Announcement

Collapse
No announcement yet.

মিশরের পানি বিষয়ক নিরাপত্তা || খালেদ আল মাহদী

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মিশরের পানি বিষয়ক নিরাপত্তা || খালেদ আল মাহদী

    মিশরের পানি বিষয়ক নিরাপত্তা
    খালেদ আল মাহদী


    জলসম্পদ পলি ও মৎস্যসম্পদের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার হিসেবে মিশরের জন্য নীল নদকে ধরা হয় প্রাণভোমরা। প্রাকৃতিক আকারে জলপ্রবাহের প্রক্রিয়ায় যে কোনো ত্রুটি মিশরের অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ, কারণ মিশরের জন্য জল প্রবাহের অন্য কোন বিকল্প শাখা নেই। এছাড়াও ভূ প্রকৃতির কারণে মিশর অন্যান্য আরব দেশগুলির মত অর্ধ-শুকনো অঞ্চলে অবস্থিত বিধায় এখানে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পানি পাবার আশা করা যায় না। কারণ গোটা এই আরব অঞ্চলের বিরাট অংশ শুধুই ধু ধু মরু প্রান্তর। ১৯৫২ সালের বিপ্লবের পূর্বে মিশরের সরকারগুলো এ কারণেই নীলনদ অববাহিকার পুরো এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ভূ-প্রাকৃতিক গভীরতল সংরক্ষণে আগ্রহী ছিল। কারণ মিশরের পানি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এটি অতি জরুরী, যেহেতু অববাহিকার স্রোতধারা ও উপনদী থেকে বয়ে আসা জলপ্রবাহের এক ফোঁটা পানির ব্যাপারেও অবহেলা করা মিশরের স্বার্থ বিরুদ্ধ। আর স্বাভাবিকভাবেই তা সুদানের পানি সুরক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

    মিশরের সমস্যা হল, তার ভৌগলিক অবস্থান প্রাকৃতিক জলসীমা থেকে অনেক দূরে। যতটুকু জলপ্রবাহ তাদের কাছাকাছি রয়েছে তা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে বিরোধ। এই বিরোধ মিশর আর সেসব দেশের মাঝে দেখা দিয়েছে যেগুলো এই জলপ্রবাহ কাজে লাগিয়ে নিজেদের জল, কৃষি ও অর্থনৈতিক প্রকল্পসমূহ সচল রাখতে চায়। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে নিজ দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রয়োজনের সময় রপ্তানির মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী রাখার স্বার্থ তাদের। সেইসঙ্গে বর্তমান সময়ে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দিলে এ প্রকল্পগুলো বৃদ্ধির হুমকি দিয়ে কূটনৈতিক ফায়দা হাসিলের ফন্দি। এমনিতে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে ইথিওপিয়া ব্লু নীল অঞ্চলে তাদের কৃষি ক্ষেত্র সম্প্রসারণের জন্য কিছু প্রকল্প স্থাপন ও নির্মাণের চেষ্টা করেছিল। কৃষি ফসলের ক্রমবর্ধমান সংকটের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তারা এমনটা করতে চেয়েছিল। তখন মিশরের রাজধানীতে বিপদের ডংকা বেজে ওঠে। ইথিওপিয়া তার প্রকল্পগুলো আরম্ভ করতে গেলে মিশর তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগেরও হুমকি দেয়। কিন্তু সেসব হুমকি ইথিওপিয়াকে তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত এগুলো স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইথিওপিয়া নিজেকে গুছিয়ে নেয়। মিশরের প্রাণ নীলনদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেশ হিসেবে কেবল ইথিওপিয়ার প্রকল্পগুলি মিশরের মাথাব্যথার কারণ নয় বরং ইথিওপিয়ার মতোই উচ্চাভিলাষী আরো বেশকিছু রাষ্ট্র রয়েছে। তারাও নীল নদের উপনদীগুলোতে হস্তক্ষেপ করতে চায়। যেমন রয়েছে কেনিয়া।

