন সে নিজে সাহায্যেরঅপেক্ষায় থাকবে।”সুনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ৪৮৮৪ প্রিয় ভাইয়েরা!
পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারত—সমগ্র উপমহাদেশে এমন একটি স্থানও নেই যেখানে ইসলাম ও মুসলমানরা পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে না। প্রতিটি জায়গায় ঈমানদারদের নিজস্ব সংকট ও ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে... দেড় বছর ধরে গাজায় ইসরাইল ও আমেরিকার যে নিষ্ঠুর আঘাত চলছে, ইতিহাসে এমন নিদর্শন খুব কমই দেখা যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের মুসলমানদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য, আমাদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার জন্য, গাফলতের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য এবং সেই মহান দায়িত্বের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, যা আমাদের ওপর উম্মত হিসেবে অর্পিত হয়েছে। আর এই দায়িত্ব পালনে আমাদের ব্যর্থতাই আজ আমাদেরকে শত্রুর সামনে দুর্বল ও অসহায় করে তুলেছে; তাদের অন্তর থেকে আমাদের প্রতিপত্তি সম্পূর্ণরূপে মুছে গেছে।
এই বিপর্যয়ের আরেকটি হৃদয়বিদারক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—গাজার মানুষ একের পর এক জানাজা তুলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, তারা সারাক্ষণ উম্মতে মুসলিমার কাছে সাহায্যের আবেদন করছে, কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ে উম্মত যাদেরকে নিজেদের অভিভাবক ভেবে তাদের ওপর নির্ভর করেছিল, তাদের পেছনে দাঁড়িয়েছিল, তারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক প্রমাণিত হয়েছে। তারা আসলে শত্রুরই দোসর, শত্রুরই রক্ষক ও সেনাসদস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে এই রক্তঝরানো ট্র্যাজেডি আমাদেরই কোলের বিষাক্ত সাপদের প্রতারণাকে সম্পূর্ণ উন্মোচিত করে দিয়েছে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, প্রিয় ভাইগণ! উম্মত হিসেবে এটি আমাদের একটি কঠিন পরীক্ষা, যেখানে কেবল আমাদের সেনাবাহিনী ও শাসকদের দোষারোপ করে নিজেদের দায়মুক্ত করা সম্ভব নয়। এ পরীক্ষা শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং আমরা সবাই এই পরীক্ষার সম্মুখীন। আমাদের প্রত্যেককেই একদিন একা আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেখানে প্রত্যেকের নিয়ত, সংকল্প, অনুভূতি, আগ্রহ ও কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রশ্ন করা হবে: সে কি উম্মতের ক্ষত সারানোর জন্য কোনো ভূমিকা রেখেছিল? সে কি মুসলমানদের দুর্ভোগ লাঘবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিল, নাকি—নাউজুবিল্লাহ—তাদের বিপদ আরও বাড়ানোর কারণ হয়েছিল?
এমতাবস্থায়, আমাদের প্রত্যেকের উচিত আত্মপর্যালোচনা করা, নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা এবং বিচার করা—আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, এবং আসলে কোথায় থাকা উচিত ছিল? যাতে “حاسبوا قبل أن تحاسبوا”—”নিজেদের হিসাব নাও, তার আগে যে তোমাদের হিসাব নেওয়া হবে”—এই উক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব হয় এবং সেই মহাদিবসে চূড়ান্ত ক্ষতির শিকার হওয়া থেকে আমরা বাঁচতে পারি, যার কোনো প্রতিকার আর কখনোই সম্ভব হবে না।
মর্যাদাবান ভাইয়েরা!
বাস্তবতা হলো, আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তার ঈমান, আমল, সংকল্প, প্রচেষ্টা ও কৌশলের মাধ্যমে উম্মতের সাহায্য ও সমর্থনের কারণ হতে পারে। ঠিক তেমনি, আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি উম্মতকে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত করার কারণও হতে পারে।
আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত ইরশাদ করেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ﴿٧﴾
“হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ: ৭)
যদি তোমরা তাঁর আনুগত্য করো, তাঁর দ্বীনের উপর আমল করে তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসো, তবে তিনি তোমাদের নিরাশ করবেন না। তিনি তোমাদের দোয়া কবুল করবেন এবং তাঁর সাহায্য দিয়ে তোমাদের সম্মানিত করবেন।
আল্লাহ আরও বলেন:
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣٩﴾
“তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৯)
অতএব, আসুন আমরা নিজেদের হিসাব নিই— আমার ঈমান ও আমল কি অন্তত সেই স্তরে পৌঁছেছে যা আল্লাহ চান? যে স্তরের বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন? নাকি (নাউজুবিল্লাহ) আমারই অন্তরের নিয়তের ত্রুটি, আমারই আমলের দুর্বলতা আমার নির্যাতিত ভাই-বোনদের সাহায্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে?
মজলুমদের সাহায্যের প্রথম ধাপ এবং এর দিকে প্রথম কদমটি অন্য কারও নয়, বরং আমার নিজ জীবন এবং আমার নিজ কর্তব্যপরিধি থেকেই শুরু হয়। এর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো— আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাঁর অবাধ্যতা ত্যাগ করা এবং তাঁকে রাজি-খুশি করার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো।
গাজার মজলুমদের সাহায্য করতে হলে প্রথম করণীয় হলোআমাদের নিজেদের সম্পর্ক আমাদের রবের সঙ্গে ঠিক করা। প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা, তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করা এবং আমাদের ইবাদত, লেনদেন ও চরিত্রে এমন এক নিষ্ঠা গড়ে তোলা, যা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন:
وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ.
