বাল্যবয়সের কাহিনী। সম্ভবত এক রাত্রে সম্ভবত কারেন্ট চলে গেছিলো তাই আম্মু আমাদের ভাইবোনদেরকে নিয়ে জড়িয়ে বসে ছিলেন। তিনি তখন আমাদেরকে শুনালেন এক বিদুষী রমণীর কাহিনী। যিনি নাকি মাসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় পৌছার সময় কাফেলা থেকে বিচ্যুত হয়ে মরুভুমিতে আটকা পড়েন। তৎকালীন বিখ্যাত মুহাদ্দিস সায়্যিদ বিন মুসাইয়িব(রহ) তাকে পথে দেখতে পান।
মুহাদ্দিস সাহেব মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, মা, আপনি এখানে?
মহিলা জবাবে বললেন, وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَمَا لَهٗ مِنۡ هَادٍ
আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই।
(সুরাহ যুমার আয়াত-৩৬)
অর্থাৎ, মহিলা বুঝাতে চাইলেন, তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন।
মুহাদ্দিস সাহেব তাকে বললেন, আপনার বাড়ি কোথায়?
মহিলা যা জবাব দিলেন তা আম্মা খুব সুন্দর করে তেলাওয়াত করেছিলেন,
سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِہٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَہٗ لِنُرِیَہٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ
পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতারাতি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর শ্রোতা এবং সব কিছুর জ্ঞাতা।
(সুরাহ আল ইসরা-১)
অর্থাৎ, মহিলা বুঝাতে চেয়েছেন আমার বাড়ি তো মাসজিদুল আকসার এলাকায়! আমি মসজিদুল হারামে যাচ্ছি!
মহিলাকে তখন শাইখ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এখানে কয়দিন যাবত আছেন?
মহিলা জবাব দিলেন,
ثَلٰثَ لَیَالٍ سَوِیًّا
অর্থাৎ ৩ দিন যাবত!
(মূল আয়াতঃ
(قَالَ رَبِّ اجۡعَلۡ لِّیۡۤ اٰیَۃً ؕ قَالَ اٰیَتُکَ اَلَّا تُکَلِّمَ النَّاسَ ثَلٰثَ لَیَالٍ سَوِیًّا ﴿۱۰﴾
সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার জন্য একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিন রাত কারো সাথে কথা বলবে না’।)
সুরাহ মারইয়াম আয়াত-১০
যাই হোক, মুহাদ্দিস সাহেব মহিলাকে উটে করে হারাম শরীফে নিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন, আপনার ছেলে কারা?
মহিলার জবাবটা আম্মু তখন তেলাওয়াত করে শোনালেন,
یٰیَحۡیٰی خُذِ الۡکِتٰبَ بِقُوَّۃٍ ؕ
হে ইয়াহইয়া, তুমি কিতাবটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর(সুরাহ মারইয়াম আয়াত ১২)
وَ اتَّخَذَ اللّٰهُ اِبۡرٰهِیۡمَ خَلِیۡلًا
আর আল্লাহ ইবরাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।(সুরাহ নিসা আয়াত ১২৫)
وَ کَلَّمَ اللّٰهُ مُوۡسٰی تَکۡلِیۡمًا
আর আল্লাহ মূসার সাথে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন। (সুরাহ নিসা আয়াত ১৬৪)
মহিলা এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে বুঝাতে চাইলেন, আমার তিন ছেলে, ইবরাহিম, ইয়াহইয়া ও মুসা!
মুহাদ্দিস সাহেব ঐ মহিলাকে নিয়ে মদিনায় পৌছলে ছেলেদের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারা জানায় তাদের মা ৪০ বছর যাবত কোরআন দিয়ে কথা বলে আসছেন।
*****
যাই হোক, এই আকর্ষণীয় ঘটনাটা মায়ের কাছ থেকে শুনার পর বেশ প্রভাবিত হয়েছিলাম বাল্যকালেই।
দীর্ঘকাল পর আম্মুকে বললাম, এই ঘটনা কোথায় শুনেছেন?
