আমেরিকার ২০ বছরের শাসনামলে আফগানিস্তানে যে পরিমাণ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তৈরী হয়েছে এর চেয়ে বহুগুণে বেশী পরিমাণে সেক্যুলার, ফেমিনিস্ট, লিবারের প্রভৃতি পূতিঃদুর্গন্ধময় মতবাদের ব্রেনওয়াশড লোক তৈরী হয়েছে। যা আমেরিকা ছাড়ার পরে আফগানিস্তানে এখনও বিষাক্ত কীট হিসেবে রয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় শাসনের কোর অংশের কাছাকাছি বসবাস করায়, রাজধানীগুলোর মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির লোকগুলোই শাসকগোষ্ঠীর মতবাদ দ্বারা সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়। তারা বাচ্চাকাল থেকেই পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরে তেল বাধায়। বাবা মায়ের অনুপ্রেরণা থাকে তারা যেনো জাতে উঠতে পারে। এরজন্য তারা জাতে উঠার জন্য সামনে যা পায় তাই তাদের গিলাতে বাধ্য। স্কুলে যায়। ভালো রেজাল্ট করে। সেখান থেকে তারা শাসকগোষ্ঠীর সমস্ত মানবরচিত ও ঔপনিবেশিক মতবাদ দ্বারা ব্রেইনওয়াশড হয়। বাকি জীবন তারা ঐ মতবাদের উপরই কাটিয়ে দেয়। ঢাকা থেকে কাবুল, কোথাও-ই ইবনে খালদুন কতৃক চিহ্নিত মানবজাতির এই অদ্ভুত নিয়মটির ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
এমনিতেই কাবুল একটা বিশাল সময় ধরে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে ছিলো। যার ফলে ঐখানে কয়েকটা জেনারেশন জন্ম নিয়েছে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে। এই কারণেই তো ৯৬ সালে তালিবান আফগানিস্তান বিজয়ের পর ২ লাখ লোক আফগান ত্যাগ করে। তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিলো, আমরা শরীয়াহ শাসনের অধীনে থাকতে পারবো না। তালিবান তাদের জানিয়ে দেয়, "তোমরা যেখানে পারো চলে যাও, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।"
কাবুলে বেড়ে ওঠা এই কমিউনিস্ট প্রভাবিত জেনারেশন কতটা ভয়াবহ ছিলো, তার ব্যাপারে একজন আফগান মুজাহিদ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন,
"একবার আমরা এক আফগান সেনাকে গ্রেফতার করি। সে ভাবাদর্শে কমিউনিস্ট ছিলো। আমরা তাকে তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসতে বলি। কালেমা পড়তে বলি। কিন্তু সে সাফ জানিয়ে দেয়, এই 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ করছে। কাজেই সে কোনোভাবেই সে প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। তখন আমরা তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা জানাই। কিন্তু সে তার আদর্শে অটল। আমরা তখন তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিই। সেও সন্তুষ্টচিত্তে নিজের মৃত্যুকে বরণ করে নেয়। তবুও তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসার প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে ফিরিয়ে দেয়।"
৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তালিবান আফগানের সবার জন্য দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলো। আমেরিকার আগ্রাসনের পর তালিবানের যখন পতন হলো তখন কাবুলের সেলুনে দেখা গেলো দাঁড়ি শেভের বিশাল লম্বা লম্বা লাইন। বন্দী তালিবান মুজাহিদদের কাছে এই যুবকেরা এসে নিজেদের শেইভ করা গালে হাত দিয়ে বললো "দেখো, দাঁড়ি রাখতে তো বাধ্য করেছিলা, এখন তো কামায়া ফেললাম, কি করবা করো!"