    তো এসব হস্তক্ষেপের মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলো নিজেদের উন্নয়ন কর্মসূচির বিকাশ সাধনে আগ্রহী। পানির সুরক্ষা নিশ্চিত করণের এই দ্বন্দ্বকে ঘনীভূত করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে এই সংঘাতে দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ। নিজেদের দাবি অনুযায়ী নীলনদ থেকে পানির অংশ লাভের জন্য দখলদার রাষ্ট্রটি সিনাই ও পশ্চিম তীর জুড়ে পাইপ বসিয়ে নেগেভ মরুভূমি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে চাচ্ছে। তাদের ইচ্ছা হল, নেগেভ মরুভূমি অঞ্চলের জনগণকে বাস্তুচ্যুত করে তড়িঘড়ি সেখানে এমন বিরাট কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ তৈরি করা, যা বিশেষত ইসরাইলের সর্বশেষ কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের প্রধান কৃষি উৎপাদনের জাতীয় প্রয়োজন মেটাতে পারে।

    ইসরায়েলি গবেষণা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সিনাইয়ের মধ্য দিয়ে একটি খাল নির্মাণের মাধ্যমে নীলনদ পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে নেগেভ প্রান্তরে পানি সরবরাহ করা গেলে দেশের পানি সংক্রান্ত অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এতে আরও ফায়দা এই হবে যে, অভিবাসনের সুপ্রশস্ত পথ উন্মুক্ত হবে। কারণ তাদের প্রকল্পের কেন্দ্রস্থল সে অঞ্চলে কয়েক হাজার নতুন ইহুদি বাসিন্দার অভিবাসন হবে। ১৯৭৯ সালে নীলনদ থেকে পানি লাভের ইসরাইলি দাবির কথা আমরা ভুলে যাইনি। কিন্তু যেটা মনে হয় তা হল, সে সময় ওই দাবি মেনে নেয়ার মত উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি, যেহেতু ইসরাইলি রেজিমের সঙ্গে তৎকালীন মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত কর্তৃক স্বাক্ষরিত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির ব্যাপারে মুসলিম জনসাধারণ ক্রোধে ফুঁসে উঠেছিল।

    মিশরের জন্য নীলনদের পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও ইসরাইল বরাবরই তা অবহেলা করে এসেছে। শুরুতে ও শেষে নিজেদের প্রয়োজনকেই দখলদার রাষ্ট্রটি প্রধান হিসেবে দেখছে। নিজেদের জাতীয় স্বার্থে পানি সুরক্ষার সমস্যাটি পুরোপুরি সমাধানকল্পে ইজরাইল কখনোই নিজেদের প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি থেকে সরে আসেনি, যদিও এতে মিশরের অর্ধেক জনগোষ্ঠী মারা যায়।

    ইথিওপিয়া তার পানি সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সুবিধা অর্জনের জন্য এতদঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। অতঃপর মিশরে হোসনি মোবারকের নেতৃত্বাধীন সরকার যখন গঠন হলো, সে সরকার আমেরিকা ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ওপর যখন বিরাট গুরুত্বারোপ করল, এমনিভাবে সরকারি খাতগুলোকে বেসরকারীকরণের মাধ্যমে দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে বিদেশি পুঁজিপতিদের জন্য যখন দ্বার উন্মুক্ত করে দিল, নিজ পিতার পর জামাল মোবারককে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার বিনিময়ে সেনাবাহিনীর অনেক সামরিক নেতাকে দুর্নীতিবাজ পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত করে অসৎ দুর্নীতিবাজ এ লোকগুলোর জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ার সুযোগ যখন ছেড়ে দেয়া হলো, তখনই ইথিওপিয়া নীল নদের উপনদীগুলোতে তার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের এবং বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বসলো। এক্ষেত্রে ইথিওপিয়া ইসরাইলের সঙ্গে তার সম্পর্ক থেকে ফায়দা উঠিয়েছিল। ইহুদি বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে ইথিওপিয়ার প্রকল্পগুলো সমর্থন করতে ইসরাইল মোটেও বিলম্ব করে নি সেসময়। সেইসঙ্গে প্রকল্পগুলোর পক্ষে তারা এমন অবৈজ্ঞানিক যুক্তি দাঁড় করালো যে, এসব প্রকল্প নাকি নীলনদ থেকে মিশরের ন্যায্য পানির অংশে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

