অপারেশন তুফান আল আক্বসা শুরু হবার পর আল কায়েদা সেন্ট্রাল ও উপমহাদেশ শাখা তাদের উচ্ছ্বাসভর্তি বার্তা প্রকাশ করে। এরপর একে একে আল কায়েদা জাযীরাতুল আরব ও হারকাত আশ শাবাব এতে যোগ দেয়। জর্ডান থেকে মুজাহিদ ও মুওয়াহহিদের এক অমুল্য রত্ন শাইখ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনি এই হামলার মোবারাকবাদ জানান।
যদিও হামাসের সাথে তাদের মানহাজগত কিছু বৈসাদৃশ্য আছে।। এর দ্বারা যে ইসরায়েলের পতন রাতারাতি হচ্ছে এমনও না। তারপরেও কেনো তারা এই আক্রমণকে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন? এ নিয়েই কিছু পয়েন্ট এখানে আলোচনা করা হলো।
১)
আমেরিকা যে ইসরায়েলের প্রতিপালক সেটা অধিকাংশ মুসলিমকে একটা সময় বুঝানো যায়নি। নাইন ইলেভেনের কথা বলতে গেলেই তারা বলতো, নিরীহ জনগণ বা সিভিলিয়ানদের হত্যা করা কি জায়েয?
তানযিম আল কায়েদার মুজাহিদগণ শুরু থেকেই বলে আসছেন, আমেরিকার পতন ছাড়া ইসরায়েলকে হারানো সম্ভব না। ইসরায়েলের বিপদ দেখলে আমরিকা নিজে এসে তাকে রক্ষা করবে।
এই কারণেই আমেরিকাকে সাপের মাথা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিলো এবং তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।
অধিকাংশ মুসলিমই ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা লালন করলেও আমেরিকার সঙ্গে বারাআতের চিন্তা করতো না। বরং এর চেয়ে কোকাকোলা কোম্পানিকে বয়কট করাকেই আরো বেশী প্রেফার করতো।
আজ যখন আল আকসা ফ্লাডের পর যখন আমেরিকা তার সর্ববৃহৎ রণতরী ইউএসএস জিরাল্ড ফোর্ড ভুমধ্য সাগরে অবস্থান করে হুমকি ছুড়ে দিচ্ছে, তখন সবার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আমেরিকা বেঁচে থাকতে ইসরায়েলের পতন সম্ভব না।
২)
অপারেশন আল আকসা ফ্লাড ইহুদী সেনা ও তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর যে অজেয় হওয়ার খ্যাতি ছিলো তা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে।
১৯৬৭ সালে মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে যখন ইসরায়েলের কাছে আরবরা পরাজিত হয় তখন থেকে তাদের রক্ত হিম হয়ে যায়। মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার ৪৫০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। আরবরা এই মনে করতে থাকে যে ইসরায়েলকে আর পরাজিত করা সম্ভব না। মোসাদের ব্যাপারে সবার ভিতর ভীতি সৃষ্টি হতে থাকে।
মুসলিমরা ভাবতে থাকে ইমাম মাহদি(আ) ছাড়া এদের কেউ হারাতে পারবে না। আমরা তো মাযুর!
মুসলিম বিশ্বে ইলুমিনাতি ও দাজ্জালকে নিয়ে কাল্পনিক তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ছিলো। সবকিছুতেই লোকেরা ইহুদীদের হাত আছে বলে মনে করতো। একপ্রকার অলৌকিক ক্ষমতা যেনো লাভ করেছিলো এই অভিশপ্ত জাতিগোষ্ঠি।
ওয়াজের প্যান্ডেলে বলা হতে থাকে, 'ইহুদীরা মান্না সালওয়া খেয়েছে চল্লিশ বছর। তাই এদের ব্রেইন দিয়ে এমন কিছু করতে পারে যা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না।'
আর ভিন্ন মাসলাকের কাউকে দেখলেই, 'সে ইহুদীদের দালাল!'
