ﺑِﺴْــــــــــــــــﻢِﷲِﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِﺍلرَّﺣِﻴﻢ ️
আমাদের পরিচয় নিঃশেষ করে দিলো-অভিশপ্ত জাতীয়তাবাদ
┇Shaikh Tamim Al Adnani┇
┇Shaikh Tamim Al Adnani┇
আমাদের ইতিহাস গৌরব-উজ্জ্বল ইতিহাস। আমাদের ইতিহাস বিজয়ের ইতিহাস। আমারা পুরো মুসলিম উম্মাহ ছিলাম এক ও অভিন্ন জাতি। অভিন্ন ভূখণ্ডের মাঝেই আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আমরা কখনোই ভিন্ন ভিন্ন দেশ-পরিচয়ে বিভক্ত ছিলাম না। আমাদের পতাকার মাঝেও কোন ভিন্নতা ছিল না। আমাদের ছিল এক পতাকা। আমাদের পারস্পরিক বন্ধন ছিল সীসা-ঢালা প্রাচীরের মত।
আমাদের সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “এক মু'মিন অপর মু'মিনের জন্য প্রাচীরের মত। যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।”
আমাদের কেউ নির্যাতিত হলে আমরা সকলেই একসাথে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তাম। আমাদের একজনের জখমে আমরা সকলেই জর্জরিত হতাম। একজনের ব্যথায় সবাই ব্যথিত হতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের পরিচয় দিয়েছেন, “আমরা হলাম এক ব্যক্তির ন্যায়। আমরা হলাম এক দেহের ন্যায়।”
আমরা কারো এঁকে দেয়া নির্দিষ্ট সীমানার মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলাম না। কোন কাঁটা তারের বেষ্টনী আমাদের মাঝে প্রতিবন্ধক ছিল না।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ করছেন,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ
“আর তোমরা সকলেই আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় ভাবে আঁকড়ে ধরো । পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” [সূরা আলে ইমরান: ১০৩]
আর আমরা মহান রবের এই আদেশ মতই এক রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ছিলাম। তাওহীদের পতাকাতলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। রাসূল সাঃ. এর আদর্শ ও সুন্নাহই ছিল আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতি, আমাদের ফ্যাশন আর স্টাইল। আমরা আঞ্চলিক কোন রীতি-রেওয়াজের অন্ধ ছিলাম না।
আমরা এই আয়াতের যথাযথ অনুসরণ করতাম, "রাসূল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।"
আমরা ছিলাম এক আমীরের নেতৃত্বে নির্ভীক দুঃসাহসী এক কাফেলা। কেউ আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম হানী করবে তা তো দূরের কথা আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলার পর্যন্ত সাহস করত না।
কিন্তু আজ! কেন আজ আমাদের এই অবস্থা? কেন আমাদের এত রক্তক্ষরণ? মা-বোনদের এত করুণ আর্ত-চিৎকার! আজ কী আমাদের পরিচয়?
হে উম্মাহ শুনো!
কেন আমাদের আজ এই দশা। সেই শুরু থেকেই আমাদের সূদৃঢ় ঐক্যের মাঝে চীর ধরানোর জন্য কুচক্রী কাফের আর মুনাফিকরা সবসময় অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলো। ধীরে ধীরে তারা নানা অপকৌশল চালিয়ে আমাদের সর্বশেষ ঐক্যের নিশান খিলাফতে-ওসমানীয়াকে ধ্বংস করে ফেললো। আর তারা তা ঠিক তখনি করতে পেরেছিল যখন আমরা নিজেরাই আমাদের বিজয়ের পথ থেকে সরে পরেছিলাম। দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব-ই নিজেরা ভুলে গিয়েছিলাম।
এরপর এই উম্মাহকে তারা একে একে ৫৭টি রাষ্ট্রে পরিণত করল। কুচক্রী কাফিররা শুধু আমাদের পৃথক করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা আমাদের পরস্পরের মধ্যে বিভিন্ন আয়তনের সীমানা এঁকে দিল। আমাদেরকে ৫৭ টি ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করল।
আমরা হয়ে পড়লাম কেউ মিশরী, কেউ লেবাননী, কেউ পাকিস্তানী, কেউ বাংলাদেশী। আর আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হল বিভিন্ন রং এর পতাকা। করো লাল-সবুজ, করো সাদা-লাল-সবুজ, করো চাঁদ-তারা এমন রং বেরং এর তামাশা!
