ইতিহাস সাক্ষী, যখনই দুনিয়ার বুকে কোনো জুলুমের সাম্রাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তখনই মহান আল্লাহ তাঁর একটি বাহিনী দিয়ে তাদেরকে শায়েস্তা করেছেন। অহংকারী পারসিকদের ধ্বংস করেছিলেন হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর মাধ্যমে। অত্যাচারীদের আঁতুড়ঘর খ্রিষ্টীয় ক্রুসেড সাম্রাজ্য মুখ তুবড়ে পড়েছিল সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবীর বীরত্বের সামনে। আর অপরাজেয় বর্বর মঙ্গলবাহিনী সূচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ রাহিমাহুল্লাহ এর বাহিনীর কাছে।
ইতিহাস মুকাররার হয়। সময়ে সময়ে আবির্ভাব ঘটে নব্য কোনো ফেরাউনী অপশক্তির। এরই ধারাবাহিকতায় বিংশ শতাব্দীতে উত্তান হয় যুগের ‘হুবাল’ খ্যাত নরখাদক আমেরিকার। যার পৈশাাচিক থাবায় রক্তস্রোতে ভাসে ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, তুরকিস্থানসহ শত শত মুসলিম ভূখণ্ড। বাদ যায় নি অমুসলিমরাও। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে হিরোশিমায় প্রায় সত্তর হাজার মানুষ মেরে ফেলে এই অভিশপ্ত আমেরিকা।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ। আবারো আল্লাহর সুন্নাতের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সামরিক শক্তি আর নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে বড়াই করা তাগুত আমেরিকার এতোদিনের দম্ভ নিমিষেই চূর্ণ হয়ে যায়। জামাতুল কায়দার জানবাজ মুজাহিদদের মুবারক হামলায় ধ্বসে পড়ে টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনের সদর দপ্তর। হায় হায়! কোথায় গেল এতো এতো গোয়েন্দা তৎপরতা আর সামরিক সক্ষমতা! বাস্তবতা হলো, রহমানের সিংহদের সামনে এগুলো নিছক তাসের ঘর। মহান আল্লাহ তাআলার অমোঘ বাণী— ‘আল্লাহর আদেশে কত ছোট ছোট বাহিনী বিশাল বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করেছে।’ অপারেশন নাইন ইলেভেন যেন ছিল এই আয়াতেরই প্রতিফলন।
অবশেষে শায়েখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ এর কৌশল সফল হয়। ‘সাপের মাথা’ আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রচণ্ড ধ্বস নামে। কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারিয়ে আমেরিকা নতুন করে ক্রুসেডের ডাক দেয়। পত্রপত্রিকা আর মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে চরম ইসলাম বিদ্বেষ। মুসলিমদেরকে পরিচয় করানো হয় উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী হিসেবে।
কুফফারদের হম্বিতম্বি আর মিডিয়ার প্রোপাগাণ্ডার খপ্পরে পড়ে একদল পরাজিত মানসিকতার মুসলমান হয়ে যায় ধোঁকাগ্রস্থ। তারা ভাবতে থাকে, নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী (!) হামলার কারণেই বুঝি পশ্চিমা জগতে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে জিহাদ করতে যাওয়া আল কায়দার জঙ্গিদের (!) কারণেই বাকী মুসলিমরা আজ সমগ্র দুনিয়ায় ভ্যালুলেস হয়ে পড়েছে। বঞ্চিত হচ্ছে নানা সু্যোগ-সুবিধা থেকে।
সেই সমস্ত স্নায়বিক দূর্বল মুসলমানদের সমীপে আমাদের আরজ—
প্রিয় ভাইয়েরা আমার, আপনারা কি আপনাদের মস্তিষ্ক কুফফারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন যে তাদের মিডিয়া আপনাদের সামনে যা উপস্থাপন করবে তা-ই গিলতে হবে? ক্ষমতাধরেরা যা উচ্চারণ করবে তা-ই বিশ্বাস করতে হবে? আপনারা কি নিজস্ব মেধা খাটিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে পারেন না? মুসলিম বিশ্বে আমেরিকার সামরিক আগ্রাসন কি আপনাদের চোখে পড়ে না? আপনাদেরও তো উচিৎ ছিল উম্মাতে মুহাম্মদির ব্যথায় ব্যথিত হয়ে নিজেরাই জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া। আপনারা তো তা করলেনই না, বরং অন্যরা যখন আপনাদের কাজ করে দিল তখন আপনারা উম্মাহর শত্রুদের গলায় গলা মিলিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ আর তুচ্ছতাচ্ছিল্যে মেতে উঠলেন। হায় উম্মাহ! কবে আপনারা নিজেদের শত্রু-মিত্র চিনবেন!