এমনকি খোদ তানযিমের উপরও ইহুদীতত্ত্বের অপবাদ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর শোকর, আল আকসা ফ্লাড আশা করি এইসব কুসংস্কারের গোড়ায় কুঠারাঘাত করবে।মুসলিমদের ভিতর থেকে ইহুদীভীতি ও কাপুরুষত্ব দূর হবে।
৩)
একটা সময় দেখা যেতো লিবারেল, সেক্যুলার, মুরতাদ্দ শাসকগোষ্ঠী থেকে শুরু করে ভিতরের মাদখালি, সুফিবাদী ও শাসকপুজারী শ্রেণী সকলেই ফিলিস্তিনের জন্য মায়াকান্না জুড়তো। তারা এতদিন সরব ছিলো কারণ এতদিন ফিলিস্তিনিরা অস্ত্রের বিপরীতে পতাকা কিংবা বেশী থেকে বেশী পাথর নিয়ে এগিয়ে যেত আর ফিরতো লাশ হয়ে। 'খালি হাতে মারা যাচ্ছে' তাই সমবেদনা সবাই কমবেশী দেখাতে পারে কারণ নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ থাকে।
জাফর ইকবালও ২০১৪ সালে গাজার গণহত্যার সময় এরকম মায়াকান্না দিয়েছিলো।
কিন্তু যখনই ফিলিস্তিনিরা অস্ত্র হাতে নিলো, মুনাফিক ও মুরতাদদের এই পুরো শ্রেণী তাদের মুখোশ উন্মোচন করে মুসলিম দল থেকে আলাদা হয়ে গেলো। আজ সেক্যুলাররা ইসরায়েলের জন্য মায়াকান্না দিচ্ছে, মুসলিম ভুখন্ডের ওপর চেপে বসা ত্বাগুত শাসকগোষ্ঠী মৌনভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিচ্ছে।
আজ ইমারাতে ইসলামী ও গুটিকয়েক অঞ্চল ছাড়া মুসলিমদের মধ্য থেকে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যদিও শিয়া ধর্মের অনুসারী ইরান, লেবাননের হিযবুশ শয়তান, সিরিয়ার কসাই আসাদ হামাসের পাশে দাঁড়াচ্ছে সেটা মূলতঃ আরব ভুখন্ডে তাদের প্রভাব বাড়ানোর জন্যই।
৪)
বিন সালমানের প্ল্যানে বজ্রপাত!
বেচারা বিন সালমান ইসরায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্ক নরমালাইজ করার সকল প্রসেস এগিয়ে নিয়ে গেছিলো দুর্বার গতিতে। যেই না আল আকসা ফ্লাড শুরু হলো, সৌদি সরকার জানিয়ে দিলো ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কাজ মুলতবি থাকবে!!
এক মুহুর্তের মধ্যে তার দীর্ঘ প্ল্যান লন্ডভন্ড।
৫)
আরবের যায়নবাদী ও অন্যান্য ত্বাগুত শাসকদের মুখোশ উন্মোচন
ফিলিস্তিনে ইহুদী শক্তির মূল শেল্টারদাতা যে আরবে ত্বাগূত শাসকগোষ্ঠী সেটা মুজাহিদগণ বহু বছর আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন। তাদের মুনাফেকি নিয়ে শাইখ যাওয়াহিরির অনেক বক্তব্য রয়েছে।
কিন্তু সেটা আমলে নেয়নি অধিকাংশ মুসলিম। মাদখালিদের ব্যাপক প্রচারণায় অধিকাংশ মুসলিমই তাদেরকে মুসলিমদের কল্যাণকামী ও অভিভাবক মনে করতো। মিশরের বিমানবাহিনীকে নিয়ে বিখ্যাত কারী রশিদ আলাফাসীর গান হয়তো অনেকেই দেখেছেন।
আজ যখন ইসরায়েলের অবরোধে গাজাবাসী বিদ্যুত, পানি ও খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি, মিশর ইট-সিমেন্টের প্রাচীর দিয়ে গাজা থেকে মিশর যাওয়ার একমাত্র রাস্তা রাফাহ ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। জর্ডানের পুলিশ বিক্ষোভরত মুসলিমদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সাহায্যের জন্য আমেরিকার যুদ্ধবিমান এসে জর্ডানের বিমানঘাঁটিতে ল্যান্ড করেছে।
তুর্কি এরদোগান থেকে শুরু করে মুসলিম বিশ্বের বাকি সকল ত্বাগূত শাসকরা দর্শকের সারিতে বসে দেখছে।
কিন্তু যখনই তাদের ভুখন্ডের মুসলিমরা অস্ত্র ধরতে চাইবে, তারা সর্বশক্তি দিয়ে দমন করবে।
৬)
মাদখালী গোষ্ঠীর মুনাফিকির প্রকাশ
আজ মাদখালীরা নিশ্চুপ। তাদের কেউ কেউ গাযার মুসলিমদের জন্য মায়াকান্না দিচ্ছে। কেউ খোদ সালাহউদ্দীন আইউবীকেই বলছে যে তার আক্বীদা ভ্রান্ত। আক্বীদা বিশুদ্ধ করার নামে উম্মাহর যুবকদের ভিতর শাসকপূজা তৈরী করাই হলো তাদের মূল লক্ষ্য।
ইনশাআল্লাহ, তুফান আল আকসা মাদখালী শায়খদের প্রতি তাদের ভক্তদের অনাস্থা তৈরী করবে। মুসলিম যুবকদের ভিতর এসব কাপুরুষদের প্রতি ঘৃণা ও বিরক্তির সৃষ্টি করবে।