একেক ভূখণ্ডে একেক রকম জাতীয় ফল-ফুল। একেক ধরনের জাতীয় পশু-পাখি, আরো বৈষম্যময় অদ্ভুত কত কী! আজ এগুলোই নাকি আমাদের চেতনা! এগুলোই নাকি আমাদের স্বকীয়তা! এগুলোই নাকি আমাদের পরিচয়!
আশ্চর্য! যে আমরা একে অপরের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতেও একটু পিছপা হতাম না। সেই আমরাই আজ নিজেদের পতাকার জন্য, নিজেদের অন্ধ জাতীয় স্বার্থের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম! একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র পর্যন্ত তাক করা শুরু করলাম! অন্যের বিপদ দেখে নিঃশ্চুপ হয়ে বসে রইলাম! শুধু নিজেদের দেশ পরিচয়কে বিশ্বের মাঝে ফুটিয়ে তোলার জন্য, কত বেহুদা কাজে মত্ত হয়ে উঠলাম!
মালাউন-কাফিররা আমাদের মাঝে নানা দিবসের প্রচলন ঘটিয়ে দিয়েছে। আমাদেরকে নির্বোধের মত শিখানো হয়েছে–এটা তোমাদের বিজয় দিবস, এটা তোমাদের স্বাধীনতা দিবস, এটা তোমাদের ভাষা দিবস! তোমরা এসব দিবস উদযাপন করো, আনন্দ-উল্লাসে আত্মহারা হয়ে যাও! ফলে আজ তাই হচ্ছে। কতগুলো ইট-সিমেন্টের মূর্তির সামনে গিয়ে ফুল দেয়া হচ্ছে, পূজা করা হচ্ছে। এভাবেই একদিকে যেমন আমাদেরকে জাহেল বানিয়ে শির্কে লিপ্ত করানো হচ্ছে, অপরদিকে আমাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য আর বিভেদ তৈরি করে এককে অপরের বিদ্বেষী বানানো হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, হামেশা যেন আমরা নিজদেশীয় চেতনায় ডুবে থাকি–এজন্য ওরা আমাদের মাঝে বিভিন্ন অর্থহীন খেল-তামাশা চালু করে দিয়েছে। আর আমরাও আজ এসব অহেতুক মাতলামিতে মত্ত হয়ে পড়েছি। চলছে নিজ দেশের সুনামের জন্য ক্রিকেট-ফুটবল-হকি এমনি অনেক অহেতুক ক্রীড়া আর অপসংস্কৃতির উন্মাদনা।
আজ নিজ দেশের জন্য গান গাওয়া হচ্ছে। নিজ দেশের জন্য কবিতা আবৃত্তি করা হচ্ছে। নিজ দেশের জন্য শপথ শিখানো হচ্ছে। এভাবেই এক-ব্যক্তি এক-দেহসম পুরো মুসলিম উম্মাহকে কাফের-মুশরিকরা নিজ নিজ চেতনা আর সংস্কৃতির নামে কুফরি মতবাদে জড়িয়ে বিভক্ত করে ফেলল। আর এটাই হচ্ছে জাতীয়তাবাদ। এটাই হচ্ছে জাতীয়তা-বোধ নামক মূর্তি। আজ এই জাতীয়তাবাদের চেতনার কাছে দ্বীন, আকীদা সবই নগণ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে!
আরো আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল–যেই জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বানকারী সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে স্পষ্ট ভাবে এরশাদ করেছেন,
“যে ব্যক্তি লোকদের জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করে অথবা জাতীয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে অথবা জাতীয়তাবাদের জন্য মৃত্যুবরণ করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।"
বর্তমানে সেই রাসূলের হাদীসের নামে একটি জাল ও মিথ্যা কথা কে খুব জোরে-সোরে প্রচার করা হচ্ছে তা হল, “দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ”—এই কথা একটি প্রসিদ্ধ ভিত্তিহীন কথা, একেবারে জাল হাদীস। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়নি। অজ্ঞ জাতীয়তাবাদ পূজারীরা-ই এই ভিত্তিহীন কথার প্রচার করে চলছে।
সুতরাং এই আলোচনার পরও যদি জাতীয়তাবাদ বুঝতে কারো সংশয় থেকে থাকে তবে সে যেন এই হাদীস দুটি কয়েকবার পড়ে নেয়, কিংবা ভাল করে শুনে নেয়:
• সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করতে গিয়ে অথবা জাতীয়তাবাদের জন্য সাহায্য করতে গিয়ে অজ্ঞতার পতাকা তলে নিহত হয় তবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো।”
• সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি লোকদের জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের জন্য মৃত্যুবরণ করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
• সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি লোকদের জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের জন্য মৃত্যুবরণ করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
Comment