بسم الله الرحمن الرحيم
এক শুভলক্ষণের হাতছানি!
৬৪৪ হিজরি সনের কথা। রবিউস সানি মাসের ১৮ তারিখ। রোজ মঙ্গলবার। তখন মুসলিম বিশ্বে বনু আব্বাসিয়ার খিলাফত চলছিল। মক্কা মুকাররমায় প্রবলবেগে বাতাস বইতে থাকে। হারাম শরিফের পুরো আঙিনা খড়কুটোতে ভরে যায়। দমকা হাওয়ায় কা'বা শরিফের গিলাফ পর্যন্ত উড়তে থাকে। গিলাফ সেলাইবিহীন ছিল। কেননা ৬৪০ হিজরি থেকে এই গিলাফ নবায়ন করা হয়নি। এর কারণ হল, এই বছরগুলোতে আব্বাসি খলিফা হজ্জে যেতে পারেননি। বাতাসের ঝাপটায় একসময় গিলাফ সরে গিয়ে কা'বা উন্মুক্ত হয়ে যায়! কা'বার দেয়ালে সুশোভিত কৃষ্ণকালো নিদর্শন উঠে যায়। কা'বার এই গিলাফ সরে যাওয়াকে বনু আব্বাসিয়ার খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার ব্যাপারে অশুভলক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ধেয়ে আসা তাতারি ফিতনাহর ব্যাপারে ভীতিসঞ্চারক মনে করা হয়। আর হয়েছিলও তা-ই। আব্বাসি খিলাফত বিলুপ্ত হয়। মুসলিম বিশ্ব গ্রাস করে নেয় তাতারি ফিতনাহ।
এই কথাগুলো আমার নয়; প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ইতিহাসবেত্তা হাফিজ ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির দিমাশকি রহ.-এর। আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়ায় তিনি এই ইতিহাসটা আলোকপাত করেছেন। কিন্তু প্রায় সাড়ে আটশ বছর আগের এই ঘটনা আমি আলোকপাত করার কারণ কী জানেন? কারণ হল, সেই ইতিহাসটা এই আবারও তাজাদম হয়ে গেল। ক'দিন আগেও এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল। প্রবল ঝড়োহাওয়ায় কা'বা শরিফের গিলাফ সরে গেল। কা'বা উন্মুক্ত হয়ে পড়ল! বাইতুল্লাহর মেহমানরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন! ঘটনাটা 'টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড' হয়ে গেল। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল! কা'বা উন্মুক্ত হয়ে যাওয়াকে তারা মেনে নিতে পারলেন না। অজানা এক শংকা সবাইকে কুঁকড়ে দেয়! সকলেরই মনে মনে প্রশ্ন- এটা কোনো অশুভলক্ষণ নয় তো?!
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এটাই বাস্তবতা। এজন্য ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয়। আজ থেকে প্রায় সাড়ে আটশ বছর আগে প্রবল বাতাসে কা'বার গিলাফ সরে যাওয়ার ঘটনাটা যদি খিলাফতে আব্বাসিয়ার পতন এবং তাতারি ফিতনার আক্রমনের ব্যাপারে অশুভলক্ষণ হয়, তাহলে ক'দিন আগের প্রবল বাতাসে কা'বার গিলাফ সরে যাওয়াটা কিসের অশুভলক্ষণ? বলতে পারেন কেউ? আমিও বলতে পারি না; তবে এতটুকু ধারণা করতে পারি যে, হারামাইনের মদখোর শাসক, আমেরিমার পা-চাটা গোলাম আ-লে সাউদের শাসনের পতনের ব্যাপারে শুভলক্ষণও হতে পারে। 'শুভলক্ষণ'ই বললাম। 'অশুভলক্ষণ' বললাম না। কারণ, তখন কা'বার গিলাফ সরে যাওয়াটা আব্বাসি খিলাতের ব্যাপারে 'অশুভলক্ষণ' হলেও এখন কা'বার গিলাফ সরে যাওয়াটা আ-লে সাউদের শাসনের পতনের ব্যাপারে 'শুভলক্ষণ' হবে। আর যদি এরকমই হয়, তাহলে কা'বার রবের কাছে মিনতি করি যে, এই ধারণাটা খুব তাড়াতাড়ি ফলুক। মুসলিম বিশ্ব গোলামির গ্লানি থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাক।
------
সূত্র: البداية والنهاية, ১৩/১৭০, হাফিজ ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির দিমাশকি রহ.।
Comment