৭)
উম্মাহর যুবকদের মধ্যে ক্বিতালের স্পৃহার বিস্তৃতি।
ইনশাল্লাহ আল আকসা ফ্লাড উম্মাহর যুবকদের মধ্যে জিহাদের স্পৃহার বিস্তৃতি ঘটাবে। তাদের মধ্য থেকে তাদের শত্রুদের ভীতি দূর করবে। আমাদের শত্রুরা যে অপরাজেয় না সেই বোধ তাদের অন্তরে সৃষ্টি করবে। এনে দেবে প্রতিশোধ স্পৃহা।
৮)
যুদ্ধ মিশর ও জর্দানে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে
হামাস যদি রণে ভঙ্গ না দেয় আর ধৈর্য ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তাহলে এই যুদ্ধ শুধু গাযাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পশ্চিম তীর হয়ে জর্ডান ও গাযা থেকে তা মিশরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের এই জিহাদ আরবের মুসলিম যুবকদের সঙ্গে যায়নবাদী শাসকদের দূরত্ব সৃষ্টি করবে যা এক বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে ও ২০১১ সালের আরব বসন্তের মতো আরেক ইসলামী বসন্তের সূচনা ঘটাতে পারে। এবং এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকগুলো জিহাদের ভুমি উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। আল্লাহু আ'লামু।
৯)
উপমহাদেশে এর প্রভাব
মুশরিক ভারতে আর যায়োনিস্ট ইসরায়েলের মধ্যে শুরু থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। ভারত যে মুসলিম নির্মূলকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে তাও ইসরায়েল থেকে আমদানীকৃত।
ইনশাআল্লাহ তুফান আল আকসা উপমহাদেশের মুসলিম যুবকদের মধ্যে জিহাদের স্পিরিটকে জাগিয়ে তুলবে। মুশরিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ ছাড়া যে মুক্তি হবে না সেই বোধ সৃষ্টি হবে। কাশ্মীরের মুজাহিদদের মনোবলকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
তুফান আল আকসা ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর মনোবলেও চিড় ধরাতে সক্ষম হবে। কারণ তারা ইসরায়েলের সেনাদেরকে তাদের গুরু মনে করে ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ট্যাকটিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি নিয়ে থাকে।
১০)
যায়োনিস্টদের মনস্তত্বের উপর তুফান আল আকসার প্রভাব
ইহুদীরা বুঝতে পেরেছে, ইসরায়েলে ভবিষ্যতে তাদের দিনগুলো মসৃণ হবে না। কারণ তুফান আল আকসার মতো এতো বিশাল তুফান ইসরায়েলে জন্মলগ্ন থেকে আসেনি। ইহুদীরা আরবের জাতীয়তাবাদী সন্তানদের ৬ দিনে হারিয়ে দিয়েছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
তারপর থেকে ইসরায়েল ইহুদীদের সেইফ হাউস হিসেবেই অভিহিত হয়ে আসছে। পশ্চিম থেকে সেটলাররা ভীড় করতে থাকে ইসরায়েলে। ইসরায়েলও তার গ্রেটার ইসরায়েল বানানোর প্ল্যান এগিয়ে নিচ্ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল।
কিন্তু হঠাৎ এতো বড় তুফান আসবে কেউই ভাবেনি। ১৫০০+ ইহুদী মারা গেছে এই পর্যন্ত।
এখন যদি তুফান আল আকসা থেমেও যায়, তারপরেও ইহুদিরা যে আর ইসরায়েলে নিরাপদে থাকতে পারবে না, এই মেসেজ তারা পেয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত শক্তিশালী মেসেজ।
যদিও হামাসের সাথে তাদের মানহাজগত কিছু বৈসাদৃশ্য আছে।। এর দ্বারা যে ইসরায়েলের পতন রাতারাতি হচ্ছে এমনও না। তারপরেও কেনো তারা এই আক্রমণকে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন? এ নিয়েই কিছু পয়েন্ট এখানে আলোচনা করা হলো।
১)
আমেরিকা যে ইসরায়েলের প্রতিপালক সেটা অধিকাংশ মুসলিমকে একটা সময় বুঝানো যায়নি। নাইন ইলেভেনের কথা বলতে গেলেই তারা বলতো, নিরীহ জনগণ বা সিভিলিয়ানদের হত্যা করা কি জায়েয?
