ইসলামী শাসনব্যবস্থা নিয়ে কাফেরদের প্রোপাগান্ডা
১) প্রশ্ন:- প্রোপাগান্ডার ধরণ ও আমাদের করণীয় কী?
উওর:- তারা নামধারী মুসলমানদের একথা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে তা তোমাদের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কারণ
যথা:-
চুরি করলে হাত কাটা।
জিনা ব্যভিচার করলে বেত্রাঘাত বা পাথর মেরে হত্যা করা। ইত্যাদি
অথচ আমাদের অর্থাৎ আলেম উলামা ও সাধারণ দায়ী সকলের জন্যই উচিত ছিল যে, জনসাধারণকে একথা বুঝানো যে,
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জানেন কোনটা বান্দার জন্য উপকারি আর কোনটা বান্দার জন্য ক্ষতি।
আর এ কথা জানানোর জন্যই আল্লাহ তাআলা সকল নবী ও রসূলগণকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন।
বিশেষ করে সর্বশেষ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ উম্মতের নিকট প্রেরণ করার কারণ ও তাই।
আল্লাহ তা'আলা বলেন
( وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ) البقرة (179) Al-Baqara
হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।
২) প্রশ্ন:- কেসাসের মধ্যে জীবন কিভাবে রয়েছে?
উত্তর:- হত্যার পরিবর্তে যখন হত্যা করা হয়, তখন হত্যার পরিকল্পনাকারি হত্যা থেকে বিরত থাকবে।
কারণ
তার যদি একথা নিশ্চিত জানা থাকে যে,
আমি যদি কাউকে হত্যা করি, তাহলে এর পরিবর্তে আমাকে ও হত্যা করা হবে।
নিন্মলিখিত আয়াত ও তার তাফসীর দেখুন
আল বাকারা,
আয়াতঃ ১৭৮ یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِصَاصُ فِی الۡقَتۡلٰی ؕ اَلۡحُرُّ بِالۡحُرِّ وَالۡعَبۡدُ بِالۡعَبۡدِ وَالۡاُنۡثٰی بِالۡاُنۡثٰی ؕ فَمَنۡ عُفِیَ لَہٗ مِنۡ اَخِیۡہِ شَیۡءٌ فَاتِّبَاعٌۢ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَاَدَآءٌ اِلَیۡہِ بِاِحۡسَانٍ ؕ ذٰلِکَ تَخۡفِیۡفٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَرَحۡمَۃٌ ؕ فَمَنِ اعۡتَدٰی بَعۡدَ ذٰلِکَ فَلَہٗ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
উক্ত আয়াতের তিনটি অর্থ উল্লেখ করা হলো
অর্থঃ
★মুফতী তাকী উসমানী
হে মুমিনগণ! যাদেরকে (ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে) হত্যা করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কিসাস (-এর বিধান) ফরয করা হয়েছে- স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি,
গোলামের বদলে গোলাম, নারীর বদলে নারী (-কেই হত্যা করা হবে)। ১২৩
অতঃপর হত্যাকারীকে যদি তার ভাই (নিহতের অলি)-এর পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা করা হয়, ১২৪ তবে ন্যায়ানুগভাবে (রক্তপণ) দাবী করার অধিকার (অলির) আছে।
আর উত্তমরূপে তা আদায় করা (হত্যাকারীর) কর্তব্য।
এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক লঘুকরণ এবং একটি রহমত।
এরপরও কেউ সীমালংঘন করলে সে যন্ত্রণাময় শাস্তির উপযুক্ত। ১২৫
★ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।
স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়,
তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে।
এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ।
এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
★ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে মু’মিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্যে কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী, কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সঙ্গে তার দেয় আদায় বিধেয়। এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ। এর পরও যে সীমালংঘন করে তার জন্যে মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।
--------------------- শানে নুজুলঃ
