Announcement

Collapse
No announcement yet.

রাশিয়ায় ওয়াগনার বিদ্রোহঃ এর আগেপরের কিছু ঘটনাবলি ও আমাদের জন্য শিক্ষা।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • রাশিয়ায় ওয়াগনার বিদ্রোহঃ এর আগেপরের কিছু ঘটনাবলি ও আমাদের জন্য শিক্ষা।

    গত ২৩শে জুন ২০২৩ রাশিয়াতে সশস্ত্র ভাড়াটিয়া ওয়াগনাররা বিদ্রোহ করেছিলো পুতিনের অলিগার্কি শাসনের বিরুদ্ধে। যদিও মোটামোটি দশ মাস হয়ে গেছে তারপরেও এ থেকে ইসলামপন্থী মহল থেকে শুরু করে মুজাহিদ সবার জন্যই অনেক কিছু শিখার আছে। বুদ্ধিমানেরাই তো এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেন যেনো দ্বীন কায়েমের পথে এমন কোনো ভুল না করে বসেন যার জন্য তাদেরকে কড়া মূল্য দিতে হয়। কারণ কখনো দেখা গেছে সামান্য কোনো ভুলের কারণে তিলে তিলে গড়ে তোলা ফসল মূহুর্তের মধ্যে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।ফলে বছরের পর বছর ধরে কষ্ট ফসল তোলার আগেই নষ্ট হয়।‌‌

    প্রসংগতঃ ইরাকের জিহাদ গড়ে তোলা ও টিকিয়ে রাখতে কত বছর সময় লেগেছিলো? ২০০৩ থেকে শুরু করে ২০১৩ মোট ১০ বছর। বাগদাদী সারা বিশ্বের সকলের(ত্বাগুত থেকে শুরু করে মুজাহিদ) বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর যখন আমেরিকা কোয়ালিশন জোট নিয়ে নামলো তখন সেটা ধ্বংস হতে ২ বছরও লাগেনি। এখন তো সব শিয়াদের হাতে। তথাকথিত 'দাওলাতুল খিলাফার' ধ্বংসস্তুপ ইরাক থেকে এখন আরেকটা জিহাদী আন্দোলন দাড় করানো অনেক কঠিন আছে।

    যাই হোক, এবার আসি ওয়াগনার বিদ্রোহ নিয়ে। টুইটারের সুবাদে এর শুরু থেকে সমাপ্তি ও আফটারম্যাথ সবই দেখা হয়েছে। প্রত্যেকটা মুহূর্তের আপডেট আসছিল‌ো টুইটারে।

    ওয়াগনার মূলতঃ রাশিয়ার সশস্ত্র ভাড়াটে যুদ্ধবাজ সংগঠন যা রাশিয়াতে প্যারালেল মিলিটারি সংগঠন হিসেবে তৈরী করা হয়। এটি মূলতঃ একটি পিএমসি(প্রাইভেট মিলিটারি কর্পোরেশন), যার সাথে দেশের মূল আর্মড ফোর্স থেকে স্বাধীন। এর উদ্দেশ্য ছিলো পৃথিবীর বিভিন্ন দূর্বল দেশগুলোর সরকারদেরকে মিলিটারি ও স্ট্র্যাটেজিক এইড দেয়ার মাধ্যমে তাদেরকে শক্তিশালী করে তোলা। কিন্তু এভাবে তারা গোটা বিশ্বে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করবে। এই কারণে এটিকে পুতিন সবধরণের সহায়তা দিয়ে আসছে।

    গ্রুপটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিরিয়া ও মালিতে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত আছে। পশ্চিম আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি গোটা বিশ্বে প্রভাবশালী হয়ে উঠার পিছনে প্রিগোজিনের ভুমিকাই বেশী।

    ইউক্রেন যুদ্ধেও এটি অগ্রবর্তী ছিলো। তবে তাদের সাথে পুতিনের মন কষাকষি শুরু হয় ইউক্রেনযুদ্ধে বাঁধা অসন্তোষের দানা থেকে। ওয়াগনারদের সাথে রাশিয়ান সেনাদের বৈষম্যমূলক আচরণ, গোলাবারুদ সাপ্লাইয়ে রাশিয়ার অজুহাত, ব্যাটেলফিল্ডে রাশিয়ান সেনাদের বিভিন্ন সময়ে করা বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ইউক্রেনযুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ওয়াগনার সেনা প্রাণ হারায়। এদিকে মালিতেও মুজাহিদদের আক্রমণের মুখে ওয়াগনাররা বেশ লসের মুখোমুখি হচ্ছিলো।