তানযিম আল কায়েদার মুজাহিদগণ শুরু থেকেই বলে আসছেন, আমেরিকার পতন ছাড়া ইসরায়েলকে হারানো সম্ভব না। ইসরায়েলের বিপদ দেখলে আমরিকা নিজে এসে তাকে রক্ষা করবে।
এই কারণেই আমেরিকাকে সাপের মাথা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিলো এবং তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।
অধিকাংশ মুসলিমই ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা লালন করলেও আমেরিকার সঙ্গে বারাআতের চিন্তা করতো না। বরং এর চেয়ে কোকাকোলা কোম্পানিকে বয়কট করাকেই আরো বেশী প্রেফার করতো।
আজ যখন আল আকসা ফ্লাডের পর যখন আমেরিকা তার সর্ববৃহৎ রণতরী ইউএসএস জিরাল্ড ফোর্ড ভুমধ্য সাগরে অবস্থান করে হুমকি ছুড়ে দিচ্ছে, তখন সবার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আমেরিকা বেঁচে থাকতে ইসরায়েলের পতন সম্ভব না।
২)
অপারেশন আল আকসা ফ্লাড ইহুদী সেনা ও তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর যে অজেয় হওয়ার খ্যাতি ছিলো তা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে।
১৯৬৭ সালে মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে যখন ইসরায়েলের কাছে আরবরা পরাজিত হয় তখন থেকে তাদের রক্ত হিম হয়ে যায়। মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার ৪৫০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। আরবরা এই মনে করতে থাকে যে ইসরায়েলকে আর পরাজিত করা সম্ভব না। মোসাদের ব্যাপারে সবার ভিতর ভীতি সৃষ্টি হতে থাকে।
মুসলিমরা ভাবতে থাকে ইমাম মাহদি(আ) ছাড়া এদের কেউ হারাতে পারবে না। আমরা তো মাযুর!
মুসলিম বিশ্বে ইলুমিনাতি ও দাজ্জালকে নিয়ে কাল্পনিক তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ছিলো। সবকিছুতেই লোকেরা ইহুদীদের হাত আছে বলে মনে করতো। একপ্রকার অলৌকিক ক্ষমতা যেনো লাভ করেছিলো এই অভিশপ্ত জাতিগোষ্ঠি।
ওয়াজের প্যান্ডেলে বলা হতে থাকে, 'ইহুদীরা মান্না সালওয়া খেয়েছে চল্লিশ বছর। তাই এদের ব্রেইন দিয়ে এমন কিছু করতে পারে যা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না।'
আর ভিন্ন মাসলাকের কাউকে দেখলেই, 'সে ইহুদীদের দালাল!'
