Announcement

Collapse
No announcement yet.

আল ওয়ালা ওয়াল বারার পরিচয়

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আল ওয়ালা ওয়াল বারার পরিচয়

    আল ওয়ালা ওয়াল বারা'র পরিচয়
    الولاء-একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তার মধ্যে المحبة বা ভালোবাসা,النصرة-সাহায্য, الاتباء-অনুসরণ, القرب-নিকটবর্তী হওয়া। আল ওয়ালা এর সমার্থক শব্দ হলো الموالاة অর্থ ভালোবাসা, সমঝোতার সময় পক্ষপাতিত করা। আল ওয়ালা(الولاء)এর শরীয় অর্থঃ আল্লাহ তাআলা যে সত্তা, বিশ্বাস, কথা ও কাজকে ভালোবাসেন এবং যা কিছু উপর সন্তুষ্ট বান্দাও সেসবকে ভালোবাসা এবং তার ওপর সন্তুষ্ট থাকাকে আল ওয়ালা বলা হয়। আল বারা (البراء) একাধিক অর্থের ব্যবহৃত হয় তন্মধ্যে، দূরবর্তী হওয়া، মুক্ত হওয়া، পৃথক হওয়া শত্রুতা রাখা। আল বারার (البراء) সমার্থক শব্দ، العداوة-ঘৃণা করা، দূরবর্তী হওয়া। আল বারার (البراء) এর শরয়ী অর্থ, আল্লাহ তায়ালা যে সত্তা, বিশ্বাস, কথা ও কাজকে অপছন্দ ও ঘৃণা করেন, বান্দাও সেসবকে অপছন্দ ও ঘৃণা করাকে আল বারা বলা হয়।

    ইসলামে আল ওয়ালা ওয়াল বারা'র গুরুত্বঃ
    ১/এ আকিদাটি কালিমাতুস শাহাদাতের একটি অংশ। لااله الا الله এর لااله অর্থ হল আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয় তাকে বর্জন করা।(দলীলঃ সূরা নাহল ১৬/৩৬)
    ২/এই আকিদাটি ঈমান সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত। (দলীলঃ সূরা মায়েদা-৫/৮০-৮১)
    ৩/এই আকিদাটি ঈমানের সবচেয়ে মজবুত হাতল। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা।
    ৪/এই আকিদার উপর আমল এর দ্বারা ঈমানের মিষ্টতা ও ইয়াকিনের স্বাদ লাভ হয়।
    ৫/সমাজ বিনির্মাণের একমাত্র বাঁধন হল এই আকিদা, আল ওয়ালা ওয়াল বারা। (দলীলঃ সুরা হুজুরাত ৪৯/১০)
    ৬/এই আকিদা বাস্তবায়নকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর নিকট সুসংবাদ।
    ৭/শরীয়তে আকিদার ভিত্তিতে সৃষ্টি সম্পর্ক অন্য সকল সম্পর্কের উপর প্রাধান্য দিয়েছে। (দলীলঃ সুরা তাওবা- ৯/২৪)
    ৮/এই আকিদা বাস্তবায়নের দ্বারা আল্লাহ তায়ালার বেলায়েত, তথা অলি হওয়ার মর্যাদা লাভ হয়।
    ৯/কেয়ামতের দিন এই আকিদার ভিত্তিতে সৃষ্ট বন্ধন ছাড়া অন্য সকল বন্ধন চিহ্ন হয়ে যাবে।
    ১০/অন্তরে এই আকিদার অভাব কোন কোন ক্ষেত্রে কুফরির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (দলীলঃ সুরা মায়েদা- ৫/৫১)
    ১১/কুরআন সুন্নাহে এ আকিদা সম্পর্কে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে।
    ১২/যে ব্যক্তি নিজের ভেতর আকিদা আল ওয়ালা ওয়াল বাবা ধারণ করবে সে বহুবিধ কল্যাণের অধিকারী হবে।


    আল ওয়ালা ওয়াল বারা'র দাবি সমূহ কি কি?