    এরকম আরো নানাবিধ কারণে ওয়াগনাররা বেশ ক্রুদ্ধ হয়ে পড়ে পুতিন ও তার আলিগার্কদের প্রতি এবং তারা ছোটখাটো বিদ্র‌োহের প্রস্তুতি নেয়। ২৫ হাজার ওয়াগনার সেনা মিলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে বিদ্রোহ সূচনা ঘটানোর প্রস্তুতি নেয়। অত্যন্ত গোপনে তারা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।

    ২৩শে জুন ২০২৩ সকালে হঠাৎ তারা রাশিয়ার ইউক্রেনের কাছাকাছি রুস্তভ শহর দখল করে নেয়। ওয়াগনার সেনারা সেখানকার মিলিটারি হেডকোয়ার্টার দখল করে ও এর প্রধানকে বন্দি করে। ফলে শহরের প্রশাসনিক অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ে ও রাশিয়ান পুলিশ ও সেনারা ওয়াগনারদের হাতে সারেন্ডার করে।

    তড়িৎগতিতে তা সারা দুনিয়ায় এক ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। সকল সরকার, এজেন্সি, সাংবাদিক, সমরবিশারদ, গ্লোবাল এনালিস্ট সকলের নজর কেড়ে নেয়। চারিদিকে শুরু হয় নানান কল্পনা-জল্পনা। এমনকি টুইটারে অনেকে দেখি জানাচ্ছে, একটানা ২৫-৩০ ঘন্টা যাবত নির্ঘুম কাটাচ্ছে শুধু রাশিয়ায় কি হচ্ছে তার রিসেন্ট আপডেট নিতে নিতে।

    পুতিন তখন কঠোর শাস্তি দেয়ার হুমকি দেয়। প্রিগোজিনের এই কাজকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ করে। বিভিন্ন শহরে থাকা তাদের হেডকোয়ার্টার দখল করে নেয়।

    ওয়াগনারদের ফ্রন্টিয়ার কলামটি কোম্পানী সাইজের ট্যাংক, আর্টিলারি, হাম্ভী, মিলিটারি জিপ নিয়ে মস্কো দখলের জন্য অগ্রসর হতে থাকে। এতে রাশিয়ান আর্মি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা জায়গায় জায়গায় ট্রাক ফেলে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরী করে। কিন্তু ওয়াগনাররা এগুলো উল্টে ফেলে অগ্রসর হতে থাকে। কোথাও কোথাও হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান দিয়ে বাধা দিতে চাইলে ওয়াগনাররা এগুলো তাদের মিসাইল দিয়ে ভুপাতিত করে।

    এদিকে পুতিনের আদেশে তারই একান্ত ভৃত্য রমযান কাদিরভ চেচেনিয়া থেকে তার বাহিনী পাঠায় ওয়াগনারদের হাত থেকে রুস্তভ শহর পুনরুদ্ধার করতে। কিন্তু তারা মাঝপথে যুদ্ধের কারণে তৈরী হওয়া বিশাল গাড়ির যানজটের কারণে আটকা পড়ে যায়।

    উপায়ান্তর না দেখে রাশিয়ান আর্মি মস্কোর কাছের রোডগুলোতে মিলিটারি জীপ ফেলে এগুলোর চাকা ফাটিয়ে ও ব্যাটারি অপসারণ করে ব্যরিকেড বানিয়ে রাখে যাতে ওয়াগনার‌রা মস্কোতে না ঢুকতে পারে। একটি টুইটে জানা যায়, পুতিন তার পার্সোনাল বিমানে করে মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে পলায়ন করেছে।

