মাওলানা আজিজুর রহমান খানের বই ‘কালিমা তাইয়িবা’র উপর এক ভাই একটা আপত্তি করেছিলেন। বিষয়টি আমার কাছে কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় নতুন থ্রেডে উত্তর দিচ্ছি।
ভাইয়ের আপত্তি :-
উত্তর:- নফসের গোলামী করাও শিরক, তবে তা ছোট শিরক। এর কারণে কেউ ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদ হয়ে যায় না। কিন্তু যে নফসের গোলামী করে তার তাওহীদও পূর্ণাঙ্গ না, ক্রুটিযুক্ত। শায়েখ আজিজুর রহমান (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) মূলত এ বিষয়টিই বুঝাতে চেয়েছেন। আর এটা তার উল্লেখিত আয়াত, أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ থেকে সুস্পষ্ট। কারণ কাউকে ইলাহ বানানো যে শিরক তা তো বলাইবাহুল্য। সুতরাং কেউ তার নফসকে ইলাহ বানালে সেটাও শিরক হবে। তবে সেটা হবে ছোট শিরক। শায়েখ এ বিষয়টি খোলাসা করে দিলেই হয়তো ভালো হতো। অবশ্য হতে পারে তিনি বিষয়টার ভয়াবহরূপে তুলে ধরার জন্য খোলাসা করে বলেননি। যেমন একাধিক হাদিসে নামায ত্যাগ, গণকের কাছে যাওয়া, যিনা, মদপান ইত্যাদি গুনাহকে ‘তাগলীযান’ কুফর-শিরক বলা হয়েছে। তাছাড়া শায়েখ যেহেতু এর মধ্যে নিজেদের মনমতো আইনপ্রণয়নকারী শাসকদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছেন, আর নিঃসন্দেহে তাদের এ কাজ শিরকে আকবর-বড় শিরক, এ কারণেও হয়তো শায়েখ বিষয়টি খোলাসা করেননি।
আর শায়েখ যে কথাগুলো বলেছেন, এগুলো তার নবআবিষ্কৃত কোন কথা নয়। বরং পূর্ববর্তী আলেমগণও এজাতীয় কথা বলে গেছেন। শায়েখ মূলত তাদের বক্তব্যের সারমর্মই আমাদের নিকট নিজস্ব ভাষায় পেশ করতে চেয়েছেন। আমি উদাহরণস্বরূপ ইমাম ইবনে রজব হান্বলী (মৃত্যু: ৭৯৮ হি.) –এর একটি বক্তব্য তুলে ধরছি। দেখুন, শায়েখের বক্তব্যের সাথে তার বক্তব্যের কতই না মিল। ইবনে রজব হান্বলী রহ. তাঁর কিতাব “কালিমাতুল ইখলাস ও তাহকিকু মা’নাহা’ (কালিমায়ে তাইয়িবাহ ও তার অর্থের বাস্তবায়ন) এ তিনি বলেন,
“লা ইলাহা ইল্লাহ বলার দাবী হলো আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ থাকবে না। আর ইলাহ তো তিনিই যার আনুগত্য করা হয়, নাফরমানি করা হয় না, তার প্রতি সম্মান, ভয়, মহব্বত, আশা, ভরসা এবং প্রার্থনার মাধ্যমে । আর এ বিষয়গুলো শুধু আল্লাহ তায়ালার শানেই উপযোগী। যে এ বিষয়গুলোতে কোন কিছুকে শরীক করবে তার লা ইলাহা ইল্লাহ বলা একনিষ্ঠ হবে না, তার তাওহীদ হবে অপূর্ণাঙ্গ এবং তার অবস্থা অনুপাতে সে মাখলুকের পূজারী হবে। আর এ সবগুলোই শিরকের শাখা। এজন্যই অনেক গুনাহকে কুফর-শিরক বলা হয়েছে, যে গুনাহগুলোর ভিত্তি হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্য, ভয়, তার প্রতি আশা-ভরসা এবং এ জন্য আমল। যেমন লোকদেখানো আমল, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপর ভরসা, ‘মাশাআল্লাহ ও শাআ ফুলানুন (আল্লাহ তায়ালা এবং অমুক যা চান’) কিংবা ‘আমার জন্য আল্লাহ ও আপনি ব্যতীত কেউ নেই’- বলার মাধ্যমে আল্লাহ এবং বান্দাকে একই স্তরে নিয়ে আসা।
তেমনিভাবে যে বিষয়গুলো তাওহীদ এবং লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার- এ বিশ্বাসকে ক্রুটিযুক্ত করে, যেমন পাখির মাধ্যমে ভাগ্যগণনা, নাজায়েয ঝাড়-ফুক, গণকদের নিকট যাওয়া এবং তাদের কথা সত্য বলে বিশ্বাস করা,
