Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নাসিহা-আবু ইউসুফ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নাসিহা-আবু ইউসুফ

    pdf link





    word file





    ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নাসিহা

    ফিতনা অর্থ কি?
    ফিতনা(فتنة) অর্থ পরীক্ষা বিপদ বিশৃঙ্খলা প্রলোভন।
    ফিতনার ধরন বা প্রকার:
    আসলে ফিতনাকে কোন প্রকার আনাটা কষ্টসাধ্য। তাই আমরা প্রকার নিয়ে কথা না বাড়িয়ে ফেতনার বিভিন্ন ধরন নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
    ১. নারীর ফিতনা: আমরা জানি মানুষ নারী ফিতনার কারণে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হয়। নারীর ফিতনার কারণে ঈমান ও চলে যেতে পারে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া সুমিষ্ট আকর্ষণীয় এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিনিধিত্ব দান করবেন তোমাদের, তিনি দেখবেন তোমরা কেমন আমল করো, তোমরা দুনিয়া এবং নারী সম্পর্কে ভয় করো। কারণ বনি ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারী।" এছাড়া আমরা জানি বারসিসার সাথে শয়তান নারীর মাধ্যমে কি করে ছিল শেষ পর্যন্ত তার ঈমানটা হারাতে হলো।
    ২.দাজ্জালের ফিতনা: দাজ্জালের ফিতনা নিয়ে বের হবে। প্রত্যেক নবী তাঁর উম্মতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আমাদের নবীও দাজ্জালের কিছু পরিচয় বলে গিয়েছেন, দাজ্জালের এক চোখ কানা হবে, তার কপালে ك ف ر লেখা থাকবে। সে ৪০ দিন জীবিত থাকবে।ইমরান ইবনে হুসাইন রাঃ হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,
    আদম (আঃ) এর জন্ম থেকে কেয়ামত পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে দাজ্জালের চাইতে সর্বাপেক্ষা মারাত্মক বিষয় আর নাই (রিয়াদুস সালেহীন হাদিস: ১৮২৩)
    ৩. ক্ষমতার ফিতনা: মানুষ সাধারণত ক্ষমতালোভী হয়ে থাকে। এই কারণে সে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ক্ষমতা মানুষকে ফেতনার নিমজ্জিত করে।
    আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "অচিরেই তোমরা নেতৃত্বের প্রতি লোভী হবে, নেতৃত্ব কেয়ামতের দিন লজ্জার কারন হবে" (সহিহ বুখারী: ৭১৪৮)
    মানুষ ক্ষমতার প্রতি লোভী হওয়ার কারণ:
    ১. অন্যের অধিনে না থাকার ইচ্ছা। ক্ষমতালোভী চায় না যে, তার উপর কেউ থাকুক। সে প্রত্যেক ছোট-বড় কাজে হস্তক্ষেপ করে।
    ২.এটি প্রবৃত্তির আগ্রহ ও কামনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ক্ষমতালোভী সে চাই, অন্য সকলের উপর থাকতে। সে চাই তার প্রশংসা করা হোক।
    ৩.ঈমানের দুর্বলতাঃ অন্তর ঈমানশূন্য হওয়া বা ঈমান দুর্বল হওয়ার কারণে, মানুষের মনে দুনিয়ার প্রতি লোভ জেগে উঠে।
    ৪. আমানত সম্পর্কে বেখবর। ক্ষমতা লোভীরা ভুলে যায়। ক্ষমতা বা নেতৃত্ব একটা আমানত। আল্লাহ বলেন,

    وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا
    "মানুষ এটা বহন করলো, ব্স্তুত সে অতিশয় জালিম। অতিশয় অজ্ঞ"(সূরা আহযাব: ৭২)
    ৫.কাল্পনিক আনন্দভোগের অনুভূতি। ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন,নেশার আরো কিছু প্রকার হলো, নেতৃত্ব ও সম্পদের লোভ অথবা ক্রোধ বেড়ে যাওয়া।
    ৬. দুনিয়ার প্রতি অধিক ভালোবাসা আল্লাহ বলেন,
    وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى
    "যে পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে, জাহান্নাম হবে তার ঠিকানা"(সূরা নাজিয়াহ: ৩৮-৩৯)
    রাসূল (সাঃ) বলেন, "নিশ্চয়ই দুনিয়া সুমিষ্ট আকর্ষণীয়"।
    ৭. নিজেকে জাহির করা। সাদী (রহঃ) বলেন, নেতৃত্বসহ অন্যান্য কর্তৃত্ব সৃষ্টির জন্য কষ্টকর। নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়া বা যোগ্য বলে নিজেকে দেখানো কোন বন্দর জন্য উচিত নয়।