    ওয়াগনারদের অগ্রবর্তী বাহিনীটি যখন মস্কোর কাছে পৌছে তখন পুতিন শান্তি প্রস্তাব পাঠায়। তার বিরুদ্ধে একদিন আগে করা রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা তুলে নেয়। তার দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়। প্রিগোজিনও দেখলো যাইহোক সে যা চেয়েছিলো তা পেয়ে গেছে, তাই সে ওয়াগনারদের অগ্রবর্তী বাহিনীকে ফিরিয়ে নেয়। দখলকৃত শহর রুস্তভ ফিরিয়ে দেয়। ঘটনা ডিসমিস হলে ক্ষমতার ভাগাভাগি করে ওয়াগনারদের বেলারুশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

    কিন্তু এই ঘটনার পর কি পুতিনের ঘুম হতে পারে! তার রাশিয়ায় তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, মানে তার শাসনের জন্য এক রেড লাইট। সে একজন কুটকৌশলসম্পন্ন ও প্রতিশোধপরায়ন লোক।

    দূর্ভাগ্য প্রিগোজিনের, সে এটা বুঝতে পারেনি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দুনিয়াটা হলো প্রতারণা, স্বার্থ আর শক্তিমানদের। এসব প্যারামিটারে যে এগিয়ে থাকবে তারই মূল্য বর্তমান দুনিয়ায় আছে। বাকিরা ছিটকে পড়বে।

    ঠিক একমাস পর ২৩ জুলাই তার বিমান সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার পথে পুতিনের গোয়েন্দারা মিসাইল ছুড়ে ভুপাতিত করে। এতে প্রিগোজিনসহ ওয়াগনারের শীর্ষস্থানীয় ১০ জন যুদ্ধবাজ নেতার মৃত্যু হয়। এভাবেই প্রিগোজিনের মতো বিশ্বের রঙ্গমঞ্চে উদীয়মান এক খেলোয়াড়ের যবনিকাপাত ঘটে।

    এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য কিছু শিক্ষণীয় বিষয়াবলী।

    শিক্ষণীয়-১:


    যতই বড় দল হোক বা আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা থাকুক, অস্ত্র ছাড়া কারো কোনো মূল্য নাই। বিশ্ব হলো শক্তিমানদের। সেখানে যারা অস্ত্রবিহীন তারা হলো নিরীহ সিভিলিয়ানের অন্তর্ভূক্ত, তার যত বড় জনসমর্থনই থাকুক। শাসকগোষ্ঠী তাদেরকে যেমন নিজেদের স্বার্থের মধ্যে রাখে না তেমনি আন্তর্জাতিক কোনো দরকষাকষির বেলায় তাদেরকে পাত্তা দেয় না।

    একটা ভূখন্ডে অস্ত্রধারীরা হলো জঙ্গলে উঁচু গাছের মতো। আর নিরস্ত্র সাধারণ পাবলিক হলো তৃণতুল্য। জঙ্গলে উঁচু গাছেরই রাজত্ব থাকে। নির্ভয়ে তারা প্রভাব বিস্তার করে যায়। আর তৃণগুলোকে গাছ কেবলমাত্র দাবানল ছাড়া অন্য কোনো কিছুর জন্য ভীত হতে হয় না। কারণ দাবানল যখন তৃণভূমির সংস্পর্শে আসে তখন তা দ্রুত ছড়িয়ে যা

    দেখুন, প্রিগোজিন বিদ্রোহ ঘোষণার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হয়েছে। ওয়াগনারদের কয়েকটি হেডকোয়ার্টার, অফিস ও ঘাটি দখল করা হয়েছে। বিভিন্ন সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। কিন্তু ওয়াগনাররা মস্কো দখল করতে উদ্যত হলে প্রিগোজিনের কাছে শান্তির বার্তা পাঠানো হয়েছে। তারপর পুতিন ও প্রিগোজিন মীমাংসায় এসেছে। উভয়ে মিলে শান্তিপূর্ণভাবে রাশিয়াকে পরিচালনা করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার ওয়াগনার গ্রুপকে সসম্মানে বেলারুশের দায়িত্ব দিয়ে বেলারুশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

    এই সবকিছুই হয়েছে প্রিগোজিনের বিশাল ভাড়াটিয়া গুন্ডা সশস্ত্র বাহিনী থাকার ফলে। আচ্ছা যদি প্রিগোজিন সশস্ত্র বাহিনী না থাকতো? বরং বিশাল জনপ্রিয়তা থাকত‌ো? জনগনকে নিয়ে বিপ্লব শুরু করতো?

