দ্বীনে আসার শুরুর দিকে রক্ত গরম তারুণ্যের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকে বিয়ে এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি এই ব্যাপারেই শুরুর দিকে বেশীরভাগ ছেলেরা এক ধরণের ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকে, একটা ঘোরের মত। এই দুইটা বিষয় নিয়ে ফেসবুকে গরম গরম স্ট্যাটাস দেওয়া, দল বেঁধে কমেন্টস ,দ্বীনি সার্কেলে আড্ডা, দিনে তিনবেলা ভাত খাওয়ার মতই তা একসময় স্রেফ একটা অভ্যাস হয়ে উঠে। অথচ বিয়ে কিন্তু শুধুই একঘেয়ে আসর মাতানো আড্ডার উপলক্ষ্য নয়, কখনো ছিলও না।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই সামাজিক, পারিবারিক এবং অন্যান্য পারিপার্শিক অবস্থার কারণে আজকের মুসলিম সমাজে যে কয়টা জিনিস কঠিন হয়ে গেছে বিয়ে তার মধ্যে একটি। এর মধ্যে ছেলেরা যদি আবার এই বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকে তবে সেটা এই কঠিন বিষয়টাকে অসম্ভবের কাছাকাছি ঠেলে দেওয়ার মত।
আপনি তখনই পরিবারের লাগাম ধরে রাখতে পারবেন যখন পরিবার আপনার টাকায় চলবে, তখনই আপনি ভালো মন্দ নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। যে আপনি পরিবারের কোন ভাইটাল ইশ্যুতে ডিসিশান মেকিং পজিশন রাখতে পারেন না আপনার পক্ষে বিয়ে করে সেই পরিবারে নিজের বউকে শরিয়া মোতাবেক রাখাও সম্ভব নয়। বিশেষ করে যেসব ভাইরা দ্বীনি কিন্তু তাদের ফ্যামিলি দ্বীনি নয়। একদিকে পরিবারের কাছে নতজানু অন্যদিকে বউকে আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থাও করে দিতে না পারা, এর ফলাফল খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠে। অনেক ভাই ফেসবুকে সারাদিন আহাজারি করেন, মেয়েরা দাড়িওয়ালা পছন্দ করেনা, মেয়েরা দ্বীন খোঁজে না টাকা খোঁজে, মেয়ের বাবা মা প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের কাছেই মেয়ে বিয়ে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি, এবং তাদের বিয়ের চেষ্টা হলো এতি ফেসবুক পর্যন্ত। এসব ফ্যান্টাসিবয়দের ধরে যদি বলেন, এই যে এই হল পাত্রী আর এই হল কাজি, নে এবার বিয়া কর, তারপর আমতা আমতা করে বলবে না মানে ইয়ে……আমার আম্মু……মানে আমার বাসায়……! That’s it bro, that’s it! .
তার মানে এই নয় যে সব পরিবারই এমন কিংবা সব দ্বীনি ভাইদের পরিস্থিতিই এমন। তবে আমার মতে এক্ষেত্রে মেয়ে পক্ষের দিক থেকে একটু ছাড় দেওয়ার মানসিকতাটা বেশি দেখানো উচিত। কেননা এই সমাজে যতই দ্বীনি পাত্র খোঁজা হোক না কেন দিনশেষে কেন জানি তা দুনিয়াবি কোয়ালিফিকেশনের মানদণ্ডে গিয়ে ঠেকে। খুবই দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে আমাদের বোনেরা আইশা (রাঃ) এর মত হতে চান, স্বামী হিসেবেও রাসূল (সাঃ) এর মত মানুষ চান কিন্তু মা আইশার মত রাসূল (সাঃ) এর দারিদ্রতা, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা, তালি জোড়া দেওয়া কাপড় পরে সুখে থাকার বাস্তবতাটা নিতে চান না। যদিও সেরকম এক্সট্রিম কেস এই জমানায় “দ্বীনি পাত্রদের” নেই বললেই চলে। তারপরও সারাদিন সাহাবাদের সাদাসিধে, দুনিয়াবিমুখ, হতদরিদ্র জীবনের আবেগাপ্লুত আলোচনা শেষে ঐ দুনিয়াবি “প্রতিষ্ঠিত” পাত্রটিরই মার্কেট ডিমান্ড বেশি থাকে। বংশ ভালো, দুনিয়াবি শুশিক্ষিতা, দেখতে শুশ্রী মেয়েটিরই পাত্রের “অপশন” বেশি থাকে।
