ﺑِﺴْــــــــــــــــﻢِﷲِﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِﺍلرَّﺣِﻴﻢ ️

সেই পতাকা সন্মানের এই পতাকা লাঞ্ছনার!
┇শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ┇
┇শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ┇
চারদিকে উড়ছে রং-বেরং এর পতাকা! কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ ফ্রান্স, কেউ ইটালি–এভাবেই বিভক্ত আজকের অধিকাংশ জনতা। ফুটবলের-নিজ-পছন্দের দেশটির–কে কত পতাকা উড়াতে পারে, কে কত বিশাল পতাকা টানাতে পারে দেশ জুড়ে চলছে এই প্রতিযোগীতা!
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
এসব দেখে বারবার একটা পার্থক্যের কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। এই পার্থক্য–সাহাবায়ে কেরাম (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহুম)-এর সাথে উম্মার বর্তমান যুব-সমাজের পার্থক্য। এই পার্থক্য–সালাফে-সালেহীনদের সাথে আজকের মুসলিম দাবীদারদের পতাকা উড্ডীন করার পার্থক্য।
আপনারা সীরাত কিংবা তারীখের কিতাব খুলে দেখুন, সেখানে দেখবেন, সাহাবায়ে কেরাম (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহুম)-ও পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। কিন্তু কী সেই পতাকা! যেই পতাকাকে উড্ডীন রাখার জন্য তাঁরা নিজ দেহের রক্ত ঢেলেছেন? কিসের পতাকাকে উঁচু রাখার জন্য তাঁরা আপন জান কুরবানী করে ময়দানে লড়াই করেছেন?
আল্লাহু আকবার!
মু'তার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি যায়িদ ইবনে হারেসা (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) যখন শহীদ হয়ে গেলেন যাফর ইবনে আবু তালিব (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) পতাকা উঠিয়ে পূর্ন-উদ্যমে যুদ্ধ শুরু করলেন। যুদ্ধ চলছে এমনি মূহুর্তে তিনি ঘোড়া থেকে নেমে–ঘোড়ার পা কেটে দিলেন। অতঃপর আঘাতের পর আঘাত হেনে–কাফেরদের প্রতিহত করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে শত্রু পক্ষের আঘাতে তাঁর ডানহাত কেটে গেল, তিনি বাম হাতে পতাকা তুলে নিলেন। এরপর শত্রুর আঘাতে তাঁর বাম হাত কাটা গেল। জাফর ইবনে আবু তালিব (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) তাঁর দুহাতের অবশিষ্ট অংশ দিয়ে বুকের সাথে কালেমার পতাকা জড়িয়ে ধরলেন। শাহাদাতের আগ পর্যন্ত তিনি তাওহীদের ঝান্ডাকে সমুন্নত রাখলেন। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) পতাকা উঠিয়ে নিলেন। তিনি ঘোড়ার পিঠে উঠে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে–লড়াই করতে লাগলেন। তরবারি হাতে–কাফিরদের মোকাবেলা করতে করতে–শাহাদাত লাভে ধন্য হলেন। তাঁর শাহাদাতের পর ‘বনু আজলান’ গোত্রের সাবিত ইবনে আকরামা (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) পতাকা উঁচিয়ে ধরলেন। তারপর এই সম্মানের পতাকাকে মুসলিম বাহিনীর নতুন সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)-এর হাতে হস্তান্তর করা হল, তিনি পতাকা হাতে নিয়ে বীর-বিক্রমে যুদ্ধ করতে লাগলেন।