প্রিয় জাতি, আপনারা কি মনে করেন মুজাহিদরা জিহাদ না করলে কুফফারা মুসলমানদের মাথায় তুলে নাচবে? সব হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে আপনাদেরকে হোয়াইট হাউজে নিয়ে জামাই আদর করবে? যদি এরকমই হয় আপনার চিন্তা-ভাবনা তাহলে জেনে রাখুন, আপনি শরীরে বড় হলেও মননে এখনো দোলনায় দোল খাওয়া অবুঝ শিশু। আপনার না আছে শরিয়তে ইসলামির জ্ঞান আর না আছে ইতিহাসের। কেন বললাম এ কথা? আসুন ইতিহাস থেকে একটু ঢুঁ মেরে আসি।
১. ইসলাম ধর্ম তার প্রারম্ভিকা থেকেই কুফফার এবং মুশরিকিনদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছে। কখনো এটি এসেছে আপন পরিচয়ে। কখনো বা ‘মসজিদে যিরার’ নাম দিয়ে স্বয়ং ইসলামের লিবাসে। যাইহোক, একাদশ শতকে যখন সম্মিলিত কুফফার জোট নব উদ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন তার নাম দিল ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও সংঘাতের পর এই যুদ্ধে মুসলমানরাই বিজয়ী হয়। আর ওরা লাশের পর লাশ ফেলে রেখে ময়দান ছেড়ে পালায়।
মুসলমানরা তো কখনো আগ বাড়িয়ে ক্রুসেড লাগায় নি। নিরপরাধ অমুসলিমদের প্রতি মুসলিম শাসকদের উদারতা ইতিহাস স্বীকৃত। তাহলে খ্রিস্টানরা কীভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চেতে উঠলো?
কুফফাররা যখন কোনোভাবেই মুসলমানদের আদর্শিক এবং সামরিক শক্তির সামনে ঠিকতে পারছিল না তখন তারা আঁটলো ভিন্ন আরেক ফন্দি। ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানান অলীক গালগল্প ছড়ানো হলো পশ্চিমা দুনিয়ায়। বলা হলো, মুসলিম নামক যে জাতির বিরুদ্ধে খ্রিস্টান রাজারা যুদ্ধ করছে ঐ জাতি মূলত নাস্তিক। তারা কোনো খোদায় বিশ্বাসী না। যিশু খ্রিষ্টকে তারাই হত্যা করেছে। মুসলিমরা খোদায় বিশ্বাসীদের হত্যা করে। শিশুদের খেয়ে ফেলে। ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়।
এই বানোয়াট কাহিনী শুনে আপনাদের হাসি পেলেও তৎকালীন মূর্খ পশ্চিমা জনগণ এগুলোকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। অতঃপর চরম বিদ্বেষ আর হিংসা নিয়ে বারবার মুসলিম ভূখণ্ডে হামলে পড়ে। (আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন বর্তমানে ভারতের মালাউন শাসকগোষ্ঠী একই চাল চালে তাদের জনগণের উপর। তারা মিথ্যা, বানোয়াট ইতিহাস দিয়ে কিছু মুভি বানায়। যাতে পূর্ববর্তী মুসলিম শাসকদেরকে দেখানো হয় অত্যাচারী হিসেবে। ব্যস, অশিক্ষিত গোমূত্রখোররা তাতেই উত্তেজিত হয়ে নিরীহ মুসলমানদের বাড়িঘর ভেঙ্গে তাদের প্রতিশোধ চরিতার্থ করে।)
২. কাফেররা শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই ক্ষান্ত হয় নি। থাবা বসায় মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনীর উপর। একের পর এক অপবাদ আর বানোয়াট কিচ্ছা রচনা করে তাঁকে নিয়ে। যা কল্পনায় আনাও মুসলিমদের জন্য মারাত্মক কষ্টের। তাদের অপবাদের ধরণ বুঝার জন্য কিছু তো উল্লেখ না করলেই নয়। আল্লাহ আমাকে মাফ করুক।
