“অপারেশন নুসরাতুল মাজলুমিন”: পূর্ব আফ্রিকায় ইসলামের বিজয়ের পথে শাবাব মুজাহিদদের অমর গাথা

আল ফিরদাউসের সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর কেন্দ্রে অবস্থিত “গোদাকা জালিয়ো” কারাগার—একটি নাম, যা অত্যাচারের অন্ধকার আর নিপীড়নের ভয়াল ছায়ার প্রতীক। কিন্তু ৪ অক্টোবর, শনিবার, হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনের বীর যোদ্ধারা এই অন্ধকূপে এক অভূতপূর্ব অভিযান চালিয়েছেন, যা ইসলামের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই অভিযান, “অপারেশন নুসরাতুল মাজলুমিন” বা অত্যাচারিতদের মুক্তির অভিযান, শুধু একটি সামরিক বিজয় নয়, বরং পূর্ব আফ্রিকায় তাওহিদের পতাকা উঁচিয়ে ধরার এক অমর প্রতিশ্রুতি। এটি ক্রুসেডার শক্তি, তাদের মিত্র তুরস্ক এবং তাদের পুতুল সোমালি প্রশাসনের দুর্বলতাকে উন্মোচিত করেছে, ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে মুজাহিদদের অটল সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই অভিযান ছিল আশ শাবাব মুজাহিদিনের চতুর্থ বৃহৎ অপারেশন, যা আফ্রিকার মাটিতে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বানের জ্বলন্ত প্রমাণ। ফিদায়ী মুজাহিদদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই অভিযানে তারা সিকিউরিটি গাড়ির ছদ্মবেশে কারাগারের দুর্ভেদ্য দেওয়াল ভেদ করে প্রবেশ করে। বিস্ফোরকের গর্জনে শত্রুদের প্রতিরক্ষা ধূলিসাৎ হয়, আর মুজাহিদরা ভূগর্ভস্থ কক্ষে পৌঁছে শত শত নির্যাতিত ভাই-বোনকে মুক্ত করে। সোমালি সরকারি বাহিনী হতাশায় ছটফট করলেও, আল্লাহর সৈনিকদের সামনে তাদের সব প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। এই অভিযান শুধু একটি কৌশলগত জয় নয়, বরং পূর্ব আফ্রিকায় ইসলামী ইমারত প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ক্রুসেডারদের এবং তাদের মিত্রদের—বিশেষ করে তুরস্কের—পরাজয়ের স্পষ্ট ঘোষণা। আল্লাহর ইচ্ছায় আফ্রিকার পবিত্র মাটি থেকে তাদের বিদায় এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
মুজাহিদদের এই বিজয় আল্লাহর বিজয়ের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰي وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَي الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
“তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সূরা আস সফ, আয়াত ৯)
গোদাকা জালিয়ো: নিপীড়নের অন্ধকার অধ্যায়
গোদাকা জালিয়ো কারাগার ছিল নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার এক কালো অধ্যায়। জাতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা (NISA) পরিচালিত এই কারাগারে মুজাহিদ এবং নির্দোষ মুসলমানদের উপর চালানো হতো অকল্পনীয় নির্যাতন। ধাতব লাঠি, তার, এবং ভোঁতা বস্তু দিয়ে নির্মমভাবে মারধর, বৈদ্যুতিক শক, পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ(ওয়াটারবোর্ডিং) —এই সব পৈশাচিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বন্দিদের থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হতো। আরও জঘন্য ছিল নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির মতো অপরাধ। নির্দোষ শিশু ও কিশোরদের দিনের পর দিন আটকে রেখে মারধর ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে আশ শাবাবের সাথে জড়িত থাকার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হতো। দীর্ঘ সময় একক কক্ষে বন্দি রাখা, ঘুম থেকে বঞ্চিত করা, মানসিক চাপ সৃষ্টির কৌশল—এই সবই ছিল ক্রুসেডারদের এবং তাদের পুতুল প্রশাসনের পাশবিকতার প্রমাণ।
কিন্তু মুজাহিদদের অটুট ঈমান এই অত্যাচারের সামনে অটল থেকেছে। এই নির্যাতন তাদের ভাঙতে পারেনি; বরং জিহাদের পথে তাদের দৃঢ়তাকে আরও শাণিত করেছে। অপারেশন নুসরাতুল মাজলুমিন এই অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। মুক্ত হওয়া ভাই-বোনেরা এখন আল্লাহর পথে লড়াইয়ের শপথ নিচ্ছেন, তাদের হৃদয়ে জ্বলছে জিহাদের অগ্নিশিখা।
“গোদাকা জালিয়ো” কারাগার ও গোয়েন্দা দপ্তর থেকে মুক্তি পাওয়া একজন বন্দি এক বার্তায় বলেন:
“আমি ছিলাম ‘গোদাকা জালিয়ো’ কেন্দ্রে আটক বন্দিদের একজন। আজ আল্লাহর অনুগ্রহে মুজাহিদিনরা আমাকে মুক্ত করেছেন। আমি জানি না, জীবনে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে কিনা। এক ঘণ্টা আগেও আমি দুঃখ ও কষ্টে ছিলাম, আর এখন আমি আনন্দ ও তৃপ্তিতে আছি। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তাঁর পথে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য আমাকে দান করেন।”
ইসলামী ইমারতের স্বপ্ন: আফ্রিকায় তাওহিদের পতাকা
হে উম্মাহ! অপারেশন নুসরাতুল মাজলুমিন শুধু একটি অভিযান নয়, এটি পূর্ব আফ্রিকায় ইসলামী ইমারত প্রতিষ্ঠার পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই বিজয় প্রমাণ করে যে, আল্লাহর সৈন্যরা অপরাজেয়। ক্রুসেডাররা এবং তাদের মিত্র তুরস্ক, যারা আফ্রিকার পবিত্র মাটিকে কলুষিত করেছে, তাদের পরাজয় এখন অনিবার্য। তাদের পুতুল প্রশাসনের দুর্বলতা এবং মুজাহিদদের অপ্রতিরোধ্য শক্তি এই অভিযানে স্পষ্ট হয়েছে।
এই জয় আমাদের হৃদয়ে জিহাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর পথে লড়াইয়ে কোনো শক্তিই অপরাজেয় নয়। আফ্রিকার আকাশে ইসলামের সূর্য উঠছে, আর তাওহিদের পতাকা শীঘ্রই সমগ্র পৃথিবীতে উড্ডীন হবে। ইনশাআল্লাহ।
Comment