বন্দী মুজাহিদদের অসহায়ভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার ছিলো না।
২০২১ সালে বিজয়ের পর তালিবান জনগণের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন আনার জন্য কৌশলে ভিন্নতা এনেছে। তালিবান জানে এই আফগানদের এসব সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হবে। এই কারণে তারা এখন হার্ডলাইনে না গিয়ে সফট ও স্ট্র্যাটেজিক পজিশনকেই বেছে নিয়েছে। অনেক ভাই তো এসব কারণে তালিবান-১ ও তালিবান-২ ভার্সন বের করেছে। কারণ তালিবান-২ নাকি মডারেট হয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করেন দাঈশই এক্ষেত্রে উপযুক্ত। আসলে এটা হয় ভাইদের বাস্তব জগত সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে। দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তারা তাদের বাক্সের ভিতরেই চিন্তা করতে পারে। বাক্সের বাইরে যে একটা জগত আছে এবং এটা ম্যানেজ করা কতটা কঠিন তা তাদের জানা ও শিখার সুযোগ হয় না।
হার্ডলাইনে গিয়ে আসলে সবকিছুর সমাধান হয়না। হার্ডলাইনে যাওয়ার আগে চিন্তা করতে হবে, এই উম্মাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত ত্বাগুতদের আন্ডারে কাটাচ্ছে। ব্রিটিশ-কমিউনিস্ট-সেক্যুলাররা মুসলিম ভুখন্ডগুলো দখল করে সবার আগেই সেখানের ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজকাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এরপর স্কুলগুলোকে ব্যবহার করে গড়ে তুলেছে তাদের পছন্দমাফিক জেনারেশন। আমরা যে জেনারেশনে কাটাচ্ছি এই জেনারেশনকে তো ইহা শিখিয়ে বড় করা হয়েছে যে, ইসলামী রুলসের চেয়ে এসব তাগুতি রুলস অনেক সফট। আর শরীয়াহ রুলসের পীর দরবেশ লেভেলের লোকেরাই থাকতে পারবে, আমরা না।
ত্বাগুতি সিস্টেমগুলো উম্মাহর মধ্যে কি পরিমাণে বিকৃতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে তা সময়কালের ঈমান বনাম কুফরের সংঘাত থেকে শুরু করে খোদ মুসলিমদের শরীয়াহবিমুখতা লক্ষ্য করলে। এই কারণে এই সময়ে এসে যদি আপনি তাদেরকে জোরপূর্বক একটা জিনিস মানতে বাধ্য করেন, তারা ডাইরেক্টলি আপনার কোনো কিছু করবে না, কারণ আপনি সশস্ত্র, কিন্তু আড়ালে আপনার জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। এসব জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রেখে তানজিম আল কায়েদা তার স্ট্র্যাটেজিগুলো সাজিয়েছে।
ইরানে ৪৫ বছর যাবত শিয়া খোমেনি-খামেনিদের শাসন থাকার পরেও সেখানে চোখের অন্তরালে কি পরিমাণ লিবারেল ফেমিনিস্ট গজিয়েছে তা ভালো বুঝা গিয়েছিলো মাশা আমিনি হত্যার সময়। মাশা আমিনি হত্যার পর ইরানি ফেমিনিস্টরা মিডিয়ার সামনে এসে নিজেদের হিজাব/ওড়না খুলে মিডিয়ার সামনে প্রদর্শন করছিলো আর ইরানের শাসকগোষ্ঠীদের জানান দিচ্ছিলো যে 'মাই বডি মাই চয়েস' এই নীতিতে চলবো, তাতে আমি তোমার রক্তচক্ষুর পরোয়া করি না। আন্তর্জাতিক মহল এ নিয়ে ব্যাপক একটিভ হয় এবং ইরান এটা নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলো।
তালিবানের চূড়ান্ত বিজয়ের পরেও আফগান ফেমিনিস্টরা ব্যাপক একটিভ হয়। তারা মিছিল, বিক্ষোভ ও সোশ্যাল ক্যাম্পেইন চালাতে থাকে। তালিবান এগুলো ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মোকাবেলা করে আসছিলো। মাঝেমধ্যে আফগান সেক্যুলার ও ফেমিনিস্টদের আস্ফালন দেখে মনে হতো তারা এদের কঠোর হাতে দমন করছে না কেনো। এদের গুলি করে মারলেও কার কি আসে যায়। তালিবানের প্রতি বেশ ক্ষোভ জমা হতো। তারা কি আসলেই মডারেট হয়ে গেলো নাকি?