দান্তে আলিগিয়েরি (Dante Alighieri)। একজন ইতালিয়ান কবি। যার জন্ম হয়েছিল ১২৬৫ সালে। সে তার ডিভাইন কমেডিতে নরকের নয়টি স্তরের বর্ণনা দেয়। যার অষ্টমটিতে আছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার ভাষায় ‘মাওমেত’। অতঃপর সে চরম নির্লজ্জ ও কুরুচিপূর্ণভাবে মাওমেতের নরকে অবস্থানের বর্ণনা দেয়। খ্রিষ্টানদের সাথে কৃত জুলুমের শাস্তিস্বরূপ মাওমেতের চিবুক থেকে নিম্নাঙ্গ পর্যন্ত চিরে দুই ভাগ করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তারপর দেহের দুটি অংশকে দুই দিকে মেলে দেওয়া হয়েছে। পাশেই আছেন আলী (রাযি.)। তাকেও এভাবে চিরে দুভাগ করা হচ্ছে। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক। এই গল্পটি ইউরোপের জনগণ অবলীলায় গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ ইসলামের নবীর ব্যাপারে তাদের মনে জন্ম নেয় চরম ঘৃণা।
এই হচ্ছে ইসলাম এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে পশ্চিমাদের মনোভাব। এরকম বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবই পশ্চিমারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াচ্ছে।
নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তাঁর পুরোটা সীরাত ছিল আদর্শ মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনিও কাফের মুশরিকদের রোষানল থেকে বাঁচতে পারেন নি। আপনি কীভাবে বুঝলেন তোষামোদি আর তেলবাজি করে আপনি তাদের কাছে ভালো হয়ে যাবেন?
উপরে মাত্র কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলাম। এরকম হাজারো কাহিনী ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে যা এ কথারই জানান দেয়— পশ্চিমা সভ্যতার সূচনাই হয়েছে ইসলামের প্রতি ভয়ানক হিংসা আর বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব নিয়ে। আজও তারা সেই হিংসাই লালন করছে।
পরিশেষে পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন, মসজিদে যিরার থেকে নিয়ে ক্রুসেড এবং ইসলাম ও নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যঙ্গ করে রচিত এতো এতো কবিতা, গল্প আর কমেডির পিছনেও কি নাইন ইলেভেন, আল-কায়দা আর শায়েখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ এর গ্লোবাল জিহাদ দায়ী? যদি নাইন ইলেভেন হামলা না হতো আর শায়েখ উসামা আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক না দিতেন তাহলে কি পশ্চিমাদের ইসলাম বিদ্বেষ শেষ হয়ে যেতো?
উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে কেন বারবার মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে গালি দেন? কেন মনে করেন মুজাহিদরাই সকল অশান্তির মূল? আমেরিকা বলেছে তাই? আপনি আল্লাহর গোলামি করেন না আমেরিকার গোলামি করেন?