    একজন মুসলিমের প্রতি আল ওয়ালার দাবি সমূহঃ
    ১/ মুসলিম দেশে বসবাস এবং কাফিদের দেশ থেকে হিজরত করা। দুর্বল, অত্যাচারিত ও বিভিন্ন অজরের কারণে যারা হিজরত করতে পারছে না তারা ব্যতীত।
    ২/ দ্বীন এবং দুনিয়ার যে কোন বিষয়ে, যে কোন মুসলিমকে সমর্থন, সাহায্য করা। কথা, অন্তর বা সম্পদের মাধ্যমে বা জীবন দিয়ে হোক। (দলীল- সুরা আনফাল- ৮/৭২, সুরা তাওবা- ৯/৭১)
    ৩/ অন্যান্য মুসলিম ভাইদের আনন্দে এবং দুর্দশার সময়ে সাথী হওয়া।
    ৪/ মুসলিমদের সাথে ভালো আচরণ করা এবং তাদের জন্য উত্তম বস্তু পছন্দ করা ও তাদের সাথে ধোঁকাবাজি থেকে বিরত থাকা।
    ৫/ মুসলিমদের শ্রদ্ধা, সম্মান ও ইজ্জত করা এবং তাদের ঠাট্টা করা, গীবত করা, দোষ খোঁজ করা থেকে বিরত থাকা। (দলীলঃ সুরা হুজুরাত- ৪৯/১১-১২)
    ৬/ মুসলিমদের সাথে দেখা সাক্ষাতের আগ্রহ পোষণ করা।
    ৭/ মুসলিমদের হকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
    ৮/ দুর্বল মুসলিমদের সাথে নম্র ব্যবহার করা।
    ৯/ মুসলিমদের জন্য কল্যাণের দোয়া ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা। (দলীলঃ সুরা মুহাম্মাদ- ৪৭/১৯)
    ১০/ মুসলিম জামাআর সাথে একত্রে থাকা এবং দলাদলি, ভাগাভাগি, মতদ্বৈততা পরিহার করা। (দলীলঃ সুরাহ আলে-ইমরান- ৩/১০৩)


    একজন মুসলিমের প্রতি আল বারা'র দাবি সমূহঃ
    ১/ কুফর শিরক এবং এসব কার্য সম্পাদনকারী লোকদের ঘৃণা করা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা (দলীলঃ সূরা মুমতাহিনা আয়াতঃ০৪)
    ২/ কাফেরদের সাথে পোশাক আশাক ও আলাপচারীতার সাদৃশ্যতা না রাখা। "যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত"(আবু দাউদঃ৪০৩১)
    ৩/ কাফেরদের আউলিয়া হিসেবে গ্রহণ না করা তাদের সাথে স্নেহ ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে না তোলা। (দলীলঃ সূরা মুমতাহিনা আয়াতঃ০১)
    ৪/ তাদের ভূমি থেকে হিজরত করা। বিশেষ কোনো কারণ না থাকলে তাদের ভূমিতে ভ্রমণ না করা।
    ৫/ কাফেরদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবং জীবন ব্যবস্থাকে অনুসরণ না করা। (দলীলঃ সূরা ফুরকান-২৫/৭২)
    ৬/ কাফেরদের সাথে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে শিষ্টাচার এবং সম্মানের খাতিরে দ্বীনের মধ্যে কোন আপোষ মীমাংসা করা যাবে না। (দলীলঃ সূরা কলম আয়াতঃ০৯)
    ৭/ কাফেরদের ক্যালেন্ডার অনুসরণ না করা।
    ৮/ কাফেরদের নামে নামকরণ না করা।
    ৯/ কাফেরদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া না করা।(দলীলঃ সুরা তাওবা- ৯/১১৩)
    ১০/ মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিদের সহযোগিতা এবং তাদের প্রশংসা ও প্রতিরক্ষা করা যাবে না।


    আল ওয়ালা ওয়াল বারা'র বিধানঃ
    ১/ কাফেরদের সাথে ঐক্যমত ও সাদৃশ্যতা গ্রহণের বিধান।
    ২/ কাফিরদের দেশে ভ্রমণের বিধান।
    ৩/ কাফিরদের সাথে লেনদেনের বিধান।
    ৪/মুআমালা এবং হুসনে মুআমালাহ তথা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ও উত্তম আচরণের মধ্যে পার্থক্য।


