বেশি দিন নয়, মাত্র ২/৩ মাস হল। কিভাবে যেন জড়িয়ে পড়েছিলাম খারেজীদের ফাঁদে। খারেজিদের ফাঁদে পা দেয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিলো টেলিগ্রাম।
যদিও একপ্রকার ধর্মহীন পরিবেশে বড় হচ্ছি, ইসলামের প্রতি আমার ভালোবাসা যেন হাড়-মাংসে মেশা। এই প্রতিকূল পরিবেশেও নিজের ঈমানকে ধরে রাখতে আমার অনেক প্রচেষ্টা। কিন্তু কতদিন সঠিক পথে ধরে রাখবো! নেই কোন গাইডলাইন দেওয়ার কেউ। কেউ আমাকে দেখিয়ে দেবে না যে এই পথটা ফেতনার। ওই পথটা শয়তানের। নিজের পরিবারের লোকজনও প্র্যাকটিসিং মুসলিম না। নামেমাত্র মুসলিম।
নেটে বিভিন্ন ইসলামী বইপুস্তক ও অ্যাপস নামিয়ে পড়ার মাধ্যমে আমার ইসলামী শিক্ষার হাতে খড়ি। কারো প্ররোচনায় টেলিগ্রাম বিভিন্ন ইসলামী বইপুস্তক হোস্টিং চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যাই। অল্পবিস্তর সবকিছুই পড়ার অভ্যাস আছে। হাতে যা পাই তাই পড়তে ইচ্ছে করে। উপন্যাস থেকে হাদীস। তাই বিভিন্ন ইসলামী বইপত্র নামিয়ে পড়া শুরু করি।
যা পড়তাম বিভিন্ন অ্যাপস থেকে কপি করে আমার একটা ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিতাম। আমি নিজেও বিভিন্ন বিষয়ে লিখালিখি করতাম।ফেসবুকে এক আল-কায়েদাপন্থী ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। তার লেখা পড়তাম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তিনি নিজেও হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলেন।
***************************
একদিন এক লোক আমাকে নক দিয়ে বললেন যে, আসসালামু আলাইকুম! ভাই আমি দাওলা সম্পর্কে জানতে চাই। আমাকে তাদের বিষয়ে বলুন।
তখন আমি তাকে দাওলার বিষয়ে সামান্য কিছু কথা বলে তাকে দাওলা সম্পর্কে টেলিগ্রামে পাওয়া কিছু বই পড়তে দিলাম।
কিছুদিন পর সে আবার আমাকে নক দিয়ে বললেন যে, আপনার দেওয়া বইগুলো আমি পড়েছি এখন আমি আপনাকে একটা বই দিব সেটা পড়ে আমাকে আপনার মতামত জানান।
আমিও বললাম যে আচ্ছা দেন দেখি কি বই? তারপর সে আমাকে খেলাফত বনাম জাহালত বইটি দিলো।।
তার এই বইটি দেখার পর আমি বুঝে গেলাম যে সে আগের থেকেই একজন খারেজী সমর্থক! আমাকে টার্গেট করেছে। তার দেওয়া বইটি দেখে আমি তাকে কিছু না বলে তারাতাড়ি ব্লক করে দিলাম।
এর কিছুদিন পর আমি দাওলার বিরুদ্ধে আমার ফেসবুক আইডিতে একটা পোস্ট দিলাম। আমার পোস্ট দেখে আরেকজন খারেজী সমর্থক তালেবানের বিরুদ্ধে কিছু এডিট করা ছবি দিল। তার দেওয়া ছবিগুলো দেখে আমি ওকে ইনবক্সে নক দিয়ে তর্ক শুরু করে দিলাম সেও আমাকে বারবার খেলাফত বনাম জাহালত বইটি পড়তে বলছিল। আমি তার সাথে তর্ক করে বুঝলাম যে খারেজিদের জন্য খেলাফত বনাম জাহালত বইটি ওহীর মত গুরুত্বপূর্ণ। তর্কের এক পর্যায়ে আমি বিরক্ত হয়ে তাকে ব্লক করে দিলাম!