দ্বীন এবং দুনিয়া দুইটাই যদি পাওয়া যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা, কিন্তু বাস্তবতা হলো “সত্যিকারের” দ্বীন আর দুনিয়ার সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক, দুইটা একসাথে চলে না, অতীতের কারো চলে নি। দারিদ্রতা, অভাব অনটন, অনাহার এসব রহমানের বান্দাদের অলংকার। কেউ যদি চায় সে একজন সত্যিকারের আল্লাহর বান্দাকে বিয়ে করবে তার উচিত মুমিনের এসব অলংকার গলায় বেঁধে নেওয়ার মত ঈমানও অর্জন করা। উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম সাহাবিরা আজকের দ্বীনি পাত্রদের চেয়ে অবিশ্বাস্য রকম দারিদ্রতা আর অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে গেছে। আর এখন আরেকটা বিষয় যেটা নিয়ে আলোচনা করা দরকার তা হলো বিয়ে হচ্ছে না এর জন্য সব দোষই কি মা-বাবার?! ইদানিং অনেক ভাইয়েরা বিয়ে করতে না পারায় সব দোষ চাপায় মা-বাবার ওপর! মা-বাবাই যেন তাদের বিয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা! প্রিয় ভাই! তুমি বিয়ে করতে পারছ না, এজন্য কেবলই তোমার মা-বাবার দোষ?!
বিয়ের জন্য শারিরীক সক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক সক্ষমতাও আবশ্যক। শুধু শারীরিক সক্ষমতাই যথেষ্ট নয়। মানলাম শারীরিকভাবে তুমি এখন বিয়ের উপযুক্ত। এমতাবস্থায় তুমি মা-বাবার কাছে আবেদন করলে তোমাকে বিয়ে দেওয়ার। তারা তোমার কথায় সম্মতি দিলো না। কিন্তু কেন দিলো না, এর কারণ কি? খোঁজ নিয়েছো? ইসলামের বুঝ না থাকার কারণে যদি বিয়ে না দেয়, তাহলে সেটা দোষ; মেনে নিলাম।
কিন্তু তোমার আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে যদি তারা বিয়ে না করার মতামত দেন, তাহলে এটা একেবারে ভুল না। কারণ, পূর্বেই বলেছি বিয়ে শুধু শারিরীক সক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত নয়। আর্থিক সামর্থ্যও থাকা আবশ্যক। এখন তোমার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের অনাগত স্ত্রীর মোহর ও ভরণপোষণের জন্য নিজেকে আর্থিকভাবে সক্ষম করে তোলা। নিজের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের পর তারা অনুমতি না দিলেও তুমি বিয়ে করতে পারো।
তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদার তুমি। তোমার মা-বাবা নয়। তাদের ওপর তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের মোটেও দায় নেই। তারা যদি এক পয়সাও না দেন, তবুও তাদের কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু তুমি যদি সাধ্যমত তার ব্যয়ভার গ্রহণ না করো, তাহলে তুমি গুনাহগার হবে।
প্রশ্ন আসতে পারে, আমি তো এখনও পড়াশোনা করছি। আমি কিভাবে আর্থিকভাবে সামর্থ্য হবো। তাহলে উত্তর হচ্ছে, তোমার পড়াশোনা কতটুকু হয়েছে? ফরজে আইনের সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছো? যদি এই সীমানা অতিক্রম করে ফেলো, তাহলে তোমার যেহেতু বিয়ের প্রয়োজনটা ওয়াজিব পর্যায়ে চলে গেছে, এখন গতানুগতিক পড়াশোনা বাদ দাও। পড়াশোনা থেকে তোমার বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর প্রবল আগ্রহ তোমার কাছে দাবি করে তুমি পড়াশোনা বাদ দাও। কোন কর্মে নিজেকে জড়িয়ে নাও। আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করো। তারপর মা-বাবাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বিয়ে করে নাও। আর পড়াশোনা বাদ না দিয়েও অনেক কাজ করা যেতে পারে। যেমনঃ- টিউশনি করা।
যদি তুমি এরপরও পড়াশোনা চালিয়ে যাও, এমতাবস্থায় তোমার মা-বাবা তোমাকে বিয়ে দিলে সেটা হবে তাঁদের অনুগ্রহ। তোমার এবং তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদারী নিয়ে তোমার বাবা তোমার ওপর বিশাল অনুগ্রহ করেছেন। এজন্য তোমার মা-বাবার জন্য দিল থেকে দোআ করো। এখন তুমি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারো। আর জীবনসঙ্গিনী নিয়ে সুন্দর সংসার গঠন করো।
