
আল ফিরদাউসের সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শক্তির পথে বারবার বাধা এসেছে, কিন্তু এই বাধাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কলঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পাকিস্তান। নিজেকে মুসলিম জাতির প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করা এই দেশটির কর্মকাণ্ডে শুধু বিশ্বাসঘাতকতা আর স্বার্থপরতাই প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান শাসন বা ইমারতে ইসলামিয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সীমিত সম্পদ ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তারা মুসলিমদের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষার জন্য অক্লান্তভাবে লড়াই করে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল মুসলিম জাতির জন্য একটি স্বাধীন ও নিরাপদ রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই দেশ তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি কলঙ্কে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের শাসকরা কাশ্মীর ইস্যুকে বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা কাশ্মীরের নামে বড় বড় কথা বলে, কিন্তু ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য তারা কী করেছে? তাদের পারমাণবিক শক্তি কি কখনো ভারতের মুসলিমদের পক্ষে ব্যবহৃত হয়েছে? এই শক্তি শুধু তাদের নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতি ও কূটনীতি সবসময় পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকার তোয়াজ করতে ব্যস্ত। এই তোয়াজের ফল হিসেবে পাকিস্তান আমেরিকার নির্দেশে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলায় সহযোগিতা করেছে, যা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই আমেরিকার সাথে হাত মিলিয়ে অগণিত মুসলিমকে হত্যা করেছে এবং তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এই কর্মকাণ্ড মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে থাকবে।
অন্যদিকে, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইমারতে ইসলামিয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আলোর দিশা হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আমেরিকা ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে পবিত্র জিহাদের মাধ্যমে তারা আফগানিস্তানকে মুক্ত করেছে। এই বিজয় শুধু আফগানিস্তানের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গৌরবময় মুহূর্ত। ইমারতে ইসলামিয়া তাদের শাসনের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা মুসলিমদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে।
ইমারতে ইসলামিয়া পাকিস্তানের মতো পশ্চিমা শক্তির তোয়াজ করে না। তারা তাদের স্বাধীনতা ও ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি অটল। যেখানে পাকিস্তান আমেরিকার নির্দেশে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলায় সহযোগিতা করেছে, সেখানে ইমারতে ইসলামিয়া এই হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং মুসলিমদের জীবন রক্ষার জন্য জিহাদ করেছে। তাদের সীমিত সম্পদ ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তারা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তান যখন ইমারতে ইসলামিয়ার সমালোচনা করে, তখন এটি তাদের নিজেদের ব্যর্থতা ও বিশ্বাসঘাতকতা ঢাকার একটি প্রচেষ্টা মাত্র। ২০০১ সালের পর থেকে পাকিস্তান আমেরিকার “ওয়ার অন টেরর”-এর অংশ হিসেবে আফগান মুজাহিদদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তারা মুজাহিদদের আশ্রয়স্থল ধ্বংস করেছে এবং অসংখ্য মুসলিম যোদ্ধাকে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিশ্বাসঘাতকতা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শক্তির পথে একটি বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাকিস্তানের শাসকরা কাশ্মীর ইস্যুকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে, কিন্তু ভারতের মুসলিমদের জন্য তারা কখনোই কোনো প্রকৃত পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের পারমাণবিক শক্তি মুসলিম উম্মাহর জন্য কোনো কাজে আসেনি; বরং, এটি শুধু তাদের নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব ধরে রাখার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
ইমারতে ইসলামিয়া, যদিও সম্পদ ও সামরিক শক্তির দিক থেকে সীমিত, তবুও তারা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি প্রেরণার উৎস। তারা পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে সাহসীভাবে লড়াই করেছে এবং তাদের দেশকে মুক্ত করেছে। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা মুসলিমদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তুলছে। তাদের এই লড়াই শুধু আফগানিস্তানের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আদর্শ।
যারা ইমারতে ইসলামিয়ার সমালোচনা করে, তাদের প্রশ্ন করা উচিত: পাকিস্তান কি কখনো এমন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে? পাকিস্তান কি কখনো আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুসলিমদের জন্য লড়াই করেছে? পাকিস্তানের ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকতার দাগ থাকলেও, ইমারতে ইসলামিয়ার রক্তে মিশে আছে সাহস, ঈমান ও নিষ্ঠা।
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে পাকিস্তান একটি বিশ্বাসঘাতক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হবে, যারা পশ্চিমা শক্তির ইশারায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। অন্যদিকে, ইমারতে ইসলামিয়া তাদের সীমিত সম্পদ নিয়ে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে মুসলিমদের জন্য একটি আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ভারতের মুসলিমদের জন্য পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনো প্রকৃত সাহায্য আশা করা যায় না, কারণ তাদের ইতিহাস শুধুই বিশ্বাসঘাতকতার। ইমারতে ইসলামিয়ার মতো সাহসী ও নিষ্ঠাবান নেতৃত্বই মুসলিম উম্মাহকে জালিমদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে তাওহিদের ভূমিতে মুক্তভাবে উড়তে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
পড়ুন-
তাওহিদের পতাকা বনাম ডলারের গোলামী: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ- ১
Comment