    তাহলে পুতিন এই বিপ্লবকে কঠোর হাতে দমন করতে। ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে এর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের জেলে ভরে তাদের পরিবারকে হেনস্তায় ফেলতো। কর্মীদের মোরেল ভেঙ্গে দিতো। নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার মামলা করে ফাঁসিতে ঝুলাতো। প্রিগোজিন জনপ্রিয় হওয়ায় তার জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে তাকে জড়িয়ে জনসমর্থন নষ্ট করে তাকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠাতো। বরফে ধুঁকে ধুঁকে তাকে মরতে হতো। এভাবেই পুতিন তার গদির প্রতি সকল হুমকির পথ বন্ধ করে দিতো।

    সেইম পলিসি পৃথিবীর বাকি সকল ডিক্টেটররাও অবলম্বন করেছে। মিশরের সিসি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের হাসিনা। আমরা যদি ১৩ সালের জামায়াতের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ও ২১ সালের মোদীবিরোধী আন্দোলনের পর হেফাজতের উপর ক্র্যাকডাউনের দিকে তাকাই তাহলে এর প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করবো।
    শিক্ষণীয়-২:


    একটা রেভ্যুলেশন শুরু করার আগে হাজারবার ভাবা উচিত। এর শুরু, চালিয়ে যাওয়া, প্রভাব, আফটারম্যাথ ও পরিস্থিতি ও প্রতিপক্ষের সার্বিক সক্ষমতা বুঝেই হাজার অংক কষা প্রয়োজন। কিন্তু একবার শুরু করে দিলে যত বিপত্তি বা ধ্বংসযজ্ঞ আসুক বা আসার ভয় থাকুক তাতে অবিচল থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। শুরু কখন করা হবে তা নিয়ে হাজার হেজিটেশন থাকুক একবার শুরু হয়ে গেলে 'দেশের ক্ষতি হবে'ভেবে সমাপ্তি টানা কিংবা 'ঘরে ফিরে যাওয়া' নিজের জন্য যেমন ধ্বংসাত্বক তেমনি নিজের জামাআতের জন্যও। বিপ্লব চলাকালীন আপনাকে বা আপনার জামাআতকে ধ্বংস করা কঠিন হতে পারে কিন্তু আপনি বিপ্লবের সমাপ্তি ঘোষণা দিলে আপনাকে ধ্বংস করা তেমন কঠিন না।

    আর যার বিরুদ্ধে আপনি বিদ্রোহ করেছেন সে যে বিপ্লবের সমাপ্তির পর আপনাকে আস্ত রাখবে সেটা কিভাবে চিন্তা করা যায়? তার ঘুম তো সেদিন থেকেই হারাম হয়ে গেছে যেদিন বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। সেদিন থেকেই তার মোনার্কিতে রেড লাইট জ্বলে গেছে। এখন সে কখনই শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না যতক্ষন তার প্রতিপক্ষের সর্বশেষ শক্তিটুকু ধ্বংস না করতে পারছে। সে যতই 'দাবি মেনে নেওয়ার' ঘোষণা দিক বা 'শান্তির হাত' বাড়িয়ে দিক, তার রাত্রি কাটে তার উপদেষ্টাদের নিয়ে আলোচনায় যে কিভাবে বিদ্রোহীদের সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করা যায়।

    এটা সত্য যে প্রিগোজিন সংঘাত বন্ধ করে দিয়ে দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিয়েছিলো। কিন্তু আমার কথা হলো, বিপ্লব শেষে যদি আমার যবনিকাপাত ঘটানো হয়, তাহলে এই দেশের মুলা ধুয়ে কি আমি পানি খাবো? দেশ তো একটা মিথ্যা আদর্শের নাম। আমি যদি বিদ্রোহী হই তাহলে এর সংজ্ঞা হলো এটা আমার শত্রুর শাসিত ভুখন্ড। সে সামর্থ্যের মধ্যে এর সংজ্ঞায় ইচ্ছামত রদবদল করতে পারে।

