হাট বসেছে, ক্রেতাগণ পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। কিন্ত ক্রেতা আর বিক্রেতার মাঝে ব্যাপক অসমতা। পুরো হাটে মাত্র একজন ক্রেতা, সব বিক্রেতার মনোযোগ শুধু তার দিকে। কিভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষন করে নিজের পণ্যটা বেচে লাভ করা যায়। আর ক্রেতা তো প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সমস্ত বিক্রেতার মালগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন, যার জিনিস পছন্দ হচ্ছে বহু চড়া দামে কিনে নিচ্ছেন। যার মাল কিনে নিচ্ছেন সে যেন খুশিতে পাগলপারা, আনন্দে আত্মহারা।
.
তবে এই হাটে যেনতেন লোক বিক্রেতা হিসেবে প্রবেশ করার সাহস পায় না। কারন যার বিনিময় তারা বিক্রি করছেন, তা মোটেও অচল বা কমদামী কোন বস্ত নয় যে কমজোর-ভীরুরাও এর সওদা করতে পারে। আবার এর বাজারও মন্দা না যে সবাই ই নিজেকে এর জন্যে যোগ্য ভাবতে পারে। ধীসম্পন্ন, প্রজ্ঞাময়, দূরদৃষ্টি ও ভবিষ্যতের চিন্তা করেনেওয়ালারাই এই হাটে বিক্রেতার টিকিট পায়।
.
হাট তো বসল। এখন কে কেমন লাভ-ক্ষতির হিসাব নিয়ে ফিরবে? হাটের একমাত্র ক্রেতা স্বয়ং রব্বুল ইযযত আল্লাহ তাআলা, জান্নাত বিলাতে এসেছেন। যদিও তাঁর বিনিময় মূল্যটা খুবই চড়া, কিন্ত তিনি এই মাল সহজে ছাড়তে রাজি নন। আর কেনই বা রাজি হবেন, দিচ্ছেন অবিনশ্বর জান্নাত কিন্ত চেয়ে নিচ্ছেন এমন এক মাংস-রক্তের পিন্ড যা কিছুদিন পরেই পোকামাকড়ের খোরাক হবে। তাই বহু যাচাই বাছাই শেষে কাউকে মনোনীত করছেন এই বানিজ্যে। হাটে বানিজ্য শুরু হবার আগে আল্লাহ সকল ব্যবসায়ীকে জানিয়ে দিলেন যে এখানে কি হতে যাচ্ছে।
.
“অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।” [বাকারা]
.
এখানেই বহু লোক বাদ পড়ে গেল। এরা জান্নাতের মোকাবেলায় নিজেদের জান-মাল, সন্তান-সম্পদের ইশকে পড়ে গেল আর আল্লাহর ভালবাসায় ছেদ ঘটিয়ে দিল। ফলে বেচাকানা বাদ দিয়ে পিছটান দিল।
.
আবার হাটের মাঝে বানিজ্য শুরু হবার আগেই একদল লোক পিছিয়ে গেছে। তারা খুব ইচ্ছা তো করেছিল এই মার্কেটে ব্যবসা করে বড়লোক হয়ে যাবার, কিন্ত ব্যবসায় পর্যাপ্ত মূলধন খাটায়নি। এই অপদার্থরা ভয় পেয়ে গেল যখন দেখল আসল মু’মিনগন জানের বাজি লাগাচ্ছে, একজনকে টপকিয়ে আরেকজন তাদের রব্বের কাছে বেচে দিচ্ছে ঠুনকো জীবন; তখন এদের পিলে চমকে গেল। আর মালিক তো মালিকই, সবই জানেন যে কে শেষ পর্যন্ত নিজের ওয়াদার উপরে বলবত থাকবে। এজন্যে হাটে যখন বিক্রেতার সংখ্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেল তিনি কিছু নীতি নির্ধারন করে দিলেন, এই নিয়ম গুলো যারা মানবে শুধু তারাই এখানে ব্যবসা করার যোগ্য বিবেচিত হবে।
.
“আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে সত্যিই ভালবাস তবে আমার অনুসরন করো। আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন।” [আলী ইমরান]
.
মালিক বলে দিলেন যেন এই হাটে ব্যবসা করতে হলে আমি যেভাবে বলি ঠিক সেভাবেই করতে হবে, নইলে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে পারো।
.
“ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।” [আলী ইমরান]
.
ব্যবসা জারি রাখতে হলে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে, মালিক ভালভাবে এটা বুঝিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন ভাল মাল বিক্রি করে পরে কমদামী মাল ঢুকিয়ে দিলে (অর্থাৎ জিহাদ বন্ধ করলে) তিনি সোজা হাট থেকে বের করে দিবেন।
.
“আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য অন্বেষন কর এবং তাঁর পথে জিহাদ করতে থাকো যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [মায়িদা]
.
একদল লোক তো এমন আছে কোনভাবে হাটে ঢুকে গেছে অথচ প্রথমেই এখানে ব্যবসা করার যোগ্যতা তার নেই। মহান ক্রেতা তাদেরকেই যেন বলছেন,
.
“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।” [আলী ইমরান]
.
এমনকি তা-ই না, এই জোচ্চুরির জন্যে তিনি ঐ লোকদেরকে শুধু হাট থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হবেন না বরং আরো পাকড়াও করবেন।
.
“তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।” [তাওবা]
.
এসব ভয়াবহ পরিস্থিত আর কঠিন পরীক্ষা দেখে সবাই পিছিয়ে গেল। কিন্ত একদল আশেক, প্রকৃত প্রেমিক ঠিকই রয়ে গেল আর রব্বের ভালবাসা আদায় করে নিল। কারা এরা?
.
“আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” [সফ]
.
এমন একদল লোককে মালিকই নিজের ফদলে হাটে রাখলেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন আর তারাও তাদেরকে ভালবাসে। তাদের মধ্যে থাকবে এমন সব গুণ যা অন্যদের মাঝে নেই।
.
“যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।” [মায়িদা]
.
শেষ পর্যন্ত ভন্ড আশেকদের বিতাড়নের পর একদল খাটি প্রেমিক, মুজাহিদ বাকি রইলেন। আল্লাহর ইশকের দাবি তারা পুরো অনুধাবন করতে পারলেন। নিজেদেরকে ক্রমেই তারা প্রমান করতে লাগলেন।
.
“তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।” [সফ]
.
আর ঘনিয়ে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষন, চুক্তি সম্পাদন হবার সেই কাঙ্খিত মূহুর্ত। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হল যে তোমাদের জান মালে এখন থেকে আর নিজেদের মালিকানা নেই। যে পণ্যের সওদা হয়ে গেছে তা প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দাও।
.
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান-মাল খরিদ করে নিয়েছেন এই শর্তে যে তাদেরকে জান্নাত দেয়া হবে।” [তাওবা]
.
বিক্রয় চুক্তি শেষ হলে ক্রেতা বিক্রেতার কর্তব্য হল পণ্য বুঝিয়ে দেয়া এবং মূল্য শোধ করা। এই ক্রেতারা যখন দেখলো যে নিজের জীবনের বিনিময়ে তারা মহান ক্রেতার পক্ষ থেকে চিরস্থায়ী জান্নাত পেতে যাচ্ছে, তখন বুঝল যে কত জেতাই না জিতেছে। তাই তারা এই জীবনের মোহ ছেড়ে মালিককে মাল বুঝিয়ে দিল।
.
“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে।” [আলী ইমরান]
.
অনেকের মাল বিক্রি হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে বটে, তবে সেগুলোও মালিক খরিদ করে নিবেন। কারণ তারা নিজেদেরকে পদে পদে প্রমান করে দেখিয়েছন,
.
“মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করে নি।” [আহযাব]
.