এ বিষয়ে আরো দলিল হলো, আল্লাহ তায়ালা তাঁর নাফরমানী করে শয়তানের আনুগত্য করাকে শয়তানের ইবাদত বলে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বনী আদম, আমি কি তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নেইনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদত করবে না।’ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার পিতাকে যা বলেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার পিতা! আপনি শয়তানের ইবাদত করবেন না। নিশ্চয়ই শয়তান রহমানের অবাধ্য।’ সুতরাং যে রহমানের ইবাদত ও আনুগত্য করে না সে শয়তানের আনুগত্যের মাধ্যমে তার পূজারী হয়ে যাবে এবং শয়তানের পূজা হতে শুধু সেই মুক্ত থাকবে যে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই’। তারাই লা ইলাহা ইল্লাহর বাস্তবায়নকারী। তারা একনিষ্ঠভাবে এ কালিমা বলেছে এবং তাদের কাজ তাদের কথার সত্যায়ন করেছে। তারা মহব্বত, আশা, ভরসা, ভয় আনুগত্য কোন ক্ষেত্রেই গাইরুল্লাহর দিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি।তারাই লা ইলাহা ইল্লাহ বলার ক্ষেত্রে সত্যবাদী। তারাই আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত বান্দা। পক্ষান্তরে যে মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, এরপর আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করে নফস ও শয়তানের আনুগত্য করে, তার কাজ তার কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং নফস ও শয়তানের আনুগত্য অনুপাতে তার তাওহীদের মাঝে কমতি আসে।
‘যে আল্লাহ তায়ালার হেদায়েত ব্যতীত নফসের অনুসরণ করে তার অপেক্ষা বড় গোমরাহ আর কে আছে? ‘তুমি নফসের আনুগত্য করো না, তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দিবে।’ সুতরাং হে মানুষ, তুমি আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও, নফসের বান্দা হয়ো না। কেননা নফস তার বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। ‘ভিন্ন ভিন্ন অনেক ইলাহ উত্তম না প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহ’। -কালিমাতুল ইখলাস, পৃ: ২৩-২৮ আলমাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত, চতুর্থ প্রকাশনা, ১৩৯৭ হি.
ভাইয়ের আপত্তি :-
আমার জানামতে বইটা আমাদের ইমারার ভাইদের কাছে জনপ্রিয়।
উক্ত বইয়ের ১২-১৩ পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে, তা আমি হুবহু লিখে দিলাম।নিচের [ ]বন্ধনীর মাঝের লেখাটা।
[নফসকে ইলাহ মান্য করা:
এক শ্রেণীর মানুষ আছে, যারা নিজের নফসকে ইলাহ হিসেবে মান্য করছে। পাঠকের হয়তো মনে হতে পারে যে নিজের নফস কিভাবে ইলাহ হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন -
এ আয়াতে ইলাহ বলতে নিজের নফস বা নিজের ইচ্ছাশক্তিকে বুঝানো হয়েছে। নফসকে ইলাহ বানানোর অর্থ হচ্ছে নফসের দাসত্ব করা। মূলত: আল্লাহর আদেশকে অমান্য করে নিজের কামনা-বাসনা অনুযায়ী কাজ করার অর্থই হচ্ছে নফসকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করা। অর্থাৎ প্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করা বুঝায়।
মূর্তি পূজা করা অথবা অন্য কোন কাউকে ইলাহ হিসেবে মান্য করলে যেভাবে শিরক হবে, নফসের দাসত্ব করা হলে তাও একই রকম শিরক হবে। হযরত আবু উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
"আসমানের নিচে আল্লাহ ছাড়া আর যত মাবুদের পূজা করা হয়, তন্মধ্যে আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট মাবুদ হচ্ছে নফসের খাহেশ যা অনুসরণ করা হয়"।বর্তমান সমাজে এরূপ লোকের সংখ্যাই বেশি, যারা নিজের কামনা-বাসনার গোলাম হয়ে হক এবং বাতিলের কোন পার্থক্য করে না, ন্যায় অন্যায়ের কোন তোয়াক্কা করে না। এ সকল মানুষ নিজের খেয়ালের বশবর্তী হয়ে অবলীলায় আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করে। এভাবেই এসকল লোকেরা নফসকে ইলাহের আসনে অধিষ্ঠিত করে।
একজন ব্যক্তি যখন আল্লাহর কোন নির্দেশের বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে প্রাধান্য দেয় তখন তার নফস ইলাহের পর্যায়ে চলে যায়।
