আশির দশকে আফগানে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হবার পরে সারা বিশ্বে জিহাদের ডাক পৌঁছে যায়। বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিম যুবকরা আফগানের দিকে মাইগ্রেশন শুরু করে। দশ বছরের জিহাদে শুধু আরব থেকেই ৩০ হাজারের মতো মুসলিম নওজোয়ান আফগান জিহাদে যোগ দিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার এর মত।
বাইতুল মোকাররমের সামনে বসে ডাকা হতো, জিহাদে কে যাবেন! লিস্ট করা হতো। তারপর তাদেরকে এদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আফগানে প্রেরণ করা হতো। সরকারের কোনো মাথাব্যথা ছিলো না।
আফগান জিহাদের এক মুজাহিদ প্রধান গুলবুদ্দীন হিকমাতইয়ার বাংলাদেশে আসলেন। ইসলামী ঘরানার ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। যাওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট এরশাদকে একটি রিভলবার উপহার দিয়ে গেলেন।
একটা পর্যায়ে আফগান বিজয় হলো। এদেশে বিভিন্ন দেশের মুজাহিদীন তাদের স্ব স্ব ভূখণ্ডে ফিরে গেলেন। এদেশের মুজাহিদরাও ফিরে আসলেন। তাদের কেউ ঘর সংসার করায় মন দিলেন। কেউ আবার চিন্তা করলেন এদেশে কিভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যায়।
সেই থেকে শুরু হলো এদেশে জি-হাদের যাত্রা। হারাকাত আল জিহাদ আগে থেকেই ছিলো নতুন প্রতিষ্ঠা হলো জা-মাআতুল মুজাহিদীন।
________________
সর্বহারা পার্টি নামক এই কমিউনিস্ট সন্ত্রাসীদের যন্ত্রণায় উত্তরবঙ্গের লোকেরা আতংকে দিন যাপন করতো।
চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম, খুন সব তাদের কাছে ছিলো নিত্যদিনের ব্যাপার। প্রশাসন ছিলো এই অস্ত্রধারীদের সামনে অকেজো। প্রশাসনকে কোনো কেয়ারই করেনি তারা।
জামাআতুল মুজাহিদীন প্রতিষ্ঠার পরপরই উত্তরবঙ্গে নাস্তিক সর্বহারা পার্টির দিকে নজর দেয় এবং তাদেরকে গুম ও হত্যা শুরু করে। মানুষের সামনে থেকে এই সর্বহারা পার্টির বিলুপ্তি ঘটতে থাকে।
যার ফলে দেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলটাতে এই জামাআহ্ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ওলামায়ে কেরাম এই জামাতকে ব্যাপক সমর্থন করেন।
পাশাপাশি তারা তাদের প্রতিনিধি দল পাঠায় দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের দরবারে। বিশেষ করে ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের সময় মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবার পর তাদের চালানো ক্যাম্পেইন তাদের জন্য এই ভূমির দরজা খুলে দেয়।
ব্যাপক জনসমর্থন থাকার কারণে প্রশাসন তাদেরকে এড়িয়ে যায়। এমনও হয়েছে যে ডিসি অফিসের সামনে তাদের প্রতিনিধি বক্তব্য দিয়েছেন।
সাংবাদিকরা অপেনলি তাদের আব্দুর রহমান(রহ) এর সাক্ষাতকার নিয়েছে।
জামাআতুল মুজাহিদীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে। এটা ছিলো এক দুর্দিন, এমন এক সময় যখন দেশব্যাপী মুসলিমদের উপর আওয়ামী লীগ ব্যাপক স্টিম রোলার চালাচ্ছে।
৯৬ সালে হাসিনা পট্টি মাথায় ও তসবি হাতে নিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় যায়। গিয়েই চোখ পাল্টিয়ে ফেলে। তাদের ইসলামবিদ্বেষ এতটাই উপরে উঠেছিলো যে মু'জি'বকে তারা আল্লাহর সাথে তুলনা করার ধৃষ্টতা দেখায়। ২০০১ সালে দেশব্যাপী ২৬ হাজার উলামা-তোলাবাকে গ্রেফতার করে।
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক(রহ)কে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিলো, এক মাস উযূ গোসলের পানি দেয়নি।
ফলে তারা ২০০১ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪ টি আসন পায় সারা দেশে। এমনকি তার নিজের এলাকার লোকেরাও ভোট দেয়নি।