অবশ্য এগুলো ছিলো আমার বুঝের সীমাবদ্ধতার ফল।
যাই হোক পরবর্তীতে সামাজিক গণমাধ্যমে আসা কিছু ঘটনাপ্রবাহের আলোকে এটা বুঝা গেলো যে তারা আসলেই এই ক্যান্সারগুলোকে ইফেক্টিভলি মোকাবেলা করতে সমর্থ্য হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে দূরদর্শী পদ্ধতিটা হলো ফেমিনিস্ট মহিলাদেরকে সরাসরি ধরে নিয়ে মারধোর না করে তার ফ্যামিলির পুরুষ অভিভাবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া। ইসলামী ইমারাতের পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে তার বোন বা মেয়ের কাজের জন্য কড়া জবাবদিহি তলব করে। আর তারাও যদি একগুঁয়েমি করে তাহলে তাদেরকে ধরে ভালো করে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে বন্দি করে রাখে। পরে তাদেরকে এই ধরণের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় যে তার বোন বা মেয়েকে এই ধরণের কাজ করতে দিবে না, এভাবে তালিবান পুলিশ তাদের উপর একটা পারিবারিক প্রেশার তৈরী করে।
খুব সাংঘাতিক কাজে লিপ্ত থাকলে(যেমন মিডিয়াতে মিথ্যাচার) তালিবানের মহিলা পুলিশ এসে ঐ ফেমিনিস্ট মহিলাকেই ধরে নিয়ে যায়। তাকে বন্দি রাখা হয়। পরে তার পরিবারের লোকেরা এসে ধর্না দিতে থাকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য। তখন তারা এই ধরণের কাজ ভবিষ্যতে করবে না এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
মানুষ নিজের উপর যাওয়া চাপ সামলাতে পারে কিন্তু ফ্যামিলির উপর দিয়ে যাওয়া প্রেসার সামাল দিতে পারেনা। ফ্যামিলির উপর দিয়ে প্রেশার যাওয়ার কারণে তো কত মুজাহিদ ভাইই জিহাদের পথ থেকে ঝরে যায়।
যেসব পুরুষ এসমস্ত কাজে লিপ্ত থাকে, তাদের তো সোজা ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে সোজা করে দেয়া হয়। আর ফেমিনিস্টদের এক্টিভিটি যেসব সাংবাদিক কভার করতো তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক পিটানো হয় কিংবা ভবিষ্যতে এধরণের কাজ করবে না এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এরই সঙ্গে তালিবানের "আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার" মন্ত্রণালয় ও শিক্ষামন্ত্রণালয় এখন ব্যাপক একটিভ। তারা জনগণের মধ্যে দাওয়াহ চালিয়ে ও শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার আনার মাধ্যমে আফগান জনগণের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন ও শরীয়াহ চেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা করছেন।
তালিবান আমেরিকার রেখে যাওয়া এই বিষাক্ত কীটগুলোকে হিকমাহপূর্ণ পদ্ধতিতে একদম কোণঠাসা করে ফেলেছে আলহামদুলিল্লাহ। তাদের সোস্যাল মিডিয়া এক্টিভিজম ব্যাপকভাবে ড্রপ করেছে। কিছু কীট অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়ে তাদের অনলাইনে বিষ ছড়ানোর কাজ জারী রেখেছে। তাছাড়া কিছু আফগান বিচ্ছিন্ন ফেমিনিস্ট গোপনে মেয়েদের শিক্ষার নামে ব্রেনওয়াশ দেয়ার চেষ্টা করছে। আর প্রাক্তন আফগান যুদ্ধবাজ নেতারা বিদেশ গাইডলাইন দিয়ে প্রাক্তন আফগান সেনাদের দিয়ে এনআরএফ গঠন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কিন্তু বিপুল শক্তিধর তালিবানের রাজ্যে না এগুলো আহামরি প্রভাব সৃষ্টি করতে পারছে না তালিবানকে তার প্রতিজ্ঞা থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারছে।
