তোমাদের নীরবতা মাজলুমরা ভুলে যাবে না
┇শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ┇
┇শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ┇
সম্মানিত উপস্থিতি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ আপনাদের সামনে পৃথিবীর কিছু বাস্তব চিত্র তুুলে ধরছি।
প্রিয় উপস্থিতি!
এই বিষয়টি আমরা সকলে প্রত্যক্ষ করছি, শামের গৌতায় যখন ছোট ছোট মাসুম বাচ্চা গুলোকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে তখন ‘আলে-সাউদ’ আরবের মাটিতে বিভিন্ন আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠার–অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে।
যখন মুসলিমদের বাড়ি-ঘর গুলো কাফিরদের অব্যাহত বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হচ্ছে তখন সৌদিয়ান নারীদের জন্য ওপেন কনসার্ট ফ্যাশন-সো ও স্টেডিয়ামে বসে–খেলা দেখার আয়োজন চলছে!
মুসলিম মায়েরা যখন রক্তাক্ত সন্তানকে বুকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় স্থলের অভাবে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করছে তখন ‘আলে-সাউদ’ আরবের পবিত্র ভূমিতে হাজার-হাজার কোটি টাকা খরচ করে সিনেমা হল নির্মান করছে!
শামের মুসলিমরা যখন অনাহারে চিৎকার করছে তখন আরবের এক কুলাঙ্গার শাসক ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে যিশু খৃষ্টের একটি চিত্রকর্ম খরিদ করছে!
প্রিয় উপস্থিতি!
একদিকে কাফিররা সম্মিলিত আগ্রাসন চালিয়ে পুরো শামকে ধ্বংস করছে আর অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশ-গুলোর মাঝে সুউচ্চ ভবন ও বিলাস-বহুল অট্টালিকা নির্মানের প্রতিযোগীতা চলছে।
হায় আফসোস!
কেউ ধ্বংস স্তুপের নিচ থেকে তাকে উদ্ধারের জন্য আত্মচিৎকার করছে, কেউ রক্তাক্ত সন্তানের মৃতদেহকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে গগন বিদারক আর্তনাদ করছে আর কেউ জীবনকে উপভোগ করার জন্য লক্ষ-কোটি ডলার খরচ করে নিজেদের সবকিছুকে পাশ্চাত্যের রং-ঢংয়ে সাজানোর চষ্টা করছে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আজ কাফিররা আমাদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। আমাদের উপর আগ্রাসন চলাচ্ছে। একের পর এক আমাদের পবিত্র ভূমি-গুলোকে অপবিত্র করছে। আমাদের লক্ষ লক্ষ নারী-শিশুকে নির্মম ভাবে হত্যা করছে। আমাদের মসজিদ-মাদ্রাসা-হাসপাতালসহ সাধারণ স্থাপনা গুলোর উপর নির্বিচারে বোম্বিং করছে! এর কারন কি? আমাদের কিসের অভাব? তারা কেন আমাদের উপর এই আক্রমন করার সুযোগ পাচ্ছে?
আপনারা হয়ত বলবেন, আমরা সংখ্যায় কম, অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ না, সামরিক শক্তিতে আমরা দুর্বল, তাই আমরা কাফিরদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছি না।
প্রিয় উপস্থিতি!
নিজেদের ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করবেন না। আসলে বিষয়টা এমন না। পৃথিবীতে আজ আমরা জনসংখার দিক থেকে প্রায় ২০০ কোটির কাছাকাছি। স্বর্ণের খনি এই উম্মতের হাতে, তেলের খনি এই উম্মতের হাতে, গ্যাসের খনি এই উম্মতের হাতে, কয়লার খনি এই উম্মতের পদতলে। খনিজ সম্পদের উপর মুসলিম দেশ গুলো ভাসছে।
আমাদের ভূখন্ডে বানিজ্য করে কাফিররা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা যদি সাময়িক সময়ের জন্যও ওদের সাথে বানিজ্য বন্ধ করে দেই–তাহলে ওরা না খেয়ে মারা যাবে। আজ সামরিক শক্তির দিক থেকেও মুসলিম দেশগুলো অনেক শক্তিশালী।
কিন্তু আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের অর্থ-সম্পদ মুসলিম উম্মাহর কোন কাজে আসছে না। মুসলিম উম্মাহর রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য এসব অর্থ-সম্পদ ব্যয় হচ্ছে না। এসব ব্যয় হচ্ছে বিলাসিতা আর বিনোদনে। এগুলো খরচ হচ্ছে কাফিরদের সন্তুষ্ট করার পিছনে!