তিনি বললেন, সাঈদী সাহেবের ওয়াজে।
ভাবলাম, বাহ! এক কোরআনের পাখির ঘটনা শুনেছেন আরেক কোরআনের পাখির কাছ থেকে। শুধু শুনেনই নি, শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছেন।
কোরআনের পাখি আল্লামা দিলওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামটা আমাদের ফ্যামিলির সঙ্গে কেমন যেনো অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, যদিও মাসলাকের দিক থেকে তারা দেওবন্দের অনুসারী। সেই নব্বইয়ের দশক থেকে নাকি ক্যাসেট প্লেয়ারে সাঈদি সাহেবের ওয়াজ বাজানো হতো আমাদের বাড়িতে। ২০১৭ সালে বহু পুরাতন সুটকেস খুঁজে এমনই ক্যাসেটের কালেকশন পেয়েছিলাম। অথচ ঐসময় কওমী উলামা ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ ছিলো।
ছোটবেলায়, আব্বুকে দেখতাম, বাহির থেকে এসেই নকিয়া ফোনে তার ওয়াজ বাজিয়ে শোনা শুরু করতেন। বাবা-মা দুইজনেই কখনো কখনো গভীর রাত পর্যন্ত হুজুরের ওয়াজ শুনতেন আর আলোচনা করতেন। কখনো তারা অশ্রুসিক্ত হতেন তার বন্দীত্বের কথা স্মরণ করে।
*****
গ্রাম বাংলার এরকম হাজারো পরিবারের স্মৃতির মণিকোঠায় এই মানুষটা লুকিয়ে আছেন। সেদিন ১৪ আগস্ট এই মানুষটা কারাগারে হার্ট এটাক করেন। ত্বাগুত বাহিনী তার চিকিৎসায় বেশ অবহেলা করে। ত্বাগুতের লোকেরা তো চাচ্ছিলো তিনি দুনিয়া থেকে চলে যান। তাই হলো, আল্লাহ পাক তাকে নিজ জিম্মায় তুলে নিলেন।
আমার জীবনে তাঁর অবদান অপরিসীম। যদি আল্লাহ পাক আমাকে শাহাদাতের দৌলত দান করেন(আল্লাহ কবুল করুন) তাহলে বলা যাবে এই শাহাদাতে আল্লামা সাঈদী রহিমাহুল্লাহর দাবি থাকবে। কারণ কিশোর বয়স থেকে থেকে ধর্মীয় দিক থেকে "নিরীহ", "শান্তিপ্রিয়" ও সুফিবাদ দ্বারা প্রভাবিত, আর বাস্তব জগতে পুঁজিবাদী ক্যারিয়ারিজম দ্বারা আচ্ছন্ন আমার ভিতর অল্প অল্প করে শরীয়াহর আইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভবটা সৃষ্টি হয় তার বয়ানগুলো থেকে। যদিও তাদের পথ-পদ্ধতি ভুল ছিলো, কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তরটা অন্তরে গেড়ে গিয়েছিলো যা আর নষ্ট হয়নি।
বড়ই মযলুম অবস্থায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। ত্বাগুতের নির্যাতনের ফলে তার কোমরের পেশি অবশ হয়ে যায়। ফলে হাঁটতে পারতেন না। শরীরে বাসা বাঁধে হাজারো রোগ, যা কারাগারের অনিবার্য বিষয়। আল্লাহ পাক তাঁর ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করুন। তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।
জানি জামায়াতে ইসলামি তার প্রতিশোধ নিতে পারবে না কোনোকালেই। কারণ কুফরি গণতন্ত্রের অনুসরণ তাদের ভিতর থেকে কিসাসের আকাঙ্ক্ষাকে মুছে দিয়েছে। তাছাড়া নেতাদের ব্যাকডোর পলিসি ও অদুরদর্শিতা তো আছেই। এখন তাদের একটাই উদ্দেশ্য কোনোক্রমে টিকে থাকা।