আর মদিনায় বসে বসে এই ঘটনাই ওহির মাধ্যমে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্মুখে উপবিষ্ট সাহাবায়ে কেরামকে বলছিলেন, “পতাকা হাতে যায়েদ যুদ্ধ করছে, সে শহীদ হয়ে গেল। এবার জাফর পতাকা হাতে নিল, তারপর সেও শহীদ হয়ে গেল। এবার আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা পতাকা হাতে নিল, তারপর সেও শহীদ হয়ে গেল। অতঃপর পতাকা হাতে নিল আল্লাহর তরবারির মধ্য হতে একটি তরবারি। এমনকি আল্লাহ তা'য়ালা–তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীকে বিজয় দান করলেন।”
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
কিসের পতাকাকে সাহাবায়ে কেরাম এভাবে উড্ডীন রেখেছিলেন? শাহাদাতের আগ–পর্যন্ত সুউচ্চে ধারন করেছিলেন? সেই পতাকা হল–ইসলামের পতাকা। তাওহীদের ঝান্ডা। ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয়ের পতাকা।
কিন্তু আজ! আজ নিজেকে মুসলিম দাবীদারেরা কিসের পতাকা উড়াচ্ছে? কাদের সমর্থনে পতাকা উঁচিয়ে উল্লাস করছে? আফসোস! শত আফসোস! সাহাবায়ে কেরাম-ও পতাকা উড্ডীন রেখেছিলেন। সেই পতাকা ছিল ইসলামের পতাকা। আজকের লাখো-লাখো-মুসলিম যুবকও পতাকা উড়াচ্ছে কিন্তু এই পতাকা কাফিরদের পতাকা।
সাহাবায়ে কেরাম-ও পতাকা উঁচু করেছিলেন, সেই পতাকা ছিল তাওহীদের পতাকা। আজকের মুসলিম যুবকরাও পতাকা উচু করছে কিন্তু এই পতাকা হচ্ছে কুফর ও শিরকের পতাকা।
সাহাবায়ে কেরাম-ও পতাকা উড্ডীন করে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন, সেই পতাকা ছিল সন্মানের পতাকা। আজকের মুসলিম যুবকরা-ও পতাকা উড্ডীন করে, আনন্দ-উল্লাস করছে কিন্তু এই পতাকা হচ্ছে অপমান ও অপদস্ততার পতাকা, এই পতাকা হচ্ছে নিজের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে লাঞ্ছনা নিয়ে মেতে উঠার পতাকা।
আজ যখন কাফিরদের-সন্ত্রাসী-তান্ডবে মুসলিম ভূখণ্ড-গুলোতে মুসলিম নারী-শিশুরা উদ্বাস্তুের মত জীবন-যাপন করছে। একমুঠো খাবারের জন্য মলিন চাহনিতে চেয়ে আছে–ঠিক সেই সময়, তাদের লাখো-কোটি মুসলিম ভাইয়েরা–ফুটবল উন্মাদনায় সময় কাটাচ্ছে! হাজার-হাজার টাকা খরচ করে কাফিরদের পতাকা উড়াচ্ছে!
তারা ভুলে গেছে মুসআব, হামজা, খালিদের বীরত্বের কথা। তারা জানে না তারিক, সালাহউদ্দিন, মুহাম্মদ বিন কাসিমদের বিজয়ের কথা! তারা জানে মেসি, নেইমারদের রেকর্ড, স্টাইল আর বেশ-ভূষা!
তাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করে হিংস্র-হায়নারা যখন আমোদ-ফূর্তি করছে, তখন তারা চার-ছক্কা কিংবা গোল নিয়ে মেতে উঠছে! তাদের ভূমিগুলো দখল করে কাফিররা যখন শক্তি প্রদর্শন করছে, বোমার আঘাতে ইসলামের নিদর্শন-গুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, তখন তারা কাফিরদের গোল-শুট দেখে–আনন্দ করার অপেক্ষায় আছে!
হে প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
আজ শুধু একটি পার্থক্যের কথাই বললাম।
আজ শুধু একটি পার্থক্যের কথাই বললাম।
সাহাবায়ে কেরাম পতাকা উড্ডীন রেখেছিলেন সেই পতাকা ছিল ইসলামের পতাকা। আজকের লাখো-লাখো মুসলিম যুবকও পতাকা উড়াচ্ছে, কিন্তু এই পতাকা কাফিরদের পতাকা, এই পতাকা অপমান-অপদস্ততার পতাকা, এই পতাকা লাঞ্ছনার মাঝে ডুবে থাকার পতাকা, এই পতাকা নিজের ইতিহাস-ঐতিহ্য-অস্তিত্ব ভুলে—কুফর ও শিরককে বরন করে নেয়ার পতাকা, এই পতাকা হাফ-প্যান্ট পরিহিত ফুটবল-প্লেয়ারদের সতর দেখে উল্লাস করার পতাকা।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সমস্ত মুসলিম ভাইদের এই পার্থক্যটুকু বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।
Comment