আমরা কেমন সন্তানের মা হওয়ার স্বপ্ন দেখি?
উনাইসা আহসান বুশরা
প্রত্যেক মা-বাবা নিজের সন্তানদের সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন দেখতে চান। সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় তারা নানান স্বপ্ন দেখেন। ছোটবেলা থেকেই আদরের সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন হয় কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্ন পূরণের পথে; এ প্রচেষ্টায় মা-বাবা কোন ত্রুটি করেন না।
সন্তানকে ঘিরে বাবার চেয়ে মায়ের মাঝেই থাকে বেশি আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর মায়ের সান্নিধ্যেই তো তারা বেড়ে ওঠে একটা দীর্ঘ সময়। এ সময় তাদের ওপর মায়ের মেজাজ ও রুচির প্রতিফলন ঘটে। বাস্তবিকই, মায়ের সান্নিধ্য হচ্ছে সন্তানদের জন্যে একটি উত্তম শিক্ষালয়। একটি ছোট্ট শিশু ধীরে ধীরে খুব সহজেই মায়ের মাঝে বিদ্যমান প্রতিটি স্বভাব গুণে গুণান্বিত হয়ে ওঠে। মাকে দেখেই যখন সন্তানরা শিখে থাকে; তাহলে একজন মায়ের মাঝে কেমন রুচিবোধ ও মেজাজ থাকা জরুরী?
সন্তানদের ব্যাপারে একজন মায়ের কেমন স্বপ্ন আর আশা-আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা উচিত? কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মা-ই এ ক্ষেত্রে মরীচিকার স্বপ্নে বিভোর থাকেন। খুব কম মা-ই আছেন; যারা প্রকৃত পরিণামের কথা ভেবে সঠিক স্বপ্নটি দেখেন, বা সন্তানদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বর্তমানে আমাদের মা-বোনেরা পারিপার্শ্বিক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলিত জীবনাচারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। আশপাশের অন্য দশজন যেভাবে চলতে পছন্দ করে; সেভাবেই নিজের পরিবার সাজাতে পছন্দ করেন।
অধিকাংশ মায়েরই ইচ্ছে আপন সন্তান ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে; অথবা দেশ জুড়ে বাহবা পায়, এমন একজন মডেল-তারকা (?) হিসেবে সুনাম অর্জন করবে। বর্তমান মায়েদের কাছে ইসলামের ইতিহাসের আলোকিত ব্যক্তিত্বদের জীবনী এতটাই অপরিচিত যে, তারা হয়তো অনেক মহা মানবের নাম পর্যন্তও শোনেননি। তারা ভালোভাবে জানেনও না মুসলিম উম্মাহর জন্যে সে সব বীর পুরুষদের কুরবানির কথা। অনেক মা-বাবা নিজেদের সন্তানের নাম খালিদ, তারেক, সালাউদ্দীন রাখেন; কিন্তু কয়জন জানেন, এ নামের মহান ব্যক্তিদের কীর্তির কথা? আর যদি এমন বীর পুরুষদের জীবন চরিত সম্পর্কে কোন ধারণাই না থাকে; তাহলে কীভাবে নিজের সন্তানদেরকে এ মহা বীরদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার শিক্ষা দিবেন?
আজকের মায়েরা সন্তানদের সামনে শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ - এ ধরনের অমুসলিম পণ্ডিতদের কল্প কাহিনী শোনাতে অভ্যস্ত; কিন্তু তারা আপন সন্তানদের আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু, ও উম্মাহর মহান ব্যক্তিত্বদের আলোকিত জীবন কাহিনী শোনাতে অভ্যস্ত নয়। আজকের মায়েরা সন্তানদের চার-ছক্কার মার দেখে আনন্দিত হয়; সেঞ্চুরি আর নিত্য নতুন রেকর্ড দেখে গর্বিত হয়; গান আর নাচের প্রতিযোগিতায় সন্তানদের কার্যকলাপ দেখে পুলকিত হয়। আর কেনইবা এমন হবে না? আমাদের মায়েরা কি পরকালের চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে কখনো ভাবেন?
হে সন্তানের জননী!
একটু ভাবুন, দ্বীন বিমুখ হওয়ার কারণে যে সন্তানরা আজ পাপাচার আর অশ্লীলতায় মত্ত হয়ে উঠেছে; কেমন হবে এমন সন্তানদের অন্তিম পরিণতি?
এরাই তো এক সময় দ্বীনকে মিটিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে যাবে। আর এমন সন্তানরাই তো নিজের মা-বাবার জন্যে জাহান্নামে যাওয়ার পথকে সুগম করে দিবে। আর আমরা যদি হতে পারি দ্বীন বিজয়ের বীর সৈনিকদের গর্বিত মা; তাহলে তা কেবল আমাদের জন্যেই কল্যাণকর হবে, এমন নয়; বরং আমাদের বীর সন্তানরা পুরো উম্মতের জন্যেই কল্যাণ বয়ে আনবে। চূড়ান্ত পরিণামে তথা পরকালে এমন সন্তানরাই মা-বাবার কাজে আসবে।
তাহলে হে মা!
অন্তত নিজেদের কল্যাণার্থে তো আমরা সন্তানদের ব্যাপারে সঠিক স্বপ্ন দেখতে পারি; তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারি। আর স্বপ্ন দেখতে পারি তারেক বিন যিয়াদ, সালাউদ্দীন আইয়ুবী, মুহাম্মাদ বিন কাসিমের মতো বীর সন্তানদের মা হওয়ার! এমন স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিই আমরা এখন অতিক্রম করছি। গাযওয়াতুল হিন্দের কাফেলা তো বিজয়ের পথে সম্মুখ পানে অগ্রসর হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের হৃদয় প্রশান্তকারী বীর মুজাহিদের গর্বিত মা হওয়ার সৌভাগ্য নসীব করুন। আমীন।
(লেখাটি আল বালাগ ম্যাগাজিনের ৩য় সংখ্যা থেকে সংগৃহীত ও অনূদিত)
Comment