যেমন আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে -সূদের লেনদেন করো না, ঘুষ নিয়ো না, ওজনে কম দিয়ো না, মজুতদারি করো না, ভেজাল দিয়ো না, কিংবা যিনার কাছে যেয়ো না। কিন্তু নফসের লোভ সামলাতে না পেরে মানুষেরা এ কাজগুলো করে। এ সকল অন্যায়গুলো করার জন্য নফস মানুষকে প্রলুব্ধ করে থাকে। তখন নফস ইলাহের পর্যায়ে পরে।
যেমন, একজন কর্মচারীকে ঘুষ গ্রহণের জন্য নফস তাকে ভিতরে ভিতরে অভাবের যুক্তি দাড় করায় কিংবা উন্নত জীবনের মোহ দেখায়। অত:পর সে যখন কাজটি করে, তখন সে প্রবৃত্তি বা নফসকে আল্লাহর নিষেধের চেয়েও বেশি গুরুত্ব প্রদান করে এবং এভাবে নফসকে ইলাহের আসনে বসায় এবং কর্মের দ্বারা কালিমাকে অস্বীকার করে। এমনিভাবে নফস জীবনকে অন্যায়ভাবে উপভোগ করার চাহিদা দাড় করিয়ে কোন ব্যক্তিকে যিনায় প্রলুব্ধ করে এবং কোন ব্যক্তি যখন এ কাজটি করে তখন সে আল্লাহর হুকুমের চেয়েও নিজের নফসকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে।
ফলে তার নফস ইলাহের আসনে পর্যবসিত হয়। এভাবে নফসকে ইলাহ বানিয়ে কালিমাকে অস্বীকার করে।
এভাবে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে নফসের তাড়নায় মানুষ যখন আল্লাহর কোন হুকুমকে অমান্য করে, তখন নফস তাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আল্লাহর হুকুমের চেয়ে নিজের নফসকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। তখন নফস ইলাহের পর্যায়ে উপনীত হয়। ফলে সে শিরকের মধ্যে লিপ্ত হলো। কিংবা একশ্রেণীর শাসকরা যখন আল্লাহর বিধানের তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে, তখন তাদের নফস ইলাহের পর্যায়ে পরে। কারণ তারা এক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের চেয়ে নিজের নফসকে বেশি প্রাধান্য দেয়। তারা তখন কালিমাকে অস্বীকার করল এবং শিরকের মধ্যে লিপ্ত হলো।
শিক্ষণীয়: নিজের খেয়ালের বশবর্তী হয়ে আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য করার মাধ্যমে নিজের নফসকে ইলাহ বানানো হয় এবং "আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই" কালিমার এ বাণীকে কর্ম দ্বারা অস্বীকার করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তি কালিমার ঘোষণা থেকে সরে দাড়ায়, আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত হয়। তাই এ অবস্থা থেকে আমাদের সব সময় বেচে থাকতে হবে।]
আমার মনে হচ্ছে, লেখক এখানে যারা নফসের প্ররোচনায় গুনাহে লিপ্ত হয়,তাদেরকে মুশরিক সাব্যস্ত করেছেন।
আসলে বিষয়টা কি তাই?? নাকি আমি ভুল বুঝেছি?? দলিলসহ বিষয়টা খোলাসা করার অনুরোধ করছি।
আর লেখক যদি ভুল করে থাকেন, তাহলে বইটার হুকুম কি??এ বই প্রচার করার হুকুম কি??
উক্ত বইয়ের ১২-১৩ পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে, তা আমি হুবহু লিখে দিলাম।নিচের [ ]বন্ধনীর মাঝের লেখাটা।
[নফসকে ইলাহ মান্য করা:
এক শ্রেণীর মানুষ আছে, যারা নিজের নফসকে ইলাহ হিসেবে মান্য করছে। পাঠকের হয়তো মনে হতে পারে যে নিজের নফস কিভাবে ইলাহ হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন -
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ
আপনি কি তাদের দেখেছেন, যে নিজের প্রবৃত্তিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। (সুরা ফুরকান, আয়াত :৪৩)এ আয়াতে ইলাহ বলতে নিজের নফস বা নিজের ইচ্ছাশক্তিকে বুঝানো হয়েছে। নফসকে ইলাহ বানানোর অর্থ হচ্ছে নফসের দাসত্ব করা। মূলত: আল্লাহর আদেশকে অমান্য করে নিজের কামনা-বাসনা অনুযায়ী কাজ করার অর্থই হচ্ছে নফসকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করা। অর্থাৎ প্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করা বুঝায়।