    ক্ষমতালোভীদের ফিতনায় পতিত হওয়ার লক্ষণ সমূহ:
    ১. আল্লাহর বড়ত্ব ও পূর্ণত্বের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করা।
    ২. আমলে ইখলাস শূন্যতা।
    ৩. ক্ষমতা না দেয়ার কারণে, কাজ না করা।
    ৪. মানুষের দোষ ত্রুটি বর্ণনা করা।
    ৫. সে বুঝতে চায় না যে, দ্বীন বা ইলমের ক্ষেত্রে তার চেয়ে অধিক উত্তম কেউ আছে।
    ৬. ক্ষমতা চলে গেলে বা কেড়ে নেওয়া হলে,হতাশ হওয়া।
    ৭. অহংকার করা, মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করা।
    ৮. সমর্পিত দায়িত্বে আল্লাহর সহযোগিতা না পাওয়া।
    ৯. কাফের মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব করা।
    ১০. হক গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা এবং বিদআত পথভ্রষ্টতা দিকে ধাবিত হওয়া।
    ১১. ক্ষমতাধরদের নিকটবর্তী হওয়া।
    ১২. প্রসিদ্ধির লোভ ও সুনাম কামনা।
    ১৩. মনগড়া কথা বলা।
    ১৪. অন্তরের কাঠিন্যতা। আল্লাহর যিকির থেকে বিরত থাকা।
    ১৫. বিদ্বেষ পোষণ ও মুসলিমদের কাতারে বিভেদ সৃষ্টি করা।

    ৪. বন্দীত্বের ফিতনাঃ পৃথিবীতে কেউ চাই না বন্দী থাকতে।সবাই চাই সে মুক্ত-স্বাধীন থাকবে। কখনো যদি কেউ বন্দি হয়, তখন তাঁর উপর নেমে আসে এক বড় মুসিবত। তখন সে চেষ্টা করে এই বন্দিদশা থেকে যেভাবে পারা যায় মুক্ত হতে। একমাত্র মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এই বন্দিদশা থেকে কল্যান হাসিল করতে পারে না। যখন কোন লোক বন্দি হয় তখন সে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। নিচে তার কিছু বর্ণনা করা হলোঃ

    ১. অন্তর সংকীর্ণ হয়ে যায়।
    ২. অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়।
    ৩. গাফেল হয়ে যায়। দ্বীনি বিভিন্ন বিষয় থেকে অন্তর গাফেল হওয়া।
    ৪. মিথ্যা কথা প্রকাশ পায়।
    ৫. রিয়া দেখা দেয়।
    ৬. নিজেকে জাহির করার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা।
    ৭. অন্যের দোষ বর্ণনা করা বা এধরনের আলোচনায় শামিল হওয়া।
    ৮. অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে ওঠা।
    ৯. বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত থাকা।
    ১০. রাগ প্রকাশ পাওয়া।
    ১১. তাড়াহুড়া করা।
    ১২. গীবত করা।
    ১৩. পারিবারিক চিন্তায় বিভোর থাকা।
    ১৪. দুনিয়াবী মানুষদের ভয় অন্তরে বৃদ্ধি পাওয়া।
    ১৫. সহজ বিষয় কঠিন বানিয়ে নেওয়া।

    ৫. সম্পদের ফিতনাঃ মানুষ স্বাভাবিকভাবে আরামপ্রিয় হয়ে থাকে। তাই সে সম্পদের পাহাড় বানাতে থাকে। যখন সম্পদ তার হাত ছাড়া হয়ে যায়, সে হতাশ হয়ে পড়ে। পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। আল্লাহ বলেন,
    وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
    "পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়"(সূরা নাযিয়াত: ৩৮)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "নিশ্চয়ই দুনিয়া সুমিষ্ট আকর্ষণীয়" এবং তিনি আরো বলেন দুনিয়া এবং নারী থেকে বেঁচে থাকতে। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম সম্পদের ফিতনা, এমন এক ফিৎনা যা মানুষকে আল্লাহর আযাবের দিকে নিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত এসব ফিতনা থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা
    ৬. ব্যবসা-বাণিজ্যের ফিতনাঃ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের পিছনে অনেক সময় ব্যয় করে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মোহে পড়ে, সে দ্বীন থেকে দূরে সড়ে যায়। তাই আল্লাহ বলেন,
    وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا
    "তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যারা মন্দা পড়ার আশঙ্কা করো" (সূরা তাওবা: ২৪)
    মানুষ এই কাজটা করে আল্লাহ,আল্লাহর রসূল এবং জিহাদ থেকে প্রিয় মনে করে। যার ফলে সে আল্লাহর আযাবের ধরাশায়ী হয়ে পড়ে। ফলে সে এক সময় ধ্বংস হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত এই ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে আমাদের দ্বীনের কোন ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল করতে হবে।