মাঝেমধ্যে অনেক জিনিস কঠোর পথ বাদ দিয়ে হিকমাহপূর্ণ পথে করাই উত্তম। যেমন তালিবান যদি এই গুটিয়েক লিবারেল ও ফ্যামিনিস্টদের দমন করতে অস্ত্রপ্রয়োগের পথ বেছে নিতো তাহলে হয়তো এটা তাদের জন্য অনেক কঠিন পরিস্থিতি হয়তো টেনে আনতে পারতো। কারণ উম্মাহর পতনের পর এই প্রথম ইসলামী ইমারতের আশেপাশে হায়েনাদের আনাগোনাই বেশী।
এই সময়ে ইসলামী ইমারতকে হিকমাহপূর্ণ পথে চলাটাই বেটার। পাশাপাশি চারিদিকে শুরু হওয়া জিহাদগুলোতে সাপোর্ট দেয়া। ইনশাআল্লাহ, আর দশ বছর পরের এই সকল কীটের অস্তিত্বই থাকবে না, ততদিনে হয়তো পাকিস্তান, সোমালিয়াসহ আরো বিভিন্ন ভূখন্ডে আরো অনেক ইসলামী ইমারাত দাড়িয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় শাসনের কোর অংশের কাছাকাছি বসবাস করায়, রাজধানীগুলোর মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির লোকগুলোই শাসকগোষ্ঠীর মতবাদ দ্বারা সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়। তারা বাচ্চাকাল থেকেই পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরে তেল বাধায়। বাবা মায়ের অনুপ্রেরণা থাকে তারা যেনো জাতে উঠতে পারে। এরজন্য তারা জাতে উঠার জন্য সামনে যা পায় তাই তাদের গিলাতে বাধ্য। স্কুলে যায়। ভালো রেজাল্ট করে। সেখান থেকে তারা শাসকগোষ্ঠীর সমস্ত মানবরচিত ও ঔপনিবেশিক মতবাদ দ্বারা ব্রেইনওয়াশড হয়। বাকি জীবন তারা ঐ মতবাদের উপরই কাটিয়ে দেয়। ঢাকা থেকে কাবুল, কোথাও-ই ইবনে খালদুন কতৃক চিহ্নিত মানবজাতির এই অদ্ভুত নিয়মটির ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
এমনিতেই কাবুল একটা বিশাল সময় ধরে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে ছিলো। যার ফলে ঐখানে কয়েকটা জেনারেশন জন্ম নিয়েছে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে। এই কারণেই তো ৯৬ সালে তালিবান আফগানিস্তান বিজয়ের পর ২ লাখ লোক আফগান ত্যাগ করে। তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিলো, আমরা শরীয়াহ শাসনের অধীনে থাকতে পারবো না। তালিবান তাদের জানিয়ে দেয়, "তোমরা যেখানে পারো চলে যাও, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।"
কাবুলে বেড়ে ওঠা এই কমিউনিস্ট প্রভাবিত জেনারেশন কতটা ভয়াবহ ছিলো, তার ব্যাপারে একজন আফগান মুজাহিদ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন,
"একবার আমরা এক আফগান সেনাকে গ্রেফতার করি। সে ভাবাদর্শে কমিউনিস্ট ছিলো। আমরা তাকে তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসতে বলি। কালেমা পড়তে বলি। কিন্তু সে সাফ জানিয়ে দেয়, এই 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ করছে। কাজেই সে কোনোভাবেই সে প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। তখন আমরা তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা জানাই। কিন্তু সে তার আদর্শে অটল। আমরা তখন তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিই। সেও সন্তুষ্টচিত্তে নিজের মৃত্যুকে বরণ করে নেয়। তবুও তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসার প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে ফিরিয়ে দেয়।"
৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তালিবান আফগানের সবার জন্য দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলো। আমেরিকার আগ্রাসনের পর তালিবানের যখন পতন হলো তখন কাবুলের সেলুনে দেখা গেলো দাঁড়ি শেভের বিশাল লম্বা লম্বা লাইন। বন্দী তালিবান মুজাহিদদের কাছে এই যুবকেরা এসে নিজেদের শেইভ করা গালে হাত দিয়ে বললো "দেখো, দাঁড়ি রাখতে তো বাধ্য করেছিলা, এখন তো কামায়া ফেললাম, কি করবা করো!"
