ইয়া জুনদাল্লাহ: হে আল্লাহর সৈনিক।
হে আল্লাহর সৈনিক, তুমি আজও অতিভোজনে (প্রয়োজনের অতিরিক্ত) ব্যস্থ? অথচ তোমার ভাইয়েরা ফিলিস্থিনে ক্ষুধার্ত। হে আল্লাহর সৈনিক, তুমি আজও বন্ধুদের আড্ডায় হাসিতে ফেটে পড়ো? অথচ তোমার ভাইয়েরা ফিলিস্থিন, কাস্মীর ও উইঘুরে আর্তনাদ করছে। হে আল্লাহর সৈনিক, তুমি আজও দুনিয়ার সপ্নে বিভোর? অথচ তোমর ভাইয়েরা থাকার মতো বাসস্থান পর্যন্ত হারিয়েছে। তোমার কি হলো তুমি আজও বসে থাকা লোকদের সাথে বসে রয়েছো! তাতো অবশ্যই তোমার জন্য আখিরাতে দূভোর্গ বয়ে আনবে এবং আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আল্লাহ তা’আলা সূরা আত-তাওবা বলেন,
وَ لَوۡ اَرَادُوا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَهٗ عُدَّۃً وَّ لٰکِنۡ کَرِهَ اللّٰهُ انۡۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَ قِیۡلَ اقۡعُدُوۡا مَعَ الۡقٰعِدِیۡنَ
অর্থঃ আর যদি তারা বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তবে তারা তার জন্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করত, কিন্তু আল্লাহ তাদের বের হওয়াকে অপছন্দ করলেন, ফলে তিনি তাদেরকে পিছিয়ে দিলেন, আর বলা হল, ‘তোমরা বসে পড়া লোকদের সাথে বসে থাক’। সূরা আত-তাওবা: ৪৬
আল্লাহ তা’আলা সূরা আত-তাওবা বলেন,
اِلَّا تَنۡفِرُوۡا یُعَذِّبۡکُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا ۬ۙ وَّ یَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَیۡرَکُمۡ وَ لَا تَضُرُّوۡهُ شَیۡئًا ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ
অর্থঃ যদি তোমরা (যুদ্ধে) বের না হও, তিনি তোমাদের বেদনাদায়ক আযাব দেবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক কওমকে আনয়ন করবেন, আর তোমরা তাঁর কিছুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। সূরা আত-তাওবা: ৩৯
আল্লাহ তা’আলা সূরা আত-তাওবা বলেন,
رَضُوۡا بِاَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِ وَ طُبِعَ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا یَفۡقَهُوۡنَ
অর্থঃ তারা পেছনে থাকা লোকদের সাথে থাকা বেছে নিল এবং তাদের অন্তরসমূহের উপর মোহর এঁটে দেয়া হল, ফলে তারা বুঝতে পারে না। সূরা আত-তাওবা: ৮৭
হে আল্লাহর সৈনিক, চলো কল্পনার জগতে তোমার রবের সাথে সাক্ষাৎ কেমন হতে পারে মনে করিয়ে দিই।
হিসাব-নিকাশ শেষ হয়েছে। কিছু মানুষের গন্তব্যস্থল হয়েছে জাহান্নাম, আর কিছু মানুষের গন্তব্যস্থল হয়েছে জান্নাত। আজ জান্নাতি নর-নারীরা তাদের মহান রবের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য একত্রিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা সরাসরি তার প্রিয় বান্দাদের সাথে দেখা করবেন। আপনার পূর্বে আহ্বায়ক অসংখ্য শহীদদেরকে ডেকেছে, যারা নবী-রাসূলগণ, আলেম-উলামা, ও মুমিনদের সাথে একত্রিত হয়ে কাফির, মুশরিক, মুরতাদ ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারপর হঠাৎ আহ্বায়ক গগন বিদারী কন্ঠে আপনার পিতার নাম উল্লেখ করে আপনার নাম ঘোষণা করেছে।
আজ আপনি ধন্য, এটাই তো প্রকৃত সফলতা। আপনার সৃষ্টিকর্তা সরাসরি আপনার সাথে কথা বলবেন। আপনি কৃতজ্ঞতায় নতজানু হয়ে ধীরস্থির পায়ে মহান রবের আরশের দিকে এগিয়ে চলছেন। হযরত আদম (আঃ) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল জাান্নাতি নর-নারী উৎসুক চোখে আপনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আপনার শরীরের ক্ষতস্থান গুলো থেকে তাজা রক্ত ঝড়ছে, ক্ষতগুলো চকচক করে জ্বলছে আর আলোকরশ্নি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। যা আপনার সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে দিয়েছে। রক্ত থেকে মিশকে আম্বারের খুশবু চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
