আমাদের বানান ও ভাষারীতি নির্দেশিকা :
বাংলা ভাষার লেখক ও পাঠকদের কারও অজানা নয় যে, বর্তমানে বানানের বিভিন্ন রূপ ও রীতি লক্ষ করা যায়। প্রত্যেকে আপন আপন রুচি ও যুক্তি অনুপাতে ভিন্ন ভিন্ন বানানরীতি অনুসরণ করছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য লক্ষ করা যাচ্ছে আরবি, ফারসি ও উরদু বানানের ক্ষেত্রে। এখানে মূলত কারও রুচি বা যুক্তি খণ্ডন করা উদ্দেশ্য নয়। আমরা শুধু এখানে এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে চাচ্ছি যে, আমাদের বানানরীতি কেমন হবে বা আমরা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে বানান লিখব।
এ বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবনের লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রায় দুইমাস যাবৎ চিন্তা-ভাবনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, বাংলা বানান ও ভাষারীতির ক্ষেত্রে আমরা তিনটি গ্রন্থ সামনে রাখব। যথা ‘প্রথম আলো ভাষারীতি’, ‘খটকা বানান অভিধান’ ও ‘বাংলা একাডেমি অভিধান’। সর্বক্ষেত্রে আমরা এ তিনটি গ্রন্থের সাহায্যেই বানান ও ভাষারীতি চূড়ান্ত করব। এ তিনটির মধ্যে কোথাও ভিন্নতা ও সাংঘর্ষিকতা পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে আমরা ‘প্রথম আলো ভাষারীতি’-কেই অগ্রগণ্য রাখব।
বাংলা বানান ও ভাষারীতির জন্য ‘প্রথমআলো ভাষারীতি’ বইয়ের ৯ নং থেকে ৫৬ নং পৃষ্ঠা এবং বাংলা একাডেমি অভিধানের ১৪১০ নং থেকে ১৪১৮ নং পৃষ্ঠা অধ্যয়ন করতে হবে। আর শব্দের বানানের জন্য ‘প্রথমআলো ভাষারীতি’ বইয়ের ৫৭ থেকে শেষ পর্যন্ত, ‘খটকা বানান অভিধান’ ও ‘বাংলা একাডেমি অভিধান’ পূর্ণাঙ্গভাবে সামনে রাখতে হবে। পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়ার বানান ও প্রয়োগবিধি জানার জন্য বাংলা একাডেমি অভিধানের ১৪১৮ নং থেকে ১৪২৪ নং পৃষ্ঠায় প্রদত্ত ক্রিয়াপদের রূপগুলো ভালোভাবে মুখস্ত করতে হবে। গ্রন্থ তিনটির প্রণীত রীতির মাঝে বৈপরিত্য খুবই সামান্য। কোথাও বানান বা রীতিতে ভিন্নতা দেখা গেলে ‘প্রথম আলো ভাষারীতি’ এর গৃহীত সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাবে। তারপর দেখা হবে,‘খটকা বানান অভিধান’, তারপর ‘বাংলা একাডেমি অভিধান’।
তবে আরবি শব্দের বানানের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রণীত নির্দিষ্ট একটি নিয়ম মেনে চলব। কারণ, বাংলা ভাষায় আরবি শব্দের বানানের জন্য দু-চারটি মূলনীতি তৈরি করা হলেও সুবিন্যস্তভাবে আরবি শব্দের উচ্চারণের জন্য আলাদা কোনো নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। এজন্য স্বয়ং ভাষা বিশেষজ্ঞদের লেখায়ও এর বিচিত্র্য ব্যবহার নজরে পড়ে। আর বিভিন্ন ঘরানার লেখকদের মাঝে এ সমস্যা তো দীর্ঘদিনের। কিন্তু কারও কাছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় আরবি শব্দের বানানের ক্ষেত্রে হিজিবিজি অবস্থা দেখা যায়।
‘প্রথম আলো ভাষারীতি’ বলি আর ‘খটকা বানান অভিধান’ বলি বা ‘বাংলা একাডেমি অভিধান’ বলি; এগুলোতে আরবি শব্দের ব্যবহারিক বানানে যথেষ্ট অমিল রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে তো অক্ষর কমবেশ করায় আরবি শব্দের উচ্চারণগত বিকৃতিও দেখা যায়। তাছাড়া সাধারণ গল্প, উপন্যাস, গদ্য ও পদ্যের ক্ষেত্রে আরবি শব্দের ব্যবহার সীমিত হওয়ায় জেনারেল লেখকদের এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা না থাকলেও ইসলামি ধারার লেখায় যেহেতু আরবি শব্দের ব্যবহার প্রচুর, তাই আমাদের জন্য নির্দিষ্টভাবে স্বতন্ত্র একটি নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। যেন আরবি শব্দের বানানের ক্ষেত্রে সবাই সে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে চলে। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করে আমরা এ বানানরীতি প্রণয়ন করেছি। আশা করি, এ নির্দেশিকাটি আমাদের আরবি শব্দের বানানগুলোকে একমূখী করতে সাহায্য করবে।