এমনকি খোদ তানযিমের উপরও ইহুদীতত্ত্বের অপবাদ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর শোকর, আল আকসা ফ্লাড আশা করি এইসব কুসংস্কারের গোড়ায় কুঠারাঘাত করবে।মুসলিমদের ভিতর থেকে ইহুদীভীতি ও কাপুরুষত্ব দূর হবে।
৩)
অপারেশন আল আকসা ফ্লাড মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে।
একটা সময় দেখা যেতো লিবারেল, সেক্যুলার, মুরতাদ্দ শাসকগোষ্ঠী থেকে শুরু করে ভিতরের মাদখালি, সুফিবাদী ও শাসকপুজারী শ্রেণী সকলেই ফিলিস্তিনের জন্য মায়াকান্না জুড়তো। তারা এতদিন সরব ছিলো কারণ এতদিন ফিলিস্তিনিরা অস্ত্রের বিপরীতে পতাকা কিংবা বেশী থেকে বেশী পাথর নিয়ে এগিয়ে যেত আর ফিরতো লাশ হয়ে। 'খালি হাতে মারা যাচ্ছে' তাই সমবেদনা সবাই কমবেশী দেখাতে পারে কারণ নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ থাকে।
জাফর ইকবালও ২০১৪ সালে গাজার গণহত্যার সময় এরকম মায়াকান্না দিয়েছিলো।
কিন্তু যখনই ফিলিস্তিনিরা অস্ত্র হাতে নিলো, মুনাফিক ও মুরতাদদের এই পুরো শ্রেণী তাদের মুখোশ উন্মোচন করে মুসলিম দল থেকে আলাদা হয়ে গেলো। আজ সেক্যুলাররা ইসরায়েলের জন্য মায়াকান্না দিচ্ছে, মুসলিম ভুখন্ডের ওপর চেপে বসা ত্বাগুত শাসকগোষ্ঠী মৌনভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিচ্ছে।
আজ ইমারাতে ইসলামী ও গুটিকয়েক অঞ্চল ছাড়া মুসলিমদের মধ্য থেকে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যদিও শিয়া ধর্মের অনুসারী ইরান, লেবাননের হিযবুশ শয়তান, সিরিয়ার কসাই আসাদ হামাসের পাশে দাঁড়াচ্ছে সেটা মূলতঃ আরব ভুখন্ডে তাদের প্রভাব বাড়ানোর জন্যই।
৪)
বিন সালমানের প্ল্যানে বজ্রপাত!
বেচারা বিন সালমান ইসরায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্ক নরমালাইজ করার সকল প্রসেস এগিয়ে নিয়ে গেছিলো দুর্বার গতিতে। যেই না আল আকসা ফ্লাড শুরু হলো, সৌদি সরকার জানিয়ে দিলো ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কাজ মুলতবি থাকবে!!
এক মুহুর্তের মধ্যে তার দীর্ঘ প্ল্যান লন্ডভন্ড।
৫)
আরবের যায়নবাদী ও অন্যান্য ত্বাগুত শাসকদের মুখোশ উন্মোচন
ফিলিস্তিনে ইহুদী শক্তির মূল শেল্টারদাতা যে আরবে ত্বাগূত শাসকগোষ্ঠী সেটা মুজাহিদগণ বহু বছর আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন। তাদের মুনাফেকি নিয়ে শাইখ যাওয়াহিরির অনেক বক্তব্য রয়েছে।
কিন্তু সেটা আমলে নেয়নি অধিকাংশ মুসলিম। মাদখালিদের ব্যাপক প্রচারণায় অধিকাংশ মুসলিমই তাদেরকে মুসলিমদের কল্যাণকামী ও অভিভাবক মনে করতো। মিশরের বিমানবাহিনীকে নিয়ে বিখ্যাত কারী রশিদ আলাফাসীর গান হয়তো অনেকেই দেখেছেন।
আজ যখন ইসরায়েলের অবরোধে গাজাবাসী বিদ্যুত, পানি ও খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি, মিশর ইট-সিমেন্টের প্রাচীর দিয়ে গাজা থেকে মিশর যাওয়ার একমাত্র রাস্তা রাফাহ ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। জর্ডানের পুলিশ বিক্ষোভরত মুসলিমদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সাহায্যের জন্য আমেরিকার যুদ্ধবিমান এসে জর্ডানের বিমানঘাঁটিতে ল্যান্ড করেছে।
তুর্কি এরদোগান থেকে শুরু করে মুসলিম বিশ্বের বাকি সকল ত্বাগূত শাসকরা দর্শকের সারিতে বসে দেখছে।
কিন্তু যখনই তাদের ভুখন্ডের মুসলিমরা অস্ত্র ধরতে চাইবে, তারা সর্বশক্তি দিয়ে দমন করবে।
৬)
মাদখালী গোষ্ঠীর মুনাফিকির প্রকাশ