তবে তখন থেকেই আমার ইচ্ছা করল যে দাওলা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে হবে। আমি তাদের বই পড়া শুরু করে দিলাম।
আমার মনোযোগ নষ্ট না হয় তাই আমি ফেসবুক আইডি নষ্ট করে দিলাম এবং দাওলার বইগুলো পড়তে শুরু করলাম।
খারেজীদের বিভিন্ন বইপত্র ও পুস্তিকা তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত হতো। আমি তাদের দশটা বই ছাড়া সবগুলো বই পড়েছি। আর আমি খেলাফত বনাম জাহালত বইটি পড়ে বুঝতে পেরেছি যে এই বইটি খারেজীদের জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। এই বইটিতে এত মিথ্যা এবং বানোয়াট বিষয় আছে যা দাজ্জালকেও হার মানায়।
খারেজীদের বিভিন্ন চ্যানেল থেকে সংবাদ প্রচার হতো নিয়মিত আক্রমণের। তারা দেখাতো প্রতিদিন গড়ে তারা তিনটি আক্রমণ করছে যেখানে তালিবান আল-কায়েদার বসে বসে আঙ্গুল চুষছে।
তারা দেখাতো তালিবানরা ক্ষমতায় যাওয়ার পর শরীয়াহ কায়েম করছে না। পর্দার বিধান কায়েম করেছেনা, চুরের হাত কাটছে না। কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইছে। শিয়া ইরানকে নিজেদের বন্ধু বলছে। শিয়াদের রসম-রেওয়াজ এ অংশ নিচ্ছে। প্রচুর প্রোপাগান্ডামূলক ফটো দিতো যেগুলো বেশিরভাগই এডিট করা।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এসব প্রোপাগান্ডা মূলক খবর দেখে এবং বই পড়ে আমার ছোট্ট মনে ক্ষোভ তৈরি হতে থাকলো মুজাহিদদের প্রতি। একপর্যায়ে কি তালিবানসহ ওইসব তানজিম আল কায়েদার মুজাহিদদের মুরতাদ মনে হতে থাকলো যারা নাকি আমার জন্মের অন্তত ৭ বছর আগে ক্রুসেডার আমেরিকার মাথায় আঘাতের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জিহাদের সূচনা করেছিলেন একবিংশ শতাব্দীর প্রথম প্রহরেই।
মুরতাদ মনে করতে শুরু করলাম উম্মাহর একজন দরদী ব্যক্তিত্ব, হাকীমুল উম্মাহ, আমীরুল মুজাহিদীন শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহকে।
অবশেষে খারেজিয়্যাত নামক এই মাকড়সা আমার ভিতর খুব ভালো করেই তার জাল তৈরি করে ফেলল। আমার কলব ভালো করেই জড়িয়ে গেলো এর জালে।(যদিও আল্লাহপাক মাকড়শার ঘরকে সবচেয়ে দুর্বল ঘর বলেছেন)
আমি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুললাম, তাদের সংবাদ প্রচার শুরু করে দিলাম। ওয়ার্ডপ্রেস সাইট খুললাম তাদের সংবাদ প্রচারের জন্য। প্রতিনিয়ত এসব চালিয়ে যাচ্ছিলাম। খারেজী কর্তৃক তালিবান হত্যার সংবাদও প্রচার করতাম।
এতো সব কিছু মাত্র ২/৩ মাসের মধ্যে!
