শায়খ ওসামা বিন লাদেন(রহ)! যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত সন্ত্রাসীদের মধ্যে এককালের মোস্ট ওয়ান্টেড ও তানজিম আল-কায়দার প্রতিষ্ঠাতা।
শায়খ ওসামার এক বার্তাবাহক আবু মুহাম্মদ আল কুয়েতি(রহ) এর গতিবিধির উপর নজরদারি করার মাধ্যমে CIA এর গোয়েন্দারা পাকিস্তানের অ্যাবোটোবাদের এক বাড়িতে শায়খের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। পরবর্তীতে পাকিস্তানের অনুমতি ছাড়াই রাতের অন্ধকারে মার্কিন ন্যাভি সিলের একটি বিশেষ টিমের সদস্যরা বাড়িটিতে অভিযান চালায়। এবং বিন লাদেন (রহ) সহ ৫ জনকে শহীদ করে।
সো ভাইয়ারা, এবার তাহলে নড়েচড়ে বসুন আর হাতের কাছে পানি রাখুন। কারণ সামনের দুয়েক মিনিট আপনি একটি ভয়ঙ্কর জ্বর-তোলা শাহাদাত কাহিনীর সঙ্গী হচ্ছেন। পাকিস্তানের অ্যাবোটোবাদ শহরে তখন রাত ১১টা বাজে। শায়খ ওসামার গোটা পরিবার তখন শুয়ে পড়েছিলো। পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মধ্যে আধা ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান। জালালাবাদ শহরে তখন বাজে সাড়ে দশটা।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ন্যাভি সিল দলের ২৩ জন সদস্য দুটো ব্ল্যাক হক (black hawk) হেলিকপ্টারে চড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো। ওই দলে পাকিস্তানি বংশদ্ভূত এক মোনাফিক দোভাষীও ছিলো। কায়রো নামের এক কুকুরও সঙ্গে ছিলো। তাকে সিল টিমের অন্য সদস্যদের মতো বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ানো হয়েছিলো।
আধা ঘন্টা পরে,,,
হঠাৎ আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় রাত ১১ টায় দুটো ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার জালালাবাদ বিমানঘাঁটি থেকে পূর্ব দিকে পাকিস্তানের সীমানার দিকে রওনা হয়ে যায়। মাটি থেকে সামান্য কয়েক ফুট উপর দিয়ে প্রচন্ড গতিতে হেলিকপ্টার দুটি উড়ছিল। পাকিস্তানের সীমানা পেরোনোর পরে পেশোয়ার থেকে উত্তরের দিকে ঘুরে যায় হেলিকপ্টার দুটো।তাদের অ্যাবোটোবাদে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল প্রায় দেড় ঘন্টা।
ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার দুটো উড়ে যাওয়ার ৪৫ মিনিট পরে ওই রানওয়ে থেকেই ৪টি চিনুক হেলিকপ্টার উড়েছিলো। ২টি হেলিকপ্টার পাকিস্তানের সীমানা পাড় হয়ে গিয়েছিলো। আর দুটো সীমানার পাশেই অবতরণ করেছিলো। এই ৪টি হেলিকপ্টার পাঠানোর সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছিলো একেবারে শেষ মুহূর্তে। কারণ প্রেসিডেন্ট ওবামা চেয়েছিলো যে, গোটা অপারেশনটা যদি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী না হয় তাহলেও যাতে আমেরিকান সৈনিকরা লড়াই করতে করতে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ঢুকে পরতে পারে। ঠিক করা হয়েছিলো এই ৪টি হেলিকপ্টার তখনই ব্যবহার করা হবে যদি অপারেশনটা বড় কোনো গন্ডগোলের মধ্যে পরে যায়। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো অ্যাবোটোবাদে ঢুকেছিলো।
কিন্তু যখনই পাইলট শায়খ ওসামা (রহ) এর বাসভবনের সামনে অবতরণের চেষ্টা করেছিলো তখনই নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে সে। খুব দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসছিলো হেলিকপ্টারটা। আসলে সিল টিম যখন আমেরিকায় এই মিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত কম্পাউন্ডের চারদিকের দেয়াল লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু শায়খ বিন লাদেনের (রহ) এর আসল বাড়ির চারদিকের দেয়ালটা ছিলো কংক্রিটের। এইজন্য হেলিকপ্টারের লেজটা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায় আর ঘুরন্ত ব্লেডটা ভেঙে যায়। পাইলট কায়দা করে হেলিকপ্টারটি নিচে নামিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু ওটা আর ওড়ার অবস্থায় ছিলো না। তবে তারা কেউ মরেনি।
