বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ'লা রাসুলিল্লাহ (সাঃ) ওয়া'লা আলীহি ওয়া সাহাবিহী ওয়া মাঊওয়ালা আম্মাবা'দ।
ফা-আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনীর রজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ'মানু ওয়াত্তাকুল্লোহা ওয়া কুউনুল মা'আস স্বদীকীন।
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা'তুহু।
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সম্পর্ক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে, আমরা মনে-প্রাণে দ্বীনের মুরুব্বী এবং ওলামায়ে কেরামদের ভালোবাসি। যদিও তারা বিষয়টা অপছন্দ অথবা অস্বীকার করে।
মুফতি ত্বাকী উসমানী সাহেব বর্তমান সময়ের গ্রহণযোগ্য আলেমদের একজন এবং তার ইলমি মর্তবা যথাস্থানে স্বীকৃত।
কিন্তু মুফতি সাহেব আমাদের ব্যাপারে যে বয়ান দিয়েছেন আমরা তার বিশ্লেষণ করাকে এজন্য জরুরী মনে করছি, কারণ আমরা যদি আদব এবং সম্মানের খাতিরে এভাবেই চুপ করে থাকি তবে আমাদের আশঙ্কা হয় যে আমরা উম্মাহর জন্য রক্ত দেয়া অগণিত মুমিনদের রক্তের সাথে খেয়ানতকারীদের দলে শামিল না হয়ে যাই!
মুফতি সাহেব যে এই কথা বললেন, "পাকিস্তান একটি ইসলামি রাষ্ট্র এবং এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হারাম!"
এই ব্যপারে আমরা এটা বলতে চাই যে, বর্তমানের এই যুদ্ধের শুরু আমরা করিনি। বরঞ্চ আমরা তো আফগানিস্তানের পক্ষে থেকে আমেরিকা এবং তার দোসরদের বিরুদ্ধে পবিত্র জিহাদ করেছি।
কিন্তু পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা এবং এই শাসনব্যবস্থার জন্য লড়াইরত বাহিনী নিজেদের পশ্চিমা প্রভুদের খুশি করার জন্য এবং তাদের থেকে ডোলার সংগ্রহ করার জন্য আমাদের স্বাধীন ভূমিতে যেসব মুহাজিরগণ আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন শুরু করলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদেরকে ছাড়াও পাকিস্তানের দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখা ৫০০ এর অধিক গ্রহণযোগ্য ওলামায়ে কেরামগণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরজ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
যা পরবর্তীতে "ওয়ান অপারেশন" নামক ওলামাদের সম্মিলিত ফতোয়ার রূপে বারবার প্রকাশিত হচ্ছিলো।
আমরা এই ফতোয়া এবং সম্মানিত অন্যান্য আকাবিরদের ফতোয়ার আলোকেই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজেদের জিহাদের মোড় ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম।
তাই যখন প্রথম বিদ্রোহের ঘোষণা আমাদের কাছ থেকে আসে নি তবে এজন্য আমাদেরকে কেন দায়ী সাব্যস্ত করা হচ্ছে?
আরও একটা কথা আছে, বিদ্রোহ তো তখন হয় যখন তা ন্যায়পরায়ণ মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে করা হয়।
যেমনটা ক্বলবে ন্যায়া শরহুল হেদায়াতে বাগুল বুয়াদের থেকে উল্লেখ করা হয়েছে,
"ফা আহলুল বাগী হুমুল খ্বারীজুনা ইমামিল হাক্বী বি-গ্বাইরিল হাক্বী"
অর্থঃ- তারাই তো হচ্ছে বিদ্রোহী, যারা হক্কানী শাসকের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে রুখে দাঁড়ায়।
আমাদের পক্ষে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীকে ন্যায়পরায়ণ শাসকদের মর্যাদা দেয়া সম্ভব নয়, কারণ তারা ইসলাম এবং কুফফারদের মধ্যকার চলমান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আলেমদের হত্যা করেছে, আমেরিকা এবং ন্যাটোর সঙ্গ দিয়েছে, ইরাক এবং আফগানের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে আমেরিকার ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গ দিয়েছে।
তারা আমীরুল মু'মীনিন মোল্লা আখতার মানসুর (রহ.) কে আমেরিকার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য শহীদ করিয়েছে।