আমার অন্তর ছিল নিষ্কলঙ্ক, শুধু আল্লাহর দ্বীনের প্রচার এর জন্যই আমি এসব করছিলাম।
মুসলিম উম্মাহর ওপর চালানো নির্যাতন সহ্য করতে পারিনি। যদি আমি জানতাম না যে আমি ভুল পথে আছি। আল্লাহর কসম, যদি আমার অন্তরে কলংক থাকতো আমি খারেজ্যিয়াতের পথ থেকে ফিরে আসতে পারতাম না। ইচ্ছে করেই থেকে যেতাম। সত্য জেনেও না জানার ভান করতাম।
এবার আমি আমার প্রচারের আরো ভিন্নমাত্রা যোগ করার জন্য ফেসবুকে আইডি খুললাম। আইডি খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে লাগলাম বিভিন্ন জনের কাছে। রিকুয়েস্ট আসতেও থাকলো।
সার্চ দিয়ে খুঁজে বের করে রিকুয়েস্ট পাঠালাম তানজিম আল ক্বাইদাহপন্থী ওই ভাইয়াটির কাছে, যার সাথে তিন চার মাস আগেও আলাপ হতো। ভাইয়াকে অনেক ভালবাসতাম।
ভাইয়া আমাকে চিনতে পারলেন ও সালাম দিলেন। আমাকে হঠাৎ দেখে তাজ্জব হলেন, এতদিন কোথায় ছিলাম জানতে চাইলেন।
বললাম, এতদিন আই-এস ও আল ক্বাইদা নিয়ে গবেষণা করেছিলাম।
ভাইয়া বললেন, গবেষণার ফলাফল কি হলো?
বললাম, ভাইয়া, দাওলাতুল ইসলামের সবগুলো বই পড়েছি। আমি এখন দাওলার সমর্থক।
"ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন", বললেন ভাইয়া।
আমি হেসে বললাম, আরে ভাই, আমি মরিনি। বেচে আছি!..................
***************
ভাইয়ের সঙ্গে দাওলা নিয়ে বেশ কয়েকবার তর্কাতর্কি হতে যাচ্ছিল। তর্কাতর্কি বেশি এগোয়নি। আমি কিংবা ভাইয়া কেউই দাওলা নিয়ে তর্কাতর্কি করে নিজেদের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চাইছিলাম না।
ভাইয়া প্রথমে আমাকে টেলিগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। কারণ ভাইয়া বললেন এখানে আমার নিরাপত্তা নেই। আমাকে আমার চ্যানেলটি কেটে দিতে বললেন। যে ওয়েবসাইটটি খুলেছি সেটাও কেটে দিতে বললেন। ফলে দাওলার খারেজীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের সকল গেট বন্ধ হয়ে গেল।
শুধু ভাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতাম ফেসবুকে।
ভাইয়া বললেন, তুমি তো একপাক্ষিকভাবে দাওলার বই পড়েছো এতদিন। এখন তুমি আল-কায়েদার বই পড়ো। আল কায়েদার বই পড়লে তো আর গোনাহ হবে না! আমি বললাম, ঠিক আছে। বই যত ইচ্ছা পড়বো। দিতে পারেন।
ভাইয়া প্রথমেই পাঠালেন উস্তায আবু আন্ওয়ার আল হিন্দী(হাফি) এর স্কুল অফ জিহাদ। এটা পড়ে আমি বেশ শিহরিত হলাম। ৫ বার রিভাইস দিলাম বইটাকে। এরপর ভাইয়াকেও দাওলার দাওয়াত দেওয়ার জন্য বেশ কিছু বই পাঠালাম এবং পড়তে বললাম।
ভাইয়া বলল, এগুলো পড়লে তার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে, এগুলো মিথ্যা বানোয়টে ভরা। আবার শুরু হল তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু একপর্যায়ে ভাইয়া নিজেই এই বিতর্ক ভেঙ্গে দিলেন।
