পাহাড়ের অদৃশ্য দুঃখ ও রক্তাক্ত বাস্তবতা

আল ফিরদাউসের সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
খাগড়াছড়িতে এক মারমা তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে শয়ন শীল নামের এক হিন্দু যুবক অভিযুক্ত হয়। অথচ এর প্রতিবাদে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা উল্টো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, মসজিদে ভাঙচুর চালায়, গুইমারাতে জ্বালিয়ে দেয় পুরো একটি বাঙালি গ্রাম। দোকানপাট লুট করে, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মেজরসহ বহু সেনাকে আহত করে। প্রশ্ন জাগে— এরা কাকে রক্ষা করছে? এদের লক্ষ্যই বা কী?
পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের নীলনকশা
ইউপিডিএফ, জেএসএস, কেএনএফ— এইসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একটাই উদ্দেশ্য: পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের বুক থেকে ছিঁড়ে নেওয়া, অথবা ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করা।
এরা মুসলমান ও বাঙালিদের শত্রু মনে করে। সাধারণ পাহাড়িরাও তাদের ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার।
বাঙালি মুসলমানদের জমি, ব্যবসার জন্য চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে রাজি না হলে কখনো কখনো তাদের হত্যা পর্যন্ত করা হয়।
আর রাষ্ট্র কর্তৃক উন্নয়ন প্রকল্প এলেই তারা স্লোগান তোলে— “পর্যটন বন্ধ করো, উন্নয়ন বন্ধ করো।” অথচ তারাই শত শত গাছ কেটে পাহাড় ধ্বংস করে। এর কারণ একটাই— রাস্তা ঘাট হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, সন্ত্রাসীদের আধিপত্য ভেঙে যাবে। তাই তারা উন্নয়নের শত্রু।
‘আদিবাসী’ শব্দের রাজনীতি
এরা নিজেদের “আদিবাসী” বলে প্রচার করে, আর বাঙালিদেরকে “সেটেলার” বলে। অথচ ইতিহাস বলে- মাত্র ১৫০-২০০ বছর আগে মিয়ানমার ও ভারতের দিক থেকে পালিয়ে এরা এ দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। মিয়ানমারের বর্মী রাজার হাত থেকে বাঁচতে তারা এদেশে পাহাড়ে এসে আশ্রয় নেয়। এর আরো বহুবছর আগে থেকে বাঙালি মুসলিমরা পাহাড়ে বাস করছেন। সুতরাং পাহাড়ের আদিবাসী উগ্র উপজাতিরা নয়, পাহাড়ের “আদিবাসী” বাঙালি মুসলিমরা।
পাহাড়ে মুসলিমদের অনিশ্চিত জীবন
উপজাতি সন্ত্রাসীদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি জুলুম অত্যাচারের শিকার মুসলিমরা। উপজাতিদের কেউ হিদায়াতের দিশা পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করলে তাদের জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা! নব মুসলিমদের পরিবার সহ সহ্য করতে হয় অসহনীয় নির্যাতন। ইসলাম ধর্ম ত্যাগ না করলে তাদের হত্যা করা হয়।
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো শহীদ ওমর ফারুক ত্রিপুরা রাহিমাহুল্লাহ’র ঘটনা।
২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবনের রোয়াংছড়িতে ইসলাম গ্রহণের অপরাধে তাকে গুলি করে হত্যা করে জেএসএস সন্ত্রাসীরা।
তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ইমামতি করতেন, মানুষকে সত্যের পথে ডাকতেন। তার হাতে প্রায় ৩২টি ত্রিপুরা পরিবারের প্রায় ১৫০ জন ইসলাম গ্রহণ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্তু লারমার জেএসএস সন্ত্রাসীরা আল্টিমেটাম দেয়— ইসলাম ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু তিনি দ্বীনের পথে অটল থাকলেন। অবশেষে উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে শহীদ করে।
তার রক্ত প্রমাণ করে দিলো— পাহাড়ে মুসলমান হওয়া মানেই মৃত্যু!
এটাই সেই নির্মম বাস্তবতা, যা আজও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে— পাহাড়ে মুসলমানদের জীবন সস্তা নয়, বরং মৃত্যুর সমার্থক।
অতীতের রক্তাক্ত ইতিহাস
১৯৮৪ সালের ৩০ মে পাহাড়ে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর চালানো হয় ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ। পুরো একটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন, ৪০০-এরও বেশি মানুষকে ভোররাতে জবাই করে হত্যা করা হয়।
২০১৫ সালে মাটিরাঙায় মাত্র দুই লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ার কারণে প্রকাশ্যে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় এক ব্যবসায়ীকে।
এসব ঘটনা প্রমাণ করে, পাহাড়ে বাঙালি মুসলমানদের নিরাপত্তা ছিল না, আজও নেই!
ভারতের চক্রান্ত ও খ্রিস্টান মিশনারি
পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা ভারতের ক্রীড়নক। তাদের স্বপ্ন— বাংলাদেশকে দুর্বল করা, পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করে ভারতীয় প্রভাবাধীন রাষ্ট্র বানানো। আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান মিশনারিরাও এই ষড়যন্ত্রের অংশ। তাদের লক্ষ্য— পাহাড় থেকে মুসলিম ও বাঙালি মুসলমানদের হটিয়ে দিয়ে “জুম্মল্যান্ড” নামের একটি খ্রিস্টান-প্রভাবিত রাষ্ট্র তৈরি করা।
তাদের আসল শত্রু মুসলমান। কারণ মুসলিমরা থাকলে তাদের স্বাধীনতার ষড়যন্ত্র ভেস্তে যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম— এ ভূখণ্ড প্রাচীন কাল থেকেই মুসলিম শাসনাধীন ছিল। এ ভূমি মুসলিমদের ভূমি। কিন্তু আজও সেখানে বাঙালি মুসলমানরা বেঁচে আছে অদৃশ্য শৃঙ্খলে বাঁধা ভয়, রক্ত আর নির্যাতনের ভেতর।
পাহাড় এ ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটিকে কেউ ছিঁড়ে নিতে পারবে না।
খ্রিস্টানবাদী ও হিন্দুত্ববাদী কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না, হতে দিবো না ইনশাআল্লাহ।
Comment