Announcement

Collapse
No announcement yet.

মুহতারাম উস্তাদের দিকনির্দেশনা ও কিছু অভিব্যক্তি

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মুহতারাম উস্তাদের দিকনির্দেশনা ও কিছু অভিব্যক্তি

    মুহতারাম উস্তাদের দিকনির্দেশনা ও কিছু অভিব্যক্তি




    ##অভিমত

    মুহতারাম মুহাদ্দিস সাহেব বুখারীর দরস দিচ্ছিলেন।❝ কিতাবুল ঈমান ❞পড়াচ্ছেন। রাত ১১:৩০। আলোচনা হচ্ছিল মদ নিয়ে তখন তিনি কিছু সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরলেন এভাবেঃ"সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে প্রাণের নবী মুহাম্মদে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রদত্ত / কর্তৃক বিধান স্পষ্ট রূপে বর্ণনা করেছিলেন যে, মদ হারাম কিন্তু আজ এ দেশের সংবিধানে মদের জন্য বিল পাস করা হয়। (দুঃখ প্রকাশ করে বললেন) কতটা অধঃপতন!!! কতটা জাহিল এ সমাজ!!!
    অতঃপর হযরত ছাত্রদের লক্ষ্য করে কিছু কর্মসূচি পেশ করলেন এবং বললেনঃ❝ তোমরা কি চাও না এই জাহেলী সমাজ ঠিক করতে?? এই অধঃপতন রুখতে??? ছাত্ররা বললঃ জি হ্যাঁ।

    প্রথম পয়েন্টঃ
    অতঃপর হযরত বললেন তাহলে মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং মনে রেখে বাস্তবায়ন করিও। সমাজের এই অধঃপতন ঠেকাতে তোমাকে তিনটি কাজ করতে হবে। 1—«মুসলিম সংখ্যা বাড়াও» মুসলিম সংখ্যা বাড়ালে সমাজ ঠিক হয়ে যাবে এবং এই সমাজ হবে ইসলামী সমাজ।
    প্রমাণ দেখো নবীজির জীবনীতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ইসলাম কায়েম করতে পারেননি কারণ তখন মুসলিম সংখ্যা কম ছিল। অতঃপর যখন মুসলিম সংখ্যা বাড়ালেন তখন ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।
    2—«কুরআন শিখাও »
    3—« নামাজ শিখাও »

    এই তিনকাজ যদি তোমরা করতে পারো তাহলেই সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। এই জাহিলি সমাজই পরিণত হবে ইসলামী সমাজে।
    দ্বিতীয় পয়েন্টঃ
    অতঃপর তিনি আরো বললেন এটাই হচ্ছে আমাদের আকাবিরদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ। আর এটা নির্দ্বিধায় মেনে নাও চাই তোমার বুঝে আসুক বা না আসুক। এটা বিবেচনা বা রিচার্জ করতে যেও না। আকাবিররা বলেছেন ব্যাস,,,,, মেনে নাও।
    দলিল স্বরূপ উল্লেখ করলেনঃ সাহাবায়ে কেরাম নবীজির কথা নির্দ্বিধায় মেনে নিতেন বুঝে না আসলেও। কখনো যদি বুঝে না আসতো তখন বলতেনالله ورسوله اعلم( আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন) সুতরাং তোমাদেরও এমন হওয়া চাই তোমাদের আকাবিররা যা বলে তাই করতে হবে। চাই তোমার বুঝে আসুক বা না আসুক কারণ উনারাই হচ্ছেন ভাল বুঝনে ওয়ালা।