বললেন তিনি বিতর্ক করতে পারবেন না। তবে বই পাঠাবেন। ভাইয়া এরপরে ধাপে ধাপে ২/৩ টি করে বই পাঠাতে লাগলেন। আমি খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।
ভাইয়া যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কিত বই গুলোই বেশি করে পাঠাচ্ছিলেন। পড়ে বেশ প্রভাবিত হলাম। আল কায়েদা ও আইএস এর পার্থক্যটা বুঝতে পারলাম।
কারণ তানজিম আল কায়েদার ভাইয়ারা যুদ্ধকৌশল নিয়ে যতটা আলোচনা করেন আইএস তার শতাংশও করে না। তাদের ওয়েবসাইট আর বইগুলো হিংসা আর হিংসায় ভরা। তারা নিজেরা তাদের কল্পিত খেলাফত হারিয়েছে আর তালেবান বিজয় অর্জন করেছে এতে তাদের কোনো মতেই সহ্য হচ্ছে না। ভাইয়া অনবরত বই পাঠাতে থাকলেন। প্রতিদিনই।
আলহামদুলিল্লাহ আজ এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় গেল, তিন মাস ধরে খারেজিয়াতের বৃক্ষ আমার হৃদয়ে শিকড় গেড়ে বসে যাচ্ছিল আল-কায়েদার বইগুলো পড়ার মাধ্যমে মাত্র ১ সপ্তাহে আমার হৃদয় থেকে সম্পূর্ণরূপে উপড়ে গেছে
এবং ইনশাআল্লাহ নিজেকে একজন হকপন্থী মুজাহিদদের পথের পথিক হিসেবে কাটিয়ে যাব বাকি সময়টুকু।
আমি মনে করি একবার আমি সঠিক মানহাজের খোঁজ পেয়ে গেছি আমার আর কোন ফেৎনায় পড়ে সুযোগ নেই।
ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহপাক আমাদেরকে সব ধরনের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।।
[বিঃদ্রঃ-কোনো দাওলা সমর্থক ইনবক্সে নক দিলে আমাদের উচিত হলো তাদের সাথে তর্কে না জরিয়ে ব্লক মেরে দেওয়া কারণ যারা কুরআন-হাদিস নিয়ে মিথ্যা বলতে পারে তাদের থেকে কখনোই সত্যের প্রত্যাশা করা যায় না।]
যদিও একপ্রকার ধর্মহীন পরিবেশে বড় হচ্ছি, ইসলামের প্রতি আমার ভালোবাসা যেন হাড়-মাংসে মেশা। এই প্রতিকূল পরিবেশেও নিজের ঈমানকে ধরে রাখতে আমার অনেক প্রচেষ্টা। কিন্তু কতদিন সঠিক পথে ধরে রাখবো! নেই কোন গাইডলাইন দেওয়ার কেউ। কেউ আমাকে দেখিয়ে দেবে না যে এই পথটা ফেতনার। ওই পথটা শয়তানের। নিজের পরিবারের লোকজনও প্র্যাকটিসিং মুসলিম না। নামেমাত্র মুসলিম।
নেটে বিভিন্ন ইসলামী বইপুস্তক ও অ্যাপস নামিয়ে পড়ার মাধ্যমে আমার ইসলামী শিক্ষার হাতে খড়ি। কারো প্ররোচনায় টেলিগ্রাম বিভিন্ন ইসলামী বইপুস্তক হোস্টিং চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যাই। অল্পবিস্তর সবকিছুই পড়ার অভ্যাস আছে। হাতে যা পাই তাই পড়তে ইচ্ছে করে। উপন্যাস থেকে হাদীস। তাই বিভিন্ন ইসলামী বইপত্র নামিয়ে পড়া শুরু করি।
