ijharul Islam “আধুনিক খারেজীদের তাকফিরের দাস্তান” শিরোনামে ফেইসবুকে একটি পোস্ট লিখেছে। সেখানে সে খারিজি আইএসের পাশাপাশি জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত আলিম, মুজাহিদদের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ আরোপ করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আসমানের নিচে যমিনের উপরে বেরেলভিদের চেয়ে জঘন্য তাকফিরি কোনো গোষ্ঠী আছে কিনা, আমার জানা নেই। অথচ ijharul Islam বেরেলভিদের চিন্তাধারা এবং তাকফিরের সমর্থক। আর এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা রেযা খান বেরেলভির চেইন তাকফির সম্পর্কে যারা জানেন, আশা করি তারা এ ব্যাপারে অবগত আছেন। রেযা খান বেরেলভি তার "হুসামুল হারামাইন" বইতে দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন আলিমকে তাকফির করে বলেছে, যারা দেওবন্দের এই আলিমদেরকে তাকফির করবে না তারাও কাফির ! অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, রেযা খান কর্তৃক দেওবন্দের এই আলিমদেরকে চেইন তাকফির করার সাথে ijharul Islam একমত পোষণ করেছে !
পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট তাকফিরি হওয়ার পাশাপাশি কুফর-শিরকে ভরপুর জঘন্য বাতিল মতবাদের সমর্থক হয়েও সে জিহাদ ও মুজাহিদদের সমালোচনা করে বেড়ায়। আল কায়েদা ও তালিবানকে খারিজি বলার মতো নির্লজ্জতা দেখায়। তার ব্যাপারে শুধু এই হাদিসটিই বলবো, "যখন তোমার কোনো লজ্জা থাকবে না, তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে।" (সহিহ বুখারি)
তার ফেইসবুক পোস্ট এখানে দেখা যাবে... https://justpaste.it/48trq
এখন তার পোস্টে জিহাদ ও মুজাহিদদের নিয়ে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার জবাব দিচ্ছি,
অভিযোগ-১।
সে তার পোস্টে লিখেছে, //পাকিস্তানের পেশোয়ারে মিশর থেকে আগত তাকফিরী - চিন্তার ধারক বাহক ডক্টর ফজল বা সাইয়্যেদ ইমাম শরীফ ও আই-মান জাও-য়াহেরী ব্যাপকভাবে তাকফির চর্চা করতে শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, এরা এক সময় ইখওয়ানি ভাবধারা থেকে বেড়ে ওঠলেও এক পর্যায়ে এসে খোদ ইখওয়ানকেই তাকফীর করে বসে। ডক্টর ফজল তো প্রকাশ্যে ইখওয়ানকে তাকফির করত, আর জাও-য়াহেরী আকারে - ইঙ্গিতে। এটা ছিলো এদের নিজেদের দলের প্রতি নিজেদের প্রথম তাকফির।//
জবাব:
সাইয়্যেদ ইমাম শরিফের সাথে মিলিয়ে শাইখ আইমান যাওয়াহিরির বিরুদ্ধে ইখওয়ানকে তাকফিরের অভিযোগ নিকৃষ্ট মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না। সাইয়্যেদ ইমাম শরিফ কর্তৃক ইখওয়ানকে তাকফির করার বিরুদ্ধে মুজাহিদ উলামা ও দায়িত্বশীলগণই সতর্ক করেছেন। এই ইখওয়ানকে তাকফির না করার কারণেই খারিজি আইএস শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরিকে তাকফির করেছে। আর শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি ত্বগুত-মুরতাদদের তাকফির করেছেন। কোনো মুসলিমকে তাকফির করেননি।
তার মিথ্যাচারের ধরণ হচ্ছে, সে শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরির বিরুদ্ধে ইখওয়ানকে আকারে - ইঙ্গিতে তাকফিরের অভিযোগ এনেছে। শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি যদি কখনো পরে ইখওয়ানকে তাকফির করতো, তাহলে না হয় সে বলতে পারতো। তার মতবাদের জনক রেযা খান যেভাবে অন্যদের কথা অপব্যাখ্যা করে চেইন তাকফির করতো, সে একই তরিকায় অন্যের কথা অপব্যাখ্যা করে মুসলিমদেরকে তাকফিরের অপবাদ আরোপ করেছে।
তার সমর্থিত মতবাদের জনক রেযা খানের মতবাদ অনুযায়ী যেহেতু দুনিয়াতে কোনো মুসলিম থাকে না (তার চেইন তাকফিরের আলোকে), শুধু মুরতাদ ও ত্বগুত শাসকেরা থাকে, তাই তাদেরকে তাকফির করলেই সম্ভবত মুসলিমদের তাকফির করা হয় !