    ফিতনায় পতিত হওয়ার কারণ: ফিতনার পতিত হওয়ার একটি কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম কে অনুসরণ না করা। মানুষ বিভিন্ন কারণে ফিতনায় পতিত হয়। তার কিছু কারণ আমরা নিম্মে বর্ণনা করলাম:

    ১.অহংকার: মানুষ অহংকার এর কারণে অনেক ধরনের ফিতনা সম্মুখীন হয়। হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, "অহংকারের কারণে শয়তান অভিশপ্ত হয়েছে। অহংকার মানুষকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়।"
    আল্লাহ বলেন,
    إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
    "কোন দাম্ভিক অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না" (সূরা লোকমান,আয়াত ১৮)
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম বলেন,
    "অহংকার হলো সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয় মনে করা" (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৯১, রিয়াদুস সালেহীন হাদিসঃ ৬১৭)
    ২. গাফিলতি: যে বস্তু সম্পর্কে সচেতন থাকা কর্তব্য, সেখানে অবচেতন থাকার নাম গাফিলতি। (ফায়জুল কাবির:১/১৬২) আল্লাহ গাফিলতির কারণ উল্লেখ করে
    আল্লাহ বলেন,
    يَعْلَمُونَ ظَٰهِرًا مِّنَ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ ٱلْءَاخِرَةِ هُمْ غَٰفِلُونَ
    "তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক সম্বন্ধে অবগত, আর আখিরাত সম্বন্ধে তারা বেখবর"(সূরা রুম, আয়াতঃ০৭) আল্লাহ আরো বলেনঃ
    اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ
    "মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।(সূরা আম্বিয়া,আয়াতঃ ০১)
    গাফিলতির কারণে মানুষ ভালোপথ থেকে মন্দ পথে হাঁটতে শুরু করে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    ৩.গীবত: গীবত হলো অনুপস্থিত ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা শুনলে সে অপছন্দ করবে, তাই গীবত। গীবত মানুষ বিভিন্ন ভাবে করে। যেমনঃ-
    ১. কিছু লোক মজলিসের অন্যান্য সহচরের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে গীবত করে ফেলে। এই ধরনের গীবত গল্পের ছলে, যেমনঃ- কোন লোক সম্পর্কে কোন কথা চলতে থাকলে তার অনেক খারাপ দিক আমরা আলোচনা করতে থাকি। যার ফলে তার ভালো গুণগুলো নিয়ে আলোচনা না করে, তার খারাপ গুণ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে।
    ২.কখনো মানুষ হিংসা বশবর্তী হয়ে গীবত করে।
    ৩.কিছু লোক গীবত করে হাসি ঠাট্টার ছলে।
    ৪.অনেককে গীবত করে ক্ষোভ প্রকাশ করার ছলে। অথচ তার মনোবান্ঞা হলো লোকটির দোষ বর্ণনা করা।
    ৫.কিছু লোক গীবত করে সমবেদনা জানানোর ভঙ্গিতে।
    ৬.অনেককে গীবত করে বিস্ময় প্রকাশ করার আদলে।
    আল্লাহ বলেন,
    وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا
    "তোমাদের মধ্যে কেউ যেন, কারো গীবত না করে"(সূরা হুজুরাত ৪৯/১২) ।
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "প্রতিটি মুসলমানের জন্য প্রতিটি মুসলিমের প্রাণ,মান-ইজ্জত এবং ধন-সম্পদ হারাম। (সহিহ মুসলিম হাদিসঃ ২৫৬৪, রিয়াদুস সালেহীন হাদিসঃ ১৫৩৫)
    তাই যারা গীবত লিপ্ত হয় তারা বিভিন্ন ফিতনায় পতিত হয়।