মূর্তি পূজা করা অথবা অন্য কোন কাউকে ইলাহ হিসেবে মান্য করলে যেভাবে শিরক হবে, নফসের দাসত্ব করা হলে তাও একই রকম শিরক হবে। হযরত আবু উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
"আসমানের নিচে আল্লাহ ছাড়া আর যত মাবুদের পূজা করা হয়, তন্মধ্যে আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট মাবুদ হচ্ছে নফসের খাহেশ যা অনুসরণ করা হয়"।বর্তমান সমাজে এরূপ লোকের সংখ্যাই বেশি, যারা নিজের কামনা-বাসনার গোলাম হয়ে হক এবং বাতিলের কোন পার্থক্য করে না, ন্যায় অন্যায়ের কোন তোয়াক্কা করে না। এ সকল মানুষ নিজের খেয়ালের বশবর্তী হয়ে অবলীলায় আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করে। এভাবেই এসকল লোকেরা নফসকে ইলাহের আসনে অধিষ্ঠিত করে।
একজন ব্যক্তি যখন আল্লাহর কোন নির্দেশের বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে প্রাধান্য দেয় তখন তার নফস ইলাহের পর্যায়ে চলে যায়।
যেমন আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে -সূদের লেনদেন করো না, ঘুষ নিয়ো না, ওজনে কম দিয়ো না, মজুতদারি করো না, ভেজাল দিয়ো না, কিংবা যিনার কাছে যেয়ো না। কিন্তু নফসের লোভ সামলাতে না পেরে মানুষেরা এ কাজগুলো করে। এ সকল অন্যায়গুলো করার জন্য নফস মানুষকে প্রলুব্ধ করে থাকে। তখন নফস ইলাহের পর্যায়ে পরে।
যেমন, একজন কর্মচারীকে ঘুষ গ্রহণের জন্য নফস তাকে ভিতরে ভিতরে অভাবের যুক্তি দাড় করায় কিংবা উন্নত জীবনের মোহ দেখায়। অত:পর সে যখন কাজটি করে, তখন সে প্রবৃত্তি বা নফসকে আল্লাহর নিষেধের চেয়েও বেশি গুরুত্ব প্রদান করে এবং এভাবে নফসকে ইলাহের আসনে বসায় এবং কর্মের দ্বারা কালিমাকে অস্বীকার করে। এমনিভাবে নফস জীবনকে অন্যায়ভাবে উপভোগ করার চাহিদা দাড় করিয়ে কোন ব্যক্তিকে যিনায় প্রলুব্ধ করে এবং কোন ব্যক্তি যখন এ কাজটি করে তখন সে আল্লাহর হুকুমের চেয়েও নিজের নফসকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে।
ফলে তার নফস ইলাহের আসনে পর্যবসিত হয়। এভাবে নফসকে ইলাহ বানিয়ে কালিমাকে অস্বীকার করে।
এভাবে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে নফসের তাড়নায় মানুষ যখন আল্লাহর কোন হুকুমকে অমান্য করে, তখন নফস তাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আল্লাহর হুকুমের চেয়ে নিজের নফসকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। তখন নফস ইলাহের পর্যায়ে উপনীত হয়। ফলে সে শিরকের মধ্যে লিপ্ত হলো। কিংবা একশ্রেণীর শাসকরা যখন আল্লাহর বিধানের তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে, তখন তাদের নফস ইলাহের পর্যায়ে পরে। কারণ তারা এক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের চেয়ে নিজের নফসকে বেশি প্রাধান্য দেয়। তারা তখন কালিমাকে অস্বীকার করল এবং শিরকের মধ্যে লিপ্ত হলো।
শিক্ষণীয়: নিজের খেয়ালের বশবর্তী হয়ে আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য করার মাধ্যমে নিজের নফসকে ইলাহ বানানো হয় এবং "আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই" কালিমার এ বাণীকে কর্ম দ্বারা অস্বীকার করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তি কালিমার ঘোষণা থেকে সরে দাড়ায়, আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত হয়। তাই এ অবস্থা থেকে আমাদের সব সময় বেচে থাকতে হবে।]
আমার মনে হচ্ছে, লেখক এখানে যারা নফসের প্ররোচনায় গুনাহে লিপ্ত হয়,তাদেরকে মুশরিক সাব্যস্ত করেছেন।
আসলে বিষয়টা কি তাই?? নাকি আমি ভুল বুঝেছি?? দলিলসহ বিষয়টা খোলাসা করার অনুরোধ করছি।
আর লেখক যদি ভুল করে থাকেন, তাহলে বইটার হুকুম কি??এ বই প্রচার করার হুকুম কি??