“যখন আমার বান্দা (আমলের) বিশেষশুদ্ধি অর্জন করে, তখন যদি সে আমার কাছে কিছু চায়, আমি তাকে তা দান করি, আর যদি কোনো বিপদ থেকে আশ্রয় চায়, আমি তাকে আশ্রয় দিই।” সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৬৫০২
যদি আমরা সত্যিই এটি করতে পারি, তাহলে গাজার মজলুমদের ওপর থেকে জুলুম দূর করার প্রথম ধাপ আমরা অতিক্রম করব। এরপর, আল্লাহ আমাদেরকে সেই বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন, যাদের তিনি মজলুমদের সাহায্যের জন্য এবং দ্বীনের বিজয়ের জন্য নির্বাচিত করেন।
এটি সহজ নয়, বরং কঠিন। তবে যাদের আল্লাহ তাওফিক দেন, তাদের জন্য এটি সহজ হয়ে যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই তাওফিক দান করুন এবং আমাদের এমনযোগ্যতা দান করুন, যাতে আমরা আমাদের নির্যাতিত ভাই-বোনদের সাহায্য করতেপারি। আমিন।
সম্মানিত ভাইয়েরা!
উপরের বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে বলছি যে, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হল জিহাদ অর্থাৎ কিতাল। আল্লাহর কিতাব, হাদিস শরিফ এবং ফুকাহায়ে কেরামের গ্রন্থসমূহ সকলেই এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেয় যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই জিহাদ ও কিতাল নামাজ ও রোজার মতোই ফরজে আইন। যদি আমরা আজকের অবস্থায়ও এটিকে ফরজ মনে না করি, তাহলে কখন এটিকে ফরজ হিসেবে গ্রহণ করব?
কুরআন কারিমে অন্য কোনো ফরজ সম্পর্কে এত অধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়নি, যতগুলো আয়াত জিহাদ ও কিতালের গুরুত্ব বোঝানো, এর প্রতি উৎসাহিত করা, অলসতা না করার হুঁশিয়ারি প্রদান এবং এটিকে নিজের জীবনের অংশ বানানোর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব, আমাদের উচিত উম্মতের করুন অবস্থা সামনে রেখে আল্লাহর কিতাবকে অন্তরের গভীরতা দিয়ে তিলাওয়াত করা, জিহাদ সম্পর্কিত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা অধ্যয়ন করা, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পবিত্র জীবনী অধ্যয়ন করা এবং তারপর নিজের আত্মসমালোচনা করা—এই সংকটময় মুহূর্তে আমি কেন এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ থেকে দূরে রয়েছি? কেন এখনো আমি যথাযথভাবে এটিকে আদায় করতে সক্ষম হইনি? কোনো ভালোবাসা, ভয় বা অন্য কোনো বস্তু কি আমাকে এই পথ থেকে বিরত রাখছে এবং আমার ঈমানকে দুর্বল করে দিচ্ছে?
যদি ঘরবাড়ি, আত্মীয়-স্বজন বা ধনসম্পদের ভালোবাসা এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেই আয়াতের কথা স্মরণ করুন যেখানে আল্লাহ তাআলা আটটি প্রধান প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে এর বিপরীতে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ﷺ ও জিহাদের প্রতি ভালোবাসা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর কিয়ামতের কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে আয়াতের শেষে বলেছেন:
وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ﴿٢٤﴾
“আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।“ (সূরা আত-তওবা: ২৪)
এটি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ফরজে আইন জিহাদ থেকে শুধু তারাই মুখ ফিরিয়ে নেয়, যাদের অন্তরে ফিসক (পাপাচারিতা) রয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা এমন পাপাচারীদের হিদায়াত দান করেন না।
হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়ার এবং গোমরাহিতে লিপ্ত হওয়ার সূচনা তখনই হয়, যখন মানুষ জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকে। কিন্তু এর পরের ধাপে আল্লাহ তাআলা তার থেকে উপলব্ধি ও গভীর জ্ঞানের নিয়ামত কেড়ে নেন, এমনকি সে ভালোকে মন্দ এবং মন্দকে ভালো ভাবতে শুরু করে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন!) পরে সে তার এই বিভ্রান্তি ও দুর্ভাগ্যকেই প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের স্বীকৃতি দিয়ে তার ওপর গর্ব করতে থাকে। অথচ আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যারা পিছিয়ে থাকতে পছন্দ করে, তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয় এবং তারা বুঝবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ ﴿٨٧﴾
“তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরেআনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। বস্তুতঃতারা বোঝে না।” (সূরা আত-তওবা: ৮৭) প্রিয় ভাইয়েরা!