    ##মূল্যায়ন

    প্রথম পয়েন্টঃ
    সমাজের এই অধঃপতন অবশ্যই দুঃখজনক কারণ এই সমাজ পরিচালিত হয় কোরআনের পরিবর্তে মানব রচিত কুফরি সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে। এবং এর সংবিধানে লেখা রয়েছে (সারমর্ম)কুরআনের বিধি-বিধান যতখানি সাংঘর্ষিক হবে কুফরি সমাজ ব্যবস্থার সাথে ততখানি বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে। সুতরাং এই কুফরি সমাজ ব্যবস্থা কে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিণত করতে হলে হুজুর যে কর্মসূচি গুলো দিয়েছেন তা যদিও প্রশংসনীয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে একটা কুপে যখন মৃত প্রাণী পড়ে। তখন কুপ পবিত্র করতে হলে যেমন আগে মৃত প্রাণী ফেলে তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি বের করে ফেললেই কুপ পবিত্র হয়ে যাবে ঠিক তদ্রুপ এই কুফরী সমাজকে ইসলামী সমাজে পরিণত করতে হলে আগে এই কুফরি সমাজ ব্যবস্থাকে পরাজিত করতে হবে এবং এই সমাজব্যবস্থাকে জমিন থেকে কিতালের মাধ্যমে উৎখাত করতে হবে। কূপের মধ্যে মৃত প্রাণী জিইয়ে রেখে হাজারো বালতি পানি বের করলে যেমন কুপ পবিত্র করা সম্ভব হবে না ঠিক তদ্রূপ সমাজে কুফুরি ব্যবস্থা জিইয়ে রেখে মুসলিম সংখ্যা বাড়িয়ে কোরআন আর নামাজ শিখিয়ে এই কুফরি সমাজকে ইসলামী সমাজের পরিণত করা সম্ভব হবে না।
    পর কথা হুজুর যে প্রমাণ পেশ করলেন তা একদমই অযৌক্তিক মনে হয়। কারণ "সংখ্যা কম থাকার দরুন ইসলাম কায়েম সম্ভব হয়নি অতঃপর হিজরতের পর সংখ্যা বাড়ার কারণে ইসলাম কায়েম হয়েছে "এটা একটা গলদ কথা /ভুল কথা। কেননা মক্কায় মুসলিমরা ছিলেন দুর্বল। নির্যাতন সহ্য করতেন আর ধৈর্য ধারণ করতেন। ঘুরে দাঁড়ানোর নির্দেশ ছিলনা তখন। আর তখন ক্ষমতায় ও ছিল কুফফাররা। সমাজ ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণে ছিল কাফেরদের। অতঃপর আল্লার নির্দেশে হিজরত করার পর যখন মদিনায় গিয়ে আল্লাহর নির্দেশে হাতে অস্ত্র উঠিয়ে নিলেন এবং কুফর ও কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলেন তখন আল্লাহর সাহায্যে সেই ক্ষমতাধর কাফেরদেরকে পরাজিত করে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইসলামী সমাজ ও ইসলামী খেলাফা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাথে সাথে মুমিনদেরকে কোরআন শেখানো আর নামাজ শেখানো তো অব্যাহতই ছিল।
    এমন তো করেননি যে শুধু মুসলিম সংখ্যা বাড়িয়েছেন আর নামাজ শিখিয়েছেন আর একা একাই সমাজটা ইসলামী সমাজে পরিণত হয়ে গিয়েছে আর ইসলামী খেলাফাহও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে।
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের অনেক পূর্বেই মুসআব বিন উমাইর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মত দায়ীকে প্রেরণ করেছিলেন মদিনার মাটিতে। তিনি সেখানে গিয়ে দাওয়া প্রদান করেছিলেন। কিছু আনসার তৈরি করেছিলেন। অতঃপর হিজরতের নির্দেশের পরে সেই আনসার গুলোকে ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ইচ্ছায় মদিনায় রাষ্ট্র কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুধু সংখ্যা বাড়ানো, কোরআন শিখানো, আর নামাজ শিখানো তে ক্ষ্যন্ত থাকেন নি।
    এমনকি মুসলিম সংখ্যা বাড়ানোর এক বিশেষ পদ্ধতি কুরআনে কারীমে আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন বলে দিয়েছেন❝ঃاذا جاء نصر الله و الفتح ورايت الناس يدخلون في دين الله افواجا ❞যখন আল্লাহর সাহায্য ও নুসরাত আসবে কিতালের মাধ্যমে। তখন দেখবে দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করবে। মুসলিমদের সংখ্যা তখন স্রোতের ন্যায় বাড়তে থাকবে। অতএব কুফরি সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কিতাল বাদ দিয়ে শুধু খন্ডিত চর্চার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ সফলতা কখনোই আসতে পারে না। ইসলামের খন্ডিত চর্চার দ্বারা একটা কুফুরি সমাজ কখনো ই পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজে পরিণত হতে পারে না।
    আরেকটি বিষয়ে মনে রাখা দরকারঃ মুসলিমদের সংখ্যার আধিক্য পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো মুসলিমদের সফলতা এনে দিতে পারেনি বরং সংখ্যার আধিক্যতাই লাঞ্ছনা-গঞ্ছনার এক বিশেষ মাধ্যম। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ জামানার ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করতে গিয়ে বলেছেন কুফররা মুসলিমদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে একে অপরকে এমন ভাবে ডাকতে থাকবে যেমন খাবারের দস্তরখানায় একে অপরকে ডাকতে থাকে তখন এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসুল আল্লাহ তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না,,,, বরং তোমরা সেদিন সংখ্যায় হবে অনেক কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মত হবে। আসলে এই হাদিসের দিকে দৃষ্টি দিলেও আমরা বুঝতে পারি মুসলিম সংখ্যা বাড়ানোর তুলনায় একজন খাটি মুসলিম সৈনিক তৈরি করার গুরুত্ব কতটুকু।

