Announcement

Collapse
No announcement yet.

কথিত শান্তিকামী ও মানবতাবাদীদের তৈরি ‘পৃথিবীর নরক’— গুয়ান্তানামো বে (দ্বিতীয় পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কথিত শান্তিকামী ও মানবতাবাদীদের তৈরি ‘পৃথিবীর নরক’— গুয়ান্তানামো বে (দ্বিতীয় পর্ব)

    গুয়ান্তানামো বে (Guantanamo Bay)। কিউবায় অবস্থিত আমেরিকা-নিয়ন্ত্রিত একটি জঘণ্য কারাগার। কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (War on Terror) চলাকালীন সময়ে সন্ত্রাসীদেরকে (!) এখানে এনে বন্দী করা হতো। তাদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করার পর মার্কিনিদের ‘ফুলের মতো পবিত্র’ চরিত্রে যেন কেউ অপবাদ আর কলংকের কালিমা লেপন করতে না পারে সেজন্য কারাগারটিকে স্বয়ং আমেরিকাতে না বানিয়ে কিউবাতে বানানো হয়েছে। কিউবা (Cuba) যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে অবস্থিত, তবে তা রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে আলাদা। তার স্বাধীন সরকার, প্রশাসন এবং নিজস্ব আইন ও সংবিধান রয়েছে।

    কারাগারটি বানানো হয়েছিল আফগানে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত জঙ্গিদের (!) জন্য। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত শত শত এমন মানুষও সেখানে ছিলেন যাদের যুদ্ধের সাথে নূন্যতম কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাবলিগ জামাতের সাথি থেকে নিয়ে সাংবাদিক ও বিভিন্ন এনজিওর সদস্যও আমেরিকানদের আক্রোশের বলি হয়েছিলেন যারা যুদ্ধের সময় ঐ এলাকায় ছিলেন। বাদ যান নি আফগানের অজোপাড়া গাঁয়ের অতি সাধারণ কিছু খেটে খাওয়া মানুষও। গাদ্দার পাকিস্তানি প্রশাসন ও আফগানি কিছু দালাল এই নিরীহ মানুষগুলোকে মার্কিনিদের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিত। আর মার্কিনিরা দুধের সাধ ঘোলে মেটাতো। তারা তো মোল্লা উমর কিংবা উসামা বিন লাদেন (রাহিমাহুমুল্লাহ) দেরকে ধরতে পারত না। তাই যেকোনো মুসলিমকেই স্বল্প সন্দেহের জেরে গ্রেফতার করে নিয়ে বছরের পর বছর নির্যাতন করত। সম্ভবত তাদের বেশি আক্রোশ ছিল আরব, বিশেষ করে সৌদি আরবের নাগরিক এবং স্থানীয় আফগানদের প্রতি।

    আফগান অথবা পাক-সীমান্ত থেকে কাউকে গ্রেফতার করার পর প্রথমে নেওয়া হতো আফগানিস্তানে অবস্থিত রাশিয়ার তৈরি বাগরাম কারাগারে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও কয়েক দফা নির্যাতনের পর বিপজ্জনক বন্দীদেরকে পাঠানো হতো কিউবার সেই নরকে। গুয়ান্তানামো বে— আমেরিকার তৈরি ‘পৃথিবীর নরক’।

    কয়েদীদের হাত-পা বেঁধে চোখ-মুখ ঢেকে কার্গো বিমানে করে ঘন্টার পর ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে নরকের দরজায় পৌঁছে দেওয়া হতো। বিমানে থাকা অবস্থায় খাওয়া-দাওয়া কিংবা টয়লেটে যাওয়া নিষেধ। খুব বেশি জরুরী হলেও যাওয়া যাবে না। কথা না শুনলেই নেমে আসবে জুলুমের খড়গ। যাইহোক, গন্তব্যে পৌঁছে অতিশয় দুর্বল ও রোগক্লিষ্ট বন্দীদেরকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে টেনে টেনে কারাগারে ঢোকানো হতো।