    অতঃপর সিসির অভ্যুত্থান এবং রাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের জন্য সঙ্ঘবদ্ধ জোটে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইথিওপিয়া তার সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘রেনেসাঁ বাঁধ’ নির্মাণের জন্য উপযুক্ত সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। প্রকৌশল বিজ্ঞানের সমস্ত নিয়ম অমান্য করে ইথিওপিয়া নীলনদের প্রধান উপ নদীর উপর সে বাঁধ নির্মাণ করেছিল। নির্মিত সে বাঁধ মিশর ও সুদানের স্বার্থের সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক ছিল। আমেরিকা ও ইসরাইল ইথিওপিয়ার এ প্রকল্পের প্রতি তড়িঘড়ি সমর্থন ব্যক্ত করেছিল। আর এই দিকে সৌদি ও আরব আমিরাতও সমভাবে সমর্থন জানিয়েছিল। সে সময়ে সিসি কিছুই বলার সাহস পায়নি, নতুবা রাবেয়া আল-আদাউইয়া শহরের অন্যান্য অঞ্চলে সে যে গণহত্যা সংঘটিত করেছিল, তার ধারাপাত আরম্ভ হয়ে যেত। এভাবেই সময় যেতে থাকে। মিশর সুদান এবং ইথিওপিয়ার মাঝে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।

    এসবের মধ্য দিয়েই মিশরের রাজনীতি বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রীয় বোদ্ধা মহলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সিসি মিশরীয়দের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। ইচ্ছাকৃতভাবে সিনাইয়ের অধিবাসীদের ঘরবাড়ি তাদের মাথার ওপর ধসিয়ে দেয়া এবং গোটা অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে বাস্তুচ্যুত করা, এমনিভাবে নীল নদের পানি চুরি করার জন্য পাইপ লাইন স্থাপনের বৃহৎ প্রকল্পে ন্যাক্কারজনকভাবে ইসরাইলের সঙ্গদান, যা ছিল ১৯৭৭ সালে আনোয়ার সাদাত কর্তৃক ইসরায়েলিদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মাফিক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্বোধন মাত্র। এসবের মধ্য দিয়ে আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি তার বিশ্বাসঘাতকতার এবং ইসরাইলের জন্য তার তাবেদারীর চূড়ান্ত উদাহরণ দিয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১৯৭৭ সাদাত কর্তৃক স্বাক্ষরিত সে প্রকল্পের নাম ছিল ‘জমজম পাইপলাইন’। সে সময় আরবের বিরূপ অবস্থানের কারণে সে প্রকল্পটি সাফল্যের মুখ দেখেনি। রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং জনসাধারণের মঞ্চ থেকে পরস্পরে মিশর ও ইসরাইলের স্বার্থবিরোধী সে প্রকল্পের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

    এদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আরবদের অবস্থান যখন পাল্টে গেল, তারা যখন তড়িঘড়ি দখলদার ইজরাইলি রেজিমের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বন্দোবস্ত করে ফেলল, শুধু তাই নয়; বরং যখন তারা ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক প্রতিরোধ জোট গঠন করল, তখন সে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ অবারিত হয়ে গেল। এখন তার বিরুদ্ধে যেকোনো গণ প্রতিবাদ ও গণবিক্ষোভ শক্তভাবে দমন করা হবে। সেই দমন-পীড়নের ক্রুসেড-জায়নবাদী নাম দেয়া হবে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এখন উক্ত প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা হবে উপসাগরীয় অর্থায়নে। আর বিনিময়ে তাদের চাই হোয়াইট হাউজের সমর্থন ও কৃপা দৃষ্টি। কারণ হোয়াইট হাউজেরও প্রচেষ্টা, নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রেখার বাইরে যেকোনো রাজনৈতিক বা গণ আন্দোলন মোকাবেলায় ন্যাটো-আরব জোট গঠনের।