প্রশ্ন হতে পারে, আপনার কথা ক'জন মানবে? উত্তর হবে, ক'জন মানবে জানি না। পড়াশোনার থেকে বিয়ের প্রয়োজন বেশি হলে আপনাকে বিয়ের সামর্থ্য অর্জন করে বিয়ে করতে হবে। এজন্য গতানুগতিক পড়াশোনা বাদ দিতে হবে।অথবা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সাথে অন্য কোনো কাজ করতে হবে যা দিয়ে নিজের এবং নিজের স্ত্রীর খরচটা চালাতে পারেন। যদি আপনার বাবা আপনার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদারী না নিতে চান।
এমতাবস্থায় আপনি গুনাহে জড়িয়ে পড়লে শুধু আপনার মা-বাবা-ই গুনাহগার হবে, এমন না। আপনিও গুনাহগার হবেন। আপনার দায়িত্ব আপনি সঠিকভাবে পালন না করার কারণে আপনিও পাপী হবেন! বিয়ে করার শারীরিক এবং আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে আপনার প্রতি নির্দেশ হচ্ছে রোজা রাখা। রোজার মাধ্যমে নিজের প্রবৃত্তিকে শান্ত রাখা। বিয়ের মাধ্যমে গুনাহ থেকে বিরত থাকার যে উদ্দেশ্য, তা আপনি আপাতত রোজার মাধ্যমে পূরণ করবেন।
আপনার শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতার পর মা-বাবার দায়িত্ব আপনার বিবাহের পক্ষে মত দেওয়া। এরচেয়ে বেশি কিছু তাদের দায়িত্ব না। নিজের বিয়ের ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে। আপনাকে বিয়ে করিয়ে দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব না। তাঁরা বিয়ের পক্ষে মতামত দিলেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ। বাকি কাজ আপনার জিম্মায়। এজন্য মা-বাবার থেকে আপনার দায়িত্বই বেশি। তাই এই কথা ভালো করে স্মরণ রাখুন, বিয়ে করতে না পারার সব দোষ এক বাক্যে মা-বাবার নয়। আপনারও এখানে দায় আছে।
ইসলামকে ভালোবাসি আমরা সবাই, কিন্তু ইসলামের জন্য ভালোবাসা আর ইসলামের সাথে জীবন যাপন করা এক জিনিস নয়। এই ফ্যান্টাসি থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায় ততই উত্তম। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিন। আমীন।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই সামাজিক, পারিবারিক এবং অন্যান্য পারিপার্শিক অবস্থার কারণে আজকের মুসলিম সমাজে যে কয়টা জিনিস কঠিন হয়ে গেছে বিয়ে তার মধ্যে একটি। এর মধ্যে ছেলেরা যদি আবার এই বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকে তবে সেটা এই কঠিন বিষয়টাকে অসম্ভবের কাছাকাছি ঠেলে দেওয়ার মত।
আপনি তখনই পরিবারের লাগাম ধরে রাখতে পারবেন যখন পরিবার আপনার টাকায় চলবে, তখনই আপনি ভালো মন্দ নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। যে আপনি পরিবারের কোন ভাইটাল ইশ্যুতে ডিসিশান মেকিং পজিশন রাখতে পারেন না আপনার পক্ষে বিয়ে করে সেই পরিবারে নিজের বউকে শরিয়া মোতাবেক রাখাও সম্ভব নয়। বিশেষ করে যেসব ভাইরা দ্বীনি কিন্তু তাদের ফ্যামিলি দ্বীনি নয়। একদিকে পরিবারের কাছে নতজানু অন্যদিকে বউকে আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থাও করে দিতে না পারা, এর ফলাফল খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠে। অনেক ভাই ফেসবুকে সারাদিন আহাজারি করেন, মেয়েরা দাড়িওয়ালা পছন্দ করেনা, মেয়েরা দ্বীন খোঁজে না টাকা খোঁজে, মেয়ের বাবা মা প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের কাছেই মেয়ে বিয়ে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি, এবং তাদের বিয়ের চেষ্টা হলো এতি ফেসবুক পর্যন্ত। এসব ফ্যান্টাসিবয়দের ধরে যদি বলেন, এই যে এই হল পাত্রী আর এই হল কাজি, নে এবার বিয়া কর, তারপর আমতা আমতা করে বলবে না মানে ইয়ে……আমার আম্মু……মানে আমার বাসায়……! That’s it bro, that’s it! .
