
আল ফিরদাউসের সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
গাজা আজ এক রক্তস্নাত যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিদিন শিশুর কান্না, মায়ের আর্তনাদ, বৃদ্ধের বিলাপ আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে—কিন্তু তথাকথিত বিশ্বনেতারা আর তাদের অন্ধ অনুসারী জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকায় বসে আছে। এই পৃথিবী কি কেবল ইহুদিবাদী ইসরায়েলের জন্য? ফিলিস্তিনের রক্তের কোনো দাম নেই?
গাজার নুসেইরাত শিবিরে একদিনে ৮৫ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে—নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কারও জীবনই সন্ত্রাসী ইসরায়েলের হাতে নিরাপদ নয়। নুসেইরাতের আল আহলি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষদের ওপর বোমা বর্ষণ করে রক্তের সাগর বানিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। আর জাতিসংঘ? তারা শুধু “গভীর উদ্বেগ” জানিয়েছে—যেন এই উদ্বেগই ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দেবে, কিংবা শিশুদের প্রাণ ফিরিয়ে দেবে!
আমেরিকা: আগ্রাসনের আসল পৃষ্ঠপোষক
আমেরিকা মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় বুলি ঝাড়ে, কিন্তু আসলে এই হত্যাযজ্ঞের আসল মদদদাতা তারাই। একদিকে শান্তির নাটক মঞ্চস্থ হয় জাতিসংঘের মঞ্চে, অন্যদিকে আমেরিকা ইসরায়েলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরাতে সহায়তা করে। এটাই তাদের দ্বিচারিতা, এটাই তাদের ভণ্ডামি!
ইসরায়েলের আসল মুখোশ
এ যুদ্ধ কেবল হামাস বা প্রতিরোধের বিরুদ্ধে নয়—এ যুদ্ধ ফিলিস্তিনের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে, এ যুদ্ধ মুসলমানদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসী ইসরায়েল চায় গাজা ফাঁকা হয়ে যাক, পশ্চিম তীর ইহুদি দখলে চলে যাক, আর ফিলিস্তিনের নামটা মানচিত্র থেকে মুছে যাক। শিশুদের হত্যাও তাদের কাছে এক ধাপ এগোনো—এটাই তাদের সভ্যতার সংজ্ঞা।
জাতিসংঘ: ব্যর্থতার প্রতীক
জাতিসংঘ প্রমাণ করেছে, তারা এক অর্থহীন প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা রেজুলেশন পাস করে, মোমবাতি জ্বালায়, গভীর উদ্বেগ জানায়—কিন্তু ইসরায়েলের আগ্রাসন ঠেকাতে এক চুলও এগোয় না। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে, শতাধিক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে—কিন্তু সন্ত্রাসী ইসরায়েল তাদের সবার মুখে থুতু মেরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের পতন অনিবার্য
৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে আজ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত ১ লক্ষ ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে এখনও অগণিত লাশ।
আজকের এই রক্তস্নাত গাজা একদিন মুক্তির অগ্নিগর্ভ হবে। প্রতিটি শহীদের রক্ত মুজাহিদদের হাতে প্রতিশোধের শপথ তুলে দিচ্ছে। শিশুদের কান্না, মায়েদের আহাজারি একদিন ইসরায়েলের পতনের সাইরেন হয়ে বাজবে।
ইসরায়েল এবং তার পৃষ্ঠপোষকরা ভুলে গেছে—জুলুমের সাম্রাজ্য কখনো স্থায়ী হবে না। ফিলিস্তিনের মুজাহিদরা ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসবে আগুনের ঝড় নিয়ে, তারা প্রতিশোধের অগ্নিশপথ নিয়ে আবার লড়াইয়ের ময়দানে বহুগুণ হয়ে উঠবে। আর সেই দিনে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়বে ইসরায়েলের ঔদ্ধত্য, আমেরিকার ভণ্ডামি আর জাতিসংঘের নীরবতা।
রাত যতোই গভীর হোক, ভোর আসবেই। যত রক্তই ঝরুক, প্রতিশোধের ঝড় থেমে থাকবে না। ফিলিস্তিনের মুক্তির মিছিলে নতুন প্রজন্মের মুজাহিদরা শপথ নিচ্ছে—এই ভূমি একদিন আগ্রাসনের হাত থেকে মুক্ত হবেই, বি ইযনিল্লাহ।
এটাই শহীদের রক্তের অঙ্গীকার।
نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِينَا أَبَدًا
“আমরা তারা, যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে বায়আত করেছি—জিহাদের জন্য, যতদিন আমরা বেঁচে থাকি।”
Comment