একজন রাষ্ট্রদূত এবং ইসলামী অনুশাসন পালন করেন এমন তালেবান রাষ্ট্রদূত মোল্লা মুহাম্মদ আব্দুস সালাম যঈফ সাহেবকে অত্যন্ত অসম্মানের সাথে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে।
আমেরিকার খুশির জন্য সাবেক তালেবান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ওবায়দুল্লাহ আখুন সাহেবকে গ্রেফতার করে শহীদ করেছে।
সকলের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, আফগানের জিহাদি নেতা, উস্তাদ ইয়াসির সাহেবকে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর ধরে গুম করে রাখে।
আফগান তালিবানের বিরূদ্ধে আমেরিকাকে ভূমি, নদী, আকাশ, বাহিরের পথ সব দিয়েছে।তাদেরকে লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে পাকিস্তানের ভূমিতে আশ্রয় নেয়া ৫৭ হাজার আফগানিকে হামলার সহায়তা দিয়েছে।
যার কারণে তখনকার একমাত্র ইসলামি শাসনব্যবস্থা নীরবে ধ্বংস হয়েছে। আর লক্ষ-লক্ষ মুসলমান শহীদ হয়েছেন।
এবং ৬০০ এর বেশি আরবী মুজাহিদীন এবং মুহাজিরীনদের দেশে পাঠানোর পরিবর্তে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে।
জাতির কণ্যা, ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকীকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
দুই দিক থেকে মুজাহিদীনদের রাস্তায় বাধা দেয়ার জন্য আমেরিকার কথায় নিজেদের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত দেড় লক্ষ সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
আমেরিকার হুকুমে নিজেদের মুসলমান জনগণের বিরুদ্ধে "আল মিজান অপারেশন" থেকে নিয়ে "রদ্দুল ফাসাদ" পর্যন্ত বহুসংখ্যক অপারেশন পরিচালনা করেছে।
পাকিস্তানের জুলুমকারী পলিসির বিরোধিতা করা জামিয়া ফারেদিয়ার মুহতামিম এবং লাল মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল্লাহ সাহেব, মুফতি নিজামুদ্দিন শামযায়ী সাহেব, শহীদে ইসলাম মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী সাহেব, শায়খ ওয়ালিউল্লাহ আবুল গিরানী সাহেব, ভাই আব্দুর রশীদ সাহেব, শায়খ নাসিব খান সাহেব, মাওলানা সামিউল হক্ব সাহেব এবং ডক্টর আদিল খান সাহেব (রাহিমাহুমুল্লাহ) এর মত অগণিত ওলামায়ে হক্বকে শহীদ করিয়েছে।
নিজের জাতির সম্মানিত জামিয়া হাফসার ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করেছে।
গোত্রভিত্তিক বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং মসজিদ ধ্বংস করেছে।
লক্ষ-লক্ষ গোত্রীয় মুসলমানদের ঘর ভেঙে দিয়ে ঘরহারা হতে বাধ্য করেছে।
শরয়ী হুদুদ বাতিল করে দেশে এমন আঈন জারি করেছে যাতে দেশে ফিতনা এবং ফাহেশাত বেড়ে গেছে। ট্রান্সজেন্ডার, যিনা-ব্যভিচার এসব এরই উদাহরণ।
আমরা কীভাবে পাকিস্তানি শাসকদের ন্যায়পরায়ণ শাসক বলতে পারি? তাদের উপর তো দেখা যাচ্ছে, মুফতিয়ে আযম হিন্দ মুফতি কেফায়াতুল্লাহ সাহেব দেহলভী (রহ) এর ফতোয়া পুরোপুরি প্রয়োগ করা যাবে।
"অলীল আমরি মিনকুম" দ্বারা উদ্দেশ্য এমন শাসক যারা আল্লাহ এবং তার রাসুলের আদেশের উপর দেশ পরিচালনা করে। এমন মুসলমান শাসক যে আল্লাহ এবং তার রাসুলের আদেশের বিপরীতে বিচার প্রয়োগ করে তারা "যা আমি নাজিল করেছি তা দ্বারা যে বিচার করবে না সে কাফের" এর অন্তর্ভুক্ত।
আর আল্লাহ এবং তার রাসুলের বিরুদ্ধে আঈন প্রণয়নকারীকে কুরআনে পাকের মধ্যে তাগুত আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তাগুতের অনুসরণ হারাম। আর যে ব্যক্তি এমন আদেশকে অর্থাৎ যারা আল্লাহর শরীয়াহর বিরুদ্ধে আঈন প্রণয়ন করে তাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্তবা দেয় তারা কুরআনের আয়াতের অবাধ্যতায় লিপ্ত।
ইংরেজি আঈনের অধীনে থেকে আঈন প্রণয়নকারীগণ, তারা মুসলিম হোক কিংবা নামেই মুসলিম হোক, তারা ত্বাগুত। তারা কোনভাবেই ন্যায়পরায়ণ শাসকদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।
এখন কথা হলো যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র কী ইসলামি?