    ১/ কাফেরদের সাথে ঐক্যমত ও সাদৃশ্যতা গ্রহণের বিধানঃ

    কাফেরদের সাথে ঐক্যমত ও সাদৃশ্যতা গ্রহণের তিনটি অবস্থা হতে পারে-
    ১. জাহের তথা বাহ্যিক বেশভূষা এবং বাতেন তথা অন্তরের বেশভূসা উভয় দিক থেকে সাদৃশ্যতা গ্রহণ করা। এই ধরনের সাদৃশ্যতা বড় কুফর।
    ২. শুধু বাতেন তথা অন্তরের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করা। এই প্রকার সাদৃশ্যতা ও সর্ব সম্মতিক্রমে বড় কুফর।
    ৩. শুধু যাহের তথা বাহ্যিক অবয়বের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করা।
    এটা আবার দুই প্রকারঃ
    (ক) সাদৃশ্যতা গ্রহণ একান্ত বাধ্যগত কারণে হবে। যেমনঃ হত্যা, শাস্তি, প্রহার ইত্যাদি কারণ।(দলীলঃ সূরা নাহল ১৬/১০৬)
    (খ) দুনিয়াবি কোন কারনে সাদৃশ্যতা গ্রহণ করা। যেমনঃ নেতৃত্ব, খ্যাতি ও ধনসম্পদ ইত্যাদি।

    এই ধরনের সাদৃশ্যতা গ্রহণকারী ব্যক্তির ব্যাপারে আলেমদের দুটি অভিমত আছে।
    ১.এটা বড় কুফর, যা সাদৃশ্যতা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে মিল্লাত থেকে বের করে দেয়।
    ২.এটা কুফরে আজগর, যা কবিরা গুনাহ।


    ২/কাফেরদের দেশে অবস্থান ও ভ্রমণের বিধান-
    অবস্থাভেদে কাফেরদের দেশে অবস্থান ও ভ্রমণ কখনো জায়েজ হতে পারে এবং কখনো হারাম হতে পারে।

    তিনটি অবস্থায় জায়েজঃ
    ১. নিজের দ্বীনদারিতার পূর্ণ নিরপত্তা এবং ইসলামের নিদর্শন গুলো যেমন, আলো ওয়ালা ওয়াল বারা, কুফর ও শিরিকের নিন্দা করা, ইত্যাদি প্রকাশের পূণ্য ক্ষমতা থাকলে, দ্বীনের দাওয়াত এর উদ্দেশ্যে কাফেরদের দেশে ভ্রমণ করা ও অবস্থান জায়েজ। জিহাদের উদ্দেশ্যে সফর করা মুস্তাহাব।
    ২. দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ইলম রাখেন এবং দ্বীনকে হেফাজত ও ইসলামের নিদর্শন প্রকাশ করতে সক্ষম। এমন ব্যক্তির জন্য ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ।
    ৩. দুর্বল নারী এবং শিশু যারা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে, হিজরত করতে পারছে না, যেমন রাজনৈতিক বা ভৌগলিক কোন কারণে, তাদের জন্য কাফেরদের ভূখণ্ডে বসবাস করা জায়েজ।

    আর দুই অবস্থায় অবস্থান এবং ভ্রমণ করা হারামঃ
    ১. দ্বীনের মৌলিক বিষয় ইলম রাখেন এবং স্বীয় দ্বীনদারিতা হেফাজত করতে সক্ষম নয়, এমন ব্যক্তির জন্য কাফেরদের দেশে ভ্রমণ করা হারাম, কবিরা গুনাহ।
    ২. কাফেরদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে, তাদের আবাসন ব্যবস্থাকে পছন্দ করে, তাদের জন্য কাফেরদের দেশে ভ্রমণ করা কুফরি।

    বিজ্ঞ আলেমগণ কাফেরদের দেশে ভ্রমণে তিনটি র্শত দেনঃ
    ১. এ পরিমাণ ইলম থাকা। যা দ্বীনি বিষয়ে যাবতীয় সংশয় থেকে মুক্ত রাখবে।
    ২. এই পরিমাণ তাকওয়া থাকা। যা সব ধরনের খায়েশাত থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
    ৩. এমন প্রয়োজন গ্রস্থ হওয়া। যা দারুল ইসলামে পূর্ণ করা সম্ভব নয়।


