কুষ্টিয়ার দুর্গাপূজায় অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর ঘটনা: একটি সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের প্রতীক

আল ফিরদাউসের সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় এবারের দুর্গাপূজায় একটি উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে। ৩৮টি পূজামণ্ডপে অসুরের মূর্তিতে দাড়ি যুক্ত করা হয়েছে, যা কোনো নিছক শিল্পকর্ম নয়, বরং একটি সুস্পষ্ট প্রতীকী আক্রমণ। এই কাজটি মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘অশুভ শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রচেষ্টা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর, রবিবার, এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন মূর্তিগুলো গামছা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এই ঘটনাকে শুধু স্থানীয় ঘটনা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এটি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার সঙ্গে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের যোগসূত্র রয়েছে।
দাড়িওয়ালা অসুর: একটি ইচ্ছাকৃত প্রতীকী আক্রমণ
কুষ্টিয়ায় অসুরের মূর্তিতে দাড়ি যুক্ত করার ঘটনা কোনো সাধারণ শৈল্পিক সিদ্ধান্ত নয়। হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসে অসুরকে ‘অশুভ শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাকে হত্যা করে ‘ধর্মীয় বিজয়’ অর্জন করা হয়। মূর্তিতে দাড়ি যুক্ত করে মুসলিম সম্প্রদায়কে সরাসরি টার্গেট করা হয়েছে, যেন তারাই এই ভূমির ‘শত্রু’ এবং তাদের উচ্ছেদই ‘ধর্মীয় জয়’। কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক দেবেশ চন্দ্র বিশ্বাসের ফেসবুক পোস্টে এই ঘটনার একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সে লিখেছে, “মুখে দাড়ি গোঁফ থাকার কারণে প্রশাসন অসুরের মুখ গামছায় ঢেকে দিয়েছে।”
এটি কি শুধুই একটি সাধারণ অভিযোগ, নাকি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা জাগানোর জন্য একটি ইচ্ছাকৃত প্ররোচনা?
এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো মসজিদ ভাঙছে, মুসলিম নারী-পুরুষদের উপর হামলা করছে, এমনকি গণহারে তাদের উচ্ছেদ করছে। একই সময়ে, বাংলাদেশেও ‘ভাগওয়া লাভ ট্র্যাপ’ নামে পরিচিত একটি নোংরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলো কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। এই সব কিছুর মাধ্যমে কি তারা বোঝাতে চাইছে যে মুসলিমরা ‘অসুর’, এবং তাদের হত্যা বা উচ্ছেদই ‘রাম রাজত্ব’ প্রতিষ্ঠার পথ? তারা কি মুসলিমমুক্ত ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে?
তবে শুনে রাখো হে নাপাক মুশরিকরা, তোমাদের এ ধরনের ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না। এ ভূখণ্ডের মুসলিম উম্মাহ তাদের অটুট ঈমান ও ঐক্যের শক্তি দিয়ে এই সকল উসকানির জবাব দেবে। এই ভূখণ্ড তাওহীদের দুর্গ, যেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বিষাক্ত এজেন্ডা কখনোই সফল হবে না। আল্লাহর ইচ্ছায় উম্মাহর বীর মুজাহিদরা উঠছে। তারা প্রতিটি নির্যাতিত মুসলিমের রক্তের প্রতিশোধ নেবে এবং প্রতিটি বোনের সম্ভ্রমের হিফাজত করবে। এই মাটিতে ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠিত হবে না। বরং উপযুক্ত সময়ে তাওহীদের ভিত্তিতে একটি ইসলামী ইমারত কায়েম হবে, ইনশাআল্লাহ।
Comment