রাষ্ট্র দ্বারা যদি দেশ এবং ভূমিকে বোঝানো হয়, তাহলে এটা বিশ্বাসযোগ্য যে পাকিস্তান মুসলমানদের দেশ এবং ভূমি।
আর যদি রাষ্ট্র দ্বারা শাসনব্যবস্থাকে বোঝানো হয়, তাহলে এই শাসনব্যবস্থা ইসলামিও না আর ন্যায়ভিত্তিকও না।
বরঞ্চ পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা তো শরীয়াহর বিপরীত, জুলুমকারী ও আমেরিকা এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর হাতের পুতুল এবং গোলাম।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এমন একটি বাহিনী যেটি সবসময় ইসলাম এবং ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ভাড়ায় নেয়া বাহিনীর মতো ব্যবহৃত হয়েছে।
এদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি লজ্জাজনক ইতিহাস রয়েছে। যেটার ব্যখ্যা দেয়ার এখন সুযোগ নেই।
কোনো শাসনব্যবস্থার ইসলামী হওয়ার জন্য মুফতিয়ে আযম মুফতি রশীদ আহমাদ লুধিয়ানভী (রহ) আহসানুল ফাতওয়া (১/২১) এ বলেন,
"যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো শাসনব্যবস্থা ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তা ইসলামী শাসনব্যবস্থা না।"
মুহাদ্দিস ওয়াসার উস্তাদুল আসতাযা মাওলানা ইউসুফ বিন নূরী সাহেব (রহ) লিখেন,
"বাস্তবতা হলো এটা যে কুরআনে কারীম এবং হযরত রাসুলুল্লাহ সাঃ যেসব নেতৃবৃন্দের অনুসরণ ও আনুগত্য এবং সম্মানের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের দ্বারা এমন নেতা উদ্দেশ্য যে হুদুদ কায়েম করে, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে, নিজে দ্বীনের আলেম আর নয়তো অন্তত ইসলামী শিক্ষা এবং শরীয়াহর আইন বাস্তবায়নের ফরজ আদায় করার উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন তাদের অনুসরণ দ্বীন এবং শরীয়তের অংশ। যদি কোনো নেতা ইসলামি শরীয়তের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করে, তাহলে তার শরয়ী গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয়ে যায়। তখন তার অনুসরণ তো দূরে থাক বরং বিরোধিতা করতে হবে।"
মুফতি নিজামুদ্দিন শামযায়ী সাহেব নিজের ফতোয়ায় লিখেন,
"ইসলামি ভূখন্ডগুলোর যেসব শাসক ক্রুসেডীয় যুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গ দিচ্ছে এবং নিজের ভূমি ও সম্পদ দিয়ে তাদের সাহায্য করছে, তারা মুসলিমদের উপর শাসনকার্য পরিচালনা করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। সমস্ত মুসলমানদের উচিৎ যেকোনো পদ্ধতিতে তাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয়া।"
একইভাবে মুফতি নিজামুদ্দিন শামযায়ী সাহেব নিজের বয়ানে বলেন,
"আর এই যে মুনাফিকগুলো আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে সবার আগে তাদের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে জিহাদ করতে হবে। আমি কলমের জিহাদের কথা বলছি না, আমি জবানের জিহাদের কথা বলছি না, অনেক করেছি আমরা, অনেক করেছি কলমের জিহাদ অনেক করেছি আমরা জবানের জিহাদ। এখন এদের চিকিৎসা এটা ছাড়া আর কিছুই না। যদি মুসলমান যুবকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকে তাহলে উঠে তাদের গলায় টিপ দাও। এদের মাথার ফসল এখন কেটে গেছে, জাতিগুলো পরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।"
তালেবান বিদ্রোহী নয়। বরং আসল বিদ্রোহী তো পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী! কারণ তারা শরীয়তের ব্যাপারে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত।
মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী শহীদ (রহ) এক প্রশ্নের উত্তরে লিখেন,
"তালেবান ইসলামি শাসনব্যবস্থার রক্ষার জন্য লড়ছে। এজন্যই তারা ইনশাআল্লাহ হক্বের উপরে আছে। আর বাকি সবাই তাদের বিরোধিতায় বিদ্রোহীদের ভূমিকায় রয়েছে।"
দ্বিতীয় কথা হলো এটা, আমরা আপনি হযরতকে এই কথা বলিনি যে, আমরা ভবিষ্যতে আর কখনো অস্ত্র তুলবো না। আমরা এই কথার প্রতি সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানাচ্ছি, আমরা একথা বলিনি।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পাকিস্তানে জিহাদ একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম। ৫০০ এর বেশি গ্রহণযোগ্য ওলামাদের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে এই পবিত্র জিহাদ শুরু হয়েছিলো।
যেটাতে হাজার-হাজার যুবক শহীদ হয়েছে এবং হাজার-হাজার যুবক কারাগারের নির্যাতন সহ্য করেছে এবং হাজার-হাজার যুবক গুম হয়ে আছে এবং হাজার-হাজার যুবক এখনো জিহাদের ময়দানে লড়াইয়ে রত আছে।
প্রতিদিনের যুদ্ধে পাকিস্তানের ইসলামের শত্রু বাহিনীকে নিজেদের ঠিকানায় (জাহান্নামে) পৌঁছে দিচ্ছে। আর নিজেরাও নিজের পবিত্র রক্ত বইয়ে দিয়ে তা দিয়ে নিজেদের পাক জিহাদি আর ইসলামি ভূখণ্ড স্বাধীন করার জন্য রত আছেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের পবিত্র জিহাদ আশার একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। একটি পবিত্র জিহাদের মাধ্যমে বড় শয়তান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের উচিৎ শিক্ষা দেয়া হয়ে গেছে যেখানে একইসাথে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছি। আর অত্যন্ত সফলতার সাথে আমরা এর উপর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
যেমন আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার জাতের দ্বারা আশাবাদী যে, আমরা এই পাক জমিনে বিজয়প্রাপ্ত হবো। যেমন এই ভূখণ্ডে আমরা জেনেছি, জিহাদ এমন একটি ফরজ ইবাদত যার মাধ্যমে এমন জিনিসও পাওয়া যায় যা লাভ করা বাহ্যিকদৃষ্টিতে অসম্ভব।
দ্বিতীয় কথা এটা যে মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের বয়ানের মাধ্যমে মানুষরা এটা বুঝেছে যে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান গোনাহের কারণে পাকিস্তানের বিরোধিতা করছে। কিন্তু সত্য এমনটা নয়। দ্বীনের মাসায়েলের মতো তাকফিরের ক্ষেত্রেও তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসরণ করে। শুধু গোনাহের কারণে আমরা কাওকে তাকফির করিনা।
মুফতি সাহেবের বয়ানে যে কথা বলা হয়েছে,
"আপনারা বাচ্চা, নারী এবং ওলামা পর্যন্ত কাওকে ছাড়েন নি।"
এই কথায় আমরা অত্যন্ত আফসোস প্রকাশ করছি। মুফতি সাহেবের সম্ভবত বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান নেই।
আমরা তো বাচ্চা, নারী এবং ওলামাদের শহীদ করিনি! মনে হচ্ছে, মুফতি সাহেবের সামনে শত্রুরা পরিস্থিতিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, যেন এসব তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের কাজ!
কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, বাচ্চা, নারী এবং ওলামাদের হত্যাকারী হয়তো পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী আর নয়তো পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দের ক্রয় করা লোকজন।
আমরা যে শুধু মজলুমদের জান-মাল এবং ইজ্জত-আব্রুর হেফাজতের জন্য নিজেদের প্রাণ দিয়েছি তা নয়, বরং এমন কুরবানী দিয়েছি যা আর কেও করতে পারবে না। আর যদি তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের কেও যদি এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে, তবে তার বিচার অবশ্যই করা হবে।
তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান এর সাথে পূর্বেও সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে এবং আবারো দিচ্ছে।
তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের উদ্দেশ্য পাক-পবিত্র। যদি শরয়ী আদালতের বিচারে এর কোনো সদস্যের এই অপরাধ প্রমাণিত হয়ে যায়, তবে আমরা তাকে শরয়ী আইন অনুসারে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে একদম হকচকিয়ে যাব না ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
হযরত মুফতি সাহেবের এই কথা যে,
"ওলামারা রুশ এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়া দিয়েছিলেন, কিন্তু আপনি ওটাকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করলেন!"
এই ব্যপারে আপনার খেদমতে বলতে চাই যে, যখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানি establishment এর আইনের মাধ্যমে আমেরিকা এবং ন্যাটো আক্রমণ করলো এবং এর ফলাফলে স্বাধীন গোত্রীয় এলাকাগুলোর দিকে সাধারণ জনগণ এবং মুজাহিদ্বীনরা হিজরত করতে বাধ্য হলেন এবং পাকিস্তানি জনগণ ও খুশিমনে স্বাধীন গোত্রগুলি তাদের আশ্রয় দিলো, তখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমেরিকার কথায় মেহমান মুজাহিদ্বীন এবং গোত্রীয় লোকজনের বিরুদ্ধে জুলুমকারী অপারেশনের ধারা শুরু করলো। ওই অপারেশনগুলোর বিরুদ্ধে দেশের ৫০০ জনেরও বেশি বিখ্যাত এবং গ্রহণযোগ্য ওলামা একটি ফতোয়া প্রদান করেছিলেন। যেখানে ওলামাগণ পাকিস্তানকর্তৃক পরিচালিত অপারেশনগুলোকে অবৈধ এবং হারাম বলেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে চোর এবং ডাকাত বলেছিলেন এবং তাদের মৃতকে ওনারা মৃত বলেছিলেন। তাদের জানাযার ব্যপারে সাধারণ মৃতদের মতোই আদেশ করেছিলেন। কিন্তু এদের বিপরীতে গোত্রীয় মুজাহিদ্বীন এবং জনগণকে প্রশংসা করেছিলেন। তাদের মৃত্যুতে তাদের শহীদ বলেছিলেন।
আমরা সেই ফতোয়ার কথা বলছি যা "ওয়ান অপারেশন" নামক ওলামাদের ফিকহি ফতোয়ার নামে বিখ্যাত।
শেষে আরেকবার বলছি যে, যেসব ওলামাদের আমাদের জিহাদের ব্যপারে সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে, আর দালিলিক আলোচনার মাধ্যমে আমাদের বোঝার জন্য আমাদের সাথে এই বিষয়ে একটি ফয়সালায় পৌছতে চান, তাহলে আমরা এজন্য সবসময়ই প্রস্তুত আছি।
ওয়াল আখীরুদ্দা'ওয়ানা আনিল হামদুলিল্লাহি রব্বীল আল-আমীন।
(অনুবাদ এবং শ্রুতিলিখন- আহমাদ আফফান)
{দ্রষ্টব্যঃ- অনুবাদের জন্য ফেসবুক থেকে বাংলা সাবটাইটেলসহ পাওয়া একটি ভিডিও থেকে সাহায্য নেয়া হয়েছে। নিচে সাবটাইটেলসহ এবং সাবটাইটেলবিহীন উভয় ভিডিওর লিংক দেয়া আছে}
সাবটাইটেলবিহীন লিংক- https://www.facebook.com/10008193141...5001961708522/
{তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বিষয়ে মুফতি ত্বকী উসমানী সাহেব (হাফি.)-এর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে টিটিপি-এর আমীর মুফতি নূর ওয়ালী মেহসুদ (হাফি.)-এর ওয়াজাহাতী বক্তব্য (সাবটাইটেলসহ)
দেখুন, শুনুন ও ডাউনলোড করুন (ভিডিও)
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ'লা রাসুলিল্লাহ (সাঃ) ওয়া'লা আলীহি ওয়া সাহাবিহী ওয়া মাঊওয়ালা আম্মাবা'দ।
ফা-আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনীর রজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ'মানু ওয়াত্তাকুল্লোহা ওয়া কুউনুল মা'আস স্বদীকীন।
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা'তুহু।
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সম্পর্ক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে, আমরা মনে-প্রাণে দ্বীনের মুরুব্বী এবং ওলামায়ে কেরামদের ভালোবাসি। যদিও তারা বিষয়টা অপছন্দ অথবা অস্বীকার করে।
মুফতি ত্বাকী উসমানী সাহেব বর্তমান সময়ের গ্রহণযোগ্য আলেমদের একজন এবং তার ইলমি মর্তবা যথাস্থানে স্বীকৃত।
কিন্তু মুফতি সাহেব আমাদের ব্যাপারে যে বয়ান দিয়েছেন আমরা তার বিশ্লেষণ করাকে এজন্য জরুরী মনে করছি, কারণ আমরা যদি আদব এবং সম্মানের খাতিরে এভাবেই চুপ করে থাকি তবে আমাদের আশঙ্কা হয় যে আমরা উম্মাহর জন্য রক্ত দেয়া অগণিত মুমিনদের রক্তের সাথে খেয়ানতকারীদের দলে শামিল না হয়ে যাই!