অভিযোগ-২।
সে লিখেছে, //এদেরই অনেকে সেসময় তাদের গুরু ডক্টর আব্দুল্লাহ আজ্জা-মকেও তাকফির করেছে। এই জি-হা-দী গ্রুপের আরেক গুরু আবু মুহাম্মাদ মা-কদিসী তো রীতিমত ডক্টর আজ্জামের বিষোদগার করেছে। ডক্টর আজ-জ্জামের জামাতা ও ছেলের ভাষ্যমতে জাওয়াহেরীদের এই তাকফিরী গ্রুপ আজ্জা-মের পেছনে নামাজও পড়ত না। যা তাদের তাকফিরের একটি প্রমাণ।//
জবাব:
এখানে সে শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি ও শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসির বিরুদ্ধে শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামকে তাকফিরের মিথ্যা অপবাদ রচনা করেছে। তাকফির করাতো দূরের কথা শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি উনার "আত-তাবরিআহ" কিতাবে শাইখ আজ্জাম রাহি. এর কিতাবাদি থেকে উনার চিন্তাধারা উল্লেখ করে এর সাথে আল কায়েদার চিন্তাধারার সুস্পষ্ট মিল প্রমাণ করেছেন। আর শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি তার এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি কখনো শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামকে তাকফির করেননি। শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামের সাথে যদিও কিছু বিষয়ে দ্বিমত ছিল।
এখানে শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামের যে ছেলের (হুজাইফা আজ্জাম) বরাত দিয়ে এই মিথ্যাচার চালানো হয়েছে, সেই হুজাইফা আজ্জাম আহমাদ শাহ মাসউদকে মহান মুজাহিদ মনে করে, যেই আহমাদ শাহ মাসউদ আমেরিকার সাথে মিলে আফগানিস্তান থেকে ইসলামি শরিয়াহ উৎখাত করে গণতন্ত্র কায়েমের জন্য তালিবানদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু যুদ্ধ করেছে ।
আহমাদ শাহ মাসউদের গণতন্ত্রের প্রতি নিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমেরিকার জনগণের সহায়তা চেয়ে দেওয়া চিঠিসহ বিভিন্ন প্রমাণাদি সম্পর্কে তার নিজের বক্তব্য থেকে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন...
https://justpaste.it/masud অথবা https://mediagram.me/masud
এছাড়া হুজাইফা আজ্জাম সিরিয়ার সেক্যুলার দলগুলোকে মুজাহিদ মনে করে। পক্ষান্তরে আল কায়েদা ও সিরিয়ার অন্যান্য যেসব দল আল্লাহর শরিয়াহর জন্য জিহাদ করছে, তাদেরকে খারিজি মনে করে।
অভিযোগ-৩।
সে তার পোস্টে লিখেছে, //পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে কাইদার পৃষ্ঠপোষকতায় আল-জেরিয়াতে জি-হা-দী আন্দোলন বেগবান হয়। কিন্তু কিছু কাল পরে তাদের মধ্যেও চরম পর্যায়ের খারেজিয়াত প্রকাশ পায়। তারাও তাদের মূল সংগঠন কা-য়-দাকে তাকফির করে তাদের বিরুদ্ধে কিতাবাদি রচনা করে। //
জবাব:
আলজেরিয়ার জিহাদের ব্যাপারে যাদের প্রাথমিক ধারণা আছে তারা জানেন যে, আল কায়েদার পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে জিহাদ শুরু হয়নি বরং সেখানে জিহাদ শুরু হয়েছে "ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্ট" এর নির্বাচনে জেতার পর তাদেরকে নিষিদ্ধ করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করা পর। অতঃপর সেখানে খারিজিয়্যাত ছড়িয়ে পড়ার পর আল কায়েদার কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবি রাহি. এবং আরেকজন মুজাহিদকে সেখানে প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে সংশোধনের জন্য। তারা সেখানে শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহি. এর চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু খারিজিরা সংশোধন