Announcement

Collapse
No announcement yet.

আল বালাগ / সংখ্যা - ৩ / যেমন হবে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির গুণাবলী - মুহাম্মাদ ইবনে আব্দু&

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আল বালাগ / সংখ্যা - ৩ / যেমন হবে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির গুণাবলী - মুহাম্মাদ ইবনে আব্দু&

    যেমন হবে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির গুণাবলী


    মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুস সালাম


    আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিবর্গ হলেন অপরাপর লোকদের কাছে অনুসৃত ব্যক্তিত্ব, অর্থাৎ তাদের নির্দেশনার অনুসরণ করা হয়। অনুসরণকারীর পক্ষে অপরের যথাযথ অনুসরণ করে পথ চলা সহজ; কিন্তু একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে পথ চলার ক্ষেত্রে অনেক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তাদের সঠিক নেতৃত্বদানের সুফল যেমন সবাই লাভ করে থাকেন; ঠিক তেমনি তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির ফলে সৃষ্ট ভোগান্তিও সবাইকে পোহাতে হয়। কাজেই সঠিক নেতৃত্বদানের জন্যে একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে থাকতে হবে সঠিক নেতৃত্বদানের গুণাবলী।
    নেতৃত্বদানের গুণাবলী:
    ১. ইলমী গভীরতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত থাকা: শরীয়তের আবশ্যকীয় বিষয়সমূহে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির পাণ্ডিত্য ও ইলমী গভীরতা থাকতে হবে। অবগত হতে হবে বাস্তবতা ও চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে।

    ২. বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা: প্রতিটি কাজ বাস্তবায়নে এবং নিজের কর্তব্য পালনে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

    ৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূরদর্শীতা: উপস্থিত যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে হতে হবে দূরদর্শী। কাজের ফলাফল ও পরিণাম চিন্তা করেই যথাযথ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে।

    ৪. বীরত্ব ও সাহসিকতা: ভীরু-কাপুরুষ স্বভাবের লোক কখনো নেতৃত্বদানের উপযুক্ত নয়; নেতৃত্বদানের জন্যে অবশ্যই একজন নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে থাকতে হবে বীরত্ব ও সাহসিকতা, থাকতে হবে দ্বীনের পথে নিজের জান উৎসর্গ করার একান্ত ইচ্ছা ও মানসিকতা।

    ৫. কর্মচাঞ্চল্য ও কৌশল অবলম্বন: প্রত্যেকটি কাজ বাস্তবায়নে এবং কর্তব্য পালনে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে হতে হবে কর্মঠ ও কৌশলী। অলসতা পরিহার করে উদ্যমী হয়ে অবিরাম কাজ করার মেজাজ গড়তে হবে। অব্যাহত রাখতে হবে যথাযথ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা।

    ৬. দৃঢ়প্রত্যয়: কাজে দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্যক্তি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে থাকেন অটল ও অবিচল; তাই একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে এ গুণ থাকা চাই।

    ৭. ওয়াদা-প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা: অপরের সাথে কৃত ওয়াদা-প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হবে; সমন্বয় থাকতে হবে কথায় ও কাজে। অন্যথায় কারো কাছে নিজের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।

    ৮. সত্যবাদিতা: আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে অবশ্যই সত্যবাদী হতে হবে। মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হলে কারো কাছে বিশ্বস্ত হতে পারবে না।

    ৯. উপদেশ দেওয়া ও সদুপদেশ গ্রহণ করা: নিজের অধীনের এবং সাধারণ লোকদের ভালো উপদেশ দেওয়া; এমনিভাবে অপরের সদুপদেশও গ্রহণ করা।

    ১০. ক্ষমা ও উদারতা: যে কোন নিরপরাধী ব্যক্তির প্রতি ক্ষমা ও উদারতার মেজাজ দেখাতে হবে।

    ১১. ন্যায়পরায়ণতা: বিচারকার্য সম্পাদন করতে হবে ন্যায়পরায়ণতার সাথে; অপরাধীকে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে, নিরপরাধীকে মুক্তি প্রদান করতে হবে।