মুফতি সাহেব যে এই কথা বললেন, "পাকিস্তান একটি ইসলামি রাষ্ট্র এবং এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হারাম!"
এই ব্যপারে আমরা এটা বলতে চাই যে, বর্তমানের এই যুদ্ধের শুরু আমরা করিনি। বরঞ্চ আমরা তো আফগানিস্তানের পক্ষে থেকে আমেরিকা এবং তার দোসরদের বিরুদ্ধে পবিত্র জিহাদ করেছি।
কিন্তু পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা এবং এই শাসনব্যবস্থার জন্য লড়াইরত বাহিনী নিজেদের পশ্চিমা প্রভুদের খুশি করার জন্য এবং তাদের থেকে ডোলার সংগ্রহ করার জন্য আমাদের স্বাধীন ভূমিতে যেসব মুহাজিরগণ আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন শুরু করলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদেরকে ছাড়াও পাকিস্তানের দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখা ৫০০ এর অধিক গ্রহণযোগ্য ওলামায়ে কেরামগণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরজ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
যা পরবর্তীতে "ওয়ান অপারেশন" নামক ওলামাদের সম্মিলিত ফতোয়ার রূপে বারবার প্রকাশিত হচ্ছিলো।
আমরা এই ফতোয়া এবং সম্মানিত অন্যান্য আকাবিরদের ফতোয়ার আলোকেই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজেদের জিহাদের মোড় ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম।
তাই যখন প্রথম বিদ্রোহের ঘোষণা আমাদের কাছ থেকে আসে নি তবে এজন্য আমাদেরকে কেন দায়ী সাব্যস্ত করা হচ্ছে?
আরও একটা কথা আছে, বিদ্রোহ তো তখন হয় যখন তা ন্যায়পরায়ণ মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে করা হয়।
যেমনটা ক্বলবে ন্যায়া শরহুল হেদায়াতে বাগুল বুয়াদের থেকে উল্লেখ করা হয়েছে,
"ফা আহলুল বাগী হুমুল খ্বারীজুনা ইমামিল হাক্বী বি-গ্বাইরিল হাক্বী"
অর্থঃ- তারাই তো হচ্ছে বিদ্রোহী, যারা হক্কানী শাসকের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে রুখে দাঁড়ায়।
আমাদের পক্ষে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীকে ন্যায়পরায়ণ শাসকদের মর্যাদা দেয়া সম্ভব নয়, কারণ তারা ইসলাম এবং কুফফারদের মধ্যকার চলমান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আলেমদের হত্যা করেছে, আমেরিকা এবং ন্যাটোর সঙ্গ দিয়েছে, ইরাক এবং আফগানের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে আমেরিকার ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গ দিয়েছে।
তারা আমীরুল মু'মীনিন মোল্লা আখতার মানসুর (রহ.) কে আমেরিকার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য শহীদ করিয়েছে।
একজন রাষ্ট্রদূত এবং ইসলামী অনুশাসন পালন করেন এমন তালেবান রাষ্ট্রদূত মোল্লা মুহাম্মদ আব্দুস সালাম যঈফ সাহেবকে অত্যন্ত অসম্মানের সাথে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে।
আমেরিকার খুশির জন্য সাবেক তালেবান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ওবায়দুল্লাহ আখুন সাহেবকে গ্রেফতার করে শহীদ করেছে।
সকলের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, আফগানের জিহাদি নেতা, উস্তাদ ইয়াসির সাহেবকে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর ধরে গুম করে রাখে।