না হয়ে বরং শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবি রাহি. এর সঙ্গী মুজাহিদকে হত্যা করে। শাইখ সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। আলজেরিয়ার জিহাদ নিয়ে পরবর্তীতে শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবি রাহি. "আত-তাজরিবাতুল জাযায়িরিয়্যাহ" বা আলজেরিয় অভিজ্ঞতা শিরোনামে একটি বক্তব্যে আলজেরিয়ার জিহাদের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এছাড়া শাইখ আবু হামজা আল মিসরি হাফি. এর "খারিজি ও জিহাদ" কিতাবেও আলজেরিয়ার জিহাদে খারিজিদের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়।
সুতরাং আলজেরিয়ার জিহাদে খারিজিদের উত্থানের পেছনে আল কায়েদাকে দোষারোপ করা নিছক মূর্খতা কিংবা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
অভিযোগ-৪।
সে তার পোস্টে লিখেছে, //না-ইজেরিয়াতে কা-য়-দার সহযোগী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বো-কো হা-রাম। তারা এক সময় দা-য়েশের হাতে বাইয়াত দেয়। পরবর্তীতে এসে বোকো হা-রামের নেতা আবু বকর শিকাও দা-য়েশ থেকে আলাদা হয়ে দা-য়েশকে তাকফির করে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।//
জবাব:
বোকো হারাম কখনো আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন ছিল না। বরং আবু বকর শিকাউ শুরু থেকেই তাকফিরি ছিল। সে নাইজেরিয়ার সাধারণ মুসলিমদেরকে তাকফির করেছে। নিজেকে ইমাম দাবি করেছে। তার এসব ভ্রান্তির জন্য উক্ত দলে যারা তাকফিরি চিন্তাধারার ছিল না, তারা বের হয়ে جماعة أنصار المسلمين في بلاد السودان নামে নতুন দল গঠন করে। এই দলটি আল কায়েদার চিন্তাধারাকে গ্রহণ করে জিহাদ পরিচালনা করছে। সুতরাং বোকো হারাম আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন ছিল এটি নির্জলা মিথ্যা বৈ অন্য কিছু নয়।
আর আবু বকর শিকাউ দাঈশকে তাকফির করেছে এটাও মিথ্যা তথ্য। যদিও তার চেইন তাকফির অনুযায়ী দাঈশ তাকফির হওয়ার কথা কিন্তু দাঈশের বাইআত পরিত্যাগ করার পরও সে দাঈশকে তার ভাই বলে আখ্যায়িত করেছে।
অভিযোগ(ভুল/মিথ্যা তথ্য)-৫। : সে তার পোস্টে লিখেছে,
"কিন্তু বাগড়া বাঁধে যখন মুরসি ক্ষমতায় আসে। মুরসি ক্ষমতায় আসলে দা-য়েশ সিনাই উপত্যাকায় শরী-য়াহ কায়েমের উদ্দেশ্যে তাদের অপারেশন শুরু করে।"
জবাব:
মুরসি ক্ষমতায় বসে ২০১২ সালের ৩০ জুন, আর ক্ষমতাচ্যুত হয় ২০১৩ সালের ৩জুলাই। পক্ষান্তরে দাঈশের সিনাই শাখা দাইশকে বাইআত দেয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। যখন সিনাইতে দাঈশকে বাইআত দেওয়া হয়, তখন মুরসি ক্ষমতায় ছিলই না ! আর মুরসি ক্ষমতায় আসার পূর্ব থেকেই সিনাইতে জিহাদ চলমান ছিল। তার চিন্তায় যেরকম গরমিল, তার তথ্যেও একইরকম গরমিল !
অভিযোগ-৬।
ইরাক সিরিয়ায় খারিজি আইএসের উত্থান নিয়ে সে আরো লিখেছে,
" আই-মান জাও-য়াহেরীরা এতো দিন যেই তাকফিরের কালসাপ পুষছিলো, সেটা তাদেরকেই দংশন করা শুরু করে।"
জবাব:
কোনো দল থেকে খারিজি দল বের হওয়া যদি মূল দলটি খারিজি হওয়ার প্রমাণ হয়, তাহলে তার কাছে আমি প্রশ্ন রাখছি, ইসলামের ইতিহাসের প্রথম খারিজি দলটি বের হয়েছিল, আলি রা. এর দল বা সাথীদের থেকে। তাহলে সেজন্য কী আলি রা. বাতিল ছিলেন ?!? না'উযুবিল্লাহ। তার উপরোক্ত অপবাদের আলোকে কেনো হবে না, জানতে চাই।
বরং একটি হক জামাআত থেকে খারিজি দল বের হওয়া উক্ত দলটি অধিকতর হক হওয়ার দাবি রাখে। কেননা খারিজি চিন্তার সাথে দলটি একমত পোষণ করেনি, যেকারণে খারিজিরা বের হয়ে গেছে। এটিই তাদের হক হওয়ার আলামত বহন করে।
.