উত্তর:- নফসের গোলামী করাও শিরক, তবে তা ছোট শিরক। এর কারণে কেউ ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদ হয়ে যায় না। কিন্তু যে নফসের গোলামী করে তার তাওহীদও পূর্ণাঙ্গ না, ক্রুটিযুক্ত। শায়েখ আজিজুর রহমান (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) মূলত এ বিষয়টিই বুঝাতে চেয়েছেন। আর এটা তার উল্লেখিত আয়াত, أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ থেকে সুস্পষ্ট। কারণ কাউকে ইলাহ বানানো যে শিরক তা তো বলাইবাহুল্য। সুতরাং কেউ তার নফসকে ইলাহ বানালে সেটাও শিরক হবে। তবে সেটা হবে ছোট শিরক। শায়েখ এ বিষয়টি খোলাসা করে দিলেই হয়তো ভালো হতো। অবশ্য হতে পারে তিনি বিষয়টার ভয়াবহরূপে তুলে ধরার জন্য খোলাসা করে বলেননি। যেমন একাধিক হাদিসে নামায ত্যাগ, গণকের কাছে যাওয়া, যিনা, মদপান ইত্যাদি গুনাহকে ‘তাগলীযান’ কুফর-শিরক বলা হয়েছে। তাছাড়া শায়েখ যেহেতু এর মধ্যে নিজেদের মনমতো আইনপ্রণয়নকারী শাসকদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছেন, আর নিঃসন্দেহে তাদের এ কাজ শিরকে আকবর-বড় শিরক, এ কারণেও হয়তো শায়েখ বিষয়টি খোলাসা করেননি।
এমনিতেই আমাদেরকে মুসলিমদের ব্যাপারে ভালো ধারণা করার আদেশ করা হয়েছে, আর শায়েখ আজিজুর রহমানের মতে বীরমুজাহিদ আলেমগণ, যারা তাগূতের সকল চোখরাঙানি উপেক্ষা করে আমাদের নিকট সত্য দ্বীন পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন, তাদের ব্যাপারে ভালো ধারণা করা তো অতি জরুরী, তারা তো যমিনে আল্লাহ তায়ালার ‘হুজ্জত-প্রমাণ’ যারা না থাকলে আমরা পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের সন্ধান পেতাম না। বিকৃত ও খণ্ডিত দ্বীনই আমাদের সামনে তুলে ধরা হতো। উমর রাযি. বলেন,
“তোমার মুসলিম ভাইয়ের মুখ হতে বের হওয়া কোন শব্দের ব্যাপারে তুমি খারাপ ধারণা করো না, যদি তুমি তার কোন ভালো ব্যাখ্যা করতে পারো।” -মুদারাতুন নাস, ইবনু আবিদ্দুনিয়া, পৃ: ৫০ হাদিস নং : ৪৫
উমর রাযি. আরো বলেন,
তোমার ভাইয়ের বিষয়ে সর্বোত্তম ধারণাই পোষণ করো, যতক্ষণ না তোমার নিকট এমন দলিল-প্রমাণ আসে যা সুধারণা পোষণে তোমাকে অক্ষম করে দেয়। -আযযুহদ, আবু দাউদ, পৃ: ৯৮ হাদিস নং : ৮৩
لا تظنن بكلمة خرجت من في امرئ مسلم سوءا وانت تجد لها في الخير محملا (مداراة الناس لابن أبي الدنيا ص: 50 رقم: 45 )
“তোমার মুসলিম ভাইয়ের মুখ হতে বের হওয়া কোন শব্দের ব্যাপারে তুমি খারাপ ধারণা করো না, যদি তুমি তার কোন ভালো ব্যাখ্যা করতে পারো।” -মুদারাতুন নাস, ইবনু আবিদ্দুনিয়া, পৃ: ৫০ হাদিস নং : ৪৫
উমর রাযি. আরো বলেন,
ضَعْ أَمْرَ أَخِيكَ عَلَى أَحْسَنِهِ حَتَّى يَأْتِيَكَ مِنْهُ مَا يَغْلِبُكَ
তোমার ভাইয়ের বিষয়ে সর্বোত্তম ধারণাই পোষণ করো, যতক্ষণ না তোমার নিকট এমন দলিল-প্রমাণ আসে যা সুধারণা পোষণে তোমাকে অক্ষম করে দেয়। -আযযুহদ, আবু দাউদ, পৃ: ৯৮ হাদিস নং : ৮৩
إن قول العبد لا إله إلا الله يقتضي أن لا إله له غير الله وإلآله هو الذي يطاع فلا يعصى هيبة له وإجلالا ومحبة وخوفا ورجاء وتوكلا عليه وسؤالا منه ودعاء له ولا يصلح ذلك كله إلا لله عز وجل فمن أشرك مخلوقا في شيء من هذه الأمور التي هي من خصائص الآلهيه كان ذلك قدحا في إخلاصه في قول لا إله إلا الله ونقصا في توحيده وكان فيه من عبودية المخلوق بحسب ما فيه من ذلك وهذا كله من فروع الشرك ولهذا ورد إطلاق الكفر ولاشرك على كثر من المعاصي التي منشؤها من طاعة غير الله أو خوفه أو رجائه أو التوكل عليه والعمل لأجله كما ورد إطلاق الشرك على الرياء وعلى الحلف بغير الله وعلى التوكل على غير الله والإعتماد عليه وعلى من سوى بين الله وبين المخلوق في المشيئة مثل أن يقول ما شاء الله وشاء فلان وكذا قوله مالي إلا الله وأنت