    ৪. হিংসাঃ হিংসা হলো কোন লোককে আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন, তার ধ্বংস কামনা করা। আল্লাহ বলেন,
    أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِ
    "তবে কি তারা অন্য লোকদের প্রতি শুধুমাত্র এই জন্যই হিংসা পোষন করে যে,তাদেরকে আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন" (সূরা নিসা আয়াত ৫৪)।
    হিংসা মানুষের অন্তর কুলষিত করে যার ফলে সে অন্যের ভালো দেখতে চায় না, এই ধরনের আচরণের কারণে, তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

    ৫. রিয়াঃ রিয়া হলো লোক দেখানো। আল্লাহ বলেন
    وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء
    "তোমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর জন্য এবাদত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (সূরা আল-বাইয়েনাহ আয়াতঃ ৫) আল্লাহ বলেন,
    قَامُواْ كُسَالَى يُرَآؤُونَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلاً
    "শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য এরা অলস ভঙ্গিতে সালাতে দন্ডায়মান হয়! এবং ওরা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে" (সূরা নিসা আয়াতঃ ৪/১৪২)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "মানুষকে শোনানোর জন্য যে লোক কাজ করে, তার দোষ ত্রুটি আল্লাহ মানুষকে শুনিয়ে দিবেন, আর মানুষকে দেখানোর জন্য যে লোক কাজ করে, তার সমস্ত দোষ ত্রুটি আল্লাহ মানুষকে দেখিয়ে দিবেন (সহিহ বুখারী হাদীসঃ ৬৪৯৯, সহিহ মুসলিম হাদিসঃ ২৯৭৮,২৯৮৭)
    এর ফলে মানুষ হীন এবং ছোট্ট হয়ে যাবে, আর আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছে।


    ৬.মিথ্যা কথনঃ ইসলামের মৌলিক বিধান হলো মিথ্যা বলা হারাম। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার অনুমোদন প্রদান করা হয়। আল্লাহ বলেন,
    وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
    "তোমরা মিথ্যা কথা-বার্তা ত্যাগ করো" (সূরা হাজ্জ ২২/৩০)
    আল্লাহ আরো বলেন
    ولا تقف ما ليس لك به علم
    "যে সম্পর্কে তোমর জ্ঞান নেই তার পেছনে লেগোনা" (সুরা বনি ইসরাইল ১৭/৩৬)
    রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তির মধ্যে চারটি ত্রুটি থাকবে, সে পাক্কা মুনাফিক আর এর মধ্যে একটি হলো, "যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে" (সহিহ বুখারী হাদীসঃ ৩৪, সহিহ মুসলিম হাদিসঃ ৫৮) রাসূল (সাঃ) বলেন, কোনো লোক মিথ্যা কথা বলতে থাকলে, আল্লাহ তাকে মিথ্যাবাদীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। (সহিহ বুখারী হাদীসঃ ৬০,৯৪, সহিহ মুসলিম হাদিসঃ ২৬০৭) মিথ্যা কথা বলার কারণে, জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
    ৭.ওয়াদা ভঙ্গঃ ওয়াদা ভঙ্গ করা হারাম। কারণ ওয়াদা ভঙ্গ করলে ছোটখাটো কথা কাটাকাটি থেকে শুরু করে যুদ্ধ পর্যন্ত বেঁধে যায়।
    তাই আল্লাহ বলেন,
    أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَوْفُواْ بِالْعُقُودِ
    "হে ঈমানদারগণ, তোমরা কৃত চুক্তি পূরণ করো" (সূরা মায়েদা আয়াতঃ ১)
    আল্লাহ আরো বলেন,
    واوفوا بالعهد
    "তোমরা ওয়াদা পূরণ করো" (সূরা বনি ইসরাইল আয়াতঃ ১৭/৩৪)
    রাসুল (সাঃ) বলেন,
    "যে ব্যক্তির মধ্যে চারটি ত্রুটি থাকবে, সে পাক্কা মুনাফিক"। আর এর মধ্যে একটি হলো "সে ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে" সে ওয়াদা ভঙ্গ করার ফলে কিয়ামতে লাঞ্ছিত হতে হবে‌।
    ৮. খারাপ ধারণাঃ কোন মুমিনের প্রতি খারাপ ধারণা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। খারাপ ধারণার ফলে এক মুমিন ওপর মুমিন ভাইয়ের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। খারাপ ধারণার ফলে, অন্তত যে মুমিন ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তার অগোচরে গীবত সমালোচনায়, মিথ্যা, অপবাদ হওয়ার। একেতো কোনো মুমিন ভাইয়ের প্রতি খারাপ ধারণা তো করা যাবেনা এবং তার দোষ ত্রুটি সন্ধান করা যাবে না।
    আল্লাহ বলেন,
    أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ
    "হে ঈমানদারগণ, খুব অধিক ধারণা থেকে বেঁচে থাকে। কেননা কোন কোন ধারণা গুনাহ" (সূরা হুজুরাত আয়াতঃ ৪৯/১২)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা ধারণা সর্বাধিক বড় মিথ্যা কথা"(সহিহ বুখারী হাদীসঃ ৬০৬৬, সহিহ মুসলিম হাদীসঃ ২৫৬৩) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, "কারো জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির কথা কে, সে যা বুঝাতে চাচ্ছে, তা ভিন্ন অন্য কোনো অর্থ প্রকাশ করার অধিকার নেই, সাধারণ ভাবে সবাই যে অর্থ উদ্দেশ্য করে, সেভাবে প্রকাশ করা যাবে না। (মাজমুউল ফাতাওয়া ৭/৩৬)