অভিযোগ-৭। সে তার এই লেখা এবং অন্যান্য লেখায় আল কায়েদা ও তালিবানের বিরুদ্ধে খারিজিয়্যাতের যে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে তার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে, যেহেতু আল কায়েদা ও তালিবান মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডার কাফিরদেরকে সাহায্য করাকে সুস্পষ্ট কুফর আখ্যা দিয়ে থাকে, তাই তার মতবাদে আল কায়েদা ও তালিবান খারিজি !!
জবাব:
মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করা কুফর হওয়ার সপক্ষে দলিল:
১। ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রাহি. (মৃত্যু ৩৩৩ হিজরি) তার তাফসির গ্রন্থ تأويلات أهل السنة তে সুরাহ মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসিরে বলেন,
قوله - تعالى -: { لَا تَتَّخِذُواْ ٱلْيَهُودَ وَٱلنَّصَارَىٰ أَوْلِيَآءَ } وجوهاً:
يحتمل: لا تتخذوا أولياء في الدين، أي: لا تدينوا بدينهم؛ فإنكم إذا دنتم بدينهم صرتم أولياءهم.
ويحتمل: لا تتخذوهم أولياء في النصر والمعونة؛ لأنهم إذا اتخذوهم أولياء في النصر والمعونة صاروا أمثالهم؛ لأنهم إذا نصروا الكفار على المسلمين وأعانوهم فقد كفروا،
অর্থাৎ
"আল্লাহ তায়ালার বাণী:
{ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلْيَهُودَ وَٱلنَّصَارَىٰ أَوْلِيَآءَ }
" তোমরা ইহুদি খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না।" এর কয়েকটি দিক রয়েছে।
একটি দিক হচ্ছে, তোমরা তাদেরকে দ্বীনের ক্ষেত্রে অলি বা বন্ধু বানিয়ো না অর্থাৎ তাদের দ্বীনকে নিজেদের দ্বীন বানিয়ো না। কারণ যখন তোমরা তাদের দ্বীনকে নিজেদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করবে, তোমরা তাদের অলি বা বন্ধু হয়ে যাবে।
আরেকটি দিক হচ্ছে, তোমরা তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে বন্ধু বানিয়ো না।
কেননা যখন তারা (মুসলিমরা) তাদেরকে (ইহুদি-খ্রিস্টান) সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা তাদের মতোই (কাফির) হয়ে যাবে। কারণ যখন তারা (মুসলিমরা) মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করবে, তাহলে তারা কাফির হয়ে যাবে। "
২। সুরাহ মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসিরে ইমাম কুরতুবি রাহি. (মৃত্যু ৬৭১ হিজরি) বলেন,
قوله تعالى : ومن يتولهم منكم أي : يعضدهم على المسلمين . فإنه منهم [ ص: 158 ] بين تعالى أن حكمه كحكمهم ; وهو يمنع إثبات الميراث للمسلم من المرتد ، وكان الذي تولاهم ابن أبي ثم هذا الحكم باق إلى يوم القيامة في قطع الموالاة
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‘যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে’ অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে (কাফিরদেরকে) সাহায্যসহযোগিতা করবে, নিশ্চয়ই সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, তার হুকুম উক্ত কাফিরদের হুকুমের মতই হবে। আর তা একজন মুসলিমের জন্য মুরতাদ থেকে মিরাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক করেছিলো। অতঃপর কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে এই বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। (তাফসীরে কুরতুবী)
মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করাকে আরো অসংখ্য ইমাম ও আলিম কুফর আখ্যা দিয়েছেন এবং যারা এটি করবে, তারা কাফির হয়ে যাবে, এই ফাতওয়া দিয়েছেন। এটি ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত আকিদা। ইমাম তাবারি রাহি. ও উপরোক্ত আয়াতের প্রায় কাছাকাছি তাফসির করেছেন।