    রিমাইন্ডার-১ঃ ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলনের ব্যাপারে বিপ্লবীরা বুঝতে পারলেন যে এতো সহজে সাফল্য আসবে না। ব্রিটিশরা ক্ষমতা ধরে রাখবেই। এবার ঘরে ফিরে যাবার সময় এসেছে। শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনই বেটার। বিপ্লবে অংশ নেয়া কয়েক লাখ যুবক, উলামা, বিপ্লবী ঘরে ফিরে গেলেন। কিন্তু তাদের ঘরে থাকতে দেয়া হলো না। ঘর থেকে ধরে এনে ফাঁসিতে ঝুলানো হলো। দিল্লিতেই ২৭ হাজার উলামা শহীদ হলেন। গ্র্যান্ড ট্যাংক রোডের এমন কোনো গাছ বাকি থাকলো না যেখানে বিপ্লবীদের লাশ ঝুললো না। মহিলাদের গণহারে ধর্ষণ করা হলো। খান্দানী মুসলিম বংশের মেয়েরা কুপে ঝাঁপ দিয়ে সাদা চামড়ার পশুদের হাত থেকে নিজেদের ইজ্জতের হেফাজত করলো।

    রিমাইন্ডার-২ঃ মোদীবিরোধী আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হলো। দেশের কথা চিন্তা করেই হোক আর মাদ্রাসা হেফাজতের জন্যই হোক, এই আন্দোলনের দায়িত্বশীল উলামায়ে কেরাম তাতে ভঙ্গ দিলেন। এদিকে মোদীও সফল সফর শেষে তার দেশে ফিরে গেল‌ো। এবার শুরু হলো সাড়া দেশে সাড়াশী অভিযান। হেফাজতের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের গ্রেফতারি শুরু হলো। তাদের কারাগারে যিল্লতির সাথে রাখার মাধ্যমে আন্দোলনের স্পৃহা নষ্টের চেষ্টা চালালো। জনপ্রিয় নেতাদের কাউকে নারী কেলেঙ্কারী কাউকে পর্ণের অভিযোগ তুলে সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্টের প্রচেষ্টা চালালো। এরি মধ্যে নশ্বর ইহধাম থেকে বিদায় নিলেন এর একাধিক নেতৃবৃন্দ। এভাবে হেফাজতে ইসলামের মতো একটা জীবন্ত সংগঠনের কার্যতঃ যবনিকাপাত ঘটিয়েছে ত্বাওয়াগীত। ১৩ সালের পর এর যে প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিলো ২১ সালের পর তা শেষ হয়েছে। বহু বছরের চেষ্টার মাধ্যমে হয়তো ধ্বংসস্তুপ থেকে আবার উঠতে পারবে কিন্তু আগের মানহাজকেই কি আকড়ে ধরে রাখবে?

    শিক্ষণীয়-৩:


    আসলে কোনো একটা দেশ বাইরের কোনো ভূখন্ডে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়ালে এর অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি কতটা নাজুক থাকে তা আমরা ওয়াগনার বিদ্রোহ থেকে এর প্রমাণ পাই। দেখুন ওয়াগনারদের তথ্যানুযায়ী মাত্র হাজার হাজার ওয়াগনার ট্রুপস অংশ নেয় এই বিদ্রোহে। এটা ওয়াগনারদের দাবি কিন্তু অনেকে বলেন এই সংখ্যা আরো কম ছিলো। অথচ সুপারপাওয়ার দাবিদার রাশিয়া তাতেই প্রকম্পিত হয়েছে। রাশিয়ান সেনারা তাদের প্রতিরোধ না করে জায়গায় জায়গায় ট্রাক ফেলে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। বিদ্রোহের এই দুইদিন রাশিয়ান বাহিনীকে মনে হয়েছিলো না জানি কত অসহায় তারা!

