সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ বোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়ার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘শোকরানা মাহফিল’-এ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ‘২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয় নি’ বলে বক্তব্য দিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ঢাকা টুডে ডট কমসহ অন্যান্য বার্তা সংস্থার বরাতে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার এক বিবৃতিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে জানতে পেরেছি সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত শোকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জয়নাল আবেদীন বলেছে, ‘শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি, এটা মিথ্যা প্রচারণা’- এই বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচার, নির্লজ্জতা ও সীমাহীন ঔদ্ধত্যপূর্ণ। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আরও বলেন, শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি’ মর্মে সামরিক সচিবের প্রদত্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের আলেমসমাজ ও তাওহিদী জনতা চরমভাবে ক্ষুদ্ধ, ব্যথিত ও মর্মাহত।
তিনি বলেন, অনস্বীকার্য বাস্তবতা হলো- দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব মিডিয়ার বদৌলতে ২০১৩ সালের ০৫ মে সন্ধ্যায় ও দিবাগত রাতে তৎকালীন সরকারের প্রশাসন কর্তৃক শাপলা চত্বরে মহান আল্লাহ ও প্রিয় নবী সা. এর বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীদের শাস্তির দাবিতে অবস্থানরত শান্তিপ্রিয় আলেমসমাজ ও তাওহিদী জনতার উপর নির্মম ও নিষ্ঠুর হামলা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে জনতা। যাতে অনেক মুসলমান শাহাদাত বরণ করেন এবং হাজার হাজার নবীপ্রেমিক জনতা আহত হন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি স্বয়ং সেই রাতে ব্যাপক নিগ্রহের শিকার হই এবং পরের দিন সকালে আমিসহ অনেকেই গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হন আরও অনেক আলেম, মাদরাসাছাত্র ও সাধারণ মানুষ। ওইদিন শাপলা চত্বরে অবস্থানরত লাখ লাখ তাওহিদী জনতা, দেশী-বিদেশী মিডিয়াকর্মী ও ঢাকাবাসী এ হামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যা আগ থেকেই সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃংখলা বাহিনীর উগ্রসদস্যদের বর্বরোচিত আক্রমনে অবরোধকারী তাওহিদী জনতার গুলিবিদ্ধ লাশ নানাদিক থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আসতে থাকে। যার ভিডিও ফুটেজ প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে। প্রায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ খবর খোলামেলা প্রকাশিত হয়।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে সে ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা নিঃসন্দেহে চরম অমানবিক, মজলুম নবীপ্রেমিক জনতার সাথে উপহাস আর শহীদদের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে যেখানে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল, সেখানে সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে এমন বক্তব্য নিঃসন্দেহে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা ও দাম্ভোক্তির শামিল।
আমরা এ মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার আহবান জানাই।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ ইলমে নববীর ধারক বাহক, দেওবন্দিয়ত ও হক্কানিয়তের নিশানবরদার উলামায়ে কেরাম, বুজুর্গানে দীন, ও দ্বীনের রাহবরদের সামনে এত বড় ডাহামিথ্যা বক্তব্য কি করে সহ্য করলেন, তা ভেবে পাচ্ছিনা। এতবড় মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে কারো অন্তরে ঈমানী তরঙ্গ ফুঁসে উঠলনা, এটাই তাজ্জবের বিষয়। তাহলে এটা কি কওমী সনদের স্বীকৃতির বিনিময়ে শোকরানা সভার মোড়কে শাপলার হত্যাকাণ্ডের অস্বীকারের আয়োজন? সকলের মনে রাখা প্রয়োজন যে, ৫ মে শাপলার শাহীদানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমরা কেউ আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাব না।
Comment