আমি তার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রাহি. এবং ইমাম কুরতুবি রাহি. সহ আরো যেসব ইমামগণ সুরাহ মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসিরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করাকে সুস্পষ্টভাবে কুফর ও ঈমান ধ্বংসের কারণ আখ্যা দিয়েছেন, এই ইমামগণ কেনো খারিজি হবেন না !?! একই আকিদা আল কায়েদা ও তালিবান রাখার কারণে যদি খারিজিয়্যাতের অপবাদ লাভ করে, তাহলে এই ইমামরাও খারিজি হওয়ার কথা ! নাকি এখন ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রাহি. এর বিরুদ্ধেও নজদিয়্যাতের ট্যাগ দিবে !! ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের অধিকারী না হলে এই প্রশ্নের উত্তর আশা করছি।
আল কায়েদা দুনিয়ার কোন মুসলিমদেরকে তাকফির করেছে, তা যেনো সে প্রমাণ সাপেক্ষে উপস্থাপন করে।
আল কায়েদা নিয়ে তার প্রতিটি কথা হয় মিথ্যা নতুবা বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা। তার একটি পোস্টে সে কতগুলো মিথ্যা অভিযোগ ও অপবাদ আরোপ করেছে, তা দেখলে যে কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ আশা করি অনুধাবন করতে পারবেন। এই লেখাটি বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তার পোস্টের আরো অনেক মিথ্যাচারের জবাব দেইনি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন মনে করলে সেগুলোর জবাব দেওয়ার নিয়ত রাখছি।
পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট তাকফিরি হওয়ার পাশাপাশি কুফর-শিরকে ভরপুর জঘন্য বাতিল মতবাদের সমর্থক হয়েও সে জিহাদ ও মুজাহিদদের সমালোচনা করে বেড়ায়। আল কায়েদা ও তালিবানকে খারিজি বলার মতো নির্লজ্জতা দেখায়। তার ব্যাপারে শুধু এই হাদিসটিই বলবো, "যখন তোমার কোনো লজ্জা থাকবে না, তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে।" (সহিহ বুখারি)
তার ফেইসবুক পোস্ট এখানে দেখা যাবে... https://justpaste.it/48trq
এখন তার পোস্টে জিহাদ ও মুজাহিদদের নিয়ে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার জবাব দিচ্ছি,
অভিযোগ-১।
সে তার পোস্টে লিখেছে, //পাকিস্তানের পেশোয়ারে মিশর থেকে আগত তাকফিরী - চিন্তার ধারক বাহক ডক্টর ফজল বা সাইয়্যেদ ইমাম শরীফ ও আই-মান জাও-য়াহেরী ব্যাপকভাবে তাকফির চর্চা করতে শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, এরা এক সময় ইখওয়ানি ভাবধারা থেকে বেড়ে ওঠলেও এক পর্যায়ে এসে খোদ ইখওয়ানকেই তাকফীর করে বসে। ডক্টর ফজল তো প্রকাশ্যে ইখওয়ানকে তাকফির করত, আর জাও-য়াহেরী আকারে - ইঙ্গিতে। এটা ছিলো এদের নিজেদের দলের প্রতি নিজেদের প্রথম তাকফির।//
জবাব:
সাইয়্যেদ ইমাম শরিফের সাথে মিলিয়ে শাইখ আইমান যাওয়াহিরির বিরুদ্ধে ইখওয়ানকে তাকফিরের অভিযোগ নিকৃষ্ট মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না। সাইয়্যেদ ইমাম শরিফ কর্তৃক ইখওয়ানকে তাকফির করার বিরুদ্ধে মুজাহিদ উলামা ও দায়িত্বশীলগণই সতর্ক করেছেন। এই ইখওয়ানকে তাকফির না করার কারণেই খারিজি আইএস শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরিকে তাকফির করেছে। আর শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি ত্বগুত-মুরতাদদের তাকফির করেছেন। কোনো মুসলিমকে তাকফির করেননি।
তার মিথ্যাচারের ধরণ হচ্ছে, সে শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরির বিরুদ্ধে ইখওয়ানকে আকারে - ইঙ্গিতে তাকফিরের অভিযোগ এনেছে। শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি যদি কখনো পরে ইখওয়ানকে তাকফির করতো, তাহলে না হয় সে বলতে পারতো। তার মতবাদের জনক রেযা খান যেভাবে অন্যদের কথা অপব্যাখ্যা করে চেইন তাকফির করতো, সে একই তরিকায় অন্যের কথা অপব্যাখ্যা করে মুসলিমদেরকে তাকফিরের অপবাদ আরোপ করেছে।
তার সমর্থিত মতবাদের জনক রেযা খানের মতবাদ অনুযায়ী যেহেতু দুনিয়াতে কোনো মুসলিম থাকে না (তার চেইন তাকফিরের আলোকে), শুধু মুরতাদ ও ত্বগুত শাসকেরা থাকে, তাই তাদেরকে তাকফির করলেই সম্ভবত মুসলিমদের তাকফির করা হয় !