এই জিহাদ এখন কাদের বিরুদ্ধে হবে এবং কোথায় হবে? নিঃসন্দেহে, এটি কুফরের নেতা, জায়োনিস্ট শয়তানদের, তাদের সেনাবাহিনী এবং যারা তাদের সুরক্ষা দেয় তাদের বিরুদ্ধেই হওয়া উচিত। তবে আজ এই সত্য বোঝা কঠিন নয় যে, এই কুফরের নেতারা তাদের শয়তানি উদ্দেশ্যে কখনো সফল হতে পারত না, যদি আমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তাদের দোসর সরবরাহ না হতো। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই সেনাবাহিনী ও শাসকগোষ্ঠী আসলে সেই বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক, যারা সবসময় আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জায়োনিস্টদের রক্ষার লড়াই লড়েছে। এবং তারা এই কাজ গোপনে করেনি; বরং প্রকাশ্যেই আমেরিকার মিত্র হয়ে মুজাহিদদের রক্ত ঝরিয়েছে, তাদের বিক্রি করে ডলার উপার্জন করেছে এবং এখনো তারা কুফরের এই যুদ্ধে নিজেদের স্বার্থে ব্যবসা করছে।
সত্য হলো, এই বিশ্বাসঘাতকরা শুরু থেকেই চেষ্টা করে আসছে যেন এই ভূমিতে ঈমানদারদের সেই বাহিনী কখনো তৈরি না হয়, যারা আল্লাহর আনুগত্য, তাঁর দ্বীনের বিজয়, নির্যাতিত উম্মাহর সাহায্য এবং পবিত্র স্থানগুলোর মুক্তিকে নিজেদের লক্ষ্য বানিয়ে নেয়।
এই বিশ্বব্যাপী শয়তানি ও দাজ্জালি ব্যবস্থার ফাঁদে আমাদের এমনভাবে ফাঁসানো হয়েছে যে, যা কখনো দেশ, জাতি বা সংবিধানের নামে মিথ্যার পূজা করায় এবং ইসলামের মূল চেতনাকে দমন করে, সমাজ থেকে তা নির্মূল করে এবং হৃদয়-মস্তিষ্ক থেকে পর্যন্ত তা মুছে ফেলে। উপমহাদেশের ইতিহাস দেখুন; বাস্তবতা হলো, এখানে হোক ভারতীয় সেনাবাহিনী বা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কালেমা পাঠকারী সেনাবাহিনী—কিছু অংশে হয়তো পার্থক্য দেখা যাবে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই বাহিনী ও তাদের অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্য একটাই—দুনিয়া থেকে আল্লাহর বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করা, কুফরের নেতাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং সেই শয়তানদের রক্ষা করা, যারা আজ গাজা থেকে সোমালিয়া, সুদান ও মালি পর্যন্ত আমাদের মায়েরা ও বোনদের হত্যা করছে। অতএব, প্রিয় ভাইয়েরা!
আজ আমাদের নিজেদের মূল্যায়ন করা জরুরি—এই সত্য-মিথ্যার যুদ্ধে আমরা কোন পক্ষে আছি? আমরা কি এই বিশ্বব্যবস্থা ও তার স্থানীয় পাহারাদারদের অনুগত হয়ে তাদের শক্তি ও সুরক্ষা দিচ্ছি, নাকি এই তাগুতদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করছি এবং ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষাকে নিজেদের লক্ষ্য বানিয়েছি?
স্মরণ রাখুন! যদি আমরা এই বাতিল ব্যবস্থার অনুগত হয়ে যাই, যদি আমরা এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে ইসলামের বিজয় ও মুসলমানদের মুক্তির চিন্তা না করি, বরং জিহাদি শক্তির বিরোধিতাকেই যদি আমরা আমাদের সংবিধানিক ও জাতীয় কর্তব্য মনে করি, তাহলে আমাদের পরিণতি যেমনই হোক না কেন, বাস্তবতা এই যে, এই যুদ্ধে আমরা মসজিদে আকসার পক্ষে থাকব না। বরং গাজার জনগণের সমর্থনে সভা-সমাবেশ করেও আমরা আসলে গাজার শত্রুদেরই সহযোগিতা করব, এবং আমাদের পরিশ্রমের সুফল তারাই ভোগ করবে।
অতএব, আজ আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে গেছে যে, ভালোবাসা ও ঘৃণা, সমর্থন ও সম্পর্কচ্ছেদ এবং যুদ্ধ ও সংগ্রামের এই ময়দানে আমরা আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করবো। এই যুদ্ধ কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়; বরং শত্রুরাই শুরু থেকেই এই যুদ্ধকে প্রতিটি দেশ ও প্রতিটি অঙ্গনে ছড়িয়ে দিয়েছে, এবং আজও তাদের ফিতনা পুরো বিশ্বকে গ্রাস করে নিয়েছে।
সুতরাং, সে-ই প্রকৃত সৌভাগ্যবান, যে নিজেকে শিরক, নেফাক এবং কুফর ও ফাসাদের এই ব্যবস্থা ও তার বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে নেয় এবং আল্লাহর বাহিনীর তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে হৃদয়, জিহ্বা ও হাত দিয়ে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ-কেই নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নেয়।
দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী আমার সম্মানিত ভাইয়েরা!
আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন যে, আমরা সেই বাহিনীতে পরিণত হই, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত “يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ” বলে উল্লেখ করেছেন— অর্থাৎ যাদের প্রতি আল্লাহ ভালোবাসা রাখেন এবং যারা সর্বান্তকরণে আল্লাহকে ভালোবাসে। আমাদের উচিত সেই বাহিনীর অংশ হয়ে যাওয়া, যারা “أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ” (মুমিনদের প্রতি নম্র) এবং “أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ” (কাফিরদের প্রতি কঠোর) হওয়ার বাস্তব নমুনা হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, যারা প্রতিটি মুমিনের প্রতি— সে তাদের দল, সংগঠন বা জাতি-গোত্রের না-ও হতে পারে— বিনয়, ভালোবাসা ও সহানুভূতির আচরণ করে; আর আল্লাহর শত্রুদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করে, যদিও তারা নিজেদের গোত্র, জাতি বা স্বদেশেরই হয়ে থাকে। আমাদের সেই বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার, যাদের কাজ “يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ”— অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করা।[1] এবং তারা নিজেদের এই কর্ম ও আদর্শে এত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে যে, “وَلا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ”— কোনো ভৎর্সনা বা নিন্দার পরোয়া করে না।
এমন ব্যক্তিরা ও এমন বাহিনী কিয়ামত পর্যন্ত আবির্ভূত হতে থাকবে, আর প্রতিটি যুগের মুমিনদের জন্য এটি একটি পরীক্ষা যে, তারা এদের খুঁজে বের করে এবং তাদের সহযোদ্ধা হয়ে ওঠে। অতঃপর তারা নিজেরাও হিজবুল্লাহ (আল্লাহর দল) হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা করে, যারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও শয়তানের দাসত্বকারী হিজবুশ শয়তান (শয়তানের দল)-এর মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে যায়।
আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা হচ্ছে যে, ঈমানদার ও জিহাদকারীরা যেখানে এবং যে নামে থাকুক না কেন, আল্লাহ আমাদের তাদের সঙ্গী বানান এবং তাদের গুণাবলি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ, আমাদের ভালোবাসা ও ঘৃণা শুধুমাত্র আপনার জন্য খাঁটি করে দিন। আমাদের বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মানদণ্ড আপনার আনুগত্য ও অবাধ্যতা হোক। আল্লাহ করুন, আমাদের জীবন-মৃত্যুর লক্ষ্য কখনো আমাদের ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল, উপজাতি বা দেশ ও জাতির বুলুন্দি না হয়; বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম ও তাঁর দ্বীনের উন্নতি ও বুলুন্দি হোক। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর এই বাণীর বাস্তব নমুনা বানান—
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿١٦٢﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ ﴿١٦٣﴾
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। (*)তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল”।(সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩)
পড়িশেষে, আমি আপনাদের সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাই এবং এ দোয়া কামনা করি যে, আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইখলাস দান করুন, তাঁর দ্বীনের ওপর আমল করার ও ত্যাগ স্বীকার করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের এমন শক্তি দান করুন যেন আমরা উম্মতে মুসলিমার সাহায্যকারী হতে পারি, জালিমদের অত্যাচার প্রতিহতকারী ও নির্যাতিতদের চোখের অশ্রু মুছে দেওয়ার সুযোগ লাভ করি। আল্লাহ আমাদেরকে নফস ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন এবং প্রতিটি বিষয়ে সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সত্যের ওপর দৃঢ় রাখুন এবং এই পথেই আমাদেরকে শাহাদাতের মৃত্যু দান করুন।
وآخر دعوانا أن الحمد للہ رب العالمین وصلی اللہ تعالیٰ علی نبینا الأمین.
*****
[1] يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং
****
پی ڈی ایف
PDF (466 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৬৬ কিলোবাইট]
https://mega.nz/file/y0ZQBZQT#LRFNfaPG0xI18PxNrzRH1vOqRRe19jjdRIzQThBgd UU
https://secure.ue.internxt.com/d/sh/file/22d22be0-bdb7-45f7-9398-bae225d6362a/38c739afe87562689d58d311fefe508e90e48cfabae3a2ddf5 5d6516325413d9
ورڈ
WORD (318 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৩১৮ কিলোবাইট]
https://mega.nz/file/ylZzmaiI#JBoJGBheAKJs4uTB710Bz6iKK5ZFtJ3LY8hEsSCl5 Tk
https://share.eu.internxt.com/d/sh/file/1735fb6f-0dba-47aa-9209-12909d1f939e/bc254d7c0e6cc67cbcb485417d9a1bd65b285ee028e6df0afe 82a7a04e539dae
غلاف
Book cover [553 KB]
বুক কভার [৫৫৩ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/eid-bar...20hf%20Cover.j pg
https://secure.eu.internxt.com/d/sh/file/75959a56-bacf-4f28-ae3e-7dac1a3d41b8/22d88a86149a2f7691f256651df8e566f58df072f7f057911d 4fe9c90e2578b4
بينر
banner [616 KB]
ব্যানার [৬১৬ কিলোবাইট]
https://secure.ue.internxt.com/d/sh/file/6e833f4c-7600-4644-86f7-2e0fd890538f/81099b2148ed19dc7003c9c6b8d7c0fc47a9fa38efd444386b b6ffb2e3c0eea1
اپنی دعاؤں میں ہمیں یاد رکھيں
اداره النصر براۓ نشر و اشاعت
القاعدہ برِّ صغیر
আপনাদের দোয়ায়
আন নাসর মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
پیش کرتے ہیں
পরিবেশিত
Presents
بنگالی ترجمہ
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
عنوان:
শিরোনাম:
Titled
اپنی صف متعین کیجیے! عید الفطر 1446 ھ
بیان: از – استاد اسامہ محمود
আপনার কাতার নির্ধারণ করুন!
১৪৪৬ হিজরির ঈদুল ফিতরের উপলক্ষে বার্তা
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
আমির, আল-কায়েদা উপমহাদেশ
Determine Your Position!
Message on the occasion of Eid-ul-Fitr of 1446 Hijri
Ustad Usama Mahmud Hafizahullah

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، أما بعد
সমস্ত সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবীদের সর্দার হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার, সাহাবায়ে কেরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের প্রতি।
সালাত ও সালামের পর…
উপমহাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে বসবাসকারী প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা,
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পবিত্র রমজান মাসকে আমাদের জন্য গুনাহ থেকে মুক্তি, মহিমান্বিত কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় করার এবং তাকওয়া অর্জনের এক অনন্য সুযোগ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এ বরকতময় মাস ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করার জন্য আমরা আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
تقبل الله منا ومنكم!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের এই ইবাদত কবুল করুন এবং ঈদকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত, সাহায্য ও অনুগ্রহের সূচনা করে দিন। আমীন, ইয়া রব্বাল আলামিন! প্রিয় ভাইয়েরা!