আজ মাদখালীরা নিশ্চুপ। তাদের কেউ কেউ গাযার মুসলিমদের জন্য মায়াকান্না দিচ্ছে। কেউ খোদ সালাহউদ্দীন আইউবীকেই বলছে যে তার আক্বীদা ভ্রান্ত। আক্বীদা বিশুদ্ধ করার নামে উম্মাহর যুবকদের ভিতর শাসকপূজা তৈরী করাই হলো তাদের মূল লক্ষ্য।
ইনশাআল্লাহ, তুফান আল আকসা মাদখালী শায়খদের প্রতি তাদের ভক্তদের অনাস্থা তৈরী করবে। মুসলিম যুবকদের ভিতর এসব কাপুরুষদের প্রতি ঘৃণা ও বিরক্তির সৃষ্টি করবে।
৭)
উম্মাহর যুবকদের মধ্যে ক্বিতালের স্পৃহার বিস্তৃতি।
ইনশাল্লাহ আল আকসা ফ্লাড উম্মাহর যুবকদের মধ্যে জিহাদের স্পৃহার বিস্তৃতি ঘটাবে। তাদের মধ্য থেকে তাদের শত্রুদের ভীতি দূর করবে। আমাদের শত্রুরা যে অপরাজেয় না সেই বোধ তাদের অন্তরে সৃষ্টি করবে। এনে দেবে প্রতিশোধ স্পৃহা।
৮)
যুদ্ধ মিশর ও জর্দানে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে
হামাস যদি রণে ভঙ্গ না দেয় আর ধৈর্য ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তাহলে এই যুদ্ধ শুধু গাযাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পশ্চিম তীর হয়ে জর্ডান ও গাযা থেকে তা মিশরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের এই জিহাদ আরবের মুসলিম যুবকদের সঙ্গে যায়নবাদী শাসকদের দূরত্ব সৃষ্টি করবে যা এক বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে ও ২০১১ সালের আরব বসন্তের মতো আরেক ইসলামী বসন্তের সূচনা ঘটাতে পারে। এবং এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকগুলো জিহাদের ভুমি উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। আল্লাহু আ'লামু।
৯)
উপমহাদেশে এর প্রভাব
মুশরিক ভারতে আর যায়োনিস্ট ইসরায়েলের মধ্যে শুরু থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। ভারত যে মুসলিম নির্মূলকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে তাও ইসরায়েল থেকে আমদানীকৃত।
ইনশাআল্লাহ তুফান আল আকসা উপমহাদেশের মুসলিম যুবকদের মধ্যে জিহাদের স্পিরিটকে জাগিয়ে তুলবে। মুশরিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ ছাড়া যে মুক্তি হবে না সেই বোধ সৃষ্টি হবে। কাশ্মীরের মুজাহিদদের মনোবলকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
তুফান আল আকসা ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর মনোবলেও চিড় ধরাতে সক্ষম হবে। কারণ তারা ইসরায়েলের সেনাদেরকে তাদের গুরু মনে করে ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ট্যাকটিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি নিয়ে থাকে।
১০)
যায়োনিস্টদের মনস্তত্বের উপর তুফান আল আকসার প্রভাব
ইহুদীরা বুঝতে পেরেছে, ইসরায়েলে ভবিষ্যতে তাদের দিনগুলো মসৃণ হবে না। কারণ তুফান আল আকসার মতো এতো বিশাল তুফান ইসরায়েলে জন্মলগ্ন থেকে আসেনি। ইহুদীরা আরবের জাতীয়তাবাদী সন্তানদের ৬ দিনে হারিয়ে দিয়েছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
তারপর থেকে ইসরায়েল ইহুদীদের সেইফ হাউস হিসেবেই অভিহিত হয়ে আসছে। পশ্চিম থেকে সেটলাররা ভীড় করতে থাকে ইসরায়েলে। ইসরায়েলও তার গ্রেটার ইসরায়েল বানানোর প্ল্যান এগিয়ে নিচ্ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল।
কিন্তু হঠাৎ এতো বড় তুফান আসবে কেউই ভাবেনি। ১৫০০+ ইহুদী মারা গেছে এই পর্যন্ত।
এখন যদি তুফান আল আকসা থেমেও যায়, তারপরেও ইহুদিরা যে আর ইসরায়েলে নিরাপদে থাকতে পারবে না, এই মেসেজ তারা পেয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত শক্তিশালী মেসেজ।
Comment