হে জামায়াতে ইসলামির ভাইয়েরা, আপনারা জেনে রাখুন, আল্লামা সাইদী রহিমাহুল্লাহর অসহায় মৃত্যু আমাদের কলিজাকে ভস্ম করে দিচ্ছে। বারংবার হাতের মুষ্ঠি শক্ত হচ্ছে প্রতিশোধস্পৃহায়। যদিও এই ভুখন্ডে মুজাহিদগণ দূর্বল, কিন্তু এই দূর্বলতা কখনো চিরস্থায়ী হবে না। তেহরিকে তালিবান পাকিস্তান যখন ইসলামাবাদের দিকে মার্চ শুরু করবে তখন হিন্দ কিংবা বাংলার জিহাদ জ্যামিতিক হারে শক্তিশালী হয়ে ওঠবে। মুজাহিদগণ তখন ত্বাগুতের সঙ্গে আই টু আই কনফ্রন্টেশন শুরু করবেন। কাজেই আস্তে হোক বা দেরিতে হোক, মুজাহিদগণ শক্তিশালী হবেনই।
প্রিয় ভায়েরা, জেনে রাখুন, আপনারা কিছু না করতে পারলেও সেটা আমাদের অন্তরে আছে। একদিন সকল হিসাবই নেয়া হবে দ্বীনের দুশমনদের কাছ থেকে। কারণ, মুজাহিদদের কখনো মাছের বুদ্ধি না, তারা ভুলে যায়না। মাছ বারবার ভুলে যায়, বারবার বড়শিতে টোপ দেয়।
প্রিয় ভায়েরা, অনেক কিছুই হয়ে গেছে, হাজার হাজার যৌবন ব্যয় হয়েছে এই ব্যর্থতার পথে। কিন্তু সাফল্য কোনোদিনই হাতছানি দেয়নি। ত্বাগুত আব্রাহাম লিংকনের মতবাদ থেকে ফিরে এখন সময় হয়েছে নববী মানহাযে ফিরে আসার। রাসুলুল্লাহ(সা) আমাদের জন্য কোরআন ও লোহা রেখে গিয়েছেন। আমরা কিভাবে লোহাধারী শত্রুকে লোহা ছাড়া পতন ঘটানোের স্বপ্ন দেখি?
আজ একজন মুরব্বীকে মজলুম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও শত্রু এর জন্য কোনো ভয়ই পায়নি। এর কারণ হলো আমাদের হাতে লোহা নেই। শত্রু জানে, আমরা তার মোকাবেলা করতে পারবো না। অথচ শাইখ উসামার শাহাদাতের পর ৮০% আমেরিকান জনগণ ভীতির মধ্যে ছিলো না জানি কখন আরেক আক্রমণ হয়ে যায়। কারণ হচ্ছে মুজাহিদগণ সুন্নাহর আলোকেই তাদের মানহাযকে সাজিয়ে নিয়েছিলেন।
প্রিয় জামায়াত-শিবিরের ভাইয়েরা, নিজের সোনালী যৌবনের সিংহভাগ এই পথে চলে যাওয়ার আগেই চিন্তা করুন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। নিঃসন্দেহে ইতিহাস আমাদের জন্য এক অকপট শিক্ষক। সে আমাদেরকে জানান দিয়ে আসছে যে পথে শত বছরে সাফল্য আসেনি তাতে হাজার বছরেও আসবে না। যেসব ভুমিতে জিহাদ চলছে তার হালত দেখুন, মুজাহিদদের অগ্রগতির দিকে খেয়াল রাখুন। আবার যেসব ভুমিতে গণতন্ত্র দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলোের ইতিহাসও ঘেঁটে দেখুন। নিঃসন্দেহে বুঝতে পারবে, রাসুলুল্লাহ(সা) এর বাৎলে দেয়া ফরয ক্বিতালের পথ ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই কোনো পথেই।
সুতরাং প্রিয় ভাইয়েরা, সময় থাকতে এই পথ থেকে ফিরে আসুন এখুনি। নতুবা জীবনের একটা সময় যখন দেখবেন পুরো জীবন মেহনত করা হয়েছে কিন্তু ফলাফল সব ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ত্বাগুতেরা, তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
নিঃসন্দেহে মুমিন একই গর্ত থেকে দুবার দংশিত হয় না।
মুহাদ্দিস সাহেব মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, মা, আপনি এখানে?