ওদিকে গোটা দৃশ্যটা তখন হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে বসে দেখছিলো সবাই। বিন লাদেন (রহ) এর বাসভবনের উপরে ঘুরতে থাকা একটা ড্রোন গোটা ঘটনার ছবি হোয়াইট হাউসে পাঠাচ্ছিলো। একটা হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার দৃশ্য অন্য ব্ল্যাক হকের পাইলট উপর থেকে দেখেছিল।
plan A অনুযায়ী দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটি শায়খের শোয়ার ঘরের ছাদের উপরে ঘোরার কথা ছিলো। সেখান থেকে দড়ি বেয়ে কয়েকজন সিল নিচে নেমে ঘুমিয়ে থাকা শায়খকে আচমকা ধরে ফেলতে পারবে। কিন্তু নিচের অবস্থা দেখে পাইলট plan B বেছে নিল। হেলিকপ্টারটিকে তিনি উঠোনের বাইরে ক্ষেতের মধ্যে নামালেন। উঠোনের চারদিকে নজর রাখার জন্য সিল সদস্যদের একটা ছোট দল, দোভাষী আর কায়রো নামের কুকুরটা পাহারায় ছিলো। কুকুরটিকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিলো, যাতে সে বাহিরের কোনো লোককে উঠোনের কাছাকাছি যেতে না দেয়।
ওদিকে বাড়ির দোতলায় শায়েখ তার শোয়ার ঘরে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থারই ফাঁদে পরে গিয়েছিলেন। ঘরের ভেতরটা যাতে বাইরের থেকে দেখা না যায়, সেজন্য জানালা ছিলো না বললেই চলে। কিন্তু এই ব্যবস্থা করতে গিয়ে বাইরে কী হচ্ছে সেটা তিনি নিজেও দেখতে পেতেন না। সিল টিমের সদস্যরা দোতলায় ওঠার সময়ই শায়খের ২৩ বছর বয়সী ছেলে খালিদকে দেখতে পায়। সিড়িতেই গুলি করে শহীদ করে দেয় তাকে।
শাইখ উসামার বার্তাবাহক কুয়েতি(রহ) তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, তাদের দিকে গুলি করেন। ক্রুসেডাররা তাকেও শহীদ করে দেয়। শায়খের শোয়ার ঘরে একটা তাকের ওপরে কয়েকটা একে-৪৭ ও মাকারোভ পিস্তল রাখা ছিলো। কিন্তু উসামা বিন লাদেন (রহ) সেদিকে না গিয়ে আগে লোহার দরজা খুলে দেখতে চেষ্টা করেছিলেন যে বাইরে কিসের শোরগোল হচ্ছে। একজন সিল সদস্য দেখে ফেললো শায়খকে। সিড়ি বেয়ে উঠে সে শায়খের দিকে ধাওয়া করল। মুহূর্তের মধ্যে শায়খ ঘুরে গিয়েছিলেন কিন্তু তখনই একটি বড় ভুল করেন তিনি। লোহার দরজাটা বন্ধ করেন নি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই সিল সদস্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। শায়খের স্ত্রী আমাল আরবি ভাষায় চিৎকার করে কিছু একটা বলে স্বামীর সামনে দাড়িয়ে পড়েন। আরেকজন সিল সদস্য আমালের গোড়ালিতে গুলি করে। বিন লাদেন কোনো প্রতিরোধ করতে পারেন নি। একজন সিল সদস্য তার উপর ডাবল ডেপ্ট শট চালায়। বিন লাদেন (রহ) এর বুক আর বাম চোখে গুলি লাগে।
তবে আমেরিকার প্রশাসন মেনে নিয়েছিলো যে, যদি শায়খ প্রথমেই আত্মসমর্পণ করতেন তবে তার উপর গুলি চালানো হতো না।
ন্যাভি সিল ক্রুসেডাররা সাথে সাথে রেডিও করলো,
'For god and country,
Geronimo,
Geronimo,
Geronimo'