وكذلك ما يقدح في التوحيد وتفرد الله بالنفع والضر كالطيرة والرقى المكروهة وإيتان الكهان وتصديقهم بما يقولون
وكذلك اتباع هوى النفس فيما نهى الله عنه قادح في تمام التوحيد وكماله ولهذا أطلق الشرع على كثير من الذنوب التي منشؤها من هوى النفس أنها كفر وشرك كقتال المسلم ومن أتى حائضا أو امرأة في دبرها ومن شرب الخمرة في المرة الرابعة وإن كان ذلك لا يخرجه عن الملة ولهذا قال السلف كفردون كفر وشرك دون شرك
وقد ورد إطلاق الآله على الهوى المتبع قال الله تعإلى {أفرأيت من اتخذ إلهه هواه} قال هو الذي لا يهوى شيئا إلا ركبه وقال قتادة هو الذي كلما هوي شيئا ركبه وكلما اشتهى شيئا أتاه لا يحجزه عن ذلك ورع ولا تقوى وروي من حديث أبي أمامة باسناد ضعيف ما تحت ظل سماء إله يعبد أعظم عند الله من هوى متبع وفي حديث أخر لا تزال لا إله إلا الله تدفع عن أصحابها حتى يؤثرون دنياهم على دينهم فاذا فعلوا ذلك ردت عليهم ويقال لهم كذبتم
ويشهد لذلك الحديث الصحيح عن النبي صلى الله عليه وسلم تعس عبد الدينار تعس عبد الدرهم تعس عبد القطيفة تعس عبد الخميصة تعس وانتكس وإذا شيك فلا انتقش فدل هذا على أن كل من أحب شيئا وأطاعه وكان غاية قصده ومطلوبه ووالي لأجله وعادى لأجله فهو عبده وكان ذلك الشيء معبوده وإلآهه
ويدل عليه أيضا أن الله تعإلى سمي طاعة الشيطان في معصيته عبادة للشيطان كما قال تعإلى {ألم أعهد إليكم يا بني آدم أن لا تعبدوا الشيطان} وقال تعإلى حاكيا عن خليله ابراهيم عليه السلام لأبيه {يا أبت لا تعبد الشيطان إن الشيطان كان للرحمن عصيا} فمن لم يتحقق بعبودية الرحمن وطاعته فانه يعبد الشيطان بطاعته له ولم يخلص من عبادة الشيطان إلا من أخلص عبودية الرحمن وهم الذين قال فيهم {إن عبادي ليس لك عليهم سلطان} فهم الذين حققوا قول لا إله إلا الله وأخلصوا في قولها وصدقوا قولهم بفعلهم فلم يلتفتوا إلى غير الله محبة ورجاء وخشية وطاعة وتوكلا وهم الذين صدقوا في قول لا إله إلا الله وهم عباد الله حقا
فأما من قال لا إله إلا الله بلسانه ثم أطاع الشيطان وهواه في معصية الله ومخالفته فقد كذب فعله قوله ونقص من كمال توحيدة بقدر معصية الله في طاعة الشيطان والهوى {ومن أضل ممن اتبع هواه بغير هدى من الله} و {ولا تتبع الهوى فيضلك عن سبيل الله} فيا هذا كن عبد الله لا عبد الهوى فان الهوى يهوي بصاحبه في النار {أأرباب متفرقون خير أم الله الواحد القهار} )كلمة الإخلاص وتحقيق معناها الناشر: المكتب الإسلامي – بيروت الطبعة: الرابعة، 1397(
وكذلك ما يقدح في التوحيد وتفرد الله بالنفع والضر كالطيرة والرقى المكروهة وإيتان الكهان وتصديقهم بما يقولون
وكذلك اتباع هوى النفس فيما نهى الله عنه قادح في تمام التوحيد وكماله ولهذا أطلق الشرع على كثير من الذنوب التي منشؤها من هوى النفس أنها كفر وشرك كقتال المسلم ومن أتى حائضا أو امرأة في دبرها ومن شرب الخمرة في المرة الرابعة وإن كان ذلك لا يخرجه عن الملة ولهذا قال السلف كفردون كفر وشرك دون شرك
وقد ورد إطلاق الآله على الهوى المتبع قال الله تعإلى {أفرأيت من اتخذ إلهه هواه} قال هو الذي لا يهوى شيئا إلا ركبه وقال قتادة هو الذي كلما هوي شيئا ركبه وكلما اشتهى شيئا أتاه لا يحجزه عن ذلك ورع ولا تقوى وروي من حديث أبي أمامة باسناد ضعيف ما تحت ظل سماء إله يعبد أعظم عند الله من هوى متبع وفي حديث أخر لا تزال لا إله إلا الله تدفع عن أصحابها حتى يؤثرون دنياهم على دينهم فاذا فعلوا ذلك ردت عليهم ويقال لهم كذبتم
ويشهد لذلك الحديث الصحيح عن النبي صلى الله عليه وسلم تعس عبد الدينار تعس عبد الدرهم تعس عبد القطيفة تعس عبد الخميصة تعس وانتكس وإذا شيك فلا انتقش فدل هذا على أن كل من أحب شيئا وأطاعه وكان غاية قصده ومطلوبه ووالي لأجله وعادى لأجله فهو عبده وكان ذلك الشيء معبوده وإلآهه