আফগান তালিবানের বিরূদ্ধে আমেরিকাকে ভূমি, নদী, আকাশ, বাহিরের পথ সব দিয়েছে।তাদেরকে লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে পাকিস্তানের ভূমিতে আশ্রয় নেয়া ৫৭ হাজার আফগানিকে হামলার সহায়তা দিয়েছে।
যার কারণে তখনকার একমাত্র ইসলামি শাসনব্যবস্থা নীরবে ধ্বংস হয়েছে। আর লক্ষ-লক্ষ মুসলমান শহীদ হয়েছেন।
এবং ৬০০ এর বেশি আরবী মুজাহিদীন এবং মুহাজিরীনদের দেশে পাঠানোর পরিবর্তে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে।
জাতির কণ্যা, ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকীকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
দুই দিক থেকে মুজাহিদীনদের রাস্তায় বাধা দেয়ার জন্য আমেরিকার কথায় নিজেদের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত দেড় লক্ষ সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
আমেরিকার হুকুমে নিজেদের মুসলমান জনগণের বিরুদ্ধে "আল মিজান অপারেশন" থেকে নিয়ে "রদ্দুল ফাসাদ" পর্যন্ত বহুসংখ্যক অপারেশন পরিচালনা করেছে।
পাকিস্তানের জুলুমকারী পলিসির বিরোধিতা করা জামিয়া ফারেদিয়ার মুহতামিম এবং লাল মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল্লাহ সাহেব, মুফতি নিজামুদ্দিন শামযায়ী সাহেব, শহীদে ইসলাম মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী সাহেব, শায়খ ওয়ালিউল্লাহ আবুল গিরানী সাহেব, ভাই আব্দুর রশীদ সাহেব, শায়খ নাসিব খান সাহেব, মাওলানা সামিউল হক্ব সাহেব এবং ডক্টর আদিল খান সাহেব (রাহিমাহুমুল্লাহ) এর মত অগণিত ওলামায়ে হক্বকে শহীদ করিয়েছে।
নিজের জাতির সম্মানিত জামিয়া হাফসার ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করেছে।
গোত্রভিত্তিক বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং মসজিদ ধ্বংস করেছে।
লক্ষ-লক্ষ গোত্রীয় মুসলমানদের ঘর ভেঙে দিয়ে ঘরহারা হতে বাধ্য করেছে।
শরয়ী হুদুদ বাতিল করে দেশে এমন আঈন জারি করেছে যাতে দেশে ফিতনা এবং ফাহেশাত বেড়ে গেছে। ট্রান্সজেন্ডার, যিনা-ব্যভিচার এসব এরই উদাহরণ।
আমরা কীভাবে পাকিস্তানি শাসকদের ন্যায়পরায়ণ শাসক বলতে পারি? তাদের উপর তো দেখা যাচ্ছে, মুফতিয়ে আযম হিন্দ মুফতি কেফায়াতুল্লাহ সাহেব দেহলভী (রহ) এর ফতোয়া পুরোপুরি প্রয়োগ করা যাবে।
"অলীল আমরি মিনকুম" দ্বারা উদ্দেশ্য এমন শাসক যারা আল্লাহ এবং তার রাসুলের আদেশের উপর দেশ পরিচালনা করে। এমন মুসলমান শাসক যে আল্লাহ এবং তার রাসুলের আদেশের বিপরীতে বিচার প্রয়োগ করে তারা "যা আমি নাজিল করেছি তা দ্বারা যে বিচার করবে না সে কাফের" এর অন্তর্ভুক্ত।
আর আল্লাহ এবং তার রাসুলের বিরুদ্ধে আঈন প্রণয়নকারীকে কুরআনে পাকের মধ্যে তাগুত আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তাগুতের অনুসরণ হারাম। আর যে ব্যক্তি এমন আদেশকে অর্থাৎ যারা আল্লাহর শরীয়াহর বিরুদ্ধে আঈন প্রণয়ন করে তাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্তবা দেয় তারা কুরআনের আয়াতের অবাধ্যতায় লিপ্ত।
ইংরেজি আঈনের অধীনে থেকে আঈন প্রণয়নকারীগণ, তারা মুসলিম হোক কিংবা নামেই মুসলিম হোক, তারা ত্বাগুত। তারা কোনভাবেই ন্যায়পরায়ণ শাসকদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।
এখন কথা হলো যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র কী ইসলামি?