যা পড়তাম বিভিন্ন অ্যাপস থেকে কপি করে আমার একটা ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিতাম। আমি নিজেও বিভিন্ন বিষয়ে লিখালিখি করতাম।ফেসবুকে এক আল-কায়েদাপন্থী ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। তার লেখা পড়তাম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তিনি নিজেও হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলেন।
***************************
একদিন এক লোক আমাকে নক দিয়ে বললেন যে, আসসালামু আলাইকুম! ভাই আমি দাওলা সম্পর্কে জানতে চাই। আমাকে তাদের বিষয়ে বলুন।
তখন আমি তাকে দাওলার বিষয়ে সামান্য কিছু কথা বলে তাকে দাওলা সম্পর্কে টেলিগ্রামে পাওয়া কিছু বই পড়তে দিলাম।
কিছুদিন পর সে আবার আমাকে নক দিয়ে বললেন যে, আপনার দেওয়া বইগুলো আমি পড়েছি এখন আমি আপনাকে একটা বই দিব সেটা পড়ে আমাকে আপনার মতামত জানান।
আমিও বললাম যে আচ্ছা দেন দেখি কি বই? তারপর সে আমাকে খেলাফত বনাম জাহালত বইটি দিলো।।
তার এই বইটি দেখার পর আমি বুঝে গেলাম যে সে আগের থেকেই একজন খারেজী সমর্থক! আমাকে টার্গেট করেছে। তার দেওয়া বইটি দেখে আমি তাকে কিছু না বলে তারাতাড়ি ব্লক করে দিলাম।
এর কিছুদিন পর আমি দাওলার বিরুদ্ধে আমার ফেসবুক আইডিতে একটা পোস্ট দিলাম। আমার পোস্ট দেখে আরেকজন খারেজী সমর্থক তালেবানের বিরুদ্ধে কিছু এডিট করা ছবি দিল। তার দেওয়া ছবিগুলো দেখে আমি ওকে ইনবক্সে নক দিয়ে তর্ক শুরু করে দিলাম সেও আমাকে বারবার খেলাফত বনাম জাহালত বইটি পড়তে বলছিল। আমি তার সাথে তর্ক করে বুঝলাম যে খারেজিদের জন্য খেলাফত বনাম জাহালত বইটি ওহীর মত গুরুত্বপূর্ণ। তর্কের এক পর্যায়ে আমি বিরক্ত হয়ে তাকে ব্লক করে দিলাম!
তবে তখন থেকেই আমার ইচ্ছা করল যে দাওলা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে হবে। আমি তাদের বই পড়া শুরু করে দিলাম।
আমার মনোযোগ নষ্ট না হয় তাই আমি ফেসবুক আইডি নষ্ট করে দিলাম এবং দাওলার বইগুলো পড়তে শুরু করলাম।
খারেজীদের বিভিন্ন বইপত্র ও পুস্তিকা তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত হতো। আমি তাদের দশটা বই ছাড়া সবগুলো বই পড়েছি। আর আমি খেলাফত বনাম জাহালত বইটি পড়ে বুঝতে পেরেছি যে এই বইটি খারেজীদের জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। এই বইটিতে এত মিথ্যা এবং বানোয়াট বিষয় আছে যা দাজ্জালকেও হার মানায়।
খারেজীদের বিভিন্ন চ্যানেল থেকে সংবাদ প্রচার হতো নিয়মিত আক্রমণের। তারা দেখাতো প্রতিদিন গড়ে তারা তিনটি আক্রমণ করছে যেখানে তালিবান আল-কায়েদার বসে বসে আঙ্গুল চুষছে।