নাইন ইলেভেনের বরকতময় হামলাটি ছিল দীর্ঘদিনের নির্যাতনের প্রতিশোধ। আল-কায়দা ঠিক সেই কাজটিই করেছে যা করেছেন আমাদের মহান পূর্বপুরুষরা। সুতরাং এই জিহাদ ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতক্ষণ না পৃথিবীর সর্বশেষ জালেমটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
তাই আসুন, আর নয় গোলামির জিঞ্জির। এখন আমরা হাতে নিব শমশির।
২৬ সফর, ১৪৪৬ হিজরি
৩১ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
ইতিহাস মুকাররার হয়। সময়ে সময়ে আবির্ভাব ঘটে নব্য কোনো ফেরাউনী অপশক্তির। এরই ধারাবাহিকতায় বিংশ শতাব্দীতে উত্তান হয় যুগের ‘হুবাল’ খ্যাত নরখাদক আমেরিকার। যার পৈশাাচিক থাবায় রক্তস্রোতে ভাসে ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, তুরকিস্থানসহ শত শত মুসলিম ভূখণ্ড। বাদ যায় নি অমুসলিমরাও। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে হিরোশিমায় প্রায় সত্তর হাজার মানুষ মেরে ফেলে এই অভিশপ্ত আমেরিকা।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ। আবারো আল্লাহর সুন্নাতের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সামরিক শক্তি আর নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে বড়াই করা তাগুত আমেরিকার এতোদিনের দম্ভ নিমিষেই চূর্ণ হয়ে যায়। জামাতুল কায়দার জানবাজ মুজাহিদদের মুবারক হামলায় ধ্বসে পড়ে টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনের সদর দপ্তর। হায় হায়! কোথায় গেল এতো এতো গোয়েন্দা তৎপরতা আর সামরিক সক্ষমতা! বাস্তবতা হলো, রহমানের সিংহদের সামনে এগুলো নিছক তাসের ঘর। মহান আল্লাহ তাআলার অমোঘ বাণী— ‘আল্লাহর আদেশে কত ছোট ছোট বাহিনী বিশাল বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করেছে।’ অপারেশন নাইন ইলেভেন যেন ছিল এই আয়াতেরই প্রতিফলন।
অবশেষে শায়েখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ এর কৌশল সফল হয়। ‘সাপের মাথা’ আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রচণ্ড ধ্বস নামে। কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারিয়ে আমেরিকা নতুন করে ক্রুসেডের ডাক দেয়। পত্রপত্রিকা আর মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে চরম ইসলাম বিদ্বেষ। মুসলিমদেরকে পরিচয় করানো হয় উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী হিসেবে।
কুফফারদের হম্বিতম্বি আর মিডিয়ার প্রোপাগাণ্ডার খপ্পরে পড়ে একদল পরাজিত মানসিকতার মুসলমান হয়ে যায় ধোঁকাগ্রস্থ। তারা ভাবতে থাকে, নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী (!) হামলার কারণেই বুঝি পশ্চিমা জগতে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে জিহাদ করতে যাওয়া আল কায়দার জঙ্গিদের (!) কারণেই বাকী মুসলিমরা আজ সমগ্র দুনিয়ায় ভ্যালুলেস হয়ে পড়েছে। বঞ্চিত হচ্ছে নানা সু্যোগ-সুবিধা থেকে।
সেই সমস্ত স্নায়বিক দূর্বল মুসলমানদের সমীপে আমাদের আরজ—
প্রিয় ভাইয়েরা আমার, আপনারা কি আপনাদের মস্তিষ্ক কুফফারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন যে তাদের মিডিয়া আপনাদের সামনে যা উপস্থাপন করবে তা-ই গিলতে হবে? ক্ষমতাধরেরা যা উচ্চারণ করবে তা-ই বিশ্বাস করতে হবে? আপনারা কি নিজস্ব মেধা খাটিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে পারেন না? মুসলিম বিশ্বে আমেরিকার সামরিক আগ্রাসন কি আপনাদের চোখে পড়ে না? আপনাদেরও তো উচিৎ ছিল উম্মাতে মুহাম্মদির ব্যথায় ব্যথিত হয়ে নিজেরাই জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া। আপনারা তো তা করলেনই না, বরং অন্যরা যখন আপনাদের কাজ করে দিল তখন আপনারা উম্মাহর শত্রুদের গলায় গলা মিলিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ আর তুচ্ছতাচ্ছিল্যে মেতে উঠলেন। হায় উম্মাহ! কবে আপনারা নিজেদের শত্রু-মিত্র চিনবেন!