অভিযোগ-২।
সে লিখেছে, //এদেরই অনেকে সেসময় তাদের গুরু ডক্টর আব্দুল্লাহ আজ্জা-মকেও তাকফির করেছে। এই জি-হা-দী গ্রুপের আরেক গুরু আবু মুহাম্মাদ মা-কদিসী তো রীতিমত ডক্টর আজ্জামের বিষোদগার করেছে। ডক্টর আজ-জ্জামের জামাতা ও ছেলের ভাষ্যমতে জাওয়াহেরীদের এই তাকফিরী গ্রুপ আজ্জা-মের পেছনে নামাজও পড়ত না। যা তাদের তাকফিরের একটি প্রমাণ।//
জবাব:
এখানে সে শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি ও শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসির বিরুদ্ধে শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামকে তাকফিরের মিথ্যা অপবাদ রচনা করেছে। তাকফির করাতো দূরের কথা শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি উনার "আত-তাবরিআহ" কিতাবে শাইখ আজ্জাম রাহি. এর কিতাবাদি থেকে উনার চিন্তাধারা উল্লেখ করে এর সাথে আল কায়েদার চিন্তাধারার সুস্পষ্ট মিল প্রমাণ করেছেন। আর শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি তার এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি কখনো শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামকে তাকফির করেননি। শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামের সাথে যদিও কিছু বিষয়ে দ্বিমত ছিল।
এখানে শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জামের যে ছেলের (হুজাইফা আজ্জাম) বরাত দিয়ে এই মিথ্যাচার চালানো হয়েছে, সেই হুজাইফা আজ্জাম আহমাদ শাহ মাসউদকে মহান মুজাহিদ মনে করে, যেই আহমাদ শাহ মাসউদ আমেরিকার সাথে মিলে আফগানিস্তান থেকে ইসলামি শরিয়াহ উৎখাত করে গণতন্ত্র কায়েমের জন্য তালিবানদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু যুদ্ধ করেছে ।
আহমাদ শাহ মাসউদের গণতন্ত্রের প্রতি নিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমেরিকার জনগণের সহায়তা চেয়ে দেওয়া চিঠিসহ বিভিন্ন প্রমাণাদি সম্পর্কে তার নিজের বক্তব্য থেকে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন...
https://justpaste.it/masud অথবা https://mediagram.me/masud
এছাড়া হুজাইফা আজ্জাম সিরিয়ার সেক্যুলার দলগুলোকে মুজাহিদ মনে করে। পক্ষান্তরে আল কায়েদা ও সিরিয়ার অন্যান্য যেসব দল আল্লাহর শরিয়াহর জন্য জিহাদ করছে, তাদেরকে খারিজি মনে করে।
অভিযোগ-৩।
সে তার পোস্টে লিখেছে, //পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে কাইদার পৃষ্ঠপোষকতায় আল-জেরিয়াতে জি-হা-দী আন্দোলন বেগবান হয়। কিন্তু কিছু কাল পরে তাদের মধ্যেও চরম পর্যায়ের খারেজিয়াত প্রকাশ পায়। তারাও তাদের মূল সংগঠন কা-য়-দাকে তাকফির করে তাদের বিরুদ্ধে কিতাবাদি রচনা করে। //
জবাব:
আলজেরিয়ার জিহাদের ব্যাপারে যাদের প্রাথমিক ধারণা আছে তারা জানেন যে, আল কায়েদার পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে জিহাদ শুরু হয়নি বরং সেখানে জিহাদ শুরু হয়েছে "ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্ট" এর নির্বাচনে জেতার পর তাদেরকে নিষিদ্ধ করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করা পর। অতঃপর সেখানে খারিজিয়্যাত ছড়িয়ে পড়ার পর আল কায়েদার কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবি রাহি. এবং আরেকজন মুজাহিদকে সেখানে প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে সংশোধনের জন্য। তারা সেখানে শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহি. এর চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু খারিজিরা সংশোধন না হয়ে বরং শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবি রাহি. এর সঙ্গী মুজাহিদকে হত্যা করে। শাইখ সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। আলজেরিয়ার জিহাদ নিয়ে পরবর্তীতে শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবি রাহি. "আত-তাজরিবাতুল জাযায়িরিয়্যাহ" বা আলজেরিয় অভিজ্ঞতা শিরোনামে একটি বক্তব্যে আলজেরিয়ার জিহাদের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এছাড়া শাইখ আবু হামজা আল মিসরি হাফি. এর "খারিজি ও জিহাদ" কিতাবেও আলজেরিয়ার জিহাদে খারিজিদের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়।