মহিলা জবাবে বললেন, وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَمَا لَهٗ مِنۡ هَادٍ
আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই।
(সুরাহ যুমার আয়াত-৩৬)
অর্থাৎ, মহিলা বুঝাতে চাইলেন, তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন।
মুহাদ্দিস সাহেব তাকে বললেন, আপনার বাড়ি কোথায়?
মহিলা যা জবাব দিলেন তা আম্মা খুব সুন্দর করে তেলাওয়াত করেছিলেন,
سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِہٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَہٗ لِنُرِیَہٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ
পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতারাতি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর শ্রোতা এবং সব কিছুর জ্ঞাতা।
(সুরাহ আল ইসরা-১)
অর্থাৎ, মহিলা বুঝাতে চেয়েছেন আমার বাড়ি তো মাসজিদুল আকসার এলাকায়! আমি মসজিদুল হারামে যাচ্ছি!
মহিলাকে তখন শাইখ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এখানে কয়দিন যাবত আছেন?
মহিলা জবাব দিলেন,
ثَلٰثَ لَیَالٍ سَوِیًّا
অর্থাৎ ৩ দিন যাবত!
(মূল আয়াতঃ
(قَالَ رَبِّ اجۡعَلۡ لِّیۡۤ اٰیَۃً ؕ قَالَ اٰیَتُکَ اَلَّا تُکَلِّمَ النَّاسَ ثَلٰثَ لَیَالٍ سَوِیًّا ﴿۱۰﴾
সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার জন্য একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিন রাত কারো সাথে কথা বলবে না’।)
সুরাহ মারইয়াম আয়াত-১০
যাই হোক, মুহাদ্দিস সাহেব মহিলাকে উটে করে হারাম শরীফে নিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন, আপনার ছেলে কারা?
মহিলার জবাবটা আম্মু তখন তেলাওয়াত করে শোনালেন,
یٰیَحۡیٰی خُذِ الۡکِتٰبَ بِقُوَّۃٍ ؕ
হে ইয়াহইয়া, তুমি কিতাবটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর(সুরাহ মারইয়াম আয়াত ১২)
وَ اتَّخَذَ اللّٰهُ اِبۡرٰهِیۡمَ خَلِیۡلًا
আর আল্লাহ ইবরাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।(সুরাহ নিসা আয়াত ১২৫)
وَ کَلَّمَ اللّٰهُ مُوۡسٰی تَکۡلِیۡمًا
আর আল্লাহ মূসার সাথে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন। (সুরাহ নিসা আয়াত ১৬৪)
মহিলা এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে বুঝাতে চাইলেন, আমার তিন ছেলে, ইবরাহিম, ইয়াহইয়া ও মুসা!
মুহাদ্দিস সাহেব ঐ মহিলাকে নিয়ে মদিনায় পৌছলে ছেলেদের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারা জানায় তাদের মা ৪০ বছর যাবত কোরআন দিয়ে কথা বলে আসছেন।
*****
যাই হোক, এই আকর্ষণীয় ঘটনাটা মায়ের কাছ থেকে শুনার পর বেশ প্রভাবিত হয়েছিলাম বাল্যকালেই।
দীর্ঘকাল পর আম্মুকে বললাম, এই ঘটনা কোথায় শুনেছেন?