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
إِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ ﴿٩٢﴾
“তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার বন্দেগী কর।” (সূরা আল-আম্বিয়া: ৯২)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ، إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ، تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
“মুমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত একটিদেহের মতো; যদি তার কোনো অঙ্গ কষ্ট পায়, তাহলে পুরো দেহ জাগ্রত থাকে এবংজ্বরে আক্রান্ত হয়।”সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ২৫৮৬
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেছেন—
مَنْ خَذَلَ مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ يُنْتَهَكُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ، وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ حُرْمَتِهِ، إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে সেই সময় পরিত্যাগ করবে যখন তারইজ্জত-সম্মান লুণ্ঠিত হচ্ছে এবং সে সাহায্যের মুখাপেক্ষী, তাহলে আল্লাহওতাকে এমন পরিস্থিতিতে পরিত্যক্ত রেখে দেবেন, যখন সে নিজে সাহায্যেরঅপেক্ষায় থাকবে।”সুনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ৪৮৮৪ প্রিয় ভাইয়েরা!
পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারত—সমগ্র উপমহাদেশে এমন একটি স্থানও নেই যেখানে ইসলাম ও মুসলমানরা পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে না। প্রতিটি জায়গায় ঈমানদারদের নিজস্ব সংকট ও ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে... দেড় বছর ধরে গাজায় ইসরাইল ও আমেরিকার যে নিষ্ঠুর আঘাত চলছে, ইতিহাসে এমন নিদর্শন খুব কমই দেখা যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের মুসলমানদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য, আমাদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার জন্য, গাফলতের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য এবং সেই মহান দায়িত্বের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, যা আমাদের ওপর উম্মত হিসেবে অর্পিত হয়েছে। আর এই দায়িত্ব পালনে আমাদের ব্যর্থতাই আজ আমাদেরকে শত্রুর সামনে দুর্বল ও অসহায় করে তুলেছে; তাদের অন্তর থেকে আমাদের প্রতিপত্তি সম্পূর্ণরূপে মুছে গেছে।
এই বিপর্যয়ের আরেকটি হৃদয়বিদারক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—গাজার মানুষ একের পর এক জানাজা তুলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, তারা সারাক্ষণ উম্মতে মুসলিমার কাছে সাহায্যের আবেদন করছে, কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ে উম্মত যাদেরকে নিজেদের অভিভাবক ভেবে তাদের ওপর নির্ভর করেছিল, তাদের পেছনে দাঁড়িয়েছিল, তারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক প্রমাণিত হয়েছে। তারা আসলে শত্রুরই দোসর, শত্রুরই রক্ষক ও সেনাসদস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে এই রক্তঝরানো ট্র্যাজেডি আমাদেরই কোলের বিষাক্ত সাপদের প্রতারণাকে সম্পূর্ণ উন্মোচিত করে দিয়েছে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, প্রিয় ভাইগণ! উম্মত হিসেবে এটি আমাদের একটি কঠিন পরীক্ষা, যেখানে কেবল আমাদের সেনাবাহিনী ও শাসকদের দোষারোপ করে নিজেদের দায়মুক্ত করা সম্ভব নয়। এ পরীক্ষা শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং আমরা সবাই এই পরীক্ষার সম্মুখীন। আমাদের প্রত্যেককেই একদিন একা আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেখানে প্রত্যেকের নিয়ত, সংকল্প, অনুভূতি, আগ্রহ ও কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রশ্ন করা হবে: সে কি উম্মতের ক্ষত সারানোর জন্য কোনো ভূমিকা রেখেছিল? সে কি মুসলমানদের দুর্ভোগ লাঘবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিল, নাকি—নাউজুবিল্লাহ—তাদের বিপদ আরও বাড়ানোর কারণ হয়েছিল?
এমতাবস্থায়, আমাদের প্রত্যেকের উচিত আত্মপর্যালোচনা করা, নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা এবং বিচার করা—আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, এবং আসলে কোথায় থাকা উচিত ছিল? যাতে “حاسبوا قبل أن تحاسبوا”—”নিজেদের হিসাব নাও, তার আগে যে তোমাদের হিসাব নেওয়া হবে”—এই উক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব হয় এবং সেই মহাদিবসে চূড়ান্ত ক্ষতির শিকার হওয়া থেকে আমরা বাঁচতে পারি, যার কোনো প্রতিকার আর কখনোই সম্ভব হবে না।
মর্যাদাবান ভাইয়েরা!
বাস্তবতা হলো, আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তার ঈমান, আমল, সংকল্প, প্রচেষ্টা ও কৌশলের মাধ্যমে উম্মতের সাহায্য ও সমর্থনের কারণ হতে পারে। ঠিক তেমনি, আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি উম্মতকে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত করার কারণও হতে পারে।
আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত ইরশাদ করেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ﴿٧﴾
“হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ: ৭)
যদি তোমরা তাঁর আনুগত্য করো, তাঁর দ্বীনের উপর আমল করে তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসো, তবে তিনি তোমাদের নিরাশ করবেন না। তিনি তোমাদের দোয়া কবুল করবেন এবং তাঁর সাহায্য দিয়ে তোমাদের সম্মানিত করবেন।
আল্লাহ আরও বলেন:
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣٩﴾
“তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৯)
অতএব, আসুন আমরা নিজেদের হিসাব নিই— আমার ঈমান ও আমল কি অন্তত সেই স্তরে পৌঁছেছে যা আল্লাহ চান? যে স্তরের বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন? নাকি (নাউজুবিল্লাহ) আমারই অন্তরের নিয়তের ত্রুটি, আমারই আমলের দুর্বলতা আমার নির্যাতিত ভাই-বোনদের সাহায্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে?