তার মানে এই নয় যে সব পরিবারই এমন কিংবা সব দ্বীনি ভাইদের পরিস্থিতিই এমন। তবে আমার মতে এক্ষেত্রে মেয়ে পক্ষের দিক থেকে একটু ছাড় দেওয়ার মানসিকতাটা বেশি দেখানো উচিত। কেননা এই সমাজে যতই দ্বীনি পাত্র খোঁজা হোক না কেন দিনশেষে কেন জানি তা দুনিয়াবি কোয়ালিফিকেশনের মানদণ্ডে গিয়ে ঠেকে। খুবই দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে আমাদের বোনেরা আইশা (রাঃ) এর মত হতে চান, স্বামী হিসেবেও রাসূল (সাঃ) এর মত মানুষ চান কিন্তু মা আইশার মত রাসূল (সাঃ) এর দারিদ্রতা, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা, তালি জোড়া দেওয়া কাপড় পরে সুখে থাকার বাস্তবতাটা নিতে চান না। যদিও সেরকম এক্সট্রিম কেস এই জমানায় “দ্বীনি পাত্রদের” নেই বললেই চলে। তারপরও সারাদিন সাহাবাদের সাদাসিধে, দুনিয়াবিমুখ, হতদরিদ্র জীবনের আবেগাপ্লুত আলোচনা শেষে ঐ দুনিয়াবি “প্রতিষ্ঠিত” পাত্রটিরই মার্কেট ডিমান্ড বেশি থাকে। বংশ ভালো, দুনিয়াবি শুশিক্ষিতা, দেখতে শুশ্রী মেয়েটিরই পাত্রের “অপশন” বেশি থাকে।
দ্বীন এবং দুনিয়া দুইটাই যদি পাওয়া যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা, কিন্তু বাস্তবতা হলো “সত্যিকারের” দ্বীন আর দুনিয়ার সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক, দুইটা একসাথে চলে না, অতীতের কারো চলে নি। দারিদ্রতা, অভাব অনটন, অনাহার এসব রহমানের বান্দাদের অলংকার। কেউ যদি চায় সে একজন সত্যিকারের আল্লাহর বান্দাকে বিয়ে করবে তার উচিত মুমিনের এসব অলংকার গলায় বেঁধে নেওয়ার মত ঈমানও অর্জন করা। উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম সাহাবিরা আজকের দ্বীনি পাত্রদের চেয়ে অবিশ্বাস্য রকম দারিদ্রতা আর অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে গেছে। আর এখন আরেকটা বিষয় যেটা নিয়ে আলোচনা করা দরকার তা হলো বিয়ে হচ্ছে না এর জন্য সব দোষই কি মা-বাবার?! ইদানিং অনেক ভাইয়েরা বিয়ে করতে না পারায় সব দোষ চাপায় মা-বাবার ওপর! মা-বাবাই যেন তাদের বিয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা! প্রিয় ভাই! তুমি বিয়ে করতে পারছ না, এজন্য কেবলই তোমার মা-বাবার দোষ?!