তিনি বললেন, সাঈদী সাহেবের ওয়াজে।
ভাবলাম, বাহ! এক কোরআনের পাখির ঘটনা শুনেছেন আরেক কোরআনের পাখির কাছ থেকে। শুধু শুনেনই নি, শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছেন।
কোরআনের পাখি আল্লামা দিলওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামটা আমাদের ফ্যামিলির সঙ্গে কেমন যেনো অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, যদিও মাসলাকের দিক থেকে তারা দেওবন্দের অনুসারী। সেই নব্বইয়ের দশক থেকে নাকি ক্যাসেট প্লেয়ারে সাঈদি সাহেবের ওয়াজ বাজানো হতো আমাদের বাড়িতে। ২০১৭ সালে বহু পুরাতন সুটকেস খুঁজে এমনই ক্যাসেটের কালেকশন পেয়েছিলাম। অথচ ঐসময় কওমী উলামা ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ ছিলো।
ছোটবেলায়, আব্বুকে দেখতাম, বাহির থেকে এসেই নকিয়া ফোনে তার ওয়াজ বাজিয়ে শোনা শুরু করতেন। বাবা-মা দুইজনেই কখনো কখনো গভীর রাত পর্যন্ত হুজুরের ওয়াজ শুনতেন আর আলোচনা করতেন। কখনো তারা অশ্রুসিক্ত হতেন তার বন্দীত্বের কথা স্মরণ করে।
*****
গ্রাম বাংলার এরকম হাজারো পরিবারের স্মৃতির মণিকোঠায় এই মানুষটা লুকিয়ে আছেন। সেদিন ১৪ আগস্ট এই মানুষটা কারাগারে হার্ট এটাক করেন। ত্বাগুত বাহিনী তার চিকিৎসায় বেশ অবহেলা করে। ত্বাগুতের লোকেরা তো চাচ্ছিলো তিনি দুনিয়া থেকে চলে যান। তাই হলো, আল্লাহ পাক তাকে নিজ জিম্মায় তুলে নিলেন।
আমার জীবনে তাঁর অবদান অপরিসীম। যদি আল্লাহ পাক আমাকে শাহাদাতের দৌলত দান করেন(আল্লাহ কবুল করুন) তাহলে বলা যাবে এই শাহাদাতে আল্লামা সাঈদী রহিমাহুল্লাহর দাবি থাকবে। কারণ কিশোর বয়স থেকে থেকে ধর্মীয় দিক থেকে "নিরীহ", "শান্তিপ্রিয়" ও সুফিবাদ দ্বারা প্রভাবিত, আর বাস্তব জগতে পুঁজিবাদী ক্যারিয়ারিজম দ্বারা আচ্ছন্ন আমার ভিতর অল্প অল্প করে শরীয়াহর আইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভবটা সৃষ্টি হয় তার বয়ানগুলো থেকে। যদিও তাদের পথ-পদ্ধতি ভুল ছিলো, কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তরটা অন্তরে গেড়ে গিয়েছিলো যা আর নষ্ট হয়নি।
বড়ই মযলুম অবস্থায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। ত্বাগুতের নির্যাতনের ফলে তার কোমরের পেশি অবশ হয়ে যায়। ফলে হাঁটতে পারতেন না। শরীরে বাসা বাঁধে হাজারো রোগ, যা কারাগারের অনিবার্য বিষয়। আল্লাহ পাক তাঁর ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করুন। তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।
জানি জামায়াতে ইসলামি তার প্রতিশোধ নিতে পারবে না কোনোকালেই। কারণ কুফরি গণতন্ত্রের অনুসরণ তাদের ভিতর থেকে কিসাসের আকাঙ্ক্ষাকে মুছে দিয়েছে। তাছাড়া নেতাদের ব্যাকডোর পলিসি ও অদুরদর্শিতা তো আছেই। এখন তাদের একটাই উদ্দেশ্য কোনোক্রমে টিকে থাকা।