ويدل عليه أيضا أن الله تعإلى سمي طاعة الشيطان في معصيته عبادة للشيطان كما قال تعإلى {ألم أعهد إليكم يا بني آدم أن لا تعبدوا الشيطان} وقال تعإلى حاكيا عن خليله ابراهيم عليه السلام لأبيه {يا أبت لا تعبد الشيطان إن الشيطان كان للرحمن عصيا} فمن لم يتحقق بعبودية الرحمن وطاعته فانه يعبد الشيطان بطاعته له ولم يخلص من عبادة الشيطان إلا من أخلص عبودية الرحمن وهم الذين قال فيهم {إن عبادي ليس لك عليهم سلطان} فهم الذين حققوا قول لا إله إلا الله وأخلصوا في قولها وصدقوا قولهم بفعلهم فلم يلتفتوا إلى غير الله محبة ورجاء وخشية وطاعة وتوكلا وهم الذين صدقوا في قول لا إله إلا الله وهم عباد الله حقا
فأما من قال لا إله إلا الله بلسانه ثم أطاع الشيطان وهواه في معصية الله ومخالفته فقد كذب فعله قوله ونقص من كمال توحيدة بقدر معصية الله في طاعة الشيطان والهوى {ومن أضل ممن اتبع هواه بغير هدى من الله} و {ولا تتبع الهوى فيضلك عن سبيل الله} فيا هذا كن عبد الله لا عبد الهوى فان الهوى يهوي بصاحبه في النار {أأرباب متفرقون خير أم الله الواحد القهار} )كلمة الإخلاص وتحقيق معناها الناشر: المكتب الإسلامي – بيروت الطبعة: الرابعة، 1397(
“লা ইলাহা ইল্লাহ বলার দাবী হলো আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ থাকবে না। আর ইলাহ তো তিনিই যার আনুগত্য করা হয়, নাফরমানি করা হয় না, তার প্রতি সম্মান, ভয়, মহব্বত, আশা, ভরসা এবং প্রার্থনার মাধ্যমে । আর এ বিষয়গুলো শুধু আল্লাহ তায়ালার শানেই উপযোগী। যে এ বিষয়গুলোতে কোন কিছুকে শরীক করবে তার লা ইলাহা ইল্লাহ বলা একনিষ্ঠ হবে না, তার তাওহীদ হবে অপূর্ণাঙ্গ এবং তার অবস্থা অনুপাতে সে মাখলুকের পূজারী হবে। আর এ সবগুলোই শিরকের শাখা। এজন্যই অনেক গুনাহকে কুফর-শিরক বলা হয়েছে, যে গুনাহগুলোর ভিত্তি হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্য, ভয়, তার প্রতি আশা-ভরসা এবং এ জন্য আমল। যেমন লোকদেখানো আমল, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপর ভরসা, ‘মাশাআল্লাহ ও শাআ ফুলানুন (আল্লাহ তায়ালা এবং অমুক যা চান’) কিংবা ‘আমার জন্য আল্লাহ ও আপনি ব্যতীত কেউ নেই’- বলার মাধ্যমে আল্লাহ এবং বান্দাকে একই স্তরে নিয়ে আসা।
তেমনিভাবে যে বিষয়গুলো তাওহীদ এবং লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার- এ বিশ্বাসকে ক্রুটিযুক্ত করে, যেমন পাখির মাধ্যমে ভাগ্যগণনা, নাজায়েয ঝাড়-ফুক, গণকদের নিকট যাওয়া এবং তাদের কথা সত্য বলে বিশ্বাস করা,
তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ বিষয়াদিতে নফসের আনুগত্যও তাওহীদের পূর্ণতার প্রতিবন্ধক। এজন্যই শরিয়তে অনেক গুনাহকে কুফর-শিরক বলা হয়েছে যার উৎস হলো নফসের আনুগত্য। যেমন, মুসলিম ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ, হায়েযা স্ত্রীর সাথে সহবাস, স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সহবাস, চারবার মদ পান করা, যদিও এ বিষয়গুলো তাকে ধর্ম থেকে বের করে দেয় না। এ কারণেই সালাফ বলেছেন, এগুলো কুফরুন দুনা কুফরুন, শিরকুন দুনা শিরকুন, অর্থাৎ ছোট শিরক।