উৎসুক জান্নাতি নর-নারী আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। আপনি ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে চলছেন আর আপনার নজরে অনেক পরিচিত ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজনদের দেখছেন। যারা আজ খুশিতে আত্মহারা, আর চিৎকার করে বলছে দেখো আমার পরিচিত শহীদ ভাই, কেউ বলছে দেখো সে আমার আত্মীয়। কেউ কেউ আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, সে কোন বাবা-মায়ের সন্তান। আবার কেউ বলছে, সে কোন মায়ের সন্তান, তার মা তো আজ ধন্য। কারো কারো আফসোস ধ্বনিও শুনতে পাচ্ছেন। যারা শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের সাথে ঘরে বসে ছিলো। তাদের আজ আফসোসের সীমা নাই।
হঠাৎ দেখলেন আপনার বাবা-মাও ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে আসছে। আপনার মা, শহীদের মা হিসাবে সম্মানিত পোশাক পড়েছেন। এই পোশাক আর কাউকে দেওয়া হয় নি। আর আপনার মাকে পূর্বে কখনও এতো সুন্দরও দেখায় নি। আপনার বাবার মুখে হাসি তাকেও শহীদের বাবা হিসাবে সম্মানিত পোশাক পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাবার মুখেও এমন হাসি আপনি পূর্বে কখনও দেখেন নি। দুনিয়ার ক্যারিয়ার ও সাফল্য নিয়ে গর্ববোধ করা বাবা-মায়েরা আজ আফসোস করছে। ফ্যাল-ফ্যাল করে শহীদদের দিকে তাকিয়ে থাকছে। তারা আজ জান্নাত পেয়েও নিঃস্ব।
এবার আপনি লক্ষ্য করলেন, আপনি আপনার রবের আরশের নিচে চলে এসেছেন। আপনার মনে পড়তে শুরু করলো দুনিয়ায় কৃত পাপের কথাগুলো ভয়, আফসোস আর কৃতজ্ঞতায় আপনি সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। এতো ভয়, আবেগ আর ভালোবাসায় পূর্বে কখনও এভাবে আপনি সিজদাহ করেন নি। তারপর হঠাৎ আপনি চমকে গিয়ে শুনতে পেলেন সেই মহা আকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠ। আপনার রব দরদ মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করছে, তুমি কেনো এভাবে এসেছো? তোমার এ অবস্থা কেমন করে হলো? আপনার জবান আজ স্তব্ধ। আপনার রব আপনার দিকে মুচকি হেঁসে বলছে, আমি তোমার প্রতি খুশি হয়েছি আর কখনও তোমার প্রতি রাগান্বিত হবো না এবং আর কখনও তোমার মৃত্যু হবে না। যাও তোমার পরিবার নিয়ে আমার জান্নাতে বিচরণ করো।
শহীদদের জন্য একশটি পদমর্যাদা (Rank) রযেছে। আপনাকে একটি পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আপনি আপনার রবের কাছ থেকে সত্তর জন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করার অনুমতি পেয়েছেন। এবার আপনি আপনার রবের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিয়ে ফিরে এসেছেন। আত্মীয়-স্বজন, আর পরিচিতরা উচ্ছ্বাসিত হয়ে আপনাকে ঘিরে ধরেছে। তারা আনন্দিত, তারা আজ পাগলপারা, তাদের পরিবার থেকে মহান করুনাময় রব একজনকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছে। একে একে আপনাকে তারা অভিনন্দন জানাচ্ছে। হঠাৎ আপনার মনটা কেঁপে উঠলো স্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেলো, তাকে না বলেই কোনো এক সকালে দাঁতে দাঁত চেপে জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছিলেন। মনটা আবেগ আর ভালোবাসায় ভরে উঠলো, কোথায় সে! কথাটি মনে উদয় হতেই লক্ষ্য করলেন আপনার বাবা-মা, শশুর-শাশুড়ি কথা বলছে। আপনি কাছে আসতেই আপনার শশুর বললেন তাকে নিয়ে এসো। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন আপনার স্ত্রী আপনার উপর অভিমান করেছে। সে আপনার সামনে আসতে চায় না, আপনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন স্ত্রী দিকে নজর পড়তেই অপরূপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, তার নজর আপনার দিকে পড়তেই তৈরি হলো এক আবেগঘন দৃশ্য। একে অপরের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলেন, কত বছর কেটে গেল তা হয়তো আপনার জানা থাকবে না। মনে হবে এই তো কয়েকটা সেকেণ্ড। আপনার স্ত্রী অভিমান করেছে ঠিকেই কিন্তু আজ সে প্রচণ্ড খুশি। আল্লাহ তা’আলা সরাসরি তার স্বামীর সাথে কথা বলেছে। পদমর্যাদার একশটি স্তরের মধ্যে একটি দিয়েছে। যার দুনিয়ার সাফল্যের সাথে কোনো তুলনা হয় না। আজ সে আপনাকে ছেড়ে কষ্টে কাটানো দিনগুলোর কথা ভুলে গিয়েছে। কোন স্ত্রী চায় না তার স্বামী সাফল্যের চূড়ায় উঠুক। দুনিয়াবী সাফল্যের জন্য যদি মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন এবং আত্মীয়-স্বজন এতো উচ্ছ্বাসিত হয়, এতো খুশি হয় তাহলে চিন্তা করুন আপনার আখিরাতের সাফল্যে তারা কত খুশি হবে? কতটা গর্ববোধ করবে?