    ৯.তাড়াহুড়া: মানুষ বড়ই তাড়াহুড়া প্রবণ। তার স্বভাবেই যেন তাড়াহুড়া রয়েছে। তাড়াহুড়া ফলে মানুষের ভুল হয় বেশি। আল্লাহ বলেন,
    خُلِقَ الْإِنسَانُ مِنْ عَجَلٍ
    "মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাড়াহুড়া প্রবণ করে" (সূরা আম্বিয়া আয়াতঃ ২১/৩৭)

    ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়ঃ

    ১.সালাতঃ ফিতনার সময় গুলোতে সালাতে ব্যাপক গাফিলতি দেখা যায়। দেখা যায় সে সময় মত নামাজ পড়ছে না। সালাতের ওয়াক্ত যখন শুরু হয় তারা ব্যস্ততাও ব্যাপক বেড়ে যায়। এর ফলে সে ফরজ সালাতের মাঝে মাঝে অন্য মনোশক থাকে। আর সুন্নত নামাজ গুলো তার ছুটে যায়। আর নফল তো পড়েই না। তাই আমাদের এই বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। যাতে নামাজের মধ্যে কোন প্রকার গাফিলতি দেখা না যায়। আর আমরা যখন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হব, তখন অবশ্যই সালাত এবং সবরের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
    আল্লাহ বলেন,
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
    "হে ঈমানদারগণ, তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো সবর এবং সালাত এর মাধ্যমে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন" (সূরা বাকারা আয়াতঃ ২/১৫৩)
    إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ
    "নিশ্চয়ই সালাত নির্লজ্জ ও অশোভনীয় কাজ হতে বিরত রাখে" (সূরা আনকাবূত আয়াতঃ ২৯/৪৫)
    وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
    "যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে" (সূরা মু'মিনুন আয়াতঃ ২৩/০৯)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে, যদি সালাত ঠিক থাকে, তবে বাকি আমলও ঠিক হবে। আর যদি সালাত ঠিক না থাকে, তবে বাকি আমল খারাপ হবে" (তারগীব হাদিসঃ ৯/২৮৫)
    রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হলো, "সবচেয়ে উত্তম আমল কি? তিনি বলেন, "ওয়াক্তের শুরুতে সালাত আদায় করা" (আবু দাউদ হাদিসঃ ৪২৬)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "বেহেস্তের চাবি সালাত,আর সালাতের চাবি হলো অজু" (মুসনাদে আহমদ)
    "যখন কোন বিষয় তাকে বিচলিত করে তুলতো তিনি সালাত আদায় করতেন" (আবু দাউদ হাদিসঃ ১২১৩)