বর্তমানে মুসলিম দেশের মুসলিম নামধারী তাগুত বাহিনী গুলো-ও এই উম্মাহর তরে কোন কাজে আসবে না বরং তারা ব্যস্ত রয়েছে কুফফার সংঘের মিশন বাস্তবায়নে।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
খুব ভাল করে জেনে রাখুন, আজকের এই পরিণতি শুধু শাম বা সিরিয়ায় নয়, আজকের এই পরিণতি শুধু হালাব বা ইদলিব-বাসীর নয়। আজকের এই নির্মম পরিণতি শুধু মাত্র গৌতার অধিবাসীদের নয়, আজকে যারা শামের মুসলিমদের এই করুণ অবস্থা দেখে নিরব নিস্তব্ধ বসে আছে, এই পরণতি একদিন তাদেরকেও ভোগ করতে হবে।
কেননা, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যদি শামবাসী ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তোমাদের মাঝে কোন কল্যাণ থাকবে না।"
সুতরাং যারা শামের অধিবাসীদের এই করুণ পরিস্থিতি দেখেও চুপচাপ বসে আছে আর নিজেরা শন্তিতে বসবাস করার চিন্তা করছে তাদের এই সুখ-শান্তি অচীরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। সেই সময় হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যেদিন এই সুউচ্চ প্রাসাদ আর বিলাস-বহুল অট্টালিকা গুলোও ধুলোর সাথে মিশে যাবে। তাদেরকে সুউচ্চ প্রাসাদ ছেড়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
শামের মুসলমানদের এই করুণ পরিস্থিতি দেখে যদিও আমাদের অন্তরগুলো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। তবুও আমরা আশা নিয়ে বলতে পারি ইন শা আল্লাহ শামের সিংহরা অবশ্যই জেগে উঠবে। শামের জানবাজ মুজাহিদরা এই রক্তের প্রতিশোধ অবশ্যই নিবে। কারন শাম হচ্ছে বরকতের ভূমি। শাম হচ্ছে ইসা আলাইহিস সালাম এর অবতরণের ভূমি। তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে শামের এই গৌতা শহরটি হবে মু'মিনদের ঘাঁটি। এখান থেকেই ইমাম মাহদী মুসলিম বাহিনী পরিচালনা করবেন।
সুনানে আবু দাউদে এসেছে, আবু দারদা রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "হক ও বাতিলের চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় মুসলিমদের ঘাঁটি হবে গৌতা নামক শহরে যা শামের সর্বোত্তম শহর দামেস্কের পাশে অবস্থিত।
শামের অবস্থা আজ যত কঠিন-ই হোক না কেন, এখান থেকেই মুসলিম ফৌজ পরিচালিত হবে। সমস্ত কুফফার জোট একত্র হয়ে-ও এই বাহিনীর সম্মুখ যাত্রাকে রুখতে পারবে না।
ইতিহাস সাক্ষী ফেরাউন-ও শেষ করে দিতে চেয়েছিল মুসা আলাইহিস সালাম এর জন্ম ও তাঁর বেড়ে উঠাকে। কিন্তু সে পারেনি বরং সে নিজেই চরমভাবে ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে সদলবলে।
ইমাম মাহদীর যুদ্ধ পরিচালনার এই হেডকোয়াটারকেও আজকের ফেরাউনরা ধ্বংস করে দিতে চায়। কিন্তু অচীরেই তাদের পরিণতি-ও পূর্বের ফেরাউনের মতই হবে। শুধু আজকের ফেরাউনরাই নয় বরং এই দাজ্জালি শক্তির মধ্যে যারাই কাজ করে যাচ্ছে তাদের সবাইকে-ই ভোগ করতে হবে নিজেদের সীমালঙ্ঘনের যথার্থ পাওনা।
পরিশেষে শামের মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য আল্লাহ তা'য়ালার কাছে প্রার্থনা করছিঃ
হে আল্লাহ! শাম তো হচ্ছে ঐ বরকতময় ভূমি–যেই ভূমির জন্য তোমার হাবীব প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেছেন, "হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের শামের ভূমিতে বরকত দান কর। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের শামের ভূমিতে বরকত দান কর।"
হে আল্লাহ্! শামতো হচ্ছে সেই বরকতময় ভূমি যার অধিবাসীদের দেখা-শুনার দায়িত্ব তুমি নিয়েছ। তোমার হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ তা'য়ালা আমার উসিলায় শাম ও তার অধিবাসীদের ভরন-পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন।"
হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আমাদের তো সাহায্য করার মত আর কেউ নেই। হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আমাদের তো সাহায্য করার মত আর কেউ নেই। আমরা আমাদের অপারগতাকে তোমার সামনে প্রকাশ করছি। হে আল্লাহ! আমরা আমাদের অপারগতাকে তোমার সামনে প্রকাশ করছি।
হে আল্লাহ! তুমি শামের মুসলিমদের জন্য যথেষ্ঠ হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি শামের মুজাহিদীনদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি শামের মাজলুমানদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও। হে আল্লাহ্! তুমি শামের মুজাহিদীনদের অটল-অবিচল রাখ। হে আল্লাহ! কাফেরদের মোকাবেলায় তাদের বিজয় দান কর। আমীন।
Comment