বাংলা ভাষায় আরবি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণের নিয়মাবলি :
০১. জেরের প্রতিবর্ণীকরণে আমরা এ-কার (ে) না লিখে ই-কার লিখব। যেমন : কিয়ামত, হিদায়াত, মিশকাত, আলিম, হাফিজ, জালিম, কাফির, ফাসিক, আবিদ ইত্যাদি।
০২. পেশের প্রতিবর্ণীকরণে আমরা ও-কার (ো) না লিখে উ-কার (*ু) লিখব। যেমন : কুরআন, কুরবানি, মুহাম্মাদ, মুমিন, মুত্তাকি, মুরশিদ, মুসলমান, তুলাইহা ইত্যাদি।
০৩. মদের হরফ و এর প্রতিবর্ণীকরণে আমরা ঊ-কার (ূ) না লিখে উ-কার (ু) লিখব। যেমন : মাবুদ, রাসুল, হারুন, সুরা, মুমিন, নুর, মাইমুন, মারুফ, মশগুল, ইত্যাদি।
০৪. মদের হরফ ي এর প্রতিবর্ণীকরণে আমরা ঈ-কার (ী) না লিখে ই-কার (ি) লিখব। যেমন : নবি, হাদিস, মুফতি, হাজি, কাজি, ইসলামি, আকিদা, আরবি, কুফরি ইত্যাদি। তবে 'ঈদ' শব্দটি 'ঈ'-যোগে ব্যাপক প্রচলিত ও অধিক প্রসিদ্ধ হওয়ায় আমরা এটাকে 'ইদ' না লিখে 'ঈদ'-ই লিখব।
০৫. আরবি পাঁচটি অক্ষর, যথা : ج ও ذ ও ز ও ض ও ظ এর প্রতিবর্ণ বাংলায় ‘জ’ হবে। যেমন : জিবরাইল, জাহান্নাম, জানাজা, জিল্লতি, জমানা, জাকিয়া, রাজিয়া, জরুরত, হজরত, হাজির, জালিম, হিফাজত ইত্যাদি।
০৬. আরবি ش অক্ষরের প্রতিবর্ণ বাংলায় ‘শ’ হবে। যেমন : শহিদ, শাহাদত, শয়তান, শরিফ, শিফা, শরিক, শাফাআত, আশরাফ, শফিক, শামসুদ্দিন, শুকরিয়া, শাফিয়ি ইত্যাদি।
০৭. আরবি ث ও س ও ص এই তিন অক্ষরের প্রতিবর্ণ বাংলায় ‘স’ হবে। যেমন : সাওয়াব, সানা, সালাম, মুসলিম, তাসলিমা, সুরা, সাকিনা, সুমাইয়া, সাইয়িদ, সুবহান ইত্যাদি।
০৮. আরবি ت ও ط এর প্রতিবর্ণ ‘ত’ এবং ق ও ك এর প্রতিবর্ণ ‘ক’ হবে। উভয়ের মাঝে উচ্চারণগত পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য অন্য কোনো বর্ণ বা বিশেষ চিহ্ন ব্যবহৃত হবে না। যেমন : তামিম, তাবাসসুম, তালহা, তাহা, তাইয়িবা, কলম, কসম, কাফির, কুরসি, কিয়ামত, কুরআন, কিরাআত ইত্যাদি।
০৯. পেশযুক্ত ع ও ء এর প্রতিবর্ণ ‘উ’ হবে। যেমন : উমর, উসমান, উমামা, উমরা, উলামা, উবাইদুল্লাহ, উরওয়া, উসামা, উসওয়া, উহুদ, উসাইদ, মাউন, রাজিউন ইত্যাদি।
১০. জবরযুক্ত ع ও ء এর প্রতিবর্ণ ‘আ’ হবে। যেমন : আল্লাহ, কুরআন, তাআলা, আলামত, মুআজ্জিন, মুআমালা, মাসআলা, শাফাআত, জামিআ, দুআ, জুমআ ইত্যাদি। তবে অধিক প্রচলিত হওয়ায় আমরা ‘শরিয়া’, ‘নিয়ামত’ ও 'জামিয়া'- শব্দ তিনটিকে ব্যতিক্রম রেখেছি।
১১. শব্দের শুরুতে জেরযুক্ত ع বা ء থাকলে বাংলায় তার প্রতিবর্ণ ‘ই’ হবে। যেমন : ইশা, ইদ্দত, ইজ্জত, ইল্লত, ইবাদত, ইসতিগফার, ইজতিমা, ইতিকাফ, ইবাদত, ইহতিমাম, ইতমিনান, ইমান, ইহরাম, ইকরাম, ইহসান, ইকামত ইত্যাদি। তবে ‘এলান’ শব্দটি ‘এ’ বর্ণযোগে অধিক প্রসিদ্ধ হওয়ায় এটাকে আমরা ব্যতিক্রম রাখব।
১২. শব্দের মাঝে জেরযুক্ত ع বা ء বা ى থাকলে এবং এর পরে সুকুনবিশিষ্ট ى না থাকলে বাংলায় তার প্রতিবর্ণ ‘য়ি’ হবে। যেমন : জায়িজ, কায়িম, হায়িজা, মায়িদা, কায়িদা, সায়িমা, দায়িমা, আয়িশা, মাসায়িল, রাসায়িল, মাইয়িত, সাইয়িদ, তাইয়িব ইত্যাদি। তবে অধিক ব্যবহৃত হওয়ায় ‘ফায়েদা’ শব্দটি এ নীতি থেকে ব্যতিক্রম হবে।