    এটা হয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন ভুখন্ডে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে লিপ্ত থাকার কারণে। এই ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমরনীতি হলো 'একটি রাষ্ট্র যতই শক্তিশালী হোক না কেনো সে মাল্টিপল ফ্রন্টে দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তার জন্য বরবাদী ডেকে আনে।'
    রাশিয়া ইতোমধ্যে সিরিয়া ও ইউক্রেনে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার কারণে তার অবস্থা হয়েছে ঐ অজগর সাপের ন্যায় যেটি বিশালাকার শিকারকে গিলার অবস্থায় আছে। আর অজগর সাপের জন্য এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্ত। এই সময় তাকে একটা ইঁদুর আক্রমণও যদি করে তাহলেও সেটা প্রতিরোধের সক্ষমতা তার নেই। এটা আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। কারণ আমাদের পাশেই এক কালসাপ(ইন্ডিয়া) আছে যাকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
    শিক্ষণীয়-৩:


    উপযুক্ত সময়ে, সঠিক স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করতে পারলে সুসংঘবদ্ধ বিচক্ষণ ও দূরদর্শী আমিরের নেতৃত্বে উচ্চ মনোবলের অল্পসংখ্যক যুবকের একটি জামাতও বিশাল সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিতে পারে।

    ওয়াগনার‌দের সংখ্যা রাশিয়ান আর্মির তুলনায় নিত্যান্তই কম। কিন্তু তারা প্রিগোজিনের মতো মোটিভেশন সৃষ্টিকারী নেতার অধীনে পুতিনের রাজ্যে ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে সমর্থ্য হয়। বিদ্রোহের পর তারা রাশিয়ান জনগনেরও সাপোর্ট পায়। ‌মুসলিমদের জন্যও এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ দীর্ঘকাল যাবত 'এরা পরাশক্তি', 'ওরা মহাশক্তিধর' এই মানসিকতা তাদের মধ্যে কাজ করছে।


    আসলে মহাশক্তিধর বলতে কেউ নেই। এই দুনিয়াতে প্রত্যেক অস্ত্রধারীই শক্তিধর। কারণ দিনশেষে সাড়ে তিন হাত বডির মানুষকেই লড়তে হবে। আর অস্ত্রের ভয়ে সত্যকে গোপন করা, দ্বীনের তাহরিফ করার অর্থ তো হলো ভূখন্ডের মুসলিমদের ত্বাগুতের হাতে তুলে দেয়া। কারণ, সত্যকে গোপন করা যায়না ঠিকই, কিন্তু সাময়িক অপব্যাখ্যা ও গোপন করার মাধ্যমে বাড়ন্ত জেনারেশনকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া যায়, ফলে ত্বাগুতের জন্য আরো কয়েক দশক শাসন করা সহজ হয়ে যায়।

    কিন্তু অল্প সংখ্যক মুসলিমের একটি জামাআতও যদি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করে দেয়, এবং ধৈর্য ধরে টিকে থাকে তাহলে আল্লাহ পাক সাহায্য করবেনই। কারণ কোনো ভূখন্ডের একটা ত্বাগুতি বাহিনীর জন্য সময়ই সর্বদা মসৃণ যায় না। এমনও সময় আসে যখন তাকে আঘাত করলেই তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে। জিহাদী জামাআতগুলোকে সবরের সাথে এই দিনগুলোরই অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু এই দিনগুলোর সুযোগ নেয়ার জন্য যদি ক‌োন‌ো জিহাদী জামাআত না থাকে তাহলে ত্বাগুত হাজার ধাক্কা খেলেও টিকে যেতে সমর্থ্য হয়। এই ভূমিতে একাত্তর, মুজিবের মৃত্যু, এরশাদবিরোধী আন্দোলন কিংবা ২০১৩ সালের বিপ্লবে কিংবা ২০২১ সালের আন্দোলনের মতো অনেক ধাক্কাই গিয়েছে ত্বাগুতের উপর দিয়ে। কিন্তু সে ঠিকই টিকে গেছে। অপরদিকে ইসলামপন্থীরা এ থেকে কোনোই ফসল তোলতে পারেনি। কারণ তারা কোনো এমন কোনো জামাআত তৈরী করতে পারেনি যা এই সুয‌োগগুলোকে ব্যবহার করে ত্বাগুতের ঘাড়ে দ্রুত আঘাত করে তাকে ধরাশারী করে ফেলে দেবে.....