জানা যায় ওই সময়ে গোপালগঞ্জের লোকেরা নিজেদেরকে হাসিনার পরিচয়ে পরিচয় দেয়ার পরিবর্তে জামাতুল মুজাহিদীন এর নেতৃবৃন্দের পরিচয়ে পরিচয় দিতো।
মুজাহিদদের এই উত্থানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শরীয়াহ বিচ্ছিন্ন এই ভূখণ্ড যেনো নতুন এক শরীয়াহ চালিত হুকুমতের ঘ্রাণ পাচ্ছিল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিলো ভিন্ন।
_________
বিভিন্ন অপারেশনে সাউন্ড ব্লাস্ট এর ব্যবহার, বোম্বিং প্রভৃতির কারণে এই জামআতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেটা করুক, কিন্তু ব্যাপক জনসমর্থনপ্রাপ্ত ও উলামায়ে কেরাম কর্তৃক সাপোর্টেড একটা জামাআতের নেতৃবৃন্দের পক্ষে সম্ভব ছিলো ধৈর্য সহকারে নতুন কৌশল খাটানো। যে কৌশল খাটিয়েছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহ(রহ)।
কিন্তু এই সময়টাতে জামাআতের নেতৃবৃন্দ এক কৌশলগত ভুল করে বসেন। আর এটাই ছিলো সেই ভুল যা এদেশের মাটিকে মুজাহিদদের জন্য একেবারে সংকীর্ণ করে ফেলে। তারা সিদ্ধান্ত নেন স'রকারকে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাতে সারা দেশে সাউন্ড ব্লাস্ট এর আয়োজন করবেন।
তারা সারা দেশে সর্বাত্মক সাউন্ড ব্লাস্ট এর আয়োজন করেন এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেন। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়।
মিডিয়া এটাকে ব্যাপকভাবে বোম্বিং হিসেবে প্রচার করে। সারা বিশ্বে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থেকে চাপ আসতে থাকে।
৫০০ বোমা হামলায় তেমন হতাহত হয়নি। কারণ বোমাতে তারা কোনো শার্পনেল ব্যবহার করেনি। Sharpnel হলো ওইসব ধাতব টুকরা যা বিস্ফোরণের সাথে ছুটে গিয়ে হতাহতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু বোমা হামলা তো বোমা হামলাই, সেটা পটকা নাকি আতশ... দেখার অপেক্ষা কেউ করবে না।
সরকার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। আর্মি নেমে পড়ে তাদের বিরুদ্ধে। সরকার ওই সময়ে কুখ্যাত র্যাব তৈরি করে। এদেশের ইতিহাসে মুজাহিদদের জন্য নেমে এক মুসিবতের অধ্যায়। শতশত মুজাহিদদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় তাদের ফ্যামিলিকে।
তাদের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলায় ত্বা-গুত বাহিনী।
উলামায়ে কেরাম এই জামাআতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। রোদে পুড়ে আন্দোলন করে জানিয়ে দেন তারা জঙ্গিবাদ সমর্থন করেন না।
আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর বই লেখেন 'ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ'। রাতারাতি এদেশে জামাআতুল মুজাহিদিনের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
_____________
যদিও জামাআতুল মুজাহিদিনের নেতৃবৃন্দের কৌশলগত ভুলকে এই ক্র্যাকডাউন এর জন্য দায়ী করা হয় তারপরও এই ঘটনা ছিলো বাংলাদেশের জিহাদের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
এর পরেই এদেশে গ্লোবাল জিহাদের দরজা খুলে যায় এবং মুজাহিদীন নতুন কৌশলে নিজেদের যুদ্ধকৌশল প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
মুজাহিদীন বুঝতে পারেন এই ভুখন্ডে শরীয়াহ কায়েম একটা দীর্ঘ ধৈর্য, কোরবানীর দাবি। শুধুমাত্র একটি কৌশলগত ভুলের কারণে মুজাহিদদের এমন কিছু ফেইস করা লাগতে পারে যা তাদের হিসাবের মধ্যে ছিলো না।
তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো এই ঘটনা জিহাদের বন্ধু ও শত্রুদের সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয় যা এর আগে সম্পূর্ণ অস্পষ্ট ছিলো। আর জি-হাদের বন্ধু ও শত্রু(Friends and Foe) সঠিকভাবে না চিহ্নিত করতে পারার কারণে অতীতে বহু জিহাদী জামাআত বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
(collected)
Comment