এভাবে সম্পন্ন হল সৃষ্টির ইতিহাসের সর্বোত্তম বেচাকেনা। যার সিলসিলা বদর উহুদ থেকে শুরু করে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত জারি রইল।
.
.
→ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) এর 'যাদুল মাআদ' অবলম্বনে; ঈষৎ পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত।
.
তবে এই হাটে যেনতেন লোক বিক্রেতা হিসেবে প্রবেশ করার সাহস পায় না। কারন যার বিনিময় তারা বিক্রি করছেন, তা মোটেও অচল বা কমদামী কোন বস্ত নয় যে কমজোর-ভীরুরাও এর সওদা করতে পারে। আবার এর বাজারও মন্দা না যে সবাই ই নিজেকে এর জন্যে যোগ্য ভাবতে পারে। ধীসম্পন্ন, প্রজ্ঞাময়, দূরদৃষ্টি ও ভবিষ্যতের চিন্তা করেনেওয়ালারাই এই হাটে বিক্রেতার টিকিট পায়।
.
হাট তো বসল। এখন কে কেমন লাভ-ক্ষতির হিসাব নিয়ে ফিরবে? হাটের একমাত্র ক্রেতা স্বয়ং রব্বুল ইযযত আল্লাহ তাআলা, জান্নাত বিলাতে এসেছেন। যদিও তাঁর বিনিময় মূল্যটা খুবই চড়া, কিন্ত তিনি এই মাল সহজে ছাড়তে রাজি নন। আর কেনই বা রাজি হবেন, দিচ্ছেন অবিনশ্বর জান্নাত কিন্ত চেয়ে নিচ্ছেন এমন এক মাংস-রক্তের পিন্ড যা কিছুদিন পরেই পোকামাকড়ের খোরাক হবে। তাই বহু যাচাই বাছাই শেষে কাউকে মনোনীত করছেন এই বানিজ্যে। হাটে বানিজ্য শুরু হবার আগে আল্লাহ সকল ব্যবসায়ীকে জানিয়ে দিলেন যে এখানে কি হতে যাচ্ছে।
.
“অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।” [বাকারা]
.
এখানেই বহু লোক বাদ পড়ে গেল। এরা জান্নাতের মোকাবেলায় নিজেদের জান-মাল, সন্তান-সম্পদের ইশকে পড়ে গেল আর আল্লাহর ভালবাসায় ছেদ ঘটিয়ে দিল। ফলে বেচাকানা বাদ দিয়ে পিছটান দিল।
.
আবার হাটের মাঝে বানিজ্য শুরু হবার আগেই একদল লোক পিছিয়ে গেছে। তারা খুব ইচ্ছা তো করেছিল এই মার্কেটে ব্যবসা করে বড়লোক হয়ে যাবার, কিন্ত ব্যবসায় পর্যাপ্ত মূলধন খাটায়নি। এই অপদার্থরা ভয় পেয়ে গেল যখন দেখল আসল মু’মিনগন জানের বাজি লাগাচ্ছে, একজনকে টপকিয়ে আরেকজন তাদের রব্বের কাছে বেচে দিচ্ছে ঠুনকো জীবন; তখন এদের পিলে চমকে গেল। আর মালিক তো মালিকই, সবই জানেন যে কে শেষ পর্যন্ত নিজের ওয়াদার উপরে বলবত থাকবে। এজন্যে হাটে যখন বিক্রেতার সংখ্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেল তিনি কিছু নীতি নির্ধারন করে দিলেন, এই নিয়ম গুলো যারা মানবে শুধু তারাই এখানে ব্যবসা করার যোগ্য বিবেচিত হবে।
.
“আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে সত্যিই ভালবাস তবে আমার অনুসরন করো। আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন।” [আলী ইমরান]
.
মালিক বলে দিলেন যেন এই হাটে ব্যবসা করতে হলে আমি যেভাবে বলি ঠিক সেভাবেই করতে হবে, নইলে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে পারো।
.
“ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।” [আলী ইমরান]
.
ব্যবসা জারি রাখতে হলে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে, মালিক ভালভাবে এটা বুঝিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন ভাল মাল বিক্রি করে পরে কমদামী মাল ঢুকিয়ে দিলে (অর্থাৎ জিহাদ বন্ধ করলে) তিনি সোজা হাট থেকে বের করে দিবেন।
.
“আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য অন্বেষন কর এবং তাঁর পথে জিহাদ করতে থাকো যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [মায়িদা]
.
একদল লোক তো এমন আছে কোনভাবে হাটে ঢুকে গেছে অথচ প্রথমেই এখানে ব্যবসা করার যোগ্যতা তার নেই। মহান ক্রেতা তাদেরকেই যেন বলছেন,
.
“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।” [আলী ইমরান]
.
এমনকি তা-ই না, এই জোচ্চুরির জন্যে তিনি ঐ লোকদেরকে শুধু হাট থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হবেন না বরং আরো পাকড়াও করবেন।
.
“তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।” [তাওবা]
.
এসব ভয়াবহ পরিস্থিত আর কঠিন পরীক্ষা দেখে সবাই পিছিয়ে গেল। কিন্ত একদল আশেক, প্রকৃত প্রেমিক ঠিকই রয়ে গেল আর রব্বের ভালবাসা আদায় করে নিল। কারা এরা?
.
“আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” [সফ]
.
এমন একদল লোককে মালিকই নিজের ফদলে হাটে রাখলেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন আর তারাও তাদেরকে ভালবাসে। তাদের মধ্যে থাকবে এমন সব গুণ যা অন্যদের মাঝে নেই।
.
“যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।” [মায়িদা]
.
শেষ পর্যন্ত ভন্ড আশেকদের বিতাড়নের পর একদল খাটি প্রেমিক, মুজাহিদ বাকি রইলেন। আল্লাহর ইশকের দাবি তারা পুরো অনুধাবন করতে পারলেন। নিজেদেরকে ক্রমেই তারা প্রমান করতে লাগলেন।
.
“তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।” [সফ]
.
আর ঘনিয়ে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষন, চুক্তি সম্পাদন হবার সেই কাঙ্খিত মূহুর্ত। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হল যে তোমাদের জান মালে এখন থেকে আর নিজেদের মালিকানা নেই। যে পণ্যের সওদা হয়ে গেছে তা প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দাও।
.
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান-মাল খরিদ করে নিয়েছেন এই শর্তে যে তাদেরকে জান্নাত দেয়া হবে।” [তাওবা]
.
বিক্রয় চুক্তি শেষ হলে ক্রেতা বিক্রেতার কর্তব্য হল পণ্য বুঝিয়ে দেয়া এবং মূল্য শোধ করা। এই ক্রেতারা যখন দেখলো যে নিজের জীবনের বিনিময়ে তারা মহান ক্রেতার পক্ষ থেকে চিরস্থায়ী জান্নাত পেতে যাচ্ছে, তখন বুঝল যে কত জেতাই না জিতেছে। তাই তারা এই জীবনের মোহ ছেড়ে মালিককে মাল বুঝিয়ে দিল।
.
“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে।” [আলী ইমরান]
.
অনেকের মাল বিক্রি হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে বটে, তবে সেগুলোও মালিক খরিদ করে নিবেন। কারণ তারা নিজেদেরকে পদে পদে প্রমান করে দেখিয়েছন,
.
“মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করে নি।” [আহযাব]
.
এভাবে সম্পন্ন হল সৃষ্টির ইতিহাসের সর্বোত্তম বেচাকেনা। যার সিলসিলা বদর উহুদ থেকে শুরু করে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত জারি রইল।
.
.
→ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) এর 'যাদুল মাআদ' অবলম্বনে; ঈষৎ পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত।
Comment