১৩. শব্দের মাঝে জেরযুক্ত ع বা ء বা ى এর পরে সুকুনবিশিষ্ট ى থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘ই’ হবে। যেমন : ইসরাইল, জিবরাইল, আজরাইল, মিকাইল, ইবনে মাইন, জইফ, সাইদ ইত্যাদি।
১৪. শব্দের শেষে জেরযুক্ত ع বা ء এর পর ي থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘য়ি’ হবে। যেমন : দায়ি, শরয়ি, তাবিয়ি, শাফিয়ি, নাসায়ি, বাহায়ি, কাসায়ি, ফুরুয়ি, কতয়ি ইত্যাদি।
১৫. শব্দের শুরুতে জবরযুক্ত ي থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘ইয়া’ হবে। যেমন : ইয়াসিন, ইয়ামান, ইয়াকুব, ইয়াহইয়া, ইয়াজিদ, ইয়াজুজ, ইয়াসরিব ইত্যাদি। তবে অধিক প্রচলনের কারণে আমরা ‘ইয়াতিম’ এর পরিবর্তে ‘এতিম’ এবং ‘ইয়াহুদি’ এর পরিবর্তে ‘ইহুদি’ লিখব।
১৬. শব্দের মাঝে বা শেষে জবরযুক্ত ي থাকলে এবং তার পূর্বে সাকিন না থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘য়া’ হবে। যেমন : জিয়াফত, জিয়ারত, হিদায়াত, শিকায়াত, রিওয়ায়াত, হায়াত, হায়া, রাজিয়া, আসিয়া, জারিয়া, মারিয়া, মাহিয়া, হাবিয়া, কাফিয়া, আওলিয়া, হিদায়া ইত্যাদি।
১৭. শব্দের মাঝে বা শেষে জবরযুক্ত ي থাকলে এবং তার পূর্বে সাকিন থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘ইয়া’ হবে। যেমন : হিলইয়াতুল আওলিয়া, দিহইয়াতুল কালবি, মারইয়াম, সুফইয়ান, ইয়াহইয়া, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন ইত্যাদি।
১৮. শব্দের শুরুতে পেশযুক্ত ي থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘ইউ’ হবে। যেমন : ইউসুফ, ইউনুস, ইউনানি, ইউরিয়া ইত্যাদি।
১৯. শব্দের মাঝে বা শেষে পেশযুক্ত ي থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘য়ু’ হবে। যেমন : কাইয়ুম, সুয়ুতি, দাইয়ুস, আইয়ুব, হুমায়ুন, বাদায়ুন, বুয়ু (ক্রয়বিক্রয়), ইয়া হাইয়ু ইত্যাদি।
২০. সুকুনযুক্ত ي এর পূর্বে জবর থাকলে ي এর প্রতিবর্ণ ‘ই’ হবে। যেমন : শাইখ, বাইআত, বাইতুল্লাহ, মাইয়িত, সাইয়িদ, খাইরান, রাইহান, মাইমুন, জাইতুন, জাইনাব, জাইদ, বাইআত, লাইলি, সাওরি ইত্যাদি।
২১. শব্দের শেষে তাশদিদযুক্ত ي এর পূর্বে জের থাকলে তাশদিদের দ্বিতীয় ي উচ্চারণে আসবে না। যেমন : বাগদাদি, ইরাকি, শামি, আরাবি, হিন্দি, হানাফি, শাফিয়ি ইত্যাদি।
২২. শব্দের শেষে তাশদিদযুক্ত ي এর পরে ة থাকলে ي এর প্রতিবর্ণ ‘য়া’ হবে এবং ة এর উচ্চারণ বাদ পড়বে। যেমন : আরাবিয়া, সাউদিয়া, হিন্দিয়া, হাদিয়া, শুকরিয়া, কিবতিয়া, আতিয়া সুমাইয়া, সুরাইয়া, সাদিয়া, রশিদিয়া, আশরাফিয়া, ইসলামিয়া ইত্যাদি।
২৩ জেরযুক্ত و এর প্রতিবর্ণ ‘ব’ হবে। যেমন : বিলায়াত, বিলাদাত, আল-বিদা, শরহুল বিকায়া, তাবিল, তাবিজ, তানবিন, তাফবিজ, বেফাকুল মাদারিস, নববি, তাহতাবি, থানবি ইত্যাদি।
২৪. শব্দের শুরুতে জবরযুক্ত و থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘অ’ হবে। যেমন : অজু, অলি, অহুদ, অসিলা, অলিমা ইত্যাদি। তবে বহুল প্রচলনের কারণে ‘ওকালত’ শব্দে ‘ও’, ‘উকিল’ শব্দে ‘উ’ এবং ‘ওয়াকফ’ ও ‘ওয়াদা শব্দদ্বয়ে ‘ওয়া’ লেখা হবে। আর ভিন্ন অর্থের সম্ভাবনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ‘ওহি’ শব্দে ‘অ’ এর পরিবর্তে ‘ও’ ব্যবহার হবে।