    ২. সবর: সবরের অভিধানিক অর্থ আবদ্ধ করা ও সংযত করা। শরীয়ত নির্দেশিত পথ ও পন্থা উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে সবর বলে। এ হিসেবে সবর তিন প্রকারঃ
    ১.আল্লাহতালা যা কিছু করার আদেশ করেছেন, তা পালন করার উপর তথা আল্লাহর আনুগত্যের উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখা।
    ২.আল্লাহতালা যা কিছু নিষেধ করেছেন তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে আটকে রাখা ও সংযত করা।
    ৩.বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা।
    উপরোক্ত তিনটি প্রকার থেকে আমরা দেখতে পাই আমাদের বিভিন্ন কাজে সবরের পরিচয় অবশ্যই দিতে হবে। কারণ সবর ব্যতীত ইবাদত করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব না। আর যেকোন মুসিবতে মুমিন সবর করবে এটাই স্বাভাবিক।
    আল্লাহ বলেন
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اصْبِرُواْ
    "হে ঈমানদারগণ সবর অবলম্বন করো(আল ইমরান ৩/২০০)
    وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
    "যারা সবর অবলম্বন করে তাদেরকে সু-সংবাদ দাও" (সূরা বাকারা আয়াতঃ২/১৫৫),
    الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
    "যারা তাদের কোনো মুসিবত দেখা দিলেই বলে ওঠে আমরা সকলেই আল্লাহর এবং আমাদেরকে তার কাছে ফিরে যেতে হবে" (সূরা বাকারা আয়াতঃ ১৫৬)
    إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ
    "যারা সবর অবলম্বন করে, তাদেরকে ছওয়াব দেওয়া হবে অপরিমিত" (সূরা যুমারঃ ১০)
    وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
    "প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে, ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ" (সূরা শূরা আয়াতঃ ৪৩)
    أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
    "হে মুমিনগণ সবর এবং সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন" (২/১৫৩)
    হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলাম বলেন "প্রকৃত বীর সে নয়, যে অন্যকে ধরাশায়ী করে, প্রকৃত বীর সেই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে" (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম-৪৫)
    "মুমিনের ব্যাপারে বড় বিস্ময়কর, তার পক্ষে তার প্রতিটি বিষয়ে কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া এই বিশেষত্ব অন্য কারো নেই। তার যদি আনন্দদায়ক কিছু ঘটে, তখন সে শুকর আদায় করে, ফলে এটা তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার কোন দুঃখ কষ্ট দেখা দেয়, সবর করে, ফলে এটাও তার পক্ষে কল্যাণকর হয়"(সহীহ মুসলিম হাদীসঃ ২৭)
    ৩.সহনশীলতা: সহনশীলতা মানুষকে ধীরস্থিরতা দান করে। যার মাঝে সহনশীলতা নেই, সে অনেক কল্যাণ থেকে দূরে। কারণ যার সহনশীলতা আছে, সে পরম শত্রুকেও বন্ধু বানাতে পারে।
    আল্লাহ বলেন
    وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
    "তারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন" (সূরা আর ইমরান ৩/১৩৪)
    وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ

    "ভালো ও মন্দ সমান নয়। ভালো দিয়ে তুমি মন্দকে প্রতিহত কর। ফলে যার সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে তোমার পরম বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। আর এমন সুফল তার কপালে ঝুটে যে ধৈর্য ও সহনশীলতার অধিকারী এবং যে বিরাট সৌভাগ্যশালী" (সূরা সাজদাহ ৪১/৩৪-৩৫)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "এমন দুটি গুণ বা অভ্যাস তোমার মধ্যে আছে যা আল্লাহতালা পছন্দ করেন তা হলো সহনশীলতা ও স্থিরতা" (সহীহ মুসলিম হাদীসঃ ১৭২৪)
    ৪.তাকওয়া: تقواى শব্দটি উৎপত্তি وقاية থেকে। وقاية অর্থ কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর জিনিস হতে কোন কিছু রক্ষা করা। تقواى/তাকওয়া অর্থ কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর জিনিস হতে নিজেকে রক্ষা করা। শরীয়তের পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয় গুনাহের কাজ হতে বেঁচে থাকাকে।
    আবু ইয়াজিদ বিমতামী(বাইজিদ বোস্তামী) রহঃ বলেন, 'যখন কোন কাজ করা হবে, আল্লাহর জন্য এরই নাম তাকওয়া, অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকলে তাকওয়ার ওপর চলার সহজ, নয় তো ব্যাপারটা অত্যন্ত কঠিন'
    ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন,
    'আল্লাহর নির্দেশিত কাজ করা এবং তার নিষিদ্ধ কর্ম বর্জন করার নাম তাকওয়া' (মাজমুউল ফাতাওয়াঃ ৩/১২০)
    আবুস সাইদ রহঃ বলেন,
    'আখিরাতের ক্ষতি টেনে আনে, এমন প্রত্যেক বস্তু থেকে আত্মরক্ষা করার নাম তাকওয়া' (তাফসীর আবুস সাউদ ১/২৭)
    আল্লাহ বলেন,
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
    "হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য সঠিক কথা বল" (সূরা আহযাব আয়াতঃ ৩৩/৭০)
    فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
    "সুতরাং তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করে চলো" (সূরা তাগাবুন আয়াতঃ ১৬)
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ
    "হে মুমিনগণ! আল্লাহকে সেই ভাবে ভয় করো, যে ভাবে তাকে ভয় করা উচিত" (সূরা আল ইমরান আয়াতঃ ১০২)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে না হয় চুপ থাকে" (সহিহ মুসলিম হাদীসঃ ৪৭, সহিহ বুখারী হাদীসঃ ৬০৯)