অপারেশন সফল হলে এই কোডই ব্যবহার করার কথা ছিলো। সিল টিমের সদস্যরা বিন লাদেন (রহ) এর নিথর দেহ সিড়ি দিয়ে টেনে-হিচড়ে নিচে নামিয়ে আনে। গোটা সিড়িতে রক্ত পরছিলো। বাকি সিল কমান্ডোরা বিন লাদেন (রহ) এর বাসভবনের কম্পিউটার, মোবাইল ফোন আর হার্ডডিস্কগুলো একত্র করছিলো। যাতে সেগুলো পরীক্ষা করে আল-কায়দার কার্যপ্রণালী, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এসব জানা যায়। শায়খের মৃতদেহটা হেলিকপ্টারে শুইয়ে রাখা হয়েছিলো। চেহারা সনাক্ত করতে পারে এমন দুজন বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটনে অপেক্ষা করছিলো। পুরনো ছবির সঙ্গে তার চেহারাটা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো।
প্রেসিডেন্ট ওবামা পরে বলেছিলো, "লাদেনের ঘরে যে সময়টা সিল কমান্ডোরা কাটিয়ে ছিলো, ওটাই তার জীবনের দীর্ঘতম ৪০মিনিট ছিলো।" ওদিকে সিল টিমের একটা কাজ তখনো বাকি ছিলো। ভেঙে পরা হেলিকপ্টারটিকে নষ্ট করে দিতে হবে। যাতে পাকিস্তানিরা ওটাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ধরতে না পারে। একই সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে সুরক্ষিত অবস্থায় সেই দেশের সীমানা পাড় হওয়াটা জরুরী। পাকিস্তান অবশ্য দুটো F16 বিমান পাঠিয়েছিলো হেলিকপ্টারগুলোকে ধাওয়া করার জন্য। কিন্তু মাইকেল লিটড জানত সেগুলো খুব একটা কিছু করতে পারবে না। কারণ পাকিস্তানের পাইলটদের রাতে বিমান চালানোর খুব একটা অভ্যাস নেই।
হেলিকপ্টারগুলো ফেরার জন্য জালালাবাদের দিকে সোজা পথটাই ধরেছিল। গতিও আগের বারের চেয়ে বেশি ছিলো। তখন প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘটনার ভিডিওগুলোর দিকে নজর রাখছিলো। "আমাদের হেলিকপ্টারগুলো পাকিস্তানের সীমানা পাড় হলেই যেনো আমাকে জানানো হয়।" বলছিলো প্রেসিডেন্ট ওবামা।
স্থানীয় সময় রাত ২টা,,,
আমেরিকার সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময়,,,
জালালাবাদ বিমানঘাঁটিতে হেলিকপ্টারগুলো ফিরে আসে। আর গোটা অপারেশনটাতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। শাইখের দেহ নিয়ে তারা চলে যায় এবং পিছনে পড়ে থাকে রক্ত আর ধ্বংসস্তূপ।
শায়খ ওসামার এক বার্তাবাহক আবু মুহাম্মদ আল কুয়েতি(রহ) এর গতিবিধির উপর নজরদারি করার মাধ্যমে CIA এর গোয়েন্দারা পাকিস্তানের অ্যাবোটোবাদের এক বাড়িতে শায়খের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। পরবর্তীতে পাকিস্তানের অনুমতি ছাড়াই রাতের অন্ধকারে মার্কিন ন্যাভি সিলের একটি বিশেষ টিমের সদস্যরা বাড়িটিতে অভিযান চালায়। এবং বিন লাদেন (রহ) সহ ৫ জনকে শহীদ করে।
সো ভাইয়ারা, এবার তাহলে নড়েচড়ে বসুন আর হাতের কাছে পানি রাখুন। কারণ সামনের দুয়েক মিনিট আপনি একটি ভয়ঙ্কর জ্বর-তোলা শাহাদাত কাহিনীর সঙ্গী হচ্ছেন। পাকিস্তানের অ্যাবোটোবাদ শহরে তখন রাত ১১টা বাজে। শায়খ ওসামার গোটা পরিবার তখন শুয়ে পড়েছিলো। পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মধ্যে আধা ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান। জালালাবাদ শহরে তখন বাজে সাড়ে দশটা।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ন্যাভি সিল দলের ২৩ জন সদস্য দুটো ব্ল্যাক হক (black hawk) হেলিকপ্টারে চড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো। ওই দলে পাকিস্তানি বংশদ্ভূত এক মোনাফিক দোভাষীও ছিলো। কায়রো নামের এক কুকুরও সঙ্গে ছিলো। তাকে সিল টিমের অন্য সদস্যদের মতো বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ানো হয়েছিলো।
আধা ঘন্টা পরে,,,
হঠাৎ আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় রাত ১১ টায় দুটো ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার জালালাবাদ বিমানঘাঁটি থেকে পূর্ব দিকে পাকিস্তানের সীমানার দিকে রওনা হয়ে যায়। মাটি থেকে সামান্য কয়েক ফুট উপর দিয়ে প্রচন্ড গতিতে হেলিকপ্টার দুটি উড়ছিল। পাকিস্তানের সীমানা পেরোনোর পরে পেশোয়ার থেকে উত্তরের দিকে ঘুরে যায় হেলিকপ্টার দুটো।তাদের অ্যাবোটোবাদে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল প্রায় দেড় ঘন্টা।
ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার দুটো উড়ে যাওয়ার ৪৫ মিনিট পরে ওই রানওয়ে থেকেই ৪টি চিনুক হেলিকপ্টার উড়েছিলো। ২টি হেলিকপ্টার পাকিস্তানের সীমানা পাড় হয়ে গিয়েছিলো। আর দুটো সীমানার পাশেই অবতরণ করেছিলো। এই ৪টি হেলিকপ্টার পাঠানোর সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছিলো একেবারে শেষ মুহূর্তে। কারণ প্রেসিডেন্ট ওবামা চেয়েছিলো যে, গোটা অপারেশনটা যদি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী না হয় তাহলেও যাতে আমেরিকান সৈনিকরা লড়াই করতে করতে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ঢুকে পরতে পারে। ঠিক করা হয়েছিলো এই ৪টি হেলিকপ্টার তখনই ব্যবহার করা হবে যদি অপারেশনটা বড় কোনো গন্ডগোলের মধ্যে পরে যায়। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো অ্যাবোটোবাদে ঢুকেছিলো।
কিন্তু যখনই পাইলট শায়খ ওসামা (রহ) এর বাসভবনের সামনে অবতরণের চেষ্টা করেছিলো তখনই নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে সে। খুব দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসছিলো হেলিকপ্টারটা। আসলে সিল টিম যখন আমেরিকায় এই মিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত কম্পাউন্ডের চারদিকের দেয়াল লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু শায়খ বিন লাদেনের (রহ) এর আসল বাড়ির চারদিকের দেয়ালটা ছিলো কংক্রিটের। এইজন্য হেলিকপ্টারের লেজটা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায় আর ঘুরন্ত ব্লেডটা ভেঙে যায়। পাইলট কায়দা করে হেলিকপ্টারটি নিচে নামিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু ওটা আর ওড়ার অবস্থায় ছিলো না। তবে তারা কেউ মরেনি।
ওদিকে গোটা দৃশ্যটা তখন হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে বসে দেখছিলো সবাই। বিন লাদেন (রহ) এর বাসভবনের উপরে ঘুরতে থাকা একটা ড্রোন গোটা ঘটনার ছবি হোয়াইট হাউসে পাঠাচ্ছিলো। একটা হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার দৃশ্য অন্য ব্ল্যাক হকের পাইলট উপর থেকে দেখেছিল।
plan A অনুযায়ী দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটি শায়খের শোয়ার ঘরের ছাদের উপরে ঘোরার কথা ছিলো। সেখান থেকে দড়ি বেয়ে কয়েকজন সিল নিচে নেমে ঘুমিয়ে থাকা শায়খকে আচমকা ধরে ফেলতে পারবে। কিন্তু নিচের অবস্থা দেখে পাইলট plan B বেছে নিল। হেলিকপ্টারটিকে তিনি উঠোনের বাইরে ক্ষেতের মধ্যে নামালেন। উঠোনের চারদিকে নজর রাখার জন্য সিল সদস্যদের একটা ছোট দল, দোভাষী আর কায়রো নামের কুকুরটা পাহারায় ছিলো। কুকুরটিকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিলো, যাতে সে বাহিরের কোনো লোককে উঠোনের কাছাকাছি যেতে না দেয়।
ওদিকে বাড়ির দোতলায় শায়েখ তার শোয়ার ঘরে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থারই ফাঁদে পরে গিয়েছিলেন। ঘরের ভেতরটা যাতে বাইরের থেকে দেখা না যায়, সেজন্য জানালা ছিলো না বললেই চলে। কিন্তু এই ব্যবস্থা করতে গিয়ে বাইরে কী হচ্ছে সেটা তিনি নিজেও দেখতে পেতেন না। সিল টিমের সদস্যরা দোতলায় ওঠার সময়ই শায়খের ২৩ বছর বয়সী ছেলে খালিদকে দেখতে পায়। সিড়িতেই গুলি করে শহীদ করে দেয় তাকে।