সুতরাং আলজেরিয়ার জিহাদে খারিজিদের উত্থানের পেছনে আল কায়েদাকে দোষারোপ করা নিছক মূর্খতা কিংবা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
অভিযোগ-৪।
সে তার পোস্টে লিখেছে, //না-ইজেরিয়াতে কা-য়-দার সহযোগী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বো-কো হা-রাম। তারা এক সময় দা-য়েশের হাতে বাইয়াত দেয়। পরবর্তীতে এসে বোকো হা-রামের নেতা আবু বকর শিকাও দা-য়েশ থেকে আলাদা হয়ে দা-য়েশকে তাকফির করে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।//
জবাব:
বোকো হারাম কখনো আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন ছিল না। বরং আবু বকর শিকাউ শুরু থেকেই তাকফিরি ছিল। সে নাইজেরিয়ার সাধারণ মুসলিমদেরকে তাকফির করেছে। নিজেকে ইমাম দাবি করেছে। তার এসব ভ্রান্তির জন্য উক্ত দলে যারা তাকফিরি চিন্তাধারার ছিল না, তারা বের হয়ে جماعة أنصار المسلمين في بلاد السودان নামে নতুন দল গঠন করে। এই দলটি আল কায়েদার চিন্তাধারাকে গ্রহণ করে জিহাদ পরিচালনা করছে। সুতরাং বোকো হারাম আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন ছিল এটি নির্জলা মিথ্যা বৈ অন্য কিছু নয়।
আর আবু বকর শিকাউ দাঈশকে তাকফির করেছে এটাও মিথ্যা তথ্য। যদিও তার চেইন তাকফির অনুযায়ী দাঈশ তাকফির হওয়ার কথা কিন্তু দাঈশের বাইআত পরিত্যাগ করার পরও সে দাঈশকে তার ভাই বলে আখ্যায়িত করেছে।
অভিযোগ(ভুল/মিথ্যা তথ্য)-৫। : সে তার পোস্টে লিখেছে,
"কিন্তু বাগড়া বাঁধে যখন মুরসি ক্ষমতায় আসে। মুরসি ক্ষমতায় আসলে দা-য়েশ সিনাই উপত্যাকায় শরী-য়াহ কায়েমের উদ্দেশ্যে তাদের অপারেশন শুরু করে।"
জবাব:
মুরসি ক্ষমতায় বসে ২০১২ সালের ৩০ জুন, আর ক্ষমতাচ্যুত হয় ২০১৩ সালের ৩জুলাই। পক্ষান্তরে দাঈশের সিনাই শাখা দাইশকে বাইআত দেয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। যখন সিনাইতে দাঈশকে বাইআত দেওয়া হয়, তখন মুরসি ক্ষমতায় ছিলই না ! আর মুরসি ক্ষমতায় আসার পূর্ব থেকেই সিনাইতে জিহাদ চলমান ছিল। তার চিন্তায় যেরকম গরমিল, তার তথ্যেও একইরকম গরমিল !
অভিযোগ-৬।
ইরাক সিরিয়ায় খারিজি আইএসের উত্থান নিয়ে সে আরো লিখেছে,
" আই-মান জাও-য়াহেরীরা এতো দিন যেই তাকফিরের কালসাপ পুষছিলো, সেটা তাদেরকেই দংশন করা শুরু করে।"
জবাব:
কোনো দল থেকে খারিজি দল বের হওয়া যদি মূল দলটি খারিজি হওয়ার প্রমাণ হয়, তাহলে তার কাছে আমি প্রশ্ন রাখছি, ইসলামের ইতিহাসের প্রথম খারিজি দলটি বের হয়েছিল, আলি রা. এর দল বা সাথীদের থেকে। তাহলে সেজন্য কী আলি রা. বাতিল ছিলেন ?!? না'উযুবিল্লাহ। তার উপরোক্ত অপবাদের আলোকে কেনো হবে না, জানতে চাই।
বরং একটি হক জামাআত থেকে খারিজি দল বের হওয়া উক্ত দলটি অধিকতর হক হওয়ার দাবি রাখে। কেননা খারিজি চিন্তার সাথে দলটি একমত পোষণ করেনি, যেকারণে খারিজিরা বের হয়ে গেছে। এটিই তাদের হক হওয়ার আলামত বহন করে।
.
অভিযোগ-৭। সে তার এই লেখা এবং অন্যান্য লেখায় আল কায়েদা ও তালিবানের বিরুদ্ধে খারিজিয়্যাতের যে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে তার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে, যেহেতু আল কায়েদা ও তালিবান মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডার কাফিরদেরকে সাহায্য করাকে সুস্পষ্ট কুফর আখ্যা দিয়ে থাকে, তাই তার মতবাদে আল কায়েদা ও তালিবান খারিজি !!