মজলুমদের সাহায্যের প্রথম ধাপ এবং এর দিকে প্রথম কদমটি অন্য কারও নয়, বরং আমার নিজ জীবন এবং আমার নিজ কর্তব্যপরিধি থেকেই শুরু হয়। এর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো— আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাঁর অবাধ্যতা ত্যাগ করা এবং তাঁকে রাজি-খুশি করার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো।
গাজার মজলুমদের সাহায্য করতে হলে প্রথম করণীয় হলোআমাদের নিজেদের সম্পর্ক আমাদের রবের সঙ্গে ঠিক করা। প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা, তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করা এবং আমাদের ইবাদত, লেনদেন ও চরিত্রে এমন এক নিষ্ঠা গড়ে তোলা, যা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন:
وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ.
“যখন আমার বান্দা (আমলের) বিশেষশুদ্ধি অর্জন করে, তখন যদি সে আমার কাছে কিছু চায়, আমি তাকে তা দান করি, আর যদি কোনো বিপদ থেকে আশ্রয় চায়, আমি তাকে আশ্রয় দিই।” সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৬৫০২
যদি আমরা সত্যিই এটি করতে পারি, তাহলে গাজার মজলুমদের ওপর থেকে জুলুম দূর করার প্রথম ধাপ আমরা অতিক্রম করব। এরপর, আল্লাহ আমাদেরকে সেই বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন, যাদের তিনি মজলুমদের সাহায্যের জন্য এবং দ্বীনের বিজয়ের জন্য নির্বাচিত করেন।
এটি সহজ নয়, বরং কঠিন। তবে যাদের আল্লাহ তাওফিক দেন, তাদের জন্য এটি সহজ হয়ে যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই তাওফিক দান করুন এবং আমাদের এমনযোগ্যতা দান করুন, যাতে আমরা আমাদের নির্যাতিত ভাই-বোনদের সাহায্য করতেপারি। আমিন।
সম্মানিত ভাইয়েরা!
উপরের বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে বলছি যে, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হল জিহাদ অর্থাৎ কিতাল। আল্লাহর কিতাব, হাদিস শরিফ এবং ফুকাহায়ে কেরামের গ্রন্থসমূহ সকলেই এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেয় যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই জিহাদ ও কিতাল নামাজ ও রোজার মতোই ফরজে আইন। যদি আমরা আজকের অবস্থায়ও এটিকে ফরজ মনে না করি, তাহলে কখন এটিকে ফরজ হিসেবে গ্রহণ করব?
কুরআন কারিমে অন্য কোনো ফরজ সম্পর্কে এত অধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়নি, যতগুলো আয়াত জিহাদ ও কিতালের গুরুত্ব বোঝানো, এর প্রতি উৎসাহিত করা, অলসতা না করার হুঁশিয়ারি প্রদান এবং এটিকে নিজের জীবনের অংশ বানানোর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব, আমাদের উচিত উম্মতের করুন অবস্থা সামনে রেখে আল্লাহর কিতাবকে অন্তরের গভীরতা দিয়ে তিলাওয়াত করা, জিহাদ সম্পর্কিত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা অধ্যয়ন করা, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পবিত্র জীবনী অধ্যয়ন করা এবং তারপর নিজের আত্মসমালোচনা করা—এই সংকটময় মুহূর্তে আমি কেন এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ থেকে দূরে রয়েছি? কেন এখনো আমি যথাযথভাবে এটিকে আদায় করতে সক্ষম হইনি? কোনো ভালোবাসা, ভয় বা অন্য কোনো বস্তু কি আমাকে এই পথ থেকে বিরত রাখছে এবং আমার ঈমানকে দুর্বল করে দিচ্ছে?
যদি ঘরবাড়ি, আত্মীয়-স্বজন বা ধনসম্পদের ভালোবাসা এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেই আয়াতের কথা স্মরণ করুন যেখানে আল্লাহ তাআলা আটটি প্রধান প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে এর বিপরীতে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ﷺ ও জিহাদের প্রতি ভালোবাসা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর কিয়ামতের কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে আয়াতের শেষে বলেছেন:
وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ﴿٢٤﴾
“আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।“ (সূরা আত-তওবা: ২৪)
এটি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ফরজে আইন জিহাদ থেকে শুধু তারাই মুখ ফিরিয়ে নেয়, যাদের অন্তরে ফিসক (পাপাচারিতা) রয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা এমন পাপাচারীদের হিদায়াত দান করেন না।
হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়ার এবং গোমরাহিতে লিপ্ত হওয়ার সূচনা তখনই হয়, যখন মানুষ জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকে। কিন্তু এর পরের ধাপে আল্লাহ তাআলা তার থেকে উপলব্ধি ও গভীর জ্ঞানের নিয়ামত কেড়ে নেন, এমনকি সে ভালোকে মন্দ এবং মন্দকে ভালো ভাবতে শুরু করে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন!) পরে সে তার এই বিভ্রান্তি ও দুর্ভাগ্যকেই প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের স্বীকৃতি দিয়ে তার ওপর গর্ব করতে থাকে। অথচ আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যারা পিছিয়ে থাকতে পছন্দ করে, তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয় এবং তারা বুঝবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ ﴿٨٧﴾
“তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরেআনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। বস্তুতঃতারা বোঝে না।” (সূরা আত-তওবা: ৮৭) প্রিয় ভাইয়েরা!