  • #2
    একটি রাষ্ট্র যতই শক্তিশালী হোক না কেনো সে মাল্টিপল ফ্রন্টে দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তার জন্য বরবাদী ডেকে আনে।
    মাশা-আল্লাহ
    আল্লাহ আপনার লিখনিতে ভরপুর বারাকাহ দান করুন

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ ভাই খুবই সুন্দর ছিলো। অনেক কিছুই শিখার আছে ইনশা আল্লাহ

      Comment


      • #4
        বিশেষ দ্রষ্টব্য: হিস্টোরিক্যাল দুয়েকটা ইন্সট্যান্স ছাড়া বাকি সকল তথ্য সোস্যাল মিডিয়ার রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণ থেকেই নেয়া হয়েছে। তাই এককভাবে কোনো রেফারেন্স দেয়া সম্ভব না। তাই কারো রেফারেন্স জানার দরকার হলে উইকিপিডিয়ায় থরে থরে ঘটনা সাজানো আছে। সেখান থেকে জেনে নিন। জাযাকাল্লাহ।

        Comment


        • #5
          Originally posted by Omor Faruk View Post

          মাশা-আল্লাহ
          আল্লাহ আপনার লিখনিতে ভরপুর বারাকাহ দান করুন
          জাযাকাল্লাহ খাইরান।

          Comment


          • #6
            Originally posted by tasfiq hossain khan View Post
            মাশাআল্লাহ ভাই খুবই সুন্দর ছিলো। অনেক কিছুই শিখার আছে ইনশা আল্লাহ
            জাযাকাল্লাহ।

            Comment


            • #7
              মাশা আল্লাহ! চমৎকার ভাই।
              আগে এই ধরনের লিখার অনেক খোরাক পাইতাম। এখন অনেক ভাইয়ের অভাব অনুভব হয়।

              আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুন। আমাদের চিন্তার খোরাক দেওয়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে হিকমাহ দান করুন। আমিন।

              সাহসিকতা আয়ু কমায় নাহ!
              ভীরুতা আয়ু বাড়ায় নাহ!

              Comment


              • #8
                আপনার লেখার আমি একজন মুগ্ধ পাঠক। নিয়মিত চালিয়ে যাবার অনুরোধ রইল ভাই Omayer Binyameen
                ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                Comment


                • #9
                  যুদ্ধ কৌশল অনুধাবন সিরিজ

                  =>
                  ১ম পর্ব ।। বৈশ্বিক ক্ষমতা ও রাজনীতির গঠন
                  https://dawahilallah.com/showthread.php?10607

                  => ২য় পর্ব ।। অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর শক্তির
                  https://dawahilallah.com/showthread.php?10662

                  => ৩য় পর্ব ।। আঞ্চলিক শক্তির মানচিত্র
                  https://dawahilallah.com/showthread.php?10982

                  => ৪র্থ পর্ব ।। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা
                  https://dawahilallah.com/showthread.php?12786

                  =>
                  ৫ম পর্ব ।। শত্রুর মূলকেন্দ্র নির্ধারনঃ যুদ্ধ বিজয়ের অর্ধেক
                  https://dawahilallah.com/showthread.php?12842




                  এই সিরিজটা পড়ে আমি বেশ উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ্‌

                  Comment


                  • #10
                    একবারেই পুরেটা পড়ে নিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
                    এরকম আরও আর্টিকেল দরকার।

                    Comment


                    • #11
                      Originally posted by abu ahmad View Post
                      আপনার লেখার আমি একজন মুগ্ধ পাঠক। নিয়মিত চালিয়ে যাবার অনুরোধ রইল ভাই Omayer Binyameen
                      ইনশাআল্লাহ, মুহতারাম হযরত। মহান আল্লাহর রহমতে যেনো বিষয়টি সহজ হয়ে ওঠে।

                      Comment


                      • #12
                        জাযাকাল্লাহু খইরন।।

                        Comment


                        • #13
                          Originally posted by Omar Abdur Rahman View Post

                          আগে এই ধরনের লিখার অনেক খোরাক
                          ২০১৫-১৮ সালের পোস্টগুলো খেয়াল করলে এরকম প্রচুর দেখা যায়।

                          Comment

                          Working...
                          X