হে আল্লাহর সৈনিক, আজ যদি আপনি হিজরত না করতেন, জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ না করতেন তবে আপনার অবস্থান হতো আফসোস করা লোকদের কাতারে। হয়তো তখনও আপনার মুখে হাসি থাকতো আর দর্শক সারি থেকে চিৎকার করে বলতেন দেখো আমার বন্ধু বা আত্মীয় বা পরিচিত রব্বুল আলামিন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছে। তখনও আপনি খুশি, আপনি উচ্ছ্বাসিত কিন্তু হৃদয়ে থাকতো পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত, আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত একরাশ আফসোস। আমি যেই শব্দই বা বাক্যই ব্যবহার করি না কেনো এই আফসোসের পরিমান এক বিন্দু পর্যন্ত তুলে ধরতে পারবো না। হয়তো তখন আপনার স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা তাকিয়ে থাকবে আর আফসোস করবে আহ আমার সন্তান, আমার স্বামী যদি শহীদ হতো। এই আফসোসের পরিমান এমনই হবে যে আপনি জান্নাতেও বলবেন এর চেয়ে মৃত্যুই উত্তম।
[আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে মাফ করুন এবং আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমার লেখায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তা আমার পক্ষ থেকে আর তাতে কল্যাণকর কিছু থাকলে তা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে]
হে আল্লাহর সৈনিক, তুমি আজও অতিভোজনে (প্রয়োজনের অতিরিক্ত) ব্যস্থ? অথচ তোমার ভাইয়েরা ফিলিস্থিনে ক্ষুধার্ত। হে আল্লাহর সৈনিক, তুমি আজও বন্ধুদের আড্ডায় হাসিতে ফেটে পড়ো? অথচ তোমার ভাইয়েরা ফিলিস্থিন, কাস্মীর ও উইঘুরে আর্তনাদ করছে। হে আল্লাহর সৈনিক, তুমি আজও দুনিয়ার সপ্নে বিভোর? অথচ তোমর ভাইয়েরা থাকার মতো বাসস্থান পর্যন্ত হারিয়েছে। তোমার কি হলো তুমি আজও বসে থাকা লোকদের সাথে বসে রয়েছো! তাতো অবশ্যই তোমার জন্য আখিরাতে দূভোর্গ বয়ে আনবে এবং আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আল্লাহ তা’আলা সূরা আত-তাওবা বলেন,
وَ لَوۡ اَرَادُوا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَهٗ عُدَّۃً وَّ لٰکِنۡ کَرِهَ اللّٰهُ انۡۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَ قِیۡلَ اقۡعُدُوۡا مَعَ الۡقٰعِدِیۡنَ
অর্থঃ আর যদি তারা বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তবে তারা তার জন্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করত, কিন্তু আল্লাহ তাদের বের হওয়াকে অপছন্দ করলেন, ফলে তিনি তাদেরকে পিছিয়ে দিলেন, আর বলা হল, ‘তোমরা বসে পড়া লোকদের সাথে বসে থাক’। সূরা আত-তাওবা: ৪৬
আল্লাহ তা’আলা সূরা আত-তাওবা বলেন,
اِلَّا تَنۡفِرُوۡا یُعَذِّبۡکُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا ۬ۙ وَّ یَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَیۡرَکُمۡ وَ لَا تَضُرُّوۡهُ شَیۡئًا ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ
অর্থঃ যদি তোমরা (যুদ্ধে) বের না হও, তিনি তোমাদের বেদনাদায়ক আযাব দেবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক কওমকে আনয়ন করবেন, আর তোমরা তাঁর কিছুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। সূরা আত-তাওবা: ৩৯
আল্লাহ তা’আলা সূরা আত-তাওবা বলেন,
رَضُوۡا بِاَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِ وَ طُبِعَ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا یَفۡقَهُوۡنَ
অর্থঃ তারা পেছনে থাকা লোকদের সাথে থাকা বেছে নিল এবং তাদের অন্তরসমূহের উপর মোহর এঁটে দেয়া হল, ফলে তারা বুঝতে পারে না। সূরা আত-তাওবা: ৮৭
হে আল্লাহর সৈনিক, চলো কল্পনার জগতে তোমার রবের সাথে সাক্ষাৎ কেমন হতে পারে মনে করিয়ে দিই।