প্রিয় জাতি, আপনারা কি মনে করেন মুজাহিদরা জিহাদ না করলে কুফফারা মুসলমানদের মাথায় তুলে নাচবে? সব হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে আপনাদেরকে হোয়াইট হাউজে নিয়ে জামাই আদর করবে? যদি এরকমই হয় আপনার চিন্তা-ভাবনা তাহলে জেনে রাখুন, আপনি শরীরে বড় হলেও মননে এখনো দোলনায় দোল খাওয়া অবুঝ শিশু। আপনার না আছে শরিয়তে ইসলামির জ্ঞান আর না আছে ইতিহাসের। কেন বললাম এ কথা? আসুন ইতিহাস থেকে একটু ঢুঁ মেরে আসি।
১. ইসলাম ধর্ম তার প্রারম্ভিকা থেকেই কুফফার এবং মুশরিকিনদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছে। কখনো এটি এসেছে আপন পরিচয়ে। কখনো বা ‘মসজিদে যিরার’ নাম দিয়ে স্বয়ং ইসলামের লিবাসে। যাইহোক, একাদশ শতকে যখন সম্মিলিত কুফফার জোট নব উদ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন তার নাম দিল ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও সংঘাতের পর এই যুদ্ধে মুসলমানরাই বিজয়ী হয়। আর ওরা লাশের পর লাশ ফেলে রেখে ময়দান ছেড়ে পালায়।
মুসলমানরা তো কখনো আগ বাড়িয়ে ক্রুসেড লাগায় নি। নিরপরাধ অমুসলিমদের প্রতি মুসলিম শাসকদের উদারতা ইতিহাস স্বীকৃত। তাহলে খ্রিস্টানরা কীভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চেতে উঠলো?
কুফফাররা যখন কোনোভাবেই মুসলমানদের আদর্শিক এবং সামরিক শক্তির সামনে ঠিকতে পারছিল না তখন তারা আঁটলো ভিন্ন আরেক ফন্দি। ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানান অলীক গালগল্প ছড়ানো হলো পশ্চিমা দুনিয়ায়। বলা হলো, মুসলিম নামক যে জাতির বিরুদ্ধে খ্রিস্টান রাজারা যুদ্ধ করছে ঐ জাতি মূলত নাস্তিক। তারা কোনো খোদায় বিশ্বাসী না। যিশু খ্রিষ্টকে তারাই হত্যা করেছে। মুসলিমরা খোদায় বিশ্বাসীদের হত্যা করে। শিশুদের খেয়ে ফেলে। ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়।
এই বানোয়াট কাহিনী শুনে আপনাদের হাসি পেলেও তৎকালীন মূর্খ পশ্চিমা জনগণ এগুলোকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। অতঃপর চরম বিদ্বেষ আর হিংসা নিয়ে বারবার মুসলিম ভূখণ্ডে হামলে পড়ে। (আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন বর্তমানে ভারতের মালাউন শাসকগোষ্ঠী একই চাল চালে তাদের জনগণের উপর। তারা মিথ্যা, বানোয়াট ইতিহাস দিয়ে কিছু মুভি বানায়। যাতে পূর্ববর্তী মুসলিম শাসকদেরকে দেখানো হয় অত্যাচারী হিসেবে। ব্যস, অশিক্ষিত গোমূত্রখোররা তাতেই উত্তেজিত হয়ে নিরীহ মুসলমানদের বাড়িঘর ভেঙ্গে তাদের প্রতিশোধ চরিতার্থ করে।)
২. কাফেররা শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই ক্ষান্ত হয় নি। থাবা বসায় মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনীর উপর। একের পর এক অপবাদ আর বানোয়াট কিচ্ছা রচনা করে তাঁকে নিয়ে। যা কল্পনায় আনাও মুসলিমদের জন্য মারাত্মক কষ্টের। তাদের অপবাদের ধরণ বুঝার জন্য কিছু তো উল্লেখ না করলেই নয়। আল্লাহ আমাকে মাফ করুক।