এই জিহাদ এখন কাদের বিরুদ্ধে হবে এবং কোথায় হবে? নিঃসন্দেহে, এটি কুফরের নেতা, জায়োনিস্ট শয়তানদের, তাদের সেনাবাহিনী এবং যারা তাদের সুরক্ষা দেয় তাদের বিরুদ্ধেই হওয়া উচিত। তবে আজ এই সত্য বোঝা কঠিন নয় যে, এই কুফরের নেতারা তাদের শয়তানি উদ্দেশ্যে কখনো সফল হতে পারত না, যদি আমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তাদের দোসর সরবরাহ না হতো। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই সেনাবাহিনী ও শাসকগোষ্ঠী আসলে সেই বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক, যারা সবসময় আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জায়োনিস্টদের রক্ষার লড়াই লড়েছে। এবং তারা এই কাজ গোপনে করেনি; বরং প্রকাশ্যেই আমেরিকার মিত্র হয়ে মুজাহিদদের রক্ত ঝরিয়েছে, তাদের বিক্রি করে ডলার উপার্জন করেছে এবং এখনো তারা কুফরের এই যুদ্ধে নিজেদের স্বার্থে ব্যবসা করছে।
সত্য হলো, এই বিশ্বাসঘাতকরা শুরু থেকেই চেষ্টা করে আসছে যেন এই ভূমিতে ঈমানদারদের সেই বাহিনী কখনো তৈরি না হয়, যারা আল্লাহর আনুগত্য, তাঁর দ্বীনের বিজয়, নির্যাতিত উম্মাহর সাহায্য এবং পবিত্র স্থানগুলোর মুক্তিকে নিজেদের লক্ষ্য বানিয়ে নেয়।
এই বিশ্বব্যাপী শয়তানি ও দাজ্জালি ব্যবস্থার ফাঁদে আমাদের এমনভাবে ফাঁসানো হয়েছে যে, যা কখনো দেশ, জাতি বা সংবিধানের নামে মিথ্যার পূজা করায় এবং ইসলামের মূল চেতনাকে দমন করে, সমাজ থেকে তা নির্মূল করে এবং হৃদয়-মস্তিষ্ক থেকে পর্যন্ত তা মুছে ফেলে। উপমহাদেশের ইতিহাস দেখুন; বাস্তবতা হলো, এখানে হোক ভারতীয় সেনাবাহিনী বা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কালেমা পাঠকারী সেনাবাহিনী—কিছু অংশে হয়তো পার্থক্য দেখা যাবে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই বাহিনী ও তাদের অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্য একটাই—দুনিয়া থেকে আল্লাহর বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করা, কুফরের নেতাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং সেই শয়তানদের রক্ষা করা, যারা আজ গাজা থেকে সোমালিয়া, সুদান ও মালি পর্যন্ত আমাদের মায়েরা ও বোনদের হত্যা করছে। অতএব, প্রিয় ভাইয়েরা!
আজ আমাদের নিজেদের মূল্যায়ন করা জরুরি—এই সত্য-মিথ্যার যুদ্ধে আমরা কোন পক্ষে আছি? আমরা কি এই বিশ্বব্যবস্থা ও তার স্থানীয় পাহারাদারদের অনুগত হয়ে তাদের শক্তি ও সুরক্ষা দিচ্ছি, নাকি এই তাগুতদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করছি এবং ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষাকে নিজেদের লক্ষ্য বানিয়েছি?
স্মরণ রাখুন! যদি আমরা এই বাতিল ব্যবস্থার অনুগত হয়ে যাই, যদি আমরা এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে ইসলামের বিজয় ও মুসলমানদের মুক্তির চিন্তা না করি, বরং জিহাদি শক্তির বিরোধিতাকেই যদি আমরা আমাদের সংবিধানিক ও জাতীয় কর্তব্য মনে করি, তাহলে আমাদের পরিণতি যেমনই হোক না কেন, বাস্তবতা এই যে, এই যুদ্ধে আমরা মসজিদে আকসার পক্ষে থাকব না। বরং গাজার জনগণের সমর্থনে সভা-সমাবেশ করেও আমরা আসলে গাজার শত্রুদেরই সহযোগিতা করব, এবং আমাদের পরিশ্রমের সুফল তারাই ভোগ করবে।
অতএব, আজ আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে গেছে যে, ভালোবাসা ও ঘৃণা, সমর্থন ও সম্পর্কচ্ছেদ এবং যুদ্ধ ও সংগ্রামের এই ময়দানে আমরা আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করবো। এই যুদ্ধ কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়; বরং শত্রুরাই শুরু থেকেই এই যুদ্ধকে প্রতিটি দেশ ও প্রতিটি অঙ্গনে ছড়িয়ে দিয়েছে, এবং আজও তাদের ফিতনা পুরো বিশ্বকে গ্রাস করে নিয়েছে।
সুতরাং, সে-ই প্রকৃত সৌভাগ্যবান, যে নিজেকে শিরক, নেফাক এবং কুফর ও ফাসাদের এই ব্যবস্থা ও তার বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে নেয় এবং আল্লাহর বাহিনীর তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে হৃদয়, জিহ্বা ও হাত দিয়ে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ-কেই নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নেয়।
দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী আমার সম্মানিত ভাইয়েরা!
আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন যে, আমরা সেই বাহিনীতে পরিণত হই, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত “يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ” বলে উল্লেখ করেছেন— অর্থাৎ যাদের প্রতি আল্লাহ ভালোবাসা রাখেন এবং যারা সর্বান্তকরণে আল্লাহকে ভালোবাসে। আমাদের উচিত সেই বাহিনীর অংশ হয়ে যাওয়া, যারা “أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ” (মুমিনদের প্রতি নম্র) এবং “أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ” (কাফিরদের প্রতি কঠোর) হওয়ার বাস্তব নমুনা হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, যারা প্রতিটি মুমিনের প্রতি— সে তাদের দল, সংগঠন বা জাতি-গোত্রের না-ও হতে পারে— বিনয়, ভালোবাসা ও সহানুভূতির আচরণ করে; আর আল্লাহর শত্রুদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করে, যদিও তারা নিজেদের গোত্র, জাতি বা স্বদেশেরই হয়ে থাকে। আমাদের সেই বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার, যাদের কাজ “يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ”— অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করা।[1] এবং তারা নিজেদের এই কর্ম ও আদর্শে এত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে যে, “وَلا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ”— কোনো ভৎর্সনা বা নিন্দার পরোয়া করে না।
এমন ব্যক্তিরা ও এমন বাহিনী কিয়ামত পর্যন্ত আবির্ভূত হতে থাকবে, আর প্রতিটি যুগের মুমিনদের জন্য এটি একটি পরীক্ষা যে, তারা এদের খুঁজে বের করে এবং তাদের সহযোদ্ধা হয়ে ওঠে। অতঃপর তারা নিজেরাও হিজবুল্লাহ (আল্লাহর দল) হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা করে, যারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও শয়তানের দাসত্বকারী হিজবুশ শয়তান (শয়তানের দল)-এর মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে যায়।
আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা হচ্ছে যে, ঈমানদার ও জিহাদকারীরা যেখানে এবং যে নামে থাকুক না কেন, আল্লাহ আমাদের তাদের সঙ্গী বানান এবং তাদের গুণাবলি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ, আমাদের ভালোবাসা ও ঘৃণা শুধুমাত্র আপনার জন্য খাঁটি করে দিন। আমাদের বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মানদণ্ড আপনার আনুগত্য ও অবাধ্যতা হোক। আল্লাহ করুন, আমাদের জীবন-মৃত্যুর লক্ষ্য কখনো আমাদের ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল, উপজাতি বা দেশ ও জাতির বুলুন্দি না হয়; বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম ও তাঁর দ্বীনের উন্নতি ও বুলুন্দি হোক। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর এই বাণীর বাস্তব নমুনা বানান—
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿١٦٢﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ ﴿١٦٣﴾
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। (*)তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল”।(সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩)
পড়িশেষে, আমি আপনাদের সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাই এবং এ দোয়া কামনা করি যে, আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইখলাস দান করুন, তাঁর দ্বীনের ওপর আমল করার ও ত্যাগ স্বীকার করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের এমন শক্তি দান করুন যেন আমরা উম্মতে মুসলিমার সাহায্যকারী হতে পারি, জালিমদের অত্যাচার প্রতিহতকারী ও নির্যাতিতদের চোখের অশ্রু মুছে দেওয়ার সুযোগ লাভ করি। আল্লাহ আমাদেরকে নফস ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন এবং প্রতিটি বিষয়ে সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সত্যের ওপর দৃঢ় রাখুন এবং এই পথেই আমাদেরকে শাহাদাতের মৃত্যু দান করুন।
وآخر دعوانا أن الحمد للہ رب العالمین وصلی اللہ تعالیٰ علی نبینا الأمین.
*****
[1] يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং
****
پی ڈی ایف
PDF (466 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৬৬ কিলোবাইট]
https://mega.nz/file/y0ZQBZQT#LRFNfaPG0xI18PxNrzRH1vOqRRe19jjdRIzQThBgd UU
https://secure.ue.internxt.com/d/sh/file/22d22be0-bdb7-45f7-9398-bae225d6362a/38c739afe87562689d58d311fefe508e90e48cfabae3a2ddf5 5d6516325413d9
ورڈ
WORD (318 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৩১৮ কিলোবাইট]
https://mega.nz/file/ylZzmaiI#JBoJGBheAKJs4uTB710Bz6iKK5ZFtJ3LY8hEsSCl5 Tk
https://share.eu.internxt.com/d/sh/file/1735fb6f-0dba-47aa-9209-12909d1f939e/bc254d7c0e6cc67cbcb485417d9a1bd65b285ee028e6df0afe 82a7a04e539dae
غلاف
Book cover [553 KB]
বুক কভার [৫৫৩ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/eid-bar...20hf%20Cover.j pg
https://secure.eu.internxt.com/d/sh/file/75959a56-bacf-4f28-ae3e-7dac1a3d41b8/22d88a86149a2f7691f256651df8e566f58df072f7f057911d 4fe9c90e2578b4
بينر
banner [616 KB]
ব্যানার [৬১৬ কিলোবাইট]
https://secure.ue.internxt.com/d/sh/file/6e833f4c-7600-4644-86f7-2e0fd890538f/81099b2148ed19dc7003c9c6b8d7c0fc47a9fa38efd444386b b6ffb2e3c0eea1
اپنی دعاؤں میں ہمیں یاد رکھيں
اداره النصر براۓ نشر و اشاعت
القاعدہ برِّ صغیر
আপনাদের দোয়ায়
আন নাসর মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent
Comment