তারা দেখাতো তালিবানরা ক্ষমতায় যাওয়ার পর শরীয়াহ কায়েম করছে না। পর্দার বিধান কায়েম করেছেনা, চুরের হাত কাটছে না। কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইছে। শিয়া ইরানকে নিজেদের বন্ধু বলছে। শিয়াদের রসম-রেওয়াজ এ অংশ নিচ্ছে। প্রচুর প্রোপাগান্ডামূলক ফটো দিতো যেগুলো বেশিরভাগই এডিট করা।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এসব প্রোপাগান্ডা মূলক খবর দেখে এবং বই পড়ে আমার ছোট্ট মনে ক্ষোভ তৈরি হতে থাকলো মুজাহিদদের প্রতি। একপর্যায়ে কি তালিবানসহ ওইসব তানজিম আল কায়েদার মুজাহিদদের মুরতাদ মনে হতে থাকলো যারা নাকি আমার জন্মের অন্তত ৭ বছর আগে ক্রুসেডার আমেরিকার মাথায় আঘাতের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জিহাদের সূচনা করেছিলেন একবিংশ শতাব্দীর প্রথম প্রহরেই।
মুরতাদ মনে করতে শুরু করলাম উম্মাহর একজন দরদী ব্যক্তিত্ব, হাকীমুল উম্মাহ, আমীরুল মুজাহিদীন শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহকে।
অবশেষে খারেজিয়্যাত নামক এই মাকড়সা আমার ভিতর খুব ভালো করেই তার জাল তৈরি করে ফেলল। আমার কলব ভালো করেই জড়িয়ে গেলো এর জালে।(যদিও আল্লাহপাক মাকড়শার ঘরকে সবচেয়ে দুর্বল ঘর বলেছেন)
আমি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুললাম, তাদের সংবাদ প্রচার শুরু করে দিলাম। ওয়ার্ডপ্রেস সাইট খুললাম তাদের সংবাদ প্রচারের জন্য। প্রতিনিয়ত এসব চালিয়ে যাচ্ছিলাম। খারেজী কর্তৃক তালিবান হত্যার সংবাদও প্রচার করতাম।
এতো সব কিছু মাত্র ২/৩ মাসের মধ্যে!
আমার অন্তর ছিল নিষ্কলঙ্ক, শুধু আল্লাহর দ্বীনের প্রচার এর জন্যই আমি এসব করছিলাম।
মুসলিম উম্মাহর ওপর চালানো নির্যাতন সহ্য করতে পারিনি। যদি আমি জানতাম না যে আমি ভুল পথে আছি। আল্লাহর কসম, যদি আমার অন্তরে কলংক থাকতো আমি খারেজ্যিয়াতের পথ থেকে ফিরে আসতে পারতাম না। ইচ্ছে করেই থেকে যেতাম। সত্য জেনেও না জানার ভান করতাম।
এবার আমি আমার প্রচারের আরো ভিন্নমাত্রা যোগ করার জন্য ফেসবুকে আইডি খুললাম। আইডি খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে লাগলাম বিভিন্ন জনের কাছে। রিকুয়েস্ট আসতেও থাকলো।
সার্চ দিয়ে খুঁজে বের করে রিকুয়েস্ট পাঠালাম তানজিম আল ক্বাইদাহপন্থী ওই ভাইয়াটির কাছে, যার সাথে তিন চার মাস আগেও আলাপ হতো। ভাইয়াকে অনেক ভালবাসতাম।
ভাইয়া আমাকে চিনতে পারলেন ও সালাম দিলেন। আমাকে হঠাৎ দেখে তাজ্জব হলেন, এতদিন কোথায় ছিলাম জানতে চাইলেন।
বললাম, এতদিন আই-এস ও আল ক্বাইদা নিয়ে গবেষণা করেছিলাম।
ভাইয়া বললেন, গবেষণার ফলাফল কি হলো?
বললাম, ভাইয়া, দাওলাতুল ইসলামের সবগুলো বই পড়েছি। আমি এখন দাওলার সমর্থক।
"ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন", বললেন ভাইয়া।
আমি হেসে বললাম, আরে ভাই, আমি মরিনি। বেচে আছি!..................
