বর্তমান এ পৃথীবিতে দক্ষ মানুষের বড়ই অভাব। রীতিমত দুর্ভিক্ষ বলা যায়। দক্ষ হয়ে গড়ে উঠার মত মানুষের অভাব, আমি এটা বলছিনা। বরং দক্ষ মানুষের অভাব। অভাব উপযুক্ত পরিচর্যার। অভাব সুন্দর আর সম্ভাবনাময় বীজ গুলোকে যত্ন করার মত লোকের; কেননা বীজ তো আছে প্রচুর, কিন্তু উপযুক্ত মালির অভাব।
আমাদের আশে পাশে, আমাদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে, এমন কত মানুষ আছে, আছে সম্ভাবনাময় অনেক বীজ, যাদের পিছনে ভালো মেহনত করলে, দরদ নিয়ে সময় দিলে, উপযুক্ত পরিচর্যা করলে তারা হয়ে উঠবে যুগের সালাহুদ্দীন, কাসেম নানুতুবী, আর মুহাম্মাদ বিন কাসেম। কিন্তু উপযুক্ত মালীর অভাবের কারণে বনে লাগানো সুন্দর সম্ভাবনাময় ‘বীজগুলো' অবহেলায় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। পাখি-পোকা খেয়ে ফেলছে!
সালাউদ্দিন হওয়ার মত লোক তো আছে বহুত; কিন্তু অভাব গড়ে তোলার মত নুরুদ্দিন জাঙ্কীর। মোহাম্মাদ বিন কাসেম হওয়ার মত লোক তো আছে বহুত; কিন্তু গড়ে তোলার জন্য অভাব কুতায়বা বিন মুসলিম আর হাজ্জাজ বিন ইউসুফদের।
আবু হানিফার দক্ষ হাতের পরশ পেলে, দরদ মাখা দিলের মেহনত পেলেই আবু ইউসুফ, ‘কাজী এবং ফকীহ আবু ইউসুফ’ হবে। তাই তুমি বীজের ক্ষুদ্রতা নিয়ে ভেবোনা। সেদিকে মনোযোগ দিয়োনা। তুমি শুধু উপযুক্ত বীজ উর্বর মাটিতে রোপন করে যথাযথ যত্ন করে যাও। দেখবে, তোমার ছোট্ট এই বীজটি কত বড় মহীরুহ হয়ে উঠছে! ফলে-ফুলে নিজে সাজছে আর অপরকে তৃপ্তি দিচ্ছে,দর্শককে মুগ্ধ করছে। পরিবেশকে নির্মল করছে।
কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতা যেভাবে আমাদের মন মস্তিষ্কে গেঁড়ে বসেছে, যেভাবে আমাদের জীবনমান নিয়ন্ত্রন করছে মুসলিম বিশ্ব যে হারে তাদের উপর নির্ভর্শীল হয়ে উঠছে, তাতে উপযুক্ত মালি তৈরী করা এবং দক্ষ মালি হয়ে বেড়ে উঠা বড়ই কঠিন। বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু এই পৃথীবিতে আমাদের উত্থান ও আমাদের আসা সবই তো মানব জাতির কল্যাণের জন্য, মানব জাতিকে অন্ধকারের গলি পথ থেকে বের করে হেদায়েত ও নববী আলোর রাজপথে নিয়ে আসার জন্য। তাই আমাদেরকে এই দুনিয়াতে একটু-আধটু কষ্ট তো করতে হবেই। বিরোধীদের কটু-কথা শুনতে হবেই। হয়ত বা গা-টাও একটু জ্বালাপোড়া করবে। হয়ত মন চাবে বিপদ সঙ্কুল ও বন্ধুর এ পথ ছেড়ে দিয়ে অন্যদের মত একটু আরামে থাকতে। একটু ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে যেতে। দুনিয়ার স্বাদটা একটু চেখে দেখতে। কিন্তু তাই বলে কি এ সব করা যাবে! নববী এ পথ কি ছেড়ে দেয়া যাবে ! শহীদদের এ পথকে কি পরিত্যাগ করা হবে !! সর্বোপরি দ্বীন কায়েমের এ পথ থেকে কি বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে !!!
এই দুনিয়াটা আর ক'দিনের? নশ্বর এই দুনিয়া আর কতটুকু সুন্দর, কতটুকু মনোমুগ্ধকর ? এ দুনিয়া এবং এতে যা সৌন্দর্য আছে সবই তো মাত্র দু'দিনের। দু'দিন পরে মৃত্যুর সময় চোখ বুঝলে তো সবই অন্ধকার হয়ে যাবে, সব সুন্দর-ই বিদায় নেবে। তখন কি দুর্গন্ধময় এ পৃথিবীর চোখ ধাঁধানো আলো আর দেখা যাবে ? যাদের জন্য আমি দ্বীনের পথকে ছেড়ে দিব (!) তাদের চেহারাটুকু দেখা যাবে ? দেখা গেলেও কি তারা চরম এই বিপদের সময় আমার কোন কাজে আসবে? না তারা কোন কাজেই আসবেনা। বরং তারাই তখন সাহায্যের মুখাপেক্ষী থাকবে।
তাই বলি কী, উপযুক্ত মালী হয়ে গড়ে উঠার চেষ্টায় ব্রতী হও। উপযুক্ত করে অন্যদেরকে গড়ে তুলতে চেষ্টা কর। তাহলে দেখবে ময়দানে-মাহশারের সেই কঠিন দিনে, তোমার এত এত সাওয়াব যা ইনশাআল্লাহ তোমাকে খুশী করিয়ে দিব। হ্যাঁ, এই সবের জন্য লাগবে অন্তরের ইখলাস আর দিলের তড়প। লাগবে ব্যাথাতুর একটি হৃদয়। লাগবে উম্মাহর চিন্তায় বিভোর হয়ে যাওয়ার মতন একটি চিত্ত। তাহলেই ইনশাআল্লাহ সফলতা তোমার পদচুম্বন করবে। দেখবে উপযুক্ত মালীর অভাব আর হবেনা। সম্ভাবনাময় বীজগুলো আর এভাবে নষ্ট হবেনা। তখন তোমার প্রিয় উম্মাহ হাঁসবে। পৃথিবীটা আবারো সুখে শান্তিতে ভরে উঠবে। আবারো কায়েম হবে এই জমীনে জমীনের মালিকের হুকুম। ইনশাআল্লাহ ।
সম্মানিত পাঠক, তুমি কি কিছু শিখতে পেরেছ এই প্রবন্ধ থেকে? যদি উত্তর হয়ে থাকে হ্যাঁ,। তাহলে তুমি আল্লাহর ওয়াস্তে এই শিক্ষাটুকু জীবনে কাজে লাগিও!!
আল্লাহ্ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
Comment