হিসাব-নিকাশ শেষ হয়েছে। কিছু মানুষের গন্তব্যস্থল হয়েছে জাহান্নাম, আর কিছু মানুষের গন্তব্যস্থল হয়েছে জান্নাত। আজ জান্নাতি নর-নারীরা তাদের মহান রবের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য একত্রিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা সরাসরি তার প্রিয় বান্দাদের সাথে দেখা করবেন। আপনার পূর্বে আহ্বায়ক অসংখ্য শহীদদেরকে ডেকেছে, যারা নবী-রাসূলগণ, আলেম-উলামা, ও মুমিনদের সাথে একত্রিত হয়ে কাফির, মুশরিক, মুরতাদ ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারপর হঠাৎ আহ্বায়ক গগন বিদারী কন্ঠে আপনার পিতার নাম উল্লেখ করে আপনার নাম ঘোষণা করেছে।
আজ আপনি ধন্য, এটাই তো প্রকৃত সফলতা। আপনার সৃষ্টিকর্তা সরাসরি আপনার সাথে কথা বলবেন। আপনি কৃতজ্ঞতায় নতজানু হয়ে ধীরস্থির পায়ে মহান রবের আরশের দিকে এগিয়ে চলছেন। হযরত আদম (আঃ) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল জাান্নাতি নর-নারী উৎসুক চোখে আপনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আপনার শরীরের ক্ষতস্থান গুলো থেকে তাজা রক্ত ঝড়ছে, ক্ষতগুলো চকচক করে জ্বলছে আর আলোকরশ্নি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। যা আপনার সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে দিয়েছে। রক্ত থেকে মিশকে আম্বারের খুশবু চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
উৎসুক জান্নাতি নর-নারী আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। আপনি ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে চলছেন আর আপনার নজরে অনেক পরিচিত ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজনদের দেখছেন। যারা আজ খুশিতে আত্মহারা, আর চিৎকার করে বলছে দেখো আমার পরিচিত শহীদ ভাই, কেউ বলছে দেখো সে আমার আত্মীয়। কেউ কেউ আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, সে কোন বাবা-মায়ের সন্তান। আবার কেউ বলছে, সে কোন মায়ের সন্তান, তার মা তো আজ ধন্য। কারো কারো আফসোস ধ্বনিও শুনতে পাচ্ছেন। যারা শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের সাথে ঘরে বসে ছিলো। তাদের আজ আফসোসের সীমা নাই।
হঠাৎ দেখলেন আপনার বাবা-মাও ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে আসছে। আপনার মা, শহীদের মা হিসাবে সম্মানিত পোশাক পড়েছেন। এই পোশাক আর কাউকে দেওয়া হয় নি। আর আপনার মাকে পূর্বে কখনও এতো সুন্দরও দেখায় নি। আপনার বাবার মুখে হাসি তাকেও শহীদের বাবা হিসাবে সম্মানিত পোশাক পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাবার মুখেও এমন হাসি আপনি পূর্বে কখনও দেখেন নি। দুনিয়ার ক্যারিয়ার ও সাফল্য নিয়ে গর্ববোধ করা বাবা-মায়েরা আজ আফসোস করছে। ফ্যাল-ফ্যাল করে শহীদদের দিকে তাকিয়ে থাকছে। তারা আজ জান্নাত পেয়েও নিঃস্ব।
এবার আপনি লক্ষ্য করলেন, আপনি আপনার রবের আরশের নিচে চলে এসেছেন। আপনার মনে পড়তে শুরু করলো দুনিয়ায় কৃত পাপের কথাগুলো ভয়, আফসোস আর কৃতজ্ঞতায় আপনি সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। এতো ভয়, আবেগ আর ভালোবাসায় পূর্বে কখনও এভাবে আপনি সিজদাহ করেন নি। তারপর হঠাৎ আপনি চমকে গিয়ে শুনতে পেলেন সেই মহা আকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠ। আপনার রব দরদ মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করছে, তুমি কেনো এভাবে এসেছো? তোমার এ অবস্থা কেমন করে হলো? আপনার জবান আজ স্তব্ধ। আপনার রব আপনার দিকে মুচকি হেঁসে বলছে, আমি তোমার প্রতি খুশি হয়েছি আর কখনও তোমার প্রতি রাগান্বিত হবো না এবং আর কখনও তোমার মৃত্যু হবে না। যাও তোমার পরিবার নিয়ে আমার জান্নাতে বিচরণ করো।