    তাকওয়ার সফল ও উপকারিতাঃ
    ১.আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম
    ২.আমল কবুল হওয়ার মাধ্যম
    ৩.আজাব থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম
    ৪.আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম
    ৫.মুমিনদের ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যম
    ৬.আল্লাহর নিকট সম্মানিত হওয়ার মাধ্যম
    ৭.অন্তরে প্রশান্তির মাধ্যম

    ৪. তাওয়াক্কুলঃ তাওয়াক্কুল অর্থ অক্ষমতার প্রকাশ। আর পরিভাষিক অর্থে
    ইবনে উসাইমীন রহঃ বলেন, 'কোনো উপকার চাওয়া, কোন ক্ষতিকে দূরীভূত করার নিমিত্তে অন্তর দিয়ে আল্লাহর ওপর সত্যিকারের ভরসা ও এ সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশিত মাধ্যম গ্রহণের নাম তাওয়াক্কুল' (মাজমাউল ফতোয়াঃ ১/৬৩)
    আল্লাহ বলেন,
    وَعَلَى اللّهِ فَتَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
    "আর তোমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর কর, যদি তোমরা মুমিন হও" (সূরা আল মায়েদা আয়াত ৫/২৩)
    فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّكَ عَلَى الْحَقِّ الْمُبِينِ

    "তুমি আল্লাহর উপর ভরসা করো, নিশ্চয়ই তুমি সুস্পষ্ট সত্যপথে আছো" (সূরা নামল আয়াতঃ ৭৯) রাসূল (সাঃ) বলেন, "কারো নিকট হাত পাতলে সে দিতেও পারে আবার নিষেধ করতে পারে, এমনটা করা থেকে তোমাদের কারো কাঠ সংগ্রহ করে আঁটি বেঁধে সে কাঠ বহন করা অধিক উত্তম" (সহীহ বুখারী হাদীসঃ ২০৭৪) বান্দা যখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, কোন কাজ করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করে।
    ৬.সংযত জবানঃ ফিতনার সময় গুলোতে জবানকে অবশ্যই সংযত রাখতে হবে। কারণ জবান সংযত না থাকলে, যেকোনো সময় মুসিবতে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। ফিতনার জামানায় আজেবাজে কথা বেশি হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন,
    وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
    "তারা অহেতুক কথা থেকে বিরত থাকে" (সূরা মুমিনুন আয়াতঃ ২৩/৩)
    আল্লাহ বলেন,
    وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ
    "আর যখন কোন বেহুদা কথা শুনে, তখন উহা থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে" (সূরা কাসাস আয়াতঃ ২৮/৫৫)
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যে ব্যক্তি, আল্লাহ ও কেয়ামত দ্বীনের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন কল্যাণকর কথা বলে, অথবা চুপ থাকে" (সহিহ বুখারী হাদীসঃ ৬১৩৫, সহীহ মুসলিম হাদীসঃ ৪৭)
    "ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো, অর্থহীন কথা ও কাজ পরিত্যাগ করা" (তিরমিজি হাদীসঃ ২৩১৭) অহেতুক কথাবার্তায় লিপ্ত হলে দেখা যায়, হয়তো কারো গীবত হয়, না হয় কারো সমালোচনা, আর এইভাবে নিজের আমল বরবাদ হতে থাকে, তাই নিজেকে সংযত রাখতে হবে। আর কেউ যদি কোন মুমিন ভাই সম্পর্কে এমন কোন সংবাদ দেয়, যা অপছন্দনীয়, তাহলে তা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতে হবে। আল্লাহ বলেন,
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا
    "হে মুসলিমগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমার নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তাহা পরীক্ষা করে দেখবে" (সূরা হুজুরাত আয়াতঃ ৪৯/০৬)
    তাই ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
    ৭.দোয়া যিকিরঃ ফিৎনার জামানায় সময় খুব অপচয় হয়। সময়ের গুরুত্ব লোকজন বুঝতে পারে না। সে অহেতুক বিভিন্ন কাজ কর্মে লিপ্ত থাকে। ফিতনার সময় সব সময় জিকির করাটা সবচেয়ে উত্তম।
    রাসূল (সাঃ) বলেন, "অধিকাংশ মানুষ দুটি নেয়ামত সম্পর্কে গাফিল, তা হচ্ছে সুস্থতা এবং অবসর সময়" (সহীহ বুখারী)
    আল্লাহ বলেন,
    فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ
    "তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের কে স্মরণ করব" (সূরা বাকারা আয়াতঃ ২/১৫২)
    وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ
    "আর আল্লাহর যিকিরই সর্বশ্রেষ্ঠ "(সূরা আনকাবুত আয়াতঃ ২৯/৪৫)
    وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
    "তোমরা অধিকারবার আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে কৃতকার্য হতে পারো" (সূরা জুমা আয়াতঃ ৬২/১০)
    যে মুমিন অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করবে। কারণ দোয়া-যিকির হচ্ছে মুমিনের হাতিয়ার। এই হাতিয়ার ধারা শয়তান থেকে বাচা যায়। আর আল্লাহর মুখাপেক্ষিতা সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়। আমাদের মূল্যবান সময়গুলো বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত যিকির দ্বারা ব্যয় করতে পারি। এর জন্য সহায়ক কিতাব হিসনুল মুসলিম,রাহে বেলায়াত, ১০০০ সুন্নাহ ।
    ৮. জামাতবদ্ধ থাকাঃ ফিতনার সময় গুলোতে লোকজন নিজের মতো করে চলতে চাই। সবাই নিজের মত নিয়ে চলতে থাকে। ফিতনার সময় বড় দাবি হল জামাতবদ্ধ থাকা।
    আল্লাহ তা'আলা বলেন,
    وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا
    "তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো" (সূরা আল ইমরান আয়াতঃ ৩/১০৩)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    "জামাতের সাথে রয়েছে আল্লাহর হাত(সাহায্য,রহমত)" শয়তান ঐ লোককে আগে ধোকা দেয় যে জামাত থেকে দূরে থাকে। আর ফিতনার সময় গূলোতে নেককার লোকদের সাথে থাকলে ফেতনা থেকে বাঁচা যায়। কারণ ফিতনায় পতিত হলে নেককার লোক গুলো তাকে সহযোগিতা করে।
    তাই আল্লাহ তা'আলা বলেন,
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
    "হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সদেকিনদের সঙ্গী হও" (সূরা তাওবা ৯/১১৯)