২৫. শব্দের শুরুতে জবরযুক্ত و এর পর ا (আলিফ) থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘ওয়া’ হবে। যেমন : ওয়াহিদ, ওয়ালিদ, ওয়াকিফ, ওয়ারিস, ওয়ালি ইত্যাদি।
২৬. শব্দের মাঝে বা শেষে জবরযুক্ত و থাকলে তার প্রতিবর্ণ ‘ওয়া’ হবে। যেমন : মুতাওয়াল্লি, হাওয়ারি, রিওয়ায়াত, সাফওয়াতুল মাসাদির, গাজওয়াতুল হিন্দ, সালওয়া, মারওয়ান, মারওয়া, সুওয়াল, জওয়াব, সাওয়াব ইত্যাদি।
২৭. তাশদিদযুক্ত و তে জবর থাকলে শুধু দ্বিতীয় و এর প্রতিবর্ণ উচ্চারিত হবে, প্রথম و এর কোনো প্রতিবর্ণ উচ্চারিত হবে না। যেমন : শাওয়াল, রবিউল আওয়াল, নবুওয়াহ, হাওয়া আ., লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইত্যাদি।
২৮. সুকুনযুক্ত و এর পূর্বে জবরযুক্ত হরফ থাকলে و এর প্রতিবর্ণ ‘ও’ হবে। যেমন : আওফ, তাওবা, তাওফিক, তাওরাত, আওরাত, হাওলাত, মওত, মওজু, মওকুফ, মওদুদ, ইসমে মওসুল ইত্যাদি। তবে ‘মৌসুম’ শব্দটির বানান ঔ-কার (ৌ) দিয়েই অধিক প্রসিদ্ধ হওয়ায় ‘মওসুম’ না লিখে ‘মৌসুম’ লিখব।
২৯. আতফের و এর প্রতিবর্ণ ‘ওয়া’-কে পরের শব্দ থেকে আলাদা লিখতে হবে। যেমন : ওয়া সাল্লাম, ওয়া আলাইকুম, ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ওয়া বারাকাতুহ, সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইত্যাদি। তবে ‘ওয়া’ এর পরের শব্দটি যদি এক অক্ষরবিশিষ্ট হয় তাহলে তা পরবর্তী শব্দের সাথে মিলিয়ে লিখতে হবে। যেমন : ওয়ামা তাওফিকি ,ওয়ালা হাওলা।
৩০. শব্দের শেষে ة থাকলে এর কোনো প্রতিবর্ণ উচ্চারিত হবে না। যেমন : শরিয়া, আকিদা, ফিরকা, ফিতনা, ইসলামিয়া, জামিআ, আয়িশা, ফাতিমা, হামজা, তালহা, হুরাইরা ইত্যাদি।
৩১. শব্দের শেষে ة থাকলে এবং এর পূর্বে তাশদিদ থাকলে ة এর প্রতিবর্ণ ‘হ’ বা ‘ত’ উভয়টি ব্যবহার করা যাবে। যেমন : নবুওয়াহ/নবুওয়াত, সুন্নাহ/সুন্নত, উম্মাহ/উম্মত, ইদ্দাহ/ইদ্দত ইত্যাদি। কিন্তু ‘মক্কা’ শব্দটি এ নীতি থেকে ব্যতিক্রম।
৩২. আরবি ال (আল) এর প্রতিবর্ণের পরে হাইফেন (-) হবে, একসাথে মিলিয়ে বা স্পেস দিয়ে লিখা যাবে না। যেমন : আল-হামদুলিল্লাহ, আল-কুরআন, আল-হাদিস, আত-তাবারানি, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, আল-বিদা, আস-সালামু আলাইকুম, আল-কারিম ইত্যাদি। তবে ব্যাপক প্রসিদ্ধির কারণে ‘আলহাজ’ শব্দটিতে এ নীতি প্রযোজ্য হবে না।
৩৩. শব্দের শেষে তাশদিদযুক্ত হরফ থাকলে শুধু একটি হরফ উচ্চারণে আসবে। যেমন : হজ, রব, হদ, মদ ইত্যাদি। তবে মাঝে হলে উভয় অক্ষরের উচ্চারণ যথারীতি ঠিক থাকবে। যেমন : দাজ্জাল, নাজ্জাশি, সুন্নাহ, উম্মাহ, হজ্জে আকবার, রাব্বুল আলামিন, হদ্দে জিনা, মদ্দে লিন, দাব্বাতুল আরজ ইত্যাদি।
৩৪. উচ্চারণের সুবিধার্থে কিছু কিছু শব্দের সুকুনযুক্ত অক্ষরকে জের তথা ই-কার (ি) দিয়ে উচ্চারণ করতে হবে। যেমন : জিকির, ফিকির, রিজিক, জিজিয়া, দুনিয়া ইত্যাদি। কখনো জবর তথা আ-কার (া) দিয়ে উচ্চারিত হবে। যেমন : নিয়ামত। আর কখনো পেশ তথা উ-কার (ু) দিয়ে উচ্চারণ হবে। যেমন : জুলুম, হুকুম।
৩৫. পেশের উচ্চারণ যথাসম্ভব *উ-কার (ু) দিয়ে হবে। যেমন : কুরআন, বুখারি, মুমিন, মুনাফিক, মুনাজাত, দুআ, কুদসি, মুহাররম, কুরবানি, কুফর, সুনান, সুরা, মুআমালা, মুআনাকা, মুসাফাহা, মুসাফির, মুনাফিক, মুজাহিদ ইত্যাদি।
৩৬. জেরের উচ্চারণ যথাসম্ভব ই-কার (ি) দিয়ে হবে। যেমন : ফিতান, কিয়ামত, আখিরাত, জিহাদ, কিতাল, নিফাক, সিজদা, হিদায়াত, রিসালাত, শিকায়াত, রিওয়ায়াত, হিকমত, খিদমত, আলিম, কাফির, ফাসিক, জালিম, হাফিজ, রাহিব, জাহির ইত্যাদি।