শহীদদের জন্য একশটি পদমর্যাদা (Rank) রযেছে। আপনাকে একটি পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আপনি আপনার রবের কাছ থেকে সত্তর জন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করার অনুমতি পেয়েছেন। এবার আপনি আপনার রবের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিয়ে ফিরে এসেছেন। আত্মীয়-স্বজন, আর পরিচিতরা উচ্ছ্বাসিত হয়ে আপনাকে ঘিরে ধরেছে। তারা আনন্দিত, তারা আজ পাগলপারা, তাদের পরিবার থেকে মহান করুনাময় রব একজনকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছে। একে একে আপনাকে তারা অভিনন্দন জানাচ্ছে। হঠাৎ আপনার মনটা কেঁপে উঠলো স্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেলো, তাকে না বলেই কোনো এক সকালে দাঁতে দাঁত চেপে জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছিলেন। মনটা আবেগ আর ভালোবাসায় ভরে উঠলো, কোথায় সে! কথাটি মনে উদয় হতেই লক্ষ্য করলেন আপনার বাবা-মা, শশুর-শাশুড়ি কথা বলছে। আপনি কাছে আসতেই আপনার শশুর বললেন তাকে নিয়ে এসো। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন আপনার স্ত্রী আপনার উপর অভিমান করেছে। সে আপনার সামনে আসতে চায় না, আপনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন স্ত্রী দিকে নজর পড়তেই অপরূপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, তার নজর আপনার দিকে পড়তেই তৈরি হলো এক আবেগঘন দৃশ্য। একে অপরের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলেন, কত বছর কেটে গেল তা হয়তো আপনার জানা থাকবে না। মনে হবে এই তো কয়েকটা সেকেণ্ড। আপনার স্ত্রী অভিমান করেছে ঠিকেই কিন্তু আজ সে প্রচণ্ড খুশি। আল্লাহ তা’আলা সরাসরি তার স্বামীর সাথে কথা বলেছে। পদমর্যাদার একশটি স্তরের মধ্যে একটি দিয়েছে। যার দুনিয়ার সাফল্যের সাথে কোনো তুলনা হয় না। আজ সে আপনাকে ছেড়ে কষ্টে কাটানো দিনগুলোর কথা ভুলে গিয়েছে। কোন স্ত্রী চায় না তার স্বামী সাফল্যের চূড়ায় উঠুক। দুনিয়াবী সাফল্যের জন্য যদি মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন এবং আত্মীয়-স্বজন এতো উচ্ছ্বাসিত হয়, এতো খুশি হয় তাহলে চিন্তা করুন আপনার আখিরাতের সাফল্যে তারা কত খুশি হবে? কতটা গর্ববোধ করবে?
হে আল্লাহর সৈনিক, আজ যদি আপনি হিজরত না করতেন, জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ না করতেন তবে আপনার অবস্থান হতো আফসোস করা লোকদের কাতারে। হয়তো তখনও আপনার মুখে হাসি থাকতো আর দর্শক সারি থেকে চিৎকার করে বলতেন দেখো আমার বন্ধু বা আত্মীয় বা পরিচিত রব্বুল আলামিন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছে। তখনও আপনি খুশি, আপনি উচ্ছ্বাসিত কিন্তু হৃদয়ে থাকতো পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত, আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত একরাশ আফসোস। আমি যেই শব্দই বা বাক্যই ব্যবহার করি না কেনো এই আফসোসের পরিমান এক বিন্দু পর্যন্ত তুলে ধরতে পারবো না। হয়তো তখন আপনার স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা তাকিয়ে থাকবে আর আফসোস করবে আহ আমার সন্তান, আমার স্বামী যদি শহীদ হতো। এই আফসোসের পরিমান এমনই হবে যে আপনি জান্নাতেও বলবেন এর চেয়ে মৃত্যুই উত্তম।
[আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে মাফ করুন এবং আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমার লেখায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তা আমার পক্ষ থেকে আর তাতে কল্যাণকর কিছু থাকলে তা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে]
Comment