    কয়েদে নির্যাতনের পরিপূর্ণ বর্ণনা লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব। কিছুটা ধারণা হয়ত নেওয়া যেতে পারে। ফ্রিজের মতো ঠান্ডা সেলে বন্দীদেরকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে রেখে দিত। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। অল্প কিছু পচা খাবার দিত যা সাধারণ মানুষ মুখের কাছেও নিবে না। বন্দীর স্তর অনুযায়ী তাকে পাতলা দুটি কম্বল দেওয়া হতো, যা শীতের প্রচণ্ডতার তুলনায় যৎসামান্য। একটি নিচে বিছানোর এবং অপরটি গায়ে জড়ানোর। বন্দী বিপজ্জনক হলে সে এই সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে যেত।

    কয়েদীদের চিকিৎসার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার আর রিমান্ডে টর্চার করার জন্য নিয়োজিত সৈন্যদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মেডিক্যাল ট্রিটম্যান্ট কিংবা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ সব সময়ই বন্দীদের জন্য বরাদ্দ থাকে বিভিন্ন ডিজাইনের নির্যাতন। ভুল ঔষধ প্রয়োগ থেকে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় অপারেশন সবগুলোই হলো টর্চারের ভিন্ন ভিন্ন কিছু রূপ। কয়েদীরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে ডাক্তাররা অপারেশন করার হুমকি দিত। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে, অপারেশনগুলো রোগ সারানোর জন্য হতো নাকি বাড়ানোর জন্য।

    গোসল কিংবা প্রাকৃতিক হাজত পূরণের জন্য কোনো আবদ্ধ অথবা নির্জন কক্ষ নেই। সৈন্যদের চোখের সামনে থেকেই বন্দীরা সবকিছু করতে বাধ্য। এবং তা নির্ধারিত সময়ের ভিতরেই। দেরি করলে হাজত অপূর্ণ রেখেই চলে আসতে হতো।

    ধর্মের অবমাননা করা হতো চরমভাবে। কুরআন কে অপমান করত। কুরআনের গায়ে ভিবিন্ন অশ্লীল কথা লিখে বন্দীদেরকে মানসিক কষ্ট দিত। নিয়মিত ব্রেইন ওয়াশের চেষ্টা চলত। কয়েদীদের কাউকে তালেবান ও আল কায়দার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করার শর্তে কারাগার থেকে মুক্তির প্রলোভন দেওয়া হতো। যারা ঈমানি গায়রত ও তাকওয়ার কারণে তাদের কু-প্রস্তাব প্রত্যাখান করত তাদের উপর নেমে আসতো জাহান্নামের বিভীষিকা। আর যারা তাদের ডাকে সাড়া দিত তাদেরকে আস্তে আস্তে ভালো স্তরে উন্নীত করা হতো। তাদেরকে আরামদায়ক সেলে রাখা হতো। খাবার-পানির সুব্যাবস্থা সহ খেলাধুলা এবং নামাজ পড়ার সুযোগ দেওয়া হতো। অনলাইনে গুয়ান্তানামোর যেসব ভিডিও দেখা যায় সেগুলো এই আরামদায়ক সেলেরই। দেশি বিদেশি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এই সেল দেখিয়ে ধোঁকা দেওয়া হয়। আর ভিতরের জাহান্নামগুলোকে সুকৌশলে আড়াল করা হয়।

    বঙ্গদেশে তাগুত হাসিনার কর্তৃক নির্মিত ‘আয়নাঘর’— সেটি তো এই জঘন্য কারাগারগুলোরই লাইট ভার্সন।


    গুয়ান্তানামো বে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন ‘কয়েদী ৩৪৫ (গুয়ান্তানামোতে ছয় বছর)’


    এই হলো পুরো বিশ্বময় মাবনবতার ফেরি করে বেড়ানো ফেরিওয়ালাদের আসল চরিত্র। তারা একদিকে বিলিয়ন বিলিয়ন টন বোমা নিক্ষেপ করে ‘শান্তি’ ও ‘মানবতা’ প্রতিষ্ঠা করে, অপরদিকে মুসলিম নারীরা স্বেচ্ছায় পর্দা করলে সেটাকে বলে মানবাধিকার লঙ্ঘন।





    ০৪ জুমাদাল উলা, ১৪৪৬ হি.
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ইংরেজি​

  • #2
    আরও পড়তে পারেন, ৪৪১ বন্দী মানসূর আদায়ফীর আত্মজীবনী “বিস্মৃতির অন্তরালে”।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 1 week ago.
    "ইয়াকীন ও সবরের মাধ্যমে দীনের ইমামত অর্জিত হয়"

    Comment

    Working...
    X