৩৭. বাংলায় ব্যবহৃত দুই বা তিন শব্দে গঠিত আরবি বাক্যগুলোর শেষে ‘আল্লাহ’ শব্দ থাকলে শব্দগুলো একসাথে লিখতে হবে। যেমন : আল-হামদুলিল্লাহ, ইয়ারহামুকাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ, জাজাকাল্লাহ, বারাকাল্লাহ। আর বাক্যের শেষে ‘আল্লাহ’ শব্দ না থাকলে কিংবা তিনের অধিক শব্দের বাক্য হলে আলাদা লিখতে হবে। যেমন : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আস-সালামু আলাইকুম, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ইত্যাদি।
৩৮. হরকতযুক্ত হোক বা সুকুনযুক্ত, ع এর জন্য কোনো ঊর্ধ্বকমা (’) ব্যবহার করা হবে না। যেমন : রুকু, মওজু, মারফু, মাকতু, তাআলা, সাদ, সাদিয়া, আকল, মুআজ ইত্যাদি। তবে অর্থগত বিভ্রাট এড়াতে কিংবা অন্য শব্দ থেকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : আমরা (الله أعلم) আল্লাহু আ’লাম লিখব। যেন এটাকে (الله عالم) আল্লাহু আলাম ভেবে অর্থ বিভ্রাট সৃষ্টি না হয়। আর (ابن العربي) ইবনুল আরাবি ও (ابن الأعرابي) ইবনুল আ’রাবি, অনুরূপ (معنوي) মা’নবি ও (منوي) মানবি; এ চারটি শব্দই আলাদা অর্থে ব্যবহার হয়েছে। তাই একটার সাথে আরেকটা মিলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচার জন্য আইনযুক্ত শব্দে ঊর্ধ্বকমা ব্যবহার করব।
৩৯. জবরযুক্ত ع বা ء এর প্রতিবর্ণ ‘আ’ রাখতে হবে, সংক্ষেপের উদ্দেশ্যে বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন : বিদআত, জামাআত, জুমআ, রাকআত, মাশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, কুরআন, বাইআত, মাসআলা ইত্যাদি।
৪০. শব্দ যথাসম্ভব সরল বানানে লিখতে হবে। যুক্ত অক্ষর, রেফ ও বিভিন্ন ফলা পরিত্যাজ্য হবে। যেমন : ইবরাহিম, মাদরাসা, উরদু, ফারসি, ইসতিগফার, সালাতুল ইসতিসকা, ইসতিসনা, ইনতিকাল, আসতাগফিরুল্লাহ, মাইয়িত, কাইয়িম ইত্যাদি। তবে 'আব্দুল্লাহ' শব্দটি অধিক প্রসিদ্ধ হওয়ায় এটাকে আমরা 'আবদুল্লাহ' না লিখে আপন অবস্থায় ঠিক রাখব। আর দুটি অক্ষর একই বর্ণের হলে সেক্ষেত্রে যুক্ত করেই লিখতে হবে। যেমন : মুত্তাকি, ইজ্জত, ইদ্দত, মুদ্দত, ইত্তিফাক, ইত্তিহাদ, ইত্তিবা, মদ্দে লিন, হজ্জে আকবার, রাব্বুল আলামিন ইত্যাদি।
৪১. دين শব্দটি বাংলায় ‘দ্বীন’ লিখতে হবে। কেননা, ‘দীন’ বা ‘দিন’ লিখলে তা ভিন্ন অর্থবোধক অন্য শব্দের সদৃশ হয়ে যায়। তাই নিয়মের পরিপন্থী হলেও শব্দটি প্রসিদ্ধ বানানে লেখাই আমরা ভালো মনে করি।
৪২. নবিদের নামের শেষে ‘আ.’, সাহাবিদের নামের শেষে ‘রা., বুজুর্গদের নামের শেষে ‘রহ.’ এবং জীবিত মনীষীদের নামের শেষে ‘হাফি.’ লিখতে হবে। তবে আমাদের নবির নামের পর আমরা পূর্ণ দরুদ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিখব, সংক্ষেপে কেবল 'সা.' লিখব না। যেমন : মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আদম আ., আবু বকর রা., হাসান বসরি রহ., তাকি উসমানি হাফি. ইত্যাদি।
৪৩. নামের সাথে পিতার নাম থাকলে মাঝের শব্দ ‘বিন’ লিখতে হবে। যেমন উমর বিন খাত্তাব রা., আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা., আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. ইত্যাদি।
৪৪. আর নাম ছাড়া শুধু পিতার নাম থাকলে ‘ইবনে’ লিখতে হবে। যেমন : ইবনে আব্বাস রা., ইবনে উমর রা., ইবনে মাসউদ রা., ইবনে হাজার রহ. ইত্যাদি।