    ৩/ কাফেরদের সাথে লেনদেন ও পারস্পরিক রীতিনীতির বিধানঃ
    ১. হালাল পণ্য ও হালাল পণ্যের মূল্য, হালাল পন্থায় কাফেরদের সাথে ক্রয় বিক্রয় ও ভাড়া চুক্তিতে লেনদেন করা জায়েজ।
    ২. যেসব ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করা জায়েজ, কাফেরদের জন্যেও সেসব ক্ষেত্রে ওয়াকফ করা জায়েজ।
    ৩. আহলে কিতাব, নারীদের বিয়ে করা জায়েজ। আহলে কিতাব, পুরুষদের সাথে মুসলিম নারীদের বিয়ে দেওয়া নাজায়েজ।
    ৪. ঋণ দেয়া নেয়া এবং কোন কিছু বন্ধক রাখতে পারবে।
    ৫. দারুল ইসলামে কাফিররা শরীয়তের জায়েজ, এমন ব্যবসা করতে পারবে এবং তাদের কাছ থেকে তাদের ব্যবসার, যে কর নেয়া হবে, তা জনগণের ফান্ডে ব্যয় করা হবে।


    ৪/আল বারা বা সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং হুসনে মুআমালা বা উত্তম আচরণের মধ্যকার পার্থক্যঃ
    ১. হারবি কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা, সম্মান দেখানো বা তাদের ভালবাসা যাবে না।
    ২. হারবি নয় এমন কাফেরদের সাথে উত্তম আচরণ করা এবং বন্ধুত্ব প্রকাশ না করা। (দলীলঃ সূরা মুমতাহিনা আয়াতঃ ০১,০৮)
    ৩. মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর জিম্মি কাফেররা আল্লাহ ও তার রাসুল(সাঃ) এবং দ্বীনে হকের পক্ষ থেকে জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত আব্রুর নীরাপত্তা লাভ করে। ফলে মুসলমানদের জন্য তাদের নিরাপত্তা দান তাদের অধিকার রক্ষা করা, আবশ্যক হয়ে পড়ে।
    ৪. ইবনে হাজর রহঃ বলেন, এই বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, যদি হারবিরা কোন জিম্মির উপর আক্রমণ চালায়, তাহলে জিম্মিদের পক্ষে হারবিদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব।
    Last edited by Rakibul Hassan; 05-22-2023, 05:03 PM.

  • #2
    মাশাআল্লাহ। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট।
    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment


    • #3
      আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইছি,পোস্টের কিছু বানান ভুল আছে।তাই খেয়াল করে পড়া অনুরোধ রইলো।

      Comment


      • #4
        উপরের পোস্টের pdf link.

        Files.fm

        https://files.fm/f/9emx7fvjg
        Last edited by Munshi Abdur Rahman; 05-13-2023, 09:38 AM.

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ -
          Jannat1 ভাই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট করেছেন ।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে । ব্যক্তি জীবনের আল ওয়ালা ওয়াল বারা , সাথে রাষ্ট ও সামাজিক জীবনের আল ওয়ালা ওয়াল বারা হলে আরও উপকৃত হতাম
            فَقَاتِلُوْۤا اَوْلِيَآءَ الشَّيْطٰنِ

            Comment


            • #7
              Originally posted by nu'aim View Post
              মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে । ব্যক্তি জীবনের আল ওয়ালা ওয়াল বারা , সাথে রাষ্ট ও সামাজিক জীবনের আল ওয়ালা ওয়াল বারা হলে আরও উপকৃত হতাম
              ভাই আপনি যা বলেছেন তা ঠিক। ভাই একটা কথা বলছি,আমরা ক্ষমতা পেলে,রাষ্ট্রীয় ভাবে আল ওয়ালা ওয়াল বারা করা যাবে। ইনশাআল্লাহ
              যেমন এখন সুযোগ আছে তালেবানদের। তারা এখন রাষ্ট্রীয় ভাবে আল ওয়ালা ওয়াল বারা করতে পারে।
              ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

              Comment

              Working...
              X