***************
ভাইয়ের সঙ্গে দাওলা নিয়ে বেশ কয়েকবার তর্কাতর্কি হতে যাচ্ছিল। তর্কাতর্কি বেশি এগোয়নি। আমি কিংবা ভাইয়া কেউই দাওলা নিয়ে তর্কাতর্কি করে নিজেদের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চাইছিলাম না।
ভাইয়া প্রথমে আমাকে টেলিগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। কারণ ভাইয়া বললেন এখানে আমার নিরাপত্তা নেই। আমাকে আমার চ্যানেলটি কেটে দিতে বললেন। যে ওয়েবসাইটটি খুলেছি সেটাও কেটে দিতে বললেন। ফলে দাওলার খারেজীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের সকল গেট বন্ধ হয়ে গেল।
শুধু ভাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতাম ফেসবুকে।
ভাইয়া বললেন, তুমি তো একপাক্ষিকভাবে দাওলার বই পড়েছো এতদিন। এখন তুমি আল-কায়েদার বই পড়ো। আল কায়েদার বই পড়লে তো আর গোনাহ হবে না! আমি বললাম, ঠিক আছে। বই যত ইচ্ছা পড়বো। দিতে পারেন।
ভাইয়া প্রথমেই পাঠালেন উস্তায আবু আন্ওয়ার আল হিন্দী(হাফি) এর স্কুল অফ জিহাদ। এটা পড়ে আমি বেশ শিহরিত হলাম। ৫ বার রিভাইস দিলাম বইটাকে। এরপর ভাইয়াকেও দাওলার দাওয়াত দেওয়ার জন্য বেশ কিছু বই পাঠালাম এবং পড়তে বললাম।
ভাইয়া বলল, এগুলো পড়লে তার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে, এগুলো মিথ্যা বানোয়টে ভরা। আবার শুরু হল তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু একপর্যায়ে ভাইয়া নিজেই এই বিতর্ক ভেঙ্গে দিলেন।
বললেন তিনি বিতর্ক করতে পারবেন না। তবে বই পাঠাবেন। ভাইয়া এরপরে ধাপে ধাপে ২/৩ টি করে বই পাঠাতে লাগলেন। আমি খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।
ভাইয়া যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কিত বই গুলোই বেশি করে পাঠাচ্ছিলেন। পড়ে বেশ প্রভাবিত হলাম। আল কায়েদা ও আইএস এর পার্থক্যটা বুঝতে পারলাম।
কারণ তানজিম আল কায়েদার ভাইয়ারা যুদ্ধকৌশল নিয়ে যতটা আলোচনা করেন আইএস তার শতাংশও করে না। তাদের ওয়েবসাইট আর বইগুলো হিংসা আর হিংসায় ভরা। তারা নিজেরা তাদের কল্পিত খেলাফত হারিয়েছে আর তালেবান বিজয় অর্জন করেছে এতে তাদের কোনো মতেই সহ্য হচ্ছে না। ভাইয়া অনবরত বই পাঠাতে থাকলেন। প্রতিদিনই।
আলহামদুলিল্লাহ আজ এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় গেল, তিন মাস ধরে খারেজিয়াতের বৃক্ষ আমার হৃদয়ে শিকড় গেড়ে বসে যাচ্ছিল আল-কায়েদার বইগুলো পড়ার মাধ্যমে মাত্র ১ সপ্তাহে আমার হৃদয় থেকে সম্পূর্ণরূপে উপড়ে গেছে
এবং ইনশাআল্লাহ নিজেকে একজন হকপন্থী মুজাহিদদের পথের পথিক হিসেবে কাটিয়ে যাব বাকি সময়টুকু।
আমি মনে করি একবার আমি সঠিক মানহাজের খোঁজ পেয়ে গেছি আমার আর কোন ফেৎনায় পড়ে সুযোগ নেই।
ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহপাক আমাদেরকে সব ধরনের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।।
[বিঃদ্রঃ-কোনো দাওলা সমর্থক ইনবক্সে নক দিলে আমাদের উচিত হলো তাদের সাথে তর্কে না জরিয়ে ব্লক মেরে দেওয়া কারণ যারা কুরআন-হাদিস নিয়ে মিথ্যা বলতে পারে তাদের থেকে কখনোই সত্যের প্রত্যাশা করা যায় না।]
Comment