দান্তে আলিগিয়েরি (Dante Alighieri)। একজন ইতালিয়ান কবি। যার জন্ম হয়েছিল ১২৬৫ সালে। সে তার ডিভাইন কমেডিতে নরকের নয়টি স্তরের বর্ণনা দেয়। যার অষ্টমটিতে আছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার ভাষায় ‘মাওমেত’। অতঃপর সে চরম নির্লজ্জ ও কুরুচিপূর্ণভাবে মাওমেতের নরকে অবস্থানের বর্ণনা দেয়। খ্রিষ্টানদের সাথে কৃত জুলুমের শাস্তিস্বরূপ মাওমেতের চিবুক থেকে নিম্নাঙ্গ পর্যন্ত চিরে দুই ভাগ করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তারপর দেহের দুটি অংশকে দুই দিকে মেলে দেওয়া হয়েছে। পাশেই আছেন আলী (রাযি.)। তাকেও এভাবে চিরে দুভাগ করা হচ্ছে। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক। এই গল্পটি ইউরোপের জনগণ অবলীলায় গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ ইসলামের নবীর ব্যাপারে তাদের মনে জন্ম নেয় চরম ঘৃণা।
এই হচ্ছে ইসলাম এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে পশ্চিমাদের মনোভাব। এরকম বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবই পশ্চিমারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াচ্ছে।
নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তাঁর পুরোটা সীরাত ছিল আদর্শ মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনিও কাফের মুশরিকদের রোষানল থেকে বাঁচতে পারেন নি। আপনি কীভাবে বুঝলেন তোষামোদি আর তেলবাজি করে আপনি তাদের কাছে ভালো হয়ে যাবেন?
উপরে মাত্র কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলাম। এরকম হাজারো কাহিনী ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে যা এ কথারই জানান দেয়— পশ্চিমা সভ্যতার সূচনাই হয়েছে ইসলামের প্রতি ভয়ানক হিংসা আর বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব নিয়ে। আজও তারা সেই হিংসাই লালন করছে।
পরিশেষে পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন, মসজিদে যিরার থেকে নিয়ে ক্রুসেড এবং ইসলাম ও নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যঙ্গ করে রচিত এতো এতো কবিতা, গল্প আর কমেডির পিছনেও কি নাইন ইলেভেন, আল-কায়দা আর শায়েখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ এর গ্লোবাল জিহাদ দায়ী? যদি নাইন ইলেভেন হামলা না হতো আর শায়েখ উসামা আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক না দিতেন তাহলে কি পশ্চিমাদের ইসলাম বিদ্বেষ শেষ হয়ে যেতো?
উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে কেন বারবার মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে গালি দেন? কেন মনে করেন মুজাহিদরাই সকল অশান্তির মূল? আমেরিকা বলেছে তাই? আপনি আল্লাহর গোলামি করেন না আমেরিকার গোলামি করেন?
নাইন ইলেভেনের বরকতময় হামলাটি ছিল দীর্ঘদিনের নির্যাতনের প্রতিশোধ। আল-কায়দা ঠিক সেই কাজটিই করেছে যা করেছেন আমাদের মহান পূর্বপুরুষরা। সুতরাং এই জিহাদ ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতক্ষণ না পৃথিবীর সর্বশেষ জালেমটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
তাই আসুন, আর নয় গোলামির জিঞ্জির। এখন আমরা হাতে নিব শমশির।
২৬ সফর, ১৪৪৬ হিজরি
৩১ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
Comment