হে জামায়াতে ইসলামির ভাইয়েরা, আপনারা জেনে রাখুন, আল্লামা সাইদী রহিমাহুল্লাহর অসহায় মৃত্যু আমাদের কলিজাকে ভস্ম করে দিচ্ছে। বারংবার হাতের মুষ্ঠি শক্ত হচ্ছে প্রতিশোধস্পৃহায়। যদিও এই ভুখন্ডে মুজাহিদগণ দূর্বল, কিন্তু এই দূর্বলতা কখনো চিরস্থায়ী হবে না। তেহরিকে তালিবান পাকিস্তান যখন ইসলামাবাদের দিকে মার্চ শুরু করবে তখন হিন্দ কিংবা বাংলার জিহাদ জ্যামিতিক হারে শক্তিশালী হয়ে ওঠবে। মুজাহিদগণ তখন ত্বাগুতের সঙ্গে আই টু আই কনফ্রন্টেশন শুরু করবেন। কাজেই আস্তে হোক বা দেরিতে হোক, মুজাহিদগণ শক্তিশালী হবেনই।
প্রিয় ভায়েরা, জেনে রাখুন, আপনারা কিছু না করতে পারলেও সেটা আমাদের অন্তরে আছে। একদিন সকল হিসাবই নেয়া হবে দ্বীনের দুশমনদের কাছ থেকে। কারণ, মুজাহিদদের কখনো মাছের বুদ্ধি না, তারা ভুলে যায়না। মাছ বারবার ভুলে যায়, বারবার বড়শিতে টোপ দেয়।
প্রিয় ভায়েরা, অনেক কিছুই হয়ে গেছে, হাজার হাজার যৌবন ব্যয় হয়েছে এই ব্যর্থতার পথে। কিন্তু সাফল্য কোনোদিনই হাতছানি দেয়নি। ত্বাগুত আব্রাহাম লিংকনের মতবাদ থেকে ফিরে এখন সময় হয়েছে নববী মানহাযে ফিরে আসার। রাসুলুল্লাহ(সা) আমাদের জন্য কোরআন ও লোহা রেখে গিয়েছেন। আমরা কিভাবে লোহাধারী শত্রুকে লোহা ছাড়া পতন ঘটানোের স্বপ্ন দেখি?
আজ একজন মুরব্বীকে মজলুম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও শত্রু এর জন্য কোনো ভয়ই পায়নি। এর কারণ হলো আমাদের হাতে লোহা নেই। শত্রু জানে, আমরা তার মোকাবেলা করতে পারবো না। অথচ শাইখ উসামার শাহাদাতের পর ৮০% আমেরিকান জনগণ ভীতির মধ্যে ছিলো না জানি কখন আরেক আক্রমণ হয়ে যায়। কারণ হচ্ছে মুজাহিদগণ সুন্নাহর আলোকেই তাদের মানহাযকে সাজিয়ে নিয়েছিলেন।
প্রিয় জামায়াত-শিবিরের ভাইয়েরা, নিজের সোনালী যৌবনের সিংহভাগ এই পথে চলে যাওয়ার আগেই চিন্তা করুন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। নিঃসন্দেহে ইতিহাস আমাদের জন্য এক অকপট শিক্ষক। সে আমাদেরকে জানান দিয়ে আসছে যে পথে শত বছরে সাফল্য আসেনি তাতে হাজার বছরেও আসবে না। যেসব ভুমিতে জিহাদ চলছে তার হালত দেখুন, মুজাহিদদের অগ্রগতির দিকে খেয়াল রাখুন। আবার যেসব ভুমিতে গণতন্ত্র দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলোের ইতিহাসও ঘেঁটে দেখুন। নিঃসন্দেহে বুঝতে পারবে, রাসুলুল্লাহ(সা) এর বাৎলে দেয়া ফরয ক্বিতালের পথ ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই কোনো পথেই।
সুতরাং প্রিয় ভাইয়েরা, সময় থাকতে এই পথ থেকে ফিরে আসুন এখুনি। নতুবা জীবনের একটা সময় যখন দেখবেন পুরো জীবন মেহনত করা হয়েছে কিন্তু ফলাফল সব ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ত্বাগুতেরা, তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
নিঃসন্দেহে মুমিন একই গর্ত থেকে দুবার দংশিত হয় না।
Comment