Announcement

Collapse
No announcement yet.

দাঈর যে হাতিয়ার না হলে-ই নয়

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দাঈর যে হাতিয়ার না হলে-ই নয়

    দাওয়াতকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই দ্বীন ও জিহাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ দাওয়াত দাওয়াত বন্ধ হয়ে গেলে এক সময় জিহাদও বন্ধ হয়ে যাবে দাওয়াত বিফল হলে জিহাদও বিফল হবে তাই যে কোন ভূমির জিহাদ নির্ভর করে একদল দক্ষ ও কৌশলী দাঈর উপর
    যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনে দাঈকে করতে হয় প্রচুর মোজাহাদা দাওয়াতের ময়দানে সফলতা অর্জনে করতে হয় অনেকগুলি গুণ অর্জন সে সকল গুণের মাঝে একটি হচ্ছে শুদ্ধ কথন আজ এ নিয়েই কিছু আরয করব ওয়ামা তাওফিকী ইল্লা বিল্লাহ
    দাঈর অন্যতম হাতিয়ার কথা। ভাষা। ভাষা দায়ীর এমন এক হাতিয়ার যা দ্বারা তিনি মাদঊকে কাবু করেন সংযোগস্থাপন করেন মাদঊ পর্যন্ত পৌঁছান যিনি সুন্দর বলতে পারেন তিনি যে কাউকে তার মেসেজ পৌঁছাতে পারেন কোনরূপ ইতস্তবোধ ছাড়াই
    সকল নবী-রাসূলকে আল্লাহ তায়ালা স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছেন যেন তাঁরা উম্মতকে নিজ ভাষায় আল্লাহর বিধানাবলি বুঝাতে পারেন এবং তাঁরা কিবুঝাতে চান যেন উম্মত তা বুঝতে পারেন মহান রব্বে কারীম বলেন,
    وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ. -إبراهيم: 4
    “আমি যখনই কোন রাসূল পাঠিয়েছি, তাকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের সামনে সত্যকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে তারপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন, যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন তিনিই এমন, যার ক্ষমতাও পরিপূর্ণ, হিকমতও পরিপূর্ণ।” -সূরা ইবরাহীম: ০৪
    হযরত মূসা কালিমুল্লাহ তখন শিশু। পরিক্ষার উদ্দেশ্যে ফিরাউন তাঁর সামনে জ্বলন্ত আঙ্গার ও মুক্তো রাখল। তিনি জ্বলন্ত আঙ্গার হাতে নিয়ে মুখে দিয়ে ফেলেন তাঁর জিহ্বা পুড়ে যায় ফলে যবানে জড়তা দেখা দেয়-তাফসীরে ইবনে কাসীর: /২৩৬, দারু ত্বয়্যিবাহ, দ্বিতীয় মুদ্রণ ১৪২০ হি.
    দাওয়াতি কাজে যেন কোন ত্রুটি না হয়; তিনি এই বলে আল্লাহর কাছে আবেদন করলেন,
    قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي (25) وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي (26) وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي (27) يَفْقَهُوا قَوْلِي (28) وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي (29) هَارُونَ أَخِي (30) اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي (31) وَأَشْرِكْهُ فِي أَمْرِي (32)- طه: 24 - 32
    “মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ খুলে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন আমার জিহ্বায় যে জড়তা আছে তা দূর করে দিন যাতে মানুষ আমার কথা বুঝতে পারে আমার স্বজনদের মধ্য হতে একজনকে আমার সহযোগী বানিয়ে দিন অর্থাৎ আমার ভাই হারূনকে তার মাধ্যমে আমার শক্তি দৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কাজে শরীক বানিয়ে দিন।” -সূরা তোয়া হা: ২৫-৩২
    মূসা আঃ সহযোগী হিসেবে হারূন আঃ কে নির্বাচন করলেন কারণ তিনি ফাসীহুল লিসান সুস্পষ্টভাষী সূরা ক্বসাসে এসেছে,
    وَأَخِي هَارُونُ هُوَ أَفْصَحُ مِنِّي لِسَانًا فَأَرْسِلْهُ مَعِيَ رِدْءًا يُصَدِّقُنِي إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُكَذِّبُونِ (34) قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَكَ بِأَخِيكَ وَنَجْعَلُ لَكُمَا سُلْطَانًا فَلَا يَصِلُونَ إِلَيْكُمَا بِآيَاتِنَا أَنْتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَكُمَا الْغَالِبُونَ (35) -القصص: 34، 35