    এসবের ভিত্তিতে অনায়াসে অনুমান করা যাচ্ছে যে, নীলনদ থেকে মিশরের পানির অংশ বর্তমান হার যা ৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটারের অধিক, তা থেকে অচিরেই আরো কমে গিয়ে অর্ধেকে নেমে আসবে যা মিশরের জন্য একটি সাক্ষাৎ বিপর্যয়। আর ইসরাইলও তার ঘোষিত অংশের দাবি নিয়ে পরিতুষ্ট থাকবে না, বরং তারা আরও বেশি অংশের দাবি করে বসবে। এতদঞ্চলে ইসরাইলের সম্প্রসারণ নীতির দিকে লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায়, এখানে যেসব যুদ্ধে ইসরাইল জড়াচ্ছে, তার বেশিরভাগই পানি সুরক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ইজরাইলে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়া থেকে ইহুদিদের অভিবাসন বৃদ্ধির কারণে দখলদার দেশটির আরো বেশি পানির প্রয়োজন। এদিকে রেনেসাঁ বাঁধ প্রকল্প সম্পন্ন হয়ে গেলে ইসরাইল ও ইথিওপিয়া আমেরিকা সহ আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন নিয়ে মিশরের জন্য পানি প্রবাহের হার নিয়ন্ত্রণ করবে। আর তখন অনায়াসেই ইজরাইল মিশর ও সুদানের সমস্ত স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে, ততদিন পর্যন্ত যদি কূটনৈতিক দরকষাকষির পরিবেশ বহাল থাকে।

    এখন আসি মিশরের জনগণের কি হবে? তারা ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা ও কিডনি ফেল হয়ে যাওয়ার মত মারাত্মক কিছু ব্যধির ঝুঁকিতে আগে থেকেই রয়েছে। কারণ নীল নদের তীরে নির্মিত কারখানাগুলোর ল্যান্ডফিল ও বর্জ্যভূমি নীলনদের পানিকে দূষিত করে দিয়েছে। এখন সামনের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে নীল নদে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে আরো বড় ও মারাত্মক আকারে এসব রোগের জীবাণুগুলো ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়াও পানির স্তর হ্রাসের কারণে তাদের দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনের সমস্ত দিক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
    তখন মিশরীয়দের সামনে কেবল দুটো পথ থাকবে-
    ⦁ তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা
    ⦁ পূর্ব থেকেই মিশরীয়দের কাছে সলিল সমাধিস্থল বলে পরিচিত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসনের প্রচেষ্টা




    ১৯৫২ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে মিশরের সামরিক নেতৃত্বের কৌশলগত ভুলগুলোর সংক্ষিপ্তসার

    ১) ১৯৫৬ সালে জামাল আব্দুল নাসের কর্তৃক সুদানকে মিশর থেকে পৃথক করার সিদ্ধান্ত মিশরীয়দের জন্য ছিল আত্মঘাতী প্রথম পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের কারণে মিশর ইথিওপিয়ার সরকারগুলোর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা এবং এমন যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে ইথিওপিয়াকে বিরত রাখার কৌশলগত সংগতি ও আনুকূল্য হারিয়েছিল, যা নীল নদের পানিতে মিশরের ন্যায্য অংশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

    ২) হোসনি মোবারকের আমলে মিশর সরকার কর্তৃক দক্ষিণ সুদান পৃথক হয়ে যাবার প্রকল্পটি সমর্থন করা, কায়রোতে আন্দোলনের অফিস খোলার সুযোগ করে দেয়া, সেইসঙ্গে সৌদি, আমিরাত ও লিবিয়ার পক্ষ থেকে ডক্টর জন গারাংকে প্রদত্ত বিপুল পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণ। উপরোক্ত আরব সরকারগুলোর এই পৃষ্ঠপোষকতার কারণ হলো, দক্ষিণ সুদানকে বিচ্ছিন্ন করার প্রকল্পটিকে তারা তৎকালীন বশির সরকারের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অপেক্ষা কম বিপদজনক বিবেচনা করেছিল।