বন্দী মুজাহিদদের অসহায়ভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার ছিলো না।
২০২১ সালে বিজয়ের পর তালিবান জনগণের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন আনার জন্য কৌশলে ভিন্নতা এনেছে। তালিবান জানে এই আফগানদের এসব সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হবে। এই কারণে তারা এখন হার্ডলাইনে না গিয়ে সফট ও স্ট্র্যাটেজিক পজিশনকেই বেছে নিয়েছে। অনেক ভাই তো এসব কারণে তালিবান-১ ও তালিবান-২ ভার্সন বের করেছে। কারণ তালিবান-২ নাকি মডারেট হয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করেন দাঈশই এক্ষেত্রে উপযুক্ত। আসলে এটা হয় ভাইদের বাস্তব জগত সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে। দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তারা তাদের বাক্সের ভিতরেই চিন্তা করতে পারে। বাক্সের বাইরে যে একটা জগত আছে এবং এটা ম্যানেজ করা কতটা কঠিন তা তাদের জানা ও শিখার সুযোগ হয় না।
হার্ডলাইনে গিয়ে আসলে সবকিছুর সমাধান হয়না। হার্ডলাইনে যাওয়ার আগে চিন্তা করতে হবে, এই উম্মাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত ত্বাগুতদের আন্ডারে কাটাচ্ছে। ব্রিটিশ-কমিউনিস্ট-সেক্যুলাররা মুসলিম ভুখন্ডগুলো দখল করে সবার আগেই সেখানের ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজকাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এরপর স্কুলগুলোকে ব্যবহার করে গড়ে তুলেছে তাদের পছন্দমাফিক জেনারেশন। আমরা যে জেনারেশনে কাটাচ্ছি এই জেনারেশনকে তো ইহা শিখিয়ে বড় করা হয়েছে যে, ইসলামী রুলসের চেয়ে এসব তাগুতি রুলস অনেক সফট। আর শরীয়াহ রুলসের পীর দরবেশ লেভেলের লোকেরাই থাকতে পারবে, আমরা না।
ত্বাগুতি সিস্টেমগুলো উম্মাহর মধ্যে কি পরিমাণে বিকৃতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে তা সময়কালের ঈমান বনাম কুফরের সংঘাত থেকে শুরু করে খোদ মুসলিমদের শরীয়াহবিমুখতা লক্ষ্য করলে। এই কারণে এই সময়ে এসে যদি আপনি তাদেরকে জোরপূর্বক একটা জিনিস মানতে বাধ্য করেন, তারা ডাইরেক্টলি আপনার কোনো কিছু করবে না, কারণ আপনি সশস্ত্র, কিন্তু আড়ালে আপনার জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। এসব জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রেখে তানজিম আল কায়েদা তার স্ট্র্যাটেজিগুলো সাজিয়েছে।
ইরানে ৪৫ বছর যাবত শিয়া খোমেনি-খামেনিদের শাসন থাকার পরেও সেখানে চোখের অন্তরালে কি পরিমাণ লিবারেল ফেমিনিস্ট গজিয়েছে তা ভালো বুঝা গিয়েছিলো মাশা আমিনি হত্যার সময়। মাশা আমিনি হত্যার পর ইরানি ফেমিনিস্টরা মিডিয়ার সামনে এসে নিজেদের হিজাব/ওড়না খুলে মিডিয়ার সামনে প্রদর্শন করছিলো আর ইরানের শাসকগোষ্ঠীদের জানান দিচ্ছিলো যে 'মাই বডি মাই চয়েস' এই নীতিতে চলবো, তাতে আমি তোমার রক্তচক্ষুর পরোয়া করি না। আন্তর্জাতিক মহল এ নিয়ে ব্যাপক একটিভ হয় এবং ইরান এটা নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলো।
তালিবানের চূড়ান্ত বিজয়ের পরেও আফগান ফেমিনিস্টরা ব্যাপক একটিভ হয়। তারা মিছিল, বিক্ষোভ ও সোশ্যাল ক্যাম্পেইন চালাতে থাকে। তালিবান এগুলো ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মোকাবেলা করে আসছিলো। মাঝেমধ্যে আফগান সেক্যুলার ও ফেমিনিস্টদের আস্ফালন দেখে মনে হতো তারা এদের কঠোর হাতে দমন করছে না কেনো। এদের গুলি করে মারলেও কার কি আসে যায়। তালিবানের প্রতি বেশ ক্ষোভ জমা হতো। তারা কি আসলেই মডারেট হয়ে গেলো নাকি?