    ১২. কোমল চরিত্র ও নিষ্কলুষ থাকার প্রবণতা: আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। শান্ত-শিষ্টতা, বিনয়-নম্রতা, মানুষের সাথে সহজভাবে মিশতে পারা, অপরের কথা মনোযোগের সাথে শোনা, কৃতজ্ঞতা আদায়, কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা, হিংসা থেকে মুক্ত থাকা, গীবত-পরনিন্দা না করা এবং কারো থেকে তা না শোনা, রাগ দমন করা, নিজেকে সংযত রাখা; এককথায় সব ধরনের উত্তম গুণে চরিত্রবান হতে হবে, মন্দ স্বভাবগুলো পরিহার করতে হবে। আর এ আখলাক শুধু একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির জন্যেই নয়; বরং প্রত্যেক মুমিনের জন্যেই আবশ্যক।

    ১৩. কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা: মুসলিমদের জন্যে কিছুতেই বৈধ নয় কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা; তাহলে মুসলিমদের আমীর বা নেতা কিভাবে কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারে? এ ব্যাপারে তো আমীর বা নেতার মাঝেই সর্বাধিক কঠোরতা থাকা উচিত।

    ১৪. প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার নিখুঁত-সুষ্ঠু বাস্তবায়ন:
    (ক) যুদ্ধ পরিচালনা করা।
    (খ) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
    (গ) বিরোধী-শত্রু, সমালোচকদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
    (ঘ) অমুসলমান নাগরিকদের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
    (ঙ) সামাজিক ব্যবস্থায় শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
    (চ) যোগাযোগ ব্যবস্থা-ডাক বিভাগকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
    (ছ) প্রত্যেককে তার কাজের ধরন অনুযায়ী পারিশ্রমিক ও বিনিময় প্রদান করা।
    (জ) কোন কাজে শরীয়তের খেলাফ করে দল-প্রীতিতে মত্ত না থাকা। তানজীমকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর পরিচালনা করা।

    ১৫. শৃঙ্খলা ও সুবিন্যস্ততা: সব কাজে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে হতে হবে সুশৃঙ্খল-পরিপাটি। নিয়ম-নীতি বজায় রেখে মজলিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত বিষয়াদি পরিচালনা করতে হবে সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্তভাবে।

    আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য:

    ১. শরীয়তের বিধান বাস্তবায়ন: আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মূল কাজই হল শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সব কাজ পরিচালনা করা।

    ২. ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা: মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য প্রধান কাজ।

    ৩. বন্দীদের মুক্তকরণ: একজন আমীর বা নেতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্য হলো নিরপরাধ বন্দীদের বন্দীদশা থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করা। আর যে কোন উপায়ে একজন অবরুদ্ধ-বন্দী মুসলিমকে কাফেরদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।

    ৪. মাজলুম ও সর্বসাধারণের সাহায্যে জরুরী ব্যবস্থা: এ জন্যে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

    বস্তুত, এ সকল গুণাবলী ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একদিকে যেমন প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের সাথে সম্পৃক্ত; আবার উত্তম চরিত্রের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায়, এমন গুণে গুণান্বিত হওয়া প্রত্যেক মুমিনের জন্যেই আবশ্যক। তাহলে একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির এমন গুণাবলী ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনে কি পরিমাণ সচেষ্ট হওয়া উচিত, তা কি বলার অপেক্ষা রাখে?

    [শায়খ সাঈদ হাওয়া কর্তৃক লিখিত ‘ফুসূল ফিল ইমারাতি ওয়াল আমীর’ ও ‘লুমুহাত ফি ফন্নিল কিয়াদাতি’ নামক গ্রন্থদ্বয় অবলম্বনে এবং সম্পাদক কর্তৃক মূল বিষয়াদির বিশ্লেষণ সহকারে সংকলিত]

    (লেখাটি আল বালাগ ম্যাগাজিনের ৩য় সংখ্যা থেকে সংগৃহীত ও অনূদিত)

  • #2
    আল্লাহ কবুল করুন,আমিন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

    Comment

    Working...
    X