    ৯.জিহাদঃ ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই জিহাদ করতে হবে। কারণ জিহাদের মাধ্যমে ফেতনা দূর করা সম্ভব। আল্লাহ বলেন,
    وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ
    "আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে থাকবে, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয়" (সূরা বাকারা আয়াতঃ ২/১৯৩)
    ১০.তাওবাঃ তওবা এর অভিধানিক অর্থ ফেরা ও অভিমুখী হওয়া। শরীয়তের পরিভাষায়, পাপ কর্ম থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলে। তওবার শর্ত তিনটিঃ
    ১.গুনাহের কাজটি ছেড়ে দেয়া
    ২.গুনাহের কাজটির জন্য অনুতপ্ত হওয়া
    ৩.আর কখনো তাতে লিপ্ত না হওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া।
    আর যদি মানুষের কোন হক থাকে তাহলে
    ৪.সেই হক এর ব্যাপারে পাওনাদারের পক্ষ হতে দায়মুক্ত হওয়া। অর্থাৎ তার হক ফিরিয়ে দেওয়া।
    আল্লাহ বলেন,
    وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
    "হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর"(সূরা নূর আয়াতঃ ২৪/৩১)
    وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ
    "তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, ও তাহার দিকে প্রত্যাবর্তন করো" (সূরা হুদ ১১/০৩)
    أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا

    "হে মুমিনগণ আল্লাহর কাছে খাটি তওবা করো" (সূরা তাহরীম ০৮)
    রাসূল (সাঃ) বলেন,
    “হে লোকসকল তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করা ও তার কাছে ক্ষমা চাও, আমি রোজ ১০০ বার তওবা করি” (সহীহ মুসলিম হাদীসঃ ২৭০২)
    যখন আমরা কোনো অন্যায় করে ফেলি, তখন বিলম্ব না করে সাথে সাথে ইস্তেগফার তওবা করা উচিত। তাহলে আমরা ফিতনা থেকে বাঁচতে পারব।

    -------------------------


  • #2
    অনেক মূল্যবান একটি পোস্ট আমি মনে করি পোস্টটি তৈরি করতে প্রচুর মেধার প্রয়োজন হয়েছে।
    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment

    Working...
    X