যেদিন আমরা বিজয়ী ছিলাম
┇ শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ্ ┇
┇ শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ্ ┇

ﺑِﺴْــــــــــــــــﻢِﷲِﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِﺍلرَّﺣِﻴﻢ ️
• রাসূল ﷺ-এর সময়ে আমরা বদর-উহুদ-খন্দকে কাফিরদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে জাযিরাতুল আরবের পবিত্র ভূমিতে ইসলামের পতাকাকে সমুন্নত করেছি।
• খোলাফায়ে রাশেদার সময়ে আমরা ইরাক বিজয় করেছি, শাম বিজয় করেছি, খোরাসানের ভূমিতে কালেমার পতাকাকে সমুন্নত করেছি, আফ্রিকার আকাশে বিজয়ের নিশান উড়িয়েছি।
• খিলাফতে বনু উমাইয়্যার সময়ে আমরা স্পেন বিজয় করেছি, হিন্দুস্তান বিজয় করেছি।
• আব্বাসী খিলাফতের সময়ে আমরা রোমের উন্নত শহর আম্মুরিয়া বিজয় করেছি।
• সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়্যুবি এর সময়ে আমরা ক্রুসেডারদের সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়লাভ করেছি।
• অন্যান্য মুসলিম শাসকদের সময়ে আমরা তাতারি ফিতনার মোকাবেলা করে তাদের পরাজিত করেছি।
• উসমানি খিলাফতের সময়ে সেনাপতি মুহাম্মাদ আল ফাতিহ্ এর নেতৃত্বে আমরা কুস্তুনতুনিয়া-কনস্ট্যান্টিনেপল বিজয় করেছি।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
খিলাফতের সময়ে আমরা একের পর এক বিভিন্ন ভূখন্ড বিজয়লাভ করেছি। আল্লাহর অনুগ্রহে প্রতিটি যুদ্ধেই আমরা কাফিরদের পরাজিত করে কালেমার ঝান্ডাকে সমুন্নত রেখেছি।
সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো সারিবদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের দ্বীনের হিফাজত করেছি। আমাদের মা বোনের ইজ্জত আব্রুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।
কিন্তু যেদিন থেকে খিলাফতে ওসমানিয়ার পতন ঘটল, ‘‘এক উম্মাহ এক দেহকে’’ ৫৭ টি রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হলো, দেশে দেশে কাফিরদের পদলেহনকারী দালাল শাসকদের নিয়োগ দেয়া হলো, সেদিন থেকেই শুরু হলো আমাদের পরাজয়ের এক নতুন অধ্যায়।
খিলাফত ব্যবস্থা, আমাদের বিজয় উপহার দিয়েছে, কালেমার ছায়া তলে আমাদের বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে, আমাদের মা-বোনের ইজ্জত আব্রুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। যুদ্ধে-জিহাদের মাধ্যমে কাফির মুশরিকদের ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছে। আর এই দালাল শাসকেরা বিশ্বের বুকে আমাদের এক পরাজিত জাতি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। মুসলিম উম্মাহ'র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরা পরিপূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। এরাই আমাদের বোন আফিয়া সিদ্দিকীকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এরাই মুহাম্মাদ ﷺ-এর পবিত্র ভূমিতে কাফির-মুশরিকদের ঘাঁটি করে দিয়েছে। ‘‘আখরিজুল ইয়াহুদা ওয়ান নাসরা মিন জাঝিরাতুল আরব’’ বলে যেই পবিত্র ভূমি থেকে ইয়াহুদী ও নাসারাদের বিতারিত করা হয়েছিলাে।
এরাই ইয়াহুদী ও নাসারাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য শাইখ খালেদ আর রাশেদ, শাইখ নাসির আল ফাহাদ, শাইখ সুলাইমান আল উলওয়ান (হাফিজাহুমুল্লাহ)-এর মত–শত শত আল্লাহভীরু আলেমদের বন্দী করে তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে।
এরাই ইয়েমেনে বম্বিং করে শত শত নারী-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এদের দেওয়া অবরোধের ফলে ইয়েমেনের লক্ষ লক্ষ নারী-শিশু ক্ষুধার জ্বালায় অকাতরে না খেয়ে মারা যাচ্ছে।
চেচনিয়ী, বসনিয়া, ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, আরাকান, কাশ্মীর—এভাবে একের পর এক আক্রান্ত মুসলিম ভূমির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে অথচ এই সকল দালাল শাসকেরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। যে সকল কাফিরদের হাত মুসলিম শিশুদের খুনে লাল হয়ে আছে এরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
ইরাক-সিরিয়া-আফগান-আরাকানে আজ যে গণকবর আপনারা দেখছেন এগুলো সব এই তাগুত শাসকদের উপহার। মুসলিম উম্মাহ আজ যে রক্ত স্রোতে ভাসছে-এগুলো সব এই দালাল শাসকদের উপহার। মুসলিম মা-বোনেরা যে আজ শরণার্থী শিবিরে ক্ষুধার কষ্টে ধুঁকে-ধুঁকে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় কাফিরদের হাতে সম্ভ্রমহানির শিকার হচ্ছে, এগুলো সব এই দালাল-তাগুত শাসকদের উপহার।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
খিলাফত ব্যবস্থা আমাদের উপহার দিয়েছিল বিজয়, সম্মান ও জানমালের নিরাপত্তা, আর এরা আমাদের উপহার দিয়েছে পরাজয়, লাঞ্চনা আর অপদস্থতা।
প্রিয় উপস্থিতি!