অবশ্য এগুলো ছিলো আমার বুঝের সীমাবদ্ধতার ফল।
যাই হোক পরবর্তীতে সামাজিক গণমাধ্যমে আসা কিছু ঘটনাপ্রবাহের আলোকে এটা বুঝা গেলো যে তারা আসলেই এই ক্যান্সারগুলোকে ইফেক্টিভলি মোকাবেলা করতে সমর্থ্য হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে দূরদর্শী পদ্ধতিটা হলো ফেমিনিস্ট মহিলাদেরকে সরাসরি ধরে নিয়ে মারধোর না করে তার ফ্যামিলির পুরুষ অভিভাবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া। ইসলামী ইমারাতের পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে তার বোন বা মেয়ের কাজের জন্য কড়া জবাবদিহি তলব করে। আর তারাও যদি একগুঁয়েমি করে তাহলে তাদেরকে ধরে ভালো করে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে বন্দি করে রাখে। পরে তাদেরকে এই ধরণের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় যে তার বোন বা মেয়েকে এই ধরণের কাজ করতে দিবে না, এভাবে তালিবান পুলিশ তাদের উপর একটা পারিবারিক প্রেশার তৈরী করে।
খুব সাংঘাতিক কাজে লিপ্ত থাকলে(যেমন মিডিয়াতে মিথ্যাচার) তালিবানের মহিলা পুলিশ এসে ঐ ফেমিনিস্ট মহিলাকেই ধরে নিয়ে যায়। তাকে বন্দি রাখা হয়। পরে তার পরিবারের লোকেরা এসে ধর্না দিতে থাকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য। তখন তারা এই ধরণের কাজ ভবিষ্যতে করবে না এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
মানুষ নিজের উপর যাওয়া চাপ সামলাতে পারে কিন্তু ফ্যামিলির উপর দিয়ে যাওয়া প্রেসার সামাল দিতে পারেনা। ফ্যামিলির উপর দিয়ে প্রেশার যাওয়ার কারণে তো কত মুজাহিদ ভাইই জিহাদের পথ থেকে ঝরে যায়।
যেসব পুরুষ এসমস্ত কাজে লিপ্ত থাকে, তাদের তো সোজা ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে সোজা করে দেয়া হয়। আর ফেমিনিস্টদের এক্টিভিটি যেসব সাংবাদিক কভার করতো তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক পিটানো হয় কিংবা ভবিষ্যতে এধরণের কাজ করবে না এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এরই সঙ্গে তালিবানের "আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার" মন্ত্রণালয় ও শিক্ষামন্ত্রণালয় এখন ব্যাপক একটিভ। তারা জনগণের মধ্যে দাওয়াহ চালিয়ে ও শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার আনার মাধ্যমে আফগান জনগণের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন ও শরীয়াহ চেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা করছেন।
তালিবান আমেরিকার রেখে যাওয়া এই বিষাক্ত কীটগুলোকে হিকমাহপূর্ণ পদ্ধতিতে একদম কোণঠাসা করে ফেলেছে আলহামদুলিল্লাহ। তাদের সোস্যাল মিডিয়া এক্টিভিজম ব্যাপকভাবে ড্রপ করেছে। কিছু কীট অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়ে তাদের অনলাইনে বিষ ছড়ানোর কাজ জারী রেখেছে। তাছাড়া কিছু আফগান বিচ্ছিন্ন ফেমিনিস্ট গোপনে মেয়েদের শিক্ষার নামে ব্রেনওয়াশ দেয়ার চেষ্টা করছে। আর প্রাক্তন আফগান যুদ্ধবাজ নেতারা বিদেশ গাইডলাইন দিয়ে প্রাক্তন আফগান সেনাদের দিয়ে এনআরএফ গঠন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কিন্তু বিপুল শক্তিধর তালিবানের রাজ্যে না এগুলো আহামরি প্রভাব সৃষ্টি করতে পারছে না তালিবানকে তার প্রতিজ্ঞা থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারছে।
মাঝেমধ্যে অনেক জিনিস কঠোর পথ বাদ দিয়ে হিকমাহপূর্ণ পথে করাই উত্তম। যেমন তালিবান যদি এই গুটিয়েক লিবারেল ও ফ্যামিনিস্টদের দমন করতে অস্ত্রপ্রয়োগের পথ বেছে নিতো তাহলে হয়তো এটা তাদের জন্য অনেক কঠিন পরিস্থিতি হয়তো টেনে আনতে পারতো। কারণ উম্মাহর পতনের পর এই প্রথম ইসলামী ইমারতের আশেপাশে হায়েনাদের আনাগোনাই বেশী।
এই সময়ে ইসলামী ইমারতকে হিকমাহপূর্ণ পথে চলাটাই বেটার। পাশাপাশি চারিদিকে শুরু হওয়া জিহাদগুলোতে সাপোর্ট দেয়া। ইনশাআল্লাহ, আর দশ বছর পরের এই সকল কীটের অস্তিত্বই থাকবে না, ততদিনে হয়তো পাকিস্তান, সোমালিয়াসহ আরো বিভিন্ন ভূখন্ডে আরো অনেক ইসলামী ইমারাত দাড়িয়ে যাবে।
Comment