রাষ্ট্র দ্বারা যদি দেশ এবং ভূমিকে বোঝানো হয়, তাহলে এটা বিশ্বাসযোগ্য যে পাকিস্তান মুসলমানদের দেশ এবং ভূমি।
আর যদি রাষ্ট্র দ্বারা শাসনব্যবস্থাকে বোঝানো হয়, তাহলে এই শাসনব্যবস্থা ইসলামিও না আর ন্যায়ভিত্তিকও না।
বরঞ্চ পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা তো শরীয়াহর বিপরীত, জুলুমকারী ও আমেরিকা এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর হাতের পুতুল এবং গোলাম।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এমন একটি বাহিনী যেটি সবসময় ইসলাম এবং ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ভাড়ায় নেয়া বাহিনীর মতো ব্যবহৃত হয়েছে।
এদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি লজ্জাজনক ইতিহাস রয়েছে। যেটার ব্যখ্যা দেয়ার এখন সুযোগ নেই।
কোনো শাসনব্যবস্থার ইসলামী হওয়ার জন্য মুফতিয়ে আযম মুফতি রশীদ আহমাদ লুধিয়ানভী (রহ) আহসানুল ফাতওয়া (১/২১) এ বলেন,
"যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো শাসনব্যবস্থা ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তা ইসলামী শাসনব্যবস্থা না।"
মুহাদ্দিস ওয়াসার উস্তাদুল আসতাযা মাওলানা ইউসুফ বিন নূরী সাহেব (রহ) লিখেন,
"বাস্তবতা হলো এটা যে কুরআনে কারীম এবং হযরত রাসুলুল্লাহ সাঃ যেসব নেতৃবৃন্দের অনুসরণ ও আনুগত্য এবং সম্মানের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের দ্বারা এমন নেতা উদ্দেশ্য যে হুদুদ কায়েম করে, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে, নিজে দ্বীনের আলেম আর নয়তো অন্তত ইসলামী শিক্ষা এবং শরীয়াহর আইন বাস্তবায়নের ফরজ আদায় করার উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন তাদের অনুসরণ দ্বীন এবং শরীয়তের অংশ। যদি কোনো নেতা ইসলামি শরীয়তের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করে, তাহলে তার শরয়ী গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয়ে যায়। তখন তার অনুসরণ তো দূরে থাক বরং বিরোধিতা করতে হবে।"
মুফতি নিজামুদ্দিন শামযায়ী সাহেব নিজের ফতোয়ায় লিখেন,
"ইসলামি ভূখন্ডগুলোর যেসব শাসক ক্রুসেডীয় যুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গ দিচ্ছে এবং নিজের ভূমি ও সম্পদ দিয়ে তাদের সাহায্য করছে, তারা মুসলিমদের উপর শাসনকার্য পরিচালনা করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। সমস্ত মুসলমানদের উচিৎ যেকোনো পদ্ধতিতে তাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয়া।"
একইভাবে মুফতি নিজামুদ্দিন শামযায়ী সাহেব নিজের বয়ানে বলেন,
"আর এই যে মুনাফিকগুলো আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে সবার আগে তাদের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে জিহাদ করতে হবে। আমি কলমের জিহাদের কথা বলছি না, আমি জবানের জিহাদের কথা বলছি না, অনেক করেছি আমরা, অনেক করেছি কলমের জিহাদ অনেক করেছি আমরা জবানের জিহাদ। এখন এদের চিকিৎসা এটা ছাড়া আর কিছুই না। যদি মুসলমান যুবকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকে তাহলে উঠে তাদের গলায় টিপ দাও। এদের মাথার ফসল এখন কেটে গেছে, জাতিগুলো পরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।"
তালেবান বিদ্রোহী নয়। বরং আসল বিদ্রোহী তো পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী! কারণ তারা শরীয়তের ব্যাপারে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত।
মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী শহীদ (রহ) এক প্রশ্নের উত্তরে লিখেন,
"তালেবান ইসলামি শাসনব্যবস্থার রক্ষার জন্য লড়ছে। এজন্যই তারা ইনশাআল্লাহ হক্বের উপরে আছে। আর বাকি সবাই তাদের বিরোধিতায় বিদ্রোহীদের ভূমিকায় রয়েছে।"
দ্বিতীয় কথা হলো এটা, আমরা আপনি হযরতকে এই কথা বলিনি যে, আমরা ভবিষ্যতে আর কখনো অস্ত্র তুলবো না। আমরা এই কথার প্রতি সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানাচ্ছি, আমরা একথা বলিনি।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পাকিস্তানে জিহাদ একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম। ৫০০ এর বেশি গ্রহণযোগ্য ওলামাদের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে এই পবিত্র জিহাদ শুরু হয়েছিলো।
যেটাতে হাজার-হাজার যুবক শহীদ হয়েছে এবং হাজার-হাজার যুবক কারাগারের নির্যাতন সহ্য করেছে এবং হাজার-হাজার যুবক গুম হয়ে আছে এবং হাজার-হাজার যুবক এখনো জিহাদের ময়দানে লড়াইয়ে রত আছে।
প্রতিদিনের যুদ্ধে পাকিস্তানের ইসলামের শত্রু বাহিনীকে নিজেদের ঠিকানায় (জাহান্নামে) পৌঁছে দিচ্ছে। আর নিজেরাও নিজের পবিত্র রক্ত বইয়ে দিয়ে তা দিয়ে নিজেদের পাক জিহাদি আর ইসলামি ভূখণ্ড স্বাধীন করার জন্য রত আছেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের পবিত্র জিহাদ আশার একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। একটি পবিত্র জিহাদের মাধ্যমে বড় শয়তান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের উচিৎ শিক্ষা দেয়া হয়ে গেছে যেখানে একইসাথে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছি। আর অত্যন্ত সফলতার সাথে আমরা এর উপর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
যেমন আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার জাতের দ্বারা আশাবাদী যে, আমরা এই পাক জমিনে বিজয়প্রাপ্ত হবো। যেমন এই ভূখণ্ডে আমরা জেনেছি, জিহাদ এমন একটি ফরজ ইবাদত যার মাধ্যমে এমন জিনিসও পাওয়া যায় যা লাভ করা বাহ্যিকদৃষ্টিতে অসম্ভব।
দ্বিতীয় কথা এটা যে মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের বয়ানের মাধ্যমে মানুষরা এটা বুঝেছে যে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান গোনাহের কারণে পাকিস্তানের বিরোধিতা করছে। কিন্তু সত্য এমনটা নয়। দ্বীনের মাসায়েলের মতো তাকফিরের ক্ষেত্রেও তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসরণ করে। শুধু গোনাহের কারণে আমরা কাওকে তাকফির করিনা।
মুফতি সাহেবের বয়ানে যে কথা বলা হয়েছে,
"আপনারা বাচ্চা, নারী এবং ওলামা পর্যন্ত কাওকে ছাড়েন নি।"
এই কথায় আমরা অত্যন্ত আফসোস প্রকাশ করছি। মুফতি সাহেবের সম্ভবত বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান নেই।
আমরা তো বাচ্চা, নারী এবং ওলামাদের শহীদ করিনি! মনে হচ্ছে, মুফতি সাহেবের সামনে শত্রুরা পরিস্থিতিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, যেন এসব তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের কাজ!
কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, বাচ্চা, নারী এবং ওলামাদের হত্যাকারী হয়তো পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী আর নয়তো পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দের ক্রয় করা লোকজন।
আমরা যে শুধু মজলুমদের জান-মাল এবং ইজ্জত-আব্রুর হেফাজতের জন্য নিজেদের প্রাণ দিয়েছি তা নয়, বরং এমন কুরবানী দিয়েছি যা আর কেও করতে পারবে না। আর যদি তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের কেও যদি এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে, তবে তার বিচার অবশ্যই করা হবে।
তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান এর সাথে পূর্বেও সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে এবং আবারো দিচ্ছে।
তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের উদ্দেশ্য পাক-পবিত্র। যদি শরয়ী আদালতের বিচারে এর কোনো সদস্যের এই অপরাধ প্রমাণিত হয়ে যায়, তবে আমরা তাকে শরয়ী আইন অনুসারে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে একদম হকচকিয়ে যাব না ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
হযরত মুফতি সাহেবের এই কথা যে,
"ওলামারা রুশ এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়া দিয়েছিলেন, কিন্তু আপনি ওটাকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করলেন!"
এই ব্যপারে আপনার খেদমতে বলতে চাই যে, যখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানি establishment এর আইনের মাধ্যমে আমেরিকা এবং ন্যাটো আক্রমণ করলো এবং এর ফলাফলে স্বাধীন গোত্রীয় এলাকাগুলোর দিকে সাধারণ জনগণ এবং মুজাহিদ্বীনরা হিজরত করতে বাধ্য হলেন এবং পাকিস্তানি জনগণ ও খুশিমনে স্বাধীন গোত্রগুলি তাদের আশ্রয় দিলো, তখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমেরিকার কথায় মেহমান মুজাহিদ্বীন এবং গোত্রীয় লোকজনের বিরুদ্ধে জুলুমকারী অপারেশনের ধারা শুরু করলো। ওই অপারেশনগুলোর বিরুদ্ধে দেশের ৫০০ জনেরও বেশি বিখ্যাত এবং গ্রহণযোগ্য ওলামা একটি ফতোয়া প্রদান করেছিলেন। যেখানে ওলামাগণ পাকিস্তানকর্তৃক পরিচালিত অপারেশনগুলোকে অবৈধ এবং হারাম বলেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে চোর এবং ডাকাত বলেছিলেন এবং তাদের মৃতকে ওনারা মৃত বলেছিলেন। তাদের জানাযার ব্যপারে সাধারণ মৃতদের মতোই আদেশ করেছিলেন। কিন্তু এদের বিপরীতে গোত্রীয় মুজাহিদ্বীন এবং জনগণকে প্রশংসা করেছিলেন। তাদের মৃত্যুতে তাদের শহীদ বলেছিলেন।
আমরা সেই ফতোয়ার কথা বলছি যা "ওয়ান অপারেশন" নামক ওলামাদের ফিকহি ফতোয়ার নামে বিখ্যাত।
শেষে আরেকবার বলছি যে, যেসব ওলামাদের আমাদের জিহাদের ব্যপারে সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে, আর দালিলিক আলোচনার মাধ্যমে আমাদের বোঝার জন্য আমাদের সাথে এই বিষয়ে একটি ফয়সালায় পৌছতে চান, তাহলে আমরা এজন্য সবসময়ই প্রস্তুত আছি।
ওয়াল আখীরুদ্দা'ওয়ানা আনিল হামদুলিল্লাহি রব্বীল আল-আমীন।
(অনুবাদ এবং শ্রুতিলিখন- আহমাদ আফফান)
{দ্রষ্টব্যঃ- অনুবাদের জন্য ফেসবুক থেকে বাংলা সাবটাইটেলসহ পাওয়া একটি ভিডিও থেকে সাহায্য নেয়া হয়েছে। নিচে সাবটাইটেলসহ এবং সাবটাইটেলবিহীন উভয় ভিডিওর লিংক দেয়া আছে}
সাবটাইটেলবিহীন লিংক- https://www.facebook.com/10008193141...5001961708522/
{তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বিষয়ে মুফতি ত্বকী উসমানী সাহেব (হাফি.)-এর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে টিটিপি-এর আমীর মুফতি নূর ওয়ালী মেহসুদ (হাফি.)-এর ওয়াজাহাতী বক্তব্য (সাবটাইটেলসহ)
দেখুন, শুনুন ও ডাউনলোড করুন (ভিডিও)
Comment