বিয়ের জন্য শারিরীক সক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক সক্ষমতাও আবশ্যক। শুধু শারীরিক সক্ষমতাই যথেষ্ট নয়। মানলাম শারীরিকভাবে তুমি এখন বিয়ের উপযুক্ত। এমতাবস্থায় তুমি মা-বাবার কাছে আবেদন করলে তোমাকে বিয়ে দেওয়ার। তারা তোমার কথায় সম্মতি দিলো না। কিন্তু কেন দিলো না, এর কারণ কি? খোঁজ নিয়েছো? ইসলামের বুঝ না থাকার কারণে যদি বিয়ে না দেয়, তাহলে সেটা দোষ; মেনে নিলাম।
কিন্তু তোমার আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে যদি তারা বিয়ে না করার মতামত দেন, তাহলে এটা একেবারে ভুল না। কারণ, পূর্বেই বলেছি বিয়ে শুধু শারিরীক সক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত নয়। আর্থিক সামর্থ্যও থাকা আবশ্যক। এখন তোমার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের অনাগত স্ত্রীর মোহর ও ভরণপোষণের জন্য নিজেকে আর্থিকভাবে সক্ষম করে তোলা। নিজের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের পর তারা অনুমতি না দিলেও তুমি বিয়ে করতে পারো।
তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদার তুমি। তোমার মা-বাবা নয়। তাদের ওপর তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের মোটেও দায় নেই। তারা যদি এক পয়সাও না দেন, তবুও তাদের কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু তুমি যদি সাধ্যমত তার ব্যয়ভার গ্রহণ না করো, তাহলে তুমি গুনাহগার হবে।
প্রশ্ন আসতে পারে, আমি তো এখনও পড়াশোনা করছি। আমি কিভাবে আর্থিকভাবে সামর্থ্য হবো। তাহলে উত্তর হচ্ছে, তোমার পড়াশোনা কতটুকু হয়েছে? ফরজে আইনের সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছো? যদি এই সীমানা অতিক্রম করে ফেলো, তাহলে তোমার যেহেতু বিয়ের প্রয়োজনটা ওয়াজিব পর্যায়ে চলে গেছে, এখন গতানুগতিক পড়াশোনা বাদ দাও। পড়াশোনা থেকে তোমার বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর প্রবল আগ্রহ তোমার কাছে দাবি করে তুমি পড়াশোনা বাদ দাও। কোন কর্মে নিজেকে জড়িয়ে নাও। আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করো। তারপর মা-বাবাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বিয়ে করে নাও। আর পড়াশোনা বাদ না দিয়েও অনেক কাজ করা যেতে পারে। যেমনঃ- টিউশনি করা।
যদি তুমি এরপরও পড়াশোনা চালিয়ে যাও, এমতাবস্থায় তোমার মা-বাবা তোমাকে বিয়ে দিলে সেটা হবে তাঁদের অনুগ্রহ। তোমার এবং তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদারী নিয়ে তোমার বাবা তোমার ওপর বিশাল অনুগ্রহ করেছেন। এজন্য তোমার মা-বাবার জন্য দিল থেকে দোআ করো। এখন তুমি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারো। আর জীবনসঙ্গিনী নিয়ে সুন্দর সংসার গঠন করো।
প্রশ্ন হতে পারে, আপনার কথা ক'জন মানবে? উত্তর হবে, ক'জন মানবে জানি না। পড়াশোনার থেকে বিয়ের প্রয়োজন বেশি হলে আপনাকে বিয়ের সামর্থ্য অর্জন করে বিয়ে করতে হবে। এজন্য গতানুগতিক পড়াশোনা বাদ দিতে হবে।অথবা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সাথে অন্য কোনো কাজ করতে হবে যা দিয়ে নিজের এবং নিজের স্ত্রীর খরচটা চালাতে পারেন। যদি আপনার বাবা আপনার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদারী না নিতে চান।
এমতাবস্থায় আপনি গুনাহে জড়িয়ে পড়লে শুধু আপনার মা-বাবা-ই গুনাহগার হবে, এমন না। আপনিও গুনাহগার হবেন। আপনার দায়িত্ব আপনি সঠিকভাবে পালন না করার কারণে আপনিও পাপী হবেন! বিয়ে করার শারীরিক এবং আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে আপনার প্রতি নির্দেশ হচ্ছে রোজা রাখা। রোজার মাধ্যমে নিজের প্রবৃত্তিকে শান্ত রাখা। বিয়ের মাধ্যমে গুনাহ থেকে বিরত থাকার যে উদ্দেশ্য, তা আপনি আপাতত রোজার মাধ্যমে পূরণ করবেন।
আপনার শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতার পর মা-বাবার দায়িত্ব আপনার বিবাহের পক্ষে মত দেওয়া। এরচেয়ে বেশি কিছু তাদের দায়িত্ব না। নিজের বিয়ের ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে। আপনাকে বিয়ে করিয়ে দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব না। তাঁরা বিয়ের পক্ষে মতামত দিলেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ। বাকি কাজ আপনার জিম্মায়। এজন্য মা-বাবার থেকে আপনার দায়িত্বই বেশি। তাই এই কথা ভালো করে স্মরণ রাখুন, বিয়ে করতে না পারার সব দোষ এক বাক্যে মা-বাবার নয়। আপনারও এখানে দায় আছে।
ইসলামকে ভালোবাসি আমরা সবাই, কিন্তু ইসলামের জন্য ভালোবাসা আর ইসলামের সাথে জীবন যাপন করা এক জিনিস নয়। এই ফ্যান্টাসি থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায় ততই উত্তম। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিন। আমীন।
Comment