    “আমার ভাই হারূনের যবান আমা অপেক্ষা বেশি স্পষ্ট তাকেও আমার সঙ্গে আমার সাহায্যকারীরূপে পাঠিয়ে দিন, যাতে সে আমার সমর্থন করে আমার আশঙ্কা তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে আল্লাহ বললেন, আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করে দিচ্ছি এবং তোমাদের উভয়কে এমন প্রভাব দান করছি যে, আমার নিদর্শনাবলীর বরকতে তারা তোমাদের পর্যন্ত পৌঁছতেই পারবে না তোমরা তোমাদের অনুসারীরাই জয়ী হয়ে থাকবে।” -সূরা ক্বসাস: ৩৪-৩৫
    তাই আল্লাহর পথের সকল দাঈ ভাইদের উচিত নিজের ভাষা সুন্দর করা উচ্চারণ শুদ্ধ করা কণ্ঠ বলিষ্ঠ করা ভঙ্গিমা আকর্ষণীয় করা বিশেষ করে জিহাদের দিকে আহ্বানকারী ভাইগণ ব্যাপারে অবহেলা করা একদমই উচিত নয় আমাদের প্রিয়ো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন জাওয়ামিউল কালিম আফসাহুল আরব সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম শুধু দাওয়াতের ময়দানেই নয়; বরং পরষ্পর আলাপচারিতার ক্ষেত্রেও শুদ্ধতার গুরুত্ব দিতেন প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত আত্বা রহ. বর্ণনা করেন,
    قام رجل من عند ابن عباس ، فقال له : أين ؟ قال : أريق الماء ، قال : لا تقل أريق الماء ولكن قل : أبول. رواه ابن أبي شيبة في مصنفه: 1831
    “হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মজলিস থেকে একজন উঠে দাঁড়ালেন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাবেন”? লোকটি বললেন, “ উরিকুল মা (পানি ফেলব)” তিনি বললেন, “ উরিকুল মা বলো না; বরং বল আবূলু (প্রস্রাব করব)মুসান্নাফু ইবনে আবি শাইবাহ: ১৮৩১
    দায়ী ভাইয়ের কাছে শুদ্ধ কথার হাতিয়ারটি থাকলে; তিনি যে কোন সময় যে কোন মহলে দাওয়াত শুরু করতে পারেনশিক্ষিত কি অশিক্ষিত, ভদ্রলোক আর বড় লোক সকলকেই তিনি দাওয়াত দিতে পারেন। সব শ্রেণীর লোকই মনযোগ দিয়ে তার কথা শোনেন। তাকে বোঝার চেষ্টা করেন। তার সাথে কথা বলে তৃপ্তিবোধ করেন। কারণ তার কথা শুদ্ধ। মধুর। চিত্তাকর্ষক।
    দাওয়াতের প্রথম স্তর তো সম্পর্ক গড়া ভাষা সুন্দর হলে অতি সহজেই মাদঊ কাবু হয়ে যান সম্পর্ক গড়তে আগ্রহ বোধ করেন বরং গর্ববোধ করেন আসলে মানুষের তবিয়তই এমন সুন্দর পছন্দ করে ভালোবাসে
    কথা শুদ্ধ না হলে, ভঙ্গিমা সুন্দর না হলে, ওযনদার কথাও গুরুত্বহীন হয়ে যায় শ্রবণে মনোযোগ আসে না তখন দাওয়াত তেমন একটা রেখাপাত করে না মাদঊকে প্রভাবিত করে না পক্ষান্তরে উচ্চারণ শুদ্ধ হলে, কণ্ঠ বলিষ্ঠ হলে, ভঙ্গিমা চিত্তাকর্ষক হলে কথা অনেক প্রভাব ফেলে
    একটা কাজে আমি, কিছু দিন আগে, একটি অফিসে গিয়ে ছিলাম অফিসটা এসি যুক্ত চতুর দিকটা গ্লাসে আবৃত ভেতরে একজন মহিলা কয়েকজন পুরুষ বসা কোন আসন খালি নেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম অফিসার জিজ্ঞেস করলেন হুজুর কেন এসেছেন বলুন আমি প্রমিত উচ্চারণে প্রয়োজনের কথা বললাম অমনি মহিলাটা উঠে দাঁড়িয়ে গেল হুজুর বসুন, বসুন সাথে পুরুষগুলিও নড়েচড়ে বসলেন হুজুর বসুন বসুন এতক্ষণ যারা গুরুত্বই দেয়নি এখন তারাই এমন করছে
    আসলে বোঝাতে চাচ্ছি কথার প্রভাব শুদ্ধতার শক্তি তাই আসুন হে সকল দাঈ মুজাহিদ ভাইগণ! আমরা সর্বোত্তম কথায় মানুষকে রবের পথে ডাকি জিহাদের পথে আহ্বান করি আমাদের ভাষা সুন্দরের মেহনত করি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি আল্লাহর কাছে দু করি আল্লাহ সকলকে তাওফিক দান করুন আমীন
    وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ. -فصلت: 33
    “তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি আনুগত্য স্বীকারকারীদের একজন।” -সূরা ফুস্সিলাত: ৩৩
Working...
X