খিলাফত ব্যবস্থা মুসলিম জাতীর ঈমান-আমল হিফাজতের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। মুসলিম তরুনদের চরিত্রকে হেফাজতের জন্য সব ধরনের অশ্লীলতা থেকে তাদের বিরত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। আর এরা আমাদের ঈমান-আমলকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকার তৈরি মডারেট ইসলামের আমদানি করেছে।
মুসলিম তরুনদের চরিত্র কে ধ্বংস করার জন্য, তাদের মাঝে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনাকে ছড়িয়ে দিয়েছে। মুসলিম যুবকদের চিন্তাশক্তিকে নষ্ট করে দেয়ার জন্য তাদের মাঝে মাদকদ্রব্য কে ব্যপক করে দিয়েছে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
তাদের এই নগ্ন থাবা থেকে জাযিরাতুল আরবের পবিত্র ভূমিও রক্ষা পায়নি। যেই পবিত্র ভূমিতে রাসূল ﷺ শুয়ে আছেন, যেই পবিত্র ভূমিতে দ্বীনের বিজয়ের জন্য হাজারো সাহাবায়ে কেরাম রক্ত ঝড়িয়েছেন, দ্বীনের জন্য শহীদ হয়েছেন, যেই পবিত্র ভূমিতে মুসলিম উম্মাহর সম্মানের স্থান ও ঐক্যের নিদর্শন বাইতুল্লাহ্ অবস্থিত, সেই পবিত্র ভূমিতে এরা আজ সিনেমাহল নির্মাণ করছে, নর্তকীদের ভাড়া করে এনে নাচ-গানের আয়োজন করছে! নাউজুবিল্লাহ! আজ ভারতীয় মুশরিকদের অশ্লীল মুভি জাজিরাতুল আরবের সিনেমা হলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে। এইসব কিছুই এসব দালাল-তাগুত শাসকের উপহার।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
সত্য আজ সকলের সামনে পরিষ্কার। সত্য থেকে মিথ্যা আলাদা হয়ে গেছে। হক আর বাতিল স্পষ্টরূপে চেনা যাচ্ছে। এরপরেও যদি কেউ এসব তাগুত শাসকদের পক্ষাবলম্বন করে, এসব কুলাঙ্গার শাসকদের কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত ‘উলুল আমর’ প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে, তাহলে আমি সেই সকল চাটুকার আর দরবারি মোল্লাদের হেদায়েতের জন্য তাদেরকে রাসূল ﷺ-এর হাদিস স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ﷺ বলেন:
‘‘আমার পর অচীরেই এমন কিছু শাসক আসবে; যে তাদের কাছে যাবে, তাদেরকে তাদের মিথ্যা কর্মের সমর্থন করবে, তাদেরকে তাদের জুলুমের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে, সে আমার থেকে নয় আমিও তার থেকে নই। এবং কিয়ামতের দিন হাউজে কাউসারে সে আমার থেকে পানি পান করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি তাদের কাছে যাবে না, তাদেরকে তাদের জুলুমের ব্যাপারে সহযোগিতা করবে না, তাদেরকে তাদের মিথ্যার ব্যাপারে সমর্থন করবে না, সে আমার থেকে আমিও তার থেকে। অতিসত্বর হাউজে কাউসারের নিকট সে আমার সাথে মিলিত হবে।’’
Comment