ইসলাম-এর আবির্ভাবের কিছু দিন পূর্বে আরবের দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
বিজয়ী সম্প্রদায় বিজেতা সম্প্রদায়ের অনেক দাসদাসী ও নারীদের হত্যা করে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রসূল হিসাবে প্রেরিত হলেন তাঁরা মুসলমান হয়ে গেল;
কিন্তু পূর্ববর্তী যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের মনোভাবের কোন পরিবর্তন ইসলাম গ্রহণের কারণে আসেনি, অধিকন্তু বিজেতা গোত্রটি একটি সম্মানিত উচ্চ নামী বংশের মধ্যে পরিগনিত হত।
তাই তাঁরা তাদের উপর বিজয়ী গোত্রকে বলল যে, আমরা আমাদের এক গোলামের পরিবর্তে তোমাদের একটি এবং আমাদের একজন নারীর পরিবর্তে তোমাদের একজন পুরুষকে হত্যা করব।
তখন অত্র আয়াত অবতীর্ন হয়।
--------------------- তাফসীর (মুফতী তাকী উসমানী) (Bangla)
১২৩. কিসাস অর্থ সম-পরিমাণ বদলা নেওয়া। এ আয়াতে আদেশ করা হয়েছে, কোনও ব্যক্তিকে যদি ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় এবং হত্যাকারীর অপরাধ প্রমাণিত হয়, তবে নিহতের ওয়ারিশের এ অধিকার থাকে যে,সে হত্যাকারী থেকে কিসাস গ্রহণের দাবী তুলবে।
জাহিলী যুগেও কিসাস গ্রহণ করা হত, কিন্তু তাতে ইনসাফ রক্ষা করা হত না। তারা মানুষের মধ্যে নিজেদের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর সৃষ্টি করে রেখেছিল,
আর সে হিসেবে নিচুস্তরের কোনও লোক উচ্চস্তরের কাউকে হত্যা করলে ওয়ারিশগণ হত্যাকারীর পরিবর্তে তার গোত্রের এমন কাউকে হত্যা করতে চাইত যে মর্যাদায় নিহতের সমান।
যদি কোনও গোলাম স্বাধীন কোনও ব্যক্তিকে হত্যা করত, তবে গোলামের পরিবর্তে একজন স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করার দাবি জানাত। এমনিভাবে হত্যাকারী নারী এবং নিহত পুরুষ হলে বলা হত, সেই নারীর পরিবর্তে একজন পুরুষকে হত্যা করা হবে।
পক্ষান্তরে হত্যাকারী যদি নিহত ব্যক্তি অপেক্ষা উচ্চস্তরের লোক হত, যেমন হত্যাকারী পুরুষ এবং নিহত নারী, তবে হত্যাকারীর গোত্র বলত, আমাদের কোনও নারীকে হত্যা কর; পুরুষ হত্যাকারীর থেকে কিসাস নেওয়া যাবে না।
আলোচ্য আয়াত জাহিলী যুগের এই অন্যায় প্রথার বিলোপ সাধন করেছে এবং ঘোষণা করে দিয়েছে, প্রাণ সকলেরই সমান। সর্বাবস্থায় হত্যাকারীর থেকেই কিসাস নেওয়া হবে, তাতে সে পুরুষ হোক বা নারী এবং স্বাধীন ব্যক্তি হোক বা গোলাম।
১২৪. বনী ইসরাঈলের বিধানে কিসাস তো ছিল, কিন্তু দিয়্যাত বা রক্তপণের কোনও ধারণা ছিল না।
আলোচ্য আয়াত নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশদেরকে অধিকার দিয়েছে যে, তারা চাইলে নিহতের কিসাস ক্ষমা করে রক্তপণ হিসেবে কিছু অর্থ গ্রহণ করতে পারে।
এরূপ অবস্থায় তাদের কর্তব্য, সে অর্থের পরিমাণকে ন্যায়সঙ্গত সীমার মধ্যে রাখা। আর হত্যাকারীর উচিত, উত্তম পন্থায় তা আদায় করে দেওয়া। ১২৫. অর্থাৎ ওয়ারিশগণ যদি রক্তপণ নিয়ে কিসাস ক্ষমা করে দিয়ে থাকে, তবে এখন আর হত্যাকারীকে হত্যা করতে চাওয়া তাদের জন্য জায়েয হবে না। করলে তা সীমালংঘন হয়ে যাবে এবং সেজন্য তারা দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির উপযুক্ত হবে।
৩) প্রশ্ন:- এ অবস্থা (অর্থাৎ কাফেরদের প্রোপাগাণ্ডা) হতে মুক্তির সুরত কি?
উত্তর:- জনসাধারণকে এ কথা বোঝানো যে, কোরআনের বিধান যদি বাস্তবায়ন হয় অর্থাৎ চুরি করলে হাত কাটার বিধান বাস্তবায়ন হয়, তাহলে হাজারো চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। জিনা করলে বেত্রাঘাত অথবা রজমের বিধান বাস্তবায়ন হয়, তাহলে জিনা ব্যভিচার বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষ! হাজারো অপকর্ম থেকে বিরত থেকে সত্য পন্থা অবলম্বন করবে। এর দ্বারা ইহকাল ও পরকাল উভয় জাহানে মুক্তির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।