    ৩) এরপর এলো আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সামরিক অভ্যুত্থান। যেকোনো রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মিশরকে পুরোপুরি জিম্মি বানাবার জন্য আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার ইথিওপিয়াকে রেনেসাঁস বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত অনুমোদন-স্বাক্ষর করে দিল। এখন এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ইজরাইল অভূতপূর্ব উপায়ে এক বিরাট সাফল্য অর্জন করবে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার ছড়ি সে নিজের হাতে নিয়ে নেবে। মিশর-ইথিওপিয়া দ্বন্দ্বকে ইজরাইল স্বাগত জানাবে। ‘এক শত্রুর পেছনে অন্য শত্রুকে লেলিয়ে দেবার’ কূটকৌশল অবলম্বন করবে। অসাধু এই ইহুদি চক্র মিশর-ইথিওপিয়ার মাঝে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আবির্ভূত হবে। এভাবেই বিচারক সেজে নীলনদ থেকে নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য নির্লজ্জভাবে তারা ব্ল্যাকমেইল করবে। তাদের চাহিদা যদি পূরণ করা না হয় তাহলে মিশরীয়-ইথিওপীয় মিত্রদেরকে সেই বাঁধে আঘাত করার হুমকি দিয়ে কোণঠাসা করে ফেলবে। কারণ এই বাঁধের ওপর আঘাত মিশর সুদান ও ইথিওপিয়ার জন্য বিরাট বিপর্যয়ের হুমকি।

    এই দৃশ্যপট যে বাস্তবের সবচেয়ে কাছাকাছি তা বোঝার জন্য বাস্তবসম্মত কিছু লক্ষণ রয়েছে:
    ⦁ ইসরাইলের স্বার্থে এতদঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যহীনতা।
    ⦁ ইজরাইলকে নিন্দা জানিয়ে গৃহীতব্য যেকোনো সিদ্ধান্তে আমেরিকার ভেটো প্রদান।
    ⦁ আরব অঞ্চলগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব যা সম্মিলিত আরব প্রতিবাদের আশাকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে।
    ⦁ জায়নবাদী আরব সরকারগুলোর পক্ষ থেকে জায়োনিস্ট চক্রের সঙ্গে তড়িঘড়ি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা, যার দরুন ইজরায়েলের স্বার্থবিরোধী যেকোনো আরব রাষ্ট্র দৃশ্যপট থেকে ছিটকে পড়বে।
    ⦁ মিশরের জাতীয় নিরাপত্তা এই প্রশ্নের মাঝে আটকে পড়া যে, সেনাবাহিনী কোন উপায়ে নিজেদের শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবে? আর আর আমরা পূর্ব থেকেই জানি, এই সেনাবাহিনী নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য জনগণের স্বার্থ বিরোধী যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। এমতাবস্থায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের কথা বলে সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।




    সমাধানঃ

    এতসব সমস্যার সমাধানকে আমরা তিনটি পয়েন্টে সংক্ষেপে নিয়ে আসতে পারিঃ
    ১) বিশ্বস্ত কর্মকর্তা বলে যদি মিশরীয় সেনাবাহিনীতে কিছু বাকি থাকে তবে তাদের দ্বারা আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা।
    ২) মিশরীয় যুদ্ধবিমানগুলোর সাহায্যে রেনেসাঁ বাঁধ নির্মাণস্থলে বিমান হামলা চালিয়ে সেখানকার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া।
    ৩) নতুন শর্ত এবং আন্তর্জাতিক মহলের কোন মধ্যস্থতা ছাড়াই মিশর সুদান ও ইথিওপিয়ার ত্রিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা।

    উপরোক্ত তিনটি পয়েন্টের বাইরে আর যেকোন সমাধানের কথা চিন্তা করা হোক না কেন, তা হবে মিশর ও সুদানের জনগণের জন্য প্রহসন মাত্র। আর আন্তর্জাতিক মহল অথবা আমেরিকা ও রাশিয়ার অধীনে দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রচেষ্টা মিশরীয় সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক বিশ্বাসঘাতকতা ও নাটকীয়তার একটি অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। পাঠক মহোদয়কে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জর্ডান সরকার যখন ইয়ারমুক নদী সংলগ্ন একটি স্থানে বাঁধ নির্মাণ করতে চেয়েছিল তখন ইসরাইল কি করেছিল? দেশটি সরাসরি এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং কঠোর হুমকি দিয়েছিল যার দরুন প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। তারপর মিশর ও সুদান যখন দুই দেশে প্রবাহিত পানির অংশ বৃদ্ধির জন্য জংলাই চ্যানেল প্রকল্পের কাজ করতে যাচ্ছিল, তখন অজ্ঞাতপরিচয় বিমান থেকে হামলা চালিয়ে পুরোপুরিভাবে প্রকল্প থামিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং এতে কাজ পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই সময়ে কিন্তু ইজরাইল দক্ষিণ সুদান বিচ্ছিন্ন করার প্রকল্পকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ সুদান পৃথক হয়ে যায় এবং মিশর তার সেনাবাহিনীর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে একটি নতুন কৌশলগত মাত্রা হারায়।