যে নফসের আনুগত্য করা হয় তাকে ইলাহও বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখেছো, যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে।’ আয়াতের তাফসীরে কাতাদাহ রহ. বলেন, সে হলো ঐ ব্যক্তি যে মন যা চায় তাই করে, আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া তাকে এ থেকে বিরত রাখে না। আবু উমামা রাযি. এর সূত্রে একটি যয়ীফ হাদিসে এসেছে, ‘আসমানের নিচে আল্লাহ ছাড়া আর যত মাবুদের পূজা করা হয়, তন্মধ্যে আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট মাবুদ হচ্ছে নফসের খাহেশ যা অনুসরণ করা হয়।’ অপর হাদিসে এসেছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তার অনুসারীদের রক্ষা করে যতক্ষণ না তারা দ্বীনের উপর নিজেদের দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়। যখন তারা এটা করে তখন তাদের কালিমা প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তাদেরকে বলা হয় তোমরা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার ক্ষেত্রে) মিথ্যাবাদী।
একটি সহিহ হাদিস হতেও এ বিষয়টির সমর্থন মেলে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধ্বংস হোক দিনারের গোলাম, ধ্বংস হোক দিরহামের গোলাম, ধ্বংস হোক ঝালরবিশিষ্ট নকশাদার চাদরের গোলাম, ধ্বংস হোক দামী পোশাকের গোলাম। সে ধ্বংস হোক, নিপাত যাক, তার পায়ে কাটা বিঁধলে কাটাও বের না হোক।’ [সহিহ বুখারী, ২৮৮৭ জামে’ তিরমিযি, ২৩৭৫] এ হাদিস প্রমাণ করে যে কোন জিনিষকে ভালোবাসবে, তার আনুগত্য করবে এবং সে জিনিষটিই তার পরম কামনা ও লক্ষ্য হবে, এর কারণেই সে কারো সাথে বন্ধুত্ব করবে, এর কারণেই সে কারো সাথে শত্রুতা করবে, সে ঐ জিনিষটার বান্দা বলে বিবেচিত হবে এবং সেই জিনিষটি তার ইলাহ ও উপাস্য হয়ে যাবে।
যে নফসের আনুগত্য করা হয় তাকে ইলাহও বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখেছো, যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে।’ আয়াতের তাফসীরে কাতাদাহ রহ. বলেন, সে হলো ঐ ব্যক্তি যে মন যা চায় তাই করে, আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া তাকে এ থেকে বিরত রাখে না। আবু উমামা রাযি. এর সূত্রে একটি যয়ীফ হাদিসে এসেছে, ‘আসমানের নিচে আল্লাহ ছাড়া আর যত মাবুদের পূজা করা হয়, তন্মধ্যে আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট মাবুদ হচ্ছে নফসের খাহেশ যা অনুসরণ করা হয়।’ অপর হাদিসে এসেছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তার অনুসারীদের রক্ষা করে যতক্ষণ না তারা দ্বীনের উপর নিজেদের দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়। যখন তারা এটা করে তখন তাদের কালিমা প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তাদেরকে বলা হয় তোমরা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার ক্ষেত্রে) মিথ্যাবাদী।
একটি সহিহ হাদিস হতেও এ বিষয়টির সমর্থন মেলে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধ্বংস হোক দিনারের গোলাম, ধ্বংস হোক দিরহামের গোলাম, ধ্বংস হোক ঝালরবিশিষ্ট নকশাদার চাদরের গোলাম, ধ্বংস হোক দামী পোশাকের গোলাম। সে ধ্বংস হোক, নিপাত যাক, তার পায়ে কাটা বিঁধলে কাটাও বের না হোক।’ [সহিহ বুখারী, ২৮৮৭ জামে’ তিরমিযি, ২৩৭৫] এ হাদিস প্রমাণ করে যে কোন জিনিষকে ভালোবাসবে, তার আনুগত্য করবে এবং সে জিনিষটিই তার পরম কামনা ও লক্ষ্য হবে, এর কারণেই সে কারো সাথে বন্ধুত্ব করবে, এর কারণেই সে কারো সাথে শত্রুতা করবে, সে ঐ জিনিষটার বান্দা বলে বিবেচিত হবে এবং সেই জিনিষটি তার ইলাহ ও উপাস্য হয়ে যাবে।
‘যে আল্লাহ তায়ালার হেদায়েত ব্যতীত নফসের অনুসরণ করে তার অপেক্ষা বড় গোমরাহ আর কে আছে? ‘তুমি নফসের আনুগত্য করো না, তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দিবে।’ সুতরাং হে মানুষ, তুমি আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও, নফসের বান্দা হয়ো না। কেননা নফস তার বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। ‘ভিন্ন ভিন্ন অনেক ইলাহ উত্তম না প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহ’। -কালিমাতুল ইখলাস, পৃ: ২৩-২৮ আলমাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত, চতুর্থ প্রকাশনা, ১৩৯৭ হি.
Comment