৪৫. নামের ক্ষেত্রে আমরা কোনো নীতি প্রয়োগ করব না। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম যেভাবে লেখা হয়, আমরা ঠিক সেভাবেই লিখব। যেমন : রেহমান মালিক, শেহজাদ, সামছুদ্দোহা, নায়েক, বেফাক, ইসলামী ব্যাংক, মারকাযুদ দাওয়াহ, আবু তাহের মিছবাহ ইত্যাদি।
৪৬. আরবি কিতাবের উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে উরদু বাচনভঙ্গি ও বানান পরিহার করে, ইরাব অনুসারে বিশুদ্ধ উচ্চারণে কিতাবের নাম লিখতে হবে। যেমন : সহিহুল বুখারি, সুনানু আবি দাউদ, সুনানুত তিরমিজি, মুসনাদু আহমাদ, মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবা, সহিহু ইবনি হিব্বান, মুসতাদরাকুল হাকিম, তাফসিরু ইবনি কাসির, সিয়ারু আলামিন নুবালা, তাকরিবুত তাহজিব ইত্যাদি। তবে কুরআনের সুরার ক্ষেত্রে আমরা ‘সুরা’ লিখে ‘আল’ শব্দটি আলাদাভাবে ব্যবহার করব। যেমন : সুরা আল-ফাতিহা, সুরা আল-বাকারা, সুরা আন-নিসা, সুরা আর-রাদ, সুরা আস-সাফফাত ইত্যাদি।
৪৭. আরবিসহ অন্য যেকোনো ভাষার শব্দ সংক্ষিপ্তভাবে লিখলে শেষে বিসর্গ (ঃ) না দিয়ে ডট (.) দিতে হবে। যেমন : সা. (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আ. (আলাইহিস সালাম) রা. (রাজিআল্লাহু আনহু) রহ. (রাহিমাহুল্লাহ) হাফি. (হাফিজাহুল্লাহ) ড. (ডক্টর) বি. দ্র. (বিশেষ দ্রষ্টব্য) ইত্যাদি।
৪৮. সংক্ষিপ্তভাবে লিখা শব্দের পর ‘এর’ বা ‘কে’ থাকলে মাঝে একটি হাইফেন (-) দিতে হবে। যেমন : আদম আ.-এর, আবু বকর রা.-এর, বুখারি রহ.-এর, ইবরাহিম আ.-কে, উমর রা.-কে, মুসলিম রহ.-কে ইত্যাদি।
৪৯. বহুবচনের দ্বিত্ব পরিহার করতে হবে। যেমন : সাহাবাগণ, ফুকাহাগণ, উলামাগণ ইত্যাদির পরিবর্তে লিখতে হবে সাহাবা, ফুকাহা, উলামা অথবা সাহাবিগণ, ফকিহগণ, আলিমগণ। বিকল্প হিসাবে ফুকাহায়ে কিরাম, সাহাবায়ে কিরাম, উলামায়ে কিরামও লেখা যেতে পারে।
৫০. ফারসি ও উরদুর অনেক শব্দের শুরুতে থাকা জেরের উচ্চারণ এ-কার (ে) দিয়ে এবং পেশের উচ্চারণ ও-কার (ো) দিয়ে হবে। যেমন : মেহেরবান, ফেরেশতা, বেহায়া, বেহাল, রেশম, বেগম, বেহেশত, দোজখ, গোমরাহ, গোনাহ, রোজা ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নীতি ও বানান পদ্ধতি :
# এ, যে, সে; এ তিনটি শব্দের সঙ্গে ‘সব’, ‘ভাবে’ ও ‘কাল’ শব্দ তিনটি জুড়ে লিখতে হবে। যেমন : এভাবে, যেভাবে, সেভাবে, একাল, যেকাল, সেকাল, এসব, যেসব, সেসব। অন্য কোনো শব্দের সাথে এলে আলাদা লিখতে হবে। যেমন : এ দেশে, এ ছাড়া, এ স্থানে, যে ব্যাপারে, যা হলে, সে দিন, যে লোক ইত্যাদি।
# বর্তমান ও আদেশসূচক ক্রিয়ার শেষে ও-কার (ো) থাকবে। যেমন : তোমরা যেভাবে চলো সেটা ঠিক নয়, তোমরা যা বলো তা ভালো লাগে না, আমার সাথে চলো, এখন কাজ করো। আর অতীত কাল ও ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়ার শেষে ও-কার হবে না। যেমন : করল, গেল, ছিল, মারল, ধরল, যাব, খাব, লিখব, পড়ব ইত্যাদি। তবে অর্থগত বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য ‘হলো’, ‘হতো’, ‘দেবো’ ক্রিয়া তিনটির শেষে ও-কার (ো) থাকবে।
# কিছু ক্রিয়ার রূপ :
নিজে উঠলে ‘উ’ বর্ণযোগে হবে। যেমন : আমি উঠলাম, উঠছি, উঠব; তুমি উঠলে, উঠছ, উঠবে; সে উঠল, উঠছে, উঠবে। তবে বর্তমান ও আদেশসূচক ক্রিয়াতে ও বর্ণযোগে হবে। যেমন : তুমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠো, সে বেলা করে ওঠে, অনেক হয়েছে এখন ঘুম ছেড়ে ওঠো। আর অন্যকে ওঠালে ‘ও’ বর্ণযোগে হবে। যেমন : আমি ওঠালাম, ওঠাচ্ছি, ওঠাব; তুমি ওঠালে, ওঠাচ্ছ, ওঠাবে; সে ওঠাল, ওঠাচ্ছে, ওঠাবে। তবে নিকট অতীতকালের ক্ষেত্রে ‘উ’ বর্ণ হবে। যেমন : আমি উঠিয়েছি, তুমি উঠিয়েছ, সে উঠিয়েছে।