    যাইহোক এই অন্ধকার পরিস্থিতির মাঝেও দিগন্তের বুকে আশার আলো ফুটে উঠেছে। পূর্ব আফ্রিকার মুজাহিদ সন্তানরা উম্মাহকে এই আশার আলো দেখিয়েছেন। কেবল সাম্প্রতিক কালেই নয় বরং ইথিওপিয়ার যোদ্ধাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে উম্মাহর জন্য তারা সে উদাহরণ পেশ করে এসেছেন। তাই এতদঞ্চলের মুসলিম ভাইদের উচিত, তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের কল্যাণ কামনা করা, তাদেরকে দিক নির্দেশনা দেয়া, তাদেরকে সমর্থন করা এবং তাদের প্রতি আস্থা রাখা। তবেই সেই শত্রুর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম সার্থক হবে যারা তাদেরকে ক্ষুৎপিপাসা দিয়ে হত্যা করতে চায়।

    পরিশেষে মিশরের জনগণকে বলবো, অধিকার কেউ বুঝিয়ে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়—একথা আপনাদের স্মরণ রাখা উচিত।

    কুরআনে পাকে এরশাদ হচ্ছে—
    فَسَتَذْكُرُونَ مَا أَقُولُ لَكُمْ وَأُفَوِّضُ أَمْرِي إِلَى الله
    অর্থঃ অতএব অচিরেই তোমরা স্মরণ করবে যা আমি তোমাদেরকে বলেছি। আমি আমার এ বিষয় আল্লাহর নিকট অর্পণ করছি। [সুরা গাফির, আয়াত-৪৪]

    মিশরে পানি কেন্দ্রিক অতি জরুরি অবস্থার চিত্র
    জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টার্নেশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স, মিশর কায়রো আসোয়ানের উচ্চ বাঁধ, নীলনদ, সুদান, ইরিত্রিয়া, অ্যাডিস আবাবা হোয়াইট ব্লু নীল, গ্র্যান্ড ইথিওপীয় রেনেসাঁস ড্যাম (ইথিওপিয়ার সর্ববৃহৎ রেনেসাঁ বাঁধ), লোহিত সাগর।
    জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টার্নেশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স
    মিশর কায়রো আসোয়ানের উচ্চ বাঁধ, নীলনদ, সুদান, ইরিত্রিয়া, অ্যাডিস আবাবা হোয়াইট ব্লু নীল, গ্র্যান্ড ইথিওপীয় রেনেসাঁস ড্যাম (ইথিওপিয়ার সর্ববৃহৎ রেনেসাঁ বাঁধ), লোহিত সাগর।

    আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত জামাআত কায়িদাতুল জিহাদের অফিসিয়াল ম্যাগাজিন উম্মাতুন ওয়াহিদাহ, ইস্যু-৫ এর নির্বাচিত প্রবন্ধ অনুবাদ থেকে সংগৃহীত

  • #2
    মাশাআল্লাহ।
    বিষয়টি আরবি করে যদি আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার করা হয় তাহলে আরো ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ।

    Comment


    • #3
      Originally posted by Asfaq View Post
      মাশাআল্লাহ।
      বিষয়টি আরবি করে যদি আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার করা হয় তাহলে আরো ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ।
      প্রিয় ভাই, এই আর্টিকেলটি আরবি থেকেই অনুবাদ করা হয়েছে।
      আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত জামাআত কায়িদাতুল জিহাদের অফিসিয়াল ম্যাগাজিন উম্মাতুন ওয়াহিদাহ, ইস্যু-৫ এর নির্বাচিত প্রবন্ধ অনুবাদ থেকে সংগৃহীত

      Comment

      Working...
      X