    দ্বিতীয় পয়েন্টঃ
    দ্বিতীয় আরেকটি পয়েন্টে হুজুর আলোচনা করেছেন বলেছেন এ কর্মসূচি আকাবিরদের অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ এবং তাদের নির্দেশনা মোতাবেক। সুতরাং এটা বুঝে আসুক বা না আসুক মেনে নাও। এখন প্রশ্ন হল এখানে আকাবির বলতে কোন আকাবির উদ্দেশ্য এখানে কি শুধু ওই সমস্ত আকাবির উদ্দেশ্য যারা কাফেরদের কৌশল সম্পর্কে উদাসীন? এবং ওই সমস্ত আকাবির উদ্দেশ্য যারা মৃত্যুর ভয়ে কাফেরদের প্রতি কঠোরতার পরিবর্তে নমনীয়তার মাযহাব গ্রহণ করেছেন? যদি এমনটাই হয় তাহলে তাদের এ কর্মসূচি কখনোই সফলতার মুখ দেখবে না। কারণ কুফফারদের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়ে আর সন্ধি করে কখনো সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ তারা মুসলিমদেরকে সফল হতে দিবেনা / কাফেররা মুসলিমদের প্রতি কখনোই সন্তুষ্ট হবে না। যতক্ষণ না মুসলিমরা পূর্ণরূপে তাদের অনুসরণ করে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ لن ترضي عنك اليهود ولا النصاري حتى تتبع ملتهم. ইহুদী এবং নাসারারা তোমার প্রতি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের মিল্লাতের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হও।
    সুতরাং জামানার হালাত সম্পর্কে উদাসীন আকাবিরদের দাবি করা অভিজ্ঞতা আমরা নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারি না। বরং আমরা সচেতন আকাবিরদের বেঁধে দেওয়া কর্মসূচিকে মাথা পেতে মেনে নেই।
    হুজুর উপরোক্ত কথার দলিল স্বরূপ যে কথাটা উল্লেখ করেছেন সেটা হলঃ❝ রসুলের নির্দেশনা সাহাবায়ে কেরাম নির্দ্বিধায় মেনে নিতেন। বুঝে না আসলে বলতেনঃ আল্লাহু ওয়ারাসুলূহু'-আলম। (আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন) সুতরাং তোমরাও আকাবিরদের নির্দেশনা নির্দ্বিধায় মেনে নাও বুঝে না আসলে মনে করবা আকাবিররাই ভালো বোঝেন।❞

    ## মূল্যায়ন

    সাহাবায়ে কেরাম রাসুলের নির্দেশনা নির্দ্বিধায় মেনে নিতেন। কারণ সবই আল্লাহর বাতলে দেওয়া নির্দেশনা ছিল আর "আল্লাহু ওয়ারাসুলূহু' আলাম "এ কথা বলতেন কারণ হলো তখন সাহাবারা জানতেন না যে কি হবে এখানে সমাধান। তাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপর হাওলা করে দিতেন। কিন্তু ইসলামের বিধি-বিধান মোকাম্মাল হওয়ার পরে। সমাধান সমূহ চোখের সামনে স্পষ্ট থাকার পরেও কেন আমরা কুফফারদের কৌশল সম্পর্কে উদাসীন আকাবিরদের দাবি করা অভিজ্ঞতার আলোকে হাল জামানার সমস্যার সমাধান নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারি?? কক্ষনো নয় বরং আমরা ওই কর্মসূচি আর কর্ম পদ্ধতি গ্রহণ করব যা গ্রহণ করেছিলেন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবারা। আমরা জামানার ওই সমস্ত আকাবিরদের হাল জামানার সমস্যার বেধে দেওয়া সমাধান কে গ্রহণ করব যারা একদিকে যেমন এলমে ওহীর গভীর জ্ঞানে নিমগ্ন। অপরদিকে জামানার কাফেরদের সমস্ত চক্রান্ত সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ এবং যাদের রয়েছে ময়দান নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা।
    পরিশেষে দোয়া করি আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কাফেরদের ধোকা বোঝার তৌফিক দান করুন আমীন এবং আমাদের আকাবির হযরতদের ও নির্ভীক কুফরদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার তৌফিক দান করুন আমীন


    কিতাল ই হিকমাহ
    শাইখুল হাদিস আবু ইমরান হাফিঃ

  • #2
    মানুষ যেহেতু তার উদ্দেশ্য পূরন করার জন্য অপরকে হত্যা করতে পারে তাই যাদের মাঝে এই ধরনের মন মানসিকতা রয়েছে তাদেরকে প্রতিরোধ করে কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু আল্লাহর নবী ছিলেন তাই তিনি আল্লাহর সরাসরি আদেশ নিষেধের মাধ্যমে চলতেন । আর আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর অন্ধবিশ্বাস স্থাপন করা যায়।
    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment

    Working...
    X