# প্রসিদ্ধ ও বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ক্রিয়ার বানান :
করল, ছিল, হলো, হতো, দেবে, নেবে, দেবো, নেব, নিই, দিই।
# কিছু ক্রিয়াবিশেষণের শেষের রূপ :
ক্রিয়াবিশেষণের শেষে ব্যবহৃত অধিকন্তু অর্থে ‘ও’ বানানে ও-কার না হয়ে ‘ও’ পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে হবে। যেমন : আজও, আবারও, আরও, এমনও, কালও, কারও, তারও, তেমনও, সেবারও। তবে বহুল প্রচলনের কারণে কিছু শব্দে ও-কার ঠিক থাকবে। যেমন : কখনো, এখনো, কোনো, কারোই।
# ও-কার সমাচার :
কিছু শব্দের অন্ত্য বর্ণে ও-কার (ো) ব্যবহার করা যাবে না। যেমন : এত, কত, তত, কেন, যেন। আর কিছু শব্দে ও-কার (ো) থাকবে। যেমন : মতো (সদৃশ), কালো, ভালো, এগারো, বারো, তেরো, চোদ্দো, পনেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো।
# না-বাচক বা নিষেধাজ্ঞাসূচক অব্যয় সর্বদা আলাদা লিখতে হবে। যেমন : করল না, খায় না, যাবে না, বলো না। তবে অতীতকালের না-বাচক অব্যয় ‘নি’ ক্রিয়ার সঙ্গে মিলে আসবে। যেমন : করেনি, খায়নি, যায়নি।
# নিম্নলিখিত শব্দ বা শব্দাংশযোগে গঠিত শব্দ নিরেট হবে। অর্থাৎ তার পূর্বের শব্দে সাথে মিলে আসবে, মাঝে স্পেস বা হাইফেন হবে না। নিম্নে উদাহরণসহ কিছু শব্দ উল্লেখ করা হলো :
কবলিত (খরাকবলিত), করী (কার্যকরী), কামী (শান্তিকামী), কারক (ক্ষতিকারক), কারী (প্রদানকারী), কালীন (সমকালীন), কেন্দ্রিক (ব্যক্তিকেন্দ্রিক), খানা (গোসলখানা), গামী (সহগামী), গ্রস্ত (ঋণগ্রস্ত), গ্রাহী (হৃদয়গ্রাহী), ঘাতী (আত্মঘাতী), চারী (মহাকাশচারী), চুম্বী (আকাশচুম্বী), চ্যুত (পদচ্যুত), জনক (লজ্জাজনক), জনিত (বার্ধক্যজনিত), জাত (স্বভাবজাত), জীবী (বুদ্ধিজীবী), জ্ঞাপক (সংবাদজ্ঞাপক), দর্শী (দূরদর্শী), দাত্রী (প্রেরণাদাত্রী), দায়ক (পীড়াদায়ক), দায়ী (ফলদায়ী), ধর্মী (বিশ্লেষণধর্মী), ধারী (অস্ত্রধারী), নামা (খ্যাতনামা), নাশী (সর্বনাশী), নির্ভর (প্রযুক্তিনির্ভর), পক্ষীয় (দ্বিপক্ষীয়), পত্র (অভিযোগপত্র), পত্রী (একবীজপত্রী), পন্থী (উগ্রপন্থী), পরায়ণ (কর্তব্যপরায়ণ), পূর্বক (জোরপূর্বক), প্রবণ (আবেগপ্রবণ), প্রসূ (ফলপ্রসূ), প্রসূত (কল্পনাপ্রসূত), প্রায় (অন্ধপ্রায়), বৎ (পুত্রবৎ) বর্জিত (বিবেকবর্জিত) বশত (ভুলবশত), বাচক (ইতিবাচক), বাজ (চালবাজ), বাজি (ফন্দিবাজি), বাদ (বস্তুবাদ), বাদী (পুঁজিবাদী), বাহক (পত্রবাহক), বাহী (যাত্রীবাহী), বিধ (নানাবিধ), বিশিষ্ট (লেজবিশিষ্ট), বিষয়ক (দুর্নীতিবিষয়ক), বিহীন (ত্রুটিবিহীন), বোধক (প্রশ্নবোধক), ব্যঞ্জক (অর্থব্যঞ্জক), ব্যাপী (দেশব্যাপী), ভাবে (ভালোভাবে), ভাষী (বাংলাভাষী), ভিত্তিক (ধর্মভিত্তিক), ভুক্ত (দলভুক্ত), ভেদী (মর্মভেদী), ভোজী (তৃণভোজী), মতো (কথামতো), মনস্ক (বিজ্ঞানমনস্ক), ময় (স্মৃতিময়), ময়ী (দয়াময়ী), মাত্রিক (বহুমাত্রিক), মুখী (বহুমুখী), মূলক (কল্যাণমূলক), যোগী (মনোযোগী), যোগে (বর্ণযোগে), রত (অধ্যয়নরত), রহিত (বিবেকরহিত), রূপে (উত্তমরূপে), শায়ী (ধরাশায়ী), শালা (পাঠশালা)), শালী (প্রভাবশালী), শীল (লজ্জাশীল), শূন্য (জনশূন্য), সংক্রান্ত (রাজনীতিসংক্রান্ত্র), সংখ্যক (কমসংখ্যক), সংগত (ন্যায়সংগত), সঞ্জাত (জ্ঞানসঞ্জাত) সমেত (পরিবারসমেত), সম্পন্ন (মেধাসম্পন্ন), সম্মত (বিধিসম্মত), সহ (ঘরভাড়াসহ), সামগ্রী (পণ্যসামগ্রী), সুদ্ধ (দেশসুদ্ধ), সূচক (গ্লানিসূচক), স্পর্শী (মর্মস্পর্শী), স্বরূপ (উপহারস্বরূপ), হারা (ছেলেহারা), হারী (বস্ত্রহারী), হেতু (বার্ধক্যহেতু)।
# গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কিছু শব্দের শুদ্ধ বানান :
অংশীদারত্ব, অঙ্গ, অচিন্ত্য, অঙ্গুলি, অন্তর্ভুক্ত, অন্তর্ভূত, অপেক্ষমাণ, অবতরণিকা, অলংকার, অহংকার, আংটি, আঙুর, আঙুল, আত্মসাৎ, আদ্যোপান্ত, আবির্ভূত, আবিষ্কার, ইঁদুর, ইঙ্গিত, ইতস্তত, ইতিপূর্বে, ইতিমধ্যে, ইদানীং, ইন্দ্রীয়, উচ্ছ্বাস, উজ্জ্বল, উত্তীর্ণ, উত্তুরে (বাতাসের নাম), ঊর্ধ্ব, ঊষার, ঊহ্য, এতৎসত্ত্বেও, এতদ্দ্বারা, এবড়োখেবড়ো, ঐক্যমত্য, ওষুধ, ঔষধালয়, ঔষধি (ওষুধের গাছগাছড়া), কঙ্কন, কঙ্কাল, কণ্ঠ, কদাচিৎ, কলঙ্ক, কশাঘাত, কাচা (ধোয়া) কালো, কিঞ্চিৎ, কৃতিত্ব, খণ্ড, খণ্ডন, খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টান, খ্রিষ্টাব্দ, গড্ডলিকা, গুন্ডা, গোষ্ঠী, গৃহীত, ঘণ্টা, চূড়ান্ত, জিব (জিহ্বা), ঝোড়ো (বাতাসের নাম), ঠাওর, ঠান্ডা, ডঙ্কা, ডাঙা, ডান্ডা, ডিঙি, তক্ষুনি, তখনই, তিরস্কার, তির (বাণ), তীর (পাড়), তৈরি, ত্যাজ্যা, থুতু, দাঁড়ি (পূর্ণচ্ছেদ), দাড়ি (শ্মশ্রু), দাবি, দেওয়া, ধরন, ধর্ষণ, ধারণ, ধারণা, ধৈর্য, নাঙ্গা, নিরঙ্কুশ, নিরহংকার, নিষ্পাপ, নীরব, ন্যায়, পণ্ডিত, পরিষ্কার, পর্দানশিন, পশ্চাৎ, পুরস্কার, পূজা, ফাঁসি, ফেরত, বক্ষ্যমাণ, বশীভূত, বহিষ্কার, বাঙালি, বৈচিত্র্য, ব্যতীত, ভণ্ড, ভবিষ্যৎ, ভাঙা, ভালো, মজুত, মনীষী, মূর্খ, মূর্তি, রং, রঙিন, রুপা, লন্ডভন্ড, শঙ্কা, শতাব্দী, শরীরী, শাশুড়ি, শিঙা, শিরচ্ছেদ, শুয়োর, শশুর, শ্রেণি, সংকট, সংকল্প, সংকীর্ণ, সংকেত, সংগত, সংগীত, সংঘ, সংবলিত, সঙিন, সত্ত্বেও, সবচেয়ে, সর্বজনীন, সাথি, সূক্ষ্ম, সূচিপত্র, সৌহার্দ্য, স্বতঃসিদ্ধ, স্বতঃস্ফূর্ত, স্বর্ণ, হাঙর, হুঁশ, হৃৎপিণ্ড, হৃদরোগ।
বি. দ্র. : বিশেষ এ বানানরীতি প্রথমে নিজের প্রয়োজনেই তৈরি করেছিলাম। সে সময় আমি জনপ্রিয় প্রকাশনী ‘... পাবলিকেশন’-এর সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ... পাবলিকেশনের অনুবাদক ও সম্পাদক ভাইগণও পরামর্শের ভিত্তিতে এ রীতিটি অনুসরণ করা শুরু করেন। এরপর আরও কিছু প্রকাশনী ও লেখক এটা অনুসরণ করতে চাইলে তাদেরকেও অনুমতি প্রদান করি। একবার তো বেশ কয়েকজন প্রকাশক এটার ওপর একটি সেমিনারেরও আয়োজন করতে চেয়েছিলেন, যেন সবাই একমত না হতে পারলেও অধিকাংশজনের মতামতের ভিত্তিতে এটাকে চূড়ান্ত করা যায় এবং ইসলামি ধারার লেখকদের বানানকে মোটামুটি একমুখী করা যায়। পরে অবশ্য নানা ব্যস্ততায় ও সমস্যার কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তো যাই হোক, বিশেষ এ বানানরীতি তৈরি করার ব্যাপারে এটা ছিল আমার সংক্ষিপ্ত কৈফিয়ত। এটা অনেকের পছন্দ হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। অস্বীকার করছি না যে, আলোচনা-সমালোচনা হলে এটা হয়তো আরও সমৃদ্ধ হতো। সামনে কখনো সুযোগ হলে এটা নিয়ে আবারও প্রকাশকদের সাথে বসার ইচ্ছে আছে। আল্লাহ চাইলে এ খসড়াটি আরও পর্যালোচনা করে এবং প্রকাশক ও লেখকদের মতামত আমলে নিয়ে এটিকে সর্বজনীন একটি বানানরীতিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। আল্লাহ আমাদের সর্বদা উম্মাহর জন্য কল্যাণকর ও উত্তম কাজের তাওফিক দিন।
-------------------------------------------------------------------
-সংগ্রহীত
Comment