জবাব:
মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করা কুফর হওয়ার সপক্ষে দলিল:
১। ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রাহি. (মৃত্যু ৩৩৩ হিজরি) তার তাফসির গ্রন্থ تأويلات أهل السنة তে সুরাহ মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসিরে বলেন,
قوله - تعالى -: { لَا تَتَّخِذُواْ ٱلْيَهُودَ وَٱلنَّصَارَىٰ أَوْلِيَآءَ } وجوهاً:
يحتمل: لا تتخذوا أولياء في الدين، أي: لا تدينوا بدينهم؛ فإنكم إذا دنتم بدينهم صرتم أولياءهم.
ويحتمل: لا تتخذوهم أولياء في النصر والمعونة؛ لأنهم إذا اتخذوهم أولياء في النصر والمعونة صاروا أمثالهم؛ لأنهم إذا نصروا الكفار على المسلمين وأعانوهم فقد كفروا،
অর্থাৎ
"আল্লাহ তায়ালার বাণী:
{ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلْيَهُودَ وَٱلنَّصَارَىٰ أَوْلِيَآءَ }
" তোমরা ইহুদি খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না।" এর কয়েকটি দিক রয়েছে।
একটি দিক হচ্ছে, তোমরা তাদেরকে দ্বীনের ক্ষেত্রে অলি বা বন্ধু বানিয়ো না অর্থাৎ তাদের দ্বীনকে নিজেদের দ্বীন বানিয়ো না। কারণ যখন তোমরা তাদের দ্বীনকে নিজেদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করবে, তোমরা তাদের অলি বা বন্ধু হয়ে যাবে।
আরেকটি দিক হচ্ছে, তোমরা তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে বন্ধু বানিয়ো না।
কেননা যখন তারা (মুসলিমরা) তাদেরকে (ইহুদি-খ্রিস্টান) সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা তাদের মতোই (কাফির) হয়ে যাবে। কারণ যখন তারা (মুসলিমরা) মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করবে, তাহলে তারা কাফির হয়ে যাবে। "
২। সুরাহ মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসিরে ইমাম কুরতুবি রাহি. (মৃত্যু ৬৭১ হিজরি) বলেন,
قوله تعالى : ومن يتولهم منكم أي : يعضدهم على المسلمين . فإنه منهم [ ص: 158 ] بين تعالى أن حكمه كحكمهم ; وهو يمنع إثبات الميراث للمسلم من المرتد ، وكان الذي تولاهم ابن أبي ثم هذا الحكم باق إلى يوم القيامة في قطع الموالاة
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‘যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে’ অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে (কাফিরদেরকে) সাহায্যসহযোগিতা করবে, নিশ্চয়ই সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, তার হুকুম উক্ত কাফিরদের হুকুমের মতই হবে। আর তা একজন মুসলিমের জন্য মুরতাদ থেকে মিরাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক করেছিলো। অতঃপর কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে এই বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। (তাফসীরে কুরতুবী)
মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করাকে আরো অসংখ্য ইমাম ও আলিম কুফর আখ্যা দিয়েছেন এবং যারা এটি করবে, তারা কাফির হয়ে যাবে, এই ফাতওয়া দিয়েছেন। এটি ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত আকিদা। ইমাম তাবারি রাহি. ও উপরোক্ত আয়াতের প্রায় কাছাকাছি তাফসির করেছেন।
আমি তার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রাহি. এবং ইমাম কুরতুবি রাহি. সহ আরো যেসব ইমামগণ সুরাহ মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসিরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করাকে সুস্পষ্টভাবে কুফর ও ঈমান ধ্বংসের কারণ আখ্যা দিয়েছেন, এই ইমামগণ কেনো খারিজি হবেন না !?! একই আকিদা আল কায়েদা ও তালিবান রাখার কারণে যদি খারিজিয়্যাতের অপবাদ লাভ করে, তাহলে এই ইমামরাও খারিজি হওয়ার কথা ! নাকি এখন ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রাহি. এর বিরুদ্ধেও নজদিয়্যাতের ট্যাগ দিবে !! ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের অধিকারী না হলে এই প্রশ্নের উত্তর আশা করছি।
আল কায়েদা দুনিয়ার কোন মুসলিমদেরকে তাকফির করেছে, তা যেনো সে প্রমাণ সাপেক্ষে উপস্থাপন করে।
আল কায়েদা নিয়ে তার প্রতিটি কথা হয় মিথ্যা নতুবা বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা। তার একটি পোস্টে সে কতগুলো মিথ্যা অভিযোগ ও অপবাদ আরোপ করেছে, তা দেখলে যে কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ আশা করি অনুধাবন করতে পারবেন। এই লেখাটি বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তার পোস্টের আরো অনেক মিথ্যাচারের জবাব দেইনি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন মনে করলে সেগুলোর জবাব দেওয়ার নিয়ত রাখছি।
Comment