শাইখ উসামার বার্তাবাহক কুয়েতি(রহ) তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, তাদের দিকে গুলি করেন। ক্রুসেডাররা তাকেও শহীদ করে দেয়। শায়খের শোয়ার ঘরে একটা তাকের ওপরে কয়েকটা একে-৪৭ ও মাকারোভ পিস্তল রাখা ছিলো। কিন্তু উসামা বিন লাদেন (রহ) সেদিকে না গিয়ে আগে লোহার দরজা খুলে দেখতে চেষ্টা করেছিলেন যে বাইরে কিসের শোরগোল হচ্ছে। একজন সিল সদস্য দেখে ফেললো শায়খকে। সিড়ি বেয়ে উঠে সে শায়খের দিকে ধাওয়া করল। মুহূর্তের মধ্যে শায়খ ঘুরে গিয়েছিলেন কিন্তু তখনই একটি বড় ভুল করেন তিনি। লোহার দরজাটা বন্ধ করেন নি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই সিল সদস্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। শায়খের স্ত্রী আমাল আরবি ভাষায় চিৎকার করে কিছু একটা বলে স্বামীর সামনে দাড়িয়ে পড়েন। আরেকজন সিল সদস্য আমালের গোড়ালিতে গুলি করে। বিন লাদেন কোনো প্রতিরোধ করতে পারেন নি। একজন সিল সদস্য তার উপর ডাবল ডেপ্ট শট চালায়। বিন লাদেন (রহ) এর বুক আর বাম চোখে গুলি লাগে।
তবে আমেরিকার প্রশাসন মেনে নিয়েছিলো যে, যদি শায়খ প্রথমেই আত্মসমর্পণ করতেন তবে তার উপর গুলি চালানো হতো না।
ন্যাভি সিল ক্রুসেডাররা সাথে সাথে রেডিও করলো,
'For god and country,
Geronimo,
Geronimo,
Geronimo'
অপারেশন সফল হলে এই কোডই ব্যবহার করার কথা ছিলো। সিল টিমের সদস্যরা বিন লাদেন (রহ) এর নিথর দেহ সিড়ি দিয়ে টেনে-হিচড়ে নিচে নামিয়ে আনে। গোটা সিড়িতে রক্ত পরছিলো। বাকি সিল কমান্ডোরা বিন লাদেন (রহ) এর বাসভবনের কম্পিউটার, মোবাইল ফোন আর হার্ডডিস্কগুলো একত্র করছিলো। যাতে সেগুলো পরীক্ষা করে আল-কায়দার কার্যপ্রণালী, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এসব জানা যায়। শায়খের মৃতদেহটা হেলিকপ্টারে শুইয়ে রাখা হয়েছিলো। চেহারা সনাক্ত করতে পারে এমন দুজন বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটনে অপেক্ষা করছিলো। পুরনো ছবির সঙ্গে তার চেহারাটা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো।
প্রেসিডেন্ট ওবামা পরে বলেছিলো, "লাদেনের ঘরে যে সময়টা সিল কমান্ডোরা কাটিয়ে ছিলো, ওটাই তার জীবনের দীর্ঘতম ৪০মিনিট ছিলো।" ওদিকে সিল টিমের একটা কাজ তখনো বাকি ছিলো। ভেঙে পরা হেলিকপ্টারটিকে নষ্ট করে দিতে হবে। যাতে পাকিস্তানিরা ওটাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ধরতে না পারে। একই সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে সুরক্ষিত অবস্থায় সেই দেশের সীমানা পাড় হওয়াটা জরুরী। পাকিস্তান অবশ্য দুটো F16 বিমান পাঠিয়েছিলো হেলিকপ্টারগুলোকে ধাওয়া করার জন্য। কিন্তু মাইকেল লিটড জানত সেগুলো খুব একটা কিছু করতে পারবে না। কারণ পাকিস্তানের পাইলটদের রাতে বিমান চালানোর খুব একটা অভ্যাস নেই।
হেলিকপ্টারগুলো ফেরার জন্য জালালাবাদের দিকে সোজা পথটাই ধরেছিল। গতিও আগের বারের চেয়ে বেশি ছিলো। তখন প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘটনার ভিডিওগুলোর দিকে নজর রাখছিলো। "আমাদের হেলিকপ্টারগুলো পাকিস্তানের সীমানা পাড় হলেই যেনো আমাকে জানানো হয়।" বলছিলো প্রেসিডেন্ট ওবামা।
স্থানীয় সময় রাত ২টা,,,
আমেরিকার সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময়,,,
জালালাবাদ বিমানঘাঁটিতে হেলিকপ্টারগুলো ফিরে আসে। আর গোটা অপারেশনটাতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। শাইখের দেহ নিয়ে তারা চলে যায় এবং পিছনে পড়ে থাকে রক্ত আর ধ্বংসস্তূপ।
Comment